নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাসুল(সা:) ঘোষিত ৬ষ্ট ইমাম-ইমাম জাফর সাদিক(আঃ)-২

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৮

মদীনার গভর্নরের সন্মুখে ঃ
আব্দুল্লাহ্ বিন সোলাইমান তামিমি বলেন ঃ যখন আব্দুল্লাহ্ বিন হাসান বিন হাসান (আ.)-এর সন্তান মুহাম্মদ ও ইব্রাহীমকে আব্বাসীয় খলিফার নির্দেশে শহীদ করা হল, মানছুর দাওয়ানিকী সাইবাহ্ বিন গাফ্ফাল নামে তার এক দালালকে মদীনার গভর্নর নিযুক্ত করল। সাইবাহ্ মদীনায় এলো এবং জুমার দিনে মদীনার মসজিদে মিম্বারে উঠে খোৎবা দিয়ে বলল ঃ ‘‘বস্তুত আলী বিন আবি তালিবই মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টিকারী এবং ঈমানদারদের সাথে যুদ্ধ করেছে। আর খেলাফতকে নিজের জন্য চেয়েছিল ও চেষ্টা করেছিল যে প্রকৃত খেলাফতের অধিকারীদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করতে। কিন্তু আল্লাহ্ তা’য়ালা তাকে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করেছে। এখন তাঁর সন্তানরাও মতবিরোধ সৃষ্টি করার ও ক্ষমতা পাওয়ার চেষ্টায় আছে। যারা এর যোগ্যতা রাখেনা। আর এই কারণেই বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকান্ড ঘটিয়ে তারা নিজেদের রক্ত ঝরায়!’’ তার বক্তব্য জনগণের জন্য খুব বিষাক্ত ছিল। কিন্তু কারো সাহস ছিলনা তার বিরুদ্ধে কিছু বলার। এই সময় পশমী পোশাক পরিহীত এক লোক উঠে দঁড়িয়ে বলল ঃ ‘‘আমরা আল্লাহকে মেনে চলি ও মুহাম্মদকে সর্বশেষ নবী ও সমস্ত নবীদের সর্দার হিসাবে এবং অন্যান্য সমস্ত নবীদের উপর দরুদ পা? করি। কিন্তু তুমি তোমার বক্তব্যে ভাল কথা যেগুলো বলেছ তা আমাদের প্রাপ্য। আর খারাপ কথা যা বলেছ তুমি ও মানছুর তার উপযুক্ত’’। তারপর উপস্থিত জনগণের দিকে ফিরে বলল ঃ ‘‘তোমাদেরকে কী বলল যে, কে বা কারা ক্বিয়ামতের দিনে দুরাবস্থায় থাকবে? সে এমন কেউ যে তার আখেরাতকে দুনিয়া পাওয়ার জন্য বিক্রি করে দেয়। আর এই পাপাচারী গভর্নর হচ্ছে তেমনই ব্যক্তি। (কেননা সে তার আখেরাতকে মানছুরের কাছে বিক্রি করেছে).....।’’ উপস্থিত সবাই শান্ত হল এবং গভর্নর কিছু না বলেই মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল। ঐ সময় কাউকে জিজ্ঞাসা করলাম কে এই লোক যে গভর্নরকে এরূপভাবে তিরস্কার করে কথা বলল? সে বলল ঃ তিনি ছিলেন ইমাম জা’ফর বিন মুহাম্মদ সাদিক (আ.) ।

ইমাম ও যাইদ বিন আলী ঃ
যাইদ চতুর্থ ইমাম যয়নুল আবেদ্বীন (আ.)-এর সন্তান। সে জ্ঞানে, খোদাভীরুতায় ও ফযিলাতের দিক দিয়ে ইসলামের উচ্চ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিদের পর্যায়ে ছিল। সে উমাইয়্যা খেলাফতের বিরুদ্ধে বীরের মত রুখে দাড়িয়েছিল এবং সাহসিকতার সাথে যুদ্ধকরে মর্যাদার সাথে শাহাদাত বরন করে। খোদাভীরুতা ও নুরানীয়াতে ভরপুর তার সম্পূর্ণ জীবনটা এবং অবশেষে জালেম শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো ও শহীদ হওয়া তার পক্ষে ইতিহাস সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যা সে পুত পবিত্র ইমামত পরিবারের থেকে অর্থাৎ তার বাবা ও ভাইয়ের কাছ থেকে অর্জন করেছিল। ইসলামী মনীষীরা যাইদের মহানুভবতা, খোদাভীরুতা, জ্ঞান ও ফযিলতের ব্যাপারে একমত। আমাদের ইমামগণও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাইদের ফযিলাত ও মহানুভবতাকে বর্ণনা করেছেন। তার ফযিলাতের ব্যাপারে এত পরিমান রেওয়ায়েত আছে যা শেখ ছাদুক (রহঃ) তার লিখিত (আ’ইয়ানু আখবারুর রেযা) বইয়ের একটি অধ্যায়ে এই রেওয়ায়েতগুলিকে লিপিবদ্ধ করেছে ।
শেখ মুফিদ বলেন ঃ ‘‘ইমাম বাকের (আ.)-এর পরে যাইদ চতুর্থ ইমামের সন্তানদের মধ্যে উত্তম ও অধিক মহানুভাব ছিল। সে পরহেযগার, আবেদ, ফকীহ্, মেহেরবান ও সাহসী ছিল। ভাল কাজের উপদেশ ও খারাপ কাজের নিষেধ করতো’’ । আবি জারুদ বলেন ঃ মদীনায় গিয়েছিলাম এবং যখনই যাইদকে দেখতাম তখনই বলতাম ঃ কোরআনের অনুসারী ।
হিশাম বলেন ঃ খালেদ বিন সাফওয়ান যাইদের ব্যাপারে বলছিল। জিজ্ঞাসা করলাম তাকে কোথায় দেখেছ? বলল ঃ কুফার এক গ্রামে। বললাম ঃ তাকে কেমন দেখলে? বলল ঃ আমি তাকে যেভাবে দেখেছি তা হচ্ছে সে আল−াহ্র ভয়ে প্রচুর কাঁদছিল । শেখ মুফিদ বলেন ঃ শিয়াদের এক দল (যাইদিয়ে) নামে পরিচিত। যারা তার পিতার পরে তাকে ইমাম বলে মনে করে। এ ধরনের বিশ্বাসের কারণ হচ্ছে সে তলোয়ার হাতে রুখে দাড়িয়েছিল এবং মানুষকে নবী (সা.)-এর পরিবারের দিকে আহ্ববান জানিয়েছিল। এ জন্যই তারা ভেবেনিয়েছিল যে, সে ইমাম হওয়ার কারণেই এটা করছে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটি এরূপ নয় যা সে নিজেও জানতো, যে তার পিতার পরে তার ভাই হযরত বাকের (আ.) পরবর্তী ইমাম। আর ইমাম বাকের (আ.) ওফাতের সময় হযরত সাদিককে (আ.) পরবর্তী ইমাম হিসাবে পরিচয় করিয়ে যান ।

যাইদের কিয়াম ঃ
মদীনার গভর্নরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য হিশামের কাছে গেল। কিন্তু হিশাম তাকে অপমান করার জন্য দরবারে প্রবেশের অনুমতি দিল না। সে তার অভিযোগটিকে চিঠির মাধ্যমে হিশামের কাছে পাঠালো। হিশাম ঐ চিঠির কোন গুরুত্ব না দিয়ে সেই চিঠির নিচে সে যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফিরে যাওয়ার জন্য লিখলো। তা পড়ে সে বলল ঃ ‘‘আল্লাহর কসম ফিরে যাব না’’ ..... এবং সে কয়েক দিন শামে থাকার পরে হিশাম তাকে দেখা করার অনুমতি দেয়। এদিকে হিশাম একদল লোক ঠিক করে রাখে যে, সে দরবারে ঢোকার সময় যাইদকে যেন তার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখে বা কোনক্রমেই যাইদ যেন তার কাছে আসতে না পারে। যাইদ দরবারে ঢুকেই তার কথা শুরু করে দিল। হিশামকে উদ্দেশ্য করে বলল ঃ ‘‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির থেকে এমন কেউ উত্তম নেই, যে খোদাভীরুতার পরামর্শ দেয় এবং ঐ ব্যক্তির থেকে এমন কেউ নিকৃষ্ট নেই, যাকে খোদাভীরুতার উপদেশ দেয়া হয়। আমি তোমাকে খোদাভীরুতার প্রতি উপদেশ দিচ্ছি, আল্লাহকে ভয় কর এবং পরহেযগার হও’’। হিশাম অপমান সুচকভাবে বলল ঃ তুই নিজেকে খেলাফতের উপযোগী মনে করিস, আর তাই এর প্রতি আশা রাখিস। পক্ষান্তরে তোর সে যোগ্যতাও নেই কেননা তুই এক কানিযের সন্তান ছাড়া অন্য কিছুই না। যাইদ উত্তরে বলল ঃ এমন কোন মর্যাদা নেই যা নবী (সা.) থেকে উচ্চে এবং কিছু সংখ্যক নবীগণ যেমন ইব্রাহীমের সন্তান ইসমাইল সেও এক কানিযের সন্তান। আর যদি কানিযের
