![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অষ্টাদশ অধ্যায়
সর্বাত্মক আক্রমণ
ছিফ্ফীনের যুদ্ধের শুরু থেকে আট দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। খ- খ- এবং সীমিত পরিসরে সৈন্যদের মুখোমুখি সংঘর্ষে কোনো ফল হলো না। ইমাম (আঃ) চিন্তÍায় ছিলেন যে, কী করলে ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে লক্ষ্যে পৌছা যায়। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, সীমিত পরিসরের যুদ্ধে ক্ষতি ছাড়া অন্য কোনো ফল হবে না। এ কারণে তিনি ৮ সফর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে চাঁদের আলোয় স্বীয় সহযোগীদের উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেন ঃ
“কৃতজ্ঞতা আল্লাহ্র যিনি যা কিছু ভাঙ্গেন তা আর মযবুত হয় না এবং যা কিছু মযবুত করেন তা আর ভাঙ্গে না, তিনি যদি চাইতেন তাহলে এ উম্মাতের কিম্বা অন্য কোনো সৃষ্টির এমনকি দু’জনও মতপার্থক্য করতো না, আর কোনো মানুষ তাঁর সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির কোনো বিষয় নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হতো না আর অনুগ্রহধন্য ব্যক্তিরা অনুগ্রহকারীদের মর্যাদাকে অস্বীকার করতো না। নিয়তি আমাদেরকে ও এই দলটিকে এখানে টেনে এনেছে এবং মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। সকলেই আমরা আল্লাহ্র দৃষ্টিগোচরে এবং তাঁরই সম্মুখে। তিনি যদি চান তাহলে শাস্তি অবতীর্ণ করার ব্যাপারে বিলম্ব করেন না যাতে অত্যাচারীকে প্রত্যাখ্যান ও সত্যকে প্রকাশ করেন। তিনি দুনিয়াকে কর্মক্ষেত্ররূপে ও পরকালকে প্রতিদানের জন্য নির্ধারণ করেছেন যাতে খারাপ লোকদেরকে তাদের খারাপ কাজের ও সৎকর্মশীলদেবকে তাদের সৎকাজের জন্য পুরস্কার প্রদান করেন। জেনে রেখো, আগামীকাল আল্লাহ্ চাহেন তো আমরা শত্রুর মুখোমুখি হবো। সুতরাং আজ রাতে বেশি বেশি নামায পড়ো এবং বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করো, আর আল্লাহ্র নিকট থেকে অটলতা ও বিজয় প্রার্থনা করো। আগামীকাল শত্রুভাবে ও সতর্কতার সাথে তাদের মুখোমুখি হবে এবং নিজের কাজে সততা বজায় রাখবে।”
ইমাম (আঃ) এ বক্তব্য প্রদান করে সভা ত্যাগ করলেন। অতঃপর সৈন্যরা সকলে স্ব স্ব তলোয়ার, বর্শা ও তীরসমূহের কাছে গেলো এবং তা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে ব্যস্ত হলো।৭৮
সফর মাসের ৮ তারিখ বুধবার ইমাম (আঃ) নির্দেশ দিলেন, একজন লোক শাম বাহিনীর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে এবং যুদ্ধের জন্য ইরাকী বাহিনীর প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করবে।
মু‘আবিয়াহ্ও ইমাম (আঃ)-এর ন্যায় স্বীয় সৈন্যদের বিন্যস্ত করার কাজে ব্যস্ত হলেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন দলে ভাগ করলেন। হেম্ছ্, জর্দান ও ক্বিন্সারিনের লোকদের দ্বারা তাঁর বাহিনীর বিভিন্ন অংশ গঠিত হয়েছিলো। আর মু‘আবিয়ার দেহরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করে যাহ্হাক্ বিন ক্বায়স্ ফিহ্রীর নেতৃত্বাধীন শামের বাহিনী। তারা তাঁর চারপাশে অবস্থান নেয় যাতে শত্রু সেনাদেরকে স্বীয় কেন্দ্রভাগে Ñ যেখানে মু‘আবিয়ার চৌকি ছিলো Ñ প্রবেশ বাধা দিতে সক্ষম হয়।
শামী সৈন্যদেরকে যেভাবে বিন্যস্ত করা হয় তা ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছের পসন্দ হয় নি। তিনি মু‘আবিয়াকে সৈন্য বিন্যাসের কাজে সাহায্য করতে চাইলেন। সুতরাং তিনি তাঁকে প্রথমে যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিলো সে কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন (অর্থাৎ জয়লাভ করলে মিসরের হুকুমাত তাঁকে দিতে হবে)। তারপর তিনি বললেন ঃ “হিম্ছীদের অধিনায়কত্ব আমার হাতে ন্যস্ত করো এবং আবুল আ‘ওয়ারকে এ দায়িত্ব থেকে অপসারণ করো।”
মু‘আবিয়াহ্ তাঁর প্রস্তাবে খুশী হলেন এবং অবিলম্বে একজনকে হিম্ছীদের সেনাপতির কাছে এ বাণী সহ পাঠালেন যে “আম্র্ ইবনুল্ ‘আছের যুদ্ধ বিষয়ে এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে যা আমার বা তোমার নেই। তাই আমি তাকে অশ্বরোহী বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করলাম। কাজেই তুমি অন্য কোনো এলাকায় চলে যাও।”
‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ মিসরের হুকুমাত লাভের আশায় স্বীয় দুই পুত্র আবদুল্লাহ্ ও মুহাম্মাদকে ডেকে পাঠালেন। আর নিজের অভিজ্ঞতা ও মতানুযায়ী সৈন্যদেরকে বিন্যস্ত করলেন এবং নির্দেশ দিলেন যে, লৌহবর্ম পরিহিতরা সম্মুখভাগে আর বাকিরা প্রান্তÍভাগে দাঁড়াবে। অতঃপর স্বীয় পুত্রদ্বয়কে সারি সারি সৈন্যের মাঝে ঘুরে ঘুরে তাদের শৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশ দিলেন। এমনকি এতেও ক্ষান্তÍ হলেন না, নিজেও তাদের শৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলেন। তারপর তিনি মু‘আবিয়ার ন্যায় সৈন্যদলের কেন্দ্রভাগে একটি চৌকিতে আরোহণ করলেন Ñ যা রক্ষা করার দায়িত্ব ইয়ামানীদের ওপর ন্যস্ত হয়। সেখান থেকে তিনি নির্দেশ দিলেন, “যে কেউ এ চৌকির নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করবে তৎক্ষণাৎ তাকে হত্যা করবে।”৭৯
ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব দখলের উদ্দেশ্যে যখন যুদ্ধ করা হয় তখন নিজেকে বাঁচাবার জন্য একদল লোককে নিযুক্ত রাখার প্রয়োজন হয়। কিন্তু উদ্দেশ্য যদি আধ্যাত্মিক হয় তাহলে স্বীয় উদ্দেশ্যের পথে নিহত হতে ভয় করে না। এ কারণে ইমাম (আঃ)কে রক্ষার জন্য কোনো লোক তো নিযুক্ত করা হয়ই নি, বরং তিনি স্বয়ং একটি ধূসর বর্ণের ঘোড়ার পিঠে চড়ে সেনাপতির ভূমিকায় ময়দানে আবির্ভূত হন, নির্দেশ দেন, গগনবিদারী হুঙ্কার দিয়ে শাম বাহিনীর অন্তÍরে ভীতির কম্পন সৃষ্টি করেন এবং নিজের তীক্ষè তরবারী দ্বারা তাদেরকে পিছু হটিয়ে দেন।
নেতৃত্বের ধরন ও পদ্ধতির ভিন্নতা উদ্দেশ্য ও অনুপ্রেরণার ভিন্নতা থেকে উৎসারিত হয়। শাহাদাত লাভের বাসনা জন্ম নেয় পরকালের প্রতি ঈমান থেকে এবং নিজেকে সত্যপন্থী হওয়ার প্রত্যয় থেকে। পক্ষান্তÍরে মৃত্যুকে ভয় করা ও নিজের জীবন বাঁচাবার জন্য অন্যদেরকে উৎসর্গ করা দুনিয়ার প্রতি মোহগ্রস্ততা ও অপার্থিব জগতকে অস্বীকার করা থেকে উদ্ভূত হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ এ সত্যকে স্বীকার করেন এবং ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদল সম্পর্কে মন্তÍব্য করেন ঃ
فَإنَّ هَؤُلاء جَاؤُوا بِخُطَّةٍ بَلَغَتِ السَّمَاءَ.
“এ দলটি ঐশী লক্ষ্য নিয়ে ময়দানে এসেছে। (তাই তারা শাহাদাতে ভয় করে না।)”
মু‘আবিয়ার প্রতি ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছের শুভাকামিতা তাঁর প্রতি আকর্ষণ ও তাঁর বিজয় কামনার্থে ছিলো না। বরং তিনি তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থের ছকে মু‘আবিয়ার বিজয় লাভে আগ্রহী ছিলেন। মু‘আবিয়ার সাথে তাঁর বৈঠকগুলোতে এবং নিজ বিবৃতিসমূহে তিনি অহরহ তাঁর মূল্যের কথা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিতেন। তাঁদের একটি বৈঠকের নিম্নোক্ত সংলাপ এ সত্যকেই তুলে ধরে ঃ
মু‘আবিয়াহ্ ঃ যত দ্রুত সম্ভব সৈন্যদের সারিগুলোকে বিন্যাস করো।
‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ ঃ একটি শর্তে, তাহলো আমার হুকুমাত আমার নিজের থাকবে।
মু‘আবিয়াহ্ ভয় পাচ্ছিলেন যে, ইমাম (আঃ)-এর পরে ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পড়েন কিনা। এ কারণে সাথে সাথে তিনি প্রশ্ন করলেন ঃ কোন্ হুকুমাত? মিসর ব্যতীত অন্য কোনো হুকুমাত চাও নাকি?
‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ ছিলেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ আর বে-পরহেযগার সওদাগর, কিন্তু এখানে পরহেযগারীর মুখোশ পরে বললেন ঃ মিসর কি বেহেশ্তের বদলা হতে পারে? আলীকে হত্যা করা কি জাহান্নামের আগুনের উপযুক্ত মূল্য হবে যা কখনও নিভবে না?
‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছের কথা সৈন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে কিনা এ ভয়ে অসাধারণ পীড়াপীড়ির সাথে মু‘আবিয়াহ্ বললেন ঃ “আস্তে, আস্তে। তোমার কথা যেন কেউ না শোনে।”
‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ মিসরের হুকুমাতের আশায় শামের সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন ঃ “হে শামের সৈন্যরা। তোমাদের সারিগুলো সুশৃঙ্খল করো এবং তোমাদের মস্তকগুলোকে তোমাদের রবের কাছে আমানত রাখো। আল্লাহ্র কাছ থেকে সাহায্য চাও এবং আল্লাহ্র শত্রু ও তোমাদের নিজেদের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো; তাদেরকে হত্যা করো। আল্লাহ্ তাদেরকে হতা করুন এবং ধ্বংস করে দিন।”৮০
অপর দিকে ইমাম (আঃ) একটি ঘোড়া চাইলেন। তাঁর জন্য ধূসর বর্ণের একটি ঘোড়া আনা হলো। ঘোড়াটি চঞ্চল ছিলো এবং লাগাম টেনে তাকে আয়ত্তে রাখা হচ্ছিলো। ইমাম (আঃ) তার লাগাম হাতে নিয়ে এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন ঃ
سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَ مَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنيِنَ وَ اِنَّا اِلَي رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ.
“পরম প্রমুক্ত আল্লাহ্ যিনি এ বাহনকে আমাদের আয়ত্তাধীন করে দিয়েছেন, নচেৎ আমাদের সে ক্ষমতা ও শক্তি ছিলো না। আমরা সকলেই আমাদের রবের কাছে প্রত্যাবর্তন করবো।”৮১
অতঃপর তিনি দো‘আর জন্য হাত তুললেন এবং বললেন ঃ
اَلّلَهُمَّ اِلَيكَ نَقَلَتِ الْأَقْدَامُ وَ اَتْعَبَتِ الْأبْداَنُ و أفَضَتِ الْقُلُوبُ وَ رَفَعَتِ الْأيْدِي وَشَخَصَتِ الْأبْصارُ ... اَلَّلهُمَّ إنَّا نَشْكُوا اِلَيكَ غَيبَةَ نَبِِيِّنَا وَ كَثْرَةَ عَدُوِّنا وَ تَشَتُّتَ اَهْوائِنا. ربِّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَ بَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَ أنْتَ خَيْرُ الْفَاتِحيِنَ.
