![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(কাতেবীনে ওহী বা কুরান লেখকদের সঠিক পরিচয় জানতে পড়ুন)
কুরআন মজিদের কতিপয় প্রাচীন পান্ডুলিপি
কাজেম মুদীর শনেচী
[কাজেম মুদীর শনেচী ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের অন্যতম খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ ও †লখক। তাঁর রচিত ‘ইলমুল হাদীস ও †দরায়াতুল হাদীস’ (হাদীস-বিজ্ঞান ও হাদীস বিচার) ইরানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী শিক্ষার ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বহুল অধ্যয়নকৃত একটি মহামূল্য গ্রন্থ। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটি ধর্মীয় নগরী মাশহাদ †থকে প্রকাশিত ‘মিশকাত’ নামক ফারসি সাময়িকীতে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়।]
নিঃসন্দেহে কুরআনে মজিদ হচ্ছে সর্বাধিক আলোচিত গ্রন্থ, অন্য †কান গ্রন্থই এত †বশি আলোচিত হয়নি। এ গ্রন্থ সম্পর্কে রচিত তাফসীর, ভাষা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও পরিচিতি গ্রন্থ অন্য †য †কান গ্রন্থ সম্পর্কিত রচনাবলিকে ছাড়িয়ে †গছে। তাওরাত ও ইঞ্জিল যদিও †বশি সংখ্যক ভাষায় অনূদিত হয়েছে, কিন্তু বিভিন্ন দৃষ্টিকাণ †থকে অধ্যয়ন, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও ভাষ্যের সংখ্যা এবং এর বিভিন্ন দিকÑ †য সম্পর্কে সুদীর্ঘ অতীত †থকে ব্যাপকভাবে আলোচনা ও প্রচুর পরিাণে †লখা হয়েছে, এসবের বিচারে কুরআন মজিদের অবস্থান অন্য সকল গ্রন্থের শীর্ষে। এমনকি প্রচারিত কপি সংখ্যার বিচারেও কুরআন মজিদ অন্য সকল গ্রন্থের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে।
মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, কুরআনে করীমের কপিকরণ ও †তলাওয়াতেই শুধু সওয়াব হয় না; বরং এ পবিত্র গ্রন্থের প্রতি (সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে বা মুহব্বতের সাথে) দৃষ্টিপাত করাতেও সওয়াব রয়েছে। ফলত আমরা জানি †য, এমন অনেক মুসলমান ছিলেন বা আছেন যাঁদের প্রত্যেকে শুধু সওয়াবের উদ্দেশ্যে স্বহস্তে কুরআন মজিদের শতাধিক কপি করেছেন। আর অনেকে মুসুল্লী ও যিয়ারতকারীদের কুরআন †তলাওয়াতে সাহায্য করার লক্ষ্যে এ গ্রন্থের শত শত কপি ক্রয় করে বিভিন্ন মসজিদ-মাজারে দান করেছেন। বিশেষ করে ইরানে একটি সুপ্রাচীন রীতি হচ্ছে কুরআন খতমের অনুষ্?ান (যাতে কয়েকজন মিলে সমগ্র কুরআন মজিদ একই বৈ?কে †তলাওয়াত সমাপ্ত করে)। এ অনুষ্?ানে †তলাওয়াতের জন্য কুরআন মজিদের কপিকে সাধারণত তিরিশ, ষাট বা একশ বিশ অংশে বিভক্ত করে আলাদাভাবে বাঁধাই করে রাখা হয়, এসব কপিসহ হিসাব করলে কুরআন মজিদের মুদ্রিত ও হস্তলিখিত কপি সংখ্যা এক বিস্ময়কর সংখ্যায় পরিণত হবে। †সই সাথে বহুপূর্ব †থকে প্রচলিত দীনী শিক্ষাকেন্দ্র মক্তবসমূহের ছাত্রদের কুরআন শিক্ষা করতে গিয়ে কুরআনের †য হস্তলিখিত কপি করতে হয় তা †যাগ করলে এ সংখ্যা আসলেই বিস্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে যাবে।
হাতে লিখে কুরআন মজিদের কপিকরণ স্বয়ং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর যুগ †থকেই শুরু হয়। তিনি কুরআন মজিদ লিপিবদ্ধ করার জন্য কয়েকজন সাহাবীকে নিয়োগ করেন। হযরত রাসূলে আকরামের প্রতি যখন †কান ওহি নাযিল হতো সাথে সাথেই তিনি তা †তলাওয়াত করতেন এবং উক্ত নির্ধারিত †লখকগণ তা লিপিবদ্ধ করে নিতেন। তাঁরা ‘কুত্তাব-ই-ওহি’ (ওহি লিপিবদ্ধকারিগণ) নামে খ্যাত ছিলেন। তাঁরা ছিলেন তাঁর সচিবগণ †থকে স্বতন্ত্র ব্যক্তি। সচিবগণ তাঁর পক্ষ †থকে চি?িপত্র, ফরমান, চুক্তি ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করতেন অথবা তাঁর উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তির খসড়া লিপিবদ্ধ করতেন।১
কুরআনের সংকলকগণ
ইবনে নাদিম লিখেছেন, হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে আলী ইবনে আবি তালিব (আ.), সা’দ ইবনে উবাইদ ইবনে নু’মান, আবু দারদা, মু’আয ইবনে জাবাল, সাবিত ইবনে যায়িদ২ এবং উবাইদ ইবনে মুআবিয়া ইবনে যায়িদ (রা.) রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই কুরআন মজিদ সংকলন করেন।৩
ইমাম বুখারী আনাস ইবনে মালিক †থকে বর্ণনা করেছেন †য, উবাই ইবনে কা’ব, মু’আয, যায়িদ ইবনে সাবিত ও আবু যায়িদ হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর যুগে৪ কুরআন সংকলন করেন। অন্য এক হাদীসে তিনি এ প্রসঙ্গে আবু দারদা, মু’আয ইবনে জাবাল, যায়িদ ইবনে সাবিত এবং আবু যায়িদ-এর নাম উল্লেখ করেছেন।৫
জারকাশী৬ শা’বী †থকে বর্ণনা করেছেন †য, হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জীবদ্দশায় ছয় ব্যক্তি কুরআন মজিদ সংকলন করেন। তাঁরা হলেন হযরত উবাই, যায়িদ, মু’আয, আবু দারদা, সাঈদ ইবনে উবাইদ এবং আবু যায়িদ (রা.)। এছাড়া মু’জাশা ইবনে জারিয়াহ দু’টি সূরা বাদে কুরআনের অবশিষ্ট সূরাসমূহ সংকলন করেন।
ইবনে নাদিম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও উবাই ইবনে কা’বের সংকলিত কুরআন মজিদের সূরাসমূহের বিন্যাস সম্পর্কে †য আলোচনা করেছেন তাতে †দখা যায় †য, ইবনে মাসউদও কুরআন সংকলন করেছিলেন,৭ অবশ্য হতে পারে †য, তিনি হযরত রাসূলে আকরামের ইন্তেকালের পরে এটি সংকলন করেছিলেন।
‘আল-তামহীদ’ গ্রন্থে আবু মূসা আশআরী ও মিকদাদ ইবনে আসওয়াদকেও কুরআন মজিদের সংকলনকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রন্থটিতে উল্লেখ করা হয়েছে †য, খলিফা হযরত উসমান কর্তৃক কুরআন মজিদের নির্ভুল কপি বিতরণের পূর্বে কুফার †লাকেরা ইবনে মাসউদের কপি অনুযায়ী, দামেশকের †লাকেরা মিকদাদের কপি অনুযায়ী এবং সিরিয়ার অন্যান্য এলাকার †লাকেরা উবাই ইবনে কা’বের কপি অনুযায়ী কুরআন †তলাওয়াত করত।৮
ইবনে নাদিম, ইয়াকুবী এবং অনেক শিয়া হাদীস শাস্ত্রবিদ হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত আলী (আ.) কর্তৃক কুরআন মজিদ সংকলনের ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। ইয়াকুবী তাঁর ইতিহাসে৯ হযরত আলী (আ.)-এর মুসহাফে কুরআন মজিদের সূরাসমূহের †য বিন্যাসের কথা উল্লেখ করেছেন তা ইবনে নাদিম কর্তৃক উল্লিখিত১০ ইবনে মাসউদ ও উবাই বিন কা’বের কপির বিন্যাস †থকে ভিন্নতর। এ ছাড়া কুরআন মজিদের সূরাসমূহের বহুল পরিচিত ও বর্তমানে ব্যবহৃত নামসমূহে কিঞ্চিত পার্থক্য †দখা যায়।১১ উপরিউক্ত মুসহাফসমূহে বিভিন্ন সূরার পর্যায়ক্রমের মধ্যেও কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইবনে মাসউদের মুসহাফে সূরা আনফালের ক্রমিক নং হচ্ছে ২৫, অন্যদিকে উবাই বিন কা’বের মুসহাফে এর ক্রমিক নং হচ্ছে ৯ এবং বর্তমানে প্রচলিত সংকলনে এর ক্রমিক নং ৮। আর বর্তমান মুসহাফ হচ্ছে প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের নির্দেশে যায়িদ বিন সাবিত কর্তৃক সংকলিত।
যায়িদ বলেন, “ইয়ামামার যুদ্ধের পর আবু বকর আমাকে †ডকে পা?ান। উক্ত যুদ্ধে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর অনেক সাহাবী ও ক্বারীয়ে-কুরআন নিহত হন। তিনি আমাকে বললেন, ‘উমর †য এখন এখানে উপবিষ্ট আছে, †স বলছে †য, ইয়ামামায় কুরআনের অনেক কারী শহীদ হয়েছেন। যদি অনুরূপ আরেকটি ঘটনা সংঘটিত হয় তাহলে তাঁদের মুখস্থকৃত কুরআনের অংশবিশেষ হারিয়ে †যতে পারে। আর তুমি †যহেতু অত্যন্ত বুদ্ধিমান †লাক এবং ওহির লিপিকারদের অন্যতম, †তমনি নির্ভরযোগ্য †লাক, †সহেতু আমি †তামাকে কুরআন সংকলনের দায়িত্ব প্রদান করছি।’ অতঃপর আমি মূল সূত্রসমূহ এবং †লাকদের †থকে কুরআন সংকলন করি।”১২
ইয়াকুবীর মতে, কুরাইশ †গাত্রের ২৫ জন এবং আনসারদের মধ্য †থকে ৫০ ব্যক্তি এ কাজে যায়িদকে সাহায্য করেন।১৩ এদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর ও হযরত আবদুর রহমান বিন হারিস বিন হিশাম ছিলেন সংশ্লিষ্ট কমিটির স্থায়ী সদস্য।
‘আল-তাহমীদ’ গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত যায়িদ বিন সাবিত অপর কয়েকজনের সাথে মিলে কাজ শুরু করেন। কিন্তু পরে হযরত উবাই বিন কা’ব প?নের এবং হযরত যায়িদ লিপিবদ্ধকরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
