![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইমাম জাফর সাদিক (আ.)
শিয়া মাযহাবের স্বর্ণোজ্জল ইতিহাস যা প্রকৃত ইসলামের ঘটনাবহুল ইতিহাস হিসাবে বিবেচিত, তার প্রতিটি পাতা মানুষের মধ্যে প্রকৃত মানুষের স্বরূপ তুলে ধরেছে; যারা ছিলেন প্রতিটি জামানায় ভুল পথে চলা মানুষের জন্য সত্য ও সঠিক পথের আলোর দিশারী ও উদ্ধারকারী। সঠিক ও অবিচ্যুত ইসলাম, সাকিফার ভয়ানক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে ইসলামী ইরানের সবুজ সমতল ভূমি পর্যন্ত; প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই মহান ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিতিতে তা দীপ্তমান হয়েছে এবং তাদের উচ্চমান সম্পন্ন জ্ঞান ও ফযিলত ছিল ছায়া পরিবেষ্টিত প্রশান্তিময় পথনির্দেশনা যা সত্যের প্রতি ভালবাসার অনুশীলন করিয়েছিলেন। আর ইসলাম, জালেম ও অত্যাচারিদের আত্মসাৎ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ ও নবীকে (সা.) নিষ্কলুষভাবে অনুসন্ধান করত। ইসলামের দিগন্তে শিয়া, ভালবাসার দীপ্তিস্বরূপ এবং উজ্জল প্রতিক যেমন সালমান ও আবু যারের মত অনুসারীদের দিয়ে শুরু হয়েছে, যা চোখে পড়ার মত ও বিবেকের পাতায় দাগ কেটে যায়। আর স্বাধীনচেতা যেমন মির্যা সিরাজী ও ইমাম খোমেনীর(রঃ) মত মানুষের দ্বারা সমাপ্ত হয়। কে না জানে যে, ঝর্ণার নির্মল পানির মত সর্বদা এই অটল বিশ্বাস ও আমল, যা অহী ও নবুয়্যত সংশি−ষ্ট সমুদ্রের তরঙ্গ এবং এই প্রশংসনীয় সমতল ভূমির আশা ও আত্মত্যাগ, ইমামত ও ইস্মাতের বাগানে জন্মানো গাছের শাখা-প্রশাখা? ইমামত হচ্ছে নবী (সা.)-এর পবিত্র পরিবারেরই অংশ। যারা নিজের রক্ত দিয়ে নবী (সা.)-এর রেখে যাওয়া পথকে অব্যাহত রেখেছেন। আর নিজেদের শক্তি দিয়ে স্কন্ধে করে কোরআন ও তাওহীদের সূর্যকে বহন করতেন। তাঁরা ইতিহাস বিকৃতকারীদের হাত থেকে ইসলামের নাজাত ও তা সংরক্ষণের অধিক উচ্চতর উপাদান ছিলেন। কোন অন্ধ ব্যক্তি ছাড়া, অথবা কেউ নিজের চোখকে অস্বীকার করা ব্যতীত, নবী (সা.)-এর ইসলামের ভাগ্যে আসা দুঃখ-দূর্দশার মত এতবড় সত্যকে দেখেও না দেখার ভান করতে পারবে না। কেননা ইসলামের শত্রুদের ও জাহিল ধর্মহীন শাসকদের প্রতিটি নিক্ষেপিত পাথর বিভিন্ন ভাবে বা বিভিন্ন অবস্থায় ইসলামের গায়ে এসে লেগেছে। অথবা শিয়াদের ইমামগণের বুকে বেধেছে। অথবা তাদের প্রকৃত অনুসারীদের উপর ..... হ্যা, আমাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান বিশিষ্ট মহান ইমামগণ প্রতিটি নিক্ষেপিত পাথরের ও বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দঁড়িয়েছিলেন, এ কারণে যে, ইসলাম যেন কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। অতীত শতাব্দীর উপত্যকা ভ্রমণকারীরা সর্বদা প্রকৃত ইসলামের ফোয়ারার পানিতে, ক্রোধহীন পথে চলেছেন এবং দেখা গেছে যে যোগ্যতা সম্পন্নরা এই রাস্তায় এভাবেই পথ চলেছেন। আর যদি শত্রুরা তাদের উপর কোন প্রকার অত্যাচার না করতো তাহলে ঐ দীপ্তিময় নির্মল পানির ফোয়ারাগুলো যা প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের জন্যে দৃষ্টিমান তা কখনই ধুলা বালির স্তুপে পরিণত হত না ...... আমাদের সম্মানিত মাওলা, ইমামতের আকাশের ষষ্ট সূর্য, দীপ্তিমান, তার ঐশ্বরিক জ্ঞানের দ্বারা ইসলামকে এমন আলোকময় করলেন ?ঠিক পূর্বে যেভাবে হুসাইন (আ.) তাঁর দ্বীপ্তশালী ব্যক্তিত্ব, বিরত্ব ও নিজের রক্ত দিয়ে ইসলামকে পবিত্র রেখেছিলেন ........ আমরা জা’ফারী মাযহাবের, আর এ কারণেই গর্ববোধ করি। কেননা ইসলাম যদি নবী (সা.)-এর ইসলাম হয়, তাহলে অবশ্যই তার পয়গাম ইমাম হুসাইন (আ.) ও তার শিক্ষণীয় বক্তব্যকে ইমাম জা’ফর সাদিক (আ.)-এর কাছ থেকে শিখতে হবে। আর ইসলাম যদি অত্যাচারিদের বা নবী পরিবারের বিপক্ষবাদীদের ইসলাম হয়, তাহলে আমরা মুসলমান না হয়ে গর্ববোধ করব। আমাদের সম্মানিত মাওলা, নবী (সা.)-এর বংশের যোগ্য উত্তরসূরী সাদিক (আ.) আমাদের ঈমান ও বিশ্বাসের উপর ঐরূপ অধিকার রাখেন যেরূপভাবে আলী (আ.)-এর জিহাদ, হাসান (আ.)-এর সন্ধি চুক্তি, হুসাইন (আ.)-এর শাহাদতের রক্ত, যাহরা ও যয়নাব (সালাঃ)-এর চোখের পানি আমাদের উপর অধিকার রাখে। কেননা এগুলির মাধ্যমে আসা ইসলামই হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম। আর সে কারণেই আমাদের মাযহাব জা’ফরী। আর ইসলাম যদি ঐ ইসলাম হয় যে, জবরদখল করে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে অবৈধ ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার চেয়ারে বসে যা যাহরাকে (সালাঃ) রাগান্বিত করে তাহলে বলব যে, আমরা কখনও মুসলমান ছিলাম না। আর আল্লাহকে সাক্ষ্য রাখব যে, কখনও যেন এমন ইসলামকে মানুষের উপর প্রতিষ্টিত না করেন! কেননা যে ইসলাম থেকে নবী (সা.)-এর পরিবার আলাদা থাকেন এবং যাদের ক্ষমতার দ্যুতি, প্রতাপ ও মহত্বকে মু’য়াবিয়ারা, ইয়াযিদরা, হারুনরা ও মুতাওয়াক্কেলরা অবৈধভাবে দখলকরে নিজেদেরকে তাদের প্রতিনিধি হিসাবে পরিচয় দেয় ঐ ইসলাম কখনই জা’ফর সাদিক (আ.)-এর ইসলাম নয়। সুতরাং ঐ ইসলাম আমাদেরও ইসলাম নয় ........ মহান ইমাম জা’ফার বিন মুহাম্মদ (আ.)