“হে আল্লাহ্! তোমার দিকেই পদসমূহ ধাবিত হয়, শরীরসমূহ কষ্ট স্বীকার করে, অন্তÍরসমূহ নিবদ্ধ হয়, হাতসমূহ উত্তোলিত হয় এবং চক্ষুসমূহ উন্মোচিত হয়। হে আল্লাহ! তোমার দরবারে আমাদের অভিযোগ আমাদের নবীর অনুপস্থিতি, শত্রুদের আধিক্য আর আমাদের কামনাসমূহের বিক্ষিপ্ততা থেকে। হে আল্লাহ! আমাদের আর এই দলের মাঝে তুমিই ন্যায়ভাবে বিচার করো। তুমিই তো সর্বোত্তম বিচারক।”৮২
অবশেষে ৮ সফর বুধবার সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু হলো। ভোরবেলা থেকে রাত পর্যন্তÍ তা অব্যাহত থাকে। দু’পক্ষই কোনো বিজয় লাভ ছাড়াই স্ব স্ব শিবিরে প্রত্যাবর্তন করলো।
বৃহস্পতিবার ইমাম (আঃ) অন্ধকারের মধ্যেই ফজরের নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর একটি দো‘আ পড়ার পর নিজেই আক্রমণ শুরু করলেন এবং তাঁর সঙ্গীরা সব দিক থেকে আক্রমণ চালালো।৮৩
আক্রমণের পূর্বে ইমাম (আঃ) যে দো‘আ পাঠ করেছিলেন তার অংশবিশেষ নিম্নরূপ ঃ
إِنْ اَظْهَرْتَنَا عَلَي عَدُوِّنَا فَجَنِّبْنا الْغَيَّ وَ سَدِِّدْنا للْحَقِّ وَ إِنْ أَظْهَرْتَهُمْ عَلَينَا فَارْزُقْنا الشَّهَادَةَ وَ اعْصِمْ بَقِيَّةَ اَصْحَابِي مِنَ الْفِتْنَةِ.
“(হে আমার রব!) আমাদেরকে যদি শত্রুর ওপর বিজয় দান করো তাহলে আমাদেরকে যুলুম থেকে বিরত রাখো এবং আমাদের পদসমূহকে সত্যের ওপরে দৃঢ় রাখো। আর যদি তারা আমাদের ওপরে বিজয় লাভ করে তাহলে শাহাদাতকে আমাদের নসিব করো আর আমার অবশিষ্ট সাথীদেরকে ফিত্নার হাত থেকে রক্ষা করো।৮৪
ইমাম (আঃ)-এর সেনাপতিদের অগ্নিঝরা ভাষণ
প্রত্যেক বাহিনীর সেনাপতি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের ভাষণসমূহ প্রচারণার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখছিলো। এমনও ঘটতো যে, একটি ভাষণ একজন সৈন্যকে কোনো স্থান থেকে হটিয়ে দিতো এবং জয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিতো। এ কারণে, ৯ সফর বৃহস্পতিবার Ñ সর্বাত্মক আক্রমণের দ্বিতীয় দিনে Ñ ইমাম (আঃ)-এর বাহিনীর বড় বড় ব্যক্তিত্ব ভাষণ প্রদান করেন। ইমাম (আঃ) ছাড়াও আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীল্৮৫, সা‘ঈদ ইবনে ক্বায়স্৮৬, মালেক আর্শ্তা৮৭ প্রমুখ বক্তব্য রাখলেন। তাঁদের প্রত্যেকেই বিশেষ যুক্তি দ্বারা ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদেরকে শাম বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণে উদ্বুদ্ধ করেন। এর মধ্যে আরো অনেক ঘটনা সংগঠিত হয় যার কিছু কিছু এখানে উল্লেখ করা হলো ঃ
১) এ কোরআনকে হাতে নেবে কে?
আলী (আঃ) যুদ্ধ শুরু করার আগে চূড়ান্তÍভাবে যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যে স্বীয় সৈন্যদের দিকে তাকালেন এবং বললেন, “তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, এই কোরআনকে নেবে এবং শামবাসীদেরকে তার প্রতি আহ্বান জানাবে?”
এ সময়ে সা‘ঈদ নামের এক যুবক উঠে দাঁড়ালো এবং প্রস্তুতি ঘোষণা করলো। ইমাম (আঃ) তাঁর কথা পুনরাবৃত্তি করলেন। আবারো সেই যুবকটি উঠে দাঁড়ালো এবং বললো, “আমি, হে আমীরুল মু’মিনীন!” তখন আলী (আঃ) কোরআনকে তার হাতে সোপর্দ করলেন। সে কোরআন নিয়ে মু‘আবিয়ার বাহিনীর দিকে রওয়ানা হলো এবং তাদেরকে আল্লাহ্র কিতাবের প্রতি ও তদনুযায়ী আমল করার জন্য আহ্বান জানালো। কিন্তু কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই সে শত্রুর দ্বারা ভূপাতিত হলো।৮৮
২) দুই হুজ্র্-এর লড়াই
হুজ্র্ ইবনে ‘আদী কিন্দী রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হন এবং তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি আলী (আঃ)-এর একনিষ্ঠ ভক্ত ও সমর্থকদের মধ্যে অন্তÍর্ভুক্ত হন। আর শেষ পর্যন্তÍ এ পথে স্বীয় প্রাণ উৎসর্গ করেন এবং ইমাম (আঃ)-এর একদল নিষ্ঠাবান সহচরকে সাথে নিয়ে র্মাজ্ ‘আযরা’ নামক স্থানে মু‘আবিয়ার জল্লাদদের হাতে নিহত হন। ইতিহাসে তাঁকে হুজ্রুল খার্য় নেককার হুজ্র্) নামে উল্লেখ করা হয়। অথচ তাঁর চাচা হুজ্র্ ইবনে ইয়াযীদকে হুজ্রুশ্ র্শা (পাপিষ্ঠ হুজ্র্) নামে উল্লেখ করা হয়।
পরস্পর ঘনিষ্ঠ রক্তসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ঘটনাক্রমে এমন একটি দিনে এ দুই হুজ্র্ একে অপরের মুখোমুখি হন। হুজ্রুশ্ র্শা-এর পক্ষ থেকেই যুদ্ধের আহ্বান জানানো হয়। যখন তারা দু’জন নিজেদের বর্শা নিয়ে লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন খুযাইমাহ্ নামক জনৈক ব্যক্তি হুজ্র্ ইবনে ইয়াযীদের সাহায্যে এগিয়ে যায় এবং হুজ্র্ ইবনে ‘আদীকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে। এ সময় হুজ্রের সহযোগিদের মধ্যে একদল খুযাইমাহ্র ওপর আক্রমণ চালায় এবং তাকে হত্যা করে। কিন্তু হুজ্র্ ইবনে ইয়াযীদ পলায়ন করে ও ময়দান থেকে বের হয়ে যায়।৮৯
৩) আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীলের আক্রমণ
আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীল্ ছিলেন ইমাম (আঃ)-এর বাহিনীর উচ্চপদস্থ সেনাপতিদের অন্যতম। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর একজন মর্যাদাবান ছাহাবী ছিলেন এবং আত্মশুদ্ধি, সাহসিকতা ও বীরত্বের দিক দিয়ে মালেক আশ্তারের পরে দ্বিতীয় বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন। সৈন্যবাহিনীর ডান পার্শ্বের অধিনায়কত্ব ছিলো তাঁর হাতে, আর বাম পার্শ্বের অধিনায়কত্ব ছিলো আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাসের হাতে। ইরাকের ক্বারীরা ‘আম্মার ইয়াসির, ক্বায়স্ ইবনে সা‘দ ও আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীলের চারপাশে জড়ো হয়েছিলেন।৯০
আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীল্ আক্রমণ শুরু করার আগে স্বীয় সঙ্গীদের উদ্দেশে বললেন, “মু‘আবিয়াহ্ এমন এক পদ দাবি করেছে যার মালিক সে নয়। বরং সে এর প্রকৃত মালিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে এবং মিথ্যা চিন্তÍা ও যুক্তি নিয়ে সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। সে বেদুঈন আরবদেরকে ও বিভিন্ন দল-উপদলকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে এবং পথভ্রষ্টতাকে তাদের জন্য সুন্দর হিসেবে প্রতিভাত করেছে।”
এরপর তিনি বলেন ঃ
وَ أنْتُمْ وَ اللهِ عَلَي نُورٍ مِنْ رَبِِّكُمْ وَ بُرهَانٍ مُبِيِنٍ. قَاتِلُوا الطُّغَاةَ الْجُفَاةَ وَ لاَ تَخْشَوْهُمْ وَ كَيفَ تَخْشَونَهُمْ وَ فِي أيدِيكُمْ كِتَابٌ مِن رَبِّكُمْ ظَاهِرٌ مَبْرُورٌ ... وَ قَدْ قَاتَلْتُهُمْ مَعَ النَّبِيّ وَ اللهُ ما هُمْ فِي هَذِهِِ بِِأَزكَيٰ وَ لاَ اَتْقَيٰ وَ لاَ أَبَرُّ. قُومُوا إلَي عَدُوِّ اللهِ وَ عَدُوِّكُمْ.
“আল্লাহ্র শপথ, তোমরা আল্লাহ্র নূর ও সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছো। এসব অবাধ্য অনাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো এবং তাদেরকে ভয় করো না। তোমরা কেনো তাদের থেকে ভয় করবে যখন তোমাদের হাতে রয়েছে আল্লাহ্র কিতাব Ñ যা সুস্পষ্ট ও গ্রহণকৃত? তোমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে থেকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলে। আর আল্লাহ্র শপথ, তারা বর্তমানে সে যুগের তুলনায় পবিত্রতর বা সৎকর্মশীলতর নয়। নেমে পড়ো এবং আল্লাহ্র ও তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো।”৯১
তিনি সেনাবাহিনীর ডান দিকের অংশ পরিচালনার পাশাপাশি দু’টি বর্ম পরিধান করে উভয় হাতে তলোয়ার নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করেন। প্রথম হামলায়ই তাঁর সামনে থেকে মু‘আবিয়ার সৈন্যদেরকে সরিয়ে দিতে এবং শাম বাহিনীর বাম দিককার অংশের সেনাপতি হাবীব বিন্ মুসলিমাহ্র বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। তাঁর সর্বাত্মক চেষ্টা ছিলো এই যে, তিনি মু‘আবিয়ার তাঁবুতে উপনীত হবেন এবং এ বিপর্যয়ের হোতাকে নির্মূল করবেন। মু‘আবিয়ার যে প্রহরীরা তাঁকে নিজেদের মৃত্যুর বিনিময়েও রক্ষা করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিলো তারা পাঁচ সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলো, অন্যকথায় মু‘আবিয়ার চারদিকে পাঁচটি নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরী করে তাঁকে ঘিরে রেখেছিলো; তারা আবদুল্লাহ্র অগ্রযাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। তবে এসব নিরাপত্তা প্রাচীর খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে নি, বরং একটির পর একটি ধ্বসে পড়তে লাগলো। কিন্তু আবদুল্লাহ্র হামলা বিস্ময়করভাবে বীরত্বব্যঞ্জক হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি মু‘আবিয়ার চৌকির নিকট পৌঁছার আগেই ধরাশায়ী ও নিহত হন।৯২
ইবনে জারীর ত্বাবারী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে এ ঘটনাকে ইবনে মুযাহিমের “ওয়াক্ব‘এ-এ ছিফ্ফীন” গ্রন্থের সূত্রে আরো স্পষ্ট করে লিখেছেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ্ শত্রু বাহিনীর বামদিকে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এবং মালেক আর্শ্তা শত্রু বাহিনীর ডানদিকে আক্রমণ চালাচ্ছিলেন। মালেক লৌহবর্মে আচ্ছাদিত ছিলেন এবং তাঁর হাতে একটি ইয়ামানী ধাতব ফলক ছিলো। তিনি যখন সেটা নিচে নামাচ্ছিলেন তখন মনে হচ্ছিল যে, তা থেকে পানি ঝরে পড়ছে, আর যখন সেটা উঁচু করছিলেন তখন তা থেকে আলোর ঝলকানি দৃষ্টিগুলোকে ঝলসে দিচ্ছিলো। তিনি তাঁর আক্রমণ দ্বারা শত্রু বাহিনীর ডানদিক ল-ভ- করে দেন এবং এমন এক স্থানে পৌঁছে গেলেন যেখানে আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীল্ প্রায় তিনশ’ ক্বারীকে নিয়ে সেখানে পৌঁছেছিলেন।৯৩ তিনি আবদুল্লাহ্র সঙ্গীদেরকে মৃতের মতো মাটিতে লেপ্টে থাকা অবস্থায় দেখতে পেলেন। মালেক তাদের চারপাশ থেকে শত্রুদেরকে হটিয়ে দিলেন। তাঁরা মালেক আশ্তারকে দেখে আনন্দিত হলেন এবং দ্রুত ইমাম (আঃ)-এর খবর জিজ্ঞেস করলেন। তাঁরা যখন জানতে পেলেন যে, তিনি সুস্থ আছেন এবং স্বীয় বাহিনীকে সাথে নিযে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তখন তাঁরা আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করলেন।
এমতাবস্থায় আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীল্ তাঁর কমসংখ্যক সৈন্যকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছিলেন এবং চাচ্ছিলেন যে, মু‘আবিয়ার প্রহরীদেরকে হত্যা করার পর স্বয়ং তাঁকে বন্দী করবেন। কিন্তু আশ্তার তাঁকে অগ্রসর না হওয়ার এবং যে স্থানে রয়েছেন সেখানে থেকেই আত্মরক্ষা করার জন্য বার্তা পাঠালেন।৯৪
কিন্তু আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীল্ মনে করছিলেন যে, এক ঝটিকা আক্রমণের মাধ্যমে শত্রুবাহিনীর ব্যুহ ভেদ করে মু‘আবিয়াকে আটক করতে সক্ষম হবেন। এ কারণে তিনি তাঁর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখলেন এবং প্রত্যেকে একটি করে তলোয়ার নিয়ে নিজ সঙ্গী-সাথীদের সহযোগে আক্রমণ শুরু করলেন। তাঁরা সামনে যাকেই পাচ্ছিলেন তাকেই একেক কোপে ধরাশায়ী করছিলেন এবং এত বেশী এগিয়ে গেলেন যে, মু‘আবিয়াহ্ তাঁর চৌকি সরিয়ে নিতে বাধ্য হলেন।৯৫
আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীলের আক্রমণে একটি আশ্চর্যজনক বিষয় ছিলো এই যে, মু‘আবিয়ার প্রহরীদের সাথে লড়াইয়ের সময় তিনি “হে ওসমানের খুনের প্রতিশোধকারী!” বলে শ্লোগান দিচ্ছিলেন। তাঁর “ওসমান” বলে শ্লোগান দেয়ার উদ্দেশ্য ছিলো তাঁর ভাই ওসমান যে এ যুদ্ধে নিহত হয়েছিলো। কিন্তু শত্রুরা এ থেকে অন্য কিছু ধারণা করলো এবং আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলো যে, কীভাবে আবদুল্লাহ্ লোকদেরকে ওসমানের রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণে আহ্বান জানাচ্ছেন!
