নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিফফিনের যুদ্ব,-২ লেখকঃআয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী,অনুবাদঃহুজ্জাতুল ইসলাম ডঃ আব্দুল কুদ্দুস বাদশা,হুজ্জাতুল ইসলাম মাইনুদ্দিন আহমেদ

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৩

ফোরাত মুক্ত করার পরে

উভয় বাহিনী পরস্পর থেকে বিশেষ দূরত্বে অবস্থান গ্রহণ করে এবং সেনাপতিদের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু ইমাম (আঃ) যুদ্ধের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। তিনি বারংবার প্রতিনিধি প্রেরণ ও পত্রবিনিময়ের মাধ্যমে আপোসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।৪২
৩৬ হিজরীর রবিউস সানী মাসের শেষ দিনগুলোতে নির্দোষ র্হোমুযানের হত্যাকারী ‘উবায়দুল্লাহ্ বিন ওমর ইমাম (আঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়।

র্হোমোযান্ ছিলেন একজন ইরানী। দ্বিতীয় খলীফাহ্ ওমরের সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং খলীফাহ্ তাঁর জীবন ধারণের জন্য একটি ভাতা ধার্য করে দেন।৪৩ হযরত ওমর যখন আবু লু’লু’র তলোয়ারের আঘাতে নিহত হন এবং হত্যাকারীকে আটক করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়৪৪, তখন খলীফাহ্ ওমরের পুত্র ‘উবায়দুল্লাহ্ মানবিক মৌলনীতিসমূহের বিপরীতে হত্যাকারীর স্থলে র্হোমোযান্কে হত্যা করে।৪৫ তৃতীয় খলীফাহ্ হযরত ওসমানের আমলে ‘উবায়দুল্লাহ্্কে ক্বিছাছ করার জন্য ইমাম (আঃ)-এর চেষ্টা সফল হয় নি। সে সময়ই ইমাম (আঃ) আল্লাহ্র সাথে অঙ্গীকারবদ্ধ হন যে, ক্ষমতা লাভ করলে তার ওপর আল্লাহ্র দ-কে কার্যকর করবেন।৪৬ হযরত ওসমানের হত্যাকা-ের পরে ইমাম (আঃ) জনগণ কর্তৃক খলীফাহ্ নির্বাচিত হলে ‘উবায়দুল্লাহ্ ক্বিছাছের ভয়ে শামের উদ্দেশে মদীনা ত্যাগ করে।৪৭

এ অতীতের ওপর ভিত্তি করে ‘উবায়দুল্লাহ্ ছিফ্ফীনের দিনগুলোতে ইমাম (আঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয় এবং ব্যঙ্গ করে বলে ঃ “আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা যিনি তোমাকে র্হোমোযানের রক্তের দাবীদার আর আমাকে ওসমানের রক্তের দাবিদার নির্ধারণ করে দিয়েছেন।” ইমাম বললেন, “আল্লাহ্ আমাকে ও তোমাকে রণাঙ্গনে একত্রিত করুন।”৪৮ ঘটনাক্রমে তুমুল যুদ্ধের মধ্যে ‘উবায়দুল্লাহ্ ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদের হাতে নিহত হয়।৪৯



ষোড়শ অধ্যায়
সর্বশেষ চরম পত্র
মু‘আবিয়ার নিকট তিনজন প্রতিনিধি প্রেরণ

৩৬ হিজরীর রবিউস্ সানী মাসের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছিলো। ইমাম (আঃ) তিন জন বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্বকে ডেকে পাঠালেন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন আনছার, একজন হাম্দানী ও তৃতীয় জন তামীমী। তিনি তাঁদেরকে মু‘আবিয়ার কাছে যেতে এবং তাঁকে ইমাম (আঃ)-এর প্রতি আনুগত্যের, ইসলামী উম্মাহ্র সাথে যোগদান ও আল্লাহ্র নির্দেশ মেনে চলার দিকে আহ্বান জানাতে বললেন।

তামীমী ব্যক্তি ইমামকে জিজ্ঞেস করলেন, “সে যদি বাই‘আত হতে রাযী হয় তাহলে তাকে কি বিশেষ কোনো সুবিধা (যেমন কোনো এলাকার শাসক নিয়োগ) প্রদান করা সমীচীন হবে?”

ইমাম (আঃ) যেহেতু কোনো অবস্থাতেই মৌলনীতিগুলোকে পদদলিত হতে দেবেন না সেহেতু তাঁদেরকে বললেন ঃ إئتُوهُ الْآنَ فَلاقُوهُ وَ احْتَجُّوا عَلَيهِ وَ انْظُرُوا مَا رأْيُهُ “আপাতত তোমরা তার কাছে যাও এবং যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরো। তারপর দেখো তার মতামত কী।”

ইমামের (আঃ) ঐ তিনজন প্রতিনিধি মু‘আবিয়ার কাছে গেলেন। মু‘আবিয়াহ্ ও তাঁদের মধ্যে অনেক কথাবার্তা হলো যা নিম্নরূপ ঃ

আন্ছারী ঃ দুনিয়া তোমার হাত থেকে একদিন চলে যাবে এবং তুমি পরকালে উপস্থিত হবে। সেখানে আল্লাহ্ তোমার কৃতকর্মের জন্য প্রতিফল দান করবেন এবং তোমার আমলনামার হিসাব-নিকাশ করবেন। আমি তোমাকে আল্লাহ্র দোহাই দিচ্ছি যে, উম্মাতকে দুই দলে বিভক্ত করে দিও না এবং তাদের রক্ত ঝরিয়ো না।

মু‘আবিয়াহ্ তাঁর কথা থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন ঃ তোমার নেতাকে কেনো এ উপদেশ দাও না?

আনছারী ঃ আল্লাহ্ পরম প্রমুক্ত। আমার নেতা তোমার মতো নন। তিনি মর্যাদা, ধার্মিকতা, ইসলাম গ্রহণ এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে আত্মীয়তার দিক থেকে মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।

মু‘আবিয়াহ্ ঃ তুমি কী বলতে চাচ্ছো আর কী চাচ্ছো?