-এর জ্ঞান বিষয়ক আন্দোলন ইসলামের শিক্ষা- দীক্ষার দিগন্তকে এত পরিমাণে উচ্চতায় পৌছে দিয়েছিল যা উমাইয়্যা খলিফাদের কোন প্রকার অপচেষ্টাই তার স্ফুটিত অন্তর দৃষ্টির নূরের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। আরও দেখবো যে এক যুগ পরে যখন অষ্টম ইমাম আলী বিন মুসা (আ.) নিশাপুরে আসেন, তাঁর প্রেমে আসক্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ নিঃশ্চুপ ও নিরব অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল বক্তব্য শোনার জন্য। আর যাদি এই ঘটনাকে আরেকটি ঘটনার সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি তাহলে দেখব যে, যখন মহান ইমাম যয়নুল আবেদ্বীন (আ.) বন্দী অবস্থায় নবী পরিবারকে সাথে নিয়ে শামে প্রবেশ করেন তদানীন্তন খেলাফতের অপপ্রচারে শামবাসীরা তাদেরকে বিদেশী হিসাবে মনে করেছিল। আর ভেবেছিল তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কিয়াম করেছেন! এবং নিশাপুর ও দামেস্কের দুরত্বকে ভেবে দেখলে বোঝা যাবে যে ইমাম সাদিক (আ.)-এর জ্ঞান বিষয়ক আন্দোলনকতটুকু অগ্রগতি হয়েছিল বা কি পরিমাণ কার্যকর ছিল। ইমামের আত্মিক প্রেরণার দস্তরখানা এত বিশাল পরিমাণ বড় ছিল যা থেকে তাঁর অনুসারীরাই শুধুমাত্র লাভবান হয়নি বরং তাঁর বিরোধীতাকারীরাও উপকৃত হয়েছিল। আমরা সবাই জানি যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রথম ইমাম “আবু হানিফা” ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে দুই বছর শিক্ষা অর্জন করায় নিজেকে গর্বিত মনে করে। আর এই দুই বছরকে ফীকাহ্ শাস্ত্রের উপার জ্ঞান অর্জনের মুল চালিকা শক্তি হিসাবে মনে করে বলে ঃ যদি ঐ দুই বছর না থাকত তাহলে নো’মান (আবু হানিফা) ধ্বংস হয়ে যেত।
নবী (সা.)-এর বংশের ৬ষ্ট মহান ব্যক্তিত্ব ইমাম সাদিক (আ.)-এর শিক্ষা প্রতিষ্টানে জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর নামকরা ব্যক্তিত্বরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। যারা ইসলামী জ্ঞানে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার উপর দারুনভাবে জ্ঞান রাখতেন যেমন ঃ যুরারেহ্ ও মুহাম্মদ বিন মুসলিম ফীকাহ্ শাস্ত্রে, হিশাম ফিলোসোফি ও কালাম শাস্ত্রে, মুফায্যাল ও সাফাওয়ান আত্মিক ও ইরফান শাস্ত্রে, জাবির বিন হাইয়ান অংক ও বিজ্ঞান শাস্ত্রে ........... এবং আরও অনেকেই ইসলামের অন্যান্য জ্ঞান ও শিল্পকলায় প্রশংসনীয় যোগ্যতা বহন করত যা ইসলামের ভীতকে আরও শক্তিশালী করেছে। আল্লাহ্ প্রদত্ত ইমাম সাদিক (আ.)-এর জ্ঞানের গভীরতা এমনই বিস্ময়বিহ্বল ও চোখে পড়ার মত যা তেরশো বছর পরে ইউরোপের গবেষকরা তাঁর চিন্তা-চেতনা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন এবং বিভিন্ন বইও লিখেছেন যা আমাদের দৃষ্টিতে ইমামের ফযিলতের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তা কিঞ্চিৎ পরিমাণ মাত্র। অত্র পুস্তকে যা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি, তাতে আমরা ইমাম সাদিক (আ.)-এর বরকতময় জীবনের প্রতিটি দিক হুবহু তুলে ধরতে পারি নি; কেননা সেই শক্তি ও সামর্থ্য আমাদের নেই। আমারা শুধুমাত্র তাঁর জীবনীর কয়েকটি আলোকোজ্জ্বল আদর্শের চিত্রায়ক মাত্র। আশা করি যে এই সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্যটি সমস্ত মুসলমান ভাই ও বোন বিশেষ করে যুবকদের জন্যে ফলদায়ক, আকর্ষণীয় ও উপকারী হবে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী ঃ
এই মণিষীর বাল্য নাম, ডাক নাম ও পদবী যথাক্রমে জা’ফর, আবু আব্দুল্লাহ্ ও সাদিক। শিয়া মাযহাবের ৫ম পথ প্রদর্শক ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আ.) ও সম্ভ্রান্ত মহিলা উম্মে ফারওয়াহ্ হচ্ছেন তাঁর মাতামহ। তিনি ৮৩ হিজরীর ১৭ই রবিউল আওয়াল মদীনায় ভূমিষ্ট হন। ইমাম তাঁর মায়ের ব্যাপারে বলেন ঃ ‘‘আমার মা এমন মহিলা ছিলেন যিনি পরহেযগার, ঈমানদার ও সৎকর্মশীল ।’’ ইমাম ৬৫ বছর দুনিয়াতে জীবন যাপন করেন এবং ১১৪ হিজরী থেকে ১৪৮ হিজরী পর্যন্ত মোট ৩৪ বছর তিনি ইমামতের দায়িত্বে ছিলেন। আর তাঁর ইমামতের সমকালীন শাসকরা হল ঃ বনি উমাইয়া থেকে হিশাম বিন আব্দুল মালেক, ওয়ালিদ বিন ইয়াযিদ বিন আব্দুল মালেক, ইয়াযিদ বিন ওয়ালিদ, ইব্রাহীম বিন ওয়ালিদ, মারওয়ান হিমার এবং বনি আব্বাস থেকে সাফ্ফাহ্ ও মানছুর দাওয়ানেকী । তাঁর সন্তান- সন্ততিগন ঃ ইমাম কাযেম (আ.), ইসমাইল, আব্দুল্লাহ্, মুহাম্মদ দিবাজ, ইসহাক, আলী য়া’রিযি, আব্বাস, উম্মে ফারওয়াহ্, আসমা ও ফাতিমা সর্বমোট ৭টি ছেলে ও ৩টি কন্যা সন্তান ।
নৈতিক গুনাবলী ঃ
আমাদের পাক ও পবিত্র ইমামগণ প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ জামানায় নৈতিক চরিত্রের উত্তম নমুনা ও ইসলামের জ্যোতি ছিলেন, আর যেভাবে তাঁরা তাদের অনুসারিদেরকে বলেছেন ঃ ‘‘মানুষকে তোমাদের মুখের ভাষা দিয়ে নয় বরং তোমাদের কর্মের ও আচরণের মাধ্যমে তাদেরকে দ্বীনের প্রতি দাওয়াত কর’’। তাঁর সম্পূর্ণ জীবনটাই ছিল প্রকৃত ইসলামী পদ্ধতিতে গড়া এক উজ্জ্বল প্রতীক সরূপ। কেউই তাঁর থেকে বেশী ইসলামের আদেশ নির্দেশের প্রতি একনিষ্ট ছিল না এবং কোন সৎকর্মের প্রতি নির্দেশ দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিজে অন্যদের থেকে অনেক বেশী পরিমাণে তা না করতেন। কোন অন্যায় কাজের প্রতি নিষেধ করতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি তা পরিহার করে না চলতেন। আর এভাবেই যারা তাদের হাতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েছিল, তারা এই মহত ব্যক্তিদের জীবনের প্রতিটি ঘটনা থেকে ঈমান ও আমলের শিক্ষা অর্জন করেছিল এবং তাদের দিক নির্দেশনাকে অনুসরণ করে মুসলমানরা কৃতী ও সম্মানীত হয়েছিল যা কিনা আজও আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত ও শিক্ষনীয় হয়ে আছে।
ইমামের নৈতিক চরিত্র ও সৎকর্মের কিছু নমুনা ঃ
কর্মক্ষেত্রে ইমাম ঃ
