![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবে মাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছি। আমাদের বাসা ছিলো টিন-শেড বিল্ডিং। কয়েকটা বিল্ডিং চারদিক দিয়ে বাড়ির উঠোন ঘিড়ে রেখেছে। পাশের বাসার এক ভাই নাদুসনুদুস, কালো-সাদা মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ান গরুর বর্নের এক কুকুর ছানা নিয়ে হাজির। বিড়ালের সাইজের কুকুরের বাচ্চাটাকে নিয়ে এসেছেন পুষবেন বলে। কুকুরটাকে বাসার উঠোনে বেধে রাখা হয়েছে। সারাদিন চিল্লাচিল্লি করে আস্তে আস্তে কুকুরটা এ বাসার পোষ্য হয়ে গেলো। কুকুরটা ছিলো আমার অনেক পছন্দের। তার নাম রাখা হয়েছে টমি। ভাইয়ের দেয়া নাম। নাম ধরে ডাকলেই দৌড়িয়ে আসে। কুকুরটাকে আমি আর পাশের বাসার ভাই দুইজন মিলেই পুষছি। ভাই কুকুরটাকে খাওয়ায় বড়লোকি খাবারদাবার। সে তুলনায় আমি তার জন্য গরিবি ব্যাবস্থাই করি। তবুও কুকুরটা আমাকেই তার মাস্টার হিসেবে বেছে নিয়েছিলো। কারন জানা নেই। কুকুরের ছানা বড় হয়ে বাঘা কুকুরে পরিণত হয়ে গেলো। গায়ের বর্ন কালো বলে দেখতেও হিংস্র। তখনো এ ছিলো আমার খুব পছন্দের।
আমি এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে। কথাগুলো অনেক বছর আগের। কুকুরটা আমাদের বাসায় দেড় বছর ছিলো। এর মাঝে কয়েকবার কুকুরটাকে বাসা থেকে অনেক দূরে ফেলে আসা হয়েছিলো। কিন্তু রাস্তা খুজে খুজে আবার বাসায় চলে আসতো। পরবর্তিতে কুকুরটাকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পোষা প্রাণি বলে বাইরে বেশিদিন সারভাইব করতে পারেনি। মারা গিয়েছিলো কোন এক ভাবে।
আমি কুকুর ভীষন রকম ভয় পাই। কুকুরকে ভয় পাওয়া নাকি এক প্রকার অ্যাবনরমালিটি। এর নাম ডগ-ফোবিয়া। মনে হয় আমার পোষা প্রথম এবং শেষ কুকুরটির মৃত্যুর পরেই আমাকে এই রোগে ধরেছে। কুকুরের সামনে আমি প্রচন্ড পরিমান আতঙ্কিত থাকি। উল্টাপাল্টা ও সন্দেহজনক আচরণের জন্য আমিই মনে হয় একমাত্র ব্যাক্তি যে সবচেয়ে বেশিবার কুকুরের দৌড়ানি খেয়েছি। আমার মনে হয় পৃথিবীর সকল কুকুর আমাকে সন্দেহের চোখে দেখে। কুকুর আমার খুবই প্রিয় একটি প্রানি। প্রিয় কিছুকে ভয় পাওয়া মোটেও সুখকর নয়।
জনমানবহীন ফাঁকা রাস্তায় একটা মানুষ কি কি নিয়ে ভয়ে থাকতে পারে?? ছিনতাইকারী অথবা সন্ত্রাসী। কেউ কেউ হয়তো ভুতপ্রেত। মেয়েরা হয়তো ভয় পেতে পারে বখাটে ইভটিজারদের। কিন্তু আমার মাথায় ঘোরে একটাই চিন্তা। সামনে কয়েকটা কুকুর বসে নেই তো?? আর সময়টা যদি হয় রাত তাহলেতো আর কথা নেই। হার্ট রেট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায় এবং মুখে বিদ্যুৎ গতিতে সৃষ্টিকর্তার নাম চলে আসে। আমার এক বন্ধু আমাকে উপদেশ দিয়েছিলো বাসায় ডজনখানেক কুকুর রাখতে। এতে করে নাকি আমি সৃষ্টিকর্তাকে আসতে যেতে স্মরন করবো। আমার নামে সোওয়াব বেড়ে যাবে বহুগুণ। সেদিনই আমি বুঝেছিলাম বন্ধু আমার অনেক বড় হবে।