আনছারী ঃ আমি তোমাকে তোমার চাচাতো ভাইয়ের আবেদন গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এতে সাড়া দেয়ার ফলে তোমার ধর্ম রক্ষা পাবে এবং সুপরিণামের কারণ হবে।

মু‘আবিয়াহ্ ঃ তাহলে ওসমানের রক্তের প্রতিশোধের বিষয়টি বিলম্বিত হবে। না, আল্লাহ্র শপথ, আমি এমন কাজ করবো না।

এ সময়ে হাম্দানী কথা বলতে চাইলেন। কিন্তু তামীমী ব্যক্তি তার আগেই বলে উঠলেন ঃ আন্ছারীর কথার উত্তরে তোমার কথাবার্তা থেকে তোমার উদ্দেশ্য বুঝা গেলো। তোমার উদ্দেশ্য কখনোই আমাদের কাছে গোপন নেই। তুমি মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এবং তাদের সহানুভূতি আদায়ের জন্য এর বিকল্প কিছু খুঁজে পাচ্ছো না। তাই বলছো যে, তোমাদের খলীফাহ্ মযলুমভাবে নিহত হয়েছেন, কাজেই তাঁর রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণ করতে হবে। এ কারণে একদল অজ্ঞ-মূর্খ তোমার ডাকে সাড়া দিয়েছে। অথচ আমরা জানি যে, তুমি নিহত খলীফাহ্কে সাহায্য করতে বিলম্ব করেছিলে এবং এই যে পদের জন্য আজ তুমি ময়দানে নেমেছো তার কারণেই তাঁর নিহত হওয়া কামনা করেছো। তবে এমন কতোই না ঘটেছে যে, কেউ কোনো পদ চায়, কিন্তু আল্লাহ্ তার মনের আশা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ান! তুমি আশা করছো যে, তোমার মনের কামনা পূরণ হবে। কিন্তু তোমার কামনাগুলোর কোনটির মধ্যেই কল্যাণ নেই। তুমি যা কামনা করছো যদি তা অর্জনে ব্যর্থ হও তাহলে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় পতিত হবে এবং সেগুলো ততক্ষণ পর্যন্তÍ অর্জন করবে না যতক্ষণ না জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার হকদার হবে। আল্লাহ্কে ভয় করো এবং যা কিছুর পিছনে ছুটছো সেগুলো পরিত্যাগ করো। আর যারা শাসনকার্যের জন্য উপযুক্ত তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ো না।

ইমাম (আঃ)-এর প্রতিনিধিবৃন্দের যুক্তিযুক্ত কথাবার্তা মু’আবিয়ার মধ্যে তীব্র ক্রোধের উদ্রেক করলো এবং তাঁর বিরোধীদেরকে নমনীয়তার সাথে উত্তর দেয়ার চিরাচরিত নীতির বিপরীতে এবার ভারসাম্যহীন ক্রোধের সাথে উত্তর দিলেন ঃ মরুর দস্যুরা! এ দরবার থেকে উঠে চলে যাও। আমার ও তোমাদের মধ্যে তলোয়ার ছাড়া আর কিছু নেই।

তামীমী ঃ তুমি কি আমাদেরকে তলোয়ারের ভয় দেখাচ্ছো? শীঘ্রই আমরা তলোয়ার নিয়েই তোমার কাছে আসবো।

অতঃপর তাঁদের তিনজনই ইমাম (আঃ)-এর কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলেন।৫০
ইরাক ও শামের ক্বারীগণের সম্মেলন

ইসলামের প্রথম যুগের ক্বারীগণ বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁদের মর্যাদা ছিলো এমন যে, তাদেরকে কোনো একটি পক্ষ অবলম্বন করতে দেখলে বহুসংখ্যক মুসলমান সে পক্ষকেই সমর্থন করতো।

সন্ধি ও সমঝোতার সকল দরযা যখন বন্ধ হয়ে গেলো তখন ইরাক ও শামের ক্বারীগণ Ñ যাদের সংখ্যা ছিলো ত্রিশ হাজারের ঊর্ধ্বে, তাঁরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে তাঁবু গাড়লেন। তাঁদের প্রতিনিধিগণ, যেমন ঃ ‘উবায়দাহ্ সাল্মানী, ‘আল্ক্বামাহ্ ইবনে ক্বায়স্, আবদুল্লাহ্ ইবনে ‘উত্বাহ্, ‘আমের ইবনে আবদুল ক্বায়স্ প্রমুখ দুই বাহিনীর নেতৃবৃন্দের মধ্যে যাতায়াত ও যোগাযোগ শুরু করলেন। তাঁরা প্রথমে মু‘আবিয়ার কাছে গেলেন এবং তাঁর সাথে বৈঠকে নিম্নরূপ আলোচনা হলো ঃ

প্রতিনিধিল ঃ তুমি কী চাও?

মু‘আবিয়াহ্ ঃ ওসমানের রক্তের প্রতিশোধ চাই।

প্রতিনিধিদল ঃ কার কাছ থেকে?

মু‘আবিয়াহ্ ঃ আলী থেকে।

প্রতিনিধিদল ঃ কেন, আলী কি তাঁকে হত্যা করেছেন?

মু‘আবিয়াহ্ ঃ হ্যাঁ, সে-ই হত্যা করেছে এবং হত্যাকারীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে।

প্রতিনিধিদল এবার ইমাম (আঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলেন এবং বললেন যে, মু‘আবিয়াহ্ তাঁকে ওসমান হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করছেন।

ইমাম বললেন ঃ আল্লাহ্র শপথ, সে এ ব্যাপারে মিথ্যা বলেছে; আমি কখনোই তাঁকে হত্যা করি নি।

তখন প্রতিনিধিদল মু‘আবিয়ার কাছে ফিরে এলেন এবং ইমাম (আঃ)-এর বক্তব্য তাঁকে শুনালেন।

মু‘আবিয়াহ্ ঃ সে স্বহস্তে ওসমানকে হত্যা করে নি, কিন্তু হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলো এবং তাকে হত্যা করার জন্য লোকজনকে উস্কে দিয়েছিলো।

ইমাম (আঃ) মু‘আবিয়ার এ বক্তব্য শোনার পর পুনরায় ওসমান হত্যাকা-ে তাঁর কোনো প্রকার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

মু‘আবিয়াহ্ ইমাম (আঃ) কর্তৃক সর্বপ্রকার অভিযোগ অস্বীকার করার খবর শোনার পর অন্য প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন। বললেন, “যদি তা-ই হয় তাহলে সে ওসমান হত্যাকারীদেরকে আমাদের হাতে তুলে দিক অথবা আমাদের জন্য তাদেরকে আটক করার পথ খোলা রাখুক।”

উত্তরে ইমাম বললেন, “এ ধরনের একটি হত্যাকা- যেহেতু ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটে নি Ñ এজন্য এর কোনো ক্বিছাছ নেই। কারণ হত্যাকারীরা কোরআনকেই তাদের হত্যাকা-ের পক্ষে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং তার ব্যাখ্যা করেছে। তাদের ও খলীফাহ্র মাঝে মতপার্থক্য সৃষ্টি হয় এবং খলীফাহ্ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নিহত হন। (অতএব, এ কাজ যদি বেঠিকও হয় তারপরও এরূপ হত্যাকা-ের ক্বিছাছ নেই।)

প্রতিনিধিগণ ইমামের ফিকাহ্গত যুক্তি-প্রমাণ মু‘আবিয়ার নিকট বর্ণনা করলে মু‘আবিয়াহ্ নিজেকে পরাস্ত লক্ষ্য করেন‎। কাজেই তিনি অন্য কথা শুরু করে দিলেন। তিনি বললেন, “তাহলে আলী আমাদের এবং যারা এখানে রয়েছে তাদের পরামর্শ ছাড়াই কেনো খেলাফতকে নিজের জন্য নির্ধারণ করে নিলো এবং আমাদের অধিকার হরণ করলো?”