আব্দুল আ’লী বলেন ঃ গ্রীষ্মকালের এক গরমের দিনে ইমামকে মদীনার কোন এক রাস্তায় দেখলাম যে তিনি কাজের জন্য যাচ্ছেন, বললাম ঃ আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ হোক, আল্লাহর কাছে আপনার যে নৈকট্য ও নবী (সা.)-এর সাথে আপনার যে ঘনিষ্টতা আছে সে দিকে বিবেচনা করে কিভাবে এই গরমের মধ্যে নিজেকে কষ্টের মধ্যে ফেলছেন? তিনি ঃ রিজিক উপার্জনের জন্যে বাইরে এসেছি, কেননা যাতে করে তোমাদের কাছ থেকে নিজেকে অমুখাপেক্ষি করতে পারি ।
আবি আমরু সাইবানি বলেন ঃ ইমাম সাদেককে (আ.) অসুন্দর পোশাক পরিহিত অবস্থায় বাগানে বেলচা দিয়ে কাজ করতে দেখলাম, তাঁর শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল। বললাম ঃ আপনার জন্য আমার জীবন কোরবান হোক, বেলচাটি আমাকে দিন, আমি আপনার জায়গায় কাজ করছি। বললেন ঃ জীবনযাত্রার দুঃখ-কষ্টের থেকে সূর্যের এই প্রখর তাপকে সহ্য করা পছন্দ করি ।
ন্যায়সঙ্গত ব্যবসা ঃ
ইমাম তার অনুসারিদের মধ্য থেকে মাছাদেফকে ব্যবসার জন্য একহাজার দিনার দিয়ে মিশরে পা্ঠালেন। সে ঐ অর্থ দিয়ে কিছু মালামাল কিনলো এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে মিশরে গেল। মিশরের কাছা কাছি এক কাফেলার সামনা সামনি হলো যারা মিশর থেকে ফিরে আসছিল। আর তাদের কাছে নিজের কেনা মালামালের চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাইলো, তারা বললো ঃ তোমার কাছে যে মালামাল আছে তা মিশরের বাজারে নেই। (মাছাদিফ ও অন্যান্য ব্যবসায়ী যারা মিশরে গিয়েছিল যেহেতু তারা মিশরের মানুষদের প্রয়োজন সম্বন্ধে আগেই ধারনা পেয়েছিল), তাই সবাই মিলে চুক্তিতে আবদ্ধ হলো যে কেউ যেন তাদের মালামালকে শতকরা একশত ভাগ মুনাফার নিচে বিক্রি না করে এবং তারা এ কাজটিই করলো। আর অবশেষে ফলাফল তাই হলো যে মাছাদিফ একহাজার দিনারের মালামালে একহাজার দিনার মুনাফা অর্জন করলো। মদীনায় ফিরে এলো এবং সে দুই পোটলা যার প্রতিটিতে একহাজার দিনার ছিল ইমামের কাছে হস্তান্তর করে বলল ঃ এই দুইটি পোটলার একটি ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত অর্থ আর অন্যটায় ব্যবসায় মুনাফার অর্থ। ইমাম ঃ এই অধিক মুনাফা কিভাবে অর্জন করেছো? মাছাদিফ মিশরের বাজারে মালামালের ঘাটতির কথা ও সব ব্যবসায়ীর চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে উল্লেখ করলো। ইমাম ঃ সুবহান আল্লাহ্! মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছো যে, তোমাদের মালামালকে শতকরা একশত ভাগ মুনাফা ব্যতিরেকে বিক্রি করবে না? তারপর ঐ দুই পোটলার থেকে এক পোটলা যা বিনিয়োগকৃত অর্থ হিসাবে দিয়েছিলেন তা তুলে নিলেন আর অন্যটির ব্যাপারে বললেন ঃ আমি এই মুনাফা যা কিনা বে-ইনসাফীভাবে অর্জিত হয়েছে তার প্রয়োজন রাখি না। হে মাছাদিফ হালাল পথে অর্থ উপার্জন করা অত্যান্ত কঠিন কাজ ।
বিভেদ এড়াতে বাজেট ঃ
কোন এক লোকের সাথে তার এক আত্মীয়ের মৌরুসী সম্পত্তির ভাগা ভাগি নিয়ে বিভেদ ছিল। তাদের এই বিভেদ, ঝগড়া-বিবাদ ও মারামারিতে পৌছালো। মুফায্যাল (ইমামের এক ছাত্র) সেখান থেকে যাচ্ছিল, এই ঘটনা সম্বন্ধে অবহিত হয়ে তাদের দুজনকে তার বাড়িতে নিয়ে এলো এবং চারশত দিনারের মাধ্যমে তাদেরকে সমঝোতায় নিয়ে আসলো। নিজেই ঐ চারশত দিনার দিয়ে তাদের মধ্যকার বিভেদকে মিটিয়ে দিল। তারপর মুফায্যাল তাদেরকে বলল ঃ জেনে রাখ! যে অর্থ দিয়ে তোমাদের বিভেদ মিটিয়েছি তা আমার নয় বরং সে অর্থ হল ইমাম সাদিকের (আ.)। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যেখানেই তাঁর অনুসারীদের মধ্যে বিভেদ ও ঝগড়া-বিবাদ দেখা দেবে আমি যেন তাঁর এই অর্থ দিয়ে তা মিটানোর চেষ্টা করি ।
ইমাম ও মদের দস্তরখানা ঃ
হারুন ইবনে জাহ্ম বলেন ঃ আমরা হিরেহ্তে ছিলাম, সেনাবাহিনীর এক অফিসার কোন এক উপলক্ষ্যে কিছু সংখ্যককে বিশেষ করে ইমামকে তার বাড়ীতে দাওয়াত করে। খাদ্য পরিবেশিত হলে কোন এক মেহমান পানি চাইলে তাকে পানির বদলে মদ পরিবেশন করায় ইমাম উঠে দাঁড়িয়ে বললেন ঃ আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন যে দস্তরখানায় মদ পান করা হয়, যদি কেউ সে দস্তরখানায় বসে তবে সে আল্লাহর রহমত থেকে দুরে থাকে ও তাঁর অভিশাপের শিকার হয় ।
মদ্যপায়ীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা ঃ
মানছুরের নির্দেশে বাইতুল মালের তহবিল থেকে সবাইকে কিছু না কিছু দেয়া হচ্ছিল। সাকরানী এমনই এক ব্যক্তি যে বাইতুল মাল থেকে তার অংশটি নেয়ার জন্য এসেছিল কিন্তু যেহেতু তাকে কেউ চিনতো না বা সে এমন কোন উপায়ও খুঁজে পাইনি যার মাধ্যমে তার অংশটি নিতে পারে। সাকরানীর বংশধরের মধ্যে কেউ একজন দাস ছিল এবং রসুল (সা.) তাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন। সেকারণেই তাকে সবাই অর্থাৎ রসুল (সা.)-এর হাতে মুক্তি প্রাপ্ত হওয়া। আর এটা সাকরানীর জন্য ছিল একপ্রকার সম্মানজনক বিষয় এবং এ কারণেই সে নিজেকে রেসালতের পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত বলে মনে করত।
এমতাবস্থায় তার চোখ দুটি খুঁজে বেড়াচ্ছিল কোন পরিচিত বা মাধ্যমকে যার দ্বারা সে তার বাইতুল মালের অংশটি নিতে পারে। ঠিক সে সময় ইমামকে দেখতে পেল। ইমামের কাছে সে তার মনের ইচ্ছাকে প্রকাশ করলো। ইমাম গেলেন এবং কিছু সময় পর সাকরানীর অংশটি নিয়ে এসে তাকে দিলেন। সাকরানীর বাইতুল মালের অংশটি তার হাতে দেওয়ার সময় স্নেহের সাথে এই কথা দুটি তাকে বললেন ঃ ‘‘ভাল কাজ যে কেউ করুক না কেন তা ভাল কিন্তু তুমি আমাদের সাথে যে সম্পর্ক রাখ এবং তোমাকে মানুষ আমাদের পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত মনে করে সেহেতু তুমি যদি ভাল কাজ কর তা অধিকতর ভাল ও সুন্দর। আর খারাপ কাজ যে কেউ করুক না কেন তা খারাপ কিন্তু তোমার সাথে আমাদের ঐ সম্পর্কের কারণে তুমি যদি তা কর তাহলে সেটি অধিকতর খারাপ ও অসুন্দও’’। এই বলেই তিনি সেখান হতে চলে গেলেন। সে ইমামের এই কথাগুলি শোনার পর এমনটিই ভাবলো যে, ইমাম তার মদ খাওয়ার ব্যাপারটি জানেন এবং তিনি এ বিষয়টি জানা সত্বেও তার প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছেন আর ভালবাসা দেখানোর মধ্যদিয়ে তার অসভ্য আচরণকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। এটা ভেবে তার বিবেক লজ্জিত হল ।
