![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুলঃমুহাম্মাদ মুহাম্মাদী ইশ্তিহারদি
অনুবাদঃমুঃ আশরাফুল আলম
শিয়া আলেমঃ আমরা বিশ্বাস করি যে, নবীর(সাঃ)পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত ও উত্তরাধীকারী ইমামত হচ্ছে দ্বীন ও দুনিয়ার বুকে বড় ধরনের দায়িত্ব।কেননা নবীর(সা স্থলাভিষিক্ত হলে তার প্রতিনিধিত্ব করতে হবে,দ্বীনের আহকামকে প্রচার-প্রসার করতে হবে,আল্লাহর হুদুদ এবং শরীয়তকে টিকিয়ে রাখতে হবে।আর যেকোন ধরনের ফেতনা-ফ্যাসাদকে ধ্বংস করতে হবে।আর যেকোন ব্যক্তিই এই গুরু দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে না।এমন ব্যক্তিকে অবশ্যই তাকওয়া,জিহাদ, জ্ঞান,হিজরত,যোহদ,সমুন্নত অতীত,রাজনীতি,ন্যায়পরায়নতা,সাহসীকতা,পবিত্র ও উন্নত চিন্তাশীল এবং উত্তম চরিত্রের ক্ষেত্রে সকলের চেয়ে উপরে থাকতে হবে।আর তেমন ব্যক্তি শিয়া ও সুন্নীর ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী(আঃ) ছাড়া কেউ নন।
সুন্নী আলেমঃ নবী(সাঃ) বলেছেনঃ “ আমার সাহাবাগন তারকারাজীর ন্যায়।তাদের যেকোন একজনকে অনুসরন করলেই হেদায়াতের পথ পাবে”(সহী মুসলিম (ফাযায়েলুস সাহাবাহ অধ্যায়),মুসনাদে আহমাদ,খন্ড-৪,পাতা-৩৯৭)।সুতরাং নবীর (সাঃ) পরে যে কোন সাহাবীকেই অনুসরন করলেই নাজাত পেয়ে যাবো।
শিয়া আলেমঃ হাদিসটির সনদের দিকে লক্ষ্য করা ছাড়াও আরো কয়েকটি দলিলের ভিত্তিতে বলা যায় হাদিসটি হচ্ছে বানোয়াট এবং এই হাদিসটির কোন মুল্য নেই।কেননা নবী(সাঃ) এধরনের কোন হাদিস বর্ননা করেননি।
সুন্নী আলেমঃ আপনার কথার দলিল কি?
শিয়া আলেমঃ এই হাদিসটি যে মিথ্যা তা প্রমানের অনেক পথ আছে।যেমনঃ
১/রাতে সফরকারীরা রাস্তায় চলতে চলতে যখন পথ হারিয়ে ফেলে তখন আকাশের বুকে কোটি কোটি তারকা থাকে,যদি মনের ইচ্ছা মত যেকোন একটি তারকাকে নির্দেশক হিসাবে নির্দিষ্ট করি তবে কখনোই পথ খুজে পাব না। বরং প্রকৃত পথের সন্দ্বান দান করার জন্য নির্দিষ্ট ও পরিচিত তারকার দরকার,যা সফরকারীদেরকে সঠিক পথের সন্ধ্বান দিতে পারে।
২/উক্ত হাদিসটি অন্যান্য সহী হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক।যেমন হাদিসে সাকালাইন( ২টা ভারী বস্তু কোরান ও নবী পরিবার আঃ এর হাদিস),১২ ইমামের হাদিস(আমার পর ১২ জন ইমাম পর্যন্ত ইসলাম সমুন্নত থাকবে,তারা কুরাইশ বংশ থেকে(বুখারী, হাদিস # ৬৭২৯),তোমাদের উপর সালাম হে আহলে বাইত(নবী পরিবার)-
(তাফসীরে দুররে মানসুর,৫ম খন্ড,পাতা-১৯৮),আমার আহলে বাইত হচ্ছে নক্ষত্রস্বরুপ,আমার আহলে বাইত হচ্ছে নুহের কিস্তির ন্যায়........., আর আমার আহলে বাইত আমার উম্মতকে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ হওয়া থেকে রক্ষা করে( মুস্তাদ্রাকে হাকেম,খন্ড-৩,পাতা-১৪৯) এবং আরো অনেক হাদিস রয়েছে।