অবশেষে অবস্থা এতদূর গড়ালো যে, মু‘আবিয়াহ্ সাত্যিকার অর্থেই তাঁর জীবনের ওপর বিপদের আশঙ্কা করলেন। তিনি তাঁর সেনাপতি হাবীব ইবনে মুসলিমাহ্কে তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য বার বার বার্তা পাঠালেন। কিন্তু হাবীবের প্রচেষ্টায় কোনো ফল হলো না এবং হাবীব আবদুল্লাহ্্কে তাঁর লক্ষ্য থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হলো। মু‘আবিয়ার চৌকি থেকে তিনি আর বেশি দূরে ছিলেন না। মু‘আবিয়াহ্ অন্য কোনো উপায় না দেখে তাঁর দেহরক্ষীদেরকে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে তাদের সাথে যুদ্ধে নেমে পড়ার নির্দেশ দিলেন। এ কৌশলটি কার্যকর হলো। মু‘আবিয়ার দেহরক্ষীরা স্বল্পসংখ্যক সৈন্য দ্বারা পরিবেষ্টিত আবদুল্লাহ্্কে পাথর নিক্ষেপের মাধ্যমে কাবু করে ফেললো এবং তিনি ক্ষতবিক্ষত দেহে মাটিতে পড়ে গেলেন।৯৬
এভাবে মু‘আবিয়াহ্ নির্ঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেন এবং সে আনন্দ রাখার তাঁর জায়গা ছিলো না। এমতাবস্থায় তিনি আবদুল্লাহ্র লাশের পাশে এসে উপস্থিত হলেন। এ সময় মু‘আবিয়ার একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি আবদুল্লাহ্ ইবনে ‘আমের স্বীয় পাগড়ি আবদুল্লাহ্র মুখের ওপরে বিছিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য রহমত কামনা করলেন। মু‘আবিয়াহ্ তা আবদুল্লাহ্র মুখের ওপর থেকে সরিয়ে ফেলতে পীড়াপীড়ি করলেন, কিন্তু ইবনে ‘আমের তাতে অস্বীকৃতি জানালেন। কারণ, অতীতে আবদুল্লাহ্ তাঁর বন্ধু ছিলেন। মু‘আবিয়াহ্ তাঁর হাত-পা কর্তন করবেন না Ñ এ প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরই কেবল ইমাম (আঃ)-এর এ বীর সেনাপতির চেহারা দেখার সুযোগ পেলেন।
আবদুল্লাহ্র চেহারার ওপর মু‘আবিয়ার দৃষ্টি পড়লে তিনি বললেন ঃ
هَذَا وَ اللهِ كَبْشُ الْقَوْمِ. وَ رَبِّ الكَعْبَةِ اللَّهُمَّ أَظْفِرْنِي بِالْأشْتَرِ النَّخْعِي وَ الْأشْعَثِ الكِنْدِي.