সন্তানদের কোন প্রকার ত্রুটি থাকতো তাহলে কখনই ইসমাইল নবী হিসাবে স্বীকৃতি পেত না। এখন প্রশ্ন যে নবুয়্যত সম্মানীত না খেলাফত? ..... আরও বললে বলতে হয় যে যার পিতা রাসূল (সা.) ও আলী বিন আবি তালিব (আ.), তাদের মায়েরা কানিয হওয়াতে কি এমন ত্র“টি হয়েছে? হিশাম এই জবাব শোনার পরে রাগান্বিত হয়ে উঠে দাড়ালো এবং যাইদকে দরবার থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিল। যাইদ চলে যাওয়ার সময় বলল ঃ ‘‘যারা তলোয়ারের জ্বালাময় আঘাতকে অপছন্দ করে, তা থেকে তারা যে কোনভাবে অপমান, অপদস্থ হয় ....’’। যাইদ তার এই বক্তব্য হিশামকে হুসিয়ার করলে, সে বুঝতে পারলো যে যাইদ উমাইয়্যাদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে ক্বিয়াম করবে এবং তার দরবারের লোকদের বলল ঃ তোমরা ভেবেছিলে এই পরিবার (আমিরুল ম’ুমেনিন আলী (আ.)-এর পরিবার) ধ্বংস হয়েছে। আমার জীবনের কছম, যে পরিবারে যাইদের মত লোক আছে সে পরিবার কখনও ধ্বংস হয়না। যাইদ শাম থেকে কুফায় এলো। শিয়ারা তার চারপাশে জমা হয়ে গেল ও তার হাতে বাইয়াত করলো। শুধুমাত্র কুফা থেকেই ১৫ হাজার লোক যাইদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিল এবং বিভিন্ন এলাকা যেমন ঃ মাদায়েন, বছরা, বাসেত, খোরাসান, রেই, মুসেল ও আরও অন্যান্য জায়গা থেকে প্রচুর পরিমানে লোক তাদের সাথে দলভূক্ত হলে যাইদ কিয়াম করলো । যুদ্ধ শুরু হলো। তার দলের লোকেরা মন্থর গতিতে কাজ করলো এবং অনেকে কাপুরুষের মত যাইদের হাতে বাইয়াতকে পায়ের নিচে পিষ্ট করে তাকে সাহায্য না করে পালিয়ে গেল। সে যুদ্ধক্ষেত্রের কয়েকটি অংশে বীরত্বের সাথে লড়াই করে এবং তার যে অল্প কিছু সংখ্যক সঙ্গী সাথী অবশিষ্ট ছিল তাদেরকে সাহায্য করতে এলে তীর বিদ্ধ হয়ে নিচে পড়ে যায়। সে তার কয়েকদিন পরে দুনিয়াকে খোদাহাফেজ জানায়। তার উপর আল্লাহ ও ফেরেস্তাগণের দরুদ হোক। ১২০ অথবা ১২১ হিজরীর সফর মাসে তার শাহাদাত হয়। তার মৃত দেহটিকে তার শুভাকাঙ্খীরা রাতের অন্ধকারে খালের মধ্যে দাফন করে তার উপর দিয়ে পানিকে প্রবাহিত করে দেয়। কিন্তু অবশেষে শত্র“রা তার সমাধীস্থানটি খুঁজে পেয়ে মৃত দেহটিকে কবর থেকে বাইরে নিয়ে আসে এবং তার মাথাটি দেহ থেকে আলাদা করে হিশামের নিকট পাঠিয়ে দেয়। আর দেহটিকে হিশামের নির্দেশে কুফা শহরে প্রবেশের দরজায় ঝুলিয়ে রাখে। কয়েক বছর ধরে দেহটিকে ঝুলিয়ে রাখার পর (কেননা ঐ ঝুলন্ত দেহটি দুনিয়াত্যাগি মানুষের জন্য প্রতিক স্বরূপ হচ্ছিলো) হিশামের নির্দেশে নামিয়ে এনে পুড়িয়ে ফেলে ভস্ম গুলোকে বাতাসে উড়িয়ে দেয়.... ।
হ্যা! অত্যাচারিরা যাইদের মৃত দেহকেউ ভয় পাচ্ছিল। যাইদের শাহাদাতের খবর ইমাম সাদিককে (আ.) দারুনভাবে শোকার্ত করে। তিনি এতটাই শোকার্ত হলেন যে পবিত্র চেহারাতেও তার ছাপ ফুটে উঠলো ..... তিনি আবু খালিদ বাসতিকে একহাজার দিনার দিলেন যারা যাইদের সাথে শহীদ হয়েছে তাদের পরিবার গুলোকে দেওয়ার জন্য । ফুযাইল রাস্সান বলেন ঃ যাইদের শাহাদাতের পর ইমামের সান্নিদ্ধে উপস্থিত হয়েছিলাম। যাইদের কথা উঠায় ইমাম বললেন ঃ (আল্লাহর রহমত হউক তার উপর। সে মু’মিন, আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন, (আমাদের ইমামতের উপর বিশ্বাসী), মনীষী ও সত্যবাদী ছিল। যদি বিজয়ী হত তাহলে বিশ্বাস রক্ষা করতো এবং সে জানতো যে খেলাফতকে কার কাছে হস্তান্তর করবে) । অর্থাৎ ইমাম সাদিক (আ.)-এর ইমামত ও খেলাফতের জন্য সংগ্রাম করেছিল এবং যদি বিজয় হত তাহলে ইমাম বা প্রকৃত খলিফাকে মানুষের মাঝে পরিচয় করাতো।
ইমামের কথা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, অত্যাচারি জালিম উমাইয়্যা শাসকদের কাছ থেকে খেলাফতকে ইমামের হাতে ফিরিয়ে দেয়াই হচ্ছে যাইদের রুখে দাঁড়ানোর কারণ। কেননা সে ইমাম বাকের ও ইমাম সাদিক (আ.)-এর ইমামতকে সম্পূর্ণভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ৮ম ইমাম, ইমাম রেযা (আ.) মা’মুনকে বলেন ঃ যাইদ আলে মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষের আলেম ছিল। আল্লাহর শত্র“র সাথে যুদ্ধ করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় শাহাদত বরণ করেছে। আমার বাবা মুসা বিন জা’ফর (আ.) আমাকে বলেছেন যা তিনি যাইদের বাবা জা’ফর বিন মুহাম্মদের কাছ থেকে শুনেছেন, তিনি বলতেন ঃ আল্লাহ আমার চাচা যাইদকে করুণা কর, কেননা মানুষকে আলে মুহাম্মদের ইমামতের প্রতি দাওয়াত দিয়েছে এবং যদি বিজয়ী হত তাহলে যার প্রতি মানুষকে দাওয়াত দিয়েছিল তার প্রতি বদ্ধপরিকর থাকতো (অর্থাৎ খেলাফতকে ইমামের প্রতি হস্তান্তর করত)। যাইদ কিয়াম করার ব্যাপারে আমার সাথে পরামর্শ করেছিল, তাকে বলেছিলাম ঃ চাচা, যদি শহীদ হওয়ার জন্য ও দরজার চৌকা?ে ঝুলে থাকতে রাজী থাকেন তাহলে ক্বিয়াম করুন। মা’মুন জিজ্ঞাসা করলো ঃ সে কি ইমামতের দাবিদার ছিলনা? ইমাম ঃ না! সে মানুষকে আলে মুহাম্মদের ইমামতের প্রতি দাওয়াত করত । শেখ সাদুক বলেন ঃ যাইদ বিন আলী বলেন ঃ প্রতিটি জামানায় আলে মুহাম্মদের ইমাম আল্লাহর ওলী অবশ্যই থাকবে, তাই এই জামানায় আল্লাহর ওলী বা প্রতিনিধি হচ্ছে আমার ভাইয়ের ছেলে জা’ফর বিন মুহাম্মদ। যে তাকে অনুসরণ করে চলবে সে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। আর যে তাকে অনুসরণ করবে না সে কখনই সঠিক পথের অনুসন্ধান পাবে না ।

জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় ইমাম ঃ

উমাইয়্যা খেলাফতের শেষের দিকে ও আব্বসীয় খেলাফতের প্রথম দিকে তারা উভয়পক্ষ একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল ও নিজেদের বিষয়ে মশগুল ছিল। এমতাবস্থায় ইমাম সাদিক (আ.)-এর হাতে ছিল মুক্ত সময়। এ সময়ে তিনি নিজের দ্বীনের ও জ্ঞানের আন্দোলনকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেন। যা ছিল মদীনার আলেমদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এক বিশাল জ্ঞান আহরোণ ক্ষেত্র। সেখান থেকে হাজার হাজার লোক তাদের পছন্দমত জ্ঞানের বিভিন্ন অঙ্গনে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করে। জ্ঞানের ব্যাপারে ইসলামী দেশগুলোতে তাঁর সুপরিচিতি এত অধিক পরিমানে ছিল যা প্রতিটি জনসাধারণের মুখেমুখে ছিল। এ কারণে ইসলামী দেশগুলোর দুর-দুরান্ত থেকে মানুষমদীনায় আসতো তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য এবং আল্লাহ প্রদত্ত তাঁর অন্তহীন জ্ঞানের মহাসাগর থেকে সবাই লাভবান হত। এমন কি প্রচুর পরিমানে অমুসলিম গবেষকরাও জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার জন্য তাঁর কাছে আসতো। ইসলামের বিভিন্ন মাযহাব ও বিভিন্ন আক্বীদা বা বিশ্বাসের লোকদের সাথে তাঁর জ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে জবাব দেয়া ইসলামী ইতিহাসের পাতায় সর্ব প্রথম নজীর বিহীন অতিব আকর্ষণীয় ঘটনা। এটা সুস্পষ্ট যে ইমামের দেয়া জবাবগুলি স্থান, কাল, পাত্র ভেদে বা প্রশ্নকারীর ধারন ক্ষমতা আনুযায়ী ছিল। আর তাই কিছু উত্তর শুধুমাত্র যুক্তি দলিল আনায়নকারীদের দলিল প্রমাণকে ভুল প্রমাণিত করার জন্যে ও কিছু উত্তর আবার প্রশ্নকারীর দুরদর্শিতা ও চিন্তার ক্ষেত্রে ধারণা পাওয়ার জন্যে। অবশ্য বেশীর ভাগ প্রশ্নের জবাব জ্ঞান ও দর্শন ভিত্তিক.....।