†মাট কথা, এভাবে কুরআন সংকলিত হয় এবং সংকলিত কপিটি প্রথমে হযরত আবু বকরের নিকট ও পরে তা হযরত উমরের নিকট রাখা হয়, আর তা †লাকদের জন্য কুরআন মজিদের স্ব স্ব কপি যাচাই করার সূত্রে পরিণত হয়। হযরত উমরের ইন্তেকালের পর কুরআন মজিদের এ কপিটি তাঁর কন্যা হযরত হাফছার নিকট রাখা হয় এবং হিজরি ২২ সাল †মাতাবেক ৬৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তা এ অবস্থায় থাকে। অতঃপর হযরত উসমানের শাসনামলে কুরআন মজিদের †তলাওয়াতে সামান্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে খলিফার নির্দেশে হযরত হাফছার নিকট †থকে কুরআনের পূর্বোক্ত কপিটি গ্রহণ করা হয় এবং এর প্রধান লিপিকার যায়িদ বিন সাবিত ও কুরআন সংকলনকারী মূল কমিটির দুই সদস্য আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর ও আবদুর রহমান বিন হারিস বিন হিশাম, সাইদ বিন আল-আস এর সহযোগিতায় কয়েকটি কপি তৈরি করেন। অতঃপর মূল কপিটি হযরত হাফছার নিকট †ফরত †দয়া হয়। অন্যান্য কপি †থকে একটি কপি মদীনায় খলিফার নিকট রাখা হয় এবং বাকি কপিগুলো ইসলামী †খলাফতের প্রধান শহরগুলোতে †প্ররণ করা হয়।১৪ অতঃপর কুরআনের লিপি ও প?ন সংক্রান্ত বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে খলিফার নির্দেশে কুরআনের অন্যান্য হস্তলিখিত কপি নষ্ট করে †ফলা হয়।১৫
হযরত আবু বকরের সময়ে সংকলিত কুরআন মজিদের কপি মারওয়ান ইবনে হাকামের যুগ পর্যন্ত হযরত হাফছার নিকট সংরক্ষিত থাকে। মারওয়ান কুরআন মজিদের এ কপিটিও পুড়িয়ে †ফলতে চায়, কিন্তু হযরত হাফছা কপিটি তার নিকট হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন। ফলে তাকে হযরত হাফছার ইন্তেকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। অতঃপর এ সংকলনটি ধ্বংস করা হয়।১৬
এভাবে কুরআন মজিদের কপিসমূহের অভিন্নতা ২২ হিজরি †মাতাবেক ৬৪২ খ্রিস্টাব্দেই নিশ্চিত করা হয়।১৭ যদিও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ তাঁর সংকলনটি নষ্ট করার জন্য হযরত উসমানের নিকট হস্তান্তরে অস্বীকার করেন।১৮ †তমনি হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর সংকলনটিও তিনি নিজের নিকট সংরক্ষণ করেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর বংশধরদের নিকট তা সংরক্ষিত থাকে।
কুরআন সংকলনের জন্য হযরত উসমানের নির্দেশে গ?িত কমিটি এর †যসব কপি তৈরি করেন, বিভিন্ন হাদীস অনুযায়ী ‘আল-মুসহাফুল ইমাম’ বা মূল কপি ব্যতিরেকে তার সংখ্যা ছিল চার †থকে নয়। এ কপিগুলো কুফা, বসরা, মক্কা, সিরিয়া, বাহরাইন, ইয়ামান, মিশর, আলজেরিয়া ও মদীনায় †প্ররণ করা হয়।১৯ এই কপিগুলো সংশ্লিষ্ট শহরের জনগণের জন্য কুরআন মজিদের †ক্ষত্রে নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে পরিগণিত হতো, †লাকেরা এ কপি †থকে নিজেদের জন্য কুরআন কপি করত এবং তাদের মধ্যে কুরআনের পা? নিয়ে †কানরূপ মতপার্থক্য হলে এ কপির ভিত্তিতে তা নিরসন করত। আর কখনো যদি বিভিন্ন শহরের মুসহাফের মধ্যে †কান ক্ষুদ্র পার্থক্য পরিলক্ষিত হতো, †স †ক্ষত্রে মদীনাস্থ কুরআন (আল-মুসহাফুল ইমাম)-ই হতো চূড়ান্ত মানদ-।
হযরত উসমান প্রতিটি শহরে কুরআনের কপি †প্ররণের সাথে সাথে †লাকদের স?িক উচ্চারণে †তলাওয়াত শিক্ষা †দয়ার জন্য একজন করে কারীও †প্ররণ করেন। মক্কায় আবদুল্লাহ ইবনে সা’ইব, সিরিয়ায় মুনিরাহ ইবনে শিহাব, কুফায় আবু আবদুল্লাহ সালামী, বসরায় আমির ইবনে আবদিল কায়স (বা আমির ইবনে আবদির রাহমান) এবং মদীনায় যায়িদ ইবনে সাবিত কুরআনের পা? সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বশীল ছিলেন।২০
‘মুসহাফে উসমানী’ বা ‘উসমানী সংকলন’ নামে খ্যাত কুরআন মজিদের উপরিউক্ত কপিসমূহ বহুদিন যাবৎ সংরক্ষিত থাকে। ইয়াকুত আল-হামাভী (ওফাত ৬২৬ হি./১২২৮ খ্রি.) তাঁর ‘মু’জামুল বুলদান’২১ এ লিখেছেন †য, এক কপি উসমানী সংকলন দামেশকের জামে মসজিদে ছিল। ‘মাসালিকুল আবছার’-এর †লখক ইবনে ফাজলিল্লাহ আল-উমরীও (ওফাত ৭৪৯ হি./১৩৪৮ খ্রি.) দামেশকের সংকলনের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনে কাসির (ওফাত ৭৭৪ হি./১৩৭২ খ্রি.) এটি †দখেছেন এবং এ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।২২ ইবনে বতুতা (ওফাত ৭৭৮ হি./১৩৭৬ খ্রি.) তাঁর এতদসংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে লিখেছেন :
‘†মহরাবের মুখোমুখি নামাযখানার পূর্বপার্শ্বে একটি সংরক্ষণাগার রয়েছে; আমীরুল মুমিনীন উসমান ইবনে আফফান কর্তৃক †প্ররিত কুরআন এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। এ সংরক্ষণাগারটি জুমআ নামাযের পর †খালা হয় এবং †লাকেরা কুরআনের এ কপিটি স্পর্শ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিভিন্ন বিরোধের †ক্ষত্রে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতারা এখানে এসে শপথ গ্রহণ করে থাকে।’২৩
কুর্দ আলীর২৪ মতে, ১৩১০ হি./১৮৯২ খ্রি. পর্যন্ত এ কুরআনটি দামেশকের মসজিদে মওজুদ ছিল, অতঃপর ঐ বছর তা মসজিদের অগ্নিকা-ে ধ্বংস হয়ে যায়।
ড. রামিয়ার (অবশ্য †কান সূত্র উল্লেখ ছাড়াই) লিখেছেন : ‘উসমানী সংকলন হিসাবে বিবেচিত কুরআনের কয়েকটি সূরার অংশবিশেষ আমীর তৈমুর †গারকানী স্বীয় সমাধিতে রাখার উদ্দেশ্যে সিরিয়া †থকে সমরকন্দে নিয়ে যান বলে মনে হয়। এ পা-ুলিপি পরে †লনিনগ্রাদের ইম্পেরিয়াল ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলোজির গ্রন্থাগারে স্থানান্তরিত হয়। ১৯০৫ সি.ই.-†ত এর ৫০টি লিথোগ্রাফিক কপি করা হয় এবং এর ২৫টি কপি বিভিন্ন মুসলিম †দশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।২৫
ইবনে বতুতা কুফার মসজিদে হযরত উসমানের স্মৃতিযুক্ত আরেকটি কুরআন †দখেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
নাবুলুসী (ওফাত ১১০৫ হি./১৬৯৩ খ্রি.) †থকে এ প্রসঙ্গে উদ্ধৃত হয়েছে †য, সিরিয়ার হুম্্স-এর প্রাচীন দুর্গস্থ মসজিদের †মহরাবে কুফী হরফে লিখিত রক্তমাখা এক †জলদ কুরআন ছিল। নাবুলুসীর সময় খরা †দখা দিলে †লাকেরা বৃষ্টির জন্য মুনাজাতে এ কুরআনকে উসিলা করত।২৬
‘উসমানী মুসহাফ’ রূপে পরিচিত কুরআনের কয়েকটি পা-ুলিপি বিভিন্ন শহরে বিদ্যমান ছিল; বিভিন্ন সূত্রের উল্লেখ অনুযায়ী এরূপ পা-ুলিপির সংখ্যা হচ্ছে †ষালটি।২৭ এমনকি উসমানী সংকলন (মুসহাফে উসমানী) হিসাবে পরিগণিত কুরআনের কয়েকটি কপি মিশর, তুরস্ক ও তাশখন্দে এখনো বিদ্যমান। এগুলো হচ্ছে :
১. কুরআনের মিশরস্থ পা-ুলিপিটি কায়রোর আলমাশহাদুল হুসাইনী-র সংরক্ষণাগারে রাখা হয়েছে। এটি হচ্ছে কুফী হরফে লিখিত একটি বিরাটাকারের পা-ুলিপি।
২. তরস্কস্থ পা-ুলিপিটি প্রথমে (ইরাকের) মসুলে ছিল এবং পরে তা হানাদার তাতারদের দ্বারা লুণ্?িত হয়। পরবর্তীকালে তা উসমানীদের রাজধানী ইস্তাম্বুলে †ফরত †দয়া হয়। বর্তমানে এটি আলআমানাহ সংগ্রহের এক নং ক্রমিকের অধীনে সংরক্ষিত আছে। কায়রোর মা’দাদুল মাখতুতাতিল আ’রাবিয়াহ-†ত ক্রমিক নং ১৯-এর অধীনে এর একটি মাইক্রোফিল্ম সংরক্ষিত আছে।
৩. তাশখন্দের পা-ুলিপিটি তৈমুর লং সিরিয়া †থকে লুণ্?ন করে উজবেকিস্তানে নিয়ে আসেন এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী সমরকন্দে তাঁর সমাধিতে রাখা হয় বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়। পরবর্তীকালে এটি রাশিয়ান সাম্রাজ্যের রাজধানী †পট্রোগাদে (†লনিনগ্রাদে) স্থানান্তরিত হয়। অক্টোবর বিপ্লবের পর †লনিনের নির্দেশে এটি পুনরায় তাশখন্দে †ফরত পা?ানো হয় এবং এখনো তা †সখানেই আছে। ড. রামিয়ারের ‘তারিখে কুরআন’-এ২৮ এই স্থানান্তরের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে। অবশ্য এর সূত্র হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধারণা। ড. সুবহি আসসালিহ এ প্রসঙ্গে বলেন : ‘অনেক গবেষকের মতে, উজবেকিস্তানে স্থানান্তরিত হবার পূর্বে এ কপিটি দীর্ঘকাল যাবৎ †লনিনগ্রাদের ইম্পেরিয়াল মিউজিয়ামে ছিল।’২৯ এ ব্যাপারে বিস্তাতির জানার জন্য ঈযধারহ এর ‘ইরনষরড়মৎধঢ়যরব ফবং ড়ঁৎধমবং অৎধনবংড়ঁ ৎবষধঃরভং ধীঁ অৎধনবং (খরবমব)’-এর দশম খ-ের ৪৫ †থকে ৫৬ পৃষ্?া পর্যন্ত অধ্যয়নের জন্য পা?ক-পা?িকাদের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন †য, অন্যান্য গবেষক মনে করেন, এ মুসহাফটি ২৩১০ হি./১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে অগ্নিকা-ে ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দামেশকের জুমআ মসজিদে সংরক্ষিত ছিল।৩০
