![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাতে মানিব্যাগ টা নিয়ে ভাল ভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলাম।হঠাৎ শান্তা এর ডাক শুনে মনযোগ টা মানিব্যাগ থেকে শান্তা এর দিকে কামান এর মত তাক করালাম।
~
--এই।এদিকে আসো তো।
--হৃৎপিন্ড টা ধুক ধুক করছে।বেচারা মানিব্যাগ,,এই বুঝি শান্তা তোর মোটা চামড়ার দেহটাকে কমিয়ে ফেলবে।পা টিপে টিপে ওর কাছে গেলাম।
--এই গলার হার টায় কেমন লাগছে আমাকে?
--আমার তো ধুক ধুকানি বেড়ে গেছে।দেখতে ই দেখা যায় অনেক দামি হার।তাই একটু মিথ্যে বললাম শান্তা কে।বললাম,,আসলে শান্তা, তেমন ভাল লাগছে না।তুমি বরং ও হার টা নাও।(অন্য একটা কম মূল্য এর হার দেখিয়ে)
--শান্তা মুখ বেংচিয়ে বলে উঠল,,তোমার কাছে কিছুই ভাল লাগে না যেগুলা আমি পছন্দ করি।আমি কিছু কিনব না।চল এখান থেকে।
--প্রান ফিরে পেলাম শান্তা এর কথা শুনে।তবু ও একটু বলে উঠলাম,,ওরে আমার লক্ষি বউটা রাগ করেছে আমার সাথে।
--যত্ত সব ঢং। নেকামি না করে চল।অনেক রাত হয়েছে।
~
শান্তা কে নিয়ে মার্কেট থেকে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম।খাবার খেয়ে শুয়ে পরলাম।শান্তা অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে আছে।কয়েকদিন আগে বিয়ে করলাম।উফ,,বাহিরে বৃষ্টি। আজ রাতে দারুন একটা ঘুম দিলাম।ঘুম যেন ভাঙতে ই চাচ্ছে না।পায়ে পানির ফোটা পরছে টপ টপ করে।মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।চোখ গুলা খুলেই বিছনা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম.....
~
-- ঐ,,,কেঠা রে?(সিংহের মত হুংকার দিয়ে)
--কি বললা?(রাগ মাখা স্বরে)
--অহ,,আমার বাবু শান্তা।তুমি এখানে দাড়িয়ে আছে কেন।আর চুল ভিজা কেন?(সিংহ এর হুংকার টা চলে গেল ওকে দেখে।স্বরটা বিড়াল এর হয়ে গেল।)
--কিহ!আজ না আমাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা?
--ঈদ হতে আর ও দুদিন বাকি।কাল যাব।এখন ঘুমাতে দাও লক্ষি বাবু টা প্লিজ।
--আচ্ছা বাবু।তুমি ঘুমাও।আমি গাড়ি চালিয়ে একাই যেতে পারব।
--ওমা।তুমি তো গাড়ি চালাতে পার না।শান্তা,ও শান্তা।যেও না লক্ষি টি।এই আমি যাচ্ছি গোসল এ।
~
কোনরকম এ গোসল করে রেডি হয়ে কিছু খেয়ে নিলাম।সাথে ব্যাগ গুলা নিয়ে গাড়ি এর সামনে গেলাম। দেখি শান্তা মুখ কালো করে বসে আছে।
~
--শান্তা। ও শান্তা।
--চুপ।গাড়ি ছারো । একটা ও কথা বলবা না।
--বিয়ে করলাম বড়লোক সুন্দরি মেয়ে,,পাইলাম গাড়ি,,এখন খাই বউ এর ঝারি। ( বিরবির করে বলে উঠলাম।)
--ঐ,,কি বললা তুমি।
--বললাম যে,,,শান্তা,,ও শান্তা,,তুমি যে কত ভালো,, সেটা কি তুমি জানো?,,এর জন্যেই তো তুমি আমার লক্ষি জানু।(ওর গালে ধরে একটা হালকা টান দিয়ে বলে উঠলাম।)
--সত্যি তোফায়েল???(চোখ বড় বড় করে)
--তোফায়েল আমার নাম।কথাটা ওকে রাগ ভাঙানোর জন্যে বলেছিলাম।কাজ তাহলে করসে।ওর হাতটা ধরে আমার বুকে চেপে ধরলাম।বলে উঠলাম,,, এই দেখ,,বার বার শান্তা শান্তা বলতেসে এ মন।
--হইসে,,আর ঢং করতে হবেনা।আমার রাগ ভেংগেছে।মিথ্যা বলা লাগবে না আর বানিয়ে বানিয়ে।গাড়ি স্টার্ট দাও।(হাসি মুখে)
~
শান্তা আমার পাশেই বসে আছে।গাড়ি স্টার্ট করলাম।
শান্তা বসে আছে।ওর হয়তবা বরিং লাগছে। তাই একটা হালকা গান চালু করে দিলাম। ঘুমিয়ে পরে আস্তে আস্তে করে।অবশেষে ক্যাসেট টা বন্ধ হল।শান্তি মত গাড়ি চালাচ্ছি।হঠাৎ.....
