![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুরা মায়েদাহ,আয়াত#৩
“......আজ আমি (১) তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পুর্ন করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পুর্ন করলাম এবং তোমাদের জন্য ধর্ম হিসাবে ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট হলাম;”.....
সঠিক ব্যাখ্যাঃ(১) যখন রাসুলের(সাঃ) বিদায় হজ্ব সমাপ্ত করে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন, তখন পথিমধ্যে আঠার যিলহজ্জ ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে বিশেষ তাকিদসহ ওহী অবতীর্ন হল যে, মহান আল্লাহ তাঁকে সে আদেশ দিয়েছেন তা যেন তিনি মানুষের কাছে পৌছে দেন।তিনি তখনই লোকদের থামার নির্দেশ দিলেন এবং একটি দীর্ঘ ভাষনের পর হযরত আলীর(আঃ) হাত উচু করে ধরে বললেন, ‘আমি যার মাওলা(অভিভাবক),এই আলীও তাঁর মাওলা(অভিভাবক)।হে আল্লাহ! যে তাঁকে ভালবাসে তুমি তাঁকে ভালবাস;যে তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে তুমি তাঁর শত্রু হও, যে তাঁকে সাহায্য করে তুমি তাঁকে সাহায্য কর।যে তাঁকে অসম্মান করে, তুমি তাঁকে অসম্মান কর’। অতপর উপস্থিত সকলেই হযরত আলীকে(আঃ) অভিনন্দন জানালেন।তখন হযরত উমরও বললেন, ‘হে আলী! অভিনন্দন তোমার প্রতি,তুমি আমার ও সকল মুমিন নর-নারীর অভিভাবক হয়ে গেলে’( মেশকাত)।যখন এসব পর্ব সমাধা হল তখন জিবরীল আমীন(আঃ) এই আয়াতসহ অবতীর্ন হলেন (তাফসীরে দুররে মানসুর,২য় খন্ড,পাতা-২০৯,মিশর মুদ্রন)।অর্থাৎ হযরত আলীর(আঃ) বেলায়েত ঘোষনার মাধ্যমে দ্বীন পুর্নতা লাভ করলো ও ইসলাম আল্লাহর সন্তুষ্টির ধর্মে পরিনত হল।
তাফহীমুল কুরানের তাফসীরকারক উপমহাদেশের জামায়াত নেতা মওলানা মউদুদীর মিথ্যা তাফসীরঃ
দীনকে পরিপূর্ণ করে দেবার অর্থই হচ্ছে তাকে একটি স্বতন্ত্র চিন্তা ও কর্ম ব্যবস্থা এবং একটি পূর্নাঙ্গ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় পরিণত করা হয়েছে। তার মধ্যে জীবনের সমস্ত প্রশ্নের নীতিগত বা বিস্তারিত জবাব পাওয়া যায়। হেদায়াত ও পথনির্দেশ লাভ করার জন্য এখন আর কোন অবস্থায়ই তার বাইরে যাবার প্রয়োজন নেই। নিয়মিত সম্পূর্ণ করে দেবার অর্থ হচ্ছে এই যে, তোমরা আমার আনুগত্য ও বন্দেগী করার যে অংগীকার করেছিল তাকে যেহেতু তোমরা নিজেদের প্রচেষ্টা ও কর্মের মাধ্যমে সত্য ও আন্তরিক অংগীকার হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছো, তাই আমি তাকে গ্রহণ করে নিয়েছি এবং তোমাদেরকে কার্যত এমন অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছি যে, এখন তোমাদের গলায় প্রকৃত পক্ষে আমার ছাড়া আর কারোর আনুগত্য ও বন্দেগীর শৃংখল নেই। এখন আকীদা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে যেমন তোমরা আমার মুসলিম (আনুগত্যকারী) ঠিক তেমনি কর্মজীবনেও আমার ছাড়া আর কারোর মুসলিম (আনুগত্যকারী) হয়ে থাকতে তোমরা কোনত্রুমেই বাধ্য নও। এ অনুগ্রহগুলোর কথা উচ্চারণ করার পর মহান আল্লাহ নীরবতা অবলম্বন করেছেন। কিন্তু এ বাক পদ্ধতি থেকে একথা স্বতঃষ্ফূর্তভাবে ফুটে ওঠে, যেন এখানে আল্লাহ বলতে চাচ্ছেন, আমি যখন তোমাদের ওপর এ অনুগ্রহগুলো করেছি তখন এর দাবী হচ্ছে, এখন আমার আইনের সীমার মধ্যে অবস্থান করার ব্যাপারে তোমাদের পক্ষ থেকে যেন আর কোন ত্রুটি দেখা না দেয়।
বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত থেকে জানা যায়, এ আয়াতটি বিদায় হজ্জের সময় ১০ হিজরীতে নাযিল হয়েছিল। কিন্তু যে বক্তব্যের ধারাবাহিকতার সাথে এর সম্পর্ক তা ৬ হিজরীতে হোদাইবিয়া চুক্তির সমসাময়িক কালের। বর্ণনা রীতির কারণে বাক্য দু'টি পরস্পর এমনভাবে মিশে গেছে যার ফলে কোন ক্রমেই ধারণা করা যাবে না যে, শুরুতে এ বাক্যগুলো ছাড়াই এ ধারবাহিক বক্তব্যটি নাযিল হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে এ বাক্যগুলো নাযিল হবার পর তা এখানে এনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য প্রকৃত ব্যাপার একমাত্র আল্লাহইই জানেন, তবে আমার অনুমান , প্রথম এ আয়াতটি এ একই প্রসংগে নাযিল হয়েছিল। তাই বিজিত তখন এর আসল গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনি। পরে যখন সমগ্র মহান আল্লাহ পুনর্বার এ বাক্য তাঁর নবীর প্রতি নাযিল করেন এবং এটি ঘোষণা করে দেবার নির্দেশ জারি করেন।
সুরা মায়ারিজ,আয়াত#১
“এক প্রার্থী অবধারিত শাস্তি প্রার্থনা করল”(১)
ব্যাখ্যাঃ১) তাফসীরে সালাবীতে এর শানে নুজুলে এরুপে বলা হয়েছে যে, রাসুল(সা গাদীরে খুমে হযরত আলীকে(আঃ) নিজের পরবর্তী খলিফা ও উম্মতের নেতা ঘোষনা করলেন এবং এ সংবাদ সর্বত্র প্রচার করা হলে হারিস বিন নুমান তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘এ ঘোষনা আপনি নিজের পক্ষ থেকে দিয়েছেন , নাকি আল্লাহর পক্ষ হতে”? রাসুল(সাঃ) বললেন, তিনি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে দিয়েছেন। সে নিবেদন করলো,’হে আল্লাহ! তিনি যদি সত্য কথা বলে থাকেন, তবে আমার উপর শাস্তি নিপতিত কর’। ফলে শাস্তি আপতিত হল এবং একটি পাথর তাঁর মাথা দিয়ে ঢূকে পশাচত দিক দিয়ে বের হয়ে গেল এবং এই আয়াতটি নাজিল হল।সে কত বড় হতভাগা ছিল সে যে, আলী(আঃ)এর প্রতি বিদ্বেষ তাঁকে এতটা পাগল করেছিল যে, সে রাসুল(সাঃ) বা আলীকে(আঃ) মাওলারুপে মান্যকারীদের জন্য আযাব কামনা না করে নিজের জন্যই চেয়ে বসলো এবং পরিনামে ধ্বংস হয়ে গেল যা হযরত আলীর প্রত্যেক শত্রুর পরিনাম।
তাফহীমুল কুরানের তাফসীরকারক উপমহাদেশের জামায়াত নেতা মওলানা মউদুদীর মিথ্যা তাফসীরঃ
মূল আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ হলো----- (ছায়ালা ছাইলুন)। কোন কোন মুফাস্সির এখানে ছায়ালা -------শব্দটিকে জিজ্ঞেস করা অর্থে গ্রহণ করেছেন। তাদের মতে আয়াতের অর্থ হলো একজন জিজ্ঞেসকারী জানতে চেয়েছে যে, তাদেরকে যে আযাব সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে তা কার ওপর আপতিত হবে৷ আল্লাহ তাআলা এ প্রশ্নের জওয়াব দিয়েছেন এই বলে যে, তা কাফেরদের ওপর পতিত হবেই। তবে অধিকাংশ মুফাস্সির এ ক্ষেত্রে চাওয়াকে দাবী করা অর্থ গ্রহণ করেছেন। নাসায়ী এবং আরো কিছু সংখ্যক মুহাদ্দিস ইবনে আব্বাস থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিস হাকেম এটিকে সহীহ হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি হলো নাদর ইবনে হারেস ইবনে কালাদা বলেছিলঃ
----------------------
"হে আল্লাহ,এটি যদি সত্যিই তোমার পক্ষ থেকে আসা একটা সত্য বাণী হয়ে থাকে, তাহলে আসমান থেকে আমাদের ওপর পাথর বর্ষণ করো অথবা আমাদেরকে ভীষণ কষ্টদায়ক শাস্তি দাও।"
এটি ছাড়াও কুরআন মজীদের আরো অনেক স্থানে মক্কার কাফেরদের এ চ্যালেঞ্জেরএ উল্লেখ করা হয়েছে যে, তুমি আমাদের যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছো তা নিয়ে আসছো না কেন৷ উদাহরণ স্বরূপ নীচে উল্লেখিত স্থানসমূহ দেখুন। সূরা ইউনুস, আয়াত ৪৬ থকে ৪৮; সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৬ থেকে ৪১; সূরা আন নামল আয়াত ৬৭ থেকে ৭২; সূরা সাবা আয়াত ২৬ থেকে ৩০; ইয়াসীন, আয়াত, ৪৫থেকে ৫২ এবং সূরা মূলক ২৪ থেকে ২৭।
সুরা মায়েদাহ,আয়াত#৬৭,