ইমামের সমস্ত জবাবগুলি বা আলোচনাগুলি এক জায়গায় একত্রিত করার জন্য আলাদা একটি বই লেখার প্রয়োজন রাখে। আমরা এই ক্ষুদ্র পরিসরে নমুনা হিসাবে কয়েকটি ছোট আকারের প্রশ্ন ও তার জবাব যা সবার জন্য বুঝতে সুবিধা হয় সেভাবে উলে−খ করলাম এবং এর পরে তেŠওহীদের উপর ইমামের দেওয়া বক্তব্য যা মুফায্যালের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন তা আপনাদের সামনে তুলে ধরব ঃ
(১) আবু মানছুর বলেন ঃ আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছে যে ইবনে আবিল আ’উজা ও আব্দুল−াহ্ বিন মুকাফ্ফা’ (এ দু’জনই ঐ জামানায় দাহ্রী মাযহাবের আক্বীদা সম্পন্ন ছিল) মক্কায় মসজিদুল হারামে বসে ছিলাম; ইবনে মুকাফ্ফা বলল ঃ এই মানুষদেরকে দেখছো? এই বলে যে দিকে হাজীরা তাওয়াফ করছিল সে দিকে ইসারা করে বলল তাদের মধ্যে একটিরও মানুষ নাম ধারনের উপযুক্ততা নেই। কিন্তু ঐ যে মহান লোকটিকে দেখছো বসে আছেন (অর্থাৎ ইমাম সাদিককে (আ.) দেখালো) তিনি ছাড়া আর সবাই অমানুষ বা পশু! ইবনে আবিল আ’উজা বলল ঃ এতগুলো মানুষের মধ্যে কেন শুধুমাত্র তাকেই মানুষ বলে মনে কর? - কেননা তার মধ্যে এমন কিছু (জ্ঞান, ফযিলত, মহানুভবতা) দেখেছি যা অন্য কারও মধ্যে দেখিনি। -- অবশ্য তুমি যা বলছো সে কথার প্রমাণ তাঁর সাথে কথা বলে বুঝবো এবং নিজেই সে ব্যাপারে অবগত হব।
এ কাজ করা থেকে বিরত থাক, কেননা আমি নিশ্চিত যে তাঁর সাথে কথা বললে তোমার বিশ্বাস ও অবিশ্বাস যা কিছু আছে তা ধ্বংস হয়ে যাবে। (অর্থাৎ যে আল−াহ্ ও দ্বীনের প্রতিতুমি বিশ্বাস রাখ না তিনি তোমাকে সে দিকেই প্রত্যাবর্তন করাবেন)। -- তোমার ইচ্ছা এটা নয়, বরং তুমি এটাই চাইছো যে আমি যেন তাঁর কাছে না যাই। কারণ যা কিছু তাঁর ব্যাপারে বলেছো সেটা যে মিথ্যা, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে তাই। -- যেহেতু আমার উপর সন্দেহ করছো, ?ঠিক আছে তাহলে তার কাছে যাও এবং যেভাবে চাও পরীক্ষা কর। তবে যেন ভয় পেওনা এবং শক্তি হারিয়ে ফেলনা। তাহলে তার কাছে পরাজিত হবে। আর যা কিছু বলতে চাও সে বিষয়ে হিসাব নিকাশ কর। কি কথায় তোমার লোকসান আর কি কথায় তোমার লাভ হবে সে গুলিকে ঠিক কর। যাতে করে কথা বলার সময় যেন দিশেহারা হয়ে ভূল-ভ্রান্তি না হয়ে যায়। ইবনে আবিল আ’উজা ইমামের কাছে গেল এবং আমি ও ইবনে মুকাফ্ফা’ আগের জায়গাতেই বসে থাকলাম। সে ফিরে এসে বলল ঃ ‘‘ওহে মুকাফ্ফা’র ছেলে! তোমার কি হবে, তুমি বলেছিলে তিনি মানুষ; কিন্তু আমি দেখলাম তিনি মানব শ্রেনীর নয়! যদি পৃথিবীতে এমন কেউ থেকে থাকে যে, চাইলেই কেবল রুহ এবং চাইলেই এই মাটির শরিরে দেখা যায়, একমাত্র তিনিই!!’’ ইবনে মুকাফ্ফা’ জিজ্ঞেস করলো কেন কি হয়েছে? বলল ঃ তার কাছে গিয়ে বসলাম অন্যদের চলে যাওয়ায় আমরা একা ছিলাম। তিনি বললেন ঃ যদি দ্বীন ও ঈমানের বিষয়টি এমন হয় যা তারা বলে (যারা তাওয়াফ করছিল তাদের দিকে ইসারা করে বললেন) এবং সুনিশ্চিতভাবে এটাই ?ঠিক যা তারা বলে (অর্থাৎ আল্লাহ, দ্বীন ও আখেরাতের ভিত্তি সত্যের উপর) এ দিক দিয়ে তারা সঠিক পথে চলছে, আর তুমি সৌভাগ্য অর্জন করা থেকে দুরে থাকছো এবং অচিরেই ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। যদি বিষয়টি এমন হয় যা তুমি বলছো (অর্থাৎ আল্লাহ ও আখেরাত বলে কিছু নেই) প্রকৃতপক্ষে তেমন নয় যা তুমি বলছো তবুও এ দিক দিয়ে মুসলমানরা তোমাদের সাথে সমান সমান। (অর্থাৎ যেহেতু মুসলমানরা দ্বীনের প্রতি বিশ্বাসী ও কোন প্রকার ধ্বংসাত্বক অবস্থার মধ্যে পতিত হয়নি, যদিও ভূল অনুমানের ভিত্তিতে ধরে নেই যে আল্লাহ ও আখেরাতের কোন অস্তিত্ব নেই, যেরূপ তোমরা দাহ্রী মাযহাবের লোকেরা মনে কর মৃত্যুর সাথে সাথে অন্যান্য সব কিছুরও শেষ হয়ে যাবে এবং হিসাব নিকাশের কোন বালাই নেই। তথাপিও মুসলমানরা কোন প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে না বা তাদের শেষ পরিণতি তোমাদের অনুরূপ হবে)। বললাম ঃ তোমার উপর আল্লাহর রহমত হোক। কিন্তু আমরা কি বলি আর তারাই বা কি বলে। আমাদের আক্বীদা বা বিশ্বাসের সাথে তাদের আক্বীদা বা বিশ্বাসের কোন পার্থক্য নেই সব একই! বললেন ঃ কিভাবে তোমার আর তাদের কথা একই হতে পারে? কেননা তারা তো ক্বিয়ামত, আখেরাতের পুরস্কার, আজাব, ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আসমানের সৃষ্টি তাঁর মাধ্যমেই জানে। এমতবস্থায় তোমরা আসমানকে বিরান ভূমি মনে কর যা কিনা সেখানে কেউ নেই। আল্লাহ সম্পর্কিত কথা উ?তেই সুযোগকে হাত ছাড়া না করে নিজের আক্বীদাকে বর্ণনা করার জন্য এই সময়কে গনিমত ভেবে বললাম ঃ যদি তাই হয় তারা যা বলে, তাহলে কেন আল্লাহ নিজেকে তাঁর সৃষ্টির মাঝে অস্তিত্বলাভ করিয়ে তাকে উপাসনা করার জন্য দাওয়াত করেন না? যদি তা করতেন তাহলে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে মতপার্থক্য থাকতো না। কেন নিজেকে নিজের কাছ থেকে গোপন করে নবীদেরকে পাঠান? যদি তিনি নিজে আসতেন তাহলে মানুষের জন্য ঈমান আনতে অধিক সহজ হত। বললেন ঃ (তোমার জন্য দুঃখ হয়, যার শক্তি তোমার অস্তিত্বে বিরাজমান কিভাবে তা তোমার কাছে অস্পষ্ট থাকে? তোমাকে সৃষ্টি করেছেন যা কিনা তুমি আগে কখনও ছিলেনা, তোমার ছোট থেকে বড় হওয়া, শক্তিহীনতা থেকে তোমাকে শক্তিমান করা, আবার শক্তিমান থকে শক্তিহীন করা, অসুস্থতার পরে সুস্থ করা, আবার সুস্থতার পরে অসুস্থ হওয়া, দুঃখের পরে সুখ ও সুখের পরে দুঃখিত হওয়া, কষ্টের পরে আনন্দ ও আনন্দের পরে ব্যথিত হওয়া, শত্র“র পরে বন্ধুত্বে ও বন্ধুত্বের পরে শত্র“তে পরিণত হওয়া, অস্থিরতার পরে স্থিরতা ও স্থিরতার পরে অস্থিরতায় পতিত হওয়া, চাওয়ার পরে না চাওয়া ও না চাওয়ার পরে চাওয়া, পছন্দের পরে অপছন্দ ও অপছন্দের পরে পছন্দ করা, নিরাশার পরে আশা ও আশার পরে নিরাশা হওয়া, অবহিত হওয়া ও স্বরণে আনা যা তোমার স্বরণে ছিলনা এবং ভুলে যাওয়া যা কিছু তোমার স্বরণে ছিল.....)।
এমনভাবে আল্লাহর সৃষ্টির ও ক্ষমতার নিদর্শন সমুহ যা আমার অস্তিত্বে বিরাজমান এবং যা অস্বীকার করা অসম্ভব, একের পর এক আমাকে বলতে থাকলেন। এমনভাবে বলতে থাকলেন ঐ সময় আমি মনে করছিলাম এখনই আল্লাহ আমার ও তাঁর মধ্যে প্রকাশ হয়েছেন ।
আব্দুল্লাহ্ দিছানি, সে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখতো না। ইমাম সাদিক (আ.)-এর বাড়ীতে গিয়ে অনুমতি নিয়ে ভিতরে এসে বলল ঃ হে জা’ফর বিন মুহাম্মদ! আমাকে আল্লাহর প্রমাণ দাও। ইমাম ঃ তোমার নাম কি?
