নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিপ্রাপ্ত একমাত্র ফেরকা

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:২৬


মুলঃসৈয়দ গোলাম আসকারী
সম্পাদনাঃ মোঃ নিজামুল হক

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন ওয়াসসালাতু ওয়াসসামু আ’লা রাসুলিহি ওয়া আলিহিত ত্বাহিরিন।আম্মা বা’দ,
ক্কালালাল্লাহু সুবহানাহু তায়ালাঃ
“ তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসুল প্রেরন করেছেন,যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমুহ,তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত।ইতিপুর্বে তারা ঘোর পথভ্রস্টতায় লিপ্ত ছিল”।[সুরা জুমুয়াহ,আয়াত#২]
আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন যে,মানুষ যখন প্রকাশ্য গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল তখনই আমি ১জন রাসুলকে প্রেরন করলাম।আর এজন্য প্রেরন করলাম যেন এই রাসুল আমার আয়াতসমুহকে তেলাওয়াত করে প্রজ্ঞা ও কিতাবের জ্ঞান দান করে,তাদের নফসকে পবিত্র করে প্রকাশ্য গোমরাহী থেকে বের করে আনে।যেমনটি কোরান মজিদ বলছে ঠিক তেমনটিই হযরত মুহাম্মাদ
(সাঃ) করে দেখিয়েছিলেন।
রাসুল(সাঃ)পৃথিবীতে এলেন,হেজাজে(সৌদী আরবের আগের নাম যা রাসুল সাঃ দিয়েছিলেন) তাবলীগ শুরু করে দিলেন।যে হেজাজে গোমরাহীর মুল কেন্দ্র ছিল।তাদেরকে আয়াতগুলো তেলোয়াত করে শুনালেন,কিতাবের জ্ঞান দান করলেন,তাদের নাফসকে পবিত্র করলেন।আর ঐ মানুষটি,যে মানুষ পশুর চেয়েও অধম হয়ে গিয়েছিল,তাদেরকে আবার মানুষ বানালেন।তাদের মধ্য থেকে অনেককে উচু মানের মানুষ বানিয়ে দিলেন।কেমন করে বানালেন?
আমরা জানি যে,রাসুল(সাঃ) ইসলামের দর্শন উপস্থাপন করেছিলেন যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো।কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর,এই ক্ষনস্থায়ী দুনিয়াকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে/পদ্বতিতে ব্যবহার কর।এখানে এমনভাবে জীবনযাপন কর,যেমনটি আল্লাহপাক চান।ঐ কাজগুলি সম্পন্ন করতে তিনি বলেছেন।ঐ কাজগুলি পরিহার কর যেগুলি আল্লাহ করতে নিষেধ করেছেন। এর বিনিময়ে তোমরা জান্নাত পাবে।যা কিছু তোমরা চিন্তা কর সবই জান্নাতে পাবে। এই দর্শনকেই রাসুল(সাঃ) তাদের অন্তরগুলোতে গেথে দিয়েছিলেন,যে অন্তরগুলো বিশ্বাস করল্‌ তারা অন্যায় ও খারাপ কাজ পরিহার করলো এবং নেকীর পথে ধাবিত হলো।এটা খুবই স্বাভাবিক যে,জান্নাতই এমন একটি ভরসা যার আশায় আজো মানুষ নেকীর দিকে ধাবিত হয়।
আমরা রাসুলের(সাঃ)একটি গুরুত্বপুর্ন হাদিস জানি,যে হাদিসটি ওলামায়ে কেরাম লিপিবদ্ব করেছেন যার একটি সনদ হল, “ আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ ফেরকা জন্ম নেবে যার মধ্যেকার কেবল মাত্র একটি ফেরকা জান্নাতে যাবে বাকী ৭২টি জাহান্নামে যাবে”।আমাদের বলা উচিত নয় একথা বলা যে তুমি জান্নাতে যেতে পারবে না।কিন্তু আপনারাই বলুন,একজন লোক যার ফুসফুস নষ্ট হয়ে গেছে,যদি কেউ তার ঐ রোগের কথা জানে অথচ এই চিন্তা করে তাকে জানাতে সাহস পায় না যে লোকটি তার এই মারাত্নক প্রানঘাতী রোগের কথা শুনে মনে কষ্ট পাবে।বরং বলে যে, ‘তুমি তো ভালই আছো’।চিন্তা করুন,বাহ্যিক চোখে তো সে রোগীর উপকার করছে কিন্তু আসলে সে তার ক্ষতি করছে।যদি তার আসল রোগের কথা জানিয়ে দেয় তাহলে রোগী তার চিকিতসা করাতে পারে এবং নিজের আয়ু বাড়িয়ে নিতে পারে।
এবার আপনারাই বলুন,আমার সামনে দুটো কথা আছে।একটা কথা তো এই যে, “ প্রত্যেক মুসলমানই পরস্পর ভাই ভাই”।আমি যদি বলি যে, “ তুমি যা কিছু করছো,যে মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত হয়ে করছো এবং যেগুলি জেনে বুঝে ও বিশ্বাস করে করছো,করতে থাকো,অবশ্যই জান্নাত পাবে”।অথবা নিজের মুসলমান ভাইদেরকে এই কথা দ্বারা সাবধান করে দেই যে, “ যে নবীর কলেমা পাঠ করে জান্নাতের আশায় আমরা যা করছি সেই নবী(সাঃ) সংবাদ দিয়েছেন যে, “ তোমাদের মাঝে ৭৩টি ফেরকা জন্ম নেবে,মাত্র একটি ফেরকা জান্নাতে যাবে,বাকী সব কয়টা ফেরকা জাহান্নামে যাবে”।তখন কেউ কেউ মনে আঘাত পেতে পারেন যে, “ একটি ফেরকাই জান্নাতে যাবে,আর ইনি তো নিজের ফেরকা সম্পর্কেই জান্নাতে যাওয়ার কথা বলবেন”।কিন্তু থামুন,আমি তো কেবল এতটুকুই বলতে চাই যে, এখনই এটা চিন্তা করবেন না যে কোন ফেরকা যাবে?কিন্তু এটা অবশ্যই চিন্তা করুন,বিষয়টি যখন নির্ধারিত যে একটি ফেরকাই জান্নাতে যাবে আর বাকীরা যাবে না।তাহলে ভায়েরা আমার, বিচক্ষনতা তো এটাই যে আমরা ভাল করে যাচাই-বাছাই এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে নেব যে আমি সেই ফেরকার অন্তর্ভুক্ত কি না, যে ফেরকা জান্নাতে যাবে?কেন,কারন আমরা ত এই আশায় দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবন অতিক্রান্ত করছি যে, “ আমি যে ফেরকাতে আছি সেই ফেরকাই জান্নাতে যাবে”। অথচ কিয়ামতের দিন আমি যখন জান্নাতের দরজায় যেয়ে উপস্থিত হবো তখন দরজা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে এবং বলা হবে তোমাদের কাছে তো “জান্নাতের চাবি” নেই।জান্নাতের চাবি কিভাবে পাব তা আজ আমাদের জানা খুব দরকার।আজ সেই চাবিটি আপনাদের সামনে উপস্থিত করছি। আপনাদেরকে যা বলছি তা ‘বাহ্যিক কান’ দ্বারা নয়,বুদ্বি-বিবেক সম্পন্ন ‘অন্তরের কান’ দ্বারা শুনবেন। আমি যখন রাসুলের(সাঃ) এই হাদিস পাঠ করলাম যে, “ ৭৩ ফেরকা হবে, মাত্র একটিই জান্নাতে যাবে,বাদবাকী সব জাহান্নামে যাবে” পাথ করা মাত্রই আমার মাথা থেকে বন্দু বিন্দু ঘাম বের হতে লাগল,আমার নিঃশ্বাস দ্রুতগতিতে সঞ্চালিত হতে লাগল,বুক ধরফড় করতে লাগলো,আল্লাহ না করুন আমিও সেই ফেরকারই অন্তর্ভুক্ত,যে ফেরকা জান্নাতে যাবে না?