আমরা জানি †য, তৈমুর ৮০৩ হি./১৪০০ খ্রিস্টাব্দে দামেশক জয় করেন আর †স বিজয়ের বছরেই তাঁর সৈন্যবাহিনী শহরটি লুণ্?ন করে ও এতে অগ্নি সংযোগ করে। যদিও তৈমুরের পক্ষ †থকে জামে মসজিদে হামলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল তথাপি মসজিদটির কা?ের তৈরি ছাদে আগুন †লগে যায় এবং এর পূর্ব দিককার মিনার পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যদিও আ’রুস নামক মিনারটি [†য সম্পর্কে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে] রক্ষা পায়।৩১
অতএব, প্রমাণ করা চলে †য, দামেশকের মসজিদে অগ্নিকা-ের পূর্বেই তৈমুর কুরআন মজিদের উক্ত কপিটি তাঁর নিজ শিবিরে নিয়ে যান এবং পরে তা তাঁর রাজধানী সমরকন্দে স্থানান্তর করা হয়। অন্যথায় দামেশক এং †সখানকার জামে মসজিদে †য ভয়াবহ অগ্নিকা- সংঘটিত হয় তার হাত †থকে এ মুসহাফটির রক্ষা পাওয়ার †কান সম্ভাবনা ছিল না।
ড. সুবহি আসসালিহ †য খুতাতুশশাম-এর বরাত দিয়ে বলেছেন, মুসহাফটি ১৩১০ হিজরি পর্যন্ত দামেশকে ছিল †স প্রসঙ্গে বলতে হয়, এটা প্রমাণ করা সম্ভব নয় †য, সিরিয়ায় তৈমুরের আধিপত্যের অবসান এবং মামলুক শাসন পুনঃপ্রতিষ্?ার পর হুম্্সের উসমানী কুরআনÑনাবুলুসীর বক্তব্য অনুযায়ী যা হুম্সের প্রাচীন দুর্গে সংরক্ষিত ছিলÑদামেশকে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
তৈমুরের অধীনতা স্বীকার ও তাঁকে করদানে স্বীকৃতির কারণে হুম্স নগরী ৮০৩ হি./১৪০০ খ্রিস্টাব্দের তৈমুর বাহিনীর আক্রমণ †থকে †বঁচে যায়।৩২ এ কারণে এ সম্ভাবনাই †বশি †য, দামেশকের মুসহাফ বহু জায়গায় পরিভ্রমণের পরে †শষ পর্যন্ত তাশখন্দে আসে এবং †সখানেই †থকে যায় এবং হুম্সে স্থানান্তরিত হবার পরে ১৩১০ হি./১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে সংশ্লিষ্ট মসজিদে অগ্নিকা-ের ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
†স যা-ই †হাক, তাশখন্দস্থ উজবেকিস্তানের ইসলামিক †সন্টারের পরিচালক অত্র †লখককে বলেছেন †য, উক্ত মুসহাফটি তাশখন্দের প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে তালাবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত আছে। তবে এর সমান আকারের (৬৫ ী ৫০) †স.মি.) একটি ফটোকপি দর্শকদের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।
হযরত আলী (আ.)-এর মুসহাফ
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ওফাতের পর সর্বপ্রথম †য ব্যক্তি কুরআন মজিদের সংকলনের কাজ শুরু করেন তিনি হচ্ছেন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ ও অসিয়ত অনুযায়ী তিনি এ কাজে হাত †দন।৩৩ তিনি কুরআন মজিদের সূরাসমূহকে নাযিলের ধারাক্রম অনুযায়ী বিন্যস্ত করেন এবং তার মর্মার্থ ও †তলাওয়াতের †ক্ষত্রে তার অবস্থান উল্লেখ করেন।
ইবনে নাদিম লিখেছেন : ‘হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ওফাতের পরে হযরত আলী (আ.) শপথ করেন †য, সমগ্র কুরআন সংকলিত না করা পর্যন্ত তিনি তাঁর গৃহ ত্যাগ করবেন না। তিনি তিন দিন স্বীয় গৃহে অবস্থান করেন এবং কুরআন সংকলন করেন। †হফ্য †থকে কুরআন সংকলনকারী প্রথম ব্যক্তি হচ্ছেন তিনিই। এ কুরআন জা’ফরের পরিবারের তত্ত্বাবধানে থাকে।’৩৪
ইবনে নাদিমের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে †বাঝা যায় †য, হযরত নবী করীম (সা.)-এর ওফাতের পূর্বেই হযরত আলী (আ.) কুরআন †হফ্য করেছিলেন এবং রাসূলের ইন্তেকালের পর তিনি †হফ্য †থকে তা সংকলন করেন। সম্ভবত এর কিছু অংশ তিনি পূর্বেই লিখে †রখেছিলেন। †কননা, অত্যন্ত সুদক্ষ লিপিকারের পক্ষেও †হফ্য †থকে বা অন্য †কান কপি †থকে মাত্র তিন দিনের মধ্যে পুরো কুরআন কপিকরণ সম্ভব হতে পারে না। †যহেতু এরূপ †কান প্রমাণ †নই †য, হযরত আলী (আ.) অন্য †কান কপি †থকে কুরআনের কপি করেছিলেন, †সহেতু এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় †য, কুরআন মজিদ নাযিল হওয়ার সময় তিনি নাযিলের ক্রম অনুযায়ী তা লিপিবদ্ধ করে †রখেছিলেন। আর †যহেতু হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) হযরত আলী (আ.)-এর এ কাজ অর্থাৎ কুরআন কপিকরণ সম্পর্কে জানতেন, †সহেতু কুরআনকে ধ্বংস ও বিলুপ্তির হাত †থকে †হফাযত এবং অতীতের কিতাবসমূহের ন্যায় বিকৃত হওয়ার হাত †থকে বাঁচানোর লক্ষ্যে তিনি পুরো কুরআন সংকলনের জন্য হরযত আলীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইবনে জওজী তাঁর ‘আত্তাসহিল’-এ এবং জারকাশী তাঁর ‘আল-বুরহান’ এ৩৫ বলেন †য, হযরত রাসূলে আকরামের সময় কুরআন ‘ছুহফ’ (বিভিন্ন বিভিন্ন পাতা) হিসেবে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছিল এবং সাহাবীদের মস্তিষ্কে †হফ্য অবস্থায় ছিল। তাঁদের মধ্যে অনেকে, †যমন হযরত উসমান ও হযরত আলী (আ.) হযরত রাসূলে আকরামের সামনে নিয়মিত তা †তলাওয়াত করতেন। †শখ মুফিদ তাঁর ‘আজওয়েবাতুল মাসায়িলিস সারাওয়িয়াহ’ পুস্তকে একই বিষয় উল্লেখ করেছেন।৩৬
ইতিপূর্বেকার বর্ণনায় †য বলা হয়েছে, হযরত আলী (আ.) কুরআন মজিদের নাযিলের ক্রম অনুযায়ী এর সংকলন করেন তা †থকে †বাঝা যায় †য, কুরআনের †ছাট সূরাসমূহ যা প্রধানত মক্কায় অবতীর্ণ, এ সংকলনের শুরুর দিকে এবং মদীনায় অবতীর্ণ বড় বড় সূরার পূর্বে স্থান †দয়া হয়েছিল। এছাড়া এ সংকলনে বিভিন্ন সূরার সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তুও উল্লিখিত ছিল এবং নাসেখ ও মানসুখ আয়াতসমূহও চিহ্নিত ছিল।
ইয়াকুবী তাঁর ‘তারিখ’-এ (নাজাফ সংস্করণ, ২য় খ-, ১১৩) হযরত আলী (আ.) †য বিন্যাসে সূরাসমূহ লিপিবদ্ধ করেন তার উল্লেখ করেন, অন্যদিকে ইবনে নাদিম তাঁর ‘আলফিহরিস্ত’-এ আলী (আ.)-এর মুসহাফ নিয়ে আলোচনাকালে কিছুটা খালি জায়গা †ছড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু এ ক্রম লিপিবদ্ধ করতে সমর্থ হননি, যদিও তিনি এ মুসহাফ †দখেছেন। এ †থকেও প্রমাণিত হয় †য, হযরত আলী (আ.) সূরাগুলোকে ভিন্নতরভাবে বিন্যস্ত করেছিলেন।
আলী (আ.)-এর মুসহাফ নামে পরিচিত মুসহাফসমূহ
হযরত আলী (আ.)-এর সংকলিত মুসহাফ ইবনে নাদিমের যুগ পর্যন্ত অর্থাৎ হিজরি চতুর্থ শতাব্দী/খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীর †শষ দিক পর্যন্ত মওজুত ছিল।৩৭
‘আলফিহরিস্ত’-এর উল্লেখ অনুযায়ী ইবনে নাদিম আবু ইয়ালা হামযাহ আল-হাসানীর কাছে আলী (আ.)-এর মুসহাফ †দখেছেন এবং হযরত ইমাম হাসান (আ.)-এর পরিবারের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে তা তাঁর নিকট সংরক্ষিত ছিল।৩৮ উপরিউক্ত ব্যক্তি সম্ভবত সাইয়্যেদ মুর্তাজার৩৯ শিষ্য শরীফ আবু ইয়ালা হামযাহ ইবনে যায়িদ ইবনে হুসাইন আল-হাসানী আল-আফতাসী ছিলেন। †যহেতু ‘আলফিহরিস্ত’ ৩৭৭ হি./৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয় এবং সাইয়্যেদ মুর্তাজা সম্ভবত ৩৫৫ হি./৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন, †সহেতু আবু ইয়ালা কর্তৃক সাইয়্যেদ মুর্তাজার শিষ্যত্ব গ্রহণের পূর্বেই ইবনে নাদিমের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়ে থাকবে, †কননা, সাইয়্যেদ মুর্তাজার বয়স ২২ বছর হওয়ার পূবেই আবু ইয়ালা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন বলে মনে হয় না।
মিশরস্থ মুসহাফ
আলমাকরিজী (ওফাত ৮৪৫ হি./১৪৪১ খ্রি.) তাঁর ‘খুতাতু মিছর’৪০ গ্রন্থে কায়রোয় ফাতেমী খলিফাদের গ্রন্থাগারে হযরত আলী (আ.) কর্তৃক লিখিত এক খ- কুরআন ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। ফাতেমী খলিফা আমীর বিল্লাহর মন্ত্রী, মা’মুন বাতাইহী কর্তৃক এ মুসহাফটির জন্য একটি স্বর্ণের বাক্স তৈরির নির্দেশ দানের পূর্ব পর্যন্ত এটি †সখানকার প্রাচীন মসজিদ (জামি’উল আতিক)-এ একটি †রŠপ্যনির্মিত বাক্সে সংরক্ষিত ছিল।৪১