সে কিছু না বলেই উঠে বাইরে চলে গেল। তার বন্ধুরা ঘটনাটি জানার পর তাকে বলল ঃ কেন তুমি তোমার নাম বললে না? সে ঃ যদি আমি বলতাম যে আমার নাম আব্দুল্লাহ্ নিঃসন্দেহে তিনি বলতেন, সে কে যে তুমি তার গোলাম বা বান্দা? বন্ধুরা ঃ ফিরে যাও এবং তাকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রমাণ দেয়ার জন্য বল। আর তাকে তোমার নাম বলতে অপারগতা দেখাও। দিছানি ফিরে এলো এবং ইমামের কাছে বলল ঃ আমাকে আমার সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে বলুন আর আমার নাম জানতে চেয়ে কোন প্রশ্ন করবেন না দয়া করে।
ইমাম ঃ বসো! ইমামের কনিষ্ট সন্তানের হাতে একটি মুরগীর ডিম ছিল যা নিয়ে সে খেলা করছিল। তিনি মুরগীর ডিমটি তার কাছ থেকে নিয়ে বললেন ঃ ওহে দিছানি! ডিমের এই আবরণটি চারিদিক দিয়ে মজবুতভাবে আটকানো আছে এবং এই মজবুত বা শক্ত আবরণটির নিচে একটি পাতলা আবরণ রয়েছে আর ঐ পাতলা আবরণের নিচে স্বর্ণালী রংয়ের তরল পদার্থ ও রূপালী রংয়ের গলিত পদার্থ এক সংগে আছে যা একে অপরের সাথে মিশ্রিত হচ্ছে না। আর এই অবস্থায় অবশিষ্ট থাকছে এবং এমন কিছু তার থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছে না যে তার ভাল থাকার খবর দিবে। তদ্রুপ না তার খারাপ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। সাথে সাথে এটার ভিতর পুং না স্ত্রী লিঙ্গ আছে তাও আমরা জানিনা। কিন্ত এর ভিতর থেকে যখন বাচ্চা বেরিয়ে আসবে তা হবে বিভিন্ন বংয়ের। তুমি কি এতসব বিস্ময়কর বিষয়ের জন্য কোন পরিচালক বা সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন আছে বলে মনে করনা? দিছানি চিন্তার গভীরে পৌছে কিছু সময় নিরব থাকলো। অবশেষে চিন্তার অবসান ঘটিয়ে বলল ঃ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল−াহ্ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই, যিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ তাঁর প্রেরীত রাসূল ও বান্দা। সাথে সাথে আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে ইমাম ও তাঁর প্রতিনিধি। আর আমি আমার অতীতের জন্য অনুতপ্ত ও উদ্বিগ্ন ।

হিশাম বলেন ঃ এক নাস্তিক ইমামের কাছে তার বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্যে এক প্রশ্নে জানতে চাইলো ঃ আল্লাহ্ কী? ইমাম ঃ তিনি এক অস্তিত্ব যা অন্য সব অস্তিত্বের বিপরিত। আমার কথায় আমি এটাই বোঝাতে চাচ্ছি যে, তিনি অস্তিত্বমান যেমনি অন্যান্য সমস্ত কিছু অস্তিত্বমান (প্রকৃতপক্ষে তিনি এমনই এক অস্তিত্ব) শুধুমাত্র না তাঁর কোন শরীর আছে, না কোন আকৃতি, না তাকে দেখা যায়, না স্পর্শ করা যায়, না আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে তাকে অনুভব করা যায়, না কোন চিন্তা বা কল্পনা তাকে উপলব্ধি করতে পারে, না কোন ধ্বংস বা শেষ বলে তাঁর মধ্যে কিছু আছে যা তাঁর অস্তিত্বের ব্যাপারে কোন প্রকার ত্র“টি আনতে পারে, না সময় নিজের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাঁর কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে। -- আপনি কী বলেন, তিনি কী শুনতে ও দেখতে পায়? -- তিনি শুনতে ও দেখতে পান। শুনতে ও দেখতে পাওয়া দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে অর্থাৎ কান ও চোখের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কিন্তু তিনি তাঁর অস্তিত্বের মাধ্যমে শুনতে ও দেখতে পান। আমি এমনটি বোঝাতে চাচ্ছিনা যে, যখন বলছি তিনি তার অস্তিত্বের মাধ্যমে শুনতে ও দেখতে পান এমনটি নয় যে, তিনি আলাদা কিছু ও তার অস্তিত্ব আলাদা কিছু। শুধুমাত্র এটা তোমার বোঝার জন্য বলেছি। সুতরাং এটাই বলতে চাই যে, তিনি তার সম্পূর্ণ সত্তা দিয়ে শুনতে ও দেখতে পান। এই অর্থে নয় যে (তাঁর সম্পূর্ণ) অর্থাৎ তাঁর অস্তিত্ব বিভিন্ন অংশে বিভক্ত, বিষয়টিকে তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি মাত্র। আর আমার উদ্দেশ্য এটা ছাড়া অন্য কিছুই নয় যে, তিনি তাঁর সত্তার বা অর্থের মধ্যে কোন প্রকার বিভেদ বা মতপার্থক্য ব্যতিরেকেই শুনতে ও দেখতে পান। তিনি মহাজ্ঞানী ও সকল বিষয়ে অবহিত আছেন।
-- তাহলে তিনি কে?