আমার বিশ্বাস,যে কোন মুসলমান উক্ত হাদিসকে আমার মত করে চিন্তা করবে তারও ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দেবে।কারন এই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে যে, “ সবকিছু সঠিকভাবে পালন করার পরও যখন সেখানে হাজির হবো তখন যদি জান্নাত না পাই?”যেহেতু রাসুল(সা;) বলেছেন,”জান্নাত তো মাত্র একটি ফেরকাই পাবে”,আর আমার ফেরকা যদি সেই ফেরকা না হয়,তাহলে কি হবে?
বিষয়টিকে আরো বিশ্লেষন করে বলি যেন সবাই বুঝতে পারে।এই হাদিসের সারমর্ম তো এই যে,৬ ইমামে বিশ্বাসী শিয়ারা যদি জান্নাতে যায় তাহলে ১২ ইমামে বিশ্বাসী শিয়ারা যেতে পারবে না;যদি ১২ ইমামে বিশ্বাসী শিয়ারা জান্নাতে যায় তাহলে ৬ ইমামে বিশ্বাসী শিয়ারা জান্নাতে যেতে পারবে না;যারা ‘ইমামত’ মানে না ‘খেলাফত’ মানে তারা যদি জান্নাতে যান তাহলে যারা খেলাফতে বিশ্বাসী নয় ইমামত মানেন তারা জান্নাতে যেতে পারবে না।আবার যারা ৪ ইমামে বিশ্বাসী এবং নিজেদেরকে ‘সুন্নী’ বলে দাবী করেন তারা যদি জান্নাতে যান তাহলে যারা ঐ ৪ ইমামে বিশ্বাসী নয় তাদের কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না।আবার যারা ১২ ইমামে বিশ্বাসী ও নিজেদেরকে ‘শিয়া’ বলে দাবী করে তারা যদি জান্নাতে যায় তাহলে সুন্নীরা জান্নাতে যেতে পারবে না।অন্যদিকে ‘ওহাবী’ নামে আরো একটি ফেরকা আছে,তারা যদি জান্নাতে যায় তাহলে শিয়া ও সুন্নী কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না।আবার ‘আহলে হাদিস’ নামে একটি ফেরকা আছে,তারা যদি জান্নাতে যান তাহলে অন্য কোন ফেরকা জান্নাতে যেতে পারবে না।‘কাদিয়ানী’ নামে আরো একটি দল আছে যারা নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করে থাকেন,তারা যদি জান্নাতে যায় তাহলে তো মুসলমানদের আর কোন দল,জামায়াত বা মাযহাবীরা জান্নাতে যেতে পারবে না।‘বেরেলভীরা’ জান্নাতে গেলে ‘দেওবন্দীরা’ যেতে পারবে না।যদি ‘ক্কাদেরিয়া তরীকা’র লোকেরা জান্নাতে যায়,তাহলে ‘চিশতীয়া তরিকার’ লোকেরা যেতে পারবে না।অন্যেরা যদি যায় তাহলে আমি যেতে পারবো না।আর আমি যদি যাই তাহলে আমি যে মাযহাব মানি ঐ মাযহাবের সকলেই জান্নাতে যাবে।একটি মাত্র ফেরকা জান্নাতে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে-“বাদ বাকী ফেরকাগুলো জাহান্নামে যাবে”।তাহলে এখন প্রশ্ন হলো,সেই ফেরকা কোনটি এবং কেন জাহান্নামে যাবে?
রাসুলকে(সাঃ) বলি,ইয়া রাসুলাল্লাহ!আপনি কেন ফেরকার সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছেন না?২-৪-১০টি ফেরকা জান্নাতে গেলে ক্ষতি কোথায়,একটি ফেরকাই কেন জান্নাতে যাবে?কিন্তু রাসুল(সাঃ) তো দুনিয়াতে আর নেই যে বলে কয়ে ফেরকার সংখ্যা বাড়িয়ে নেব।নবী(সাঃ) তো বলেই বিদায় নিয়ে চলে গেলেন যে, কেবল একটিই ফেরকা জান্নাতে যাবে।কেবল একটি জান্নাতে যাবে কারন বাকী সবকটি মিথ্যা ও ভ্রষ্ট।সত্য একের অধিক হয় না।
চিন্তা করুন,একটি ফেরকাই জান্নাতে কেন?যখন প্রত্যেক ফেরকার মুসলমানরাই কলেমা “লা ইলাহা ইলাল্লাহ-তে বিশ্বাস করে,প্রত্যেক ফেরকার লোকই তো ‘মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ’ বলে থাকে।তাহলে একটা ফেরকাই কেন জান্নাতে যাবে?সবাই যখন সালাত আদায় করে,তরীকা ভিন্ন হতে পারে,তবুও সালাত তো আদায় করে।সব তরীকার মসজিদ আছে,নিজ নিজ তরিকায় সালাত আদায় করে,রোজা রাখে,হজ্ব পালন করে,জাকাত দেন অর্থাৎ নিজ নিজ মাযহাব ও তরীকা মতে সমস্ত ইবাদাত বন্দেগী করে থাকে,তবুও কেন একটা মাত্র ফেরকাই জান্নাতে যাবে?
বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করুন যে, একটি ফেরকা কেন জান্নাতে যাবে,তাহলে আমার কথাটা স্মরন রাখবেন যে,এই হাদিসের পর্যালোচনা করলে অর্থ দাঁড়ায় এই যে, এই দ্বীন-এ-ইলাহীতে,এই মুহাম্মাদী ইসলামে,এই আল্লাহর পয়গামে,এই মাযহাবে,যেটা মানব জাতির জন্য নাজাতের কারন,সেখানকার সমস্ত আকীদা-বিশ্বাস,সমস্ত মাসয়ালা-মাসায়েল,সমস্ত হুকুম-আহকামের পাশাপাশি এমনই একটি বিষয় আছে, এমন কোন সংবাদ আছে যেটাকে কেবল একটি ফেরকাই মানবে,অন্য কোন ফেরকা মানবে না।অর্থাৎ ওই ফেরকা সবকিছু মানার পাশাপাশি ঐ বিশেষ বিষয়টিকেও মানবে যেটা জান্নাতে যাওয়ার কারন হবে।বাকী ফেরকাগুলিও সবকিছুই মানবে কিন্তু ঐ বিশেষ বিষয়টিকে মানবে না।সুতরাং ঐ বিষয়টিকে না মানার কারনে বাকী ফেরকাগুলি জান্নাতে যেতে পারবে না,যদিও তারা বাকী সমস্ত হুকুম-আহকাম মেনে চলে তবুও জান্নাতে যেতে পারবে না।
এবার প্রশ্ন হলো,ইসলামের মধ্যে ঐ বিশেষ বিষয়টি কি, যে বিষয়টিকে একটি ফেরকাই মানবে এবং তারা জান্নাতি হবে? এবং বিষয়টি এতই গুরুত্বপুর্ন যে সবকিছু মানার পর,সবকিছু পালন করার পরও যদি ঐ বিষয়টিকে মানা না হয় তাহলে কিছুই মানা হলো না!আর সব কিছু মানার পর যখন ঐ বিষয়কে আপনি মেনে নিবেন তখন আপনি জান্নাতি হবেন।
অতএব,ষ্পষ্ট হলো জান্নাতের চাবি সেই পাবে যে ঐ বিশেষ বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান রাখবে ও মেনে চলবে।মুসলমানদেরকে জিজ্ঞাসা করলে সবাই যে যার কথা বলে।সবার কথা বাদ দিয়ে আসুন আমরা কোরান মজিদের একটি আয়াত তেলাওয়াত করিঃ “হে রাসুল!তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে,তা পৌছে দাও,আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌছালে না।আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।নিশ্য়ই আল্লাহ বিশ্বাসহীনদেরকে হেদায়াত করেন না”।(সুরা মায়েদাঃ৬৭)
আয়াতের মধ্যে সবার আগে সেই কথা পরিস্কার হওয়া উচিত যে আল্লাহর সে ‘নির্দেশটি কি”?যেটাকে এত গুরুত্ব সহকারে আল্লাহ পৌছে দেয়ার জন্য নবীকে আদেশ করেছেন।ঐ নির্দেশ! যে নির্দেশ আমি আগেই দিয়েছি।এখন সমস্যা হলো,মুসলমানরা যতক্ষন পর্যন্ত জানতে না পারছে যে ‘নির্দেশটি কি’ ছিল?আল্লাহ তাঁর রাসুলকে কোন হুকুমটি দিয়েছিলেন,ততক্ষন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
কিছু মুসলমানেরা বলেন যে, নবীরাও আমাদের মতই হয়ে থাকেন। আমরা যখন জন্মগ্রহন করি তখন কিছুই জানিনা,কেউ পড়ালে বা জানালে তখন জানতে পারি।ঠিক তেমনি নবীকে যখন কেউ পড়ায় তখনই নবী জানতে পারেন।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,কে পড়িয়েছে?
