নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাসুল(সাঃ)ঘোষিত ৬ষ্ট ইমাম-ইমাম জাফর সাদিক(আঃ)-৩

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪৯

রাসুল(সাঃ) ঘোষিত ৬ষ্ট ইমাম - ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-৩

বইঃ১২ ইমামের জীবনী,অনুবাদকঃমীর আশরাফুল আলম,সামিউল হক,মাইনুদ্দিন আহমেদ

অদৃশ্যে জ্ঞানের অধিকারী ঃ

নিঃসন্দেহে আমাদের পাক ও পবিত্র ইমামগণ যারা হচ্ছেন নবী করিম (সা.)-এর প্রকৃত উত্তরসূরী ও আললাহ্ প্রদত্ত জ্ঞানের ওয়ারিস ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। যেরূপ বৈশিষ্ট্য আল−াহ্ তা’য়ালা তার বিশিষ্ট নবী ও আওলিয়াদেরকে দিয়েছিলেন। এটি এমনই একটি বৈশিষ্ট্য যা আললাহ্ রাব্বুল আ’লামিনের সাথে সরাসরি সম্পর্ক যুক্ত। যারা ইলমে গায়েবের অধিকারী তাদের মধ্যে কোন প্রকার কল্পনা ও অমুলক ভিত্তির অবকাশ নেই। যেমনভাবে নবীগণের প্রতি আসা ওহী, সমস্ত প্রকার ভূল-ভ্রান্তি, মিথ্যা ও দোষ-ত্র“টি থেকে মুক্ত। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র এতটুকুই পার্থক্য যে উত্তরসূরী বা ইমামগণ নবী ছিলেন না। নতুন কোন দ্বীনের সূচনা করতেন না। তারা নবী (সা.)-এর দ্বীনের প্রচার ও বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিসাধন ও অপপ্রচার থেকে তাকে রক্ষা করতেন। উম্মতের পথ নির্দেশক হিসাবে কাজ করতেন। যেমন নবী (সা.) আমিরুল মু’মেনিন আলীকে (আ.) বলেছেন ঃ আমার কাছে তোমার স্থান ঐরূপ, যেরূপ মুসার কাছে হারুনের স্থান ছিল। শুধুমাত্র এটাই যে আমার পরে আর কোন নবী আসবে না ।
ইসলামী বিভিন্ন রেওয়ায়েতে নমুনা দেখতে পাওয়া যায় যে, আমাদের প্রতিটি ইমামগণের জ্ঞানের পরিধি এত অধিক পরিমানে ছিল যা কিনা কোন মুসলমানের জন্য সন্দেহের অবকাশ রাখেনা। কেননা তারা আললাহ্ প্রদত্ত আধ্যাত্মিক জ্ঞানে জ্ঞানান্বিত ছিলেন এবং যখনই তাদের অনুসারীদের পথ নির্দেশনার জন্য উপযুক্ত মনে করতেন কিঞ্চিত পরিমানে ঐ আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে তাদের সামনে উপস্থাপন করতেন .....
এখানে ইমাম সাদিক (আ.)-এর কয়েকটি আধ্যাত্মিক বা গোপন বা ইলমে গায়েবের ঘটনার প্রতি লক্ষ্য করার জন্য আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ঃ

(১) যাইদ বিন আলীর শাহাদাতের পরে ইয়াহিয়া (যাইদের বড় ছেলে), গোপনে ইরানে চলে যায় এবং কিছু দিন পরে ইরানের পূর্ব প্রান্তে একটি দলকে সংগঠিত করে উমাইয়্যা খেলাফতের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে বীরের ন্যায় যুদ্ধ করে শাহাদাত বরন করে। তার মৃত দেহটি তার বাবার মতই শহরের দরজায় ঝোলান ছিল। কয়েক বছর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকার পর আবু মুসলিম খলিফার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে ইয়াহিয়ার লাশটিকে নিচে নামিয়ে এনে অত্যন্ত সম্মানের সাথে দাফনকার্য সমাপ্ত করে ..... যখন ইয়াহিয়া খোরাসানের দিকে যাচ্ছিল, মুতাওয়াক্কেল বিন হারুন নামে ইমামের এক অনুসারী; যে হজ্ব করে মদীনায় ইমামের সাথে দেখা করে ফিরছিল, তার সাথে দেখা হল। মুতাওয়াক্কেল ঃ তাকে ছালাম দিলাম। সে জিজ্ঞাসা করল যে, আমি কোথা থেকে আসছি? বললাম হজ্ব থেকে। তার বাড়ির লোকদের ও চাচাতো ভাই-বোনদের এবং ইমামের কুশলাদি জানতে চাইল। যা কিছু জানতাম বললাম। আর তার পিতার শাহাদাত হওয়াতে দুঃখ ও শোক প্রকাশ করলাম। বলল ঃ আমার চাচা মুহাম্মদ বিন আলী অর্থাৎ ইমাম সাদিক (আ.) আমার পিতাকে বলেছিলেন যে, অবশেষে তার পরিণতি কি হবে ..... তারপর আমার কাছে জানতে চাইল যে, আমি তার চাচার সাথে দেখা করেছি কিনা? বললাম ঃ হ্যাঁ, দেখা করেছি। বলল ঃ তোমাকে আমার ব্যাপারে কিছু বলেছে কী? বললাম ঃ হ্যাঁ, বলেছেন। বলল ঃ যা কিছু বলেছেন তা আমাকে বল। বললাম ঃ এমনটি পছন্দনীয় নয় যে, যা কিছু তাঁর কাছ থেকে শুনেছি তা তোমার কাছে পূনরায় বলব। বলল ঃ তুমি কী আমাকে মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছ? যা কিছু শুনেছ বল। বললাম ঃ তিনি বলেছেন যে তুমিও কতল হবে আর তোমার বাবার মতই তোমাকেও শহরের সদর দরজায় ঝোলান হবে...
আরও কিছু কথাবার্তার বলার পর, সে সহীফায়ে সাজ্জাদিয়ের একটি পাতা যা তার কাছে ছিল মুতাওয়াক্কেলকে দিল। মদীনায় তার কিছু আত্মীয়-স্বজনের কাছে পেŠছানোর জন্যে। আরও বলল ঃ আললাহর কসম যদি এমনটিই না হত, যা আমার চাচা হযরত ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন যে আমি কতল হব, আমাকে সদর দরজায় ঝোলান হবে। তাহলে এই পাতাটি কখনই তোমাকে দিতামনা ..... কিন্ত আমি জানি যে তিনি যা বলেছেন তা সত্য। কেননা তিনি এই আধ্যাত্মিকতা তাঁর বাবার কাছ থেকে অর্জন করেছেন । আর বেশী সময় অতিক্রান্ত না হতেই ইমাম ইয়াহিয়ার ব্যাপারে যা বলেছিলেন তাই ঘটলো।