-- তিনি হচ্ছেন (প্রভূ), (মা’বুদ) ও (আল−াহ্); আর এই নামগুলিতে ব্যবহারিত অক্ষরের প্রতি দৃষ্টি রেখে আমি কথা বলছি না বরং আমার দৃষ্টি ঐ অর্থ বা অস্তিত্বের প্রতি যে তিনি সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং ঐ নামগুলিকেও তিনিই সৃষ্টি করেছেন। আর আমি এই অক্ষরগুলিকে ঐ উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করেছি যে, এ গুলি ঐ একই অর্থ ব্যবহার করে যা বা অন্যান্য নামের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। আর তিনি এমনই সৃষ্টিকর্তা যিনি প্রিয় ও মহিমান্বিত।
-- কিন্তু যা কিছু আমাদের চিন্তায় আসে তার সবই দেখতে পাই না শুধুমাত্র সৃষ্টি বস্তু ছাড়া।
-- যদি তাই হয় তাহলে তৌহীদের দায়িত্ব আমাদের উপর থেকে তুলে নেয়া হবে। কেননা যাকে কোন চিন্তায় আনা যায় না তাঁর ব্যাপারে আমাদের কোন দায়িত্ব নেই। কিন্তু আমরা বলে থাকি যা কিছু কল্পনার মাধ্যমে আমাদের চিন্তায় আসে এবং কল্পনার মধ্যেই ঘুরপাক খায়, বা কোন আকৃতি আমাদের কল্পনায় থাকে যার মাধ্যমে সম্ভব হয় ঐ কল্পনা অনুযায়ি কোন সাদৃশ্য আকাতে, আর তা হচ্ছে সৃষ্টিত জীব। সুতরাং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমানে অবশ্যই তাকে দুইটি অসঙ্গত বিষয়ের থেকে আলাদা জানবো। একটি হচ্ছে অর্থাৎ অস্বীকার, যার মানেই হচ্ছে তাকে অস্বীকার করা ও অস্বীকৃতি দেওয়া। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে অর্থাৎ উপমা দেওয়া, কেননা উপমা বা তুলনা সাদৃশ্যপূর্ণ করার সামিল। এগুলি সবই সৃষ্ট জীবের বিশেষণ স্বরূপ যা সবার কাছেই পরিস্কার যে কতগুলি অংশের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে। অতএব সৃষ্টিকর্তার বা আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে আমরা বাধ্য এই কারণে যে, সৃষ্ট বস্তু তার উপর নির্ভরশীল এবং সমস্ত কিছুই তারই উৎপাদিত বা তৈরীকৃত। আর তাদের অস্তিত্ব তাদের থেকে আলাদা বা তাদের মত নয়। কেননা তাদের সাদৃশ্য তাদের মত হবে। যেমন তাদের গ?ন ও প্রকৃতি যা তাদের মধ্যে দেখা যায় ও তাদের মতই সাদৃশ্য হবে যেমন তারা আগে ছিল না পরে অস্তিত্ব পেয়েছে, যেভাবে ছোট থেকে বড়, অন্ধকার থেকে আলোয়, শক্তিহীনতা থেকে শক্তিমানে পেŠছায়, বা অন্যান্য বিভিন্ন দিক যা সৃষ্টির মধ্যে বিরাজমান। এখানে এর থেকে বেশী বলার অবকাশ রাখে না।
-- যখন আল্লাহর অস্তিত্বকে প্রমান করছেন প্রকৃতপক্ষে তাকে যেন সীমারেখার আওতায় আনলেন।
-- না কখনই তা নয়, তাকে সীমারেখার আওতায় আনিনি, বরং শুধুমাত্র তাঁর অস্তিত্বকে প্রমান করেছি অর্থাৎ তিনি যে আছেন তার প্রমাণ করেছি। আর অস্বীকার ও প্রমাণ করার মধ্যে কোন স্তর নেই।
-- তাঁর কী অস্তিত্ব আছে? -- অবশ্যই, কোন কিছুই অস্তিত্ব বা সত্তা ছাড়া প্রমাণিত হয় না।
-- তাঁর কী মান ও ধরন আছে?
-- না। কেননা মান ও ধরন বিশেষণের উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। কোন কিছুর উপর পূর্ণ জ্ঞান থাকলে তার মান ও ধরনকে ব্যাখ্যা কারা সম্ভব হয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’য়ালার অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে অবশ্যই এ দুটি পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে প্রথমটি তাকে অস্বীকার ও তুচ্ছ মনে করা এবং দ্বিতীয়টি তুলনা করা (তাকে অন্য বস্তুর সাথে তুলনা করা)। কেননা যারাই তাকে অস্বীকার করলো তারাই তাকে অবিশ্বাস করলো ও তাকে সৃষ্টিকর্তার আসন থেকে দুরে সরিয়ে রাখলো এবং তাকে অকার্যকর বলে মনে করলো। আর যারাই তাকে অন্য কারুর সাথে তুলনা করলো তারাই তাকে সৃষ্টিত ও তৈরীকৃত বস্তুর বিশেষণের সাথে যারা সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ্ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা তুলনা করলো। সুতরাং অবশ্যই বলতে হয় তাঁর জন্য যে মান ও ধরন আছে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তার যোগ্য নয় এবং তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তার ভিতরে শরিক নেই এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ তার উপর আয়ত্ত রাখে না এবং তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানেনা যে তার মান ও ধরন কেমন।
-- তিনি কী তাঁর অস্তিত্বে বস্তুর উপর তত্ত্বাবধান রাখেন এবং কোন কাজ করেন?
-- তিনি এসব কথার উর্দ্ধে যে তার অস্তিত্বে বস্তুর উপর তত্ত্বাবধান রাখে বা কোন কাজ করে কি করেনা। কেননা এটাও সৃষ্টিত বস্তুর বিশেষণ। যা কিনা তারা তাদের অস্তিত্বে বস্তুর সাথে সম্পর্ক ও তার উপর তত্ত্বাবধান রাখে (এবং কাজ-কর্মগুলি তাদের দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে করে)। আর আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিনের প্রভাবশালী ইচ্ছা প্রতিটি বিষয়ের মধ্যে আছে এবং যা কিছু ইচ্ছা করেন তা ঘটে যায় ।

মুফায্যাল-এর তাওহীদ সম্পর্কিত বই ঃ
এই বইটিতে মানুষ ও পৃথিবী সৃষ্টি এবং আল্লাহ্ তা’য়ালার অস্তিত্ব, জ্ঞান, ক্ষমতা ও তাঁর দর্শন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর ইমাম সাদিক (আ.)-এর দেয়া বক্তব্য এবং সে তাঁর অনুমতি নিয়ে যেগুলিকে লিখেছিল তারই বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে। এই মহামুল্যবান বইটি আল−ামা মাজলিসী ও আরও অন্যান্য বিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা অনুবাদীত হয়েছে এবং প্রকাশিত হয়েছে। এটা অধ্যায়ন করা, যারা কিনা তাওহীদ বিষয়ের উপর জানার আগ্রহ রাখেন ও যে সকল চিন্তাবিদগণ আল−াহ্র অস্তিত্বের গভীরতাকে জানতে চান তাদের জন্য বিশেষ উপকারী ও প্রয়োজনীয়। সাঈদ বিন তা’উস তার “কাশফুল মুহাজ্জাহ্” নামক বইতে নিজের সন্তানকে মুফায্যালের তেŠওহীদ সম্পর্কিত বইটি অধ্যায়নের উপদেশ দিয়েছে । এই বইয়ের অন্য আরেক জায়গায় বলেছে ঃ কেউ সফরে যাওয়ার সময় যে বইগুলি তার সাথে নিবে, মুফায্যালের তাওহীদ সম্পর্কিত বইটি হচ্ছে তার মধ্যে একটি । এখানে এই বইটি সমন্ধে আলোচনা করব এবং তার সাথে সাথে ছওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে তার বিশেষ বিশেষ অংশের অনুবাদকেও তুলে ধরব ঃ মুফায্যাল নিজে এই বইয়ের ভূমিকায় বলেছেন ঃ একদিন সন্ধায় মসজিদে নব্বীতে বসেছিলাম এবং ইমামের মহত্ব ও যা কিছু আল্লাহ্ তা’য়ালা তাকে ফযিলত, ইজ্জত দিয়েছেন সে বিষয়ে ভাবছিলাম ..... হঠাৎ করে ইবনে আবিল আ’উজা যে লা-মাযহাব হিসাবে পরিচিত ছিল সেখানে এলো। তার আসার কিছু সময় পর তার এক বন্ধুও সেখানে উপস্থিত হল। তারা এমন এক জায়গায় বসলো যা আমি তাদের কথাবর্তাগুলি শুনতে পাচ্ছিলাম।
সে ও তার বন্ধুটি একের পর এক নবী (সা.)-এর বিষয়ে কথা ..... বলছিল। তারা ঐ বিষয়ের কথা শেষে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে কথা শুরু করলো এবং এই পৃথিবীর কোন সৃষ্টিকর্তা ও পরিচালক নেই, এ সব কিছু কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই প্রকৃতির মাধ্যমে নিজ নিজেই সৃষ্টি হয় বা হয়েছে, আগেও এমন ছিল আর ভবিষ্যতেও তাই থাকবে, এই বলে তারা তাদের আলোচনার ইতি টানলো। যেহেতু ঐ ভিত্তিহীন কথাবার্তা থেকে দুরে ছিলাম সেহেতু আল্লাহর করুণার মধ্যে ছিলাম। চরম রাগের কারণে চুপ থাকতে না পেরে বললাম ঃ এই আল্লাহর শত্র“, তোমরা নাস্তিক ও ধর্মহীন হয়ে গেছ। কেননা যে আল্লাহ্ সব থেকে সুন্দর গঠন বা গড়নে তোমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং বিভিন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে এই পর্যায়ে তোমাকে পেŠছিয়েছেন তাকে অস্বীকার করেছো। যদি তোমরা উপলব্ধি দিয়ে নিজেদের ভিতর গবেষণা কর বা তোমরা অস্তিত্বের দিকে খেয়াল কর তাহলে নিশ্চিত যে আল−াহ্ ও তাঁর সৃষ্টির প্রতিচ্ছবি তোমার মধ্যে বিভিন্ন দলিলের মাধ্যমে উপস্থিত রয়েছে। তোমাদের মধ্যে তার অস্তিত্ব, ক্ষমতা, জ্ঞান ও দর্শনের সাক্ষ্য সূর্যের আলোর মত প্রজ্জ্বলিত হয়ে জ্বলছে। ইবনে আবিল আ’উজা বলল ঃ এই যে তুমি! যদি তুমি মোতাকালে−ম হও (যারা আক্বীদা ভিত্তিক জ্ঞানে বিশেষ পারদর্শি এবং এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে পটু হয়) তাহলে তোমার সাথে তাদের মত করে কথা বলব। আর যদি তুমি আমাদেরকে আলোচনায় হারাতে পার তবে আমরা তোমার কথা মেনে চলব। আর যদি তুমি ঐ ধরনের লোক না হয়ে থাকো তাহলে তোমার সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই। যদি তুমি জা’ফর বিন মুহাম্মদ সাদিকের ছাত্র হয়ে থাকো তাহলে বলব যে সে নিজেও আমাদের সাথে এভাবে কথা বলে না। এভাবে আমাদের সাথে বিতর্ক করে না। সে আমাদের আলোচনা যা তুমি শুনেছ তার থেকেও অনেক বেশী পরিমানে কয়েকবার শুনেছে। তাও আমাদেরকে কোন অপমান করেনি। আর আমাদের প্রশ্নের উত্তরে পরিমানের বাইরে কিছু বলেনি। সে শান্ত, নম্র, বিচক্ষণ ও জ্ঞানী। কখনও তাকে রাগান্বিত হতে ও বোকামী করতে দেখা যায় না। কোন আলোচনা থেকে উ?ে যায় না। আমাদের কথাবার্তা ও দলিল প্রমাণগুলো মনোযোগ সহকারে শোনে। যতটুকু মনে আছে ততটুকুই বলছি। এ যাবত যতবারই তার সাথে কথা বলেছি আলোচনা শেষের দিকে মনে মনে ভাবতাম হয়তো আমরা বিজয় হয়েছি। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে খুব অল্প কথায় সংক্ষেপে আমাদের দলিল প্রমাণগুলোকে বাতিল করে দিত। আর সামান্য কথায় সঠিক কথাটি আমাদের প্রতি বলতো। যার মোকাবিলায় আমাদের কিছু বলার থাকতো না। যেহেতু তুমি তার ছাত্র তার ব্যক্তিত্বের দিকে তাকিয়ে আমাদের সাথে সেভাবে কথা বল। আমি ভীষণ কষ্টপেয়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলাম এবং ওদের এই নাস্তিকতা ও সন্দেহ মূলক কথাবার্তায় অনেকে মুসলমান হয়েও আল্লাহকে অস্বীকার করতে শুরু করেছে তাদের কথা ভাবছিলাম। অবশেষে আমার নেতা ইমাম জা’ফর সাদিক (আ.)-এর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে দুঃখিত ও বিষন্ন অবস্থায় দেখে বললেন ঃ তোমার কি হয়েছে?