তারা উত্তর দিল,জিব্রাইল আমিন(আঃ)।
উক্ত রেওয়ায়েতটিকে আমি এ মুহুর্তে স্মরন করাতে চাই না,যে রেওয়ায়েতে নবীর সীনা চাক করে কলিজা/অন্তর থেকে কালো দাগ নিংড়ানো হয়েছিল এবং কাউসারের পানি দ্বারা ধোয়া হয়েছিল,তারপর কলিজাকে/অন্তরকে নবীর সীনায় আবার স্থাপন করা হয়েছিল।এর আগে নবীর বক্ষ সংকুচিত ছিল,যখন কলিজা/অন্তর থেকে কাল দাগ উপড়ে ফেলা হল,তখন নবীর বক্ষ প্রশস্ত হয়ে গেল।আমি এধরনের রেওয়ায়েতগুলিকে নবীর জন্য অমর্যাদাকর এবং অসম্মাঞ্জনক বলে মনে করি।উক্ত রেওয়ায়েতে নবীর উপযুক্ত কোন বক্তব্য নেই।আমার ঐ ভায়েরা বিশ্বাস করেন যে, ‘নবীকে জিব্রাইল যখন পড়াতেন তখনই নবী পড়তেন’।আমি তাদের উদ্দেশ্যে শুধু এটুকু বলতে চাই যে,আপনাদের চোখে নবী যখন জিব্রাইলের ছাত্র,তখন কোরানের এই আয়াতের সারমর্ম বুঝা যাবে না,কেননা মুসলমান তো তখনই বুঝবে যখন রাসুল(সাঃ) বুঝবেন,আর রাসুল(সাঃ) তখনই বুঝবেন যখন জিব্রাইল(আঃ) তাঁকে বুঝাবেন।আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি আপনারা বলুন,এটা কেমন হুকুম যার জন্য কোরান বলছে, “হে রাসুল আপনি সেই সংবাদ পৌছে দিন যা আমি আগেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি”।জিব্রাইল বলবেন, যদি ঐ সংবাদের কথা এই আয়াতে থাকতো তাহলে তো আমি বলে দিতে পারতাম। কিন্তু সংবাদিটি হলো গুপ্ত,আমি নিজেই জানিনা যে হুকুমটি কি, আপনাকে কেমন করে জানাবো।
এবার ভাবুন,বিষয়টি যখন শিক্ষকই জানে না তখন ছাত্র কেমন করে বলবে?আর ছাত্রই যখন জানে না,তখন ‘উম্মত’ কি ভাবে জানবে?তাহলে এবার ষ্পষ্ট হলো জিব্রাইল(আঃ)কে যদি রাসুলের(সাঃ) শিক্ষক মেনে নেয়া হয় তাহলে তো কোরানের উক্ত আয়াতের সমাধান কখনোই হবে না।“আমাদের স্মরনে থাকা উচিত সেই রাতের কথা যে রাতে ওহী বহনকারী জিব্রাইল (আঃ) ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পর্যন্ত থেমে গিয়েছিল অথচ যার কাছে ওহী নিয়ে যাওয়া হত তিনি ‘কাবা কাওসাইন আও আদনা’র (নৈকট্যের প্রান্তসীমায়)মঞ্জিলে যেয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন”।কোরান মজিদের ‘সুরা নজম’ এই কথার সাক্ষী,যেখানে নবী(সাঃ)এর মে’রাযের ঘটনা বর্নিত আছে।এবার বিষয়টি ষ্পষ্ট হল।কোরান বলছেঃ“হে রাসুল!তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে,তা পৌছে দাও,আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌছালে না।আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।নিশ্চই আল্লাহ বিশ্বাসহীনদেরকে হেদায়াত করেন না”।(সুরা মায়েদাঃ৬৭)।
অর্থাৎ “ হে রাসুল!আপনি পৌছে দিন যে সংবাদটি আপনাকে দিয়েছিলাম”।শব্দের সাথে যদি শব্দ মিলিয়ে না দেই তখন আপনি বাধা দিবেন।সুরা নজমে রাসুল(সাঃ)এর মে’রাজের ঘটনা বর্ননা করতে যেয়ে পবিত্র কোরান বলছেঃ জিব্রাইল ‘সিদরাতুল মুন্তাহায়’ পৌছে থেমে গেলেন ,রাসুল(সাঃ) ‘কাবা কাওসাইন আও আদনার’ মোকামে পৌছালেন, আল্লাহ পাক তাঁর সাথে কথা বললেন,যেটা কোরান বয়ান করছে, “ ফা আওহা ইলা আব্দিহি মা আওহা” অর্থাৎ “ আজকের রাতে যা বলার দরকার ছিল তা আমি বলে দিয়েছি”।
ঐ শবে মে’রাজে আল্লাহ বলেছিলেন,যা কিছু আমার বলার দরকার ছিল আমি আমার বান্দাকে বলে দিয়েছি।এবং আজ গাদীরের দিনে বলছেন, “যা বলেছিলাম তা আজ তুমি মানুষের নিকট বলে দাও”।এতক্ষনে বিষয়টি ষ্পষ্ট বুঝা গেল,’জান্নাতের চাবি’ হলো সেই সংবাদ যেটা আল্লাহ পাক তাঁর হাবিবকে(সাঃ) মে’রাজের রাতে বলে দিয়েছিলেন।কিন্তু মে’রাজের রাতে তো রাসুলের(সাঃ) সাথে আমরা কেউ ছিলাম না,জিব্রাইলও ছিলেন না,রাসুল (সাঃ) একাই আল্লাহর নিকটবর্তী হয়েছিলেন,তাঁর সাথে কেউ ছিল না,কেউ জানে না যে আল্লাহর সাথে তাঁর কি কথোপকথন হয়েছিল,আল্লাহ পাক কোন সংবাদটি বলেছিলেন,আল্লাহ ও রাসুল ছাড়া কেউ জানে না।অথচ সেই সংবাদটিই হচ্ছে ‘জান্নাতের চাবি’।যতক্ষন পর্যন্ত ঐ সংবাদটি জানা না যাবে ততক্ষন পর্যন্ত জান্নাতের চাবি পাওয়া যাবে না।সুতরাং সন্দ্বান করা উচিত যে, উক্ত আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর ‘গাদীরে খুমে’ রাসুল(সাঃ) উপস্থিত জনতাকে কোন সংবাদটি দিয়েছিলেন।কিন্তু তার আগে আরো একটি কথা অনুভব করতে হবে।আমি কারর সাথে তুলনা করতে চাই না বা কাউকে খাট করতে চাই না।তবে এটুকু অবশ্যই বলতে চাই যে, কিছু কিছু লোকের আকিদা বিশ্বাস হচ্ছে যে, ‘ জিব্রাইল(আঃ) হচ্ছেন নবী(সা)এর শিক্ষক”!