ইমাম (আঃ) উত্তরে বললেন, “জনগণ আনসার ও মুহাজিরদের অনুসরণ করে চলে। আর তারা হলো মুসলিম ভূখ-ের অপরাপর বিক্ষিপ্ত মুসলমানদের মুখপাত্র। তারা পূর্ণ আগ্রহ, সন্তুষ্টি ও আন্তÍরিকতার সাথে আমার অনুকূলে বাই‘আত হয়েছে। আর আমি কখনোই মু‘আবিয়ার মতো লোকদেরকে ইসলামী উম্মাহ্র ওপর হুকুমাত করতে এবং তাদের পিঠে সওয়ার হতে ও তাদের ওপর লাঠি ভাঙ্গতে দেবো না।”৫১

মু‘আবিয়াহ্ ঃ মুহাজির ও আনছারগণ সকলে মদীনায় ছিলেন না। বরং তাদের কিছু অংশ শামে বসবাস করতেন। তাঁদের সাথে পরামর্শ করা হলো না কেন?

ইমাম বললেন, “ইমাম নির্বাচনের কাজটি বিশ্বের সকল অলিগলির বিক্ষিপ্ত মুহাজির ও আনছারদের হাতে নয়। কারণ, তাহলে নির্বাচনই ঘটবে না। বরং তাদের একটি অংশের কাজ এটি। অর্থাৎ যারা ইসলামের প্রথম ভাগে অবিচলতার পরিচয় দিয়েছে এবং ‘বদরী’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, আর তারা সকলেই আমার অনুকূলে বাই‘আত হয়েছে।” অতঃপর তিনি ক্বারী-প্রতিনিধিদের বললেন, “মু‘আবিয়াহ্ তোমাদেরকে যেন ধোঁকায় না ফেলে এবং তোমাদের জীবন ও ধর্মকে ধ্বংস করে না দেয়।”

বলা বাহুল্য, মহানবী (সাঃ)-এর ইন্তেÍকালের পর মুহাজির ও আনছারগণ ইসলামী রাষ্ট্রের আয়তন বিস্তার লাভ করার সাথে সাথে বিভিন্ন ইসলামী রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েন। তখনকার সময়ে গণমাধ্যমের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁদের সকলের মতামত গ্রহণ করা সম্ভবপর ছিলো না। আর এটা নিয়ে পীড়াপীড়ি করার পরিণামে শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া ছাড়া অন্য কিছু হতো না। এ কারণে, কেবল মদীনায় বসবাসকারী সংখ্যাগুরু আনছার ও মুহাজিরগণের মতামত গ্রহণ করা ছাড়া গত্যন্তÍর ছিলো না। আসলে কেবল মুহাজির ও আনছারদের মতামতই কার্যকর হবে এমন কোনো ধরাবাঁধা মূলনীতিও ছিলো না। তবে যদি গণভোটের সুযোগ থাকতো তাহলে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর অন্যান্য ছাহাবী Ñ যারা তাঁকে দর্শন করেছেন এবং তাঁর প্রতি ঈমান এনেছেন কিন্তু হিজরত করেন নি, তাঁদের সাথে কোনো পার্থক্য থাকতো না। কী কারণে খলীফাহ্ নির্বাচনের এক্তিয়ার ছাহাবীদের হাতে সীমাবদ্ধ থাকবে, অথচ অন্যান্য মুসলমানরা এ বিষয়ে কোনো মতামত প্রকাশের অধিকার পাবে না?

ইমাম (আঃ)-এর দৃষ্টিতে ইমামতের প্রসঙ্গটি মূলগতভাবে একটি ঐশী নির্ধারণের বিষয়। অর্থাৎ ইমামও স্বয়ং নবীর মতো আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নির্ধারিত হবেন। সুতরাং ইমাম (আঃ) যে এখানে মুহাজির ও আনছার কিম্বা ‘বদরীদের’ দ্বারা নির্বাচনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন তার কারণ হলো যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা জনগণকে তুষ্ট করা।

আর বিষয়টিকে নির্বাচন ও মনোনয়নের দিক থেকে বিশ্লেষণ করা হলে কখনোই সে যুগের সকল মুহাজির ও আনছার কিম্বা সকল ছাহাবী বা মুসলমানদের কথা আনা যাবে না। সে যুগে জনগণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন ছিলো, একজন পত্রবাহকের একটি স্থান থেকে আরেকটি স্থানে পৌঁছতে মাসকে মাস সময় লেগে যেতো। এ কারণে, ইসলামের বড় বড় ব্যক্তিত্বদের এবং ইমামের ভাষায়, ‘বদরীদের অঙ্গীকারকেই যথেষ্ট মনে করতে হবে।
বিক্ষিপ্ত আক্রমণ

রাবীউছ্ ছানী আর জামাদিউল আউয়াল ও জামাদিউছ্ ছানী Ñ এই তিন মাস প্রতিনিধিদল ও বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়। এ সময়ের মধ্যে অনেকগুলো বিক্ষিপ্ত আক্রমণের ঘটনা সংঘটিত হয় Ñ যার সংখ্যা ৮৫টি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো যুদ্ধ ও রক্তপাতের পর্যায়ে পড়ে না। কারণ ইরাক ও শামের কারীবৃন্দ তাদের মাঝে মধ্যস্থতা করতেন এবং তাদেরকে পরস্পর পৃথক করে দিতেন।৫২
আবু আমামাহ্ ও আবুর্দ্দাদা