(২) সাফওয়ান বিন ইয়াহিয়া বলেন ঃ জা’ফার বিন মুহাম্মদ বিন আশআ’স আমাকে বলল যে, তুমি জান আমরা কেন শিয়া হয়েছি? যদিও আমাদের কাছে এই মাযহাবের ব্যাপারে কোন ধারনা ছিলনা এবং অন্যরা এ ব্যাপারে যা জানতো আমরা তাও জানতাম না। বললাম ঃ বিষয়টি কি ? বলল ঃ একদিন মানছুর দাওয়ানাকী কোন একটি বিশেষ কাজের জন্য আমার বাবার কাছে একজন চালাক ও বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির সন্ধান চাইল। আমার বাবা তার মামার পরিচয় দিল। মানছুর তাকে ডেকে কিছু টাকা দিয়ে বলল ঃ মদীনায় যাও আর সেখানে গিয়ে আব্দুল্লাহ্ বিন হাসান বিন হাসানের সাথে ও তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে বিশেষ করে জা’ফার বিন মুহাম্মদের সাথে সাক্ষাত করবে। তাদেরকে বলবে যে, তুমি সেখানে মুসাফের খোরাসান থেকে এসেছো। খোরাসানে তাদের অনুসারীরা তাদের জন্য টাকা পাঠিয়েছে। আর বলবে তুমি তাদের পক্ষ থেকে এসেছো। প্রত্যেককে লিখিত ভাবে টাকা গ্রহণের রসিদ দেওয়ার শর্তে টাকা দিবে। এ কারণে যে, তুমি খোরাসানে ফিরে রসিদগুলি টাকা দানকারীদেরকে দেখাবে। আমার বাবার মামা মদীনায় গেল। কয়েক দিন পর উলে−খিত ব্যক্তিদের সাথে দেখা করলো ও আবার মানছুরের কাছে ফিরে এলো। আমার বাবাও সে সময় মানছুরের দরবাবে ছিল। মানছুর জিজ্ঞাসা করল ঃ কী করে এসেছো?
বলল ঃ তাদের সবার সাথে দেখা করেছি এবং টাকাও দিয়েছি। শুধুমাত্র জা’ফর বিন মুহাম্মদ ছাড়া আর সবার কাছ থেকে টাকা প্রদানের রসিদও গ্রহণ করেছি। তিনি মসজিদে নববীতে নামায পড়ছিলেন। নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত— তাঁর পিছনে বসে ছিলাম। নামায শেষে আমার দিকে ফিরে বললেন ঃ আল্লাহকে ভয় কর এবং নবীর আহলে বাইতকে ধোকা দিওনা। আর মানছুরকে বলবে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে ও নবী পরিবারকে যেন ধোকা না দেয়। বললাম ঃ আপনার ধারনাটি কি? বললেন ঃ সামনে এসো। তারপর যা কিছু তোমার ও আমার মধ্যে কথাবার্তা হয়েছিল এবং তুমি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছিলে সে ব্যাপারে আমাকে সবকিছু বললেন। তিনি এমনভাবে সবকিছুর বর্ণনা দিলেন যেন তোমার আমার মধ্যে আলোচনার সময় তিনি আমাদের সাথে ছিলেন ।

