![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.)
এই মহান ব্যক্তির নাম আলী। আর তাঁর বিখ্যাত বা সুপরিচিত পদবী বা খেতাব যয়নুল আবেদ্বীন ও সাজ্জাদ। ৩৮ হিজরীর ১৫ই জামাদিউল আউয়াল তিনি মদীনায় ভূমিষ্ট হন । শহীদদের সর্দার হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) হচ্ছেন তাঁর পিতা ও শাহারবানু হচ্ছেন তাঁর মাতা ।
নৈতিক গুনাবলী ঃ
ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর এক আত্মীয় উপস্থিত জনসমষ্টির মধ্যে তার প্রতি অশ্লীল ভাষায় কিছু বলে চলে গেল। তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বললেন ঃ তার কথাগুলো তোমরা শুনেছ, এখন তোমরা আমার সাথে চলো, কেননা তাকে আমার দেওয়া উত্তরটাও শুনবে। তারা বলল ঃ আপনার সাথে আমরা যাবো, কিন্তু যখন সে অশ্লীল কথাগুলো বলছিল তখন আপনার আথবা আমাদের পক্ষ থেকে তার জবাবটা দিয়ে দেয়া ভালছিল।
ইমাম তাদের সাথে নিয়ে অশ্লীল বাক্য ব্যবহারকারী লোকটির বাড়ীর দিকে গেলেন। যেতে যেতে রাস্তায় ঐ আয়াতটি (যে আয়াতটিতে মু’মিনদের অতি প্রশংসনীয় কিছু আচরণের উল্লেকখ আছে) পাঠ করলেন ঃ (যারা ক্রোধ সংবরনকারী ও জনগণের ক্ষমাকারী তারা নেক্কার বা সৎকর্মশীল আর আল্লাহ্ রাব্বুলআ’লামিন তাদেরকে পছন্দ করেন) । ইমামের সঙ্গী-সাথীরা প্রথমে অন্য রকম ধারনা করেছিল। কিন্তু পরে তারা বুঝতে পারলো যে তিনি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য যাচ্ছেন না। তিনি ঐ লোকের বাড়ীতে পৌছে তাকে খবর পাঠালো যে (আলী বিন হুসাইন)এসেছে। তিনি প্রতিশোধ নিতে এসেছেন এই ধারনায় ঐ লোক নিজেও ঝগড়া বিবাদের জন্য তৈরী হয়ে আসলো। তিনি তাকে বললেন ঃ ভাই আমার! তুমি কিছু সময় আগে আমাকে যা-তা বলে আমাকে শুনিয়ে এসেছো। তুমি যা বলেছো যদি আমার ভিতরে তা থেকে থাকে আল্লাহর কাছে চাইবো তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন ........ আর ঐগুলো যদি আমার ভিতরে না থেকে থাকে তাহলে তাঁর কাছে চাইবো তিনি যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেন। ইমামের বিশাল নমনীয়তা তাকে লজ্জিত করলো। এগিয়ে এসে ইমামের কপালে চুমু দিয়ে বলল ঃ যা কিছু বলেছি তা আপনার ভিতরে নেই বরং স্বীকার করছি, যা কিছু বলেছি নিজেই সেগুলোর যোগ্য ।
* ইমাম সাদিক (আ.) বলেন ঃ মদীনায় এক ভাঁড় ছিল যে নিজের বহুবিধ কাজের মাধ্যমে লোকজনদেরকে হাসাতো। কিন্তু সে বলতো এখনও পযর্ন্ত আলী বিন হুসাইনকে হাসাতে পারেনি। একদিন তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সে তাঁর গায়ের আ’বাটি তুলে নিয়ে চলে গেল। তিনি তার এ নোংরা কাজের জন্য তাকে কিছু বললেন না। ইমামের সঙ্গী-সাথীরা তার কাছ থেকে আ’বাটি নিয়ে আসলে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন ঃ সে কে? তারা বলল ঃ সে হচ্ছে ভাঁড়, সবাইকে হাসায়। ইমাম ঃ তাকে বল, অনর্থক কথা ও কাজ সম্পাদনকারীদেরকে আল্লাহ এমন সময়ের সম্মুখীন করবে যে দিন তারা তাদের নিজেদের কাজের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হবে ।
* (্যাইদ বিন উসামা) মুমূর্ষু অবস্থায় বিছানায় পড়েছিল। তিনি তাকে দেখতে যাওয়ায় সে কেঁদে ফেললো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ঃ কি কারণে কাঁদছো? যাইদ ঃ ১৫ হাজার দিনার ঋন রয়েছি, আর আমার সম্পদের পরিমাণ ঋনের পরিমাণের সমান নয়। ইমাম ঃ কেঁদনা, তোমার ঋণ আমি পরিশোধ করব। যেভাবে তাকে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন পরবর্তীতে সেভাবেই তিনি তা পালন করলেন ।
* ইমাম সাজ্জাদ (আ.) প্রতি রাতে অপরিচিতের মত মদীনার অসহায়, দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত মানুষের জন্য রুটি নিয়ে আসতেন। তাদেরকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন। তাঁর
ইন্তেকালের পর মদীনার লোকেরা বুঝতে পারলো যে, ঐ রুটি নিয়ে আসা অপরিচিত লোকটি ছিল হযরত আলী বিন হুসাইন। আর তাঁর ইন্তেকালের পর আরো বোঝা গেল যে, তিনি মদীনার একশটি নিঃস্ব, দরিদ্র পরিবারকে অব্যাহতভাবে পরিচালনা করতেন। ঐ একশটি পরিবারের কেউ জানত না যে আলী বিন হুসাইন-ই ছিল তাদের সংসার পরিচালনাকারী ।
* ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর বোনের এক সন্তান বলেন, আমার মা সব সময় আমাকে মামা আলী বিন হুসাইনের সাথে থাকার জন্যে আদেশ দিতেন। এর আগে কখনও তার সংস্পর্শে যাইনি। কিন্তু যখনই তাঁর থেকে নিজেকে উপকৃত করতে চাইলাম। কখনও আল্লাহর প্রতি তাঁর ভয় ও বিনয় দেখে আমার অন্তরেও ভয় ও বিনয়ের সঞ্চার হত। আবার কখনও তার অফুরন্ত জ্ঞান থেকে আমার জ্ঞানের বিকাশ ঘটত ।
ক্স ইমাম বাকের (আ.) বলেন ঃ আমার বাবা নামাজে অনুরূপ গোলামের মত পড়ে থাকতেন, যেন মহারাজার পায়ে পড়ে আছে। আল্লাহর ভয়ে তিনি কাঁপতেন এবং তাঁর চেহারার রং পাল্টে যেত। আর এমন ভাবে নামাজ পড়তো যেন এটাই তার শেষ নামাজ ।
ইমামের মহত্ব ঃ
আব্দুল মালেকের সন্তান হিশাম হজ্বে তাওয়াফ করার সময় মানুষের ভিড়ে হাযারুল আসওয়াতে হাত দিতে না পেরে অগত্যা এককোণে বসে অপেক্ষা করছিল যে, মানুষের ভিড় কমলে তারপর তাওয়াফ করবে। এমন সময় ইমাম যয়নুল আবেদ্বীন (আ.) মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে তাওয়াফ করলেন।
লোকজন ইমামকে দেখেই রাস্তা করে দিল। তিনি হাযারুল আসওয়াদে স্পর্শ করে তাতে পরিতৃপ্তিভরে চুমু দিলেন। হিশাম ইমামের এই মহত্ব এবং তার প্রতি মানুষের নিদারুন ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতে দেখে অত্যন্ত রেগে গেল। শামের এক অধিবাসি হিশামকে জিজ্ঞেস করল ঐ লোক কে যাকে মানুষ তাকে এভাবে সম্মান দিচ্ছে? শামের ঐ লোকটি ইমামের ভক্ত হয়ে যাওয়ার ভয়ে হিশাম তাকে বলল ঃ আমি তাকে চিনিনা। সেখানে স্বাধীনচেতা বিখ্যাত কবি (ফারাযদাক) উপস্থিত ছিল। ততক্ষণাৎ হিশামকে জবাব দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে বলল ঃ আমি তাকে চিনি। তারপর ইমামের গুনকীর্তন করে একটি লম্বা কবিতা পাঠ করল (এই অধ্যায়ের শেষে কবিতাটির অনুবাদ তুলে ধরেছি)।
ইমামের গুনকীর্তনে কবির কবিতা এমন সাবলীল সাহিত্যপূর্ণ ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত ছিল যে, হিশাম আহত পশুর ন্যায় গর্জে উঠে তাকে বন্দীশালায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল। ইমাম (আ.) ফারাযদাকের বন্দী হওয়ার কথা জানতে পেরে খুব দুঃখিত হলেন। (কারো শানে ও মর্যাদায় যদি কেউ কবিতা রচনা করে তবে তাকে ঐ ব্যক্তির পক্ষহতে বকশিশ হিসেবে কিছু দেয়া হত) তদ্রুপ পুরস্কার হিসাবে তার জন্য কিছু টাকা পাঠালেন। কিন্তু সে ঐকান্তিকতার সাথে টাকা গুলোকে ফেরত পা?িয়ে দিল। আর বলল যে, আমি এই কবিতাটি আল্লাহ ও আল্লাহর নবীর জন্য রচনা করেছি। ইমাম (আ.) তার নিষ্টা ও বন্ধুত্বকে সত্যায়ন করে দ্বিতীয়বারের মত পুরস্কারটি পাঠাল এবং এটি গ্রহণ করার জন্য কসম দিলেন। আর তার আখেরাতের পুরস্কারও সংরক্ষিত থাকবে বলে আশ্বাস দিলেন। সাথে সাথে এও বলে দিলেন যে, আমরা দয়া, অনুগ্রহশীল ও সম্মানিত পরিবারের, যা কিছু পুরস্কার হিসাবে দেই পুনরায় তা ফেরত নেই না। সে ইমামের পাঠানো বকশিশটি সাদরে গ্রহণ করে খুশি মনে চলে গেল।
ইমাম মুসলমানদেরকে জাগ্রত করেন ঃ
নিঃসন্দেহে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পরিবারবর্গের বন্দী হওয়া তাঁর পবিত্র অভ্যুত্থানকে ফলাফলে পৌছানোর জন্য বিশেষ ভূমিকার দাবিদার। কেননা যদি তাঁরা বন্দীদশায় পরিপূর্ণভাবে সহনশীলতা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, মহত্ব ও বীরত্বের সাথে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনাকে মানুষের মাঝে ফুটিয়ে না তুলত এবং মানুষ অতি নিকট থেকে তাদেরকে না দেখত তাহলে কখনও বা কোন অবস্থাতেই ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদত এরকম ভাবে প্রসিদ্ধতা লাভ করত না বা বনী উমাইয়্যা বিশেষ করে ইয়াযিদ এভাবে অপমানিত হত না। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পরিবারবর্গ অন্য বন্দীদের বন্দীদশার বিপরীতে এবং যারা তাদেরকে পরাজিত মনে করত তাদের ভাবনার বিপরীতে, যে জায়গায় যেতেন নিজেদের বিজয়ের কথা ও দুশমনদের পরাজিত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতেন। নিজেদেরকে বিজয়ী ও উচ্চশির এবং ইয়াযিদকে হতভাগা ও পরাজিত বলে পরিচয় দিতেন। কারবালার মর্মান্তিক ও লোমহর্ষক ঘটনার পরে ইমাম পরিবারের যারা জীবিত ছিল তাদের মধ্যে বিশেষ করে ইমাম যয়নুল আবেদ্বীন ও মহিয়ষী নারী হযরত যয়নাব (সালাঃ) মুসলমান জনগণকে জাগ্রত করার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ইমাম সাজ্জাদ (আ.) পিতার শাহাদাতের সময় অসুস্থ ছিলেন। বাবা, ভাই ও সঙ্গী-সাথীদের শাহাদাতের ঘটনায় তাঁর অন্তর দারুনভাবে শোকার্ত ও ব্যথিত ছিল। কিন্তু এই কষ্ট তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে কোন প্রকার বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তিনি উপযুক্ত সময়ে বা উপযুক্ত জায়গায় মানুষের চিন্তার বিকাশ ঘটানোর কাজে নিবেদিত ছিলেন। যখন কুফাতে হযরত যয়নাব ও তাঁর বোন এবং কনিষ্ট ফাতিমার বলিষ্ট ভাষন শুনে মানুষ মর্মাহত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে, তখন ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ইশারায় তাদের সবাইকে চুপ হতে বলায় সবাই চুপ হয়। তিনি আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের ভূয়সী প্রশংসা ও গুণগান করে এবং নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পা? করে বললেন ঃ হে মানব সকল ...... আমি আলী, হুসাইন বিন আলী বিন আবুতালেবের সন্তান। আমি তার সন্তান, যার সবকিছু লুন্ঠন করা হয়েছে, যার পরিবারের সবাইকে বন্দী করে এখানে আনা হয়েছে। আমি তার সন্তান, যে ফুরাতের কিনারায় মর্মান্তিক ও নির্মমভাবে নিহত হয়েছে। হে লোক সকল! তোমরা কিয়ামতের ময়দানে কিভাবে নবী (সা.)-এর সামনে দাঁড়াবে। যখন তিনি তোমাদেরকে বলবে, “আমার পরিবারবর্গকে এমনভাবে কতল করেছ আর আমার মর্যাদাও অক্ষুন্ন রাখনি সুতরাং তোমরা আমার উম্মত নও?’’ তাঁর এই জোরাল ও গভীর অর্থ সম্পন্ন বক্তব্য কুফার জনগণের অন্তরকে আন্দোলিত করে তুলল। চারিদিক থেকে চিৎকার ধ্বনি তুলে সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল এবং একজন আরেকজনকে তিরস্কার করে বলল আমরা এতই দুর্ভাগা যে ধ্বংস হয়েগেছি তা নিজেরাও জানিনা । এভাবেই তিনি ঘুমন্ত বিবেকগুলোকে আন্দোলিত ও প্রানবন্ত করে তুললেন। আর কারবালার মহত্বকে তুলে ধরলেন। তারা যে মহাভূলে পতিত হয়েছে সে বিষয়ে তাদেরকে অবহিত করলেন। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পরিবারবর্গকে ইবনে যিয়াদের প্রাসাদে আনা হলে সে ইমাম সাজ্জাদকে দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘‘ও কে ?’’