বর্তমানে হুসাইন (আ.)-এর কায়রোস্থ সমাধিক্ষেত্রের ঐতিহাসিক গ্রন্থশালায় হযরত আলী (আ.)-এর মুসহাফ হিসাবে বিবেচিত এক খ- কুরআন রয়েছে। অসম্ভব নয় †য, এটি হচ্ছে মিশরের প্রাচীন জামে মসজিদে সংরক্ষিত †সই কুরআন †যটি পরে এখানে স্থানান্তরিত হয়ে থাকবে।
নাজাফের মুসহাফ
সাইয়্যেদ জামালুদ্দিন আদদাউদী আল-হাসানী, যিনি ইবনে ইনাবাহ হিসাবে পরিচিত (ওফাত ৮২৫ হি./১৪২২ খ্রি.) তাঁর লিখিত ‘উমদাতুত্তালিব’ গ্রন্থে নাজাফে হযরত আলী (আ.)-এর মাযারের সংগ্রহশালায় এক খ- কুরআন ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া উবায়দুল্লাহ ইবনে আলীর মাযারে হযরত আলী (আ.) লিখিত এক খ- কুরআন †দখেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এ দু’টি কুরআনের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক এবং মিশরের কুরআনটির সাথে এর সংযোগ গবেষণার দাবি রাখে।
এমনকি আজও নাজাফে হযরত আলী (আ.)-এর মাযারের সংগ্রহশালায় এক খ- কুরআন রয়েছে, কতক প-িত ব্যক্তি যাকে ‘উমদাতুত্তালিব’-এ উল্লিখিত উক্ত কুরআনসমূহের অন্যতম বলে মনে করেন। সম্ভবত উবায়দুল্লাহ ইবনে আলীর মাযারের পা-ুলিপিতে নাজাফের পা-ুলিপির কয়েকটি অংশ †থকে থাকবে।
সাইয়্যেদ আহমদ আল-হুসাইনী আল-আশকাভারী তাঁর লিখিত ‘ফিহরিস্ত-ই-খাজানাতুর রাওজাতুল হায়দারিয়াহ’ গ্রন্থে ‘মাওসুআ’তুল আ’তাবাতিল মুকাদ্দাসাহ’ (নাজাফ অধ্যায়)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন †য, ৭৫৫ হি./১৩৫৪ খ্রিস্টাব্দে হযরত আলী (আ.)-এর মাযারে অগ্নিকা- ঘটে, এতে হযরত আলী (আ.) কর্তৃক তিন খ-ে লিপিবদ্ধ কুরআনের পা-ুলিপিসহ বহু দুর্লভ সংগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়।৪২
(মাশহাদের) অস্তানেহ-এ-কুদসে রাজাভী-†ত মওজুদ ‘উমদাতুত্তালিব’-এর পা-ুলিপির মার্জিনে নাসসাবাহর গ্রন্থাগারিক হুসাইন লিখিত কয়েকটি মূল্যবান টীকা-টিàনী রয়েছে, এতে নাজাফের মুসহাফ সম্পর্কে একটি বিবরণ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট টীকায় বলা হয়েছে : সাইয়্যেদ নকীব (অর্থাৎ ইবনে ইনাবাহ আল-হাক্কানী নাস্সাবাহ ‘উমদাতুত্তালিব’-এর গ্রন্থকার) নাজাফে †য মুসহাফটি †দখেছেন এখনো তা নাজাফের সংগ্রহে বিদ্যমান রয়েছে। অবশ্য এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পুড়ে যায় এবং মাত্র এক খ- অবশিষ্ট থাকে। এ খ-টিও মার্জিনের টীকা-টিàনী ছাড়াই ছিল, †কননা, মূল †টক্সটের অংশবিশেষসহ মার্জিনের টীকাও আগুনে পুড়ে যায়।৪৩
ইমাম †রযা (আ.)-এর মাযারে রক্ষিত মুসহাফ
নাজাফে হযরত আলী (আ.)Ñএর মাযারস্থ সিন্দুকে রক্ষিত কুরআন ছাড়াও মাশহাদে হযরত ইমাম †রযা (আ.)-এর মাযারস্থ সংগ্রহশালায় কুরআনের আরো দু’টি পা-ুলিপি রয়েছে যা হযরত আলী (আ.)-এর হস্তলিখিত বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে প্রথমটির ক্রমিক হচ্ছে ৬; এটি গ্রন্থাগারে রাখা হয়েছে। এ মুসহাফটি কুফী হরফে হরিণচর্মের ওপরে লিখিত; এতে †লখা রয়েছে : كتبه علي ابن ابي طالب (অর্থাৎ এটি আলী ইবনে আবি তালিব কর্তৃক লিখিত)। এর প্রথম পৃষ্?ায় †শখ বাহাই এর হস্তাক্ষরে তাঁর স্বাক্ষর ও ১০০৮ হিজরির তারিখ উল্লেখসহ সাফাভী বাদশা শাহ আব্বাসের উৎসর্গপত্র রয়েছে। এতে †শখ বাহাই লিখেছেন †য, এটি হযরত আলী (আ.) কর্তৃক লিখিত। ৬৮টি অংশবিশিষ্ট এ পা-ুলিপিতে সূরা হূদ †থকে সূরা কাহ্ফ পর্যন্ত রয়েছে।৪৪
মাশ্হাদের দ্বিতীয় কুরআনটির ক্রমিক নং হচ্ছে ১। এর মার্জিনসমূহের কিছু অংশ বিলুপ্ত হয়েছে এবং মাঝখান †থকে কিছু আয়াত হারিয়ে †গছে। উদাহরণস্বরূপ, এর ৩৩ ও ৩৪তম অংশের মাঝামাঝি ৭৯টি আয়াত পাওয়া যাচ্ছে না। ৩৪১টি অংশে হরিণচর্মের ওপর এ কুরআন লিখিত এবং এতে সমগ্র কুরআন মজিদ শামিল রয়েছে। এটি শাহ আব্বাস কর্তৃক ১০০৯ হিজরিতে (১৬০০ খ্রি.) ইমাম †রযার মাযারে দান করা হয়। এখানে আমরা †শখ বাহাই এর হস্তাক্ষরে লিখিত উৎসর্গপত্রটি উল্লেখ করছি : ‘ঈমানদারগণের অধিনায়ক, (রাসূলের) উত্তরাধিকারীদের প্রধান, আল্লাহর সিংহ অপারেজয় (বীর), প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাসীদের †নতা, বহু বিস্ময়কর কর্মের নায়ক, যিনি স্বয়ং বহু অনন্য গুণের ধারক, আমীরুল মুমিনীন আলী বিন আবি তালিব (আলাইহিস সালাম)-এর পবিত্র হস্তাক্ষরে লিখিত এ কুরআন মজীদ ইসলামের আশ্রয়রূপ বাদশাহ, আল্লাহ তাআলা মানবশ্রেষ্? (রাসূল সা.)-এর (রওযার) পবিত্র ধূলিকণার ছায়াপাত করুন তাঁর ওপর, দ্বাদশ সংখ্যক ইমামের সত্য-স?িক মাজহাবের বিস্তারকারী এবং আমীরুল মুমিনীন হায়দার (আলী আ.)-এর একনিষ্? খাদেম শাহ আব্বাস আলহুসাইনী আলমুসাভী আসসাফাভী বাহাদুর খান কর্তৃকÑআল্লাহ তাঁর রাজ্য ও রাজত্বকে চিরস্থায়ী করুন এবং তাঁর কল্যাণকর্ম ও ন্যায়বিচারের দ্বারা বিশ্ববাসীকে অনুপ্রাণিত করুন; কুবল কর †হ রাব্বুল আলামীনÑআরশতুল্য মর্যাদার অধিকারী পবিত্র ও নূরানি রাযাভীর (অর্থাৎ ইমাম †রযা আ. এর) রওযায়Ñএখানে যিনি ঘুমিয়ে আছেন তাঁর প্রতি হাজার হাজার দরুদ, সালাম ও অভিনন্দনÑদান করা হলো। ইমাম †রযা আলাইহিস সালাম এর পবিত্র মাযারের ধূলিকণাতুল্য নাচিজ বান্দা খাদেম বাহাউদ্দিন মুহাম্মাদ কর্তৃক ১০০৯ সালে (হি.) লিখিত।’
†তাপাকু সারায়ী সংগ্রহের মুসহাফ
তুরস্কে আরো দু’টি মুসহাফ রয়েছে যাকে হযরত আলীর মুসহাফ বলে মনে করা হয়। উভয় মুসহাফই আলআমানাহ লাইব্রেরিতে (যা বর্তমানে †তাপাকু সারায়ী লাইব্রেরির অংশবিশেষ) রয়েছে। প্রথম মুসহাফটির (আলআমানাহ লাইব্রেরি) ক্রমিক নং হচ্ছে ২। এ †থকে ১৮টি মাইক্রোফিল্ম গ্রহণ করা হয় এবং কায়রোস্থ মা’হাদুল মাখতুতাতিল আরাবিয়্যাহ-†ত এর মাইক্রোফিল্ম সংরক্ষিত রয়েছে। দ্বিতীয় মুসহাফটির ক্রমিক নং ২৯ এবং এ †থকে ১৪টি মাইক্রোফিল্ম †নয়া হয়েছে। এটি কায়রোর মা’হাদুল মাখতুতাতিল আরাবিয়্যাহ-†ত রাখা হয়েছে।৪৫-৪৬
এখানে নি¤œলিখিত কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা জরুরি বলে মনে হয় :
১. ‘হযরত আলী (আ.)-এর মুসহাফ’ নামে পরিচিত মুসহাফগুলোর লিপিতে দক্ষতা, সাযুজ্য ও †সŠন্দর্য সুপরিস্ফুট, অথচ হিজরি প্রথম শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত আরবি লিপি (কুফী বর্ণমালা) এরূপ সমন্বয় ও সাযুজ্যের অধিকারী হয়নি। এমতাবস্থায় এ মুসহাফগুলোকে কি করে হযরত আলী (আ.), যিনি ৪০ হিজরিতে (৬৬০ খ্রি.) শহীদ হন, তাঁর লিখিত বলে মনে করা †যতে পারে?
২. †যহেতু হযরত আলী (আ.)-এর বিপুল কর্মব্যস্ততা ছিল †সহেতু কি করে এটা সম্ভব হতে পারে †য, তিনি কুরআন মজীদের কয়েকটি কপি করবেন?
৩. হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত আলী (আ.)-এর মুসহাফ নাযিলের ক্রম অনুযায়ী সংকলিত হয়েছিল এবং এতে বিভিন্ন সূরার বিষয়বস্তুও সংক্ষেপে উল্লিখিত ছিল, অথচ আলোচ্য মুসহাফগুলো প্রচলিত ক্রমেই লিপিবদ্ধ হয়েছে।
†স যাই †হাক, ‘হযরত আলীর মুসহাফ’ নামে পরিচিত মুসহাফগুলো তাঁর দ্বারা লিখিত হওয়া সম্পর্কে উত্থাপিত উপরিউক্ত সন্দেহসমূহের জবাবে বলা †যতে পারে :
হযরত আলী (আ.) †য নাযিলের ক্রম অনুযায়ী কুরআন সংকলন করেছিলেন তাতে সন্দেহের †কান অবকাশ †নই৪৭, কিন্তু তিনি †য প্রচলিত বিন্যাস অনুযায়ীও কুরআন লিপিবদ্ধ করে থাকবেন এটা আদেŠ অসম্ভব নয়।
হযরত আলীর বিভিন্ন ধরনের কর্মব্যস্ততা প্রসঙ্গে বলতে হয়, এতে সন্দেহের অবকাশ †নই †য, হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর ইন্তেকালের পর মদীনায় তিনি ছিলেন অন্যতম †কন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব এবং মুসলমানদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ে, বিশেষ করে বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃত্বশালী ব্যক্তি। কিন্তু †যহেতু তিনি সরাসরিভাবে এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন না এবং ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করতেন না, অতএব, এটা প্রমাণ-অযোগ্য নয় †য, ঐ যুগে অবসর সময়ে তিনি কুরআনে মজীদের কপি করার কাজে আত্মনিয়োগ করে থাকবেন। বিশেষ করে কুরআন মজীদের মওজুদ কপিসমূহের সাথে আরো কিছু কপি †যাগ হওয়ার মানে যখন কুরআনের সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণের সমার্থক ছিল †স পরিস্থিতিতে এ কাজে সক্ষম †যকোন ব্যক্তির জন্যই এতে আত্মনিয়োগ অপরিহার্য কর্তব্য ছিল।