এ দুইজন ছাহাবী রক্তপাত এড়াবার জন্য মু‘আবিয়ার কাছে গেলেন এবং তাঁকে বললেন ঃ “আপনি আলীর সাথে যুদ্ধ করছেন কেন?” মু‘আবিয়াহ্ তাঁর সেই পুরাতন বুলিরই চর্বিত চর্বণ করলেন, যার উত্তর বার বার ইমাম (আঃ) ও তাঁর বন্ধুদের থেকে শুনেছিলেন। ছাহাবীদ্বয় তাঁর বক্তব্যকে ইমাম (আঃ)-এর কাছে উপস্থাপন করলেন।

ইমাম (আঃ) এবার অন্যভাবে মু‘আবিয়ার কথার উত্তর প্রদান করলেন। আর তা হলো, তিনি স্বীয় সঙ্গীদের মাঝে প্রচার করলেন যে, মু‘আবিয়াহ্ খলীফাহ্ ওসমানের হত্যাকারীদের চায়। হঠাৎ বিশ সহস্রাধিক লোক Ñ যারা লোহার বর্ম পরিহিত ছিলো এবং শুধু তাদের চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না Ñ বের হয়ে এলো, তাদের সকলেই দাবি করলো যে, তারাই খলীফাহ্ ওসমানের হত্যাকারী।৫৩

বৃদ্ধ ছাহাবী দু’জন এ দৃশ্য দেখে উভয় দলকে ত্যাগ করে যান যাতে যুদ্ধক্ষেত্রের হত্যাকা- দেখতে না হয়, যদিও তাঁদের জন্য সমুচিত ছিলো সত্যকে নিরূপণের চেষ্টা করা এবং সত্যকে সমর্থন করা।

৩৭ হিজরীর রজব মাস এসে পৌঁছলো এবং বিক্ষিপ্ত আক্রমণ থেমে গেল। মু‘আবিয়াহ্ ভয় পাচ্ছিলেন যে, কোরআনের ক্বারীগণ Ñ যারা দুই শিবিরের মাঝখানে তাঁবু গেড়ে ছিলেন Ñ আলীর দলে যোগ দেন কিনা। তাই তিনি ইমাম (আঃ)-এর শিবিরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এমন এক ধোঁকাবাজির পরিকল্পনা করলেন যা ইসলামী যুদ্ধসমূহের ইতিহাসে নযীর বিহীন।
মু’আবিয়ার পক্ষ থেকে ফোরাতের বাঁধ ধ্বংসের প্রচার

ফোরাতকূল মুক্ত করার পর যুদ্ধ পরিস্থিতি ইমাম (আঃ)-এর অনুকূলে পরিবর্তিত হয়। অনুরূপভাবে ইমাম (আঃ)-এর সম্মুখে ইরাক ও শামের কারীবৃন্দের উপস্থিতিতে তাঁর স্পষ্ট ও অকাট্য যুক্তি-প্রমাণসমূহ শামের অনেক ক্বারীকেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করে। আর তাঁদের মধ্যে এক দল নিরপেক্ষ হয়ে যান। এমতাবস্থায় মু‘আবিয়াহ্ ইমাম (আঃ)-এর প্রভাব বিস্তার লাভের ভয়ে যুদ্ধের পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনার জন্য একটি নীল নকশা প্রস্তুত করেন।

ছিফ্ফীনের মরু প্রান্তÍরে ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যরা উপত্যকার ঢালে আর মু‘আবিয়ার সৈন্যরা অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে শিবির স্থাপন করেছিলো। এ মরু প্রান্তÍরের একটি এলাকায় বাঁধ ছিলো যা ফোরাতের পানিকে আটকে রেখেছিলো। হঠাৎ ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদের মধ্যে মুখে মুখে একটি খবর ছড়িয়ে পড়লো যে, মু‘আবিয়াহ্ ফোরাতের বাঁধ ধ্বংস করে দিতে এবং ইরাকী বাহিনীর দিকে পানি প্রবাহিত করে দিতে চান। এ খবর প্রচার লাভ করে এভাবে যে, মু‘আবিয়াহ্ ইমাম (আঃ)-এর সেনাশিবিরের দিকে একটি তীর নিক্ষেপ করতে গোপনে নির্দেশ দেন। ঐ তীরের সাথে একটি সতর্কবার্তা সংযুক্ত ছিলো। তাতে লেখা ছিলো ঃ “এ বার্তা আল্লাহ্র একজন সৎ বান্দাহ্র পক্ষ থেকে। আমি খবর দিচ্ছি যে, মু‘আবিয়াহ্ ফোরাতের বাঁধ ধ্বংস করতে চায় যাতে তোমরা সবাই ডুবে মারা যাও। কাজেই যত শীঘ্র সম্ভব সিদ্ধান্তÍ গ্রহণ করো এবং সতর্ক হতে ভুলো না।”

এ সতর্কবার্তাটি ইমাম (আঃ)-এর জনৈক সৈন্যের হাতে পড়লো। অতঃপর তা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়লো যে, গোটা শিবিরে আলোড়ন সৃষ্টি হলো। অধিকাংশই এ বার্তাকে সত্য বলে গ্রহণ করলো। এ খবর প্রচারের সাথে সাথে মু‘আবিয়াহ্ ইরাকের লোকদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার উদ্দেশ্যে দুইশ’ লোককে হাতে ঝুড়ি-কোদাল ও বেলচা ইত্যাদি নিয়ে ফোরাতের বাঁধ অভিমুখে প্রেরণ করলেন যাতে প্রতীয়মান হয় যে, সত্যই তিনি বাঁধটি ধ্বংস করতে চান।

ইমাম (আঃ) মু‘আবিয়ার ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার ব্যাপারে অবগত ছিলেন। এ কারণে স্বীয় সেনাপতিদেরকে বললেন, “মু‘আবিয়ার বাঁধ ধ্বংস করার ক্ষমতা নেই। বরং সে এর মাধ্যমে তোমাদেরকে আতঙ্কগ্রস্ত করতে চায় যাতে তোমরা তোমাদের অবস্থান ছেড়ে চলে যাও আর সে ফোরাতের কূলকে পুনরায় দখল করতে পারে।”

সেনাপতিরা বললেন, “এটা ঠিক নয়। অবস্থা এখন মারাত্মক। আমাদের দিকে পানি প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে এ মুহূর্তে একদল লোক গর্ত খুঁড়তে ব্যস্ত রয়েছে।”

ইমাম (আঃ) বললেন, “হে ইরাকের জনগণ? আমার সাথে বিরোধিতা করো না।”

সেনাপতিরা বললেন, ‘‘আল্লাহ্র শপথ, আমরা এখান থেকে চলে যাবো; আপনি যদি থাকতে চান তো থাকুন।”