দাস মুক্তি ঃ
ইব্রাহীম বিন বেলাদ বলেন ঃ কোন এক গোলামের গোলামী থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার মুক্তি প্রাপ্তির সনদটি পড়েছিলাম, সেখানে এমনটিই লেখা ছিল ঃ ‘‘জা’ফর বিন মুহাম্মদ এই গোলামকে শুধুমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিনের রাজি ও খুশি করার জন্য মুক্ত করে দিয়েছে এবং তার কাছ থেকে কোন প্রকার কৃতজ্ঞতা ও পুরস্কার চাইনা শুধুমাত্র এই শর্তে যে, নামাজ পড়বে, যাকাত দিবে, হজ্ব পালন করবে, রমযান মাসে রোযা রাখবে, আল্লাহকে যারা ভালবাসে তাদেরকে ভালবাসবে এবং তাঁর শত্রুদেরকে শত্রু মনে করবে’’। ঐ সনদে সাক্ষী হিসাবে তিনজনের স্বাক্ষর ছিল ।
ধার্মিকতা ও খোদা ভীরুতা ঃ
মুসাম্মা’ বিন আব্দুল মালেক বলেন ঃ মিনাতে ইমাম সাদিক (আ.)-এর সাথে আঙ্গুর খাওয়াতে ব্যস্ত ছিলাম। এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে ইমামের কাছে সাহায্য চাইলো। তিনি তাকে এক থোকা আঙ্গুর দিলে সে তা না নিয়ে বলল ঃ যদি টাকা থাকে তাহলে টাকা দাও। ইমাম ঃ আল্লাহ্ যেন তোমাকে তা দেন। ভিক্ষুকটি চলে গেল আবার কিছু সময় পর ফিরে এসে ঐ আঙ্গুরের থোকাটি চাইলো। ইমাম ঃ আ্ললাহ্ যেন তোমাকে তা দেন। অন্য একটি ভিক্ষুক আসলো এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাইলো, তিনি তাকে তিনটি আঙ্গুর দিলেন। সে তা নিয়ে বলল ঃ আল্লাহকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই যিনি এই বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা এবং আমাকে রিজিক দেন।
ইমাম দু’হাত ভরে তাকে আঙ্গুর দিলেন। ভিক্ষুকটি নিয়ে বলল ঃ আল্লাহকে অনেক ধন্যবাদ যিনি এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। ইমাম তাকে দাঁড়াতে বললেন এবং নিজের ভৃত্যকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তার কাছে কত টাকা আছে? ভৃত্য জবাবে বলল বিশ দিনার, তিনি ঐ বিশ দিনারও ভিক্ষুককে দিলেন। ভিক্ষুকটি বলল ঃ আল্লাহ্ তোমার অসংখ্য প্রশংসা, এই সমস্ত নেয়ামত তোমার; তুমি এক ও তোমার কোন শরিক নেই। ইমাম যে পোশাকটি পরে ছিলেন সেটি তাকে দিয়ে পরতে বললেন। ভিক্ষুক পোশাকটি পরে বলল ঃ আল্লাহর অনেক শুকরিয়া কেননা তিনি আমাকে পোশাক দিয়েছেন এবং আমাকে আবৃত করেছেন, আর ইমামের দিকে ফিরে বলল ঃ এ কাজের জন্য আল−াহ্ যেন তোমাকে উপযুক্ত পুরস্কার দান করেন। মুসাম্মা’ বলেন ঃ এ ঘটনা থেকে এটাই বুঝলাম, ভিক্ষুকটি যদি ইমামের ব্যাপারে দোয়া না করে শুধুমাত্র আল্লাহর শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ব্যস্ত থাকতো তাহলে তিনি তাকে আরও কিছু দিতেন আর এভাবেই তা চলতে থাকতো ।
ইমামের ইবাদত ঃ
মালেক বিন আনাস বলেন ঃ জা’ফর বিন মুহাম্মদ, হয় সর্বদা রোজা থাকতেন অথবা নামায পড়তেন অথবা আল্লাহর যিকির করতেন। আর এ কারণেই তিনি ইবাদতকারী ও পরহেজগার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। প্রচুর হাদীস বলতেন, বৈ?কের কর্ণধার ও তাঁর উপস্থিতি অনেক ফলদায়ক ছিল, যখন বলতেন ঃ তাঁর চেহারার রং পাল্টে যেত ....... এক বছর তাঁর সাথে হজ্ব করতে গিয়েছিলাম। এহ্রা’ম ঁেবধে মোহ্রেম হওয়ার সময় তাঁর অবস্থা অন্যরকম হয়েছিল যা কিনা লাব্বাইকও বলতে পারছিলেন না এবং এতই অস্থির ছিলেন যা কিনা আর একটু হলেই উটের উপর থেকে পড়ে যাচ্ছিলেন, বললাম ঃ হে রসূলের (সা.) সন্তান, লাব্বাইক বলুন, তা না বলে কোন উপায় নেই। বললেন ঃ কিভাবে বলব (লাব্বাইল আল্লাহুমা লাব্বাইক) এখানেই আমার ভয় যে আল্লাহ্ তার উত্তরে বলবেন ।
আল্লাহর সম্মুখে আত্মসমর্পণ ও সন্তুষ্টি কামনা ঃ
কোতাইবাহ্ নামে ইমামের এক অনুসারী বলেন ঃ ইমামের এক অসুস্থ্য সন্তানকে দেখতে তাঁর বাড়ীতে গিয়েছিলাম। বাড়ীর সামনে ইমামকে দেখলাম যে তিনি বিষণ্ব ও দুষশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় দাড়িয়ে আছেন। তাঁর সন্তানের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বললেন ঃ আল্লাহর কসম! সে মৃত্যু প্রায়। তারপর বাড়ীর ভিতরে গেলেন এবং কিছু সময় পর তিনি বিষন্নও দুষশ্চিন্তাগ্রস্থহীন অবস্থায় বেরিয়ে আসলেন। আমি আশান্বিত ও আনন্দিত হয়েছিলাম এই ভেবে যে হয়তো তাঁর সন্তানের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আবারও তার অবস্থা জানতে চাইলাম, বললেন ঃ সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। বিস্ময়ের সাথে বললাম ঃ আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ হোক কিন্তু যখন সে জীবিত ছিল বিষন্ন ও
দুষশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলেন আর এখন সে মারা গেছে আপনি বিষন্ন নন? বললেন ঃ আমরা এমন এক বংশের যে মুছিবত আসার আগে চিন্তিত হই কিন্তু যখন আল্লাহর ইসারায় কোন ঘটনা ঘটে যায় তখন তাঁর সন্তুষ্টিতে নিজের সন্তুষ্টি ও তাঁর নির্দেশের প্রতি আত্মসমর্পন করি ।
ধৈর্যশীলতা ও সহিষ্ণুতা ঃ
হাফস বিন আবি আয়েশাহ্ বলেন ঃ ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর এক ভৃত্যকে কোন কাজে পাঠিয়েছিলেন। ভৃত্য দেরী করায় তিনি নিজে তাঁর খোজে বের হলেন। তাকে এককোনায় গভীর ঘুমে মগ্ন থাকতে দেখলেন। তিনি তার মাথার কাছে বসে তাকে আস্তে আস্তে বাতাস দিলেন। সে জেগে উঠলে তিনি বললেন ঃ আল্লাহর কসম! রাত ও দিনে ঘুমানো তোমার জন্য নয়, তোমার জন্যে রাত আর আমাদের জন্যে দিন ।