আলোচ্য মুসহাফসমূহের লিপির †সŠন্দর্য ও সাযুজ্য †থকে †য কুফী হরফের যাত্রাকালের লিপির সাথে তার অসামঞ্জস্যের ধারণা সৃষ্টি হয় †স সম্পর্কে বলতে হয় †য, ঐ যুগে হযরত আলী (আ.) ছিলেন লিপিশিল্পের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। হযরত আলী (আ.) তাঁর সচিব উবাইদুল্লাহ বিন আবি রাফি’কে লিপিশিল্প (ক্যালিগ্রাফি) শিক্ষা দিয়েছিলেন।৪৮ বর্ণিত হয়েছে †য, একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লিপিকার কুরআনের কপি করছিলেন, হযরত আলী (আ.) তাঁর লিপি পরীক্ষা করে তাঁর লিপিকুশলতার স্বীকৃতি †দন, যদিও তিনি খুবই †ছাট †ছাট অক্ষরে কুরআন কপিকরণের ব্যাপারে আপত্তি করেন।৪৯
ইবনে নাদিমের আলফিহরিস্ত-এ হযরত আলী (আ.)-এর সহচর খালিদ বিন আবিল হাইয়াজকে লিপিশিল্পের প্রশিক্ষক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।৫০ হযরত আলীর শাহাদাতের পরবর্তীকালে ওয়ালিদ বিন আবদুুল মালিক সচিব খালিদকে কিতাবের কপিকরণ এবং কবিতা ও হাদীস †লখার জন্য নিযুক্ত করেন। মসজিদুন্নববীর কিবলার দিকে তিনি স্বার্ণক্ষরে সূরা শাম্স †থকে শুরু করে কুরআনের †শষ পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করেন।৫১
†স যাই †হাক, উল্লিখিত মুসহাফসমূহ হযরত আলী (আ.) কর্তৃক কপিকৃত হয়েছিল কিনা †স ব্যাপারে স্বতন্ত্র গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রথম যুগের কুরআনের লিপি
এতে সন্দেহের অবকাশ †নই †য, হযরত রাসূলে আকরাম (সা.), সাহাবায়ে †করাম ও তাবেয়ীদের যুগের কুরআনের কপিসমূহে কুফী হরফ ব্যবহৃত হয়েছিল। হীরা শহরের অধিবাসীদের দ্বারা ব্যবহৃত হরফেরই প্রকারভেদ কুফী হরফ হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর শাসনামলের শুরুর দিকেই ইরাক †থকে হিজাজে আসে এবং রাসূলের জীবদ্দশায়ই তাঁর সাহাবিগণ এ বর্ণমালা পড়তে-লিখতে শিখেন।
অনেকের মতে নাবাতীয় লিপি †থকে কুফী লিপির উদ্ভব ঘটেছে৫২। অন্যদের মতে সিরীয় লিপি †থকে এর উদ্ভব৫৩। কারণ, কুফী ও সিরীয় উভয় লিপিতেই শব্দের মাঝখানে আলিফ †লখা হয় না। †যমন : كتاب، رحمان ও اسماعيل শব্দ তিনটিকে উভয় লিপিতেই رحمن, كتب ও اسمعيل রূপে †লখা হয়।
†স যাই †হাক, হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সময়ে হিজাজে কুফী হরফ ছাড়া আরো এক ধরনের লিখনপদ্ধতি প্রচলিত ছিল। একে নাবাতীয় হরফ বলা হতে পরে যা †থকে নাসখ্ হরফের উদ্ভব ঘটে। নাবাতীয় হরফ ছিল অত্যন্ত সহজ, এ কারণে আরবের †লাক সবাই তা ব্যবহার করত।৫৪
মালেকুশ শূআ’রা বাহার তাঁর লিখিত ‘সাব্ক †শনাসী’ গ্রন্থে বলেন, বহু সংখ্যক হাদীস †থকে যা বুঝা যায় তা হচ্ছে শুরু †থকেই ইসলামী লিপি ছিল নাবাতীয় লিপি যাকে নাস্্খী ও দারিজ লিপি বলা হতো। আরবরা এ দু’টি লিপি নাবাতীয় লিপির †শষের দিককার সংস্করণ †থকে গ্রহণ করেছিল। সিরিয়ার প্রাচীন শহর হুরান †থকে নাবাতীয় লিপি হিজাজে আসে, কিন্তু ইতিপূর্বে †যমন উল্লেখ করা হয়েছে, কুরআন সাধারণত কুফী হরফে †লখা হতো এবং কয়েক শতাব্দী যাবৎ এ ধারা অব্যাহত থাকে। এমনকি অনেকে দাবি করে থাকেন †য, †যহেতু হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর যুগে কুরআন কুফী হরফে †লখা হতো, †সহেতু অন্য †কান ধরনের হরফে কুরআন লিপিবদ্ধ করা অনুচিত, তাঁরা হরফের পরিবর্তনকে বিদআতের শামিল বলে গণ্য করেন।৫৫
দৃশ্যত মনে হচ্ছে, উপরিউক্ত যুক্তির †কান সারবস্তু †নই। †কননা, ঐ যুগে লিখন শুধু এ লিপির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যদিকে উপরিউক্ত যুক্তিকে আরো সম্প্রসারিত করলে ঐ যুগে অনুপস্থিত কাগজ ও মুদ্রণ ব্যবস্থার ব্যবহারও অবৈধ হওয়া উচিত। ঘটনাক্রমে উসমানী সা¤্রাজ্যের প-িতগণ বহুদিন যাবৎ সা¤্রাজ্যের বিশাল এলাকায় কুরআন মুদ্রণ নিষিদ্ধ করে রাখেন।৫৬ যদিও তৎকালে উসমানী সা¤্রাজ্যভুক্ত এলাকায় মুদ্রণ ব্যবস্থা চালু ছিল।৫৭
নাস্খ্্ লিপি
ইসলামে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পকলার উন্নতির সাথে সাথে, বিশেষ করে আব্বাসী যুগে, আরবি লিপিরও চরম উন্নতি ঘটে। এ সময় লিপিশিল্পের (ক্যালিগ্রাফি) নিয়ম-কানুন প্রণীত হয়। †স যা-ই †হাক, †যহেতু নাস্খ্ লিপি ছিল কুফী লিপির তুলনায় সহজতর, †সহেতু লিপিশিল্পী ও সাধারণ গণমানুষ উভয়ের দৃষ্টি নাস্খ্ লিপির প্রতিই †বশি আকৃষ্ট হয়। পরে একদল লিপিশিল্পী নাস্খ্ লিপির †সŠন্দর্য বিধানে আত্মনিয়োগ করেন। মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে মুকলাহ (২৭২-৩২৮ হি./৮৮৫-৯৩৯ খ্রি.) যিনি ইবনে মুকলাহ নামেই †বশি খ্যাত, তিনি ছিলেন এদের অন্যতম। অনেকে অবশ্য তাঁকে নাস্খ্ হরফের আবিষ্কর্তা বলে মনে করেন, তবে তা সত্য নয়। †কননা, অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞানেরই ন্যায় শিল্পকলা ও লিপি পর্যায়ক্রমে চরম উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে যায়, এ কারণে ইবনে মুকলাহর লিপিকে নাস্খ্ লিপির সূচনা বলে মনে করা †যতে পারে না। (†সŠভাগ্যক্রমে তাঁর লিপি এবং পা-ুলিপি হিসাবে পরিগণিত †লখাগুলো এখনো বিদ্যমান।)৫৮
(মাশহাদের) অস্তানেহ-এ-কুদ্স-এ রাজাভীতে সংরক্ষিত কুরআনে মজিদের মহামূল্য পা-ুলিপিসমূহ এবং কায়রোর দারুল কুতুব, দামেশকের জহীরিয়াহ লাইব্রেরি, †ফজ-এর জাহাআ’তুল কারিয়িনের লাইব্রেরি ও ইস্তাম্বুলের †তাপকাপু মিউজিয়ামে রক্ষিত কুরআনসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমি †দখতে †পয়েছি †য, এমনকি ইবনে মুকলাহর পূর্ববর্তী বিভিন্ন †লখা †থকেও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়। নি¤œলিখিত গ্রন্থাবলিতে এর দৃষ্টান্ত মিলবে :
১. আলখাত্তুল আ’রাবিয়্যেল ইসলামীÑ তুর্কি আ’তিয়াহ।
২. এতলাস-এ খাত্ত।
৩. ইনতিশারুল খাত্তিল আ’রাবিÑ অধ্যাপক আব্দুল ফাত্তাহ্ ই’বাদাহ।
৪. আলখাত্তাতুল বাগদাদীÑ ড. সুহাইল আনওয়ার।
৫. আলখাত্তুল আ’রাবি ওয়া আদাবুহুÑ মুহাম্মাদ তাহের বিন আবদুল কাদের আল-মাক্কী।
৬. মুসাওয়িরুল খাত্তিল আ’রাবিÑ নাজী জয়নুদ্দিন।৫৯
৭. আহওয়াল ওয়া আছারে †খাশনেভিসনÑ মাহ্দী বায়ানী (নাস্খ্্ বিভাগ)।
এসব সূত্রের অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা পা?ক-পা?িকাদের সন্দেহ দূর করতে সক্ষম হবে। অতএব, †বাঝা যাচ্ছে, ইবনে মুকলাহ শুধু তাঁর দু’শ বছর পূর্ব †থকেই প্রচলিত ছয় ধাঁচের লিপির (নাস্খ্ লিপিতে যা অন্তর্ভুক্ত) পূর্ণতা বিধান করেছেন মাত্র।৬০ উল্লিখিত তথ্য সূত্রসমূহ এবং বিভিন্ন লাইব্রেরি ও মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ইতিপূর্বে উল্লিখিত কুরআনের পা-ুলিপিসমূহের অধ্যয়ন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমাদেরকে এ উপসংহারে উপনীত হতে বাধ্য করে †য, অনেকে দাবি করলেও নাবাতীয় লিপি †থকে নাস্খ্ লিপির উদ্ভব হয়নি; বরং কুফী লিপি †থকেই এর উৎপত্তি হয়েছে।
ইমাম, সাহাবী ও তাবেয়ীদের নামে প্রচলিত পা-ুলিপিসমূহ
†সŠভাগ্যক্রমে বর্তমানে আমাদের হাতে সাহাবীদের যুগের †বশ কিছুসংখ্যক পা-ুলিপি রয়েছে। যদিও এসব পা-ুলিপির †ক্ষত্রে †লখক বলে উল্লিখিত ব্যক্তিরাই এসবের †লখক কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না, তথাপি এটা নিশ্চিত করে বলা চলে †য, এর মধ্যে সাহাবীদের হস্তলিখিত †বশ কিছু পা-ুলিপি রয়েছে। উল্লেখ্য, †বশ কয়েকজন সাহাবী হিজরি প্রথম/খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর †শষ পর্যন্ত †বঁচেছিলেন।৬১
ইমাম হাসান (আ.)-এর নামে প্রচলিত মুসহাফ
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর বিখ্যাত সাহাবিগণের নামে প্রচলিত মুসহাফসমূহের মধ্যে হযরত উসমান ও হযরত আলী (আ.)-এর মুসহাফ বলে কথিত মুসহাফসমূহ নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা হয়েছে। এছাড়া হযরত ইমাম হাসান মুজতাবার নামে প্রচলিত তিনটি মুসহাফ রয়েছে। এর মধ্যে একটি রয়েছে অস্তানেহ-এ কুদ্সে রাজাভীতে। এটির ক্রমিক নং হচ্ছে ১২। হরিণচর্মে ১২২ অংশে লিখিত এ মুসহাফে কুরআন মজিদের ২৩ পারা †থকে ২৫ পারা পর্যন্ত শামিল রয়েছে।৬২ এর ওপরে কুফী হরফে †লখা রয়েছে : ‘আল-হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব’ এবং এতে ৪১ হিজরির তারিখ উল্লেখ রয়েছে। এর প্রথম অংশে শাহ্ আব্বাস সাফাভীর ওয়াক্ফনামা রয়েছে। এছাড়া এতে †শখ বাহাইর স্বাক্ষর রয়েছে, যিনি এ মুসহাফ ইমাম হাসান (আ.)-এর লিখিত বলে উল্লেখ করে লিখেছেন :