অতঃপর সকলে শিবির ত্যাগ করে বের হয়ে গেলো এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চতর স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিলো। ইমাম (আঃ) ছিলেন সর্বশেষ ব্যক্তি যিনি নিরূপায় হয়ে ঐ এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হন। কিন্তু অচিরেই ইমাম (আঃ)-এর কথার সত্যতা প্রমাণিত হলো এবং মু‘আবিয়াহ্ ত্বরিৎ বেগে ইমাম (আঃ)-এর পরিত্যক্ত শিবির দখল করে নিলেন, আর ইরাকের সেনাদলকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিলেন।৫৪
বিরোধিতা করার ক্ষতিপূরণ

ইমাম (আঃ) তাঁর মতের বিরোধিতাকারী নেতৃবৃন্দকে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁদেরকে তিরস্কার করলেন। আশ্‘আছ্ ইবনে ক্বায়স্ তার বিরোধিতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলো এবং বললো যে, সে তার এ বিরোধিতা করার ক্ষতিপূরণ করবে। অতঃপর মালেক আশ্তারের সহযোগিতায় এক প্রচ- যুদ্ধের মাধ্যমে মু‘আবিয়ার সৈন্যদেরকে দখলকৃত জায়গা থেকে তিন র্ফাসাখ্ (১৮ কিলোমিটার) দূরে হটিয়ে দিতে সক্ষম হন। আর এভাবে তাঁদের বিরোধিতার ফলে সৃষ্ট ক্ষতির কিছুটা পূরণ করেন। যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি পুনরায় ইমাম (আঃ)-এর অনুকূলে পরিবর্তিত হয় এবং ফোরাতের পানি সংগ্রহের স্থানটি পুনরায় ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদের হস্তগত হয়।

কিন্তু এ সময় ইমাম (আঃ) স্বীয় আত্মমর্যাদা ও পৌরুষের পরিচয় তুলে ধরলেন এবং শীঘ্রই মু‘আবিয়াহ্ কাছে নিম্নোক্ত বার্তা পাঠালেন ঃ اِنّاَ لاَ نُكَافِيكَ بِصُنْعِكَ؛ هَلُمَّ اِلَي الْمَاءِ فَنَحْنُ وَ اَنْتُمْ فِيهِ سَواءٌ

“আমরা কখনোই তোমার অনুরূপ প্রতিশোধ গ্রহণ করবো না, আসো, পানি গ্রহণ করো। এতে আমরা ও তোমরা সমান অধিকারী।” অতঃপর ইমাম স্বীয় সৈন্যদের উদ্দেশে বললেন, “আমাদের লক্ষ্য পানি জয় করার চেয়েও বড়।”৫৫

৩৬ হিজরীর রজব মাসের পরে যিলহাজ্জ মাস অবধি স্থানে স্থানে যুদ্ধ এবং বিক্ষিপ্ত আক্রমণ অব্যাহত থাকে। উভয় পক্ষই অধিক হতাহতের ঘটনা থেকে বিরত ছিলো। কিন্তু যিলহাজ্জ মাসে যুদ্ধ প্রচ- রূপ ধারণ করলো। ইমাম (আঃ) এ মাসে মালেক আশ্তার, হুজ্র্ ইবনে ‘আদী, শিব্ছ্ তামীমী, খালেদ দুছী, যিয়াদ ইবনে নায্র্, যিয়াদ ইবনে জা‘ফার, সা‘ঈদ হামদানী, মা‘ক্বাল্ ইবনে ক্বায়স্ এবং ক্বায়স্ ইবনে সা‘দ প্রমুখ সেনাপতির নেতৃত্বে সৈন্যদেরকে রণাঙ্গনে প্রেরণ করেন।৫৬

সেনাপতিদের মধ্যে আশ্তার অন্য সকলের চাইতে বেশি বীরত্বের পরিচয় দেন। কখনো কখনো একদিনের মধ্যে দু’দুবার আক্রমণ সংঘটিত হচ্ছিলো এবং উভয় পক্ষের লোকেরা নিহত হচ্ছিলো। যখন ৩৭ হিজরীর মহররমের চাঁদ উদয় হলো তখন উভয় পক্ষ সমঝোতা করলো যে, মহররম মাসের সম্মানে যুদ্ধবিরতি পালন করবে এবং অবশেষে প্রতিনিধি প্রেরণের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনার দরযা খুলে যায়।৫৭
৩৭ হিজরীর ঘটনাবলী

৩৭ হিজরীর মহররম মাস ছিলো বার্তা ও প্রতিনিধি প্রেরণের মাস। ইমাম (আঃ) যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তÍ থেকে মু‘আবিয়াকে বিরত রাকার লক্ষ্যে এ মাসে বড় বড় ব্যক্তিত্বগণকে, যেমন ঃ ‘আদী ইবনে হাতেম, শিব্ছ্ ইবনে রিব্‘ঈ, ইয়াযীদ ইবনে ক্বায়স্, যিয়াদ ইবনে হাফ্ছাহ্ প্রমুখকে মু‘আবিয়ার কাছে প্রেরণ করেন। এখানে মু‘আবিয়ার সাথে তাঁদের কথোপকথনের বিবরণ তুলে ধরা হলো ঃ

‘আদী ইবনে হাতেম ঃ আমরা তোমাকে এমন একটি জিনিসের প্রতি আহ্বান করতে এসেছি যার বদৌলতে মহান আল্লাহ্ আমাদের উম্মাতের মধ্যে ঐক্য দান করবেন এবং মুসলমানদের রক্তসমূহের নিরাপত্তা বিধান করবেন। আমরা তোমাকে সবচেয়ে মর্যাদাবান এবং ইসলামের সবচেয়ে সৎকর্মশীল ব্যক্তিটির প্রতি আহ্বান জানাই। জনগণ তাঁর চতুর্পার্শ্বে সমবেত হয়েছে। আল্লাহ্ তাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন এবং সুপথে পরিচালিত করেছেন। একমাত্র তুমি ও তোমার সঙ্গীরা ছাড়া আর কেউ তাঁর বিরোধিতা করে নি এবং অবাধ্য হয় নি। আমরা আবেদন জানাচ্ছি, জামাল যুদ্ধের লোকদের মতো পরিণতি বরণ করার আগেই তুমি এসব অবাধ্যতা থেকে ফিরে এসো।