কেউ একজন বলল ‘‘সে আলী বিন হুসাইন।’’
ইবনে যিয়াদ: ‘‘আলী বিন হুসাইন! আল্লাহ তাকে কতল করেনি?’’
ইমাম সাজ্জাদ: ‘‘আমার অন্য এক ভাইয়ের নামও ছিল আলী, তোমার লোকেরা তাকে হত্যা করেছে।’’
ইবনে যিয়াদ: ‘‘না,আল্লাহ তাকে কতল করেছে।’’
ইমাম সাজ্জাদ: (আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মৃত্যুর সময় আত্মা গুলোকে নিয়ে যায়........) ।
ইবনে যিয়াদ: ‘‘কিভাবে তুই এখনো আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস রাখিস?’’ অহংকারের সাথে ইমামকে হত্যা করার নির্দেশ দিল।
হযরত যয়নাব (সালাঃ) প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন : ‘‘তুই আমাদের কোন পুরুষকে জীবিত রাখিসনি। যদি আলী বিন হুসাইনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকিস তাহলে আমাকেও তাঁর সাথে হত্যা কর।’’
ইমাম সাজ্জাদ হযরত যয়নাবকে (সালাঃ) বললেন আপনি ওর সাথে কথা বলেন না, আমি ওর সাথে কথা বলছি।
তিনি ইবনে যিয়াদের দিকে ফিরে বললেন : ‘‘ওহে যিয়াদের ছেলে! আমাকে হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছ? তোমার জানা নেই, যে কতল হওয়া আমাদের প্রথা ও শাহাদাত বরণ করা আমাদের মর্যাদা........... ।
সিরিয়ার ইমাম ঃ
শামের (সিরিয়া) শহরের অলি-গলি দিয়ে ইমাম ও তাঁর পরিবারের কয়েকজনকে একই দড়িতে বেধে ইয়াযিদের দরবারে আনা হলে তিনি বীরত্বের সাথে ইয়াযিদের দিকে ফিরে বললেন: ‘‘ওহে ইয়াযিদ! আল্লাহর রাসুলের ব্যাপারে কি চিন্তা করছো, যদি তিনি আমাদেরকে এভাবে দড়িবাঁধা অবস্থায় দেখেন?’’ ইমামের এই ছোট্ট ও তীক্ষ্ম ধারালো বাক্যটি উপস্থিত সবাইকে এরূপভাবে উদ্বেলিত করল যে সাবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল । এক মুসলমান ব্যক্তি বলল, আলে মুহাম্মদের (সা.)-এর বন্দীদেরকে যখন শামে আনা হয় আমি তখন সেখানে ছিলাম। শামের বাজারে, মসজিদের সামনে যেখানে সাধারণত অনান্য বন্দীদেরকেও আনা হত তাদেরকে সেখানে আনল। এক বয়স্ক লোক কাছে গিয়ে বলল, আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ যে তোমাদেরকে ধ্বংস করে ফিৎনাকে নিভিয়ে দিয়েছে। এভাবে আরও অনেক আজে-বাজে কথা বলল। তার কথা শেষে ইমাম যয়নুল আবেদ্বীন (আ.) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: তোমার কথাগুলো শুনেছি। আমার প্রতি তোমার অন্তরে যতটুকু শত্র“তা ও ঘৃণা ছিল তার পরিচয় দিয়েছো। আমি যেরূপ শান্তভাবে তোমার কথাগুলো শুনেছি তুমিও তদ্রুপ আমার কথাগুলো শোন।
বয়োবৃদ্ধ: বল।
ইমাম সাজ্জাদ: কোরআন পড়েছ কী?
বয়োবৃদ্ধ: পড়েছি।
ইমাম সাজ্জাদ: এই আয়াতটি পড়েছ কী ? (বল হে আমার রাসূল, তোমাদের কাছে আমার পরিবারের ভালবাসা ব্যতীত অন্য কোন পারিশ্রমিক চাইনা) ।
বয়োবৃদ্ধ: হ্যা,পড়েছি।
ইমাম সাজ্জাদ: আমরাই রাসূল (সা.)-এর পরিবার। এই আয়াতটি পড়েছ কী? (পরিবারবর্গের যে অধিকার আছে তাদেরকে তা দাও) ।
বয়োবৃদ্ধ: হ্যা পড়েছি।
ইমাম সাজ্জাদ: আমরাই সেই পরিবার, আল্লাহ্ তা’য়ালা তার নবীকে যাদের অধিকার দিতে বলেছেন।
বয়োবৃদ্ধ: সত্য সত্যই কি তোমরা তারা?
ইমাম সাজ্জাদ: হ্যা। তুমি খোমছের আয়াতটি পড়েছ কী? (মনে রেখ! যাকিছু উপার্জন করবে তার পাঁচের এক অংশ আল্লাহ ও আল্লাহর নবী এবং তাঁর পরিবারের) ।
বয়োবৃদ্ধ: হ্যা পড়েছি।
ইমাম সাজ্জাদ: তাতহীরের আয়াতটি পড়েছ কী? (আল−াহ্ শুধুমাত্র এটাই চান যে হে আহ্লে বাইত তোমাদেরকে গোনাহ্ থেকে দুরে রাখতে ও সম্পূর্ণভাবে পাক পবিত্র করতে) ।
বয়োবৃদ্ধ লোকটি তার হাত দু’টি আকাশের দিকে উচু করে তিনবার বলল: হে আল্লাহ তওবা করছি। তোমার নবী ও তাঁর পরিবারের সাথে শত্র“তার জন্য তওবা করছি। আর তাদের কতল করাতে আমি অসন্তুষ্ট। আমি এর আগেও কোরআন পড়েছিলাম কিন্তু এই সত্যকে জানতাম না ।
সিরিয়ার মসজিদে ইমাম ঃ
একদিন ইয়াযিদ শামের জামে মসজিদের খতিবকে ইমাম আলী (আ.) ও ইমাম হুসাইনকে (আ.) অবমাননা করে মিম্বারে উঠে কিছু বলার নির্দেশ দিল। যাতে করে তারা অপমানিত ও হেও প্রতিপন্ন হয়। খতিব মিম্বারে উঠে ঐ দু’মহান ব্যক্তির সম্বন্ধে অনেক বাজে কথা বলল। আর মুয়াবিয়া ও ইয়াযিদের ব্যাপারে ভূয়সী প্রশংসা করল। ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ঐ মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উচ্চস্বরে বললেন, তোমার কপালে দুঃখ আছে খতিব! ইয়াযিদকে সন্তুষ্ট করার লক্ষে আল্লাহর অসন্তুষ্টি হাসিল করছো। আর এভাবেই দোজখের মধ্যে তোমার স্থান তৈরী করছো। ইয়াযিদের দিকে ফিরে বললেন, আমাকে মিম্বারে যেতে দাও কিছু বক্তব্য রাখব, যা বলব তাতে আল্লাহ খুশি হবেন এবং উপস্থিতদের জন্য হবে তা সওয়াব স্বরূপ। ইয়াযিদ প্রথম অবস্থায় মেনে নিলো না। কিন্তু মানুষের জোরাল চাপের মুখে বলল, যদি সে মিম্বারে যায় তবে আমার ও আবু সুফিয়ানের বংশকে লাঞ্ছিত না করে নামবে না।
উপস্থিত সবাই: তিনি এমনকি আর বলতে পারেন?