আমি তাদের সমস্ত কথাগুলিকে তার কাছে বললাম। তিনি বললেন ঃ তোমাকে সৃষ্টিকর্তার পৃথিবী, পশুপাখি, হিংস্র জন্তু, কিট-পতঙ্গ, মানুষ, চার পা বিশিষ্ট, লতা পাতা, ফল ও ফলহীন গাছ, শাক-সবজী, প্রভৃতির সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে বলব। যারা শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং মু’মিনদের জ্ঞানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আর নাস্তিক ও কাফেররা এ কারণে দিশেহারা থাকবে। কাল সকালে আমার কাছে আসবে। এই দু®প্রাপ্য তাওফিক পেয়ে আমি দারুণ ভাবে আনন্দিত হয়ে বাড়ী ফিরলাম। জীবনদানকারী ঐ আলোচনা শোনার অপেক্ষায় যেন রাত আর শেষ হতে চাচ্ছিল না।
প্রথম আলোচনা ঃ
পরের দিন সকালে ইমামের কাছে ছুটে গেলাম। ভিতরে আসার অনুমতি চেয়ে দাড়িয়ে রইলাম। তারপর অনুমতি পেয়ে কক্ষে প্রবেশ করতেই ইমাম আমাকে অতি একান্তে ডাকলেন। সেখানে তাঁর কাছে বসার পরে বললেন ঃ মুফায্যাল, এমনটি নয় কি আমাদের এই আলোচনার কথা চিন্তা করে তোমার রাতটা অনেক বড় বলে মনে হয়েছে? বললাম ঃ এমনটিই আমার পথপ্রদর্শক। ইমাম শুরু করলেন ঃ হে মুফায্যাল! আল্লাহ্ ছিলেন এবং তাঁর আগে অন্য কিছুই ছিল না। তিনি আছেন এবং তাঁর থাকার কোন শেষ নেই। তিনিই শুধুমাত্র প্রশংসার যোগ্যতা রাখেন, যিনি আমাদের অন্তরকে তাঁর ঐশ্বরিক নূর দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। তাঁর প্রতি বিশেষ অভিনন্দন ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি এই কারণে যে, তিনি আমাদেরকে সর্বপ্রকার জ্ঞান দান করে শ্রেষ্ট করেছেন। উচ্চমান সম্পন্ন মর্যাদা দান কারেছেন। তিনি তাঁর ইচ্ছায় আমাদেরকে সমস্ত সৃষ্টির উপরে স্থান দিয়েছেন। তার প্রজ্ঞায় আমাদেরকে সমস্ত সৃষ্টির সাক্ষ্য দানকারীর মর্যাদা দান করেছেন। সে এ গুলি লিখতে অনুমতি চাইলে ইমাম অনুমতি দিয়ে বললেন ঃ হে মুফায্যাল! যারা আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে দিধা-দ্বন্দ্ব করে তারা পৃথিবী সৃষ্টির আশ্চর্যজনক বিষয়ের প্রতি অজ্ঞ। সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত, জঙ্গল ও মরুভুমির সৃষ্টির ব্যাপারে আল−াহ্ তা’য়ালার প্রজ্ঞা সম্বন্ধে তাদের ধারণা অতি ক্ষুদ্র ও সামান্য। সুতরাং ত্র“টিপূর্ণ চিন্তা ও জ্ঞানের কারণেই তারা আল−াহ্কে অস্বীকার করার পথ বেছে নিয়েছে। তাদের দুরদৃষ্টির অভাব থাকায় একগুয়েমীতা করে তাকে প্রত্যাখান করে এমন জায়গায় পেŠছিয়েছে যে, বলছে এই সকল সৃষ্টির কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। এই পৃথিবীর কোন পরিচালক নেই বলে দাবি করছে। আর বলেছে যা কিছু অস্তিত্বে রূপ নেয় তা কোন হিসাব-নিকাশ, নিয়ম-নীতি, প্রজ্ঞা বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে নয়। আল্লাহর সম্বন্ধে যা কিছু প্রশংসা করা হয় তিনি তারও অনেক উর্ধের। আল−াহ্ তাদেরকে তাঁর রহমত থেকে দুরে রাখুন যাদের সামনে সত্য পরিস্কার হওয়ার পরও বুঝে উ?তে পারেনা যে কোন দিকে যাবে? তারা এক অন্ধের দল। কেননা কিছুই দেখতে পায়না। এমনই যে তাদেরকে যদি কোন প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে মেঝের উপর উচ্চ মুল্যের কার্পেট বিছানো থাকে ও বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার পানিয়, দামি পোশাক ও যে সব জিনিষের প্রতি মানুষ প্রয়োজন অনুভব করে তার সব কিছুই পরিপাটি করে রাখা হয়, তারপর যদি তাদেরকে ঐ প্রাসাদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হয় বা প্রতিটি ঘরের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় তবুও তারা ঐ প্রাসাদকে দেখতে পাবে না। এমনকি তার মধ্যের জিনিষগুলিকেও না। কখনও এমন যে, তার পদযুগল কোন পাত্রে বা জিনিষে যা তার নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করছে তাতে ধাক্কা লাগতে পারে। সেটা কেন বা কি কাজে সেখানে রাখা হয়েছে, ঐ অন্ধরা তার প্রয়োজন মনে না করে বা না জেনে, অযথায় রাগান্বিত হয়ে ঐ প্রাসাদ ও প্রাসাদের তৈরী কারকের উপর গালা-গাল করে! প্রকৃতপক্ষে তাদের মতই অবস্থা যারা অন্ধ। আর এ কারণেই তারা পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকৃতি দিতে এবং পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপনাকে স্বীকার করতে অপারগ। কেননা এই অস্বীকারকারীদের বিবেক সৃষ্টির কারণসমূহ, উপকরণসমূহ ও উপকারসমূহকে বুঝে উ?তে না পারায় এই পৃথিবীতে অজ্ঞদের মত দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর স?িক ব্যবস্থাপনা, সৃষ্টির দৃঢ়তা এবং এ গুলোর মধ্যে যে নিখুঁত ও সুন্দর-সাবলীলতার ভাব রয়েছে তার কিছুই তারা বুঝতে পারে না। যেহেতু কোন কিছু দেখার পরেও তার কারণকে তারা বুঝে উ?তে পারে না বা তার ভেদ তাদের আক্বলে আসেনা সেহেতু তারা তার ব্যাপারে বাজে ধারনা পোষন করে অথবা তাকে অস্বীকার করে। আর সেটাকে বড় ধরনের সমস্যা বলে অবহিত করে। ইমাম তাঁর বক্তব্যে তাকে মানুষ সৃষ্টি ও তার বিভিন্ন ভেদ সম্বন্ধে এবং আল্লাহর বিভিন্ন নে’য়ামতের ব্যাখ্যা দিলেন।
সংক্ষিপ্ততার দিকে তাকিয়ে প্রথম আলোচনাকে এখানেই শেষ করছি এবং ইমামের আরও তিন পর্বের আলোচনাকে পর্যায়ক্রমিকভাবে বর্ণনা করছি।

দ্বিতীয় আলোচনা ঃ