দাড়িপাল্লায় দুটি দাড়ি থাকে,যে পাল্লাটি ভারী হয় সেটি জমীনের দিকে ঝুকে থাকেব , যে পাল্লাটি হাল্কা হয় সেটা উপরে উঠে থাকে।আচ্ছা দুই পাল্লাতেই ইসলামকে ওজন করে নিন।
আপনারা বলেছেন,”নবীর শিক্ষক ছিলেন জিব্রাইল”।
আমি বলছি, “ আপনার নবীর যে শিক্ষক সে হলো আলীর ছাত্র”।এবার সিদ্বান্ত নিন,জিব্রাইল যখন আলীর ছাত্র তাহলে আলী যে মুহাম্মাদের ছাত্র,ঐ মুহাম্মাদ কেমন হবে?ঐ ইসলাম হচ্ছে অন্যদের আর এই ইসলাম হচ্ছে আমার।
এই আয়াতের অংশ পাঠ করা যাকঃ
“হে রাসুল!তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে,তা পৌছে দাও,আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌছালে না।আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।নিশ্চই আল্লাহ বিশ্বাসহীনদেরকে হেদায়াত করেন না”।(সুরা মায়েদাঃ৬৭)
অর্থাৎ “হে রাসুল! পৌছে দিন সেই সংবাদ যা মে’রাজের রাতে দিয়েছিলাম। আর হে রাসুল,তুমি যদি ঐ সংবাদটি না পৌছে দাও তাহলে তুমি রেসালাতের কিছুই পৌছালে না।“জ্ঞানী গুনিদের কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে।কিন্তু আমি বাচ্চাদেরকে বুঝাতে চাই।সেজন্য আরো কয়েকটি বাক্য বলতে হবে।অতএব বুঝা গেল আল্লাহ পাক এমন একটি সংবাদ পৌছে দিতে বলেছেন যে সংবাদটি না পৌছাতে পারলে কিছুই পৌছানো হবে না।
আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে যে, “ নির্ভয়ে পৌছে দাও, ভীতির কোন কারন নেই,আমি তোমাকে মানুষের অনিষ্ট বা শত্রুতা থেকে রক্ষা করবো”।আমি যদি বুদ্বিমান কোন মুসলমানকে বলি যে, এই আয়াতটি নবীর উপর ঐ দিন অবতীর্ন হয়েছিল যে দিন ১ম নবী(সাঃ) তাবলীগ শুরু করেছিলেন এবং ঐ মুসলমান যদি ইতিহাস না পড়ে থাকে,তবে কোরানের এই আয়াতকে পাঠ করার পর বলবে যে, তুমি ভুল বলেছ।কেননা,কোরান বলছে যে, যদি এই সংবাদটি না পৌছে দাও তাহলে কিছুই পৌছান হবে না।
একটা উদাহরন শুনুন।একজন লোক আপনার মেহমান হলো। আপনিও তাকে বসিয়ে ফল-মুল,চা-পান ইত্যাদি আপ্যায়ন করলেন।আপনার খাতির যত্নে লোকটার পেট ভরে গেল।লোকটি যখন বিদায় নিতে যাচ্ছে তখন আপনি তাকে এক গ্লাস শরবত খেতে দিলেন।লোকটি বললো,অনেক খেয়েছি, পেটে আর জায়গা নেই।আপনি বললেন, “ যদি এই শরবত টূকু না পান করেন তো কিছুই পান করলেন না”।কিন্তু যদি এমন হয় যে, একজন মেহমান এলো,আপনি তাকে বসতে দিলেন,তারপর এক গ্লাস পানি পান করতে দিলেন।সে বললো,আমি পানি পান করবো না।তখন যদি আপনি বলেন যে,যদি এই পানিটুকু পান না করেন তাহলে তো কিছুই পান করলেন না।আপনার এই কথার জবাবে লোকটি বলবে যে,আর ভাই, আমি তো এখনো কিছুই পান করিনি,আপনি কেমন করে বলছেন যে এই পানি টুকু পান না করলে কিছুই পান করা হবে না।তো বুঝা গেল,যদি এটা না করেন তাহলে কিছুই করা হবে না।এধরনের বাক্য কোন ঘটনা বা কাজের প্রথমে বলা হয় না,কেননা এখনো কোন কিছুই করা হয়নি।বরং কোন ঘটনা বা কাজ শেষ পর্যায়ে থাকে তখন বলা হয়ে থাকে যে, এটা না করলে কিছুই করা হবে না।
বুঝা গেল এই মুহুর্তটি রাসুলের(সাঃ) তাবলীগের প্রথম দিক নয় বরং তাবলীগের শেষ দিক।কোরান বলছে, “ হে আল্লাহর রাসুল!ঐ সংবাদটি পৌছে দিন যা আপনাকে আগেই বলে রেখেছি,যদি ঐ সংবাদটি পৌছে দিন তাহলে কোন কিছুই পৌছানো হবে না”।অর্থাৎ যদি না পৌছান তাহলে এযাবৎ যা কিছু পৌছে দিয়েছেন তা সবই নিস্ফল হয়ে যাবে,অর্থহীন হয়ে যাবে।
এই বাক্যটির ব্যাখ্যা এভাবেও দেয়া যেতে পারে যে, “ হে নবী!তুমি তোমার ‘নবুয়াতের সংবাদ’ পৌছে দিয়েছ কিন্তু যদি এই সংবাদটি না পৌছে দাও তাহলে ‘নবুয়াতের সংবাদ’ পৌছানো গ্রহনযোগ্য হবে না।তুমি কোরানকে ‘আল্লাহর কালাম’ বলে পৌছে দিয়েছ,কিন্তু এই সংবাদটি যদি না পৌছে দাও তাহলে কোরান পৌছানোর কাজটি অর্থহীন হয়ে যাবে।

তুমি কা’বা হতে মুর্তি অপসারন করেছ ‘হজ্বের বিধান’ পৌছে দিয়েছ,কিন্তু এই সংবাদটি যদি না পৌছে দাও তাহলে হজ্বের বিধান গ্রহনযোগ্য হবে না।তুমি ‘সালাতের শিক্ষা’ দিয়েছ,কিন্তু যদি এই সংবাদটি যদি না পৌছে দাও তাহলে সালাত কার্যকর হবে না।তুমি ‘রোজার বিধান’ পৌছে দিয়েছ,যাকাতের বিধান পৌছে দিয়েছ,খুমসের বিধান পৌছে দিয়েছ,হালাল-হারামের শিক্ষা দিয়েছ,কিন্তু এই সংবাদটি যদি না পৌছে দাও তাহলে ইতিপুর্বে তোমার পৌছে দেয়া সমস্ত বিধি-বিধান,শিক্ষা-দীক্ষা কোন কিছুই গ্রহনযোগ্য বলে গৃহীত হবে না।

পবিত্র কোরান এই স্থানেই ষ্পষ্টাকারে বুঝিয়ে দিল যে,এটাই হলো সেই সংবাদ,যদি এই সংবাদকে না বুঝতে পার,না চিনতে পার,যদি এই সংবাদকে গ্রহন করতে না পার,তাহলে এযাবতকাল যত কিছুই জেনেছ এবং মেনেছ তার কোন কিছুই গ্রহনযোগ্য হবে না।আর যদি এই সংবাদকে স্বীকার করে নাও তাহলে সবকিছুই মানা স্বার্থক হবে এবং সবকিছুই গ্রহনযোগ্য হবে।
আলহামদুলিল্লাহ,প্রতিটি শব্দের সাথে শব্দ মিলে গেল।হাদিস বলছে যে, “জান্নাত মাত্র একটি ফেরকার অনুসারীরা পাবে”।অর্থাৎ একটি মাত্র ফেরকা এমন একটি কথাকে মান্য করবে এবং বিশ্বাস করবে,যার গুরুত্ব তো এই যে,যদি সেটাকে মানা না হয় তাহলে কোন কিছুই মানা হবে না, সব কিছুই নিস্প্রান,অর্থহীন,অহেতুক বলে গন্য হবে।যদি ঐ সংবাদকে মেনে নেয়া হয় তাহলে সবকিছু মানা স্বার্থক হবে,সবই গ্রহনযোগ্য হবে।তবেই সফলকাম হওয়া যাবে।
এবার ষ্পষ্ট হয়ে গেল যে,উক্ত আয়াতটি নাজিল হবার পর রাসুল(সাঃ) যে সংবাদটি দিয়েছেন, যে কাজ করেছেন,যে কথা বলেছেন,যে নির্দেশ দিয়েছেন,যে নসীহত করেছেন,যে ব্যক্তি রাসুলের(সা;) দেয়া ঐ সংবাদ, রাসুলের(সাঃ) করা ঐ কাজ,রাসুলের(সাঃ) বলা ঐ কথা, রাসুলের (সাঃ) দেয়া ঐ নির্দেশ এবং নসীহতকে মেনে নিয়ে তার জীবনে বাস্তবায়ন করবে,তখনই কেবল তার সবকিছু মানা হবে এবং তার সমস্ত কিছু সফলকাম হবে।আর এই আয়াত নাজিল হবার পর রাসুল(সাঃ) যে সংবাদটি দিয়েছেন, যে কাজ করেছেন,যে কথা বলেছেন,যে নির্দেশ দিয়েছেন,যে নসীহত করেছেন,যে ব্যক্তি রাসুলের(সা;) দেয়া ঐ সংবাদ, রাসুলের(সাঃ) করা ঐ কাজ,রাসুলের(সাঃ) বলা ঐ কথা, রাসুলের (সাঃ) দেয়া ঐ নির্দেশ এবং নসীহতকে মানবে না,সেই মত আমল করবে না, নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করবে না, তাহলে এযাবৎ সে যা কিছু মেনেছে এবং সে মতে আমলও করেছে,তার কোন কিছুই গ্রহন করা হবে না এবং সে ব্যর্থ হবে।
সুতরাং বুঝা গেল,জান্নাতের চাবি হলো গাদীরের দিনে ‘আয়াত-এ-বাল্লিগ’ নাজিল হবার পর রাসুল(সাঃ) দ্বারা ঘোষিত সেই ঘোষনা।ঐ ঘোষনাটি কি ছিল?