ইয়াযিদ: সে এমন এক বংশের, যারা ছোটবেলায় মায়ের দুধ খাওয়ার সাথে সাথে জ্ঞানও আর্জন করে থাকে। জনগণের পিড়াপিড়িতে সে মানতে বাধ্য হল।
ইমাম মিম্বারে উঠে আল্লাহর প্রশংসা ও তার নবীর উপর দরুদ পাঠ করে বললেন : সমস্ত কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্য যিনি সূচনাহীণ এবং যার চিরন্তন সত্তার কোন শেষ নেই। প্রথম, সর্বপ্রথমের এবং শেষ, সর্বশেষের (অর্থাৎ যখন কিছু ছিল না তিনি ছিলেন আর যখন কিছুই থাকবে না তিনি থাকবেন)। সুতরাং সমস্ত সৃষ্টির ধ্বংসের পরেও তিনি থাকবেন তাঁর নিজের স্থানে । হে লোকসকল, ........ আল্লাহ আমাদের অন্তরে জ্ঞান, সহনশীলতা, বদান্যতা, ভাষার প্রাঞ্জলতা, সাহসিকতা ও বন্ধুত্ব দান করেছেন ...........। নবী করিম (সা.), আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.), জাফারে তাইয়্যার, শহিদদের সর্দার হামযা, ইমাম হাসান ও হুসাইন নবী (সা.)-এর দুই নাতী, তারা সবাই আমাদের থেকে আর আমরাও হচ্ছি তাদের থেকে । ........ আমি মক্কা ও মিনার সন্তান, জামজাম ও সাফার সন্তান। আমি ঐ সম্মানীত ব্যক্তির সন্তান যিনি তাঁর নিজের আ’বাতে “হাযারুল আসওয়াদটি” তুলে নিয়েছিলেন । আমি ঐ সর্বোত্তম ব্যক্তির সন্তান যিনি এহরাম ঁেবধে তাওয়াফ করে হজ্ব পালন করেছিলেন। আমি এমন একজনের সন্তান যাকে একরাতেই “মসজিদুল হারাম” থেকে “মসজিদুল আকসাতে” নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । আমি হুসাইনের সন্তান যাকে কারবালায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি মুহাম্মদ মুস্তাফার (সা.) সন্তান। আমি ফাতিমা যাহ্রার (সালাঃ) সন্তান। আমি খাদিজার (সালাঃ) সন্তান। আমি এমন একজনের সন্তান যিনি তাঁর নিজের রক্তে ডুবে গিয়েছেন ।
মানুষ উদ্বেলিত হয়ে ইমামকে দেখছিল। আর তিনি তাঁর প্রত্যেকটি বাক্যতে নিজের বংশের মহত্ব এবং হুসাইনের (আ.) শাহাদাতের গভীরতা ও তাৎপর্যতাকে তাদের সামনে তুলে ধরছিলেন। তাদের চোখগুলো পানিতে ভরে গেল আর কন্ঠনালিতে বসে যাওয়া কান্নার শব্দগুলো হটাৎ বিকট চিৎকারে আওয়াজ তুলল। ইয়াযিদ সকলের কান্না ও ইমামের বক্তব্যকে বন্ধ করার জন্য মোয়াজ্জেনকে আযান দেওয়ার নির্দেশ দিল।
মোয়াজ্জেনের আল্লাহু আকবার ধ্বনি ভেসে এলে ইমাম মিম্বারে বসেই বললেন: হ্যাঁ, আল−াহ্ মহান, সর্বোচ্চ, মহিমান্বিত ও সন্মানিত যাকে আমি ভয় পাই।
ইমাম: হ্যা, সাক্ষ্য দিচ্ছি প্রতিটি সাক্ষ্যদাতার সাথে যে, আল্লাহর ছাড়া কোন মা’বুদ বা প্রতিপালক নেই। (সবার মাথা নিচে ছিল, তারা বিচক্ষণতার সাথে আযান ও ইমামের দেওয়া উত্তরগুলো শুনছিল। মুহাম্মদ (সা.) এর নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে চোখগুলো নিচের দিক থেকে ফিরে তাকালো ইমামের দিকে। পানিতে ভেজা চোখগুলো যেন নতুন দৃষ্টি পেয়েছে। যেন ইমামের চেহারাতে নবী আকরামকে খোঁজ করছে ............)।
ইমাম মাথা থেকে পাগড়ী নামিয়ে চিৎকার করে বললেন, ওহে মুয়াজ্জেন এই মুহাম্মদের নামের কসম কিছু সময় থাম ......... (মুয়াজ্জেন চুপ হল। একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছিল। ইয়াযিদ খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়ল। কেননা আযানও ইমামকে থামাতে পারল না)।
ইমাম: হে ইয়াযিদ! এই প্রিয় ও সম্মানীত রাসূল (সা.) আমার পূর্বপুরুষ না তোমার? যদি বল তোমার সেটা যে মিথ্যা তা সবারই জানা। আর যদি বল আমার তাহলে কেন আমার বাবাকে হত্যা করেছো ও তার সবকিছু লুটতরাজ করেছ এবং তার পরিবারকে বন্দী করে নিয়ে এসেছো। হে ইয়াযিদ! এসব করার পরও মুহাম্মদকে আল্লাহর নবী হিসাবে মেনে কেবলামুখী হয়ে নামাজ পড়। তোমার জন্য দুঃখ হয়। এটা ভেবে যে আমার পিতা ও পূর্বপুরুষরা কাল কিয়ামতের দিনে তোমার সাথে কি নিদারুন আচরণটাই না করবে। ইয়াযিদ মোয়াজ্জিনের প্রতি নামায শুরু করার জন্য একামত দেওয়ার নির্দেশ দিলে উপস্থিত সবাই দারুন রেগে গেল এবং কিছু সংখ্যক নামাজ না পড়েই মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল ।
এই বন্দী সফরে ইমামের খোৎবাগুলো ও তার উচ্চারিত বাক্যগুলোর প্রভাব কিরূপ ছিল ইতিহাসই তার উত্তম পরিচায়ক। কেননা শামেই ইয়াযিদের পরিকল্পনা ছিল ইমামকে হত্যা করার। কিন্তু উপায়হীন হয়ে ইমাম ও তার পরিবারের সবাইকে সম্মানের সহিত মদীনায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। আর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই উমাইয়্যা শাসনের বিরুদ্ধে ইরাকে, হেজাজে বিদ্রোহী দলগুলো আন্দোলনে নামল। হাজার হাজার মানুষ শহীদদের সর্দার ইমাম হুসাইনর (আ.) রক্তের বদলা নেয়ার জন্য রুখে দাঁড়াল। অসুস্থ ইমাম!! অনেকেই জানেনা এই ইমামের নামের সাথে তাঁর (অসুস্থ) উপাধীটি কেন সংযুক্ত করা হয়। হয়তবা এমন মনে করে যে তার অনেক কষ্ট ছিল তাই। এ কারণেই কেউ কেউ নিজেদের চিন্তায় তাঁর চেহারাটাকে হলুদ বর্ণের ও আত্মিক বিষাদগ্রস্ত প্রতিয়মান করে থাকে। কিন্তু
বাস্তবতা তার বিপরিত। যারা তাঁর ঐতিহাসিক জীবনীর সাথে পরিচিত তারা জানে যে সম্পূর্ন জীবদ্দশাতেই তিনি অসুস্থ ছিলেন না। শুধুমাত্র কারবালায় তাঁর পিতার শাহাদাতের সময় অল্প কিছু দিন অসুস্থ ছিলেন। আর এটাই সত্য যে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন ঐ সময় তাকে এই অসুস্থতার উছিলায় তাকে হেফাজত করেছেন, যেন ইয়াযিদের লোকেরা তাকে কতল না করে। আর তাঁর জীবিত থাকার মাধ্যমে ইমামতের বংশধারা অব্যাহত থাকে এবং ইসলাম ও উম্মতের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা বিধান হয়। ইমামের অসুস্থতা সম্পর্কিত রেওয়ায়েত: শিমার কিছু সংখ্যক সিপাহীসহ তাবুগুলোর দিকে এলে ঐ সময় আলী বিন হুসাইন অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল ।
আলী বিন হুসাইন অসুস্থ ছিল বিধায় তাকে হত্যা করেনি ।
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর শিমার আলী বিন হুসাইনের তাবুতে এসে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলে তাদের মধ্য থেকে কেউ বলল, ‘‘সে তো অসুস্থ বা যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেনি, তাও তাকে হত্যা করব!’’ এই সময় ওমরে সা’দ সেখানে পৌছে বলল, ‘‘মহিলাদের, বাচ্চাদের ও এই অসুস্থকে কিছু করো না ।’’ অনেক ইতিহাস বেত্তা তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে লিখেছেন যে, ইমাম কুফায় পৌছানো পর্যন্ত অসুস্থ ছিলেন । এই কয়েক দিন ছাড়া, কোথাও বা কোন ইতিহাসে দেখা যায় না যে, তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত বা জীবনের বেশীর ভাগ সময় অসুস্থ ছিলেন। আর যে সকল প্রমানাদি পাওয়া যায় সেখানে দেখা যায় যে তিনি অন্যান্য ইমামগণের ন্যায় কয়েকটি ছোট বিষয় ছাড়া সম্পূর্ন সুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করেছেন এবং ইমামতের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে নিবেদিত ছিলেন।
সমকালীন খলিফাদের সাথে ইমাম ঃ
তাঁর ইমামতের মেয়াদকালে যালেম ও অত্যাচারি শাসকদের শাসন চলছিল। ইয়াযিদ, আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর, মারওয়ান হাকাম, আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান, ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালেক, অত্যাচারি শ্বাসক হিসাবে প্রত্যেকেই তারা মুসলিম সমাজের উপর শ্বাসনকার্য পরিচালনা করে।
তাদের ঐ সময়ের শ্বাসনকার্যের বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার সাথে আমরা এখন পরিচিত হবঃ শহীদদের সর্দার ইমাম হুসাইনের (আ.) শাহাদাতের পর মদীনা থেকে একদল লোক ৬২ হিজরতে শামে যায় এবং ইয়াযিদের মদ খাওয়া, কুকুরের সাথে খেলা, দিন-রাত আনন্দ-ফুর্তিতে থাকা ও আরো অনেক পাপকাজে লিপ্ত থাকার ঘটনাকে অতি নিকট থেকে লক্ষ্য করে। তারা মদীনায় ফিরে, দেখে আসা বিষয়গুলোকে মানুষের মাঝে ব্যক্ত করে। মদীনাবাসী ইমাম হুসাইনকে (আ.) কতল করার কারণে আগে থেকেই তার উপর প্রচুর রেগে ছিল বিধায় ইয়াযিদের সাথে বিরোধীতা করল । ইয়াযিদ তার বিরোধীতাকারীদের ধ্বংস করার জন্য মুসলেম বিন ওকবাহ্ নামে এক অতিশয় খারাপ লোকের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী মদীনার উদ্দেশ্যে পাঠাল। তার পাঠানো বাহিনী তিন দিন ধরে মদীনায় হামলা ও লুটতরাজ এবং দশ হাজার মানুষকে হত্যা কারল। এর সাথে সাথে তারা কোন প্রকার অসমাজিক কাজ করা থেকেও বিরত হল না । ৬৪ হিজরীতে ইয়াযিদের মৃত্যুর পর তার ছেলে মু’য়াবিয়া ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়ে কিছুদিন (চল্লিশ অথবা তিন মাস) পর নিজেই ইস্তফা দিয়ে ক্ষমতা থেকে অবসর নেয় । আব্দুল্লাহ্ বিন যুবাইর যার অনেক বছর ধরে খেলাফত ও ক্ষমতার লোভ ছিল, ইয়াযিদের মৃত্যুতে সে মক্কায় খেলাফত প্রতিষ্টা করল এবং হেজায, ইয়ামান, ইরাক ও খোরাসানের অধিবাসীরাও তার হাতে বয়াত গ্রহন করলো। শামে মু’য়াবিয়া বিন ইয়াযিদ ইস্তফা দিলে মারওয়ান বিন হাকাম চক্রান্ত করে ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয় এবং আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের সাথে বিরোধীতা করে। আর ষড়যন্ত্র ও প্রতারণা করে শাম ও পরে মিশরকে তার দখলে নিয়ে আসে। কিন্তু তার খেলাফত কাল বেশী দিন থাকেনি। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সে মারা যায় আর তার স্থানে আসে তার ছেলে আব্দুল মালেক । ৬৫ হিজরীতে সে ক্ষমতায় আসার পর শামের উপর একছত্র আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করে। সে ৭৩ হিজরীতে মক্কা অবরোধ করে আব্দুল্লাহ্ বিন যুবাইরকে বন্দী ও পরে হত্যা করে । আব্দুল মালেক ছিল অত্যাচারী, নির্দয়, নিষ্টুর ও কৃপন। একদিন সে সাঈদ বিন মুসিবকে বললো : ‘‘আমার এমন হয়েছে যে ভালকাজ করতে আনন্দ পাই না আর নোংরা কাজ করতে খারাপ লাগে না।’’ সাঈদ তাকে বলল পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে তোমার অন্তর সম্পূর্ণভাবে মরে গেছে। আব্দুল্লাহ্ বিন যুবাইরকে কতল করার পর মানুষের উদ্দেশ্যে দেয়া এক খোৎবাতে সে বলে : ‘‘যে আমাকে খোদাভীরুতা ও পরহেজগারীতার দিকে নিয়ে যেতে চাইবে তাকে আমি কতল করবো ।’’ আব্দুল মালেকের বড় একটি ভূল এটাই যে, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ছাকাফিকে বাছরা ও কুফার শাসক নিযুক্ত করা। হাজ্জাজ উমাইয়া খেলাফতের নিকৃষ্টতম খলিফা। সে স্বাধীনভাবে অপরাধ ও হিংস্রভাবে জনগণের উপর অত্যাচার এবং অন্যয়ভাবে তাদেরকে হত্যা করত। আর বিশেষ করে আলীর (আ.) অনুসারীদেরকে ধ্বংস করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়। তার খেলাফত কালীন সময়ে আনুমানিক একলক্ষ বিশ হাজার আলীর (আ.) অনুসারীকে হত্যা করে ।
সে প্রচন্ডভাবে ইমাম সাজ্জাদের (আ.) ব্যাপারে সতর্ক ছিল। আর চেষ্টা চালাল যে ইমামের আচরণ থেকে এমন কোন সুত্র হাতে আনার, যেন সেই অজুহাতে ইমামকে বন্দী করে মানহানি করতে পারে। ইমাম সজ্জাদ (আ.) তাঁর স্বাধীন করা কোন এক বাদির সাথে বিয়ে করেন। আব্দুল মালেকের লোকেরা এই ঘটনাটি তার কাছে পৌছালে সে ইমামকে অপমানজনক একটি চিঠি দেয় এই মর্মে: ‘‘আমার কাছে খবর পৌছেছে যে তুই তোর স্বাধীন করা কানিযের সাথে বিয়ে করেছিস। কিন্তু কুরাইশ বংশে অনেক মর্যাদা সম্পন্ন মহিলা আছে যাদেরকে বিয়ে করলে তোর ব্যক্তিত্ব ও সম্মান আরো বর্ধিত হত। আর তাদের থেকে উন্নত চরিত্রের সন্তান তোর ভাগ্যে আসত। তুই এই বিয়েতে না তোর দিকে দেখেছিস না তোর সন্তানদের জন্য কোন পথ খোলা রেখেছিস), এভাবেই শেষ করল। তার চিঠির জবাবে ইমাম : (তোমার চিঠি আমার কাছে পৌছেছে। কানিযের সাথে আমার বিয়েটাকে ভর্ৎসনা করেছো এবং বলেছো কুরাইশ বংশে কেউ এমন আছে যার সাথে বিয়ে করলে আমার ইজ্জত, সম্মান আরো বৃদ্ধি পেত ও উত্তম সন্তান ভাগ্যে আসতো। কিন্তু নবী (সা.)-এর থেকে মহান ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন আর কেউ নেই (অর্থাৎ আমরাই নবী (সা.)-এর পরিবারের এবং এই পরিবারের মত উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন পরিবার আর নেই, যা কিনা তাদেরকে বিয়ে করলে আমাদের বংশ মর্যাদা আরও উচ্চ পর্যায়ে যাবে)......যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের কাছে পবিত্র থাকবে কোন কিছুই তার ব্যক্তিত্বে আঘাত হানবে না। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন ইসলামের উছিলায় হীনমন্যতা ও সংকীর্ণতাকে তুলে দিয়েছেন (যারাই মুসালমান হবে তারাই সম্মানিত যদি সে দরিদ্র বা দাসও হয়। তার সাথে বিয়ে করা কোন দোষের কিছু নেই...) । আব্দুল মালেক একবার ইমামকে অপমান করার জন্য এবং মানুষের মাঝে অধিক ভয়-ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে আর তাদের সমস্ত ধরনের কর্মতৎপরতায় বাঁধা দেওয়ার জন্য, ইমামকে অনেক কষ্টে শামে নিয়ে আসে পরবর্তীতে আবার তাকে মদিনায় পাঠিয়ে দেয় । আব্দুল মালেকের মৃত্যুর পরে ৮৬ হিজরীতে তার ছেলে ওয়ালিদ ক্ষমতায় আসে। সেও ছিল অধিকতর অত্যাচারি ও লজ্জাহীন।
জালাল উদ্দিন সূয়ূতি তার ব্যাপারে লিখেছেন: ওয়ালিদ ছিল অধিকতর জালেম । ওয়ালিদ তার প্রথম ভাষণে বলে: ‘‘যারাই আমার অবাধ্যতা করবে তাদেরকে হত্যা করব। আর যে কেউ মৃত্যুর ভয়ে নিরবতা অবলম্বন করবে তাকেও ভবিষ্যতে হত্যা করব ।’’
ওয়ালিদও অন্যান্য অত্যাচারি শাসকদের মতই সে সময় ইমামের খ্যাতি ও জনপ্রিয়তায় ভীতসন্ত্রস্ত ছিল এবং ইমামের দুনিয়াবী ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের কারণে সে কষ্ট পেত। আর ভীত থাকতো যদি মানুষ ইমামের পাশে এসে দল বাঁধে তাহলে সেটি হবে তার ক্ষমতা ও খেলাফতের জন্য ভয়ংকর। আর একারণেই সমাজে ইমামের উপস্থিতিটা সে সহ্য করতে পারছিলনা। আবশেষে চক্রান্ত করে তাঁকে বিষ খাওয়ায় ।
ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর ইমামতের সমকালীন অবস্থাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দাঙ্গা, গোলযোগ, বিশৃংখলা, অস্থিরতা, সংকট বিরাজমান ছিল। আর অত্যাচারী শাসকদের উপস্থিতি ও তাদের অপরাধমূলক কাজ এবং ইমামের উপর তীব্র দৃষ্টি, এ সকল বিষয় বিশ্লেষন করলে এই ফলাফলে পৌছাতে পারি যে, দৃঢ় ঈমান সম্পন্ন, মুজাহিদ ও উৎসর্গকারী সাথী সঙ্গী না থাকার কারনে নেতিবাচক আন্দোলন, উত্তম গুনাবলী সম্পন্ন শিষ্য তৈরী, তাত্ত্বিত ও নৈতিক চারিত্রিক জ্ঞান সম্বন্ধীয় বই লেখা, তার প্রচার ও প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় তার ছিলনা। মক্কা থেকে মদিনায় আসার পথে এক লোক তার প্রতি আপত্তি তুলে বললো : ‘‘জিহাদ করার কষ্টকে ছেড়ে হজ্ব করতে এসেছো। যা কিনা অত্যন্ত সহজ কাজ? ’’ ইমাম: ‘‘যদি দৃঢ় ঈমান সম্পন্ন, মুজাহীদ ও উৎসর্গকারী সঙ্গী-সাথী পেতাম, তাহলেই জিহাদ বা সংগ্রাম হজ্জ্বের থেকে উত্তম হত ।’’ আবু ওমার নাহাদী বলেন, ইমাম সাজ্জাদ বলেছেন: ‘‘মদীনায় ও মক্কায় সত্যিকার ও উৎসর্গকারী বিশজন বন্ধুও আমাদের নেই ।
মুসলমানদের শিক্ষা দীক্ষায় ইমাম ঃ
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর মদীনায় এসে তার একটি কর্মসুচী ছিল তা হচ্ছে হাদীস ও ইসলামী জ্ঞান বিষয়ক বইয়ের প্রকাশ এবং মুসমানদেরকে দ্বীনি শিক্ষা-দীক্ষা দান করা। শেখ তুসি ১৭০ জন যারা ইমামের শিষ্য ছিল বা তার উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন তাদের নাম তার বইতে উল্লেখ করেছেন । উদাহরন স্বরূপ ইমামের চারজন ছাত্রের নাম উল্লেখ করলাম :
১। (সাঈদ বিন মাসিব) যার ব্যাপারে ইমাম বলেছেন: ‘‘সাঈদ অন্যান্যদের থেকে অনেক বেশী জ্ঞানী ও তার নিজের জামানার লোকদের থেকে তার বোধশক্তি বেশী ।’’
২। (আবু হামযা ছুমালি) যার ব্যাপারে সপ্তম ইমাম বলেছেন: ‘‘আবু হামযা তার নিজের জামানায় তেমন ছিল, যেমন (সালমান) ছিল তার জামানায় ।’’
৩। (সাঈদ বিন জাবির): ‘‘সে বিদ্যা ও বুদ্ধিতে এমন পারদর্শি ছিল যে সবাই বলতো জমিনের উপর এমন কেউ নেই যে সে সাঈদের জ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই কোন কাজ করতে পারে ।’’
সাঈদ বিন জাবিরকে বন্দী করে হাজ্জাজ ছাকাফির কাছে নিয়ে আসলে সে বলল: তুই সাকি বিন কাসির, না সাঈদ বিন জাবির ।
সাঈদ: ‘‘আমার মা ভাল মনে করেছেন তাই আমার নাম রেখেছেন সাঈদ।”
হাজ্জাজ: ‘‘আবুবকর ও ওমরের ব্যাপারে কি ধারনা রাখিস, তারা বেহেশ্তে না দোযখে আছে?’’ (এই প্রশ্নের উত্তরে এমন কিছু জানতে চাইল যে, সেই জবাবের উছিলায় তাকে হত্যা করা যায়)।
সাঈদ: ‘‘যদি বেহেশ্তে যাই তাহলে বেহেশ্তবাসীদেরকে দেখব তখন বলা যাবে কারা বেহেশ্তবাসী। আর যদি দোজখে যাই তাহলে দোজখবাসীদেরকেও দেখব। তখন তাদেরকে চিনব।’’
সাঈদ: ‘‘আমি তো তাদের উকিল নই, যে তাদের ব্যাপারে কথা বলব।’’
হাজ্জাজ: ‘‘কোন খলিফাকে বেশী ভালবাসিস?’’
সাঈদ: ‘‘যার উপরে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন সবচেয়ে বেশী সন্তুষ্ট আছেন।’’
হাজ্জাজ: ‘‘আল্লাহ কার উপর বেশী সন্তুষ্ট?’’
সাঈদ: ‘‘যে আল্লাহ সমস্ত গোপন কথা ও রহস্যগুলোর ব্যাপারে সর্বজ্ঞানী এটাও তিনি জানেন ।’’
হাজ্জাজ: ‘‘কেন হাসছিসনা?’’
সাঈদ: ‘‘কিভাবে হাসতে পারি, যে মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছে আর আগুন তাকে ধ্বংস করতে পারে।’’
হেজায: ‘‘তাহলে কেন আমরা হাসি খুশিতে আছি?’’
সাঈদ: ‘‘মানুষের অন্তরসমূহ একই রকম নয়। হাজ্জাজের নির্দেশে হীরা, জহরত এনে সাঈদের সামনে রাখা হল।’’
সাঈদ : ‘‘যদি এই ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিনের কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সঞ্চয় করে থাক তাহলে তোমার কোন ভর্ৎসনা নেই। কেননা কিয়ামত এমনই ভয়ানক যে, মায়েরা তাদের দুধের বাচ্চাকে পর্যন্ত ভুলে যাবে। সুতরাং ধন-সম্পদ সঞ্চয় করার কোন উপকারীতা নেই যদি না সেগুলো হালাল হয়ে থাকে।’’
হাজ্জাজ আনন্দোৎসবের উপায়-উপকরণ ও বাদ্যযন্ত্রের সরঞ্জাম আনার নির্দেশ দিলে সাঈদ অশ্র“সিক্ত হয়।
হাজ্জাজ: ‘‘জানতে চাস কিভাবে তোকে হত্যা করব?’’