“আল্লাহ্র শপথ, এ হলো এই জনসমষ্টির নেতা। হে আল্লাহ্! আমাকে আরো দু’জন বীর আশ্তার নাখ্ঈ এবং আশ্‘আছ্ কিন্দীর ওপরও বিজয়দান করো।”৯৭
অতঃপর তিনি আবদুল্লাহ্র অতুলনীয় বীরত্বের প্রশংসায় ‘আদি ইবনে হাতেমের কবিতা থেকে উপমা তুলে ধরলেন যার প্রথম দুই ছত্র এই ঃ
أخُ الْحَرْبِ إِنْ عَضَّتْ بِهِ الْحَرْبُ عَضَّهَا وَ إنْ شَمَّرَتْ عَنْ سَاقَيهَا الْحَرْبُ شَمَّرا
“যোদ্ধাপুরুষ হলো সেই ব্যক্তি যাকে যুদ্ধ যদি ভয় দেখায় তাহলে সে-ও সেরূপ করে/ আর যুদ্ধ যদি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, সে-ও ঝাঁপিয়ে পড়ে।”৯৮
লাইলাতুল হারীর অবধি যুদ্ধ অব্যাহত
হযরত আলী (আঃ)-এর অনুসারীবৃন্দ ও মু‘আবিয়ার সমর্থকদের মধ্যে আসল যুদ্ধ মূলতঃ ৩৮ হিজরীর সফর মাসের গোড়া থেকে শুরু হয় এবং ঐ মাসের ১৩ তারিখের সন্ধ্যা পর্যন্তÍ চলে।৯৯ ঐতিহাসিকরা ঐ মাসের মধ্যবর্তী রাতকে ‘লাইলাতুল হারীর’ বলে আখ্যায়িত করেন। আরবী “হারীর” শব্দের অর্থ হলো ‘কুকুরের আর্তনাদ’। কারণ, ঐ রাতে মু‘আবিয়ার সৈন্যরা ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদের আক্রমণের মুখে কুকুরের মতো আর্তনাদ শুরু করে দেয় এবং মু‘আবিয়াহ্ ও Ÿানূ উমাইয়্যাহ্র ক্ষমতার মসনদ উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। হঠাৎ করে ‘আম্র্ ইবনুল্ ‘আছ্ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এবং ইমাম (আঃ)-এর সৈন্যদের মাঝে মতপার্থক্য সৃষ্টির মাধ্যমে এ রক্তক্ষয়ী ও ভাগ্যনির্ধারণী যুদ্ধকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হন। অবশেষে ১৭ সফর জুম‘আর দিন ঘটনা সালিস-মীমাংসায় গড়ায় এবং সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
ঐতিহাসিকরা ছিফ্ফীনের ঘটনাবলীকে ধারাবাহিকভাবে সফর মাসের ১০ তারিখ পর্যন্তÍ বলে লিপিবদ্ধ করেছেন।১০০ কিন্তু তার পর থেকে ঘটনাসমূহের বর্ণনাধারা শৃঙ্খলের ন্যায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে নি। ইতিহাস অনুসন্ধানীদেরকে এ ক্ষেত্রে স্বীয় ইতিহাসজ্ঞান দ্বারা এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা নির্ণয় করতে হবে। আমরাও এখানে লাইলাতুল হারীর পর্যন্তÍ এই ক’দিনের ঘটনাপ্রবাহকে একভাবে উপস্থাপন করবো।
দশম দিনের ঘটনাবলী
দিগন্তÍভেদ করে ১০ সফরের সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছিলো এবং রক্তের একটি ডোবার ন্যায় ছিফ্ফীনের মরু প্রান্তÍরকে স্বীয় রশ্মি দ্বারা আলোকিত করে তুলেছিলো। ইমাম (আঃ)-এর ভক্ত শাহাদাত-প্রেমিকগণ অর্থাৎ রাবি‘আহ্ গোত্রের সৈন্যরা চোখের মণির মতো তাঁকে চারপাশ থেকে পরিবেষ্টন করে ছিলো। তাদের মধ্য থেকে একজন সেনাপতি উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন ঃ مَنْ يبَايعُ نَفْسَهُ عَلَي الْمَوْتِ وَ يشْرِي نَفْسَهُ لِلّهِ “কে আছে নিজেকে মৃত্যুর কাছে বিক্রি করে দেবে এবং আল্লাহ্র জন্য স্বীয় প্রাণকে বিক্রয় করবে?”
এ সময় সাত হাজার লোক উঠে দাঁড়ালো এবং উপরোক্ত পদ্ধতিতে স্বীয় সেনাপতির হাতে বাই‘আত হলো। তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো যে, এমনভাবে অগ্রসর হবে যাতে মু‘আবিয়াহ্র চৌকিতে প্রবেশ করতে পারে এবং কোনো অবস্থাতেই পিছনে তাকাবে না। তাদের ভক্তির পরিচয় তুলে ধরার জন্য এতটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট যে, তাদের একজন উঠে দাঁড়িয়ে বললো ঃ
لَيسَ لَكُمْ عُذْرٌ فِي العَرَبِ إِنْ أَُصيبَ عَلِيٌّ فِيكُمْ، وَ مِنْكُمْ رَجُلٌ حَيٌّ.
“তোমরা কখনো আরবে জনগণের সামনে ক্ষমার পাত্র হবে না যদি তোমাদের মধ্যে একজনও বেঁচে থাকে অথচ আলীর কোনো ক্ষতি হয়।”
মু‘আবিয়াহ্ যখন রাবি‘আহ্ গোত্রের লোকদের এ বীরত্ব ও সাহসিকতার দৃশ্য দেখলেন তখন মনের অজান্তেÍ তাদের প্রশংসায় এ কবিতাটি আবৃত্তি করলেন ঃ
إذَا قُلْتَ قَدْ وَلَّتْ رَبِيعَةُ اَقْبَلَتْ كَتائِبُ مِنْهُمْ كَالْجِبَالِ تُجَالِدُ
“যদি বলো যে, রাবি‘আহ্ গোত্র ময়দান থেকে পিছু হটেছে তাহলে/ হঠাৎই দেখবে, তাদের বড় একটি দল পর্বতের ন্যায় যুদ্ধ করছে।”১০১
ডান পার্শ্বের সেনাদলের পুনর্বিন্যাস
রাবি‘আহ্র অটলতার বিপরীতে মুদার গোত্র তেমন বিশ্বস্ততার পরিচয় দেয় নি। সেনাপতি আবদুল্লাহ্ ইবনে বাদীলের নিহত হওয়া এবং মুদার গোত্রের ময়দান থেকে পলায়নের কারণে ইমাম (আঃ)-এর ডান পার্শ্বের সেনাদলের পরাজয় ঘটে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, সেখানকার সৈন্যরা সেনাবাহিনীর মধ্যভাগে এসে যুক্ত হয় Ñ যেখানে অধিনায়ক ছিলেন স্বয়ং ইমাম (আঃ)। ভেঙ্গে পড়া ডান পার্শ্বকে পুনর্বিন্যাস করার জন্য ইমাম (আঃ) সাহ্ল্ ইবনে হুনাইফকে সেখানকার সেনাপতি নিয়োগ করে পাঠালেন। কিন্তু হাবীব ইবনে মুসলিমাহ্র সেনাপতিত্বে শাম বাহিনীর সৈন্যরা বন্যার ঢলের ন্যায় আক্রমণ চালায়। ফলে ইমাম (আঃ)-এর ডান পার্শ্বের বাহিনীর ছত্রভঙ্গ অবস্থা পুনর্বিন্যস্ত করার কোনো সুযোগই ছিলো না। ইমাম (আঃ) যখন ডানপার্শ্বের বাহিনীতে মুদার গোত্রের নড়বড়ে অবস্থার কথা জানতে পারলেন তখন মালেক আশ্তারকে সামনে ডাকলেন এবং তাঁকে নির্দেশ দিলেন যে, যারা ইসলামী শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে তাদেরকে বলতে হবে ঃ
اَينَ فِرارُكُمْ مِنَ الْمَوْتِ الَّذِي لَنْ تُعْجِزُوهُ اِلَي الْحَياةِ الَّتِي لاَ تَبْقَيٰ لَكُمْ.