(৩) আবু বাছির বলেন ঃ ইমাম সাদিক (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম কথা বলতে বলতে মুয়া’লী বিন খানিসের নাম উ?লো আমাদের মাঝে। তিনি বললেন ঃ ওহে আবু বাছির! যা কিছু তাঁর ব্যাপারে তোমাকে বলছি তা গোপন রাখবে। বললাম ঃ গোপন রাখবো। বললেন ঃ মুয়া’লী যে পর্যায়ে আছে তার থেকে আর বেশী উপরে উঠতে পারবে না, কেননা দাউদ বিন আলী তার জন্য অন্তরায় হয়ে দাড়াবে! বললাম ঃ দাউদ বিন আলী তার সাথে কি করবে? বললেন ঃ তাকে ডেকে পাঠাবে এবং তার দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবে। তার দেহটিকে শহরের সদর দরজায় ঝুলিয়ে দিবে। আর এই ঘটনাটি ঘটবে আগামী বছর। পরের বছর দাউদ বিন আলী মদীনার গভর্নর হয়েই মুয়া’লী বিন খানিসকে ডেকে পাঠালো। তার কাছে ইমাম সাদিক (আ.)-এর অনুসারীদের নাম জানতে চাইল। কিন্তু সে বলতে রাজি হল না। দাউদ তাকে ভয় দেখালো যে, যদি সে তাদের পরিচয় না দেয় তাহলে তাকে হত্যা করবে! মুয়া’লী ঃ আমাকে হত্যার ভয় দেখাচ্ছ? আল্লাহর কসম যদি ইমামের অনুসারীরা আমার পায়ের নিচেও থাকে তারপরও তাদের উপর থেকে আমার পা তুলে নেব না। আর যদি আমাকে হত্যা কর তাহলে আমি হব সেŠভাগ্যবান আর তুমি হবে দুর্ভাগা। অবশেষে দাউদ তাকে হত্যা করল ।

(৪) আলী বিন হামযা বলেন ঃ এক যুবক, যে উমাইয়্যা খলিফার দরবারে কাজ করতো। আমার সাথে বন্ধুত্ব ছিল। আমাকে অনুরোধ করে বলল যে ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছ থেকে অনুমতি নিতে। এ কারণে যে সে তার সাথে দেখা করতে চায়। অনুমতি নিলাম এবং সে ইমামের সাক্ষাতে এসে বলল ঃ আমার জীবন আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আমি উমাইয়্যা খলিফার একজন কর্মচারী ছিলাম। আর এই পথে অনেক অবৈধ অর্থ সম্পদ উপার্জন করেছি। বললেন ঃ যদি বনি উমাইয়্যাদের কাছে তোমাদের মত লোক না থাকতো তাহলে আমাদেরকে আমাদের প্রকৃত আধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারতো না। যদি জনগণ তাদেরকে সাহায্য না করে একা রেখে দিত তাহলে তাদের যা কিছু ছিল তা ব্যতীত অন্য কিছু অর্জন করতে পারতো না। যুবক ঃ আপনার জন্য আমার জীবন কুরবান হোক! আমার কী বাঁচার কোন পথ খোলা আছে? বললেন ঃ যদি বলি তাহলে তা করবে? বলল ঃ হ্যাঁ, যা বলবেন তাই করব। বললেন ঃ অবৈধ পথে যে সম্পদগুলি অর্জন করেছো তা তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দাও। যে পরিমান অর্থের মালিককে চেননা বা জাননা তা ছদকা দিয়ে দিও। যদি এই কাজটি কর তাহলে আমি তোমাকে বেহেস্তে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করব। ঐ যুবক কিছু সময় তার মাথাটি নিচু করে রাখার পরে মাথা উ?িয়ে বলল আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, অবশ্যই এই কাজটি করব। ঐ যুবক আমাদের সাথে কুফায় এলো। যা কিছু তার কাছে ছিল এমনকি তার পোশাকটিও হয় তার মালিককে পেŠছে দিল অথবা ছদকা দিল। তার এমন অবস্থা হয়েছিল যে পরবর্তীতে আমরা তার জন্য পোশাক কিনেছিলাম। তার জীবন-যাপন করার জন্যও আমরা সাহায্য করেছিলাম। কয়েক মাস না যেতেই সে অসুস্থ হয়ে পড়লো এবং আমরা তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। একদিন তাকে দেখতে গেলাম। যেয়ে দেখি সে মৃত্যুর পরওয়ানা গুনছে। চোখগুলিকে বড় বড় করে বলল ঃ আললাহর কসম ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর দেওয়া প্রতিশ্র“তি রক্ষা করেছেন .....
এই বাক্যগুলি বলতে বলতেই সে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিলো। তার দাফনকার্য সম্পন্ন করলাম। কয়েকদিন পরে ইমামের কাছে গেলাম। ইমাম আমাকে দেখে বললেন ঃ আললাহর কসম ঐ যুবককে যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলাম তা পালন করেছি। বললাম ঃ আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গীত হোক। সত্য বলছেন, আললাহর কসম সে নিজেও মৃত্যুর সময় আমাকে হুবহু এই কথাটিই বলেছিল ।