সাঈদ: ‘‘যেভাবে তোমার ইচ্ছা। আল−াহ্র কসম যেভাবে আমাকে হত্যা করবে আল্লাহ যেনপরকালে তোমাকে সেই ভাবে সাজা দেন।’’
হাজ্জাজ: ‘‘চাস তোকে ক্ষমা করে দেই।’’
সাঈদ: ‘‘যদি ক্ষমা চাই তাহলে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে চাইব। কিন্তু তোমার কাছে কখনই ক্ষমা চাইব না।’’
হাজ্জাজ তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলে সে বলল: (তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি যিনি আকাশ সমুহ ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মোশরেক নই বরং মুসলমান) ।
হাজ্জাজ: ‘‘ওকে কেবলামুখী হতে ঘুরিয়ে নাও।’’ (যেদিকেই তাকাবে সেদিকেই আল্লাহ আছেন) ।
হাজ্জাজ: ‘‘ওর মুখটি মাটির উপর রাখ।’’
সাঈদ: (তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি আবার মাটিতেই ফিরিয়ে আনবো এবং মাটি থেকেই আবার তোমাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে আসবো) ।
হাজ্জাজ: ‘‘ওর মাথাটি দেহ থেকে আলাদা করে ফেল।’’
সাঈদ: ‘‘তারপর বলল, ইয়া আল্লাহ আমার পর তাকে আর কারুর উপর কর্তৃত্বশালী করনা।’’
কিছু সময় পর হাজ্জাজের নির্দেশে সাঈদ বিন জাবিরের দেহ থেকে পবিত্র রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে শুরু করল । সে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর একনিষ্ট ভক্ত ছিল এবং তিনি তাকে যথেষ্ট কদরও করতেন। আর ইমামের সাথে তার এই গভীর সর্ম্পকই হচ্ছে নিহত হওয়ার আসল কারন ।
(সাহীফায়ে সাজ্জাদীয়ে) ইমামের লেখা গ্রন্থ ঃ
দোয়ার প্রতি অনুরাগ বা আল্লাহর সাহায্য চাওয়া বা সমস্যায় পড়লে তাকে ডাকা বা তাঁর প্রয়োজন অনুভব করা এগুলো প্রকৃতিগত বিষয়। আর এ কারণেই যখন মানুষের সমস্যা দেখা দেয় এবং আর কোন পথ খোলা থাকে না, তখন প্রাকৃতিক ভাবেই আল্লাহর বিশাল ক্ষমতা ও রহমতের দিকে হাত উঠায়। মনে-প্রাণে তাকে ডাকে। তাঁর কাছে সমস্যার সমাধান চায় এবং সত্য সত্যই মানুষের বিবেক এভাবেই প্রচুর সমস্যার মধ্যেও স্বস্তি ফিরে পায়। অস্থিরতা ও মানসিক অশান্তি থেকে রেহাই পায়। আত্মা সুদৃঢ় অবলম্বন খুঁজে পায়। মানসিক বিশেষজ্ঞরা বা যারা মানসিক রোগের সাথে পরিচিত তারা জানেন যে, দোয়াই হচ্ছে মানুষের আত্মার জন্য সবচেয়ে উপযোগী খোরাক এবং ক্লান্ত ও অবসন্ন অন্তর সমুহের উৎফুল্লতা আনয়নকারী। দোয়া অন্তরের ব্যাথা বা কষ্টগুলো থেকে প্রশান্তি দান করে আর মুছিবত সমুহের চাপ কমায়। ইসলামে এই প্রকৃতিগত বিষয়টিকে মানুষের পথ পরিচালনা ও নির্দেশনা এবং তার শিক্ষা ও দীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আল্লাহর অলীগনের বিভিন্ন দোয়া ও ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর সঠিক পরিচিতি ও আক্বিদা বা বিশ্বাসগত বিষয়ের পরিচয় পাওয়া যায় তা তাদের শিষ্যদেরকেও শিখিয়ে গেছেন। সেখানে মানুষের অন্তরের গোপন ও জটিল রোগের চিকিৎসার কথাও উল্লেখ আছে।
একজন বিশেষজ্ঞের অভিমত ঃ
দোয়াগুলো হচ্ছে ইসলামী শিক্ষা ও দীক্ষার একটি বড় সম্পদ যা নবী করিম (সা.) ও ইমামগণের (আ.) কাছ থেকে এসেছে। কেননা তৌহীদ ও আল্লাহ্ পরিচিতি, নবুয়ত ও ইমামত, রাষ্ট্রের শৃংখলা বিধান, পরিচালনা, আদর্শিকতা, নাগরিক অধিকার, আদেশ-নির্দেশ, এবং বিভিন্ন আদব-কায়দা এ সব কিছুই প্রতিটি দোয়ার মধ্যে আলোচিত আছে। সুতরাং এভাবে বলা যেতে পারে যে, যে দোয়াগুলো আমাদের কাছে পৌছেছে সেগুলো চিন্তার বিকাশ, আত্মার উন্নতি ও মুসলমান সমাজের প্রভাব বিস্তার করার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করে। যতক্ষণ না মুসলমানরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা আর্জন করছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ইসলামী ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ হচ্ছে না। ইমামগণের কাছ থেকে যে সমস্ত দোয়ার বইগুলি আমাদের হাতে পেŠছেছে তার মধ্যে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর লেখা বই (সাহীফায়ে সাজ্জাদীয়ে) হচ্ছে তেমনি একটি দোয়ার বই যা আজও সূর্যের আলোর ন্যায় উজ্জল হয়ে আছে।
আহ্লে সুন্নাতের একজন জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি আল জাওয়াহের তফসিরের লেখক। জ্ঞানের নগরী কোম থেকে তার কাছে এক খণ্ড (সাহীফায়ে সাজ্জাদীয়ে) পা?ানো হলে তিনি এই মুল্যবান বইটিকে পড়েন এবং বইটির ব্যাপারে নিম্নলিখিত মন্তব্য করে লিখেন: ‘‘বইটিকে শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করেছিলাম এবং সেটিকে অদ্বিতীয় হিসাবে নিয়েছিলাম কেননা ইসলামী জ্ঞান, শিক্ষা-দীক্ষা ও দর্শনের এমন সব বিষয় তার মধ্যে লিপিবদ্ধ আছে যা অন্য কোথাও পায়নি। সত্য সত্যই আমাদের ব্যর্থতা যে নবুয়ত ও আহ্লে বাইতের রেখে যাওয়া এই মহামুল্যবান ও চিরন্তন বইটি এতদিন হস্তগত হয়নি। আমি যতবারই বইটি পড়েছি ততবারই দেখেছি তাতে যে কথাগুলো ব্যবহারিত হয়েছে তার স্থান হচ্ছে আল্লাহর বাণীর নিচে ও মানুষের কথার উপরে। সত্যই বইটি অতিসম্মানিয়, আল−াহ্ তাকে এই বইটি লেখার জন্য উত্তম পুরস্কার, সাহায্য ও সফলতা দান করুন।’’
এই মহামুল্যবান বইটি সমন্ধে আরো বেশী জানার জন্য এই বইতে লিপিবদ্ধ দোয়াগুলির সূচীপত্র নিম্নে তুলে ধরা হল:
১। আল্লাহর প্রশংসা।
২। নবী (সা.) ও তার পরিবারবর্গের উপর দরুদ।
৩। আল্লাহর আরোশের ফেরেস্তাদের উপর দরুদ।
৪। নবীগনের অনুসরনকারীদের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ চাওয়া।
৫। নিজের ও তার সঙ্গী-সাথীদের জন্য দোয়া।
৬। সকাল-সন্ধার দোয়া।
৭। গুরুত্বপূর্ন কাজ অথবা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এবং দুঃখ-কষ্টের সময়কার দোয়া।
৮। অগ্রহণযোগ্য কাজকর্ম ও অপছন্দনীয় নৈতিক চরিত্র এবং সম্ভাব্য খারাপ কাজ থেকে দুরে থাকার জন্য আল্লাহর করুনা চেয়ে দোয়া।
৯। ক্ষমা চাওয়ার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি।
১০। আল্লাহ্ তায়ালার আশ্রয় নেওয়া।
১১। পরিনাম ভাল হওয়ার জন্য দোয়া।
১২। স্বীকারোক্তি দেওয়া ও তওবা করা।
১৩। আশা-আকাঙ্খা পুরণের জন্য প্রার্থনা।
১৪। অত্যাচারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যখন সে অত্যাচারিত হয় অথবা যে কাজ অপছন্দনীয় তা অত্যাচারিদের করতে দেখলে।
১৫। যখন অসুস্থতা অথবা দুঃখ-কষ্ট অথবা সমস্যা দেখা দেয় সে সময়কার দোয়া।
১৬। অতীত গোনাহ্ বা দোষ-ত্র“টির জন্য ক্ষমা চেয়ে দোয়া।
১৭। যখন শয়তানের নাম মনে আসে এবং শয়তানের প্রতারনা ও শত্র“তা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় গ্রহন করার দোয়া।
১৮। যখন সমস্যা দুরীভূত হয় অথবা আশা-আকাঙ্খা পূর্ন হয় তখন তিনি যে দোয়া পড়তেন।
১৯। দুর্ভিক্ষ ও খরার পর বৃষ্টি চেয়ে দোয়া।
২০। প্রশংসিত নৈতিক চরিত্র ও পছন্দনীয় আচরণে উন্নিত হতে চেয়ে দোয়া।
২১। যখন কোন বিষয়ে তিনি দুঃখিত হতেন তখন যে দোয়া পড়তেন।
২২। কোন কাজে সমস্যা দেখা দিলে তার দোয়া।
২৩। সুস্থতা চেয়ে দোয়া এবং তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা।
২৪। বাবা-মার জন্য দোয়া।
২৫। সন্তানদের জন্য দোয়া।
২৬। প্রতিবেশীদের ও সুভাকাঙ্খীদের জন্য দোয়া।
২৭। ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষীদের জন্য দোয়া।
২৮। আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেয়া ও তার ভয় প্রকাশ করার দোয়া।
২৯। যখন রুজি কম হয়ে যায় তখনকার দোয়া।
৩০। ঋন পরিশোধের জন্য আল্লাহর সাহায্য চেয়ে দোয়া।
৩১। তওবা করতে পারার শক্তি চেয়ে দোয়া।
৩২। তাহাজ্জুতের নামাজের পর দোয়া।
৩৩। কল্যান চেয়ে দোয়া।
৩৪। যখন কোন বালা-মুসিবত আসতো অথবা কাউকে পাপকাজে পতিত হতে দেখতো তখনকার দোয়া।
৩৫। আল্লাহর সন্তুষ্টিতে দোয়া যখন কোন দুনিয়া পছন্দকারীদের দেখতেন।
৩৬। যখন মেঘ ও বিদ্যুৎ চমকানোকে দেখতেন এবং বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পেতেন তখন তিনি যে দোয়া পড়তেন।
৩৭। আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করতে পেরে তার স্বীকারোক্তি মুলক দোয়া।
৩৮। আল্লাহর বান্দার অধিকার আদায়ে সংকীর্নতা করায় ক্ষমা চেয়ে দোয়া।
৩৯। আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ চেয়ে দোয়া।
৪০। যখন মৃত্যুর কথা মনে আসতো অথবা কারও মৃত্যুর খবর শুনতেন তখন তিনি যে দোয়া পড়তেন।
৪১। দোষ-ত্র“টিকে ও পাপগুলোকে ঢেকে রাখার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া।
৪২। কোরআন পড়া শেষ করে তিনি যে দোয়া পড়তেন।
৪৩। নতুন চাঁদ দেখে দোয়া।
৪৪। রমযান মাসের প্রথমের দোয়া।
৪৫। রমযান মাসের শেষের দোয়া।
৪৬। ঈদুল ফিতরের ও জুমার দিনের দোয়া।
৪৭। আরাফাতের দোয়া (৯ই যিলহজ)।
৪৮। ঈদুল আয্হা ও জুমার দিনের দোয়া।
৪৯। শত্র“দের শত্র“তাকে প্রতিহত করার দোয়া।
৫০। আল্লাহকে ভয় পেয়ে দোয়া।
৫১। অনুনয় ও সনির্বন্ধ প্রার্থনা।
৫২। আল্লাহ্ তায়ালার কাছে জোরালো সুপারিশ করে কিছু চাওয়ার দোয়া।
৫৩। আল্লাহর দরবারে নিজেকে ছোট ও বিনয়ীর দোয়া।
৫৪। সমস্ত প্রকার দুঃখ-কষ্ট দুরীভূত হওয়ার দোয়া।