সেটা শোনার আগে একটি কথা শুনে রাখুন।আমি যদি এই মজলিশ শেষ করে দেই তাহলে আমার বন্দ্বুরা আমার বাসায় এসে বলবে,”মৌলভী সাহেব,আপনি আলোচনাটি অসম্পুর্ন রেখে দিলেন।হায়াত-মউতের কথা তো বলা যায় না,কাল পর্যন্ত যদি বেচে না থাকি,সুতরাং জান্নাতের চাবিওয়ালা সংবাদটি আজই বলে দিন,আয়াতে বাল্লিগ নাজিল হবার পর রাসুল(সা;) কি বলেছিলেন,কি করেছিলেন,দয়া করে আজই বলে দিন”। আমি যদি নবী(সাঃ)এর দেয়া সংবাদটি এখনই বলে দেই তাহলে তো আপনারা ‘জান্নাতের চাবি’ পেয়ে যাবেন এবং আপনাদের কাছে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে।
সুতরাং আমি আমার গরজেই নবীর সংবাদের পরিবর্তে নিজ স্বার্থের পক্ষে একটি কথা বলতে চাই,কেননা কারোর মস্তিস্ক যখন কোন দুশ্চিন্তা্র মধ্যে হাবুডুবু খায় তখনই একজন বুদ্বিমান লোক তাকে কাবু করার জন্য চেষ্ট চালায় যে এটাই হল মোক্ষম সময় নিজের কথা স্বীকার করিয়ে নাও ।সুতরাং আমার মনের কথা স্বীকার করিয়ে নেবার জন্য আমার কাছে এটা মোক্ষম সময়।যাহোক,ধরুন রাত ১২টার সময় আপনি আমার বাসায় এলেন,দরজায় কড়া নাড়লেন,আমি জিজ্ঞাসা করলাম,কি ব্যাপার,এত রাতে কিজন্য এসেছেন?আপনি বললেন,রাতের বিশ্বাস নেই,সকাল নাও হতে পারে।সুতরাং বলে দিন যে,জান্নাতের চাবির সে সংবাদটা কি? আমি বললাম,৬০ বছর বয়স আপনার হলো,আপনি সেই সংবাদটিই জানেন না?
আপনি বললেন,যদি জানতাম তাহলে কি আপনার কাছে ছুটে আসতাম? আমি চিন্তা করলাম,ঠিক আছে,এখন এই লোকটি আমার মুঠোর মধ্যে,এখন যা বলবো স্বীকার করে নেবে।তাই বললাম, আপনি কি শুনেন নি যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে, যখন কোন মৌলভী বা আলেমের সাথে সাক্ষাৎ পাবে তখন তাকে দাওয়াত করে মনভরে আপ্যায়ন করবে।তখন আপনি চিন্তা করবেন, কি জানি নবী(সাঃ) এই কথা বলেছেন কি না,অন্য আলেমকে জিজ্ঞেস করে দেখি।আমারই পাশের বাড়ীতে আরো একজন আলেম থাকেন। আপনি রাতের এমন সময় তাকে ডাক দিলেন।সেই মৌলভী সাহেব আপনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার ,কি সমস্যা?আপনি তাকে বললেন,আপনার পাশের বাড়িতে যে মৌলভী সাহেব থাকেন,তিনি জান্নাতের চাবি সম্পর্কে জানতে বিতরনের জন্য হাক ডাক দিচ্ছেন,আজ যখন তার কাছে জান্নাতের চাবি সম্পর্কে জানতে এলাম তখন তিনি বলছেন যে, রাসুল(সাঃ) বলেছে, কোন মৌলভী সাহেবের সাক্ষাত পেলে তাকে দাওয়াত করে খাওয়াবে,এই বিষয়ে আপনার মত কি?
২য় মৌলভী সাহেব বোম্বেতে বাস করেন,জায়গার সংকীর্নতা,দ্রব্যমুল্যের চড়া দাম,অথচ জন্মনিয়ন্ত্রনের প্রচার সত্বেও ৪টি বিয়ে করেছেন।আল্লাহর মেহেরবানীতে প্রত্যেক স্ত্রী হতে ১২টি করে মোট ৪৮টি সন্তান আছে,৪ জন স্ত্রী এবং নিজে সর্বসাকুল্যে ৫৩ জনের সংসার।ঐ মৌলভী সাহেবও আমার মত চিন্তা করলেন,এই লোকটি এখন মানসিকভাবে দুর্বল,তাকে কাবু করা যেতে পারে।সুতরাং নবী(সাঃ) কি বলেছেন তার দরকার নাই,এমন কথা বল যাতে নিজের স্বার্থ উদ্বার হয়।এসব চিন্তা করে ঐ মৌলভী সাহেব বললেন, যে আলেমের বেশী সন্তান থাকবে,আল্লাহর রাসুল(সাঃ) সেই আলেমকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন,আমি একা তাই কেবল নিজের দাওয়াতের কথা বলেছি,ঐ মৌলভী পুরো পরিবারের জন্য দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল তাই নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে সাহায্যের কথা বললে।
এবার যদি ৩য় মৌলভীর কাছে যাওয়া হয় তখন সেও নিজের স্বার্থকে সামনে রেখেই কথা বলবে।এভাবেই একটি ইসলামে ৭৩টি ফেরকায় বিভক্ত হয়ে গেল।
তাহলে এতক্ষনে যে আলোচনা হলো তার সারমর্ম এই যে,হাদিস বলছে সংবাদটি এতই গুরুত্বপুর্ন যে, “ ঐ সংবাদকে যে মানবে না তার কিছুই মানা হবে না”।আর কোরানের আয়াত বলছে,”হে রাসুল!যদি ঐ সংবাদটি না পৌছান তাহলেই কিছুই পৌছানো হলো না”।সুতরাং জান্নাতের চাবি তো তখনই হস্তগত হবে যখন জানতে পারবে যে,ঐ আয়াতটি নাজিল হওয়ার পর নবী(সাঃ) কোন সংবাদটি দিয়েছিলেন?