অসহায়দেরকে সাহায্য করা ঃ
মুয়া’লি বিন খানিস বলেন ঃ বৃষ্টির এক রাতে ইমামকে বনি সায়েদার (যেখানে দরিদ্র ও অসহায়রা রাত কাটাত) দিকে যেতে দেখলাম। তাকে অনুসরণ করলাম। রাস্তায় তাঁর বহনকৃত জিনিষের মধ্যে থেকে কিছু পড়ে যাওয়াতে বললেন ঃ ‘‘বিসমিল্লাহ্, হে আল্লাহ্! যা কিছু মাটিতে পড়ে গেছে তা আমাকে ফিরিয়ে দাও’’। সামনে গিয়ে তাকে সালাম করলাম। বললেন ঃ মুয়া’লি তুমি? উত্তর দিলাম ঃ হ্যা, ইয়া ইবনে রসূলুল্লাহ্। বললেন ঃ হাত দিয়ে খুঁজতে থাক, যা কিছু পাবে আমাকে দাও। খুঁজে কিছু রুটি পেলাম, আর তা ইমামকে দিলাম। এক বস্তা রুটি তাঁর কাছে দেখলাম যা অনেক ভারী বলে মনে হল, বললাম ঃ হে রাসূলের সন্তান! আমাকে এই বস্তাটি নেয়ার অনুমতি দিন। বললেন ঃ না! আমি এই কাজের জন্য অধিক উপযুক্ত, কিন্তু তথাপিও তুমি আমার সাথে এসো। ইমামের পথ-সঙ্গী হলাম। বনি সায়েদার কাবিলায় পৌছালাম। সেখানে একদল অসহায় লোক ঘুমিয়ে ছিল। ইমাম তাদের প্রত্যেকের বালিশের নিচে ১/২ টি করে রুটি রেখেদিলেন এবং কাউকে তা থেকে বঞ্চিত করলেন না। তারপর সেখান থেকে চলে এলাম এবং পরে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঃ ইয়া ইবনে রসূলুল্লাহ্ তারা কি আপনার অনুসারী ছিল? বললেন ঃ যদি তারা আমাদের অনুসারী হত তাহলে তাদেরকে এর থেকেও আরো বেশী সাহায্য করতাম ।
হিশাম বিন সালিম বলেন ঃ ইমামের পদ্ধতি এমন ছিল যে, প্রতি রাতে রুটি, মাংসের বস্তা ও অর্থের থলি কাঁধে করে তা মদীনার অসহায়দের জন্য নিয়ে যেতেন। আর নিজের পরিচয় গোপন করে তাদের মধ্যে সেগুলো বিলি বন্টন করতেন। যখন ইমাম মারা গেলেন এবং ঐ সাহায্য তাদের জন্য বন্ধ হয়ে গেল তখন তারা বুঝতে পারলো যে তাদের ঐ সাহায্যকারী ছিলেন ইমাম সাদিক (আ.) ।
সমকালীন খলিফাদের সাথে ইমাম ঃ
৮৩ হিজরীতে উমাইয়্যা খেলাফতের ৫ম অত্যাচারী ও নিষ্টুর খলিফা আব্দুল মালেক বিন মারওয়ানের শাসনামলে ইমাম দুনিয়ায় আসেন এবং ১১৪ হিজরীতে হিশাম বিন আব্দুল মালেকের শাসনামলে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। তার পিতা মহান ব্যক্তিত্ব হযরত ইমাম বাকের (আ.)-এর শাহাদতের পর তিনি ৩১ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্বে পেŠছান। ইমামের ভূমিষ্ট হওয়া থেকে ১৩২ হিজরী পর্যন্ত (যা উমাইয়্যা বংশের খেলাফতের পতনের বছর হিসাবে পরিচিত) উমাইয়্যা খেলাফতের খলিফাদের নাম ও তাদের শাসনামলের মেয়াদ নিম্মলিখিতভাবে উল্লেখ করা হল ঃ আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান ৬৫ থেকে ৮৬ হিজরী পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করে এবং তার শেষের তিন বছর যা ছিল ইমামের ভূমিষ্ট হওয়া ও তিন বছর বয়সের সমসাময়িক। ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেক, (৯ বছর ও ৮ মাস )। সোলাইমান বিন আব্দুল মালেক, (৩ বছর ও ৩ মাস)। ওমর বিন আব্দুল আযিয, (২ বছর ও ৫ মাস)। ইয়াযিদ বিন আব্দুল মালেক, (৪ বছর ও ১ মাস)। হিশাম বিন আব্দুল মালেক, (২০ বছর, যার ১২ বছর ছিল ইমাম সাদিক (আ.) ইমামতের সমকালীন)। ওয়ালিদ বিন ইয়াযিদ বিন আব্দুল মালেক, (১ বছর)। ইয়াযিদ বিন ওয়ালিদ, (৬ মাস)। ইব্রাহীম বিন ওয়ালিদ, (২/৪ মাস)। মারওয়ান হিমার, (৫বছর ও কয়েক মাস, বনি আব্বাসের কাছে তার পরাজিত হওয়া ও ১৩২ হিজরীর যিলহাজ্ব মাসে তার নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে বনি উমাইয়্যাদের খেলাফতের অবসান ঘটে । নিঃসন্দেহে উমাইয়্যা শাসকরা এক শতাব্দির কাছাকাছি সময় -যা ইসলামী ইতিহাসের অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় হিসাবে পরিচিত- ইসলাম ও ইসলামী উম্মাহ্ তাদের কাছে খেলার সামগ্রী হিসাবে বিবেচিত ছিল। আর তারা মানুষকে কোন প্রকার মুল্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলনা। সমস্ত মুসলমানরা বিশেষ করে নবী পরিবারের অনুসারীরা বনি উমাইয়্যাদের খেলাফতকালে অত্যাধিক কষ্টে ও অস্বাভাবিক উৎকন্ঠায় ছিলেন। আব্দুল মালেক ছিল তেমনই উমাইয়্যা খলিফাদের একজন। সে তার এক খোৎবাতে জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলে ঃ ‘‘যে আমাকে খোদাভীরুতা ও পরহেযগারীর দিকে আহ্ববান করবে তার দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবো!’’ , আর আব্দুল মালেকের সন্তান ওয়ালিদ ক্ষমতায় আসার পর তার প্রথম খোৎবায় বলে ঃ ‘‘যে আমাদের সম্মুখে মাথা উচু করে দাঁড়াবে তাকে হত্যা করব এবং যে চুপ থাকবে, তাকে চুপ থাকার কারণে হত্যা করবো!’’ । বনি উমাইয়্যারা সম্পূর্ণভাবেই ধর্মহীন ছিল। যাদের কাছে আল্লাহর ব্যাপারে কোন প্রকার ধারনাও ছিল না। ইসলামের সুচনা থেকেই তারা দ্বীন ও নবী (সা.)-এর সাথে শত্র“তা শুরু করেছিল যা কোন অবস্থাতেই মিমাংসানীয় ছিলনা। পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনা ও বদর বা ওহদের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পরে নবী (সা.) ও আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.)-এর ব্যাপারে তারা তাদের অন্তরে কঠিন ভাবে শত্র“তা ধারন করল এবং যখনই তাদের হাতে সময় ও সুযোগ আসতো তাদের উপরে বদলা নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাতো। আর ইসলামকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে এবং নবী (সা.) ও তার পরিবারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে কোন প্রকার চতুরতা, কুটনীতি ও অত্যাচার করতে বাদ রাখেনি .....