به امام همام سبط الرسول... ابی محمد الحسن علیه الصلوة و السلام
দ্বিতীয় মুসহাফটি নাজাফে হযরত আলীর মাযারের সিন্দুকে রক্ষিত মুসহাফ।৬৩ আর হরিণ চর্মের ওপর দশ অংশে লিখিত তৃতীয় মুসহাফটি অত্র †লখক অধ্যাপক মাহমুদ ফাররুখ †খারাসানীর গ্রন্থাগারে †দখেছে। এটি এখনো তাঁর পরিবারের †লাকদের হাতে আছে। এ মুসহাফটি সূরা নিসার ১২ নং আয়াত †থকে শুরু হয়েছে এবং সূরা তাওবার ৭ নং আয়াতে গিয়ে †শষ হয়েছে। এতে হাসান বিন আব্বাস আসসাফাভী বাহাদুর খান এবং ইসমাইল আল-মুসাভী আল-হাসানী বাহাদুর খান-এর স্বাক্ষর রয়েছে যা প্রমাণ করে †য, তাঁরা এ পা-ুলিপিটি †দখেছেন।৬৪
এটা অসম্ভব নয় †য, এই তৃতীয় পা-ুলিপিটি হয় অস্তানেহ-এ কুদসে রাজাভীস্থ কুরআনের অংশবিশেষ, নয়ত ইমাম আলীর মাযারস্থ কুরআনের অংশবিশেষÑ যা †থকে এ অংশটি আলাদা হয়ে থাকবে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা †যতে পারে †য, অধ্যাপক ফাররুখের গ্রন্থাগারে রক্ষিত কুরআনে দশটির †বশি পাতা †নই। অতএব, এতে কুরআনে মজিদের সাত পারা অর্থাৎ চতুর্থ †থকে দশম পারা পর্যন্ত থাকতে পারে না। নিঃসন্দেহে এতে ইমাম আলী (আ.)-এর বলে অভিহিত কুরআনের কয়েকটি বিছিন্ন পাতা সংগৃহীত ও সংকলিত হয় এবং পর্যায়ক্রমে রক্ষা না করেই একত্রে বাঁধাই করা হয়।
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মুসহাফ
কুফী হরফে হরিণ চর্মের ওপর লিখিত ৪১ অংশবিশিষ্ট এ কুরআনের ওপর †লখা রয়েছে : کتبه حسین بن علی অর্থাৎ ‘হুসাইন বিন আলী কর্তৃক লিখিত’। এতে সূরা কাহ্ফ-এর ৭২ নং আয়াত †থকে শুরু করে সূরা ত্বা-হা এর †শষ আয়াত পর্যন্ত অর্থাৎ কুরআনের ১৬ নং পারা শামিল রয়েছে।৬৫ পকেট সাইজের এ মুসহাফের প্রতি পৃষ্?ায় সাতটি করে লাইন রয়েছে। এর ক্রমিক নং হচ্ছে ১৪।
আ’কাবাহ ইবনে আ’মীরের মুসহাফ
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর অন্যতম সাহাবী আ’কাবাহ ইবনে আ’মীর কর্তৃক হিজরি ৫২/৬৭২ খ্রিস্টাব্দে এ মুসহাফ কুফী হরফে লিখিত হয়। তিনি দামেশকে বসবাস করতেন। তিনি ৪৪ হি./ ৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে মুআবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান কর্তৃক মিশরের গভর্নর নিয়োজিত হন। তিনি অত্যন্ত সুললিত কণ্?ে কুরআন †তলাওয়াত করতেন।৬৬ ‘তাকরিবুত তাহজীব’ গ্রন্থে তাঁর মিশরে অবস্থানকালের †ময়াদ তিন বছর বলে উল্লিখিত হয়েছে। এ গ্রন্থে আরো উল্লেখ করা হয়েছে †য, তিনি একজন ফকীহ ও প-িত ব্যক্তি ছিলেন। সুয়ূতী তাঁর ‘হুসনুল মুহাদারা’ গ্রন্থে লিখেছেন : ‘সাহাবীদের মধ্যে তিনি ছিলেন এক সুললিতকণ্? ক্বারী ও ফকীহ।’৬৭
ইস্তাম্বুলের আলআমানাহ গ্রন্থাগারে ক্রমিক নং ৪৩-এ কুরআনে মজিদের এ পা-ুলিপিটি সংরক্ষিত রয়েছে। কায়রোর মা’হাদুল মাখতুতাতিল আ’রাবিয়্যাহ’তে এর একটি মাইক্রোফিল্ম রয়েছে যার ক্রমিক নং হচ্ছে ১০।৬৮
খাদিজ ইবনে মুআবিয়ার মুসহাফ
মাগরিবী হরফে †লখা আরেকটি মুসহাফ রয়েছে যা লিপিদ্ধ করেন খাদিজ ইবনে মুআবিয়া ইবনে সালামাহ আল-আনসারী। তিনি নিঃসন্দেহে সাহাবী রাফি’ ইবনে খাদিজের পিতা নন। †কননা, রাফি’র দাদা (অর্থাৎ খাদিজের পিতা হচ্ছেন আদি এবং আমাদের আলোচ্য খাদিজের পিতার নাম মুআবিয়া)।৬৯ খাদিজ ৪৭ হি./ ৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে কারাওয়ান শহরের আমীর আকাবাহ ইবনে নাফী আল-ফাহরীর জন্য এ মুসহাফ লিপিবদ্ধ করেন। ইস্তাম্বুলের আলআমানাহ লাইব্রেরিতে এটি সংরক্ষিত রয়েছে। এর ক্রমিক নং হচ্ছে ৪৪। কায়রোর মা’হাদুল মাখতুতাতিল আরাবিয়্যাহ-†ত ক্রমিক নং ৯-এ এর মাইক্রোফিল্ম রয়েছে।
ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর মুসহাফ
এ মুসহাফটি হযরত ইমাম সাজ্জাদ যায়নুল আবেদীন আলী ইবনে হুসাইন (আ.)-এর হস্তলিখিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি অস্তানেহ-এ কুদসে রাজাভীতে ক্রমিক নং ১৫-এ সংরক্ষিত রয়েছে। ৩০ ী ২০ †সন্টিমিটার আকারের হরিণ চর্মের ওপর লিখিত এ মুসহাফে সূরা বাকারার ১৮০ নং আয়াত †থকে শুরু করে কুরআনে মজিদের †শষ পর্যন্ত রয়েছে। পরবর্তীকালে তা বাঁধাই করা হয় এবং এর মার্জিনে নকশার কাজ করা হয়।
ইমাম সাদেক (আ.)-এর মুসহাফ
হযরত ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মাদ ইমাম সাদেক (আ.)-এর মুসহাফ নামে পরিচিত একটি পা-ুলিপি ইস্তাম্বুলের আল-আমানাহ লাইব্রেরিতে রয়েছে। এর ক্রমিক নং ৩৯। মা’হাদুল মাখতুতাতিল আ’রাবিয়্যাহ-†ত এর মাইক্রোফিল্ম রয়েছে যার ক্রমিক নং হচ্ছে ১১।৭০
ইমাম মূসা ইবনে জা’ফর (আ.)-এর মুসহাফ
হযরত ইমাম মূসা ইবনে জাফরের মুসহাফ নামে পরিচিত পা-ুলিপিতে সূরা বাকারার ২৬৫ নং আয়াত †থকে শুরু করে সূরা আলে ইমরানের ৮৪ নং আয়াত পর্যন্ত শামিল রয়েছে। মধ্যম আকারের বইয়ের সাইজের কাগজে লিখিত এ মুসহাফের প্রতি পৃষ্?ায় ৬টি করে লাইন রয়েছে। এটি ইমাম †রযা (আ.)-এর মাযারে রক্ষিত আছে; এর ক্রমিক নং হচ্ছে ২০। শাহ আব্বাস সাফাভী কর্তৃক এটি ইমাম †রযার পবিত্র মাযারে দান করা হয়। এ কুরআন পার্চমেন্ট কাগজের ওপর লিখিত; প্রথমদিকে এর পৃষ্?াগুলো অনুরূপ রঙের এক ধরনের †মাটা কাগজের ওপর লাগানো ছিল।
ইমাম †রযা (আ)-এর মুসহাফ
ইমাম †রযা (আ.)-এর মুসহাফ নামে পরিচিত পা-ুলিপিটি অস্তানেহ-এ-কুদসে রাজাভীর গ্রন্থাগারে ক্রমিক নং ১৫৮৬-র অধীনে সংরক্ষিত আছে। এতে কুরআন মজিদের অংশবিশেষ রয়েছে।৭১
সাধারণ বইয়ের পাতার আকারের হরিণ চর্মের ওপর লিখিত এ পা-ুলিপির প্রতি পাতায় ১৬টি লাইন রয়েছে। এর প্রথম পৃষ্?ায় †লখা রয়েছে :
قد تشرف بزيارة هذا المصحف الشريف المبارك
সাফাভী বাহাদুর খান এই পবিত্র ও বরকতময় মুসহাফ পরিদর্শন করেন।
এতে একটি ডিম্বাকৃতি সীল রয়েছে যাতে †লখা আছে :
جانشين حسن و حسين عليست
হাসান, হুসাইন ও আলীর উত্তরাধিকারী।
উপরিউক্ত মুসহাফসমূহ ছাড়াও কুফী হরফে লিখিত আরো †বশ কিছুসংখ্যক প্রাচীন মুসহাফ রয়েছে। এর মধ্যে কতগুলো মুসহাফে ‘মাদ্দ’ এবং ‘তাশদীদ’ †নই; উল্লেখ্য, কুরআনে মজিদের লিখনে এ দু’টি চিহ্নের ব্যবহার †বশ †দরীতে শুরু হয়েছিল। বর্তমানে প্রচলিত ই’রাব চিহ্নের পরিবর্তে এর অনেকগুলোতেই লাল কালির বিন্দু রয়েছে; ই’রাব চিহ্ন প্রচলিত হবার পূর্বে স্বরচিহ্ন ব্যবহারের জন্য এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হতো। এসব মুসহাফের †বশির ভাগেই লিপিকারের নাম এবং †লখা সমাপ্তির তারিখ উল্লিখিত †নই। কারণ, এসব মুসহাফের †বশির ভাগ পাতাই বিভক্ত ও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিল। বিশ্বের বিভিন্ন মিউজিয়াম ও গ্রন্থাগারে বিদ্যমান এই বিপুল সংখ্যক পা-ুলিপির †বশির ভাগই হিজরি ২য়/খ্রিস্টীয় ৮ম এবং হিজরি ৪র্থ/খ্রিস্টীয় ১০ম শতাব্দীতে লিখিত বলে বিশেষজ্ঞগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন, ঐ সময় পর্যন্ত নাস্খ লিপি কুফী লিপির স্থান দখল করেনি। এ পা-ুলিপিসমূহের এক সমৃদ্ধ ও মহামূল্য সমাহার ঘটেছে অস্তানেহ-এ কুদসে রাজাভী, ইরান বস্তান মিউজিয়াম, †কামের মাযার গ্রন্থাগারে, শিরাজের গ্রন্থাগার ও মিউজিয়াম, ইয়ায্্দের কিতাবখানায়ে ওয়াজিরী এবং অন্যান্য †দশের কতক গ্রন্থাগারে।
২য় †থকে ৪র্থ হিজরি শতকের কুফী লিপির নমুনা