সাহীফায়ে সাজ্জাদীয়ার ব্যাখ্যা সম্বলিত আরবী ও ফার্সী ভাষায় অনেক বই লেখা হয়েছে। আল্লামা শেখ তেহ্রানী তার মুল্যবান বই আয্যারিয়াহ্তে আনুমানিক ৭০টি ব্যাখ্যা সম্বলিত বইয়ের নাম উল্লেখ করেছেন। এই বইগুলির মধ্যে সাইয়্যেদ আলী খান -এর বইটি বেশী প্রনিধানযোগ্য। এই বইটি সংক্ষিপ্তাকারে “তালখিসুর রিয়ায” নামে প্রকাশ পেয়েছে এবং আমাদের হাতে আছে। আর শিয়া মনীষীদের অনেকেই বিভিন্ন ভাবে সাহীফায়ে সাজ্জাদীয়ার অনুবাদও করেছেন। অতি দূর্ভাগ্যের বিষয় যে, এখনও পর্যন্ত সেগুলোর একটিও প্রকাশ পায়নি। ইদানিংকালের কিছু লেখক (সাহীফায়ে সাজ্জাদীয়ের) ফার্সী অনুবাদ করেছেন এবং তার কিছু প্রকাশও পেয়েছে। আমরা এখানে কয়েকজন অনুবাদকের নাম তুলে ধরলাম :
১। অনুবাদ ঃ মরহুম হাজী শেখ আবুল হাসান সাঙরানী।
২। অনুবাদ ঃ মরহুম হাজী শেখ মেহ্দী এলাহী কুমশেই।
৩। অনুবাদ ঃ ফাইযুল ইসলাম।
৪। অনুবাদ ঃ জাওয়াদ ফাযেল।
৫। অনুবাদ ঃ ছাদরে বালাগী।
(সাহীফায়ে সাজ্জাদীয়ের) কয়েকটি দোয়ার সংক্ষিপ্ত অনুবাদ ঃ
৮ নম্বর দোয়ায় এমন আছে ঃ ‘‘হেআল্লাহ লোভ-লালসার সীমা অতিক্রম করা, রাগান্বিত হওয়া, হিংসায় বশবর্তী হওয়া, ধৈর্য কম হওয়া, অল্পে তুষ্ট না হওয়া, কারও অমঙ্গল চাওয়া, কামভাব, অসহিষ্ণুতার আধিপত্যের অধিকারী হওয়া, নফসের দাস হওয়া, সৎ পথে চলার অবাধ্যতা হওয়া, গাফিলতি করা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাওয়ার চেষ্টা করা, সত্যের উপর অসত্যের স্থান দেওয়া, গোনাহ্ করার ইচ্ছা প্রকাশ করা, গোনাহ্কে ছোট করে দেখা, আনুগত্য ও প্রতিযোগিতাকে বড় করে দেখা, ধনীর সাথে সমকক্ষ হওয়া, গরীবদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, অধীনস্থদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা, উপকারির কৃতজ্ঞতা শিকার না করা, আত্যাচারিকে সাহায্য করা ও অত্যাচারিতদের সাহায্য না করা, যাকিছুতে আমরা অধিকার রাখিনা তা পেতে চাওয়া, দ্বীনের উপর কোন জ্ঞান না রেখেই তার ব্যাপারে কিছু বলা, এসব থেকে দুরে থাকার জন্য তোমার করুনা চাই। আর কারো বিশ্বাসঘাতকতা করার ইচ্ছা করা, নিজের কাজ কর্মে আত্মগেŠরব করা, উচ্চ আশা-আকাংখা করা এবং আভ্যন্তরীণ খারাপ দিকগুলি, ছোট গোনাহ্গুলিকে তুচ্ছ ভাবা, আমাদের উপর শয়তানের আধিপত্য বিস্তার করা, অথবা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্দশাময় করে তোলা, অথবা কোন শাসকের আমাদের উপর অত্যাচার করা, থেকে মুক্তি পওয়ার জন্য তোমার করুনা চাই। আর বাড়াবাড়ি করা, অপব্যয় করা, প্রয়োজন মত জীবিকা না থাকা, শত্র“, অভাবি, আত্বীয় ও যারা কষ্টে জীবন-যাপন করে তাদের দুঃখে আনন্দ প্রকাশ করা, কোন প্রস্তু‘তি ছাড়াই ও আকস্মিক মৃত্যুবরণ করা, প্রচুর অনুতাপ ও দুঃখ-কষ্ট, অতি খারাপ দুর্দশা ও খারাপ পরিণতি, ভাল কাজের পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং শাস্তি গ্রহণ করা থেকে দুরে থাকার জন্য তোমার সাহায্য প্রর্থনা করছি। হে আল্লাহ মুহাম্মদ ও তার পরিবারের উপর দুরুদ পাঠাও, আমি এবং প্রতিটি ঈমানদার নারীপুরুষ যেন সব ধরনের খারাপ দিকগুলি থেকে দুরে থাকতে পারি সে জন্য তোমার একান্ত অনুগ্রহ কামনা করছি। ইয়া আর হামার রহিমিন।’’
এবং ২০ নম্বর দোয়ায় পড়বো ঃ ‘‘হেআল্লাহ মুহাম্মদ ও তার পরিবারের উপর দুরুদ পাঠাও। আর আমার ঈমানকে পরিপূর্ণ করে দাও। আমার প্রত্যায়কে উত্তম প্রত্যয়ে, আমার নিয়তকে উত্তম নিয়্যতে এবং আমার কাজগুলোকে উত্তম কাজে পরিনত কর। হে আল্লাহ তোমার করুণা দিয়ে আমার নিয়তকে পরিপুর্ণ করে দাও। তোমার প্রতি আমার যে বিশ্বাস আছে তা আরো মজবুত করে দাও এবং যা কিছু আমি ভুল করে ফেলেছি তা তুমি তোমার করুণা দিয়ে সংশোধন করে দাও। হে আল্লাহ মুহাম্মদ ও তার পরিবারের উপর দুরুদ পাঠাও। আর যে চিন্তা-ভাবনাগুলো আমাকে আমার প্রতি ব্যস্ত— করে রাখে সেগুলোর তুমি এখানেই ইতি দাও। যাকিছু কাল কিয়ামতের দিনে আমার কাছে জানতে চাওয়া হবে তা থেকে আমাকে বিরত রাখ। আমাকে অমুখাপেক্ষী কর, আমার জন্য তোমার দেয়া রুজীকে আরো বৃদ্ধি করে দাও, তোমার কৃতজ্ঞতা স্ব^ীকার না করা ও নিজের নফসের দাসত্ব করা থেকে আমাকে রক্ষা কর, আমাকে সবার কাছে প্রিয় কর কিন্তু অহংকারি করনা, আমার ইবাদতে সাফল্য দান কর এবং আমার আত্মগর্বীতার কারনে ইবাদতের ছওয়াবকে কম করে দিওনা, মানুষের কল্যাণ ও উপকার করার তেŠফিক দান কর, কল্যাণ বা উপকার করার পর তাদেরকে খোটা দেওয়াতে তা বাতিল করনা, আমাকে উত্তম নৈতিক চরিত্র দান কর এবং আমাকে আভিজাত্য দেখানো থেকে রক্ষা কর। হে আল−াহ্ মুহাম্মদ ও তার পরিবারের উপর দরুদ পা?াও। মানুষের মাঝে আমার মান-মর্যাদাকে যতটুকু নিজের কাছে আছি তার থেকে উপরে নিয়ে যেওনা, আমি তোমার কাছে যে পরিমাণ ইজ্জত সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা রাখি বাহিরে তার থেকে বেশী আমায় দান করনা। হে আল্লাহ মুহাম্মদ ও তার পরিবারের উপর দরুদ পাঠাও, আমাকে উপযুক্ত পথ প্রদর্শন করাও যা পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই, সঠিক রাস্তায় চলার মনোবল দাও যেন তা থেকে দুরে সরে না যাই, সঠিক নিয়ত করার শক্তি দাও যেন সংশয়ে পড়তে না হয়, আমাকে জীবিত রাখ যাতে করে জীবনের পুরো সময়টাই তোমার ইবাদত ও গোলামী বা দাসত্ব করে কাটাতে পারি, যখনই শয়তান আমার পিছু নিবে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যেও ---আমার রুহ্কে নিয়ে নিও ---তোমার শত্র“ভাব আমার উপর পড়ার আগেই অথবা তুমি আমার উপর রাগান্বিত হওয়ার আগেই। হে আমার প্রতিপালক এমন কোন অপছন্দনীয় বিশেষণ আমার ঘাড়ে চাপিওনা তোমার সংশোধন ছাড়া, এমন কোন দোষ-ত্র“টি আমার মধ্যে দিওনা কেননা তাতে কোন মঙ্গল নেই শুধুমাত্র তুমি যদি সেটাতে কোন মঙ্গল রেখে থাক, এমন কোন অসম্পূর্ণ ভাল অভ্যাস দিওনা সেটাকে তুমি পরিপূর্ন করা ছাড়া। হে আল্লাহর! মুহাম্মদ ও তার পরিবারের উপর দরুদ পাঠাও, আমার জন্য শত্র“র শত্র“তাকে বন্ধুত্বে, অত্যাচারিদের হিংসাকে ভাল চাওয়াতে, আমার প্রতি তোমার বান্দাদের খারাপ ধারনাকে বিশ্বাস ও ভাল চিন্তাতে, নিকটতমদের শত্র“তাকে ভালবাসায়, তাদের খারাপ ব্যবহারকে ভাল ব্যবহারে, দুরে থাকা আত্বীয়স্বজনদেরকে সাহায্যকারীতে, মিথ্যাবাদী বন্ধুদের চাটুকারিতাকে ঐকান্তিকতায়, বন্ধু-বান্ধবদের ক্রোধকে উৎফুল−তায়, অত্যাচারিদের তিক্ততার ভয়কে মিষ্টি মধুরতায় পরিবর্তন করে দাও। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ও তার পরিবারের উপর দরুদ পাঠাও, আর যারা আমাকে অত্যাচার করবে তাদের বিরুদ্ধে আমার হাতকে শক্তিশালী ও যারা আমার সাথে কলহ করবে তাদের বিপক্ষে আমার বক্তব্যকে এবং যারা আমার সাথে শত্র“তা করবে তাদের প্রতি আমাকে বিজয়ী কর, আর যে আমার অপমানিত ও নিরুপায় করতে চায় তাদের থেকে আমাকে শক্তিশালী কর ও যারা আমাকে কষ্ট দিতে চায় তা থেকে আমাকে রক্ষা কর এবং যারা আমাকে সত্য ও সঠিক দিকে যেতে বাধ্য করে বা তার প্রতি আনুগত থাকার জন্য পরিচালনা করে তাদেরকে সফলতা দান কর। হে আল−াহ্! মুহাম্মদ ও তার পরিবারের উপর দরুদ পাঠাও, আমাকে সাহায্য কর, আমার সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আমি যেন তাদের সাথে হিতসাধনের ইচ্ছায় মোকাবিলা করি, আর যারা আমার সাথে দুরত্ব সৃষ্টি করেছে তাদেরকে উত্তম পুরস্বার দেই, যারা আমাকে বঞ্চিত করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দেই, যারা আমার থেকে দুরে চলে গেছে তাদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করি, যারা আমার ব্যাপারে খারাপ কথা বলেছে আমি যেন তাদের ব্যাপারে ভাল কথা বলি, ভালকে কৃতজ্ঞতা ও খারাপকে উপেক্ষা করে চলতে পারি। হে আল্লাহ্! মুহাম্মদ ও তার পরিবারের উপর দরুদ পাঠাও, আমাকে উপযুক্ত বা সুযোগ্য হিসাবে বিন্যাস কর এবং খোদাভীরুতার রূপে রূপায়িত কর। ন্যায়পরায়নতা প্রসারে, রাগকে হজম করা, ফিৎনার আগুনকে নিভিয়ে ফেলা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুন্দর অন্তরসমুহকে একজায়গায় আনা, মানুষদের সংশোধন করা, তাদের ভাল দিকগুলি প্রচার করা ও খারাপ দিকগুলিকে ঢেকে রাখা, সহানুভুতির সাথে আচারণ করা, বিনয়ী, মার্জিত ভাব, ধৈর্য ও ব্যক্তিগত!, সুন্দর আচরণ, ভাল কাজের জন্য অগ্রবর্তীতা হওয়া..........)।’’
অধিকার সম্পর্কিত বই ঃ
ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর লেখা আরও একটি মহা মুল্যবান বই যা বর্তমানে আমাদের হাতে আছে তা হচ্ছে অধিকার সম্পর্কিত বই। এই বইটি শিয়া মনীষীদের লেখা পুরাতন বই গুলির মধ্যে সংকলিত ছিল যেমন: “তোহাফুল উকুল” “মান লা ইয়াহ্যারুহুল ফাকিহ্” “খিসাল” “এমালি”। এখানে বিশেষ বিশেষ অধিকারের অনুবাদ তুলে ধরা হলো ঃ
আল্লাহর অধিকার ঃ তোমার উপর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের অধিকার এই যে, তুমি তাকে এক ও অদ্বিতীয় মনে করে তাঁর ইবাদত করবে। আর যদি তুমি তা কর, তবে তিনি তোমার দ্বীন ও দুনিয়ার পরিপূর্ণতা দান করবেন।
