নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদনান

এগুলো আমার লেখা। লেখাগুলো কপিরাইটেড।

আদনান ফায়সাল

তিনিই কাঁদান, তিনিই হাসান। তিনিই মারেন, তিনিই বাঁচান। সমস্ত প্রশংসা শুধু তাঁরই।

আদনান ফায়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুস্বাস্থ্য অর্জনের সহজ কিছু টিপস

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪১



কাতার এয়ারওয়েজে এবার কানাডা থেকে বাংলাদেশ যাওয়ার পথে মাইকেল মোসলের কিছু ডকুমেন্টারী দেখলাম। ডকুমেন্টারীগুলির মূল প্রতিপাদ্য ছিল – ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস। ভদ্রলোক বললেন – আমরা যদি প্রচলিত ডায়েট ও এক্সারসাইজ প্ল্যানগুলির দিকে তাকাই তাহলে দেখব এগুলোতে যা বলা হয়েছে তা একজন অফিসগামী সাধারণ মানুষের লাইফস্টাইলে বসানো খুব কঠিন। ডায়েট প্ল্যানগুলিতে অনেক মজার খাবার খেতে নিষেধ করা হয়, আর এক্সারসাইজ প্ল্যানগুলিতে যে পরিমাণ ব্যায়াম করতে বলা হয় তার জন্য সময় বের করা দু:সাধ্য। এই পরিস্থিতিতে ভদ্রলোক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য-গবেষকদের সাথে আলোচনা করে ডায়েটিং ও এক্সারসাইজিংয়ের কিছু ‘হ্যাক’ (শর্টকাট) বের করেছেন। আমি সেগুলির আলোকে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরছি:

১) বিভিন্ন রকম ডায়েটিং নিজের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে মাইকেল মোসলে দেখেছেন যে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী ডায়েটিং হলো সপ্তাহের ৫ দিন যা ইচ্ছা তাই খাওয়া আর বাকী দুইদিন রোজা রাখা (5:2 diet)। কিন্তু, এই রোজা রাখার দিনগুলিতে ইফতারীর পরে নিজেকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে খেয়ে গেলে চলবে না। ইফতারীর পরেও সংযমের সাথে খাওয়া দাওয়া করতে হবে – প্রচুর পরিমানে ফল, সবজি ও পানি খাওয়া যেতে পারে।

২) রোজা রাখলে কোলেস্টেরল, ব্লাগ সুগার ও বডি ফ্যাট নিয়ন্ত্রনে আসে, এন্টি-বডি তৈরী হয় ফলে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, শরীরের বুড়িয়ে যাওয়ার গতি মন্থর হয়। মাত্র ৫ সপ্তাহ এই ডায়েটিং রুটিন ফলো করে মাইকেল মোসলে সাড়ে ছয় কেজি ওজন কমিয়েছেন, বডি ফ্যাট ২৭% থেকে ১৯% এ নিয়ে এসেছেন। তার আই,জি,এফ-১ (যা ক্যান্সারের জন্য অন্যতম দায়ী উপাদান) কমে অর্ধেক হয়ে আসে, কোলেস্টেরল ও ব্লাগ সুগার লেভেল স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে।

৩) মাইকেল মোসলে সপ্তাহে দুইদিন রোজা রাখার কথা বললেন। আর আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো – হাদিসেও বলা আছে রাসূলুল্লাহ ﷺ সপ্তাহে দুইদিন রোজা রাখতেন – সোমবার ও বৃহস্পতিবার। আরেক হাদিসে – মাসের মাঝের তিন দিন রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। আমার ধারণা – যদি গবেষনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে প্রতি মাসে টানা তিনদিন রোজা রাখাও স্বাস্থ্যের জন্য সমান কার্যকরী।