মু‘আবিয়াহ্ ঃ মনে হচ্ছে, তুমি হুমকি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এসেছো, সমাধানের জন্য নয়। তুমি যা চাচ্ছো তা অনেক দূরে। আমি র্হাব্-এর (যুদ্ধের) সন্তÍান এবং খালি মশকগুলোতে আঘাত হানতে কখনো আমার হাত কাঁপে না। আল্লাহ্র শপথ, তুমি হলে তাদের মধ্যে একজন যারা ওসমানের হত্যাকা-ে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং তুমি নিজেও তাঁর হত্যাকারীদের অন্যতম। দূর হোক! হে ‘আদী, আমি তা আমার শক্তিশালী বাহুদ্বয় দ্বারা গ্রহণ করেছি।

শিব্ছ্্ ইবনে রিব্‘ঈ ও যিয়াদ ইবনে হাফ্ছাহ্ ঃ আমরা সন্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য এসেছি। আর তুমি আমাদের জন্য সুন্দর বুলি আউড়ে উপমা শোনাচ্ছো? অযথা কথাবার্তা ছাড়ো এবং এমন কিছু বলো যা আমাদের ও তোমার জন্য উপকারী হয়।

ইয়াযীদ ইবনে ক্বায়স্ ঃ আমরা একটি বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য এবং আরেকটি বার্তা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি। যেসব যুক্তি-প্রমাণ ও বিষয় ঐক্যের কারণ হতে পারে তা উত্থাপন করা থেকে আমরা কখনোই বিরত হবো না। আমাদের ইমামকে তুমি চেনো। মুসলমানরা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের কথা জানে। আর এ সত্য কখনোই তোমার কাছে গোপন নেই। ধার্মিক ও মর্যাদাসম্পন্ন লোকেরা কখনোই তোমাকে আলীর সমান ও সমকক্ষ গণ্য করবেন না। আল্লাহ্কে ভয় করো আর আলীর সাথে বিরোধিতা করো না। আল্লাহ্র শপথ, এমন কোনো মানুষ আমাদের জানা নেই যে আলীর চেয়ে অধিকতর মুত্তাকী ও পরহেযগার এবং তাঁর মতো সকল গুণাবলীর অধিকারী।

মু‘আবিয়াহ্ ঃ তুমি আমাকে দুটো জিনিসের প্রতি আহ্বান করেছো। আলীর আনুগত্য ও ঐক্য বজায় রাখা। আমি দ্বিতীয়টি মেনে নেবো, কিন্তু কখনোই আলীর আনুগত্য করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। তোমাদের নেতা আমাদের খলীফাকে হত্যা করেছে এবং সমাজকে দ্বিখ-িত করে দিয়েছে, আর খলীফার হত্যাকারীদেরকে আশ্রয় প্রদান করেছে। সে যদি মনে করে থাকে যে, খলীফাহ্কে হত্যা করে নি তাহলে আমরাও তা প্রত্যাখ্যান করবো না। তবে এটা কি অস্বীকার করা যায় যে, খলীফার হত্যাকারীরা তারই সহযোগী? সে তাদেরকে আমাদের হাতে দিক যাতে তাদেরকে ক্বিছাছ করতে পারি। অতঃপর তোমাদের আনুগত্য ও ঐক্যের প্রস্তাবের উত্তর প্রদান করবো।৫৮
মু‘আবিয়ার উত্তরের বিশ্লেষণ

মু‘আবিয়াহ্ তাঁর যুক্তিতর্কে একক অবস্থান বজায় রাখছিলেন না। তিনি সর্বদা পরিস্থিতি অনুযায়ী কথাবার্তা বলছিলেন। কখনও কখনও তিনি আলী (আঃ)-এর ওসমান-হত্যাকারী হওয়ার ওপর জোর দিচ্ছিলেন এবং কোনোক্রমেই তাঁর দাবী থেকে সরে আসতে রাযী ছিলেন না। কিন্তু এ কথোপকথনের মধ্যে কার্যতঃ তিনি ইমাম (আঃ)কে নির্দোষ বলে মেনে নেন। কিন্তু এবার তাঁর পীড়াপীড়ি এই যে, খলীফার হত্যাকারীদেরকে তাঁর হাতে তুলে দিতে হবে, অথচ এ ধরনের দাবী করার কোনো এক্তিয়ার তাঁর ছিলো না। কারণ, তিনি খলীফাহ্ ওসমানের ওয়ারিশ ছিলেন না এবং মুসলমানদের শাসনকর্তাও ছিলেন না। খলীফাহ্র হত্যাকারীদের তাঁর হাতে তুলে দেয়ার দাবীর পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদের মাঝে ফাটল ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা। কারণ, মু‘আবিয়াহ্ জানতেন যে, ইরাক, মিসর ও হেজাযের বিপ্লবীরা Ñ যারা খলীফাহ্ ওসমানের নিযুক্ত আমলাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলো এবং ওসমানকে হত্যা করার পর ইমাম (আঃ)কে জোর করে বাই‘আতের দৃশ্যপটে উপস্থিত করেছিলো, তারাই হলো খলীফাহ্র হত্যাকারী (চাই স্বহস্তে এ হত্যাকা-ে অংশগ্রহণ করুক, চাই এ হত্যাকা-ের প্রতি আহ্বান জানানো, প্রচারণা চালানো, মৌন সম্মতি ও আনন্দিত হওয়ার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে থাকুক)। এ বিশাল জনসমষ্টিকে হস্তান্তÍর করা যেমন সম্ভবপর ছিলো না, পক্ষান্তÍরে এর ফলে শৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়া এবং বিদ্রোহ ও ক্ষোভ বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই হতো না।

মু‘আবিয়াহ্ এ বৈঠকে খলীফাহ্র হত্যাকারীদের তাঁর নিকট হস্তান্তÍর করাকে কেন্দ্রীয় শাসনের আনুগত্য করার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। অথচ তাঁর অন্যান্য বক্তব্যে তিনি পীড়াপীড়ি করছিলেন যে, হুকুমাতের বিষয়টি অবশ্যই মুহাজির ও আনছারদের Ñ যারা বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছেন, তাঁদের একটি কমিটির মাধ্যমে সমাধান হতে হবে। তাঁর এসব স্ববিরোধী ও বিপরীতমুখী কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, শুধু কালক্ষেপণ করা এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকাই ছিলো তাঁর লক্ষ্য।

এখানে মু‘আবিয়ার সাথে আলী (আঃ)-এর প্রতিনিধিবৃন্দের আলোচনা বৈঠকের বাকী অংশ তুলে ধরা হলো ঃ

শিব্ছ্ ইবনে রিব‘ঈ ঃ হে মু‘আবিয়াহ্, আল্লাহ্র দোহাই, ‘আম্মার ইয়াসিরকে যদি তোমার হাতে তুলে দেয়া হয় তাহলে তুমি কি তাকে হত্যা করবে Ñ যে ‘আম্মার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, তাকে হত্যা করবে অবাধ্য দল?