...... ওহে মুফায্যাল .....মহাজ্ঞানী ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সেই আল−াহ্ রাব্বুল আ’লামিনের কর্মকেŠশল সম্বন্ধে চিন্তা কর। কিভাবে হিংস্র ও শিকারী জীবজন্তু সৃষ্টি করেছেন। কিভাবে তাদের জন্য তীক্ষè ও ধারালো দাঁতগুলো, কঠিন ও সুদৃঢ় থাবাগুলো ও এতবড় মুখ সৃষ্টি করেছেন। যা সব দিক দিয়ে মানানসই ................ আরও যদি দেখি শকুন পাখির মাংস খাওয়ার তীক্ষè ঠোট এবং কাজের উপযোগী পাগুলো। যদি আল−াহ্ তা’য়ালা যে সকল প্রানী ঘাস খায় সে সকল প্রানীকে তীক্ষè নখ বিশিষ্ট পায়ের পাতা দিতেন তা তাদের কোন প্রয়োজনে আসতো না। কেননা তারা শিকারও করতো না মাংসও খেত না। আর যদি হিংস্র প্রানীদেরকে ক্ষুর বিশিষ্ট পায়ের পাতা দিতেন তাও আবার তাদের কোন প্রয়োজনে আসতো না। কেননা যার মাধ্যমে শিকার করে তারা তাদের খাদ্য সংগ্রহ করতো তা থেকে তারা প্রত্যাখ্যাত হত। তুমি দেখছো না যে আল−াহ্ তা’য়ালা তাদের প্রত্যেককে তাদের জন্য যা কিছু মানানসই ও প্রয়োজনীয় তাই তাদেরকে দিয়েছেন। চার পা বিশিষ্ট প্রানীদের বাচ্চাদের কথা চিন্তা কর। কিভাবে তারা জন্মানোর পরে তাদের মায়েদের পিছনে পিছনে যায়। যেভাবে মানুষের বাচ্চাদেরকে পরিপাটি ও লালন পালনের প্রয়োজন হয় তাদের তা দরকার হয় না। কেননা যা কিছু মনুষ্য জাতির মায়েরা তাদের বাচ্চাদের পরিপাটি ও লালন পালনের ব্যাপারে জানেন বা এইগুলি করার ক্ষমতা রাখেন, তাদের জন্য তা সম্ভব। আর চার পা বিশিষ্ট প্রানীর মায়েদের জন্য তা সম্ভবপর নয়। আর এ কারণেই আল−াহ্ রাব্বুল আ’লামিন চার পা বিশিষ্ট প্রানীর বাচ্চাদের এমন শক্তি দিয়েছেন যা তারা জন্মের পরই, কোন শিক্ষক বা সেবিকা ছাড়াই তারা নিজেদের পায়ে দাড়াতে শিখে ও পথ চলতে শুরু করে। এ কারণেই যে সেই বাচ্চা যেন অতি অল্প সময়ের মধ্যেই কোন শিক্ষক ব্যতীরেকে বেড়ে উ?ে ও নিজের যথাযোগ্যতা অর্জন করে নিজেকে পরিপূর্ণতায় পেŠছাতে পারে। আর কিছু কিছু পাখির বাচ্চারা যেমন ঃ মুরগী ও তিতির পক্ষী বিশেষের বাচ্চারা ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে আসা থেকেই পথ চলতে ও মাটি থেকে খাবার খুটে খেতে শুরু করে। আল−াহ্ তা’য়ালা অন্য কিছু পাখির বাচ্চারা যেমন ঃ কবুতারের বাচ্চা বা এই ধরনের পাখির বাচ্চারা যেহেতু কম শক্তি সম্পন্ন, সেহেতু তাদের মায়েদের মধ্যে অনেক বেশী পরিমান ভালবাসা দিয়েছেন যাতে করে তারা মুখের মধ্যে খাদ্য জমা করে তা তাদের বচ্চাদের মুখের মধ্যে ঢেলে দেয়, ঐ সময় পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না বাচ্চা পাখিরা উড়তে শিখে। আর এই ধরনের পাখিদের বাচ্চার পরিমান মুরগীর বাচ্চার পরিমানে দেননি এ কারণেই যে তারা যেন তাদের বাচ্চাদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে পারে বা তাদের বাচ্চারা যেন মারা না যায়। সুতরাং এটা পরিস্কার যে প্রতিটি বিষয়ে আল−াহ্ রাব্বুল আ’লামিনের ব্যবস্থাপনা বা কর্মকেŠশল ঐ বিষয়ের উপযোগী।

তৃতীয় আলোচনা ঃ
..... অনেক কিছুই আছে যা বাতাসের তরঙ্গের সংঘর্ষের দ্বারা তৈরী হয়ে থাকে। আবার বাতাসই তা আমাদের কানে পেŠছে দেয়। মানুষ প্রতিদিন ও রাতে তাদের জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে কথা বলে থাকে। যদি মানুষের এই কথাবার্তাগুলি বাতাসে ভেসে থেকে বারংবার পূনারাবৃত্তি হতে থাকতো তাহলে এই গুঞ্জনময় পৃথিবীতে মানুষের কাজের ব্যঘাত ঘটতো এবং বাতাসের পরিবর্তে হিসাব-নিকাশহীন কাগজের প্রয়োজন হত। কেননা যে কথাবার্তা বলা হয় তার পরিমান লেখার থেকেও অনেক বেশী .....
বিজ্ঞ সৃষ্টিকর্তা এই বাতাসকে একটি নরম কাগজ বিশেষ দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছেন যা কথাবার্তা ও শব্দকে ধারন করে। পরবর্তীতে অতীতের কথাবার্তা ও শব্দকে মুছে ফেলে নতুন কথাবার্তা ও শব্দকে ধারন করার জন্য তৈরী হয়ে যায়। যা কিনা অতীতের কথাবার্তা বা শব্দগুলি ক্ষয় বা ধ্বংস হয়ে যায়না। আর এই বাতসের উপকারীতার দিকে যদি তুমি তাকাও তাহলে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। কেননা বাতাস মানুষের জীবনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিষ যা দেহের শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে সাহায্য করে। দেহের মধ্যে এই বাতাস আসা যাওয়াটাই হচ্ছে মানুষের জীবিত থাকার প্রথম উপকরণ। আর দেহের বাইরের অংশে পরিবর্তন ঘটায়। বাতাস শব্দগুলিকে অনেক দুর থেকে নিয়ে আসে। সুগন্ধগুলিকে আমাদের কাছে পেŠছায়। চেয়ে দেখ, যে দিক থেকেই বাতাস বইছে সেদিক থেকেই সুগন্ধি ও শব্দ আসছে। আর এই বাতাসই গরম ও শীতকালের আনায়নকারী, যা পৃথিবীর প্রতিটি কার্যক্রম পরিবর্তনের জন্যে অতীব প্রয়োজনীয, বাতাস............. বিজ্ঞ ও ক্ষমতাবান আল−াহ্ রাব্বুল আ’লামিনের সৃষ্টির বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বা কর্মকেŠশলের মধ্যে গাছের ব্যাপারে ভাব। বছরে একবার তার পাতা ঝরে যায় বা কিছু পুরাতন পত্র-পল−ব অবশিষ্ট থাকে। অর্থাৎ আর নতুন পাতা গজায় না। তখন দেখতে এমনই মনে হয় যে গাছটি মরে গেছে। কিন্তু গাছটি এই সময়ের মধ্যেই নিজেকে ফল উৎপন্ন করার উপযোগী করতে থাকে। বসন্ত আসলেই তা আবার পত্র-পল−বে ফুলে-ফলে ভরে ওঠে যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ফল-মুল তোমার জন্যে উৎপন্ন করে। যার প্রতিটিই তার নিজস্ব প্রকৃতিতে তৈরী। যেমনই ভাবে দাওয়াত খেতে গেলে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য-খাবার তোমার সামনে উপস্থিত করা হয়।
যদি লক্ষ্য কর তাহলে দেখবে যে, ফলদায়ক গাছগুলি শাখা-প্রশাখা মেলে বিভিন্ন ধরনের ফলমুলকে তোমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। বাগানে জুই, চামেলি, ইয়াসমিন ফুলের থোকাগুলি তোমার পথ চেয়ে বসে আছে। যেটি খুশি সেটিই নাও। যদি তুমি বিচক্ষণ হও কেন তাহলে নিজের মেজবানকে চিনতে পারনা? আর যদি তুমি বুদ্ধিসম্পন্ন হও তাহলে প্রকৃতির এই বিভিন্ন প্রকার সুক্ষ্ম কারুকাজ দেখে কেন বুঝতে পারনা যে এসকলের একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন। কেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও শুকরিয়া জ্ঞাপন কর না? এই সমস্ত খাদ্য-খাবার, ফল-মুল, সবুজ প্রকৃতি, বাগানে বিভিন্ন প্রকার ও বিভিন্ন রংয়ের ফুল, সুন্দর নরম ঘাস, পাহাড়, পাখির কলরব, রাতের নিরবতা, রাতের আকাশে উজ্জ্বল চন্দ্র ও তারকারাজী সবকিছুই তোমার জন্যে তৈরী ও উপস্থিত করা হয়েছে। তারপরও তুমি তাঁর ভাল-মন্দের আদেশ নির্দেশের উপেক্ষা কর। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার বদলে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁর দেয়া নে’য়ামত উপভোগ কর, আবার তাঁরই অবাধ্য হও!! ডালিমের অস্তিত্বের দিকে তাকিয়ে শিক্ষা গ্রহণ কর। দেখ তার মধ্যে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ কিভাবে ঘটেছে। ডালিমের টিলা আকৃতি অংশের মধ্যে শক্ত সাদা প্রকৃতির মত এক বিশেষ খাদ্য দিয়েছেন যা টিলার চারিদিকে ঐ দানাগুলিকে সাজানো ও একটির পর একটি অতি সুক্ষ্মভাবে আটকানো হয়েছে। আর ঐ দানাগুলিকে কয়েক স্তরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ভাগকে আবার আলাদা আলাদা পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আর ঐ পর্দা এমন নরম ও মোলায়েম যা দেখলে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে মন চায়। সে সবগুলিকে আবার একটি শক্ত আবরণের মধ্যে স্থাপন করেছেন। এই সৃষ্টির মধ্যে এমন নিখুঁত কর্মকেŠশল লুকিয়ে আছে যেমন, যদি ডালিমের মধ্যে শুধুমাত্র দানাগুলি থাকতো তাহলে দানাগুলির খাদ্য গ্রহণ করে সবল হওয়ার কোন পথই থাকতো না। আর সে কারণেই ঐ শক্ত সাদা বিশেষের সাথে দানাগুলিকে আটকে দিয়েছেন, যাতে করে দানাগুলি ঐ শক্ত সাদা পদার্থ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। দানাগুলিকে সংরক্ষণের জন্য ঐ পর্দাটিকে দিয়েছেন যেন পচে বা নষ্ট হয়ে না যায়। আর সবার উপরে ঐ শক্ত ও মোটা আবরণকে এ কারণেই দিয়েছেন যে ?ান্ডা-গরম ও অন্যান্য ক্ষতির আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকে। এগুলো যা বলেছি তা ডালিম সৃষ্টি দর্শনের সামান্য কিছু।

চতুর্থ আলোচনা ঃ
..... এখানে তোমাকে বিপদ-আপদ সম্পর্কে কিছু কথা বলব যা কখনও কখনও আমাদের সামনে আসে। এক দল জাহেল (মুর্খ) লোক দলিল হিসাবে এগুলিকে ব্যবহার করছে, যাতে করে আল্লাহ্ ও তাঁর ব্যবস্থাপনা এবং কর্মকেŠশলকে মেনে নিতে না হয়। পৃথিবীতে বিপদ-আপদ ঘটাকে দর্শনের পরিপন্থি বলে মনে করে ..... যেমন কলেরা ও প্লেগ রোগ। সাথে সাথে আরও অন্যান্য রোগ বালাই। শিলা বৃষ্টি ও পঙ্গপাল যা ফসল ও ফলফলাদির মারাত্বক ক্ষতিসাধন করে .....।
তাদের এই ধরনের চিন্তা ভাবনার আলোকে এটাই বলব যে, যদি এই পৃথিবীর কোন সৃষ্টিকর্তা বা তার কোন ব্যবস্থাপক না থাকতো, তাহলে এখন যে পরিমান আপদ বালাই আসে, তার থেকে আরও বেশী পরিমানে আসতো। উদাহারণ স্বরূপ আকাশ ও জমিনের ধারাবাহিকতাকে যদি ভেঙ্গে দেওয়া হয়, আর নক্ষত্ররা জমিনে নেমে আসে, অথবা জমিন পানির নিচে তলিয়ে যায়, অথবা সূর্যের উদিত হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, অথবা খাল-বিল, নদ-নদী সব শুকিয়ে যায় বা আর পানি পাওয়া না যায়, অথবা বাতাসের চলা-চল বন্ধ হয়ে যায়, অথবা সমস্ত কিছু নষ্ট হয়ে যায়, অথবা নদী-নালার জলোচ্ছাসে সমস্ত প্রানীদেরকে ডুবিয়ে নিয়ে যায়!! আর এই প্লেগ ও পঙ্গপালের মত বালা মুসিবত প্রথম থেকেই কেন বেশী সময় ধরে বা সকল সময়ের জন্য থাকে না? যাতে করে সকলকে উপায়হীন ও ধ্বংস করে ফেলে এবং কেনইবা কখনও কখনও আসে আবার তা তাড়াতাড়ি চলে যায়? তুমি কী দেখনা যে পৃথিবী ঐ ধরনের বিশাল বালা-মুসিবত যা এই পৃথিবীর সবাইকে শেষ করে ফেলতে পারে তারপরও তা অবশিষ্ট আছে। শুধুমাত্র কখনও কখনও পৃথিবীর প্রানীদেরকে ছোট খাট বালা-মুসিবত দিয়ে চলে যায়। আর ভয় দেখিয়ে যায় তারা যেন নিজেদেরকে সংশোধন করে এবং অতি দ্রুত ঐ বালা-মুসিবত বিদূরিত হয়ে যায় এ কারণেই যে, বালা-মুসিবত সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি তাদের জন্য যেন ভাবনার বিষয় হয়। তাকে বিদূরিত করাই তাদের উপর আল্লাহর রহমত ও নে’য়ামত স্বরূপ।
দ্বীন ভ্রষ্টরা, যে সকল সমস্যা ও দুঃখজনক ঘটনা মানুষের সামনে আসে বা ঘটে সে ব্যাপারে বলে থাকে -যদি পৃথিবীর কোন দয়ালু সৃষ্টিকর্তা থেকে থাকে তাহলে কেন এই বালা-মুসিবতগুলি আসে? বক্তা এমনই মনে করে যে, এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন-যাপন অবশ্যই সর্বপ্রকার কষ্ট ও ক্রোধ থেকে দুরে থাকবে। যদি তাই হত তাহলে মানুষের মধ্যে এত অধিক পরিমানে ফিতনা-ফেস্যাদ ও ঔদ্ধত্যের সৃষ্টি হত, যা না তাদের পৃথিবীর জন্য কল্যাণকর হত, না তাদের আখেরাতের কোন উপকারে আসতো। এমনই কোন সমষ্টিকে দেখবে যে সুখ-শান্তিতে আছে এবং নিরাপত্তা, সুযোগসুবিধা ও ধনাঢ্যতার প্রাচুর্যে পেŠছে ঔদ্ধত্ব্যতার ও নাস্তিকতার এমন পর্যায়ে পেŠছেছে, বলা যায় তারা একেবারে ভুলেই, গেছে যে তারা মানব জাতির অন্তর্ভূক্ত ও আল্লাহর সৃষ্ট জীব। আরও ভুলে গেছে যে তাদের প্রতি অনিষ্টতা আসতে পারে, অথবা তারাও বালা-মুসিবতে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাদের চিন্তায় এটাও প্রবেশ করে না যে অসামর্থদের প্রতি সহানুভুতি প্রদর্শন করা অথবা অসহায়দেরকে সাহায্য করা অথবা যাদের উপর সমস্যা এসেছে তাদেরকে সহযোগিতা করা অথবা দরিদ্রদেরকে উদারতা দেখানো অথবা মুসিবতে পড়া মানুষেকে ভালবাসা প্রদর্শন করা। তারা তো এই দুঃখ-কষ্ট ও সমস্যাগুলিকে পৃথিবীতে দেখতে চায়না। প্রকৃতপক্ষে বাচ্চাদের মতই অরুচিকর তিক্ত ঔষধকে অপছন্দ করে। তাদেরকে তাদের পছন্দনীয় খাবার (চকলেট) খেতে মানা করলে তারা রাগান্বিত হয় যা তাদের জন্য হচ্ছে ক্ষতিকর। আর স্কুলে যাওয়া ও শিক্ষা অর্জন করা তাদের পছন্দনীয় ব্যাপার নয়। তারা খেলাধুলা ও ছোটাছুটি করতে বেশী পছন্দ করে এবং যে খাদ্য ও পানিও তাদের কাছে প্রিয়, তাই খেতে ও পান করতে ভালবাসে। তারা বুঝে উ?তে পারে না যে, সবসময় খেলাধুলা ও ছোটাছুটি করে সময় কাটানো তাদের দ্বীনের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর এবং পছন্দনীয় খাবার তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত করতে পারে। তারা বুঝেনা যে, শিক্ষা অর্জন করলে তাদের ভবিষ্যত হবে উজ্জ্বল। আর তিক্ত ঔষধ খাওয়াই তাদের জন্য রোগ মুক্তির উপায়। দুঃখের পরে আসে অনাবিল সুখ-সাচ্ছন্দ, আর তিক্ততার পরে আসে মিষ্টি মধুর উচ্ছলতা ।

চলবে...।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.