অস্তানেহ্-এ-কুদসে রাজাভী-†ত ক্রমিক নং ১১-এ নিবন্ধনকৃত মুসহাফটি হচ্ছে এ জাতীয় নমুনার অন্যতম। এতে ১৩৩ খ- হরিণ চর্মে রয়েছে।৭২ এটি হিজরি ৩য়/খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীর প্রথম দিককার মুসহাফ। এ ধরনের আরেকটি মুসহাফ হচ্ছে হযরত ইমাম †রযা (আ.)-এর মাযারের গ্রন্থাগারে ক্রমিক নং ৪২-এর অধীনে সংরক্ষিত মুসহাফটি। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ মুসহাফ বলেই মনে হয়। শাহ আব্বাস এটি দান করেন। এ মুসহাফটি মাসুম ইমামগণের (আ.) লিখিত বলে উল্লেখ করা হয়। ইমাম †রযার মাযারের গ্রন্থাগারে ক্রমিক নং ৩১-এর অধীনেও একটি মুসহাফ রয়েছে। এতে ৫৪৫টি অংশ রয়েছে এবং এতে পুরো কুরআন শামিল রয়েছে বলে মনে হয়। এটি হিজরি ২য়/খ্রিস্টীয় ৮ম বা হিজরি ৩য়/খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দীতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া ধর্মীয় নগরী †কামের যাদুঘরে পার্চমেন্ট কাগজে লিখিত হিজরি ২য়/খ্রিস্টীয় ৮ম শতাব্দীর একটি মুসহাফ রয়েছে। অন্যদিকে ইমাম †রযার মাযারে ক্রমিক নং ৩৮-এর অধীনে হিজরি ৩য়/খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দীর এক খ- কুরআন রয়েছে। তিউনিসের জাতীয় গ্রন্থাগারেও একটি কুরআন রয়েছে; হিজরি ৩য়/খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দীতে কায়রাওয়ানে এটি লিপিবদ্ধ করা হয়।৭৩
সুপ্রাচীন মুসহাফসমূহ
ওপরে †যমন উল্লেখ করা হয়েছে, মাসুম ইমামগণের নামে প্রচলিত মুসহাফসমূহ এবং আকাবাহ ইবনে আমির ও খাদিজ ইবনে মুআবিয়া লিখিত মুসহাফ ব্যতীত ইসলামের প্রথম কয়েক শতাব্দীর অন্যান্য মুসহাফে লিপিকারের নাম এবং তা লিপিবদ্ধ করার তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
অত্র †লখকের জানা মতে, কুরআন মজিদের প্রাপ্ত প্রাচীনতম মুসহাফ হচ্ছে †কামের যাদুঘরের ১৬২ নং পা-ুলিপিটি। এতে ১৯৮ হিজরির তারিখ রয়েছে। এর লিপি হচ্ছে কুফী এবং পা-ুলিপিটি ক্রাউন সাইজের।
আরেকটি প্রাচীন পা-ুলিপি হচ্ছে ইবনে মুকলাহ (২৭২-৩২৮ হি./ ৮৮৫-৯৩৯ খ্রি.) লিখিত মুসহাফ। এটি বর্তমানে হিরাত মিউজিয়ামে রয়েছে।৭৪ অন্যদিকে ইবনুল বাওয়ার নামে খ্যাত আলী ইবনে হিলাল (মৃত্যু ৪২৩ হি./১০৩২ খ্রি.) লিখিত একটি মুসহাফ ডাবলিনের †চস্টার বিট্রি লাইব্রেরিতে রয়েছে; এটি হিজরি ৩৯১ সালে লিখিত।
অস্তানেহ-এ কুদসে রাজাভীর সংরক্ষণাগারে একটি পা-ুলিপি রয়েছে। হিজরি ৩৯৩ সালে আবুল কাশেম মনসুর ইবনে আবিল হুসাইন মুহাম্মাদ ইবনে আবি মানসুর কাসির এটি দান করেন। আবুল কাসেমের জন্মস্থান ছিল হিরাত এবং তাঁর দাদা আহমদ ছিলেন কায়েনের †লাক। তাঁর পিতা আবুল হুসাইন কাসির সামানী রাজ বংশের অধীনে মন্ত্রী ছিলেন, আর আল-আসমায়ী তাঁর প্রশংসা করেছেন। আবুল কাসেম মনসুর নিজেও একজন মন্ত্রী ছিলেন, তিনি ছিলেন সুলতান মাহমুদ গজনভীর মন্ত্রী। বায়হাকীর এক বর্ণনা অনুযায়ী সুলতান মাহমুদের সময় তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, সুলতান মাহমুদ তাঁর সঙ্গে সামরিক বিষয়ে পরামর্শ করতেন। পরবর্তীকালে তিনি †খারাসানের প্রতিরক্ষা সচিব হন।৭৫
হিজরি ৪১০ সালে আলী ইবনে আহমদ আল-ওয়াররাক কর্তৃক লিখিত একটি অসম্পূর্ণ মুসহাফ বর্তমানে তিউনিসের মিউজিয়ামে রয়েছে; মুআজ ইবনে বাদিস আল-মাগরিবীর ধাত্রীমাতা হাদিনার জন্য এটি †লখা হয়।৭৬
নাজাফে হযরত আলী (আ.)-এর মাযারে একটি মুসহাফ রয়েছে; হিজরি ৪১৯ সালে †রই শহরে আলী ইবনে মুহাম্মাদ আল মুহাদ্দিস কর্তৃক এটি লিখিত হয়।৭৭ মাগরিবী হরফে স্বর্ণাক্ষরে †লখা আরেকটি মুসহাফ রয়েছে ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারের জন উইল্যান্ডার গ্রন্থাগারে ; এটি হিজরি ৪০০ সালে †লখা হয়।৭৮
অস্তানেহ-এ কুদসে রাজাভীতে আরেকটি মুসহাফ রয়েছে যা হিজরি ৪২১ সালে আবুল বারাকাত কর্তৃক আবু আলী হাওউলাহর মাধ্যমে ইমাম †রযা (আ.)-এর মাযারে দান করা হয়। এই আবু আলী হাওউলাহর সমসাময়িক ছা’লাবী তাঁর লিখিত ‘তাতিম্মাতুল ইয়াতিমাহ’ এবং বাখারজী তাঁর ‘দুমিয়াতুল কাছর’-এ আবু আলীর জীবন কাহিনী লিখেছেন। এ †থকে জানা যায়, তিনি দায়লামী রাজত্বের একজন শিয়া মন্ত্রী ছিলেন এবং মাজদুদ্দেŠলাহ দায়লামীর দিওয়ানে রাসায়েল হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেন। ৪২০ হি./১০২৯ খ্রিস্টাব্দে †রই দখল উপলক্ষে সুলতান মাহমুদ গজনভী আবু আলীকে পুরস্কার প্রদান করেন এবং তাঁকে নিজের সাথে গজনী নিয়ে যান ও সচিব পদে নিয়োগ করেন। সুলতান মাহমুদের সময় তাঁকে পুনরায় দিওয়ানে রাসায়েল পদে নিয়োগ করা হয়। তিনি দীর্ঘজীবী ছিলেন।৭৯
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে একটি অসমাপ্ত মুসহাফ রয়েছে।৮০ হিজরি ৪২৭ সালে আবুল কাজেম সাঈদ বিন ইবরাহীম কর্তৃক নাস্খ্ হরফে এটি †লখা হয়। নাজী বিন আবদুল্লাহ এটিকে স্বর্ণম-িত করেন।
কায়রোস্থ আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে দু’টি অসমাপ্ত কুরআন রয়েছে, এর মধ্যে একটির †শষে †লখা সমাপ্ত করার তারিখ ৪৬৬ হিজরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।৮১
নাজাফে হযরত আলী (আ.)-এর মাযারের সংগ্রহে আরেকটি স্বর্ণম-িত মুসহাফ রয়েছে যা যায়েদ বিন †রযা বিন যায়েদ আল-আলাভী কর্তৃক ৪৩২ হিজরিতে লিপিবদ্ধ হয়।৮২
সম্প্রতি উসমান বিন হুসাইন আল-ওয়াররাক কর্তৃক ৪৬৬ হিজরিতে লিখিত ও স্বর্ণম-িত একটি চমৎকার ও মহামূল্য কুরআনের অংশবিশেষ ইমাম †রযা (আ.)-এর মাযারের পাশে খননকালে পাওয়া যায়। এর প্রতিটি অংশের প্রথম পাতা স্বর্ণম-িত রয়েছে। অস্তানেহ-এ কুদসে রাজাভীর কুরআন সংগ্রহ ভা-ারে এটি রাখা হয়েছে।
এরপর †থকে প্রথম কয়েক শতাব্দীর আরো কয়েকটি পা-ুলিপি রয়েছে যাতে †লখার তারিখ উল্লিখিত আছে। হিজরি পঞ্চম শতাব্দীর এবং তার পরবর্তী কালের তারিখযুক্ত বা তারিখবিহীন মুসহাফের সংখ্যা অনেক যার বর্ণনা দিতে †গলে আলাদা একটি গ্রন্থের প্রয়োজন। অত্র †লখকের জীবনকালে সম্ভব হলে মহান দয়াময় আল্লাহ্র সাহায্যের ওপর নির্ভর করে অপর একটি প্রবন্ধে এতদসংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হবে, ইনশাআল্লাহ।
পাদটীকা
১. হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জীবনীকারগণের অধিকাংশই কম-†বশি সকল ওহি-†লখকের নাম উল্লেখ করেছেন। ড. রাময়ার তাঁর গ্রন্থ ‘তারিখে কুরআন’-এ (পৃ. ৬৬) চল্লিশ জন ওহি-†লখকের নাম উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ড. সুবহি সালিহ তাঁর গ্রন্থ ‘মাবাহিছুন ফি উলুমিল কুরআন’ (পৃ. ৬৯)-এ ওহির †লখকের সংখ্যা সর্বোচ্চ চল্লিশ জন বলে উল্লেখ করেছেন। ড. হুজ্জাতী তাঁর গ্রন্থ ‘তারিখে কুরআন’-এ (পৃ. ২০৩) উক্ত চল্লিশ জন ওহি-†লখকের নাম লিপিবদ্ধ করেছেন। (বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত ওহি-†লখকের সংখ্যা ও নামের জন্য †দখুন : রামিয়ার পূর্বোক্ত পৃ. ৩২৪)।
২. ‘আল-ফিহরিস্ত’-এ এরূপই উল্লিখিত হয়েছে, কিন্তু আসলে ‘যায়িদ বিন সাবিত হবে। †তমনি সা’দ ইবনে উবাইদ হবে, সাঈদ নয়।
৩. ইবনে নাদিম, ‘আল-ফিহরিস্ত’, কায়রো, আল-মাকতাবাতুত তিজারিয়াহ, পৃ. ৪৭।
৪. সহীহ আল-বুখারী, কিতাবু ফাজায়েলিল কুরআন, বাবুল কুবরা মিন আসহাবিননাবী (সা.)।
৫. প্রাগুক্ত।
৬. আল-জারাকাশী, আল-বুরহানী ইসাল বাবিল হালাবী, কায়রো, ১ম খ-, পৃ. ২৪১।
৭. আল-ফিহরিস্ত, পৃ. ৪৫, ৪৬।
৮. আল-তামহিদ, ২য় খ-, পৃ. ২৪৭।
৯. তারিখে ইয়াকুবী (ফারসি অনুবাদ), ২য় খ-, ১৫।
১০. আল-ফিহরিস্ত, ৪৫।
১১. †যমন কাবের মুসহাফে ‘তা-সীন-সুলায়মান’, ‘আসহাবুল হিজর’, ‘আত্তাহারুহ’ এবং ‘আলিফ-লাম-মিম-তানযিল’ নামসমূহ রয়েছে। †তমনি ইবনে মাসউদের মুসহাফে ‘আল-হাওয়ারিউন’, ‘আল-কিয়ামাহ’ এবং ‘ইনশাক্কাহা’ রয়েছে।
১২. সহীহ আল-বুখারী কিতাবু ফাজায়েলিল কুরআন, বাবু জাময়িল কুরআন ইবনে আসির, কামিলুত্তাওয়ারিখ। এছাড়া অন্যান্য ইতিহাস ও জীবনী গ্রন্থেও একই বিষয় রয়েছে। আরো †দখুন ইবনে নাদিম, আল-ফিহরিস্ত, ফারসি অনুবাদ, পৃ. ৪১)।
১৩. তারিখে ইয়াকুবী, ফারসি অনুবাদ, ২য় খ-, পৃ. ১৫।
১৪. সহীহ আল-বুখারী, সুয়ূতী- ‘আল-ইতকান’, জারকাশী- ‘আল-বুরহান’, ১ম খ-, পৃ. ২৪০; তারিখে ইয়াকুবী, নাজাফ, ২য খ-, পৃ. ১৪৭, সুবহি সালিহ- ‘মাবাহিছুন ফি উলুমিল কুরআন, পৃ. ৭৮।
১৫. সহীহ আল-বুখারী এবং জারকাশীর ‘আল-বুরহান’, ১ম খ-, পৃ. ২৩৬।
১৬. আল-মাসাহিফ, পৃ. ২৪।
১৭. মাবাহিছুন ফি উলুমিল কুরআন, ৮ম সংস্করণ, পৃ. ৮২।
১৮. আল-মাসাহিফ, ১৫; তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খ-, পৃ. ১৪৭।
১৯. ইয়াকুবীর মতে এর সংখ্যা হচ্ছে ৯ (২য় খ-, পৃ. ১৪৭), সুয়ূতীর মতে (আল-ইতকান) ৫, ইবনে জাওজীর মতে ৮, সুবহি সালিহ তাঁর ‘মাবাহিছুন ফি উলুমিল কুরআন’-এ (পৃ. ৮৪) আবু আমর আলদানির একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন যাতে চার কপির কথা উল্লেখ আছে; এছাড়া তিনি আরো একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন যাতে সাত কপির কথা বলা হয়েছে।