৪০ হিজরী, আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পর মু’য়ারিয়া ক্ষমতায় পেŠছায়। ইসলাম ও আলেমরা বনি উমাইয়্যাদের হাতে বন্দী এবং শিয়াদের উপর দারুনভাবে চাপ আসতে শুরু হল। আমিরুল মু’মেনিনের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কথা ও তাঁর নামে অপবাদ দেওয়া ছিল তাদের প্রধান ও প্রথম কাজ। কারবালার গনহত্যা ও শহীদদের সর্দার ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের ঘটনাতে বনি উমাইয়্যাদের নির্মম অত্যাচারের ও নিষ্?ুরতার পরিচয় পাওয়া যায়। কারবালার এই হৃদয় বিদারক ঘটনার আগে ও পরেও তারা প্রচুর পরিমানে শিয়াদের ও আলাভিদের নেতৃস্থানীয় লোকগুলোকে আহ্লে বাইতের অনুসারী হওয়ার অপরাধে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এছাড়াও তারা অন্যান্যদেরকে তাদের ভূগর্ভস্থ অন্ধকার কারাগারে অত্যন্ত যন্ত্রনা দায়ক পরিস্থিতির মধ্যে বন্দী করে। ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর সন্তান যাইদ, হিশাম বিন আব্দুল মালেকের শাসনামলে শাহাদাত বরন করেন। শাহাদাতের পর তার মৃত দেহটিকে হিশামের নির্দেশে শহরের প্রধান দরজার চেŠকা?ে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং কয়েক বছর পরে সেই লাশটিকে নিচে নামিয়ে এনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ..... কারবালার বিষাদময় ঘটনার পর ও ইমামগণের (আ.) উন্নত দিক নির্দেশনা ও তাদের নেতিবাচক সংগ্রাম বনি উমাইয়্যাদের শাসনকার্যের উপর ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। অবশেষে যাইদের শাহাদাতের ঘটনাটি বনি উমাইয়্যাদের ধর্মহীনতা, অত্যাচার ও স্বেচ্ছাচারীতা থেকে মানুষদেরকে স্বজ্ঞানে ফিরে আসার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং শেষমেশ ১৩২ হিজরীতে ফুটপাতের লজ্জাকর উমাইয়া ক্ষমতার অবসান ঘটে এবং বনি আব্বাস সময় বা সুযোগের সদব্যবহার করে অবৈধ ভাবে খেলাফতের ক্ষমতা গ্রহণ করে। ইমাম সাদিক (আ.) আমাদের অন্যান্য ইমামগণের ন্যায় জীবনের প্রতিটি সময় প্রধানত যখন উমাইয়্যারা শাসনকার্য পরিচালনা করতো, প্রকাশ্য ও গোপনে অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্যস্ত ছিলেন। আর যখনই তার উপর থেকে বনি উমাইয়্যাদের কড়া নজর ও তৎপরতা কম হত তখনই তিনি উন্নত চিন্তার আলোচনা করতেন এবং উত্তম সাথীদের মধ্যে দ্বীনের স?িক রাস্তাকে পরিচয় করাতেন এবং মানুষের মাঝে স?িক ইসলামকে তুলে ধরতেন। হিশামের শাসনামলে একবার ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর মহান পিতার সাথে হজ্ব পালন করতে গিয়ে হাজীদের বিশাল সমুদ্রের মধ্যে নবী (সা.)-এর পরিবারের ইমামত ও রাহবারী এই বিষয়ের উপর খোৎবায় বলেন ঃ ‘‘আল−াহ্কে অশেষ ধন্যবাদ যে তিনি মুহাম্মদ (সা.) কে স?িক পথ দিয়ে পা?িয়েছেন। আর আমাদেরকে সম্মানীত করেছেন। আমরা তার সৃষ্টির মধ্য থেকে বাছাইকৃত ও দুনিয়াতে তার প্রতিনিধি। পরিত্রাণ প্রাপ্ত সেই যে আমাদেরকে অনুসরণ করবে। আর দুর্ভাগা সেই যে আমাদের সাথে শত্র“তা করবে’’ । ইমামের দেওয়া বক্তব্যের বিষয়টি হিশামের কাছে পেŠছালে সে তার মদীনার গভর্নরকে এই মর্মে নির্দেশ দিল যে, হজ্ব শেষে হাজীরা মদীনায় ফিরে এলে ইমাম বাকের ও ইমাম সাদিককে (আ.) যেন দামেস্কে পা?ায়। হজ্ব থেকে ফিরে ঐ দু’মহান দামেস্কে যায় এবং হিশামের সাথে তাদের কথপোকথন হয় ..... ঐ অন্ধকারময় সময়ে ইমাম বাকের ও ইমাম সাদিক (আ.)-এর অতি সামান্য পরিমান খেদমত হচ্ছে, ইসলামকে জীবিত রাখা ও তার প্রচার ও হেফাযতের লক্ষ্যে জ্ঞানের আন্দোলন করা এবং আলেম, বিশিষ্ট ফকিহ্ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি তৈরী করা। কেননা তারা যেন ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বীন ও কোরআনকে কোন প্রকার ভূল-ভ্রান্তি ও কম বেশী ছাড়াই প্রচার করতে পারে এবং দ্বীনের আদেশ-নির্দেশকে প্রতিষ্টিত করতে পারে।
