নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদনান সৈয়দ

আদনান সৈয়দ। জন্ম : ঢাকা। পেশাঃ ফাইনানসিয়াল এনালিষ্ট এবং প্রফেশনাল বিজনেস প্লানার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমবিএ। নেশা: লেখালেখি ও সাংবাদিকতা। বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। মেইল: [email protected]

আদনান সৈয়দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মায়ের সোনার নোলক

২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১:৪০







প্রতিদিন ঘুমোতে যাবার আগে আমি আমার মার সাথে কথা বলি। এটা আমার প্রবাস জীবনের এক অলিখিত নিয়ম। আমি যত ব্যাস্তই থাকি না কেন মার জন্য এই সময়টা আমার বরাদ্ধ থাকবেই। আমার মাও তার পুত্রের মতই। আমার সাথে কথা না বললে তার দিন কাটে না। দিন কাটেতো তার রাত কাটে না। আমি জানি আমার মত আর সব প্রবাসীদের জীবনেও মাকে নিয়ে আছে প্রায় একই রকম গল্প। বরাবরের মত সেদিন মাকে তার সেল ফোনে কল করলাম। রিং টোন বেজেই চলছে কিন্তু ওপাশ থেকে আমার সেই প্রিয় ”হ্যালো বাবা” ডাক শুনতে পাই না। বুকে ভেতর ধরাক করে কিসের যেন আতংকের বাজনা বাজে! তাহলে কি মা-টাও সেই বাবার মতই আমাকে ফাঁকি দিল? হায়রে প্রবাস জীবন!! আর কত আমার কাছ থেকে তুই নিবি? আমি আর কত দিব? জীবনের সব স্বাদ-আহলাদ জলাঞ্জলি দিয়েছি, দেশের মানুষ, মাটি ত্যাগ করেছি, আত্বিয়-স্বজন, প্রিয় মানুষ সবাইকে সেই কোন সে দূরে রেখে এসেছি। প্রবাস জীবনে বাবাকে হারিয়েছি। এখন হারাধনের এনমাত্র সম্বল এই মাকেও হারাবো? হাবিজাবি অনেক ভয়ানক খারাপ কিছু ভেবেটেবে ভয়ে ভয়ে ছোট ভাইকে কল করলাম। না, মা আছেন। তবে হাসপাতালে। অনেক অসুস্থ। শারিরিক ভাবে খুবই দর্বল। বার বার নাকি আমার কথাই বলছিলেন। হায়রে আমার মা। মা জননী আমার।



মা আমার অবাল্য বন্ধু। এক অসাধারন বন্ধু বলতে যা বোঝায় তিনি ঠিক তাই। একটা ঘটনা এখনো মনে আছে। তখন আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমার মা যাবেন আমার নানা বাড়ি বেড়াতে। তিনি যাবেন একা একা। আমরা ভাইবোন আর বাবা যাব সপ্তাহ দুয়েক পরে। আমি আর আামার বাবা আমরা দুজন মাকে নিয়ে যাচ্ছি কমলাপুর রেল স্টেশনে তাকে ট্রেনে তুলে দিতে। মা বসলেন জানালার ধারে একটা সিটে। চোখ মুছে যখন মাকে বিদায় জানাতে যাবো তখন মাতো আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বাবা কোন রকম আমাকে মায়ের আঁচল থেকে মুক্ত করলেন। বাবার সেই আশার বাণী, ” কিছুদিন পরতো আমরা সবাই কত মজা করতে করতে যাব”। আমরা ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। মা একা একা চললেন আমাদের মামা বাড়ির পথে। এদিকে ট্রেনটা ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল। আমার বুকের ভেতরটা কে যেন হাতুরী দিয়ে দুমরে-মুচরে ভেঙ্গে দিয়ে গেল। আমার কেন যানি মনে হল আমার মা আমার কাছ থেকে অনেক দুরে চলে যাচ্ছেন। আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে সেই যে আমি চিৎকার দিয়েছিলাম তখন আমার সেই চিৎকারে কমলাপুর স্টেশনে লোক জড়ো হওয়ার উপক্রম। ধীরে ধীরে নিষ্ঠুর ট্রেনটা আমার চোখের সামনেই আমার মাকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। শুধু আমার ঝাপসা চোখে আমার মায়ের মুখটা গেঁথে রইল। বাড়িতে আসার পর আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম। গায়ে প্রচন্ড জ্বর। দুুদিন পরই দেখি একটা অফ হোয়াইট শাড়ি আমার নাকের খুব কাছে এসে আমার কপালে হাত রাখেেছ। আর সেই শাড়ি জুরে আমার মায়ের ঘ্রাণ। আমার কপালে হাত রেখে শুধু বললেন, ” এত বোকা কেন তুই? আমি কি মরে গেছি?”। আমি তখন এক লাফে মাকে জড়িয়ে আরেক প্রস্থ কান্না। সেই কান্নার দাগ আমার মনে এখনো লেগে আছে। আমরা সব প্রবাসীরাই সেই কান্নার দাগ নিয়ে সামনের দিকে হাটি। কারন আমাদের হাটতে হবেই। থেমে থাকাতো আমাদের কাজ না। বুকে পাথর বেঁধে আমরা ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে যাই। আমাদের শোক, দুঃখগুলো কে অজানা শহরের চিক চিক বাতির আলো দিয়ে ঢাকতে চেষ্টা করি। কিন্তু সত্যি কি পারি? প্রবাসীর হৃদয়ের এই গহীন কূপে জমে থাকা এই কান্নার দাগ মনের অজান্তেই আমাদের সবারই জন্ম দাগের মতই চির সাথী হয়ে যায়।