গুরুত্বের ব্যাপার হচ্ছে যে, যে হাদিসটি নিয়ে আলোচনা চলছে তা মুসলমানদের একটি বিশেষ দলের পক্ষ থেকে উল্লেখ হয়েছে,কিন্তু ঐ হাদিসের বিরোধী যে হাদিসগুলো রয়েছে তা মুসলমানদের সকল দলের পক্ষ থেকেই হয়েছে।
৩/ রাসুলের(সাঃ) ইন্তেকালের পরে তার সাহাবাদের মধ্যে যুদ্ব হয়েছিল তা উক্ত হাদিসের সাথে সঙ্গত নয়।কেননা পরবর্তীতে কিছু সাহাবা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল।
আরো সঙ্গত নয় যে, কিছু সাহাবা অন্যদেরকে লানত করতো।যেমন মুয়াবিয়া আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলীর(আঃ) উপর লানত দেয়ার নির্দেশ দেয়।
এটাও সঙ্গত নয় যে, সাহাবাগন নিজেদের মধ্যে যুদ্ব করবে।যেমন আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলীর(আঃ) বিরুদ্বে জঙ্গে জামালে তালহা ও যুবাইর এবং সিফফিনে মুয়াবিয়া যুদ্ব করে ছিল।
এটাও সঙ্গত নয় যে, সাহাবাগন কবিরা গুনাহ আঞ্জাম দিবে এবং মদ খাওয়া,যেনা ও চুরির জন্য তাদের বিরুদ্বে হাদ জারী হবে।যেমন ওয়ালিদ ইবনে উ’কবাহ এবং মুগিরা ইবনে শোবাহর ব্যাপারে হয়েছিল।
সুন্নী আলেমঃ “ আমার আসহাব” বলতে তাদেরকে বুঝান হয়েছে যারা রাসুলের (সাঃ) প্রকৃত সাহাবা ছিলেন।যে সব সাহাবা মিথ্যাবাদী ছিলেন তারা নয়।
শিয়া আলেমঃ ঐসব সাহাবা হচ্ছেন সালমান,আবুযার,মিকদাদ,আম্মার ইয়াসির ,অন্য কেউ নয়।কিন্তু তোমরা তাদের স্থলে অন্যদের উল্লেখ করে থাক।এরুপ আলোচনা চলতে থাকলে তোমার ও আমার বিরোধ মিটবে না।বরং আমাদের উচিত ঐ সব হাদিসের দিকে লক্ষ্য দেয়া যে গুলো সমস্যামুক্ত,যা আগেই উল্লেখ করেছি।
একটি ঘটনা এমন যে,সালমান যখন মাদায়েনে গিয়েছিল তখন সেখানে আশয়াছ ও জুরির নামে ২ ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাত করতে এসে সন্দেহ প্রকাশ করে যে, সে কি সালমান কিনা।এমতাবস্থায় সালমান নিজের পরিচয় দিয়ে বললেনঃ আমি সেই সালমান, রাসুলের(সাঃ) সাহাবি। তারপরেই সে বললো ঃ কিন্তু তোমরা জেনে রাখ যে,সেই হচ্ছে রাসুলে খোদার আসল সাহাবা যে রাসুলের (সাঃ) সাথে বেহেস্তে যাবে( ফাতাবি সাহাবি কাবির,পাতা-৬৭৭)।
সুষ্পষ্ট কথা হচ্ছে যে, আসল সাহাবা তারাই ছিলেন যারা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত রাসুলের(সাঃ) নির্দেশ মত চলাফেরা করেছিলেন এবং কোন প্রকারে রাসুলের (সাঃ) সুন্নাতকে পরিবর্তন না ঘটিয়েছিলেন।সাথে সাথে এলাহী নির্দেশের সীমা লঙ্গঘন করেছিলেন না।
পরিশেষে বলতে হয় যে, এমন সাহাবা পেলে তবেই না সঠিক পথের সন্দ্বান পাওয়া সম্ভব।কিন্তু তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করছি যে, রাসুলের (সাঃ) পরে ক’জন সাহাবা ছিল যারা পরিবর্তন হয়েছিলেন না? আমাদের রেওয়ায়েত অনুযায়ী কয়েকজন ছাড়া সবাই মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল।
©somewhere in net ltd.