এবার মুসলমানদেরকে জিজ্ঞাসা করলে প্রত্যেকেই যার যার কথা বলবে,কারন কথাটি এমনই গুরুত্বপুর্ন,যে কথার জন্য জান্নাত পাওয়া যাবে। মুসলমানদেরকে জিজ্ঞাসা করতে গেলে তারা ৭৩ রকমের কথা বলবে।যদি মুসলমানদের কাছ থেকে জান্নাতের চাবি নিয়ে জমা করা হয় তাহলে ৭৩টি চাবি হবে,যার মধ্যেকার ১টি চাবি হবে আসল আর ৭২টি নকল।এবার দেখা যাক এমন চক্ষুস্মান কে আছে যে ঐ ৭৩টি চাবির মধ্য হতে বাছাই করে আসল চাবিটি বের করে নিবে।
তাহলে আসুন এমন একটি মানদন্ডের কথা বলি,তারপর মানা না মানা যার যার নিজস্ব ব্যাপার,কিন্তু জ্ঞান বলে দিবে যে কথাটি সত্য। আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করুন যে নবী(সাঃ) কোন সংবাদটি দিয়েছিলেন? আমি সেই কথা বলবো যে কথাটি আমার মাযহাবের বইগুলিতে লেখা আছে। ২য় কোন মুসলমানকে জিজ্ঞাসা করুন সে তার ফেরকার কথা বলবে।৩য় কোন ফেরকার মুসলমানকে জিজ্ঞাসা করুন সেও তার ফেরকার বইগুলো থেকে বলবে।
সুতরাং আমি যে কথা বলব সেটা যদি শুধু আমার মাযহাবের বইগুলিতেই পাওয়া যায় তার অর্থ দাঁড়াবে যে সেটি হলো আমার কথা,সেটা নবীর কথা নয়।আপনাদের বইগুলোতে যে কথা পাওয়া যাবে সেগুলো আপনাদের কথা নবীর কথা হবে না।
কিন্তু ব্যাপারটা যদি এমন হয় যে,যে কথা আপনি বলেন যে নবী এই কথা বলেছেন এবং সেই কথা আমারও বইতে আছে।আমিও যদি বলি যে নবী এই কথা বলে গেছেন এবং সেই কথা আপনাদেরও বইগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে।তাহলে মেনেই নিতে হবে যে এর চেয়ে বড় স্বাক্ষ্য-প্রমান আর হতে পারে না।
সুতরাং মনে রাখবেন,যত ফেরকাকে জিজ্ঞাসা করবেন তারা সকলেই নিজেদের কথা বলবে কিন্তু আমি এমন কথা বলবো যা শুধু আমার বই গুলোতে নয় বরং অন্যান্য সমস্ত ফেরকার বইগুলোতে সংরক্ষিত আছে। তাহলে শুনুন আমার বইতে উল্লেখ আছে যে রাসুল(সাঃ) ১০ম হিজরীতে যখন হজ্ব সম্পন্ন করে ফেরত আসছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে প্রায় সোয়া লক্ষ সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন।
হজ্ব কাফেলা যখন ‘গাদীরে-এ-খোম’ নামক স্থানে উপস্থিত হলেন, যেখান থেকে রাস্তা বিভিন্ন দিকে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং মুসলমানগন যার যার পথে রওয়ানা হতে যাচ্ছিলেন।সেই মুহুর্তে ওহী নাজিল হলো, “হে রাসুল! তোমার রবের পক্ষ হতে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে,তা পৌছে দাও,আর যদি তুমি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত পৌছালে না।আর আল্লাহ তোমাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন।নিশ্চই আল্লাহ বিশ্বাসহীনদেরকে হেদায়াত করেন না”।(সুরা মায়েদাঃ৬৭)।
রাসুল(সাঃ) সোয়া লক্ষ হাজীর কাফেলাকে থামালেন।কাফেলা উত্তপ্ত রোদের মধ্যে ঘন্টার উপরে দাঁড়িয়ে রইলেন।নবী(সাঃ) মিম্বর তৈরী করালেন।তারপর দ্রুত নামাজ আদায় করে মিম্বরে উঠে উপস্থিত জনমন্ডলীর উদ্দেশ্যে নাতি দীর্ঘ ভাষন দিলেন।উক্ত ভাষনে তিনি বললেন যে, আমার ইন্তেকাল অতি নিকটবর্তী,আল্লহর হুকুম তোমাদের মাঝে পৌছে দিয়ে যাচ্ছি সবাই হুকুমটি পালন করবে।তারপর হযর‍্ত আলীর (আঃ) বাহু উচু করে তুলে ধরে বললেন,”মান কুন্তু মাওলা ফা হাযা আলিউন মাওলাহু” অর্থাৎ আমি যার নেতা,এই আলীও তার নেতা”।অর্থাৎ আমি যেরুপ সকল মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়ার নেতা বা অভিভাবক,এই আলীও সেরুপ মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়ার নেতা বা অভিভাবক।
তাহলে আমার রেওয়ায়েতে বলা হলো যে,এই সংবাদটিকে নবী যদি না পৌছাতেন তাহলে কিছুই পৌছান হতো না,আর মুসলমানরা যদি এ সংবাদটিকে না মানে তাহলে সবকিছুর পরও কিছুই মানা হলো না।সেই সংবাদটি হলো হযরত আলীর ‘মাওলা’ হওয়ার সংবাদ।
উপরে উল্লেখিত আয়াতের পর আমরা আর একটি আয়াত কোরানে দেখতে পাই,তা হল দ্বীন পরিপুর্নতার আয়াতঃ“আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপুর্ন করিয়া দিলাম। তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পন্ন করিলাম।আর তোমাদের জন্য ইসলামকে পরিপুর্ন দ্বীন হিসাবে মনোনীত করিলাম(সুরা মায়েদা,আয়াত# ৩)।“
গাদীরে খুমে যখন রাসুল হযরত আলীকে(সাঃ) ও ইমামতের উপর সরাসরি নিজের স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করিলেন তখন এই আয়াত পাক নাজিল হইলো।আল্লাহর রাসুল(সাঃ) ফরমাইল খোদা পাক অতি মহান এবং প্রশংসার যোগ্য যিনি দ্বীনকে পরিপুর্ন করিলেন ,নিজের অবদানকে সম্পুর্ন করিলেন। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হইলো আমার রেসালাতের উপর ও আমার পর আলীর বেলায়েতের উপর।(তাফসীরে ইবনে কাসীর,২য় খন্ড,পৃঃ১৪; দুররুল মানসুর,২য় খন্ড,পৃঃ২৫৯;আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়া,৫ম খন্ড,পৃঃ২১০;রুহুল মায়ানি,২য় খন্ড,পৃঃ২৪৯;আল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২৩০;আল-মুরাজেয়াত,পৃঃ৫৭;শোয়াহেদুত তানজিল,১ম খন্ড,পৃঃ১৫৬)।

আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতী-যিনি আমার মাযহাবের(ইশনা আশারিয়া বা জাফরী মাযহাব) আলেম নন বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তথা সুন্নী মুসলমানদের একজন প্রখ্যাত আলেম,বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও মুফাসসির,তার বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ হলো ‘দুররে মানসুর’,ওই তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেন যে, উক্ত আয়াতের অর্থ হলো এই যে,” হে রাসুল!আলী সম্পর্কে আমি আপনাকে যেই হুকুম দিয়েছি সেই হুকুমটিকে পৌছে দিন”।আর ঐ আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসুল(সাঃ) আলীকে হাত ধরে উচু করে গাদীরের ময়দানে বলেছিলেন, বললেন,”মান কুন্তু মাওলা ফা হাযা আলিউন মাওলাহু” অর্থাৎ আমি যার নেতা,এই আলীও তার নেতা”।অর্থাৎ আমি যেরুপ সকল মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়ার নেতা বা অভিভাবক,এই আলীও সেরুপ মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়ার নেতা বা অভিভাবক।বিরোধী ফেরকারও সাক্ষ্য আমরা পেয়ে গেলাম যে, হযরত আলীর ‘মাওলা’ হওয়ার সম্পর্কেই সেই বিশেষ সংবাদটি ছিল যা নবী(সাঃ) যদি না পৌছে দিতেন তাহলে কোন সংবাদই পৌছান হতো না অর্থাৎ রেসালাতের কোন কাজই গ্রহনযোগ্য হতো না।এই ঘোষনাটিই হলো ইসলামের সেই গুরুত্বপুর্ন আকীদা,যেটাকে কোন মুসলমান যদি না মানে তাহলে বুঝতে হবে যে সে ‘ইসলাম’ মানে নি।
আপনারা হয়তো বলবেন যে, “ জান্নাতের চাবি পেয়ে গেলাম”,কেননা আমার বক্তব্যের মুল উদ্দেশ্য ছিল এটাই যে, যে মুসলমান আল্লাহকে মানবে,নবী মুহাম্মাদ(সা;)কে রাসুল মানে,আর নবী(সাঃ) এর পরে হযরত আলীকে সেরুপে ‘মাওলা’/নেতা/ইমাম বলে মানে যে রুপে রাসুল(সাঃ)কে ‘মাওলা’ /নেতা/ইমাম বলে মানে,তাহলে ঐ মুসলমান জান্নাতের চাবি পেয়ে গেল।
কিন্তু আমার বন্দ্বুগনকে ভুলের মধ্যে রাখতে চাই না।আমার ধারনা হযরত আলীকে শুধু ‘মাওলা’ /নেতা/ইমাম বলে স্বীকার করে নিলেই জান্নাতের চাবি পাওয়া যাবে না।বরং হযরত আলীকে সেভাবেই ‘মাওলা’ /নেতা/ইমাম মানতে হবে যেভাবে নবী (সাঃ) মানতে বলেছেন,তবেই তো জান্নাতের চাবি পাওয়া যাবে।হযরত আলীকে রাসুল(সাঃ) তাঁর উত্তরাধিকারি বানিয়েছেন,তিন জনের পরে ৪র্থ খলিফা বানাননি।সুতরাং হযরত আলীকে ‘খলিফাতুল বিলা ফসল’(রাসুলের পরবর্তী উত্তরসুরী) মানা জরুরী,এর বিপরীতে মানলে জান্নাত পাওয়া যাবে না।
মুসলমানরাও ঈসা(আঃ)কে মানে আবার খৃষ্টানরাও ঈসাকে(আঃ) মানে,কিন্তু খৃষ্টানরা ঈসাকে(আঃ) মেনেও জান্নাতে যেতে পারবে না অথচ আমরা মুসলমানরা ঈসাকে(আঃ) মেনে জান্নাতে যাব।দুদলের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধারনা কাজ করছে।খৃষ্টানরা ঈসাকে(আঃ) আল্লাহর পুত্র বলে মানছে আর আমরা ঈসাকে(আঃ) আল্লাহর নবী বলে মানছি।সুতরাং শুধু হযরত আলীকে মানলেই যথেষ্ট হবে না বরং তাকে “খলিফাতুল বিলা ফসল” মানতে হবে।তারপরও বলবো যে “খলিফাতুল বিলা ফসল” মানার পরেও জান্নাত পাওয়া যাবে না।নিঃসন্দেহে হযরত আলীকে মানা ফরয/ওয়াজিব,অন্যথায় তাঁর শাফায়াত হতে পারে না,কিন্তু হযরত আলীকে মানার পর জান্নাত পাওয়া যাবে এটাও সম্ভব না,যতক্ষন না ঐ ধারাবাহিকতাকে মানা হবে যে ধারাবাহিকতাকে নবী(সাঃ) ও হযরত আলী উভয়েই মানতে বলেছেন। মুল বিষয়কে ষ্পষ্ট করার আগে শয়তান ও ফেরেস্তাদের ঘটনা শুনে নিন।এই ব্যাপারে আল্লাহর ফয়সালাটাও শুনে নিন।পুরো ঘটনাই পবিত্র কোরান মজিদে বর্নিত আছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষ সৃষ্টির আগে ঘোষনা করেছিলেন যে,”ইন্নি জায়িলুন ফিল আরদি খলিফা অর্থাৎ আমি জমিনে একজন খলিফা বানাতে যাচ্ছি”।আল্লাহ আসমানের ফেরেস্তাদের বললেন, “আমি যখন আদমের দেহে নিজের রুহ ফুকে দেব তখনই তোমরা আদমকে সেজদা করবে”।কোরান বলছে যে,সমস্ত ফেরেস্তা সেজদা করলো আজাজীল ফেরেস্তা ছাড়া বরং সে বললো, “ আমি কেন সেজদা করবো,আদম মাটির তৈরী আর আমি আগুনের তৈরী”।তার কথা শুনে আল্লাহ বললেন, বেরিয়ে যা আমার দরবার থেকে শয়তান,অভিশপ্ত,তোর প্রতি লা’নত। আল্লাহ পাক তো উক্ত মোকদ্দমার ফয়সালা ঐ কোরানে উল্লেখ করে দিলেন যেটাকে আল্লাহর বিধানের কিতাব অর্থাৎ আল-কোরান বলা হয়,যাতে তোমরা যখন ‘গাদীর দিবসে’ নবীর দেয়া সংবাদটি শুনবে তখন যেন আলীকে ‘মাওলা’ বলে স্বীকার করে নিবে।কিন্তু এমনভাবে মানবে না যেভাবে শয়তান মেনেছিল।বরং এমনভাবে মানবে যেভাবে ফেরেস্তারা মেনেছিল।কোরান বলছে শুধু আলীকে ‘মাওলা’ মানলে জান্নাত পাওয়া যাবে না, এত তো শয়তান মানার পদ্বতি,বরং ঐ ভাবে মানতে হবে যেভাবে ফেরেস্তারা মেনেছে।অর্থাত হে আলী! আপনাকে মাওলা মানবো,আপনি হাসানকে মানতে বলবেন হাসানকে মানবো,হাসান হুসাইনকে মানতে বলবেন হুসাইনকে মানব, হুসাইন জয়নুল আবেদীনকে মানতে বলবেন,জয়নুল আবেদীনকে মানবো,এবং এভাবেই এই ধারাবাহিকতাকে ইমাম মাহদী(আঃ) পর্যন্ত মানবো,তবেই জান্নাতের চাবি হস্তগত হবে।

পাক কোরানে আমরা আরো ষ্পষ্ট দেখতে পাইঃ ”হে ইমানদারগন! আনুগত্য কর আল্লাহর ও রাসুলের এবং তাঁর উলুল আমরদেরকে” (উত্তরসুরীগন) (সুরা নিসা-৫৯)।
উল্লেখিত আয়াতটি যখন নাজিল হয়েছিল এবং “উলুল আমর হিসাবে যাদের পরম আনুগত্য বাদ্গ্যতামুলক করা হয়েছে আর তাঁর আনুগত্য করাকে নবীর(সাঃ) আনুগত্য করার সমকক্ষ বলে বর্ননা করা হয়েছে” তখন জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসার’ রাসুলের(সাঃ) কাছে জানতে চেয়েছিলেন এই উলুল আমর কারা,যাদের আনুগত্য করা আপনার আনুগত্যের সমকক্ষ বলা হয়েছে?তিনি(সাঃ) বললেনঃ হে জাবির!তাঁরা হলেন আমার পর,আমার খলিফা ও মুসলমানদের ইমাম।তাঁদের ১ম ব্যক্তি হলেন আলী ইবনে আবি তালিব,অতপর হাসান,অতপর হুসাইন,অতপর আলী ইবনে হুসাইন,অতপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী,যিনি তৌ্রাতে বাকির বলে পরিচিত,হে জাবির!যখন তাঁর সাক্ষাত লাভ করবে,আমার পক্ষ থেকে তাঁকে সালাম জানাবে।অতপর সাদিক জাফর ইবনে মুহাম্মাদ,অতপর মুসা ইবনে জাফর,অতপর আলী ইবনে মুসা,অতপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী,অতপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ,অতপর হাসান ইবনে আলী,অতপর আমার নাম ও কুনীয়াতধারী পৃথিবীতে আল্লাহর হুজ্জাত তাঁর (মনোনীত) বান্দাগনের মধ্যে সর্বশেষ হাসান ইবনে আলী........।(গায়াতুল মারাম,খ-১০,পৃঃ২৬৭,ইসবাতুল হুদা,খঃ৩, পৃঃ১২৩, ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ,পৃঃ৪৯৪)।