শুনতে পেলাম আমার মাকে আইসিইউ তে নেওয়া হবে। মা, তুমি কি খুব কষ্ট পাচ্ছ? তোমার কষ্ট আমাকে দাও। তোমার এই দুর প্রবাসী ছেলেটা তোমার কষ্ট নিয়ে সারা জীবন বাঁচতে চায়। তুমি খুব তাড়াতাড়ি সেড়ে উঠো। বাবার মত আমাকে ফাঁিক দিয়ে কিন্তু চলে যাবে না। তুমিতো জান, কত মহত গুরু দায়িত্ব নিয়ে আমি এই তোমার ছেলে কত্ত দুর এই দেশে এসেছি। আমাকে আর কটা দিন সময় দাও, প্লিস। আর আমাকে ক্ষমা কর। আমি তোকে অনেক ভালোবাসিরে মা।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ২:২১

সাহোশি৬ বলেছেন: ব্লগ লেখা বাদ দিয়ে প্লেনের টিকেট কেটে মায়ের কাছে দৌড়ান। বিদেশে কি ধুন-ফুন করতেছেন, এসব ধু-ফুনের অনেক সময় পাবেন, মা চলে গেলে মাকে আর ফিরে পাবেন না।

এইবার আমি দেশে যাবার আগে বস বলল, সাহোশি নতুন প্রজেক্ট শুরু হবে একমাস পরে যাও, আমি বললাম, আমি দেশে যাচ্ছি মাকে দেখতে, প্রজেক্ট গেলে প্রজেক্ট পাব, মা চলে গেলে মাকে আর পাব না। দরকার হলে তোমার প্রজেক্ট একমাস পর শুরু কর।

আমার বসও আমার মতোই প্রবাসী। আমার কথা শুনে কাকে কাকে কিসব ফোন টোন করল, ইমেইল করল, দুই দিন পরে জানাল, সে-ও তার মাকে দেখতে দেশে যাচ্ছে, প্রজেক্ট শুরু হবে একমাস পর। আমার বসের বস বলল, তোমরা সবাই মাকে দেখতে এত দূর দেশে যাচ্ছ, অথচ আমার মা এই দেশে থাকার পরও আমি কতদিন মাকে দেখতে যাই না। আমিও এক সপ্তাহের ছুটি নেব মাকে দেখতে যাবার জন্য, ঐ দিনই নাকি সে তার মাকে ফোন করে বলেছে সে মাকে দেখতে আসছে। হঠাৎ ছেলের আসার খবর শুনে খুশীতে মায়ের হার্ট এটাক হবার মতো অবস্থা।