~
--তোফায়েল,তোফায়েল।গাড়ি থামাও।(চোখে মুখে আনন্দ এর ছাপ দেখা যাচ্ছে।)
--আবার কি হল?
--ঐ যে দেখ,,গরু এর হাট।চল একটু দেখে আসি গরু।আসলে একসাথে এত্তগুলা গরু কখন ও দেখি নি।চল না প্লিজ?
--না।বাড়িতে গরু কিনে রাখসে।সেটা দেখিও।এখন চল প্লিজ?
--শান্তা গাড়ি থেকে নেমে গেল।বলে উঠল,,আমি যাব না।যাও তুমি।
~
কিছু করার নেই।এক প্রকার বাধ্য হয়েই নিয়ে গেলাম গুরুর হাট এ।
~
--তোফায়েল,,এখানে এত গন্ধ কেন?
--জ্বি মহারানী,, এটা আপনার বাবা এর ফুলের গার্ডেন না যে ফুলের মত সুবাস আসবে।
--ওয়াক।চল তো।আমার দেখে শেষ।
--আগেই বলেছিলাম।চল।(ধমক এর স্বরে)
~
সে কি।এক বজ্জাত গরু কে দেখতে পেলাম।গরু তার লেজ টা আস্তে আস্তে করে একটু উপরে উঠালো।কামান এর মত তাক হয়ে আছে আমার শান্তা এর দিকে।সে কি,,গরু তার কামান ছোরে দিল আমার শান্তা এর দিকে।আমি বীর এর মত শান্তা কে একটু হালকা ধাক্কা দিয়ে আমি নিজে সরে গেলাম। উফ,,শান্তা কে বাচাঁনো গেল।পাশে ফিরে কাকে যেন দেখতে পেলাম। মুখে এগুলা কি।ওয়াক।
~
--এই মেয়ে।আপনি কে?কাছে আসবেন না।কি গন্ধ! মুখ ধুয়ে আসেন।
--তোফায়েল।(দাত চেপে বলে উঠল।)
--গলা শুকিয়ে গেল।খাইসে আমারে!এ তো শান্তা।
--শা শা শান্তা।
--তুমি এটা কি করলা?
--আচ্ছা বাবু।এখানে না।আসো,, আগে এগুলা ধুয়ে দেই।
~
শান্তা রাগে জ্বলে যাওয়া অবস্থা।বাঁচাতে গিয়ে উল্টা গুরুর গোবর এর উপর ফেলে দিয়েছি।আমাকে যে কি করে আল্লাহ ই জানে।পাশে একটা টিউবয়েল দেখতে পেলাম।ধুয়ে দিচ্ছিলাম।কিন্তু আমার দিকে বড় বড় চোখে চেয়ে আছে।আল্লাহ ই জানে,,গ্রামে গিয়ে গরুর বদলে আমাকে না আবার কোরবানি দিয়ে দেয়।ধুয়া শেষ। গাড়ি এর ভিতর ঢুকে মুখটা মুছে আবার সাজুগুজো শুরু করলো।মেয়েদের এই এক সমস্যা।
~
--কি!চেয়ে আছো কেন? (চোখ রাঙ্গিয়ে)
--আসলে অনেক সুন্দর লাগছে। --একটু আগে তো নিজের বউ কে ই চিন্তে পারছিলে না।
--আসলে,, ঐ সময় তো তোমার মুখে....
--কথা মুখ থেকে কেরে নিয়ে বলে উঠল,,চুপ।গাড়ি চালাও।
~
আমি আর কিছু বললাম না।আমি ওকে নিয়ে একটু অশান্তিতে আছে।বিরক্ত হয়ে বলে উঠলাম...
~
--ও আল্লাহ।আমি কই যাব!
--কি ।কৈ যাবা মানে?তুমি বাড়িতে যাবা।এই,,অন্য কোথাও যাওয়ার প্লেন আছে নাকি? বুঝেছি তোমার পুরুনো প্রেমিকা এর কাছে যাবা।(কথাটা বলেই মুখ ঘুরিয়ে ঐ দিকে মুখ করে আছে)
--কেন যে আগের প্রেমিকা এর কথা বলতে গেলাম।
--অহ,,,জানিয়ে ভুল করে ফেলসো।তাই না?