এবং রাসুলের(সাঃ) ভবিষ্যত বানী অনুসারে জাবির(রাঃ) হযরত ইমাম বাকির(আঃ) পর্যন্ত জীবিত ছিলেন এবং রাসুলের(সাঃ) তাঁর নিকট পৌঁছে দিয়েছিলেন।
অপর একটি হাদিসে আবু বাসির থেকে বর্নিত হয়েছে যে,উলুল আমর প্রাসঙ্গিক আয়াতটি সম্পর্কে ইমাম সাদিকের(আঃ) নিকট প্রশ্ন করেছিলাম।তিনি বললেনঃ(আয়াতটি) আলী ইবনে আবি তালিব(আঃ),হাসান(আঃ) ও হুসাইনের(আঃ) সম্মানে অবতীর্ন হয়েছে।সবিনয়ে নিবেদন করলাম,মানুষ জানতে চায় পবিত্র কোরানে আলি(আঃ) ও আহলে বাইতগনকে(আঃ) তাঁদের নাম উল্লেখপুর্বক পরিচয় দেয়নি কেন?তিনি বললেনঃতাদেরকে বল,নামাজের যে আয়াত নাযিল হয়েছে তাতে তিন বা চার রাকাতের কোন উল্লেখ করা হয়নি এবং মহানবীই(সাঃ) ঐগুলো মানুষের নিকট ব্যাখ্যা করেছিলেন।অনুরুপ যাকাত,হজ্ব ইত্যাদি সম্পর্কিত আয়াত সমুহ ও মহানবীকে(সাঃ) ব্যাখ্যা করতে হয়েছে এবং তিনিই এরুপ বলেছিলেন,আমি যার নেতা ,এই আলীও তার নেতা।এছাড়াও তিনি বলেছিলেনঃতোমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইতের(সান্নিধ্যে) থাকার জন্য সুপারিশ করছি বাস্তবিকই মহীয়ান,গরীয়ান আল্লাহর কাছে এ আবেদন জানিয়েছিলাম যে,তিনি যেন কোরানকে আহলে বাইত থেকে পৃথক না করেন,যতক্ষন না আমাদের সাথে হাউজে কাওছারে মিলিত হয়, এবং মহান আল্লাহ আমার আবেদন গ্রহন করেছেন।অনুরুপ বললেনঃ “ তাঁদের জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত হতে তোমরা সক্ষম নও,তাঁরা প্রকৃতই তোমাদের থেকে অধিকতর জ্ঞাত।বস্তুত তাঁরা তোমাদেরকে কখনই হেদায়াত থেকে বঞ্চিত করবেন না এবং পথভ্রষ্টতার দিকে ধাবিত করবেন না।
এছাড়া মহানবী(সাঃ) একাধিকবার(বিশেষ করে তাঁর জীবনের অন্তিম দিন গুলোতে) বলেছিলেনঃ “ বস্তুত আমি তোমাদের মাঝে ২টি ভারী বস্তু রেখে গেলামঃআল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত।প্রকৃতপক্ষে এতদ্ভয় পরস্পর থেকে কখনোই বিচ্ছিন্ন হবে না,যতক্ষন না হাউজে কাউসারে আমাদের সাথে মিলিত হয়”((তিরমিযি,নাসাই ও মোস্তাদ্রাকে লেখক কর্তৃক রাসুল(সাঃ) থেকে বর্নিত হয়েছে)।
আরো বলেছিলেনঃ জেনে রাখ,বস্তুত আমার আহলে বাইতের উদাহরন হলো নুহের তরীর মত-যে কেউ এতে আরোহন করবে সে নিস্তার পাবে,আর যে কেউ একে পরিত্যাগ করবে নিমজ্জিত হবে(মোস্তাদ্রাকে হাকিম,খন্ড-৩,পৃঃ১৫১)।
অনুরুপ আলী ইবনে আবি তালিবকে(আঃ) উদ্দেশ্য করে মহানবী(সাঃ) একাধিকবার বলেছিলেনঃ “ তুমি হলে আমার পর সকল মু’মিনিনের ওয়ালী(মুস্তাদ্রাকে হাকিম,খঃ৩,পৃঃ১৩৪,পৃঃ১১১,মুসনাদে ইবনে হাম্বল,খঃ১,পৃঃ৩৩১,খঃ৪,পৃঃ৪৩৮)।
এ ছাড়াও এমন অনেক হাদিস বিদ্যমান যেগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা ক্ষুদ্র পরিসরে সম্ভব নয়( আরো জানার জন্য পড়ুনঃমরহুম সাদুকের কামালুদ্দিন ও তামামুন্নিয়ামাহ,বিহারুল আনওয়ারঃমাজলিসি)।






ইমামত অস্বীকারকারীর পরিনামঃ

“একজন প্রার্থনাকারী চাইলো একটি শাস্তি যা অবশ্যই ঘটবে,-- যা কেউ এড়াতে পারে না বিশ্বাসহীনদের কাছ থেকে”(সুরা মা-য়ারিজ,আয়াত# ১-২,
)।
সুফিয়ান বিন ওয়াইনা বর্ননা করিয়াছেন যে,যখন রাসুল(সাঃ) গাদীরে খুমে লোকদেরকে একত্র করিলেন এবং হযরত আলীর(আঃ) হাত ধরিয়া ফরমাইলেনঃআমি যার মাওলা,এই আলীও তার মাওলা,এই সংবাদ সারা দেশব্যাপী ছড়াইয়া পড়িল।হারিস বিন নোমান এই সংবাদ শুনিয়া নিজের উটের পিঠ হইতে নামিয়া রাসুলের(সাঃ) খেদমতে হাজির হইল এবং বাক-বিতন্ডা আরম্ভ করিল।সে বলিল যে,হে মুহাম্মাদ(সাঃ)! আপনি আমাদের কলেমা পড়িতে আদেশ দিলেন আমরা তাহা গ্রহন করিলাম,৫ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের আদেশ দিলেন আমরা তাহা পালন করিলাম,আপনি আদেশ দিলেন ১ মাস রোজা পালনের আমরা তাও কবুল করিলাম,আপনি আদেশ দিলেন আমাদেরকে হজ্ব করিতে আমরা তাহাও নতশিরে মানিয়া লইলাম।তারপর এই সব মানিয়া নেয়ার পরও আপনি সন্তুষ্ট হইলেন না।এমনকি আপনি নিজের চাচাতো ভাইয়ের হাত ধরিয়া আমাদের উপর তাহার কতৃ্ত্ব স্থাপন করিলেন এবং বলিলেন যে, আমি যার মাওলা,এই আলীও তার মাওলা।এই আদেশ কি আপনার পক্ষ হইতে না কি আল্লাহর পক্ষ হইতে?তখন রাসুল(সাঃ) ফরমাইলেনঃঐ আল্লাহর কসম যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নাই,এই আদেশ আল্লাহর পক্ষ হইতে আসিয়াছে।তারপর হারিস ফিরিয়া তার উটের দিকে যাইতে লাগিল আর বলিতে লাগিলঃহে আল্লাহ!যাহা মুহাম্মাদ(সাঃ) বলিয়াছেন তাহা যদি সত্য হইয়া থাকে তাহা হইলে আমার উপর আকাশ হইতে পাথর নিক্ষেপ কর অথবা আমার উপর কোন ভয়ানক কোন আযাব প্রেরন কর।হারিস নিজের উটের পিঠে উঠিতে না উঠিতেই আকাশ হইতে একটি পাথর তাহার মাথার উপর পড়িল এবং তাহার নিম্নদেশ দিয়া বাহির হইয়া গেল,তৎক্ষনাৎ সে ইন্তেকাল করিল।তারপর এই আয়াত নাযিল হইলো।(সুত্রঃ কেফাইয়াতুল মোওয়াহহেদীন, ২য় খন্ড,পৃঃ৩০০; শাওয়াহেদুত তাঞ্জিল,২য় খন্ড,পৃঃ ২৮৬;আল-গাদীর,১ম খন্ড,পৃঃ২৩৯;তাযকেরা সিবত ইবনে জাওযী,পৃঃ১৯;ফুসুলুল মহিম্মা,পৃঃ২৬;নুযহাতুল মাযালিস,২য় খন্ড, পৃঃ২৪২;ফাজাএলুল খামছা,১ম খন্ড,পৃঃ৩৯;নুরুল আবসার,পৃঃ১৭৮; বয়ানুস সায়াদাহ,৪র্থ খন্ড,পৃঃ২০২;)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.