২৫ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৫৩

আদনান সৈয়দ বলেছেন: ধন্যবাদ সাহোশি। টিকিট হয়ে গেছে....পড়শু বাংলাদেশ।

২| ২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ২:২৪

হ্যামেলিন এর বাঁশিওয়ালা বলেছেন: সাহোশি৬ এর সাথে একমত।

২৫ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৫৪

আদনান সৈয়দ বলেছেন: পড়শু বাংলাদেশে যাবো। দোয়া করবেন।

৩| ২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ২:৫৮

আব্দুল্লাহ নাটোর বলেছেন: ভাই আমার মা আমাকে এমণ ভাবে অনুভব করলে খোঁদার কসম দৌড়াইয়া হইলে ও মার কাছে চলে যেতাম

২৫ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৫৪

আদনান সৈয়দ বলেছেন: হুম, মা এমনই এক বিষয়...দোয়া করবেন আমার মার জন্য।

৪| ২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৩:০২

তাহ্জীর ফাইয়াজ চৌধুরী বলেছেন: আম্মুর গন্ধটা অনেক আপন !!......আমার বাবাও আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে পাঁচ বছর আগে !......আমি তখন ক্লাস ফাইভে !.....এসবের কিছু বুঝতাম না !,.....তবে একটা দিক থেকে আমি সুখী ! আমার মা আছেন !! এ বয়সেও আমার মা আমার জন্য অনেক কষ্ট করে যাচ্ছেন ! আমি আল্লাহর কাছে একটাই চাই যাতে এ কষ্টের সামান্য প্রতিদান দিতে পারি !!........ভালো লিখছেন ভাই !! আপনার মা তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠুক এ কামনা করি !

২৫ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৫৫

আদনান সৈয়দ বলেছেন: ধন্যবাদ তাহজীর।

৫| ২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৩:১৬

গল্পসল্প বলেছেন: আমি থাকি ৭ম তলায়। আমার মা আমাদের বাড়ীর ৪র্থ তলায় কখনো উঠেনি। আমি ৭ম তলায় চলে আসাতে মা প্রতিদিন আমার রুমে এসে কতই না গল্প। কত কথা সবই মনে হয় আমার জন্য বরাদ্ধ করা। প্রতি রাতে কথা বলে খাবার সেরে দরজা দিয়ে যখন বের হই মা তখন দরজা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তখন আমার মনে হয় আমি বুঝি অনেক দুরে চলে যাচ্ছি। ......... এ ভালোবাসা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আমার মা আমার ভালোবাসার প্রথম প্রহর।

৬| ২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৩:৫৮

ঝটিকা বলেছেন: সাহোশি৬ র সাথে আমিও একমত।

মা যে কি জিনিস তা দু-দশ লাইনে তার কিছুই প্রকাশ করা যাবে না। সমস্ত পৃথিবীর এক অপার সৃষ্টি এই মা। সকল মা'দের জন্য দোয়া রইল।

২৫ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৫৬

আদনান সৈয়দ বলেছেন: ঝটিকা, চোখ বুজে আম্মার জন্য দোয়া করেন। আর তিন দিনের মধ্যেই ইনশাল্লাহ আম্মাকে দেখবো..

৭| ২৫ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:০৬

পড়শী বলেছেন: আপনার মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আপনার কাছে ফিরে আসুন, এই কামনায়।

২৫ শে জুলাই, ২০১২ ভোর ৪:৫৭

আদনান সৈয়দ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়শী

৮| ২৫ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:২১

রুপ।ই বলেছেন: আপনার মার জন্য রইল অনেক দোয়া, মাকে হারিয়েছি আজ থেকে ৯ বৎসর আগে কিনত্ত কেন যানি মনে হয় মা আমাকে ডাকছে ডাক নাম ধরে। মাঝে মাঝে মনে হয় মা বলছেন তুই একটু আমার বাসায় এসে
rest নে কেমন ক্লান্ত দেখায় তোকে। হয়রে আজ চারপাশে এত্ত মানুষ কই কেউ তো এভাবে বলে না । মা আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি ।

৯| ২৫ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১১:১০

অতুল মিত্র বলেছেন: অবস্থা ভাল থাকলে মাকে সাথে নিয়ে আসেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.