আর বিশ্বাস বা আক্বীদাগত বিষয়াদির বিভ্রান্তকে আটকাতে পারে এবং ইসলামের সঠিক রাস্তাকে পরিচয় করাতে পারে। এই সংগ্রাম অন্যান্য সকল প্রকার সংগ্রামের থেকে ক?িন ছিল এবং ঐ দু’মহান ব্যক্তির বরকতে এই কাজ অন্যান্য উপাদানের থেকে এমন বিশেষ উপাদানে রুপ নিয়েছিল যা দেখা যায় প্রায় একশত বছরের বনি উমাইয়্যাদের অন্ধকারময় ও ইসলাম বিরোধী শাসনামলও দ্বীনের আসল ভিত্তি প্রস্তরকে ধ্বংস করতে পারেনি। যদিও বনি উমাইয়্যারা অনেক চেষ্টা করেছিল ইসলামী উম্মাহ্কে জাহিলিয়াতের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর বাহ্যিক ভাবে তারা তাদের উদ্দেশ্যে পেŠছানোর জন্য বেশ খানিকটা অগ্রসরও হয়েছিল। কিন্তু আমাদের পবিত্র ইমামগণের প্রচেষ্টায় বিশেষ করে উত্তম শিক্ষা-দীক্ষায় ছাত্র তৈরী ও তাদেরকে বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ ও সমাজে মানুষের মাঝে ইসলামের পরিচিতি তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাদের সুক্ষদর্শিতার কারণেই উমাইয়্যারা তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যে পেŠছানোর রাস্তায় বড় ধরনের বাধাপ্রাপ্ত হয়। সুতরাং শত্র“রা তাদের আসল উদ্দেশ্য, ইসলামকে ধ্বংস করা থেকে অপারগ হয়। অবশেষে উমাইয়্যাদের নোংরা রাজনীতির অবসান ঘটলে বনি আব্বাসরা তাদের জায়গাকে দখল করে ..... বনি আব্বাসরা হচ্ছে আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালেব এর বংশের। সে ছিল নবী (সা.) এর চাচা। তারা শুরুতে কারবালার শহীদদের রক্তের বদলা নেওয়ার জন্য ও উমাইয়্যাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার নিমিত্তে মানুষদেরকে তাদের পাশে একত্রিত করেছিল এবং বিশেষ করে ইরানীদের আলী (আ.)-এর উপর ভক্তি শ্রদ্ধা থাকার কারণে তাদের কাছ থেকে সুবিধা অর্জন করতে চেয়েছিল। তারা বলেছিল যে, উমাইয়্যাদের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে এমন কারুর হাতে তা হস্তান্তর করবে যে তার উপযুক্ততা রাখে। এভাবেই বনি উমাইয়্যাদের সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হয়। অবশেষে আবু মুসলিম খোরাসানী ও অন্যান্য ইরানীদের সহযোগিতায় বনি উমাইয়্যাদেরকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিল। কিন্তু খেলাফতকে সেই জামানার ইমাম জা’ফর বিন মুহাম্মদ সাদিক (আ.)-এর হাতে অর্পন করার জায়গায় বনি আব্বাসরা নিজেরাই ক্ষমতায় অধিষ্?িত হয়। বনি আব্বাসরা ইসলামী আইনের বিরুদ্ধে চলেও বাহ্যিকভাবে ভান করত যে, তারা ইসলামী আদর্শ মেনেই চলছে। আর এভাবেই (আমরা আলে মুহাম্মদের সাঃ বংশধর) তারা চেষ্টা করতো নিজেদেরকে নবী (সা.)-এর সত্যিকারের উত্তরসূরি ও ইসলামী খেলাফতের উপযুক্ত হিসাবে পরিচয় দিতে। আর যেহেতু নিজেরা অন্যদের থেকে খুবভাল করেই জানতো যে তারা এই মর্যাদার অধিকারী নয়। তাই তারা ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়ার প্রথম থেকেই জালেমের ন্যায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ইমাম সাদিক (আ.) ও তাঁর অনুসারীদেরকে চাপের মুখে কোন?াসা করে রাখতে শুরু করে। যেভাবেই সম্ভব হত চেষ্টা করত সমাজকে নবী পরিবার ও ইমামতের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে। কেননা নবী (সা.)-এর বংশধর ও লোক দেখানো ইসলামী আচার-আচরণের কথা বলে, যে খেলাফত ও ক্ষমতাকে করায়াত্ত করেছে তা যেন কোনক্রমেই তাদের হাত থেকে চলে না যায় ..... ১৩২ হিজরীতে উমাইয়্যা খেলাফতের পতন হওয়ার পর থেকে ইমাম সাদিক (আ.)-এর ওফাত পর্যন্ত আবুল আব্বাস সাফ্ফাহ ও মানছুর দাওয়ানিকী এই দুই আব্বাসীয় খলিফার শাসনামল ছিল। সাফ্ফাহ প্রথম আব্বাসীয় খলিফা সে ৪ বছর এবং মানছুর দ্বিতীয় আব্বাসীয় খলিফা সে ২২ বছর ক্ষমতায় ছিল অর্থাৎ ইমামের শাহাদাতের পর আরও ১০ বছর সে ক্ষমতায় টিকে ছিল ।
ইমাম সাদিক (আ.) সমস্ত সময়টা বিশেষ করে মানছুরের আমলে প্রচন্ড চাপের মুখে ছিলেন। এমন কি কখনো কখনো তার সাথে সাধারণ মানুষের যোগাযোগকেও বন্ধ করে দেয়া হত। হারুন বিন খারিজেহ্ বলেন ঃ ইমামের কোন এক ছাত্র এক সঙ্গে তিন তালাকের যথার্থতার উপর তাঁর কাছে প্রশ্ন করার জন্য, তিনি যেখানে ছিলেন সেখানে গেলে খলিফার পক্ষ থেকে তাকে ইমামের সাথে দেখা না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। চিন্তায় পড়ে গেল যে, সে নিজেকে কিভাবে ইমামের কাছে পেŠছাবে। ঐ সময় ভ্রাম্যমান শশা বিক্রেতাকে দেখতে পেল। সে জীর্ণ, ছেড়া ও নোংরা পোশাক পরিহীত অবস্থায় শশা বিক্রয় করছিল। তার কাছে গিয়ে সমস্ত শশাগুলো এক সাথেই কিনলো ও তার পোশাকটি ধার (ঋণ) নিল এবং নিজে শশা বিক্রেতা হিসাবে ইমামের বাড়ীর পাশে গেলে বাড়ীর খাদেম তাকে শশা কেনার জন্য ডাক দেয়। আর এভাবে সে নিজেকে ইমামের কাছে পেŠছালে, তিনি বলেন ঃ দারুন ফন্দি করেছো! এখন বল তোমার প্রশ্নটা কি?