“হে রাসুল!(১) (যে আদেশ) তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ন হয়েছে তা পৌছে দাও,আর যদি তুমি তা না কর,তবে তুমি(যেন) তাঁর কোন বার্তাই পৌছাও নি; এবং ( তুমি ভয় কর না) আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন; এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না”।
ব্যাখ্যাঃ(১) ইবনে আবী হাতিম ও ইবনে আসাকির আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ননা করেছেন যে, এ আয়াত গাদীরে খুম নামক প্রান্তরে হযরত আলীর(আঃ) শানে নাজিল হয়েছে।একারনে ইবনে মারদুইয়্যা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বর্ননা করেছেন যে, আমরা রাসুলূল্লাহর(সাঃ) যুগে আয়াতটি এভাবে পড়তামঃ “হে রাসুল! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ন এ নির্দেশ- যে, আল সমস্ত মুমিনের নেতা-পৌছে দাও, আর যদি তুমি তা না কর, তবে তুমি(যেন) তাঁর কোন বার্তাই পৌছাও নি.......(তাফসীরে দুররে মানসুর,২য় খন্ড,পাতা-২৯৮,মিশর মুদ্রন)।উল্লেখ্য,রাসুলাল্লাহর(সাঃ) যুগে সাহাবাগন কুরানকে এর ব্যাখ্যাসহ সংকলন করতেন।একারনে ওহীর সাথে জিবরীল(আঃ) কর্তৃক আনীত ব্যাখ্যাও পাঠ করতেন যাতে ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ না থাকে।যা হোক বাস্তব এটাই যে, মহানবী(সাঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত আলীকে স্বীয় খলিফা ও স্থলাভিষিক্ত নিয়োগের জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন।কিন্তু কিছু সংখ্যক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির বিরোধিতা ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদের আশংকায় সকলের সামনে ঘোষনার পদক্ষেপ নিতেন না। অবশেষে যখন বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ গুরুত্বসহ এ আদেশ অবতীর্ন হল,তখন তিনি নিশ্চিন্ত হয়ে ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে লক্ষাধিক হাজীর সামনে তাঁকে(হযরত আলীকে) স্বীয় খলিফা ঘোষনা করলেন।অতপর উপস্তিত সকলে তাঁকে তাঁর খেলাফত ও বেলায়েতের জন্য অভিনন্দন জানালেন;কবিগন কবিতা রচনা করে আবৃত্তি করলেন,যেমন হাসসানা ইবনে সাবিত।তবে তাঁর খেলাফতের ঘোষনা শুনে কিছু সংখ্যক লোক রুষ্ট হল এবং তাঁদের একজন রাসুলের(সাঃ) নিকট প্রতিবাদ করতে আসল এবং পরিনামে তাঁর উপর বজ্রপাত/আল্লাহর পক্ষ থেকে পাথর নিক্ষিপ্ত হল ও সে ইন্তেকাল করলো।আর মহান আল্লাহও এ সংবাদ কুরানে মজীদে ‘সুরা মায়ারিজে’ উল্লেখ করলেন।
তাফসীরে ইবনে কাসীরে উপরে উল্লেখিত আয়াতের মিথ্যা তাফসীরঃ
ইবনে জারীর বলেন এই আয়াতটির অবতীর্ন হবার সময়কাল সম্পর্কে ২টি অভিমত রয়েছে।একটি অভিমত হলো এই আয়াতটি অবতীর্ন হবার সময়কাল সম্পর্কে কারো জানা নেই।ইবনে জারীর এই অভিমতের স্বপক্ষে ইবনে আব্বাস হতে একটি হাদিস বর্ননা করেছেন।আর একটি মত অনুযায়ী একটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে এটি বিদায় হজ্বের সফরে নাজিল হয়েছে।ইবনে জারীর এই হাদিসটির তাঁর একটি সনদের মাধ্যমে ইবনে আসাস(রাঃ) হতে বর্ননা করেছেন।ইবনে কাসীর বর্ননা করেছেনঃ ইবনে মারদুয়াই তাঁর সনদের মাধ্যমে আবু সাঈদ আল-খুদরী(রাঃ) হতে বর্ননা করেছেনঃ এই আয়াতটি রাসুলাল্লাহের(সাঃ) উপর ‘গাদীরে খুমের’ দিন অবতীর্ন হয়েছে এবং ওই দিন রাসুল(সাঃ) ঘোষনা করেছেন যে,”আমি যার মাওলা(নেতা),এই আলীও তাঁর মাওলা”।ইবনে মিরদুওইয়া এই হাদিসটি আবু হুরাইরা(রাঃ) হতে বর্ননা করেছেন।এই বর্ননায় দেখা যায়, ওই দিনটি ছিল ১৮ই জিলহজ্জ্ব।অর্থাৎ রাসুলের(সাঃ) বিদায় হজ্বের প্রত্যাবর্তনের দিন।ইবনে কাসীর উপরোক্ত অভিমতের কোনটিই সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
©somewhere in net ltd.