(৫) সাদির সাইরাফি বলেন ঃ ইমাম সাদিক (আ.)-এর কিছু সম্পদ আমার কাছে ছিল। তার কাছে তা পেŠছে দেওয়ার সময় এক দিনার আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম। এ কারণে যে, তাঁর ব্যাপারে তাঁর অনুসারীদের বলা কথাবার্তার আলোকে ইমামকে পরীক্ষা করব তাই। তিনি বললেন ঃ ওহে সাদির! আমার সাথে খিয়ানত করলে? তোমার এই কাজের পরিনাম আমাদের কাছ থেকে দুরে সরে যাওয়া নয় কি? বললাম ঃ আমি আপনার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করব কিন্তু বিষয়টি কি? বললেন ঃ আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে কিছু পরিমান রেখে দিয়েছো। কারণটা হচ্ছে তুমি আমাদেরকে পরীক্ষা করতে চাও। বললাম ঃ আমাকে ক্ষামা করবেন, আপনি সত্য বলেছেন। আমি চেয়েছিলাম আপনার অনুসারীরা আপনার ব্যাপারে যা বলে সে ব্যাপারে নিজেও জানবো। বললেন ঃ তুমি কি জান না, যা কিছু আমাদের জানার দরকার তা আমরা জেনে যাই .... নবীগণের জ্ঞান আমাদের জ্ঞানগর্ভের মধ্যে লুকায়িত আছে এবং আমাদের কাছে গচ্ছিত হয়ে আছে এবং আমাদের জ্ঞান নবীগণের জ্ঞানের মতই ।

ইমামের সঙ্গী-সাথী ও ছাত্রগণ ঃ
অতীতে উলে−খ করেছি যে, বনি উমাইয়্যা ও আব্বাসীয় খলিফারা আমাদের সাম্মানীয় ইমামগণকে কড়া প্রহরায় রেখেছিল। এমনকি কখনও তাদের সাথে সাধারণ মানুষকে দেখা করতে দিত না। এমতবস্থায় বনি উমাইয়্যাদের শাসনামলের শেষের দিকে এবং আব্বাসীয় খেলাফতের প্রথম দিকে (তাদের ক্ষমতা নড়বড়ে অবস্থায় থাকার কারণে এবং তারা বিভিন্ন প্রকার সমস্যায় জড়িত থাকার কারণে) আগ্রহী ব্যক্তিরা ইমাম বাকের ও ইমাম সাদিক (আ.) -এর কাছ থেকে দ্বীন ও দুনিয়ার জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল..... জ্ঞান পিপাসুরা ও দ্বীনদার ব্যক্তিরা ইমামগণের (আ.) কাছ থেকে তাদের আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এতই আগ্রহী ছিল যে, শুধুমাত্র এমন ধরনের সুযোগ পেলেই তাদের কাছে আসতো তা নয় বরং যখনই যেভাবেই হোক না কেন তারা তাদের কাছে আসতো। তারা তাদের উপযুক্ত চাওয়া-পাওয়াকে তাদের অসীম জ্ঞানের ভান্ডার থেকে এক একটি শষ্য দানার মত অর্জন করে নিজেদেরকে পরিপূর্ণতায় পেŠছেছে ..... ইমাম সাদিক (আ.)-এর মাদ্রাসায় প্রচুর পরিমানে ছাত্ররা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েছিল। তারা ইসলামী জ্ঞান ও তার প্রচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ের উপর পান্ডিত্ব অর্জন করেছিল এবং অন্যদের কাছেও তা পেŠছেছিল। শেখ তুসি তার লেখা ‘রেজাল’ নামক বইতে প্রায় চার হাজার লোকের যারা কিনা ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে শিক্ষা আর্জন ও পরে তার উদ্ধৃতি দিয়ে রেওয়ায়েত উলে−খ করেছে নাম সংকলিত করেছেন। আমরা এখানে তাদের সম্মানার্থে, ইসলামী জ্ঞান ও তার প্রচারকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পেŠছে দেওয়ার জন্যে ও তাদের কষ্টের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের লক্ষ্যে তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের পরিচয় তুলে ধরলাম ঃ