সে ইমামের কাছে প্রশ্নটি বর্ণনা করলে, তিনি বলেন ঃ এটা বাতিল তালাক ... মানছুর দাওয়ানিকী ইমাম ও তাঁর অনুসারীদের এবং আলাভিদের উপর অত্যাচার ও যন্ত্রনা প্রদান এবং ক?োরতা দান করা থেকে বিরত থাকলো না। অনুরূপ বনি উমাইয়্যাদের মতই ছিল তাদের ব্যবহার। সাদির ও আব্দুস সালাম বিন আব্দুর রহমান এবং ইমামের আরও অন্যান্য অনুসারীদেরকে বন্দী করে কারাগারে পাঠায়। মু’য়ালী বিন খানিসকে (সে ইমামের উচ্চ স্তরের সাহাবাদের মধ্যে গন্য হত) হত্যা করে। আর আব্দুল−াহ্ বিন হাসানকে (সে ইমাম হাসান (আ.)-এর নাতী ও আলাভি বংশের বয়োজ্যোষ্ট ছিল) ইরাকে নির্বাসন দেয় এবং পরে সেখানকার কারাগারে তাকে হত্যা করে... । অন্যদিক দিয়ে চেষ্টা চালাতে লাগলো যে ইসলামী উম্মাহ্কে কোন উপায়েই হোক তার প্রতি আকৃষ্ট করাবে। সবাই তাকে যেন সত্যিকার অর্থে নবী (সা.)-এর খলিফা, শরিয়াতের আমিন ও আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য রহমত হিসাবে মনে করে। সাথে সাথে আরও চেষ্টা করেছিল যে, নিজেকে নবী (সা.)-এর আহ্লে বাইতের মধ্যে সামিল করতে। এভাবে অন্যদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর প্রকৃত প্রতিনিধি ও খলিফাদের স্থানকে দখল করবে। কিন্তু জানতো না যে মুসলমানরা বিশেষভাবে নবী (সা.)-এর আহ্লে বাইতের প্রতি বিশ্বাস রাখে। আগেও বনি আব্বাস মানুষের এই বিশ্বাস ও ভালবাসাকে ব্যবহার করে ও নবী পরিবারের পক্ষে থাকার শে−াগান দিয়ে তবেই না বনি উমাইয়্যাদেরকে ক্ষমাতা থেকে হটাতে পেরেছিল। মানছুর আরাফাতের দিনে তার এক খোৎবাতে বলে ঃ হে লোক সকল! এককভাবে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এই জমিনের বুকে তোমাদের বাদশাহ্, ও তাঁর করুণায় তোমাদের প্রতিটি বিষয়কে তত্ত্বাবধান করব। আমি আল্লাহর হিসাব রক্ষক এবং তাঁর কোষাগারের দায়িত্ব আমার হাতে। তার পছন্দমত কার্যসম্পাদন ও তার ইচ্ছামত বিলি-বণ্টন করব। তার অনুমতিতেই দান করব। আল−াহ্ তা’য়ালা আমাকে তাঁর কোষাগারের তালা হিসাবে চুক্তিবদ্ধ করেছেন। যখনই চান তখনই আমাকে উন্মুক্ত করেন যেন তোমাদেরকে দান করতে পারেন!....
ঐ খোৎবাতে খোরাসানের জনগণের উদ্দেশ্যে বলে ঃ হে খোরাসানের লোক সকল! আল−াহ্ আমাদের অধিকারকে প্রতিষ্?িত করেছেন ও উত্তরাধিকারসুত্রে নবী (সা.)-এর খেলাফতকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সত্য তার স?িক জায়গায় স্থান পেয়েছে। আর আল্লাহ্ তাঁর নূরকে দৃশ্যমান ও তাঁর পছন্দকারীদেরকে ভালবাসা দান এবং অত্যাচারিদেরকে ধ্বংস করেছেন ...
মানছুর জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করে নিজেকে পবিত্র ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় দিতে এবং তার আসল চেহারাটাকে যা বনি উমাইয়্যাদের সাথে কোনরূপ পার্থক্য ছিলনা অর্থাৎ অপবিত্রতা, ধর্মহীনতা ও মুনাফেকিতে ভরা ছিল তা এই প্রক্রিয়ায় ঢেকে রাখতে চেয়েছিল। আর সে এভাবেই ইমামের বাহ্যিক সম্মতি আদায় করার চিন্তা করলো, তা যদি হুমকী ও ভয় প্রদর্শনের মাধ্যমেও হয়। আর এটা যদি আদায় করতে পারে তাহলে মানুষের সামনে নিজের উপযুক্ততাকে তুলে ধরতে পারবে। কিন্তু ইমাম তাকে তো কোন মতেই সমর্থন দিলেন না বরং যেভাবে বা যে প্রক্রিয়াতে পেরেছিলেন নিজের দুরদৃষ্টি দিয়ে নিজের ও বনি আব্বসের প্রকৃত পরিচয়কে মানুষের সামনে তুলে ধরলেন ঃ ইমামের এক ভক্ত বললঃ আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সংসার জীবনে কষ্টের মধ্যে আছে। মানছুরের কাছে
প্রস্তাব করা যেতে পারে যে তাদের (বনি আব্বাস) জন্য বাড়ী, রাস্তা তৈরী করবে আর তার বদলে তাদের কাছ থেকে তার মুজুরী গ্রহণ করবে। আপনার দৃষ্টিতে এটা কেমন হয়? ইমামঃ আমি পছন্দ করিনা যে তাদের (বনি আব্বাস) জন্য কোন শর্ত বা প্রস্তাব দিব। যদিও তারা ঐ কাজের বিপরিতে প্রচুর অর্থও দেয়। কেননা যারা অত্যাচারিদেরকে সাহায্য করে ক্বিয়ামতের দিনে আল−াহ্র বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকে) । আর তিনি ফিকাহ্ শাস্ত্র বিশারদদের বিষয়ে বলেনঃ ফিকাহ্ শাস্ত্রবিদরা নবী (সা.)-এর আমিন স্বরূপ। যদি দেখ যে তারা খলিফাদের পক্ষে আছে (অত্যাচারিদের শক্তি আনায়নকারী ও সাহায্যকারী হয়েছে) তাহলে তাদের প্রতি খারাপ ধারনা করবে ও তাদের উপর কোন প্রকার বিশ্বাস রাখবে না । এমন কি ইমাম তাঁর বক্তব্যে ও সাক্ষাতে কখনো কখনো স্পষ্টভাবে মানছুরকে নিন্দা করতো। মানছুর ইমামকে দেয়া তার এক চি?িতে এভাবে লিখেঃ কেন অন্যান্যদের মত তুমি আমার কাছে আসনা? ইমাম সে চি?ির জবাবে লিখেন ঃ ‘‘দুনিয়ার কাছে আমাদের চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই, যে তার জন্য তোমার কাছে ভীতসন্ত্রস্ত থাকবো। আর তোমার নিজেরও আখেরাত ও আধ্যাত্মিকতার কিছু নেই যার কারণে তোমার প্রতি আশান্বিত হব বা তুমি এমন কোন নে’য়ামতের মধ্যেও নও যে তার কারণে আসবো তোমাকে অভিনন্দন জানাতে বা তুমি নিজে বালা-মুছিবাতে পতিত হয়েছ এমনটি ভাবছো তাই দেখে আসবো তোমাকে শান্তনা জানাতে তার কোনটাই না সুতরাং কেন আসবো তোমার কাছে?’’ মানছুর লিখলো ঃ এসো, এসে আমাদেরকে উপদেশ দাও! ইমাম লিখলেনঃ ‘‘যে দুনিয়াকে পছন্দ করে সে তোমাকে উপদেশ দিবে না, আর যে আখেরাতকে পছন্দ করে সে তোমার কাছে আসবে’’ । একদিন ইমাম (আ.) মানছুরের দরবারে উপস্থিত ছিল। ঘটনাক্রমে একটি মাছি মানছুরকে জালাতন করছিল। যতবারই দুরে সরাচ্ছিল মাছিটি দুরে নাগিয়ে তার মুখে বসছিলো। সে রাগান্বিত হয়ে ইমামকে প্রশ্ন করল ঃ আল্লাহ্ কেন মাছিকে সৃষ্টি করেছেন? ইমাম সংশয়হীনভাবে জবাব দিলেন ঃ এজন্য যে, প্রতিহিংসাপরায়ন অত্যাচারিদেরকে এই প্রক্রিয়ায় অপদস্থ ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল− করবেন। এ কথা শোনার পর মানছুরের গলায় যেন কথা আটকে গেল। সে আর কোন কথা বলতে না পেরে চুপ করে বসে রইলো ।
চলবে.....
©somewhere in net ltd.