--চুপ।চুপ করে বসে থাকো।আর একটা কথা ও না।
~
আমার ধমক শুনে শান্তা চুপ হয়ে গেল।শুধু চোখ গুলা কে থামাতে পারলাম না।পানি পরতেসে তো পরতেসে ই।গাড়ি চালাতে লাগলাম।
~
--শান্তা।সরি। ও শান্তা।
--কথা বলবা না।(অভিমানী স্বরে)
--সরি।এই কানে ধরলাম।(গাড়ির স্টেয়ারিং ছেড়ে দুই হাত দিয়ে কানে ধরলাম।)
--এই,,কি করতেসো,,কান ছেড়ে স্টেয়ারিং ধর।
--না,,আগে বল মাফ করসো আমাকে।
--আচ্ছা, আচ্ছা করেছি।
--মুখে হাসি কৈ?
--শান্তা এমন একটা হাসি দিল এর পর,, এর চেয়ে জগন্য হাসি আমি দেখি নি এর আগে।
--এটা কি হাসি!(মুখ টা একটু বাঁকিয়ে বিরক্ত স্বরে বলে উঠলাম)
--কি বললা?
--এত সুন্দর ছিল যে এর আগে দেখি নি।
~
আবার গানটা প্লে করে দিলাম।গানের তালে তালে গাড়ি চালাচ্ছি।শান্তা আমার এ অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।আসলে বেশি আনন্দ করে ফেললে একটু কাঁদতে হয়।আমার ও একি অবস্থা ঘটলো।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল।শান্তা ও ফোন এর স্ক্রিন এর দিকে চেয়ে উঠল।অচেনা নাম্বার, তাই চেয়ে আছে,,সে চিন্তে পারছে না।নাম্বারটা আমার পরিচিত।গাড়ি টা বন্ধ করে কাপা কাপা হাতে ফোনটা ধরতে যাব কিন্তু আমার আগেই শান্তা ফোনটা রিসিব করে ফেললো। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।এ যে আমার পুরুনো প্রেমিকা ফোন করেছে।শান্তা এর চোখ দিয়ে পানি পরছে।হঠাৎ গাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।রাস্তা এর এক পাশে দাড়িয়ে আছে শান্তা।রাস্তাটা ফাকা।মাঝে মাঝে দু-একটা গাড়ি আমাদের অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে।
~
--শান্তা এর কাছে গেলাম।বলে উঠলাম।শান্তা, আমার লক্ষি বউ।প্লিজ বুঝার চেষ্টা কর।
--তোফায়েল,একা থাকতে দাও আমাকে।
--শুনো শান্তা,,আমার পুরুনো প্রেমিকা আমাকে কল করেছে।আমি তো করি নি।আর কোনদিন দেখেছো এর আগে এরকম?সে আমাকে হয়তবা ভালবাসে।কিন্তু আমি তো তোমাকেই ভালবাসি।
--তো কি?ফোন করবে কেন তোমাকে?
--কারন সে আমার নাম্বার জানতো।আচ্ছা দাড়াও।এই মোবাইল টাই ফেলে দিব এখন।বলেই এক ঢিল দিয়ে মোবাইলটা ফেলে দিলাম।(১১০০মডেল এর মোবাইল ছিল।তাই ফেলতে কষ্ট হয় নি।)
~
শান্তা এর রাগ মনে হয় কিছুটা কমেছে।চোখ দিয়ে পানি পরা থেমেছে কিন্তু মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।ওর কাছে গেলাম। পকেট থেকে হার টা বের করে নিলাম।যে হার টা সে ঐ মার্কেটে পছন্দ করেছিলো। আমি পরে সে হার টা কিনে নেই লুকিয়ে।কাছে গিয়ে ওর গলাতে পরিয়ে দিলাম।
~
--শান্তা প্লিজ। আমার কোন দোষ নেই।তবু ও বলছি আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও।
--না,,করব না মাফ।আগে বল এ দামি হার টা কিনেছো কেন?
--এটা তোমার পছন্দ।। আমি না করি কিভাবে?
--আগে বল,,এরপর থেকে আমার অনুমতি ছাড়া কিছু কিনবা?(হাসি মুখে)
--ইয়ে মানে।কিনব।তুমি পছন্দ করলে তো কিনব ই।
~
কিহ! বলেই শান্তা আমাকে মারার জন্যে এগিয়ে আসলো।আমি গাড়ি এর দিকে দৌড় দিলাম।শান্তা ও আমাকে ধরার জন্যে আমার পিছু নিলো।
~
বিঃদ্রঃআহা রে,,,শান্তা, শান্তিতে থাকতে দিল না রে।
~
~
~
......#লেখক:আছো তুমি সুদূরে(লোমাইন্টিক রাইটার)
©somewhere in net ltd.