(১) হুমরান বিন আ’য়ান সাইবানী ঃ সে আ’ইন বংশের লোক এবং ইমামের প্রকৃত অনুসারী ও রেসালতের পরিবারের প্রতি তার বিশেষ ভক্তি-শ্রদ্ধা ছিল। সে ও তার ভাই যুরারেহ্ তারা দু’জনেই শিয়া আলেমগণের মধ্যে বিশেষ করে তাদের জামানায় উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় ছিল। তাদেরকে ইমাম বাকের ও ইমাম সাদিক (আ.)-এর বিশেষ প্রিয়ভাজন হিসাবে গণ্য করা হত। ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন ঃ হুমরান বিন আ’য়ান একজন ঈমানদার ব্যক্তি। আললাহর কসম কখনই সে তার দ্বীন থেকে পথভ্রষ্ট হবে না। তিনি আরও বলেছেন ঃ হুমরান বেহেস্তবাসীদের মধ্যে একজন ।
যুরারেহ্ ঃ যুবক অবস্থায় একবার মদীনায় এসেছিলাম এবং হজ্ব মেŠসুমে মিনায় উপস্থিত হয়ে ইমাম বাকের (আ.)-এর তাবুতে গিয়ে তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন। তাঁর সামনে বসলাম, তিনি বললেন ঃ তুমি তো আ’ইন বংশের? বললাম ঃ হ্যাঁ, আমি যুরারেহ্ আ’য়ানের সন্তান। বললেন ঃ তোমার সাদৃশ্যতা দেখে চিনেছি। তোমার ভাই হুমরান হজ্ব করতে এসেছে কি? বললাম ঃ না, কিন্তু আপনার জন্য সালাম পাঠিয়েছে। বললেন ঃ সে একজন প্রকৃত মু’মিন ব্যক্তি। সে কখনও তার নিজের দ্বীন থেকে অন্য দিকে পথভ্রষ্ট হবে না। যখনই তাকে দেখবে আমার সালামও তার কাছে পেŠছে দিও ।
হুমরান ঃ আমি ইমাম বাকের (আ.)-এর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম যে, আমি কি আপনার অনুসারীদের মধ্যে গণ্য? বললেন ঃ হ্যাঁ, আল্লাহ্ সাক্ষী যে তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমাদের অনুসারী..... ।
আসবাত বিন সালেম ঃ মুসা বিন জা’ফার (আ.) বলেছেন ঃ ক্বিয়ামতের দিনে প্রকৃত অনুসারীদের প্রতি আওয়াজ দেওয়া হবে যে, আল−াহ্র নবী মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ্ (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গ যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল তা ভঙ্গ করেনি। তারা তাদের প্রতিশ্র“তির প্রতি এখনও দৃঢ় আছে কোথায় তোমরা? সালমান, আবুযার ও মিকদাদ উঠে দাড়িয়ে ইমামগণের ভক্তবৃন্দদেরকে ডাক দিবেন। কিছু বিশেষ লোক উঠে দাড়াবে এবং তারা আবার পঞ্চম ও ষষ্ট ইমাম (আ.)-এর বিশেষ ভক্তবৃন্দদেরকে ডাকলে সে সময় আব্দুল−াহ্ বিন শারিক আ’মিরী, যুরারেহ্ বিন আ’য়ান, বুরাইদ বিন মু’য়াবিয়া, আ’মির বিন আব্দুল−াহ্, হিজর বিন যায়েদেহ্ ও হুমরান বিন আ’য়ান উঠে দাড়াবে ।
সাফওয়ান ঃ হুমরান তার ছাত্রদের সাথে বসে ইমামগণের (আ.) থেকে শোনা হাদীস তাদের সামনে বর্ণনা করত। উপস্থিত ব্যক্তিরা যদি ইমামগণ (আ.) ব্যতীরেকে অন্য কারো উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীস বর্ণনা করত সে তা গ্রহণ করত না। আর যদি তার গ্রহণ না করার পরও তিনবার কেউ অন্যের হাদীসের বর্ণনা করত তাহলে সে ঐ স্থান থেকে উঠে যেত ।
ইউনুস বিন ইয়াকুব বলেন ঃ হুমরানের ইলমে কালামের (আকায়েদ শাস্ত্র সম্পর্কিত জ্ঞান) উপর বিশেষ পারদর্শিতা ছিল ।
হিশাম বিন সালেম বলেন ঃ আমরা কয়েকজন, যারা সাবাই ইমাম সাদিক (আ.)-এর অনুসারী তারা তাঁর কাছে ছিলাম। এমতবস্থায় শামের এক ভদ্রলোক সেখানে উপস্থিত হল .....ইমাম তাকে বললেন ঃ কি চাও তুমি? সে বলল ঃ শুনেছি যে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করলে তুমি নাকি তার জবাব দিতে পার। তাই তোমার সাথে মুনাযিরাহ্ (তর্ক-বিতর্ক) করতে এসেছি। বললেন ঃ কি বিষয়ের উপর বিতর্ক করতে চাও? বলল ঃ কোরআনের বিষয়ে। ইমাম হুমরানকে দেখিয়ে দিল। সে বলল ঃ আমি এসেছি তোমার সাথে বিতর্ক করতে, না হুমরানের সাথে! বললেন ঃ যদি হুমরানকে হারাতে পার তাহলেই মেনে নিব যে তুমি আমাকে হারিয়েছ। শামবাসী হুমরানের কাছে গেল। যত রকমের প্রশ্ন করলো তার জবাব সে পেল। আর জবাব শুনতে শুনতে সে ক্লান্ত হয়ে গেল। ইমাম তাকে বললেন ঃ হুমরানকে কিভাবে দেখলে? বলল ঃ প্রচন্ড জ্ঞানী উস্তাদ তিনি। যা কিছু প্রশ্ন করেছি তার জবাব তিনি দিয়েছেন .... ।

