![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আধবেলার হাটাহাটিতে অবস্থা মোটামুটি কাহিল। বাস মাত্র টেকনিক্যাল পাস করেছে। গন্তব্য মিরপুর-১০। রাত হয়ে যাচ্ছে অনেক। রাস্তার ট্রাফিক অনেকটা কম হলেও ধুলাবালির অবস্থা দেখে মনে হয় সাহারা মরুভূমিতে ধুলিঝড়ের কবলে পরেছি। গায়ে টিশার্ট থাকলে ওটাকে মাস্ক বানিয়ে ধুলির কবল থেকে ভালোভাবেই রেহাই পাওয়া যায়। শার্ট দিয়ে তেমন সুবিধা করতে পারছি না। বাসের ভেতর হরেক শ্রেণীর মানুষ। রোমিও শ্রেনীর একজন বসেছে আমার পাশের সিটে। উচ্চসরে ফোনালাপ চালাচ্ছে। মাঝে মাঝে কন্ঠ নিচু হয়ে যাচ্ছে। বিরক্তিকর ব্যাপার। নিচু স্বরে সে কি বলছে বুঝতে পারছি না। হয়তো প্রেমিকার সাথে কথা বলছে। হয়তোবা নিচু স্বরে চুমাচাট্টির পর্ব চলছে। ব্যাপারটা নিশ্চিত হওয়ার কৌতুহল জাগলেও তাকে কিছুটা গোপনীয়তার সুযোগ করে দেয়া আমার দায়িত্ব। মনোযোগ অন্য দিকে নিলাম। সামনে ব্যাপক ঝামেলা। ভাড়া নিয়ে বাংলা কলেজের এক ছেলে হেল্পারকে খুনের হুমকি দিচ্ছে। ব্যাপারটাতে বেশ মজা লাগলো। মুখে মুখে খুন পর্যন্ত চলে গেলেও একটা চড় থাপ্পড়ও এখন পর্যন্ত চলে নাই। আমি বাসের পিছনের দিকে বসেছি। এতো সামনের ঘটনায় মনোযোগ দিতে কষ্ট হচ্ছে। শরীর অবশ হয়ে আসছে। শুয়ে পরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে উপায় নাই। ঠিকভাবে বসাই যাচ্ছেনা শুয়ে যাওয়াতো স্বপ্ন। পাশের ভদ্রছেলে এখনো বকর বকর করছে। এই আলাপ যেন শেষ হবার নয়। জানালার গ্লাসে মাথাটা রাখলাম। বাইরের মানুষগুলোকে দেখে অনেক সুখী মনে হচ্ছে। হয়তোবা মানুষগুলো আমাকে দেখে আফসোস করছে। আমার যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে কোন একটা বিশুদ্ধ পানির চৌবাচ্চায় একটা ডুব দিলে চৌবাচ্চার পানি বুড়িগঙ্গার পানির সমপর্যায়ে চলে আসবে। নিজেকে অসহায় লাগছে। এই শহর আমাকে অসহায় করে ছাড়লো। ভাবলাম অসহায় হয়ে থাকা যাবেনা। হাশিখুশি থাকতে হবে। আমার একটা বান্ধবীর কথা মনে পরছে। সবসময় হাশিখুশি থাকতো এবং বান্ধবীর দাবি ছিলো সে সবসময় হাসিখুশি থাকে। এমনকি ভাদ্র মাসের কুত্তাপাগল গরমে, দুপুর রোদে, জ্যামের মধ্যে প্যাসেঞ্জার ভর্তি বাসে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেও সে সুখী। সে অবস্থার তুলনায় আমি কতই না ভালো আছি। মিরপুর-১ এসে সামনের কয়েকটা সিট খালি হলো। পাশের রোমিও কে একা ফেলে আমি সামনে এসে বসলাম। এখন পাশের সিটে সুন্দরি এক তরুণী। অন্য সিটের একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার তাকানোর ধরন স্বাভাবিক নয় মোটেও। সে কি ভাবছে আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তাকে কিছুই বলতে পারছিনা। ইচ্ছে করছে কানে কানে গিয়ে বলে আসি, " বিশ্বাস করেন ভাই আমি মোটেও মেয়ে দেখে এই সিটে আসি নাই।" বুঝলাম তাকে পাত্তা না দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে আশেপাশের দুনিয়ায় সে নাই। সে আছে তার দুনিয়ায়। ফোনের ভিতরে। ফোনের ডিসপ্লেতে ম্যাসেঞ্জার খোলা। চোখে চশমা লাগিয়ে আমিও তার দুনিয়ায় ঢুকে পরলাম। কত ছেলেই না তাকে ভোলানোর চেষ্টা করছে। ম্যাসেজ দেখে মনে হচ্ছে সকলেই সাহিত্যিক। আমি ভাবতেসি এখানের একজনই কত কত জনকে ধুপধাপ প্রেমে ফেলছে। এই 'ধুপধাপ' শব্দ সত্যিই হচ্ছে। এগুলা সাধারন কোন শব্দ নয়। গায়েবী শব্দ। আছাড় খেয়ে প্রেমে পরার গায়েবী শব্দ। মেয়েটার কানে এই শব্দ যাচ্ছেনা। আমার কানে আসছে। এটাই সমস্যা। এইসব মিষ্টি কথা আর কবিতার ফাকে পরোক্ষ প্রেম নিবেদনগুলো মেয়েটার মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। এজন্যই মনে হয় ভালো সব ছেলেরা সিংগেল হয়েই থাকে। যারা পারে দিনে ১০ টা ডিরেক্ট প্রপোজাল দিতে তারাই পেয়ে যায় কাউকে না কাউকে। এইসব প্রেমের কোন শব্দ থাকে না। প্রেমে না পরেই তারা প্রেম করে। আবার কয়েকদিন পর শেষও হয়ে যায়। আবার হয়। আবার শেষ হয়। বাস হার্ট ফাউন্ডেশন পাস করে যাচ্ছে। একটু পরে নেমে যেতে হবে। বাসের ভিতরে জীবন্ত নাটক চলছে। এই নাটক ছেড়ে নামতে ইচ্ছে করছেনা। এই নাটক শুধু এই বাসেই নয়। চলছে আশেপাশের সব বাসে। এই শহরের প্রতিটা যায়গায়।
২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৬:২৭
বনসাই বলেছেন: বেশ লিখেছেন, এই দৃশ্য চলে প্রতি যাত্রায়; শুধু এটাই নয় আরো নানা ঘটনাই ঘটে। প্রতিটি বাস তার যাত্রীর চরিত্র ক্ষণিকের তরে বদলে দেয়।
৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪৫
পদ্মপুকুর বলেছেন: একদা লোকাল বাসই ছিল একমাত্র বাহন, কিন্তু বাসে এখন আর ওঠার সুযোগ পাই না। তাই এইসব আনন্দক্ষণগুলো মিস করি খুব।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১৫
প্রতিভাবান অলস বলেছেন: বেশ লিখেছেন