“যে মৃত্যুর মোকাবিলা করার ক্ষমতা তোমাদের নেই তা থেকে নশ্বর জীবনের দিকে পলায়ন করছো?”১০২
পরাজয়ের পর ডান পার্শ্বের বাহিনীর পুনর্বিন্যাস সম্পন্ন হওয়ার খবর পেয়ে ইমাম খুশি হলেন। এ কারণে তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন ঃ
فَإنَّ الْفِرارُ فِيهِ سَلْبُ الْعِزِّ وَ الْغَلَبَةُ عَلَي الْفَيءِ وَ ذُلُّ الْحَيَاةِ وَ الْمَماتِ وَ عارُ الْدُّنيا وَ الآخِرَةِ وَ سَخَطُ اللهِ و ألِيمُ عِقابِهِ.
“জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন সম্মান ক্ষুণœ হওয়ার কারণ হয় এবং বায়তুলমালকে হারানোর ও জীবন-মরণের জন্য অসম্মান আর দুনিয়া ও পরকালের জন্য লজ্জা ; এছাড়া আল্লাহর ক্রোধ ও তাঁর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ব্যাপৃত হওয়ার কারণ হয়।”
অতঃপর বলেন ঃ তোমাদের দাঁতসমূহকে একে অপরের সাথে শক্তভাবে চাপ দাও এবং তোমাদের মাথাসমূহ দ্বারা শত্রুদের অভ্যর্থনায় এগিয়ে যাও। এই কথা বলেই তিনি ডানপার্শে¦র বাহিনীকে তৈরী করলেন এবং স্বয়ং আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আর মুআবিয়ার বাম পার্শ্বের বাহিনীকে - যা ইমামের বাহিনীর ডান পার্শ্বে অবস্থান করছিল, পিছু হটিয়ে দেন এমনভাবে যে তারা মুআবিয়া বাহিনীর কেন্দ্রীয় ভাগের সাথে যোগ দিতে বাধ্য হয়।১০৩
ডান পার্শ্বের বাহিনীর পরাজয়ের পর পুনরায় সুসজ্জিত হওয়ার কারণে ইমাম (আঃ) খুশি হলেন। একারণে তাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন ঃ
فَاْلآنَ فَاصْبِرُوا أُنْزِلَتْ عَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ وَ ثَبَّتَكُمُ اللهُ بِالْيقِيِنِ وَ لِْيَعْلَمِ الْمُهْزَمُ بِاَنَّهُ مُسْخِطٌ لِرَبِّهِ وَ مُوبِقٌ نَفْسَهُ. وَ فِي الْفِرارِ مُوجِدَةُ اللهِ عَلَيهِ وَ الذُّلٌّ اللازِمُ أوِ الْعَارُ الْبَاقِي.
“এখন ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ী হও। আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তোমাদের ওপর শান্তিÍ ও স্থিতিশীলতা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তিনি তোমাদেরকে নিশ্চিত বিশ্বাস দ্বারা দৃঢ়পদ করেছেন। আর ময়দানে ব্যর্থ হওয়া ব্যক্তিরা যেন জানে যে, তারা নিজেদেরকে আল্লাহ্র ক্রোধের এবং বিপদের সম্মুখীন করেছে। যুদ্ধ থেকে পলায়নের মধ্যে আল্লাহ্র ক্রোধ আর লাঞ্ছনা নিহিত রয়েছে।”১০৪
নিজেই হত্যা করো আর নিজেই শোক করো!
মাঅরিব হলো ছান্আ’র উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি শহরের নাম। শহরটি তার বিরাট বাঁধের জন্য বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিলো Ñ যা ৫৪২ থেকে ৫৭০ হিজরীর মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ইয়ামানের গোত্রসমূহ এ বাঁধের কল্যাণে উন্নত সভ্যতা গড়ে তুলতে এবং কৃষিকাজের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। ইরাম নামক বিখ্যাত বন্যার দ্বারা বাঁধটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তারা আরব উপদ্বীপের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে। এদের অধিকাংশই শাম, জর্দান, ফিলিস্তিন ও ইরাকে চলে যায়। কিন্তু বিক্ষিপ্ত হওয়ার পরেও তারা তাদের গোত্রের সাথে পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। এ কারণে আমরা আয্দ্, মুদার, কিন্দাহ, কুযা‘আহ ও রাবি‘আহ্ গোত্রসমূহের কয়েকটি শাখাকে ইরাক, শাম, জর্দান ও ফিলিস্তিনে বসবাস করতে দেখতে পাই।
সৈন্য বিন্যাসে ইমাম (আঃ)-এর নীতি ছিলো এই যে, ইরাকে যে গোত্রই বসবাস করতো তারা শত্রুবাহিনীর মধ্যকার ঐ গোত্রের লোকদেরই মুখোমুখি হবে Ñ যারা ইরাক ভিন্ন অন্যত্র বসবাস করে। কারণ, এই মুখোমুখি অবস্থা তাদের মধ্যে নমনীয়তা সৃষ্টি করতে সহায়ক হতে পারতো এবং রক্তপাত এড়াতে পারতো।১০৫
একদিন আবদুল্লাহ্ নামক শামের খাছ‘্আম গোত্রের এক ব্যক্তি ইরাকের খাছ‘্আম গোত্রপতির সাথে সাক্ষাতের আবেদন করলো। কিছুক্ষণ পরেই সাক্ষাত মিললো। শামের লোকটি বললো যে, খাছ‘্আম গোত্রভুক্ত উভয় গোষ্ঠীই যুদ্ধ থেকে বিরত হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করবে, অতঃপর দুই পক্ষের মধ্যে যারা যুদ্ধে জয়লাভ করবে তাকেই অনুসরণ করবে। কিন্তু এ দুই নেতার মধ্যকার বৈঠক সফল হলো না। কারণ ইরাকের খাছ‘্আম গোত্রপতি কোনক্রমেই এ প্রস্তাব মেনে নিলেন না এবং ইমাম (আঃ)-এর পক্ষ ত্যাগ করতে রাজি হলেন না। কাজেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ‘একজনের বিপরীতে একজন’ পদ্ধতিতে যুদ্ধ শুরু হলো।