(২) আব্দুল−াহ্ বিন আবি ইয়াফুর ঃ আব্দুল−াহ্ বিন আবি ইয়াফুর ইমাম সাদিক (আ.) এর এক বিশেষ প্রিয়ভাজন ছাত্র ছিল। আল−াহ্ পরিচিতির ব্যপারে ও ইমামতের শান ও মর্যাদার বিষয়ে এত আধিক জ্ঞান সমৃদ্ধ ছিল যা কিনা হুবহু ইমামের কথা মেনে চলা বা অনুসরন করতে ছাড়া তাকে অন্য কিছু করতে দেখা যায়নি। একবার ইমামকে বলেছিল ঃ যদি আপনি ডালিমকে দ্বিখন্ডিত করেন এবং বলেন যে এই অর্ধেক অংশ হালাল আর অন্য অর্ধেক অংশ হারাম, সাক্ষ্য দিব যে অর্ধেক অংশকে হালাল বলেছেন তা হালাল আর অন্য যে অংশকে হারাম বলেছেন তা হারাম। ইমাম দুইবার বললেন ঃ আললাহর রহমত হোক তোমার উপর । আব্দুল−াহ্ বিশেষ একটা রোগে আক্রান্ত ছিল। তার প্রভাব কখনও কখনও প্রকট আকার ধারন করত। আর ডাক্তার তাকে ঐ রোগের ঔষধ হিসাবে মদ পান করতে বলেছিল। ইমামের কাছে এসে ডাক্তারের দেওয়া নির্দেশকে বর্ণনা করল। আর বলল যে, যদি মদ খায় তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই ঐ রোগ প্রতিরোধ হবে। ইমাম বললেন ঃ মদ খাওয়া হারাম, কখনও মদ খেওনা। এটা শয়তানের একটি চক্রান্ত মাত্র। সে চায় রোগ মুক্তির উপায় দেখিয়ে তোমাকে মদখোর বানাতে। যদি তুমি তার কথা শোনা থেকে বিরত থাকো তাহলে নিরাশ হয়ে সে তোমার কাছ থেকে সরে যাবে। ইবনে আবি ইয়া’ফুর কুফায় ফিরে এলো। আর তার অসুখ আগের তুলনায় আরও ব্যাপক আকার ধারন করল। তার পরিবারের লোকেরা মদ নিয়ে এলে সে বলল ঃ আল−াহ্র কসম এক ফোটাও আমি তা পান করব না। কয়েকদিন বিছানায় থেকে ব্যথা সহ্য করার পর আল−াহ্ তা’য়ালা তাকে সকল প্রকার রোগ থেকে মুক্তি দান করেন । ইমাম সাদিক (আ.) এর জীবিতবস্থায় সে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেয়। ইমাম তার এক চিঠিতে মুফায্যাল বিন ওমরকে এভাবে লিখেন ঃ ওহে মুফায্যাল! তোমাকে সুপারিশ করছি। যা আব্দুল−াহ্ বিন আবি ইয়াফুরকে করেছিলাম। তার রুহের প্রতি আললাহর করুনা বষির্ত হোক। সে যখন এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যায় তখন সে তার আল−াহ্, নবী ও ইমামের কাছে দেওয়া প্রতিশ্র“তি রক্ষা করে তারপর চিরবিদায় নিয়েছে। আললাহর কাছে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। যখন সে পরীক্ষিত হচ্ছিল তখন সে আললাহর রহমতের ছায়ায় ছিল। তার জামানায় আল্লাহ্, নবী ও ইমামগণকে তার থেকে বেশী আনুগত্যকারী আর কেউ ছিল না। এমনভাবে আমাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল যে কারণে তার রুহের উপর আললাহর রহমত হয়েছে আর সে বেহেস্তে স্থান পেয়েছে ... ।

(৩) মুফায্যাল বিন ওমর জা’য়াফি ঃ ইমামের অনুসারীদের মধ্যে তাকে প্রথম সারির মধ্যে গণনা করা হতো। সে একজন বিশিষ্ট ফকিহ্ও ছিল । সে ছিলো ইমামের অতি একান্ত। সাথে সাথে ইমামের বিভিন্ন কাজের কয়েকটির বিশেষ দায়িত্বও ছিলো তার উপর । শিয়াদের একটি দল মদীনায় এসে ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়াবলী ও মাস’য়ালা মাসায়েল বলার জন্য কাউকে নির্ধারণ করার দাবি পেশ করে। ইমাম বললেন ঃ কারো যদি কোন কিছু জানার দরকার হয় সরাসরী যেন আমার কাছ থেকে জেনে নেয়। তারা পিড়াপিড়ি করল যে, তিনি যেন অবশ্যই কাউকে নির্ধারণ করেন। তিনি বললেন ঃ মুফায্যালকে তোমাদের জন্য নির্ধারণ করলাম। সে যা বলবে তাই মেনে নিবে। কেননা সে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলে না .... ।
ইমাম সাদিক (আ.) মুফায্যালকে তেŠহীদ বিষয়ের উপর কয়েকটি ক্লাস নিয়েছিলেন, যা পরে ‘মুফায্যালের তাওহীদ’ নামে বই আকারে সুপরিচিতি পেয়েছে। আমরা তার আলোচনা এ বইয়ের মাঝের দিকে করেছি। এই বইটিই প্রমাণ করে যে, তার জ্ঞান ও ব্যক্তিত্বের উপর ইমামের দৃষ্টি কত উচ্চে ছিল। অর্থাৎ তিনি তাকে কত ভালবাসতেন। সে ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে এত পরিমান প্রিয় ছিল যে একবার তিনি তাকে বললেন ঃ আল্লাহকে সাক্ষ রেখে বলছি যে তোমাকে ভালবাসী এবং যে তোমাকে ভালবাসে তাকেও ভালবাসী .... ।
ইমাম কাযেম (আ.) মুফায্যালের উদ্দেশ্যে বলেছেন ঃ সে আমার সহচর এবং আমার স্বস্তির কারণ । আর যখন সে পৃথিবীকে খোদা হাফেজ করলো তখন বললেন ঃ তার উপর আললাহর করুনা বর্ষিত হোক। সে ছিল পিতার পরে পিতা। যে এখন পরম শান্তি ও স্বস্তিতে প্রত্যাবর্তন করেছে ।