মু‘আবিয়াহ্ ঃ আল্লাহ্র শপথ, আলী যদি সুমাইয়াহ্র পুত্রকে (অর্থাৎ ‘আম্মারকে) আমার হাতে তুলে দেয় তাহলে তাকে ওসমানের গোলামের বিপরীতে হত্যা করবো।

শিব্ছ্ ইবনে রিব‘ঈ ঃ যে আল্লাহ্ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই আকাশের স্রষ্টা সেই আল্লাহ্র শপথ করে বলছি, তুমি ন্যায়ের পথে নেই। তাঁর শপথ, কখনোই তুমি সুমাইয়াহ্র পুত্রকে হত্যা করার সুযোগ পাবে না যতক্ষণ না মস্তকসমূহ ধরগুলো থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং যমীন তার এ বিশালতার পরেও তোমার জন্য সঙ্কীর্ণ হয়ে আসে।

মু‘আবিয়াহ্ ঃ যমীন যদি আমার জন্য সঙ্কীর্ণ হয় তাহলে তোমার জন্য সঙ্কীর্ণতর হবে।

এখানে ইমাম (আঃ)-এর প্রতিনিধিবৃন্দের বক্তব্য শেষ হয় এবং কোনো ফলাফল ছাড়াই ও মু‘আবিয়ার চিন্তÍা-চেতনায় কোনো দাগ কাটতে সক্ষম হওয়া ছাড়াই তাঁরা প্রত্যাবর্তন করেন। মু‘আবিয়াহ্ তাঁদের মধ্য থেকে যিয়াদ ইবনে হাফছাহ্কে ডেকে নিয়ে তাঁর সাথে আলাদাভাবে আলাপ করতে চাইলেন। সম্ভবত তাঁর ধারণা ছিলো যে, তিনি যিয়াদের চিন্তÍার মধ্যে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবেন। কেননা, এই ব্যক্তিত্রয় সহযোগীদের বিশাল একেকটি জনসমষ্টির প্রতিনিধি ছিলেন।

মু‘আবিয়াহ্ তাঁর প্রতি তাকালেন এবং বললেন ঃ আলী আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং আমাদের ইমামকে হত্যা করেছে আর তাঁর হত্যাকারীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। আমি তোমার কাছে প্রত্যাশা করি যে, স্বীয় আত্মীয়-স্বজন ও গোত্রের লোকদের নিয়ে তুমি আমাকে সাহায্য করবে। আমি অঙ্গীকার করছি যে, জয়লাভ করার পর কূফাহ্ অথবা বছ্রাহ্ যেকোনো শহরের গভর্নরের পদ তুমি চাইবে সেটাই তোমাকে দেবো।

জবাবে যিয়াদ ইবনে হাফছাহ্ বললেন ঃ মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আমার কাছে যে প্রমাণ রয়েছে এবং যে নে‘আমত তিনি আমাকে দান করেছেন সে কারণে আমি কখনোই অপরাধীদেরকে সমর্থন করবো না।

তাঁর এ উক্তি ছিলো Ñ মূলত হযরত মূসা (আঃ)-এরই উক্তি। তিনি একথা বলে মু‘আবিয়ার দরবার ছেড়ে বের হয়ে গেলেন।

আলোচনা বৈঠকে ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ও উপস্থিত ছিলেন। মু‘আবিয়াহ্ এ প্রাজ্ঞ রাজনীতিকের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমরা ওদের যার সাথেই কথা বলি ওরা ভালো মতোই উত্তর দেয়। ওদের অন্তÍরগুলো যেন একই অন্তÍর আর চিন্তÍাধারাও সবার একই।”৫৯
ইমাম (আঃ) সকাশে মু‘আবিয়ার প্রতিনিধি

ইমাম (আঃ)-এর পক্ষ থেকে মু‘আবিয়ার নিকট প্রতিনিধি হিসেবে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রেরণ করার পিছনে ইমাম (আঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিলো যাতে মু‘আবিয়াহ্ তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়। অথচ এ কাজের পিছনে মু‘আবিয়ার উদ্দেশ্য ছিলো কালক্ষেপণ করা এবং ইমাম (আঃ)-এর সুসংগঠিত সৈন্যদের সারিতে মতপার্থক্য সৃষ্টি করা। কারণ, তিনি জানতেন যে, আলী (আঃ) কখনোই তাঁদের মতো লোকের বিপরীতে স্বীয় অবস্থান পরিবর্তন করবেন না।

এবার মু‘আবিয়াহ্ হাবীব, শুরাহ্বিল ও মা’আন নামক তিন ব্যক্তিকে ইমাম (আঃ)-এর কাছে পাঠালেন। তাঁদের তিনজনেরই চিন্তÍাধারা মু‘আবিয়ার চিন্তÍাধারার সাথে হুবহু একই ছিলো। এক অর্থে তাঁরা মুআবিয়ারই কণ্ঠস্বরস্বরূপ ছিলেন Ñ যারা মু‘আবিয়ার কথাকে কম-বেশি করা ছাড়াই পুনরাবৃত্তি করতেন। এখানে ইমাম (আঃ)-এর সাথে তাঁদের তিনজনের কথোপকথনের বিবরণ তুলে ধরা হলো ঃ

হাবীব ঃ ওসমান ছিলেন একজন হেদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহ্। আর আপনারা তাঁর অধিকার হরণ করেছেন এবং তাঁকে হত্যা করেছেন। এখন তাঁর হত্যাকারীদেরকে আমাদের কাছে হস্তান্তÍর করুন যাতে তাদেরকে হত্যা করতে পারি। আর যদি বলেন যে, আপনি তাকে হত্যা করেন নি তাহলে শাসনক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান এবং এটাকে শূরার (কমিটির) হাতে ছেড়ে দিন; জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে তিনিই ক্ষমতার কর্ণধার হবেন।

হাবীবের যুক্তি ছিলো খুবই দুর্বল ও ভিত্তিহীন। তিনি প্রথমে কোনোরূপ সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই ওসমান-হত্যার দায়ে ইমাম (আঃ)কে অভিযুক্ত করেন। অতঃপর নিজেকে খলীফাহ্র অধিকারের রক্ষক বলে উপস্থাপন করেন এবং সবশেষে ইমাম (আঃ)-এর অস্বীকারকে গ্রহণ করেন এবং তাঁর প্রতি হুকুমত ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। মনে হয় তাঁর আগের সব কথাই শেষ কথাটির ক্ষেত্র প্রস্তুতকারী স্বরূপ ছিলো। কাজেই ইমাম (আঃ) কঠোরভাবে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন এবং বললেন ঃ

وَ ما أنْتَ لا اُمَّ لَكَ و الْوِلايَةَ وَ الْعَزْلَ و الْدُّخُولَ فِي هذا الْأمْرّ. فَإنَّكَ لَسْتَ هُناكَ وَ لا بِأَهْلٍ لِذلِكَ.