৪) ব্যায়ামের ক্ষেত্রে – প্রতিদিন জিমে যেয়ে এক ঘন্টা ঘাম ঝরানোর পর মাত্র এক গ্লাস জুস পান করলেই সব পরিশ্রম বৃথা হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয় – বেশীরভাগ মানুষের জন্য দিনে ১ ঘন্টা জিমের জন্য সময় বের করাও কষ্টসাধ্য। মাইকেল মোসলে দেখিয়েছেন – ১ ঘণ্টা জিমে যেয়ে ব্যায়াম করার চেয়েও বেশী উপকারী হলো চলতি-ফিরতি পথে ব্যায়াম করে নেয়া যাকে NEAT (Non-exercise activity thermogenesis) বলে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর হলো – ঘন্টায় কমপক্ষে পাঁচ মিনিট চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা, আর তা না পারলে অন্তত দাঁড়িয়ে থাকা। এর সাথে – যত বেশী সম্ভব বসে না থেকে হাঁটা, সুযোগ পেলেই এলেভেটর ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করা, বাসের সিটে না বসে দাঁড়িয়ে থাকা, টয়লেটে যাওয়ার সময় একটু ঘুরে যাওয়া – এভাবে করে বিভিন্ন কাজের মধ্যেই ব্যায়ামকে জড়িয়ে নেয়া। খুব সহজ এই কাজগুলি করে মাইকেল মোসলে দিনে ৫০০ ক্যালরী বার্ন করতে সক্ষম হয়েছেন, যা কিনা এক ঘন্টা ট্রেডমিলে কষ্টসাধ্য দৌড়ানোর সমান।

৫) আর দরকার ঘাম ঝরানো ব্যায়াম (High intensity training)। কতক্ষণের? সারপ্রাইজিংলি – সপ্তাহে মাত্র ৩ মিনিটের ঘাম ঝরানো ব্যায়ামই যথেষ্ট। এই ৩ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে ৩ দিনে, অর্থাৎ যেদিন ব্যায়াম করা হবে সেদিন করতে হবে মাত্র ১ মিনিট। এই ১ মিনিট ব্যায়াম আবার করতে হবে ২০ সেকেন্ডের তিনটি স্লটে কিছুক্ষণ জিরিয়ে জিরিয়ে। সবচেয়ে ভালো হয় এই ২০ সেকেন্ডে যদি প্রচন্ড জোরে সাইক্লিং করা যায়। সেটা সম্ভব না হলে প্রচন্ড জোরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়ানো যেতে পারে। যে ব্যায়ামই করা হোক না কেন, এই ২০ সেকেন্ডে ঘাম ঝরাতে হবে। চার সপ্তাহে মাত্র ১২ মিনিট ঘাম ঝরানো ব্যায়ামের পর মাইকেল মোসলে তার শরীরের ইনসুলিন সেনসিটিভিটি ২৩% বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন – যার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তিনি প্রবলভাবে কমাতে সক্ষম হয়েছেন।

৬) গবেষণায় দ্রুত হাঁটার অস্বাভাবিক রকমের উপকারীতা পাওয়া গেছে। তাই আমাদের উচিত হবে হাঁটার সময় এটা-ওটার দিকে না তাকিয়ে থেকে, মোবাইল টেপাটেপি না করে যতটুকু সম্ভব দ্রুত গতিতে হাঁটা। এই উপদেশটার সাথেও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহর আশ্চর্য রকম মিল পাওয়া যায়। শামায়েল তিরমিযীর হাদিস থেকে আমরা জানি – রাসূলুল্লাহ ﷺ হাঁটার সময় দ্রুত হাঁটতেন। তিনি এত দ্রুত হাঁটতেন যে তাঁর হাঁটা দেখে মনে হতো তিনি বুঝি কোনো ঢালু জায়গা দিয়ে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছেন।

মাইকেল মোসলের শেষ কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ন। তিনি বলেছেন – একই ডায়েট ও এক্সারসাইজ প্ল্যান সবার জন্য সমানভাবে কাজ না-ও করতে পারে। একেকজনের শরীর ডায়েট ও এক্সারসাইজ এর পর একেকভাবে রিয়্যাক্ট করতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একজন এক্সপার্ট এর সাথে আলোচনা করে নিজের জন্য স্যুটেবল প্ল্যান বের করে নেয়া।

(লেখকের ব্যক্তিগত ব্লগ)

সূত্র:

১) Eat, fast and live longer – Michael Mosley

২) The truth about exercise – Michael Mosley

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:১৪

গোধুলী রঙ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। সপ্তাহে দুদিন রোজা রাখার চেষ্টা করি, কোন সপ্তায় পারি, কোন সপ্তায় একদিন আবার কোণ সপ্তায় নাই। তবে যা ইচ্ছে তা খাবার সামর্থ ৫ দিনে নাই।

ধন্যবাদ।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৮

আদনান ফায়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ। মহান আল্লাহ্‌ আপনার মঙ্গল করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.