শাহাদাত ঃ
প্রতিহিংসাপরায়ন আব্বাসীয় খলিফা মানছুর দাওয়ানাকী, বনি আব্বাসীয় খলিফাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, অত্যাচারি ও জালেম শাসক ছিল। সর্বদা ইমামকে তার লোকজনদের দিয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রেখে তাঁর আসে পাশে গোয়েন্দা লাগিয়ে রেখেছিল। যেহেতু তার কপালে ছিল না, তাই সে তার নষ্ট উদ্দেশ্যে সফলকাম হতে পারেনি।
সপ্তম ইমাম হযরত কাযেম (আ.) বলেছেন ঃ একবার মানছুর আমার বাবাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ডেকে ছিল। হত্যা করার সরঞ্জামও (তলোয়ার) তৈরী করেছিল। আর রাবি নামে একজনকে (তার দরবারের লোক) নির্দেশ দিল যে, জা’ফর বিন মুহাম্মদ দরবারে ঢোকার পর তার সাথে কথা বলতে বলতে যখন আমি হাত তালি দিবো তখন তার দেহ থেকে মাথাটা আলাদা করে ফেলবে। ইমাম দরবারে ঢুকলেন। মানছুরের দৃষ্টি তার উপর পড়তেই অনিচ্ছা সত্বেও নিজের জায়গা থেকে উঠে দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করে শুভ আগমন জানিয়ে বলল, তোমাকে এখানে ডেকে আনার কারণ হচ্ছে যে তোমার ঋন পরিশোধ করবো তাই.....। তারপর তার শারীরিক অবস্থা এবং আত্মীয় স্বজনদের কুশলাদি জানতে চাইল। রাবির দিকে তাকিয়ে বলল ঃ তিনদিন পর জা’ফর বিন মুহাম্মদকে তাঁর পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিবে ... । সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এবং ইসলামী ভু-খন্ডগুলোতে ইমামের ইমামতের ধারা ও সুনাম-সুখ্যাতিকে মানছুর সহ্য করতে পারছিল না। অবশেষে ১৪৭ হিজরীর শাওয়াল মাসে তাকে বিষ প্রয়োগ করে। তিনি ঐ মাসের পাঁচ তারিখে ৬৫ বছর বয়সে শাহাদাতের অমীয় সাকী পান করে আল−াহ্র দিকে প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁর পবিত্র দেহটিকে মদীনার বাকিতে তার পিতার পাশে সমাধীস্থ করা হয় । তার মৃত্যুতে কাতর হয়ে একজন বিশিষ্টি শিয়া সাহিত্যিক (আবু হুরাইরেহ্ আ’জালী) কি চমৎকার কবিতায় না রচনা করেছেন যা এখানে পড়ব এবং আমরাও তার সাথে চোখের পানি ফেলব ঃ তার পবিত্র দেহটিকে কাঁধের উপর করে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় নিজেকে বলেছিলাম ঃ তুমি কি জান কোন মহামানবের লাশকে নিয়ে যাচ্ছ মাটি দিতে? হায় আফসোস! বিশালাকার পর্বত তার সর্বোচ্চ সীমার শীর্ষবিন্দু থেকে নিম্নে পদার্পন করেছিলেন কবরে দাফন হতে। ভোরে তার মাজারে সবাই মাটি ফেলবে; এটাই বাঞ্ছনীয় যে তাঁর হারানোর ব্যথায় নিজের মাথাতেও মাটি ফেলব। হ্যাঁ, সত্যই আলে মুহাম্মদের উত্তরসূরী ইমাম সাদিকের শাহাদাতে মানুষ ও ইসলাম তাদের মহামূল্যবান বস্তুকে হারায়। যদি তিনি রেসালত বা ইমামতের বংশের না হতেন (যেহেতু তার আগে বা পরে আরও ইমাম আছেন) তাহলে অবশ্যই বলতামঃ কাল ক্বিয়ামত পর্যন্ত এ পৃথিবী এমন ধরনের মহামানব তৈরীতে অপারগ ..... তার উপর আল−াহ্, ফেরেস্তা, সৎ লোক ও মু’মিনদের দরুদ হোক।