ওহাব ইবনে মাস‘উদ খাছ্‘আমী ইরাকী তার শামের প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করে ফেললো। আর বিপরীতক্রমে শামের খাছ্‘আমীদের একজন ইরাকের খাছ‘্আমী নেতার ওপরে আক্রমণ চালায় এবং আবু কা‘বকে ধরাশায়ী করে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করার পর তৎক্ষণাৎ নিহতের জন্য সে কাঁদতে শুরু করলো এবং বললো, “আমি তোমাকে মু‘আবিয়াহ্র অনুসরণ করার কারণে হত্যা করেছি, অথচ তুমি আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিলে এবং তাদের চেয়ে তোমাকে বেশী ভালবাসতাম। আল্লাহ্র শপথ, আমি কী বলবো জানি না, শুধু এটাই জানি যে, শয়তান আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে আর কুরাইশ আমাদেরকে তাদের হাতের পুতুল বানিয়েছে।”
একই গোত্রের দু’জন লোকের মধ্যে সংঘটিত এ ধরনের দ্বন্দ্বযুদ্ধে বিভিন্ন গোত্রের মধ্য থেকে উভয় পক্ষের ৮০ জন লোক নিহত হয়।১০৬
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
এ ধরনের ঘটনা নযীর বিহীন নয়। ছিফ্ফীনের যুদ্ধে এর বেশ কিছু দৃষ্টান্তÍ রয়েছে যার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো ঃ
১) হযরত ইমামের পক্ষের একজন সৈন্য নাঈম ইবনে ছূুহাইব বাজালী নিহত হলো। তার চাচাতো ভাই নাঈম ইবনে হারেছ বাজালী ছিলো মু‘আবি‘আহ্র বাহিনীর সৈন্য। সে তার চাচাতো ভাইয়ের লাশকে দাফন করবে বলে মু‘আবিয়ার কাছে পীড়াপীড়ি করলো। কিন্তু তিনি অনুমতি দিলেন না এবং অজুহাত প্রদর্শন করলেন যে, হযরত ওসমানকে এ দলের ভয়ে রাতের বেলা দাফন করা হয়। তখন নাঈম ইবনে হারেছ বললো, “এ কাজ করতে দিতে হবে, নচেৎ আপনার পক্ষ ত্যাগ করবো এবং আলীর সাথে যোগ দেবো।”
অবশেষে মু‘আবিয়াহ্ তাকে তার চাচাতো ভাইয়ের লাশকে দাফন করার অনুমতি দিলেন।১০৭
২) আয্দ্ গোত্রের দু’টি গোষ্ঠী পরস্পর মুখোমুখি হলো। তাদের মধ্য থেকে একজন নেতা বললো ঃ “সবচেয়ে বড় বিপদসমূহের অন্যতম এই যে, একই গোত্রের দু’টি গোষ্ঠী পরস্পর মুখোমুখি হয়েছে। আল্লাহ্র শপথ, এ যুদ্ধে আমরা নিজেদের হাত-পাগুলোকে কর্তন করা ছাড়া আর কিছুই করবো না। আর যদি তা না করি তাহলে আমাদের নেতা ও গোত্রকে সাহায্য করলাম। আর যদি আঞ্জাম দেই তাহলে নিজ সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করলাম এবং নিজ জীবনের আগুনকে নিভিয়ে দিলাম।”১০৮
৩) শাম বাহিনীর একজন যোদ্ধা রণাঙ্গনে প্রবেশ করলো এবং শত্রুসৈন্যকে যুদ্ধে আহ্বান জানালো। এ সময় ইরাকের এক যোদ্ধা ময়দানে প্রবেশ করলো এবং উভয়ের মধ্যে প্রচ- লড়াই চললো। অবশেষে ইরাকী সৈন্যটি গলা ধাক্কা দিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দিলো এবং তার বুকের ওপর উঠে বসলো। সে যখন শামী সৈন্যটির মুখের ওপর থেকে কাপড় সরালো তখন দেখতে পেলো যে, এ হচ্ছে তার সহোদর ভাই! সে তখন ইমাম (আঃ)-এর সঙ্গীদের কাছে আবেদন করলো ইমাম যেন তার ব্যাপারে সিদ্ধান্তÍ দেন। ইমাম (আঃ) তাকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন । সে তা-ই করলো। দুঃখজনকভাবে লোকটি পুনরায় মু‘আবিয়ার সৈন্যদলে যোগ দিল।১০৯
৪) মু‘আবিয়াহ্র বাহিনীর সুওয়াইদ নামক একজন সৈন্য রণাঙ্গনে উপস্থিত হলো এবং বিপক্ষীয় যোদ্ধাকে আহ্বান জানালো। এ সময় ক্বায়স্ নামক ইমাম (আঃ)-এর বাহিনীর এক যোদ্ধা ময়দানে এলো। উভয় যখন পরস্পর মুখোমুখি হলো তখন প্রত্যেকই একে অপরকে স্বীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানালো। ইরাকী লোকটি ইমাম (আঃ)-এর গুণাবলী সম্পর্কে তার চাচাতো ভাইর নিকট বর্ণনা দিলো এবং বললো, “যে আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই তাঁর শপথ, যদি পারি তাহলে এই তলোয়ার দ্বারা এমনভাবে ঐ সাদা তাঁবুর (অর্থাৎ মু‘আবিয়ার তাঁবুর) ওপর আঘাত করবো যে, তার মইলকের কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট থাকবে না।”১১০
ইমাম (আঃ)-এর দলে শিম্র্ বিন যিল্ জাওশান
ইতিহাসের একটি বিস্ময় হলো (যে বিস্ময়ের কোনো অন্তÍ নেই) ছিফ্ফিনের যুদ্ধে শিম্র্ বিন্ যিল্ জাওশান্ ইমাম (আঃ)-এর একজন একনিষ্ঠ সৈনিক ছিলো। আদ্হাম্ নামক শামের এক সৈনিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সে কপালে এমন প্রচ- আঘাত পায় যার ফলে তার কপালের হাড় চূর্ণ হয়ে যায়। সে-ও তখন প্রতিঘাত করার জন্য উঠে পড়ে এবং একটি জোরালো আঘাত করে Ñ যা কার্যকর হয় নি। তখন শিম্র্ পুনরায় শক্তি সঞ্চয়ের জন্য স্বীয় তাঁবুতে ফিরে এলো, কিছুটা পানি পান করলো, তারপর পুনরায় রণাঙ্গনে ফিরে গেলো এবং লক্ষ্য করলো যে, তার শামী প্রতিপক্ষ অটল দ-ায়মান রয়েছে। সে শামী লোকটিকে কোনো সুযোগ না দিয়েই বর্শা দ্বারা এমনভাবে আঘাত করলো যে, লোকটি তার ঘোড়ার ওপর থেকে মাটিতে পড়ে গেলো। অন্য শামীরা তার সাহায্যে এগিয়ে না এলে সেখানেই তার দফা রফা হয়ে যেতো।
অতঃপর শিম্র্ বললো, “এ বর্শার এ আঘাত হলো ঐ আঘাতের জবাব।”১১১
চলবে...।
©somewhere in net ltd.