“হুকুমাত সংক্রান্তÍ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তোমার নেই যে, তুমি আমার অপসারণের কথা তুলতে পারো। চুপ থাকো। তোমার সে পদবি নেই এবং তার উপযুক্তও নও।”

হাবীব ঃ আল্লাহ্র শপথ, আপনি নিজেকে যে অবস্থায় দেখতে চান না তেমন অবস্থায় দেখবেন।

ইমাম ঃ কে তুমি? যাও, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিকদেরকে জড়ো করে আনো ; দেখবে, তুমি কিছুই করতে পারবে না।

শুরাহ্বিল ঃ আমার কথা ঐ একই কথা যা হাবীব বলেছে। আপনি কি তাকে যে উত্তর দিয়েছেন তা ছাড়া আমার জন্য অন্য কোনো উত্তর দেবেন?

ইমাম (আঃ) ঃ আছে। তোমার জন্য ও তোমার বন্ধুর জন্য আমার কাছে অন্য উত্তরও রয়েছে। মহান আল্লাহ্ স্বীয় পয়গাম্বরকে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর মাধ্যমে মানুষদেরকে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করেছেন এবং অবশেষে তাঁকে নিজের কাছে ডেকে নিয়েছেন এমন অবস্থায় যখন তিনি তাঁর রিসালাতকে পালন করেছিলেন। অতঃপর জনগণ আবু বকরকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মেনে নেয় এবং আবু বকর ওমরকে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করেন। তারপর ওসমান ক্ষমতা লাভ করেন। তিনি যেসব কাজ করেছিলেন তাতে জনগণ তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাঁর ওপর আক্রমণ চালায় ও তাঁকে হত্যা করে। অতঃপর তারা আমার কাছে আসে যখন আমি তাদের কর্মকা- থেকে দূরে ছিলাম। তারা পীড়াপীড়ি করছিলো আমার হাতে বাই‘আত হবে। প্রথমে আমি মেনে নেই নি। পুনরায় তারা পীড়াপীড়ি করলো এবং বললো, উম্মাত আপনাকে ছাড়া রাজী নয়। আমাদের ভয় হচ্ছে, আমরা যদি আপনার হাতে বাই‘আত না হই তাহলে দলাদলি ও বিভক্তির সৃষ্টি হবে। এ কারণে আমি তাদের বাই‘আত গ্রহণ করলাম। ত্বাল্হাহ্ ও যুবাইরও আমার হাতে বাই‘আত হলো, কিন্তু পরে তারা তা ভঙ্গ করে। অতঃপর মু‘আবিয়াহ্ আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ালো। সে এমন একজন লোক যার না ধর্মে কোনো অবদান রয়েছে আর না ইসলামে সঠিক কোনো ভূমিকা রয়েছে। সে হলো মুক্তিপ্রাপ্তের সন্তÍান মুক্তিপ্রাপ্ত। সে হলো উমাইয়্যাহ্ দলভুক্ত এবং অব্যাহতভাবে সে ও তার পিতা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের শত্রু ছিলো। ঘৃণা সত্ত্বেও তারা ইসলাম গ্রহণে বাধ্য হয়। তোমাদের দেখে আমি অবাক হই যে, তোমরা তার জন্য সৈন্য যোগাড় করছো এবং তার অনুসরণ করছো, আর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পরিবারকে ত্যাগ করছো এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর আহ্লে বাইত উপস্থিত থাকার পরও তোমরা অন্যের প্রতি ঝুঁকে পড়ছো। আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্র কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাতের প্রতি আর বাতিলকে ধ্বংস করতে ও দ্বীনের নিদর্শনাদিকে পুনরুজ্জীবিত করতে আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এ কথা বলছি এবং নিজের জন্য ও সকল মু’মিন নারী ও পুরুষের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।৬০

শুরাহ্বিল কামনা-বাসনার জালে বন্দী না থাকলে ইমাম (আঃ)-এর বক্তব্যকে গ্রহণ করতেন। কিন্তু যেহেতু ইমাম (আঃ)-এর যুক্তির সামনে তিনি নিজেকে অক্ষম অনুভব করলেন সুতরাং সত্যমিথ্যা গুলিয়ে ফেলার মতো করে কথাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন এবং বললেন, ওসমানের হত্যার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী? আপনি কি সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, তিনি মযলুম অবস্থায় নিহত হয়েছেন?

একজন বার্তাবাহকের জন্য এ ধরনের প্রশ্ন করা তাঁর কর্তব্যবহির্ভূত বিষয় ছিলো। এ প্রশ্ন করার মাধ্যমে বৈঠককে ভেঙ্গে দেয়া ছাড়া তাঁর অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না। এ বিষয়ে বিচার করতে হলে ওসমান হত্যার কারণসমূহ পর্যালোচনা করা দরকার ছিলো। এ কারণে ইমাম (আঃ) তাঁকে সমর্থন করলেন না। আর এ অজুহাতে তাঁরাও ইমামের বৈঠক ছেড়ে চলে গেলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি তাঁর মযলুম হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে না তার থেকে আমরা অসন্তুষ্ট।

তখন ইমাম (আঃ) তাঁদেরকে নিম্নোক্ত আয়াতের দৃষ্টান্তÍ বলে অভিহিত করলেন ঃ

إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتيٰ وَ لاَ تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعاء إذًا وَلَّوا مُدْبِرينَ وَ مَا أنْتَ بِِهَادِي الْعُمِْيِ عَنْ ضَلالَتِهِمْ إنْ تُسْمِعُ إلاّ مَنْ يؤْمِنُ بِآياتِنَا فَهُمْ مُسْلِمُونَ.

“আপনি মৃত ও বধিরদেরকে (যাদের অন্তর মৃত ও বধির) আহ্বান শোনাতে পারবেন না যখন তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছে। আপনি অন্ধদেরকে (যাদের অন্তর অন্ধ) পথপ্রদর্শন করতে পারবেন না। আপনি তাদেরকে ব্যতীত কাউকে শোনাতে পারবেন না যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান এনেছে, অতএব, তারাই অনুগত (মুসলিম)।”৬১


চলবে...।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.