অন্তিম কামনা ঃ
আবু বাছির (ইমামের বিশিষ্ট অনুসারীর একজন) বলেন ঃ ইমামের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে সমবেদনা জানাতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। ইমামকে হারানোর ব্যাথায় দু’জনই প্রচুর ঁেকদেছিলাম। তারপর তিনি বললেন ঃ ... ওহে আবু বাছির! যদি তুমি ইমামের মৃত্যুর সময় থাকতে তাহলে অবাক হতে এজন্য যে, তিনি তার চোখ দুটি বড় বড় করে বললেন ঃ আমার সমস্ত আত্মীয়-স্বজনকে এখানে আসতে বলো। তারা সবাই এলে তিনি সবাইকে দেখলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে বললেন ঃ নামাযকে যারা গুরুত্বহীন মনে করবে, আমাদের শাফায়াত তাদের ভাগ্যে পেŠছাবে না ।
কিছু বাণী ঃ
আমরা এই বইয়ের শেষ প্রান্তে পেŠছেছি, আর তাই মহান ইমামের কয়েকটি বক্তব্যের দিকে বিশেষ খেয়াল করব। যা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। যা আমাদের অন্তরকে নূরানী ও ঈমানকে করবে দৃঢ়। আমরা যেন তাঁর দেয়া উপদেশকে মেনে চলতে পারি ইনশাআল−াহ্ ঃ প্রতিটি মুসলমানের উচিত তার অন্য মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করার সময় ঐ মুসলমানের চাওয়া পাওয়ার দিকে নজর রাখা। যেহেতু এমন কেউ আছে যে আললাহর রাস্তায় জিহাদ করবে ।
আল্লাহ বলেছেন মানুষ আমার পরিবারের ন্যায়। আমার কাছে সে ব্যক্তি অতি প্রিয় যে মানুষের প্রতি অনেক বেশী দয়াশীল এবং তাদের অভাব মিটানোর জন্য চিন্তাভাবনা করে ।
মানুষের সমস্ত জ্ঞানগর্ভকে চারটি বিষয়ের মধ্যে উপলদ্ধি করেছি ঃ প্রথমতঃ তোমার সৃষ্টিকর্তার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন কর, দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্ যে নে’য়ামতগুলি দিয়ে তোমাকে সৃষ্টিকরেছেন তার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন কর, তৃতীয়তঃ আললাহ তোমার কাছে কি চান এবং তোমার দায়িত্ব কি, চতুর্থতঃ যে জিনিষ তোমাকে তোমার দ্বীন থেকে দুরে সরিয়ে নেয় তা সম্পর্কে জানা ।
নবীগণের নৈতিক চরিত্রের চারটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঃ অনুগ্রহ করা, বদান্যতা দেখানো, সমস্যার বিপরিতে ধৈর্যধারন করা, মু’মিনিনদের অধিকার রক্ষা করা ।
মু'মিন ব্যক্তি দুইটি ভয়ের মধ্যে থাকে ঃ অতিতের গোনাহের ব্যাপারে, সে জানে না যে ঐ গোনাহের কারণে আল্লাহ তাকে কি সাজা দিবেন। আর যতদিন ঁেবচে আছে জানেনা যে আরও কতগুলি গোনাহ্ তার হবে বা কোন ধরনের ধ্বংসস্থলে সে পতিত হবে। এ কারণেই তার ভয়ের মধ্যে থাকা ব্যতীত রাত পোহায়না এবং ভয়ের মধ্যে থাকা ব্যতীত দিনও শেষ হয়না। আর আল্লাহর প্রতি ভয় থাকা ব্যতীত অন্য কিছু তাকে সংশোধনও করবে না ।
কোন বান্দাই পরিপূর্ণভাবে প্রকৃত ঈমানে ঁেপŠছাতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মাধ্যে এই তিনটি বৈশিষ্ট্য অর্জিত হবে ঃ পরিপূর্ণভাকে দ্বীনকে বুঝতে পারা, সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবনযাপন করা, দুঃখে-কষ্টে ধৈর্য ধারন করা ।
তিনটি বিষয়ের প্রতি এই তিনটি ক্ষেত্র ছাড়া পরিচয় পাওয়া যাবে না ঃ রাগের মুহুর্তে ধৈর্যের পরিচয়, যুদ্ধের সময় বীরত্বের পরিচয়, অভাবের সময় ভাইয়ের পরিচয় ।
প্রতিটি এলাকার লোকেরা তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কাজের ব্যাপারে যাদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে, এজন্য তিন ধরনের লোকের প্রয়োজন আছে ঃ উচ্চ জ্ঞান বিশিষ্ট আলেম, মানুষের মঙ্গল কামনাকারী শাসক যার কাছে তারা অনুগত থাকে, বিশ্বাসী ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক ।
প্রতিটি ভাল ও উত্তম কাজের সুত্র আমরাই এবং সমস্ত কল্যাণও আমাদের শাখা প্রশাখা থেকেই; তাওহীদ, রোজা, রাগ সংযম, যে মানুষের ক্ষতি সাধন করেছে তার খারাপ দিকটা ভুলে যাওয়া, দরিদ্রদের সাহায্য করা, পড়শীদের খবরা খবর রাখা এবং ফযিলাত সম্পন্ন ব্যক্তিদের ফযিলাতকে স্বীকার করা, ইত্যাদি সমস্ত কল্যাণই আছে। আর আমাদের শত্র“রাই হচ্ছে প্রতিটি খারাপ কাজের সুত্র এবং প্রতিটি অন্যায় কাজ তাদের শাখা প্রশাখার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়, প্রধানত ঃ মিথ্যা, কৃপনতা, অপরের অনিষ্ট সাধনার্থে মিথ্যা কাহিনী বা গুজব রটনা করা, দয়া দাক্ষিণ্যহীনতা, সুদ খাওয়া, ইয়াতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করা, আল−াহ্র দেওয়া আইন-কানুন অমান্য করা বা তার সীমালংঘন করা, প্রকাশ্যে ও গোপনে পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া, জেনা, চুরি ও ডাকাতি করা, ইত্যাদি। তারা মিথ্যা বলে যারা আমাদের শত্র“দের শাখা প্রশাখার সাথে জড়িয়ে থেকে আমাদের সাথে আছে বা আমাদের অনুসারী বলে দাবি করছে ।

সমাপ্ত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.