আত্মার অধিকার ঃ তোমার উপর তোমার আত্মার অধিকার ঐরূপ যে তুমি তাকে আল্লাহর আনুগত্য বা হুকুম পালনে অভ্যস্ত— করবে।
মুখের অধিকার ঃ বাজে কথা বলা থেকে দুরে রাখা, ভাল কথা বলার অভ্যাস কারানো, আর যে কাথা বলায় কোন উপকার নেই সে ধরনের কথা বলা থেকে দুরে রাখা এবং মানুষের ভাল দিকগুলো সমন্ধে আলোচনা করা।
কানের অধিকার ঃ গীবত শোনা থেকে দুরে থাকা এবং যেগুলো শোনা হালাল নয়, যেমনঃ (হারাম মিউজিক ..........)।
চোখের অধিকার ঃ যাকিছু দেখা হালাল নয় তা দেখা থেকে বিরত থাকা, যেমনঃ (বিয়ে করা যায় এমন মহিলার দিকে বিয়ের আগে তাকানো বা সর্ম্পক রাখা ..........)।
হাতের অধিকার ঃ হারাম কাজে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
পায়ের অধিকার ঃ হারাম কাজে যাওয়া থেকে বিরত থাকা, কেননা এই পা দিয়েই পুল সিরাতের উপরে উঠতে হবে, সে সময় তুমি যেন পা পিছলিয়ে না পড়, তাহলে দোজখের আগুনে পড়বে।
পেটের অধিকার ঃ ওটাকে হারাম খাবার দিয়ে পরিপূর্ন করোনা এবং ঊদর ভর্তি করে খেওনা।
লজ্জা স্থানের অধিকার ঃ সেটিকে জেনা ও অশ্লীল কাজ-কর্ম থেকে দুরে রাখা এবং মানুষের দৃষ্টির অন্তরালে রাখা।
নামাজের অধিকার ঃ নামাজ হচ্ছে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া তার মানে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানো, আর যদি নিজেকে তুচ্ছ, ছোট ভেবে এবং অন্তর দিয়ে তার সামনে দাঁড়াতে পার তাহলে যেভাবে নামাজ পড়া উচিৎ সেভাবে পড়তে পারবে।
হজ্বের অধিকার ঃ হজ্জ্বের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর দরবারে নিজেকে হাজির করা আর পাপ কাজের থেকে পালিয়ে এসে তার কাছে আশ্রয় নেয়া, এটাও তোমার তওবা কবুল হওয়ার একটি মাধ্যম এবং দ্বীনের একটি ফরজ যা আল−াহ্ তোমার উপর অপরিহার্য করেছেন।
রোজার অধিকার ঃ রোজা একটি পর্দা স্ব^রূপ যা আল্লাহ্ তায়ালা তোমার মুখ, কান, চোখ, পেট, শরীরের লজ্জা স্থানের উপর বিছিয়ে দিয়েছেন যেন তোমাকে দোজখের আগুন থেকে হেফাজত করে।
ছদকার অধিকার ঃ ছদকা তোমার সঞ্চিত সম্পদ যা আল্লাহর কাছে রক্ষিত আছে এবং তার কোন সাক্ষী রাখার প্রয়োজন নেই, যদি তুমি সেটা জানতে তাহলে যাকিছু তুমি প্রকাশ্য দান কর তার থেকে যাকিছু তুমি গোপনে আল্লাহর কাছে গচ্ছিত রাখ তার উপর তোমরা বেশী বিশ্বাস স্থাপন হতো। আর এটাও জেনে রাখ যে ছদকা দুনিয়াতে তোমার সমস্যাগুলিকে, অসন্তুষ্ট হওয়া থেকে দুরে সরিয়ে রাখবে এবং আখেরাতে দোজখের আগুন থেকে।
কোরবানীর অধিকার ঃ কোরবানীর অর্থ হচ্ছে যে তুমি আল্লাহকে পাওয়ার চেষ্টা কর, না আল্লাহর সৃষ্টিকে। আর এ থেকে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কিয়ামতের দিনে নিজেকে ম্ক্তু করতে পারবে।
শিক্ষকের অধিকার ঃ তাকে সম্মান দেওয়া, তার ক্লাসে ভদ্র ভাবে থাকা, মনোযোগ সহকারে তার কথা শ্রবন করা, তার সংস্পর্শে থাকা, উচ্চ স্বরে তার সাথে কথা বলো না, যদি তার কাছে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করে তুমি উত্তর দিওনা কেননা সে তার উত্তর দিবে, তার ক্লাসে বসে অন্যের সাথে কথা বল না, তার কাছে কারুর ব্যপারে গীবত করনা, তার খারাপ দিকগুলো নিয়ে যদি কেউ তোমার কাছে বলে তবে তার প্রতিবাদ কর, তার খারাপ দিকগুলিকে ঢেকে রাখ, তার ভাল দিকগুলিকে প্রচার কর, তার শত্র“র সাথে সর্ম্পক রেখোনা, তার বন্ধুর সাথে শত্র“তা করনা, সুতরাং যদি এই দায়িত্বগুলি পালন কর তাহলে ফেরেস্তারা সাক্ষী দিবে যে তুমি যা করেছো সব আল্লাহর জন্যে করেছো আর তার কাছ থেকে যা শিখেছ তা মানুষের দেখানোর জন্য নয়।
শিক্ষার্থীর আধিকার ঃ তোমার উপরে তাদের অধিকার হচ্ছে এই যে, যেহেতু আল্লাহ তোমাকে জ্ঞানের ভান্ডার দিয়েছেন, সেহেতু তুমি তাদের অবিভাবক। সুতরাং যদি তাদেরকে ভাল শিক্ষা দাও ও তাদের সাথে রুঢ় ব্যবহার না করো এবং তাদের উপর রাগান্বিত না হও তাহলে তোমাকে আল্লাহ অফুরন্ত নেয়ামত দান করবেন। আর যদি তাদেরকে উত্তম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত কর ও তাদের উপর চড়াও হও তাহলে আল্লাহ তোমার কাছ থেকে শিক্ষার আলো উঠিয়ে নিবেন এবং তার করুনা, অনুগ্রহ থেকে তোমাকে বঞ্চিত করবেন।
স্বামী-স্ত্রীর অধিকার ঃ আল্লাহ্ তোমাদের একে অপরকে তোমাদের ঘনিষ্টতার ও প্রশান্তির মাধ্যম নির্ধারন করেছেন। আর অবশ্যই জানা দরকার যে তোমার জন্য এটা আল্লাহর একটি নেয়ামত, সুতরাং তাকে শ্রদ্ধা ও তার সাথে সদাচারন কর, যদিও তোমার অধিকার তার প্রতি অতিব প্রয়োজনীয় কিন্তু তোমার উচিৎ যে তার প্রতি মেহেরবান হও।
মায়ের অধিকার ঃ তুমি জেনে রাখ যে, তোমাকে এমন জায়গায় (পেটে) বহন করেছে যা অন্য কেউ তা করবে না এবং তার হৃদয়ের ফল (রক্ত) তোমাকে দিয়েছে যা আর কেউ তোমাকে দিবে না, আর সে তার সমস্ত অস্তি—ত্ব দিয়ে হেফাজত করেছে এবং সে নিজে না খেয়েও তোমাকে দুধ খাইয়েছে এবং নিজে তৃষ্ণার্ত থেকেও তোমার পিপাসাকে নিবারণ করেছে, আর সে নিজে ভাল না পরে তোমাকে ভাল পরিয়েছে, নিজে রোদের মধ্যে থেকেও তোমাকে ছায়ায় রেখেছে, তোমার জন্য বিনিদ্রায় থেকেছে, গরম ও শীতে তোমাকে দেখে রেখেছে, যেন তুমি ঁেবচে থাক। সুতরাং আল্লাহর সাহায্য ও করুনা ছাড়া তাকে তুমি ধন্যবাদ জানানোর শক্তি অর্জন করতে পারবে না।
পিতার অধিকার ঃ তোমার জানা উচিৎ সে তোমার ভিত্তি, আর যদি সে না থাকতো তাহলে তুমিও থাকতে না, সুতরাং যখনই তোমার ভিতর কোন ভাল কিছু অনুভব করবে জানবে এই নেয়ামতের মূলে তোমার বাবা, আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যেভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ।
সন্তানের অধিকার ঃ জেনে রাখ, তারা তোমাদের থেকে। তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার ভাল-মন্দ তোমাদের সাথে সর্ম্পকীত এবং আল্লাহর তরফ থেকে তোমরা তাদের দীক্ষা ও পরিচালনার দায়িত্বশীল। আর তাদেরকে সাহায্য কর আল্লাহর আদেশ-নির্দেশের প্রতি আনুগত্য করার জন্য। সুতরাং তাদের সাথে এমনভাবে থাক কেননা তাদের প্রতি ভাল আচরনের জন্য পরস্কৃত হবে আর তাদের প্রতি খারাপ আচরনের জন্য শাস্তি— প্রাপ্ত হবে।
ভাইয়ের অধিকার ঃ সে তোমার সাহায্যকারী ও শক্তি, তাকে আল্লাহর আদেশ অমান্যকারী ও সৃষ্টির উপরে অত্যাচারী হতে দিওনা এবং শত্র“র বিপক্ষে তাকে সাহায্য কর ও তার মঙ্গল কামনাকারী হও এবং যদি আল্লাহর আনুগত্যের বিপরীতে অন্যকে আনুগত্য করার দিকে পা বাড়ায় তাহলে আল্লাহকে তার থেকে বৃহত্তর ও অতিব সম্মানিত জানবে।
তোমার উপর নেক্কারের অধিকার ঃ তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং তার ভাল কাজকে স্মরণ রাখ। তার ভালদিকগুলোকে প্রচার কর এবং আল−াহ্র কাছে তার জন্য মন খুলে দোয়া কর, যেন তার গোপন ও প্রকাশ্য নেক কাজের উপযুক্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক, আর যদি কোন দিন পুরস্কার দেওয়ার সামর্থ্য আসে তাহলে তাকে পুরস্কৃত করো।
পেশ ইমামের অধিকার ঃ সে আল্লাহ্ ও তোমার মধ্যে মধ্যস্থাকারীর দায়িত্ব নিয়েছে এবং তোমার পক্ষ থেকে কথা বলে, কিন্তু তুমি তার পক্ষ থেকে কথা বলনা, আর সে তোমার ব্যাপারে দোয়া করে, কিন্তু তুমি তার ব্যাপারে দোয়া করনা এবং নামাজে যদি তার ত্র“টি থেকে থাকে তবে সেটা তার উপরে বর্তায়, আর যদি কোন ত্র“টি না থেকে থাকে তুমিও তার অংশীদার। সুতরাং তোমার প্রানকে তার প্রানের প্রতি আর তোমার নামাজকে তার নামাজের প্রতি সংরক্ষন করে রেখেছে, তার উপর এভাবেই কৃতজ্ঞ থেকো।
সহচরের অধিকার ঃ তার সাথে ভদ্রভাবে আচরণ কর এবং তার সাথে কথা বলার সময় নিরপেক্ষভাবে ফয়সালা দাও, আর তার অনুমতি ব্যতিরেকে তুমি তোমার স্থান থেকে উঠনা, কিন্তু যে তোমার কাছে বসে আছে সে তোমার অনুমতি ব্যতিরেকে উ?তে পারে এবং তার ভুল-ত্র“টি গুলোকে ভুলে যাও, কিন্তু তার ভালদিকগুলোকে ভুলে যেওনা, আর ভাল বিষয় ছাড়া অন্য কিছু তাকে বলনা।
প্রতিবেশীর অধিকার ঃ তার অনুপস্থি’তিতে তার অধিকার আদায় করা বাঞ্চনীয় এবং তার উপস্থীতিতে তাকে সম্মান দেওয়া এবং তাকে সাহায্য করা যদি সে অত্যাচারিত হয়ে থাকে এবং অবশ্যই তার খারাপ দিককে অনুসন্ধান করোনা এবং যদি তার কাছ থেকে খারাপ কিছু দেখ তাহলে তা লুকিয়ে ফেলো, আর সে যদি উপদেশ গ্রহনকারী হয় তাহলে তাকে উপদেশ দিও এবং তার কষ্টের সময় তাকে ছেড়ে যেওনা, তার দোষ-ত্র“টি মনে রেখনা, তার অন্যায়কে ক্ষমা ও মহানুভবতার দৃষ্টিতে দেখে তার সাথে ব্যবহার কর।
বন্ধুর অধিকার ঃ তার সাথে সমতা বিধান করে ও মহানুভবতার সাথে কথা বল, সে যেভাবে তোমাকে সম্মান করবে তুমিও তদ্রুপ তাকে সম্মান দেখাবে এ ব্যাপারে সে যেন তোমার থেকে অগ্রবর্তী হয়ে না যায়, আর যদি অগ্রবর্তী হয়েই যায় তবে তাকে পুরস্কৃত করো, আর যেমনভাবে সে তোমার সাথে দয়াশীলতা প্রদর্শন করবে তুমিও তদ্রুপ তার প্রতি দায়াশীল হবে, যদি সে কখনও পাপকাজের ইচ্ছা করে তবে তাকে ঐ কাজ করা থেকে দুরে রাখবে এবং তাকে শাস্তি না দিয়ে তার উপর দয়াবান হও।