২০. মুজায উলুমুল কুরআন, পৃ. ১৬৬।
২১. মু’জামুল বুলদান, বৈরুত, ২য় খ-, পৃ. ৪৬৯।
২২. ‘আত-তামহিদ, পৃ. ২৯৯ এবং সুবহি আস-সালিহ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯০।
২৩. সাফারনামায়ে ইবনে বতুতা, ফারসি অনুবাদ, ১ম খ-, পৃ. ৮৭।
২৪. খুতাতুশশাম, ৫ম খ-, পৃ. ২৭৯।
২৫. রামিয়ার : তারিখে কুরআন, ১০৬।
২৬. রামিয়ার কর্তৃক †গান্ডজিহার-এর মাজহিবুত্তাফসিরিল ইসলামী †থকে উদ্ধৃত †গান্ডজিহার নাবুলুসীর ‘কিতাবুল হাকিকাহ ওয়াল মাজায’ †থকে লাইপজিগে এর পা-ুলিপি রয়েছে।
২৭. কাসানোভা †থকে রামিয়ার কর্তৃক উদ্ধৃত, প্রাগুক্ত, ৪৬৬।
২৮. রামিয়ার : তারিখে কুরআন, ১০৬।
২৯. মাবাহিছুন ফি উলুমিল কুরআন, ৮৮।
৩০. প্রাগুক্ত; খুতাতুশশাম †থকে উদ্ধৃত; পঞ্চম খ-, ২৭৯।
৩১. রওজাতুস সাফা, ৪র্থ খ-, ৩৭২।
৩২. প্রাগুক্ত, ৪র্থ খ-, ৩৬৪।
৩৩. তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খ-, ১১৩, তাফসীরুল কুম্মী, ৭৪৫; ইবনে নাদিম : আল-ফিহরিস্ত, ফারসি অনুবাদ।
৩৪. ইবনে নাদিম : আল-ফিহরিস্ত, ফারসি অনুবাদ, ৪৭।
৩৫. ইবনে জুজায়ী, আত্তাসহিল ফি উলুমিত তানযিল, বৈরুত, ৪, জারকাশী, আল-বুরহান ফি উলুমিল কুরআন, ১ম খ-, ২৪২, ২৩৬।
৩৬. মাজলিসী-র ‘বিহারুল আনওয়ার’ †থকে ‘আত-তামহিদ’-এ উদ্ধৃত।
৩৭. তিনি ৩৭৭ হিজরিতে আল-ফিহরিস্ত রচনা করেন।
৩৮. আল-ফিহরিস্ত, ফারসি অনুবাদ, ৪৭।
৩৯. রিয়াজুল উলামা, ৫ম খ-, পৃ. ৫৩৩ দ্রষ্টব্য।
৪০. আল-মাকরিজী : আল-মাওয়ায়িজু ওয়াল ইতিবার বিযিকরিল খুতাতি ওয়াল আসার, ২য় খ-, ২৫২।
৪১. নমেহ-এ-অস্তানেহ-এ-কুদ্স সাময়িকীর ২২ ও ২৩ নং সংখ্যায় প্রকাশিত ইসলামী গ্রন্থাগার সংক্রান্ত অত্র †লখকের প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য।
৪২. †দখুন ফিহরিস্ত : মাখতুতাতুর রাওজাতিল হায়দারিয়াহ, ২য় খ-, ২৫২।
৪৩. †শষাংশ তদীয় বন্ধু হুজ্জাতুল ইসলাম হাজী সাইয়্যেদ মূসা জানজানী (শাব্বিরী) কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্যের ওপরে ভিত্তিশীল।
৪৪. রাহনামায়ে গাঞ্জিনেহ-এ কুরআন।
৪৫. মা’হাদুল মাখতুতাত-এর মাইক্রোফিল্মের তালিকা।
৪৬. সম্ভবত হযরত আলী (আ.)-এর মুসহাফ নামে পরিচিত একটি পা-ুলিপি শিরাজ মিউজিয়ামে †থকে থাকবে, কিন্তু †যহেতু এ সম্পর্কে আমার নিকট নিশ্চিত তথ্য †নই †সহেতু তা উল্লেখ †থকে বিরত থাকলাম। হযরত আলীর মুসহাফ নামে পরিচিত আরো এক খ- কুরআন ইয়েমেনের সানআ গ্রন্থাগারে রয়েছে; আমি আমার বন্ধু সাইয়্যেদ আহমদ আশকাভারী †থকে এ বিষয়ে জানতে †পরেছি।
৪৭. আত-তামহিদ, ১ম খ-, পৃ. ২২৬।
৪৮. নাহজুল বালাগায় হযরত আলী (আ.)-এর উক্তি; হিকাম তাঁর লিপিকার উবায়দুল্লাহ বিন আবি রাফি’কে বলেছেন বলে উল্লিখিত হয়েছে :
الق دواتك واطل جلفة قلمك و فرج بين السطور، قرمط بين الحروف: قال ذالك اجدر بصاحبه الخطز
৪৯. আমি স্মরণ করতে পারছি না †কাথায় এ ঘটনাটি পড়েছি।
৫০. ইবনে নাদিম, আল-ফিহরিস্ত, ফারসি অনুবাদ, ৭১।
৫১. আত-তামহিদ, ১ম খ-, ৩৫৫।
৫২. হিজরতের এক শতাব্দী পূর্বে নাবাতীয় ও সিরীয় বর্ণমালা †থমে কুফী ও নাস্খ লিপির উদ্ভব ঘটে। (দায়েরাতুল মাআ’রেফে মুসাহিব, ১ম খ-, ৯০৩)।
৫৩. রামিয়ার, তারিখে কুরআন, ১১৭।
৫৪. প্রাগুক্ত।
৫৫. বায়হাকীর ‘শূআ’বুল ঈমান’ †থকে রামিয়ারের উদ্ধৃতি, তারিখে কুরআন, ১৪১।
৫৬. তারিখুত তিবাআ’ ফিশর্্্শ্কা।
৫৭. ১১২১ হিজরির মুদ্রণে আরবি অক্ষরের ব্যবহার শুরু হয়। (তারিখুত তিবাআ’ ফির্শ্শাক-২৫)
৫৮. †যমন আফগানিস্তানের হিরাত মিউজিয়ামের মুসহাফ। †দখুন, ‘আল-খাত্তুল আ’রাবিউল ইসলামী’, ১৫৫ এবং ‘খাত্তুল বাগদাদী’, ১৬ দ্রষ্টব্য।
৫৯. এতে ২৪৯টি গ্রন্থ, প্রবন্ধ ও রচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া খ্যাতনামা লিপি-শিল্পীদের ৭৫৭টি লিপির হুবহু কপি (ফ্যাসিমাইল) দ্বারা এটিকে সজ্জিত করা হয়েছে। গ্রন্থটি ১৩৮৮ সালে বাগদাদে প্রকাশিত হয়।
৬০. দায়েরাতুল মাআ’†রফে মুসাহিব।
৬১. হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে সকলের †শষে যিনি মারা যান তিনি হচ্ছেন আবু তুফায়েল (আমির ইবনে ওয়াছিলাহ); তিনি ১১০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর দীর্ঘজীবী সাহাবীদের সকলের নাম অত্র †লখকের ‘ইলমুল হাদিস” গ্রন্থের ২৪ নং পৃষ্?ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
৬২. রহনুমায়ে গাঞ্জিনেহ-এ কুরআন।
৬৩. ফিহরিস্তÑ মাখতুতাতুর রাওজাতুল হায়দারিয়াহ, ১৫।
৬৪. ‘হুসাইন ইবনে আব্বাস আল-হাসানী আস্-সাফাভী বাহাদুর খান এই বরমতময় ও মহান মুসহাফ দর্শনের †সŠভাগ্য লাভ করেছেন।’ ‘ইসমাইল আল-মুসাভী আল-হাসানী আস্-সাফাভী ২৭†শ রজব, ৯... (সালের বাকি অংকগুলো বাঁধাইজনিত কারণে হারিয়ে †গছে) এই বরকতময় ও মহান মুসহাফ দর্শনের †সŠভাগ্য লাভ করেন।’ জনাব ফররুখ লিখেছেন : ‘আমি যা জানি তা হচ্ছে, এ কুরআনটি জুমআর ইমাম মরহুম মীর্জা হাসান আসকারীর গ্রন্থাগারে ছিল। আমার দাদা মীর্জা হুসাইন জাওয়াহের যিনি ‘আ’ছি’ নামে সুপরিচিত, মীর্জা আসকারীর উত্তরাধিকারীদের নিকট †থকে এটি ক্রয় করে †নন। অতঃপর আমার পিতা সাইয়্যেদ আহমদ জাওয়াহেরী, যিনি ‘দানা’ নামে সুপরিচিত ছিলেন, তাঁর মাধ্যমে উত্তরাধিকার হিসাবে তা আমার নিকট †পঁŠছে। বর্তমানে এটি আমার নিকট রয়েছে। হুজ্জাতুল ইসলাম আল হাজ মীর্জা আসকারী, যিনি ‘জুমআ ইমাম’ নামে খ্যাত, তিনি ছিলেন খ্যাতনামা মুজতাহিদ ও কবি আল হাজ সাইয়্যেদ হাবীবের চাচা এবং ‘শহীদে সালামে’ নামে খ্যাত সাইয়্যেদ মাহদীর পুত্র আল হাজ মীর্জা †হদায়াতুল্লাহর সন্তান। †খারাসানের শহীদী বংশ তাঁরই বংশধর। ‘শহীদে সালেস’ নামে খ্যাত সাইয়্যেদ মাহদী ছিলেন শাহ নিয়ামতুল্লাহ ওয়ালীর বংশধর। তিনি ইসফাহান †থকে †খারাসানে আগমন করেন এবং শহীদ হন।
৬৫. রাহনুমায়ে গাঞ্জিনেহ-এ কুরআন, ৮-১৩।
৬৬. আন্নাবাভী, তাহজীবুল আসমা, ১ম খ-, পৃ. ৩৩৬।
৬৭. হুসনুল মুহাজারাহ, ১ম খ-, পৃ. ২২০।
৬৮. আল-আমানাহ লাইব্রেরি বর্তমানে †তাপকাপু সারাই লাইব্রেরিতে একীভূত এবং এর একটি বড় অংশ, এটিকে স্বতন্ত্রভাবে পরিচালনা করা হয়।
৬৯. ইবনে হাজার আসকালানীÑ তাকরীবুত তাহজীব।
৭০. অস্তানেহ-এ কুদসে রাজাভী যদি এই পা-ুলিপিটি এবং বিদেশী গ্রন্থাগারসমূহে রক্ষিত অন্যান্য পা-ুলিপির ফিল্ম বা প্রথম পৃষ্?ার ফটো সংগ্রহ করে এবং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর পরিবারের উত্তরাধিকার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ব্যক্তিদের ও সাধারণ মানুষের জন্য প্রদর্শন করে তাহলে খুবই ভালো হয়।
৭১. এতে আছে সূরা নূর, কাছাছ, আনকাবুত, রুম, লুকমান, সাজদাহ, আহযাব, মুমিন, ফুসসিলাত, জাসিয়াহ, আহকাফ, ওয়াকিয়াহ ও হাদীদ।
৭২. †যহেতু হরিণের চামড়া হচ্ছে সাদা, নজুক ও কম চর্বিযুক্ত, †সহেতু এর দ্বারাই পার্চমেন্ট তৈরি হতো এবং এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রাচীন পা-ুলিপিসমূহকে ‘হরিণ চর্ম’ বলে অভিহিত করা হতো। যদিও বাহ্যত সহজলভ্য †মষ চর্মেও একই গুণাবলি রয়েছে। ‘জাফর’ বা ‘জাফর-ই আবিয়াদ’-ও †মষ চর্মের পার্চমেন্ট যাতে ঐশী ইল্্ম লিপিবদ্ধ করা হতো এবং তা আহলে বাইতের তত্ত্বাবধানে রাখা হতো। ‘মাজমাউল বাহরাইন’-এর ‘জাফর’ শিরোনাম †দখুন।
৭৩. ড. হুজ্জাতীর ‘তারিখে কুরআন’-এ এর প্রথম পৃষ্?ার ছবি †দখা †যতে পারে; ক্রমিক নং ৬০।
৭৪. †দখুন, ‘আল-খাত্তুল আ’রাবিয়্যিল ইসলামী, তুর্কি আ’তিয়্যাহ, পৃ. ১৫৫। তাছাড়া †দখুন আত-তামহীদ, পৃ. ৩৫৮।
৭৫. রহনুমায়ে গাঞ্জিনেহ-এ কুরআন, †লাগাতনমেহ-এ-†দহখোদা-এ উদ্ধৃত।
৭৬. ড. হুজ্জাতী, তারিখে কুরআন, চিত্র নং ৭৯।
৭৭. ফিহরিস্ত মাখতুতাতুর রাওজাতুল হায়দারিয়াহ, পৃ. ১৪।
৭৮. †দখুন, মুস্তাশরিকীন, ২য় খ-, পৃ. ৪৫৬।
৭৯. রহনুমায়ে গাঞ্জিনেহ-এ-কুরআন; ‘রাহাতুছ ছুদুর’, ‘আন-নাক্দ’ এবং ‘তারিখে বায়হাকী’- পার্শ্বঢীকা †থকে উদ্ধৃত।
৮০. ড. হুজ্জাতী, তারিখে কুরআন, চিত্র নং ৮০।
৮১. অত্র †লখকের ‘ইয়দ্দশত্হয়ে সাফারে †মছ্র’।
৮২. ফিহরিস্ত মাখতুতাতুর রাওজাতিল হায়দারিয়্যাহ।
(ইরান সাংস্কৃতিক †কন্দ্র ঢাকা †থকে প্রকাশিত নিউজলেটারের †সŠজন্যে
©somewhere in net ltd.