আমি নিশ্চিত নই কিন্তু শুনেছি বোবা শ্রেনীর প্রানীদের বিশেষ করে কুকুরের নাকি মানুষের মাইন্ডরিডিং এর ক্ষমতা আছে। কথাটা সত্যি হলেও আমার মাইন্ডরিড করার ক্ষমতা মনে হয় দূর্ভাগ্যবশত কোন কুকুরের হয়নি। যেখানে আমি তাদের শত্রু নই বরং তাদের আমি পছন্দ করি সেখা তারা আমাকে কামড়ানোর উদ্দেশ্যে পিছন ছোটে।
"আরে কুত্তা কিছু করব না", "তুমি দৌড় দিওনা, কুত্তা কামড় দিবনা", "কুত্তা তোমার লগে খেলতে আহে" ইত্যাদি অনেক উপদেশ কুকুরের দাবড়ানিতে পরে অসংখ্য পথচারীর থেকে পেয়েছি। কিন্তু আমি তাদের দুইটা ব্যাপার বোঝাতে পারিনি।
(১) কুকুর আমার কাছে খেলতে আসে নাকি কামড়াতে আসে তা আমি বুঝবো কেমন করে??
(২) যদি খেলতে আসতেসে ভেবে আমি দাঁড়িয়ে থাকি শেষে কামড় খেতে হয় তখন ব্যাপারটা কেমন হবে??
একজনের মাথায় আমি প্রশ্নগুলি গাথাতে পেরেছিলাম। কিন্তু তার ব্যাখ্যা শুনে আমার আতঙ্ক আরো কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে। তার সহজ কথা,
""কামড় দিলে কি হবে?? সমস্যা তো নাই। এখন আর নাভিতে চোদ্দ সিরিঞ্জ নিতে হয়না। এক ভেক্সিনেই কাজ হয়।""
ডাক্টাররা নির্দয় হয়। তাই বলে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে থেকেই এতোটা নির্দয় হওয়া যায় জানা ছিলো না। তার কথার শোনার পর বড় একতা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলোনা।
বর্তমান সময়টাও খুব খারাপ যাচ্ছে আমার। এলাকায় ঢুকতে চারটা কুকুরকে পাস কাটিয়ে আসতে হয়। সাথে একটা বাচ্চাও আছে। প্রতিদিনই যেনো বেশ পরিমান বেড়ে উঠছে। পাঁচটা একসাথে দাবড়ানি দিলে রক্ষা নাই।
সবশেষে আমি একসময় বাঘা এক কুকুর পুষতাম তা পরিচিতদের বিশ্বাস করানো যায় না। আমার নিজেরই মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয়না তাদের কি দোষ।
২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৩
চিত্রা এক্সপ্রেস বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। দোয়া করবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৪২
ক্স বলেছেন: আপনি যদি মুসলিম হন, তাহলে জামায়াতে ফজর নামাজ পড়ার অভ্যাস করুন। কুকুরের ভয় আমারো একটু আধটু ছিল। আমার দিকে তাকিয়ে কোন কুকুর চিৎকার করলে মাথার চুল দাঁড়িয়ে যেত, কিন্তু রেগুলার ফজর নামাজ জামায়াতে পড়ার কারণে আমার ডগ ফোবিয়া এখন নাই বললেই চলে।
কামড়ানো কুকুর কি দেখলে চিনবেন?
১। কামরানো কুকুর হাঁকডাক করেনা - খুব গম্ভীর থাকে। গলার স্বর খুব ভারী হয়।
২। লেজ কুঁকড়ানো থাকেনা, একদম সোজা থাকে - ছাগলের মত।
৩। সবসময়ে হাঁপাতে থাকে, মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে লালা ঝরে।
৪। বেশিরভাগ সময় অলসভাবে শুয়ে থাকে - হাঁটা চলা বেশি করেনা।
এ ধরণের কোন কুকুর চোখে পড়লে দেরি না করে সিটি কর্পোরেশনে খবর দিন।