অংশীদারের অধিকার ঃ যদি সে অনুপস্থিত থাকে তবে তার শুন্যতাপুরন কর, আর যদি উপস্থিত থাকে তাহলে তাকে মেনে চলো, তাকে কোন আদেশ করোনা এবং তার সাথে পরামর্শ ব্যতিরেকে কোন কাজ করো না, তার সম্পদকে হেফাজত করে রাখ, সামান্য পরিমাণও ঐ সম্পদের খিয়ানত করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত দুই অংশীদার একে অপরের প্রতি খিয়ানত করে না ততক্ষণ আল্লাহর সাহায্য তাদের সাথে থাকে।
অর্থের অধিকার ঃ হালাল পথ ব্যতীত অর্থ উপার্জন করবে না এবং হালাল পথে ছাড়া তা ব্যয় করবে না, আর যে তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানায় না তাকে তোমার উপরে প্রাধান্য দিও না এবং তোমার অর্থ দিয়ে আল্লাহর আনুগত্যে কাজ কর, আর কৃপণতা করোনা যা তোমাকে গভীর অনুশোচনায় ফেলে এবং যেন বিপদ-আপদ তোমাকে পেয়ে না বসে।
ঋন প্রার্থী ব্যক্তির অধিকার ঃ যদি ঋন পরিশোধের সামর্থ থাকে তবে পরিশোধ কর, আর যদি সামর্থ না থাকে তাহলে ভাল ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে রাজি করাও এবং ভালভাবে ও ধীরে তার উত্তর দিয়ে তাকে বিদায় কর।
একসাথে বসবাসকারীর অধিকার ঃ কেউ তোমার সাথে পরামর্শ করতে আসলে তুমি তাকে কপটতা ও প্রতারণা করোনা এবং তার কাজে অযথা নাক গলিও না।
তোমার উপর শত্র“র অধিকার ঃ শত্র“ যদি কোন বিষয়ে তোমার উপর অভিযোগ আনে এবং যদি তার অভিযোগ সত্য হয় তবে তুমি নিজেই তার সাক্ষী হও ও তার উপর অত্যাচার করোনা এবং তার অধিকার দাও, আর যদি তার অভিযোগ সত্য না হয় তবে তার সাথে সদাচার কর এবং সদাচার ছাড়া তার সাথে ব্যবহার করো না, তার উপর আল্লাহর রাগকে ত্বরান্বিত করো না।
শত্র“র উপর তোমার অধিকার ঃ শত্র“র উপর আনীত অভিযোগ যদি সত্য হয় তার সাথে ভালভাবে কথা বল এবং তার অধিকারকে অস্বীকার করোনা, আর যদি তোমার অভিযোগ সত্য না হয় তবে তা থেকে বিরত থাক ও তওবা কর এবং তোমার অভিযোগকে তুলে নাও।
পরামর্শ গ্রহণকারীর অধিকার ঃ তোমার যদি জানা থাকে তাহলে তাকে পথ নির্দেশনা দাও, আর যদি জানা না থাকে তাহলে যে জানে তার কাছে পা?াও।
পরামর্শকারীর অধিকার ঃ যার সাথে পরামর্শ করবে যদি তার মতামত তোমার সাথে সম্মত না হয় তবে তাকে অপবাদ দিও না, আর যদি তোমার সাথে সম্মত হয় তবে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাও।
উপদেশ প্রার্থীর অধিকার ঃ যদি তোমার কাছে উপদেশ চায় তাহলে তাকে উপদেশ দাও এবং তার সাথে সদব্যবহার কর।
উপদেশ দানকারীর অধিকার ঃ তার সাথে বিনয়ীভাবে কথা বল এবং তার কথাগুলো শ্রবণ কর, যদি সঠিক বলে তবে আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানাও, আর যদি সঠিক না বলে তবে তার সাথে সুন্দর ব্যবহার কর এবং তাকে অপবাদ দিও না।
বয়োজ্যেষ্?র অধিকার ঃ তার বয়সের কারনে তাকে সম্মান কর এবং ইসলামে তার অগ্রবর্তিতার কারণে তাকে উচ্চে রাখ, অবশ্যই তার সাথে রুক্ষতা করো না, রাস্তায় তার পাশ কাটিয়ে আগে যেওনা এবং তার পাশে পাশে হেটনা।
ছোটদের অধিকার ঃ তাকে শিক্ষাদানের সময় তার প্রতি দয়াশীল হওয়া, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া, তার দোষ-ত্র“টি ঢেকে রাখা, তার সাথে সদাচরণ ও তাকে সাহায্য করা।
ভিক্ষুকের অধিকার ঃ কেউ যদি তোমার কাছে কিছু চায় দান কর তার প্রয়োজন মত।
দায়িত্বশীলের অধিকার ঃ যদি তুমি তার কাছে কিছু চাও এবং সে তোমাকে তা দেয় তুমি তা কৃতজ্ঞতা সহকারে গ্রহন কর, আর যদি সে দিতে না পারে তবে তার অজুহাতকে গ্রহন করো।
প্রফুল্লতা দানকারীর অধিকার ঃ আল্লাহর জন্য যে তোমাকে প্রফুল্ল− করেছে, প্রথমে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাও এবং পরে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
খারাপ লোকের অধিকার ঃ তাকে ক্ষমা করে দাও, কিন্তু যদি জানতে পার যে ক্ষমা তার জন্য ক্ষতিকারক (যা তাকে আরও খারাপ কাজের উৎসাহ দিবে) তবে তাকে শাস্তি— দাও, আল্লাহ্ বলেছেন যে, (যদি কেউ অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য চেষ্টা করে তবে তাতে কোন পাপ নেই) ।
দ্বীনি ভাইয়ের অধিকার ঃ তোমার দ্বীনি ভাইয়ের জন্য অন্তরের সুস্থতা ও আল্লাহর করুনা পাওয়ার দোয়া চাও, সে খারাপ কাজ করলেও তার সাথে সদব্যবহার কর এবং ভদ্রভাবে চেষ্টা কর তাকে সংশোধন করার, তার ভাল কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাও, তাকে কোন কষ্ট দিওনা, যা কিছু তোমার জন্য পছন্দ কর তা তার জন্যও পছন্দ কর, আর যা নিজের জন্য পছন্দ করনা তা তার জন্যও পছন্দ করনা, তার পিতাকে নিজের পিতা, মাকে নিজের মা, ভাইকে নিজের ভাই,
সন্তানদেরকে নিজের সন্তান মনে করবে।
ইসলামের আশ্রয়ে থাকা কাফেরদের অধিকার ঃ আলাহ্ রাব্বুল আলামিন যা কিছু তাদের জন্য অনুমোদন করেছে তোমরাও তাদের জন্য তাই অনুমোদন কর, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের প্রতিজ্ঞায় অটল থাকবে তাদের উপর অত্যাচার করো না।
শাহাদাত ঃ
হযরত ইমাম যয়নুল আবেদ্বীন (আ.) অধিক প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত অনুযায়ী ৯৫ হিজরীর মুর্হারম মাসের ২৫ তারিখে ৫৭ বছর বয়সে জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্ট, সংগ্রাম, ধৈর্য ও বির্বতনের পর, উমাইয়্যা খেলাফতের অত্যাচারি শাসক ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের নির্দেশে হিশাম বিন আব্দুল মালিকের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে শহীদ হন এবং তার সমাধীস্থান বাকীতে দ্বিতীয় ইমাম হযরত হাসান মুজতাবা (আ.)-এর সমাধীস্থানের পাশে তাকে দাফন করা হয়। তার অনুসারিদের জন্য ঐ জায়গাটি বর্তমানে যিয়ারতের স্থান হয়ে আছে।
ইমামের শানে রচিত (ফারাযদাক)-এর কবিতা ঃ
১। হে প্রশ্নকারী যে দয়ালু ও মহান ব্যক্তি সম্বন্ধে আমার কাছে জানতে চেয়েছো, তার পরিষ্কার উত্তর আমার কাছে আছে যদি কেউ তার সন্ধান করে।
২। তিনি এমন কেউ যে মক্কার মাটি তার পায়ের শব্দের সাথে পরিচিত এবং পবিত্র কাবা ও তার আশে পাশের ভূমিগুলিও তার সাথে পরিচিত।
৩। তিনি আল্লাহর সবথেকে উত্তম বান্দার সন্তান। পরহেয্গার, পাপমুক্ত, পাক-পবিত্র, সুপরিচিত ও বিখ্যাত।
৪। তিনি (আহমাদ)-এর সন্তান, যাকে আল্লাহ্ নবী হিসাবে নিযুক্ত করেছেন। যার উপর আল্লাহ্ সকল সময় দরুদ পাঠায়।
৫। যদি এই কাবা ঘর জানতো যে কে তাকে চুম্বন দিতে এসেছে তাহলে অস্থীর হয়ে মাটিতে পড়ে যেত তার পায়ের ধুলায় চুম্বন দেওয়ার জন্য।
৬। এই মহানের নাম (আলী) এবং দ্বীনের নবী তাঁর পিতা যার হেদায়তের নুরের ছটায় উম্মত পরিচালিত হয়ে থাকে।
৭। তিনি এমন কেউ যার চাচা (জাফার তাইয়্যার) ও (হামযা) যারা শহীদের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে, যে কিনা তাঁর ভালবাসার প্রতি কসম দেয়।
৮। তিনি নারী সর্দার হযরত ফাতিমা ও দ্বীনের নবী (সা.)-এর স্থ’লাভিষিক্তের সন্তান, যার তলোয়ার ছিল কাফের ও মুশরেকদের জন্য মৃত্যুর পরওয়ানা।
৯। যখনই কুরাইশ বংশের কেউ তাকে দেখে স্ব^ীকারোক্তি দেয় যে সমস্ত অলৌকিক ক্ষমতা তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার কাছে হার মেনেছে। (এবং কখনও তার থেকে উন্নত কাউকে চিন্তা করা যায়না)।
১০। তিনি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন গৌরবের সাথে সম্পৃক্ত, সে স্থানে আরব ও অনারবের যে কারো পৌছানো আসম্ভব।
১১। ওহে হিশাম! তোমার এই কাজে, যে ভান করছো তুমি তাকে চেননা এবং জিজ্ঞাসা করছ (সে কে?), তাতে তার কোন লোকসান হবে না। কেননা তুমি যদিও তাকে অস্ব^ীকার কর তথাপিও আরব ও অনারবের সবাই তাকে চেনেন।
১২। (হায়া) লজ্জা থেকে তাঁর চোখকে সরিয়ে রাখে এবং তাঁর শান-শওকতের কারণে চোখগুলি তা থেকে সরে থাকে। কেউ তাঁর সাথে কথা বলতে পারে না যদি তিনি অনুমতি না দেন।
১৩। তাঁর কপালের নুরের ছাটায় অন্ধকারের পর্দা ছিড়ে যায়। যেমনভাবে সূর্যের আলো অন্ধকারগুলিকে সরিয়ে দেয়।
১৪। এমন তাঁর বদান্যতা যে কখনও তিনি কালেমা ছাড়া অন্য কোথাও ‘না’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। যদি এটা আল্লাহর এক ও অদ্বিতীয়তার সাক্ষ্য দেয়ার স্থানে না হত তাহলে সেখানেও ‘না’ শব্দটি না বলে (হ্যা) শব্দটি বলতেন।
১৫। তাঁর ভিত্তি আল্লাহরনবী (সা.)-এর কাছ থেকে। তাঁর পবিত্র গর্ভে জন্ম নেয়া, পবিত্র লালনপালন বা পরিচর্যা বা প্রশিক্ষণ, উত্তম স্ব^ভাব-চরিত্র এ সব কিছুই তাঁর উন্নতমানের।
১৬। অধিক মূল্যের বোঝা সেই সব স¤প্রদায়কেই বহন করতে হয়েছে যারা তাদের উপর অত্যাচার ও শক্তি প্রয়োগ কারার চেষ্টা করেছে।
১৭। যদি কিছু বলে, তবে তা এমনই যে সবাই মেনে নেয়। আর তার বক্তব্য তাকে আরও মহিমান্বিত করে তোলে।
১৮। যদি তাকে না চিনে থাকো তাহলে জেনে নাও তিনি ফাতিমার সন্তান, যার পিতামহের মাধ্যমেই আল্লাহর নবীগণের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
১৯। আল্লাহ্ তাকে প্রচীন যুগ থেকেই মহান ও সম্মানিত করেছেন। আর আল্লাহর ঐশ্বরিক স্মৃৃতিফলকে তার ব্যাপারে এরূপই লেখা আছে।
২০। তিনি এমন কেউ যার বংশধরের শ্রেষ্?ত্ব বা জ্ঞান ও মর্যাদার কাছে অন্যান্য আম্বীয়াগণের বংশ মর্যাদা ক্ষুদ্র সমতুল্য। আর তাঁর বংশধরের (নবী) উম্মত, অন্যান্য নবীর উম্মতের থেকেও উন্নত।
২১। তাঁর ক্ষমাশীল দৃষ্টি সমস্ত— সৃষ্টিকে আয়ত্ত করেছে এবং বিভ্রান্তি, ক্ষুধার্থতা, অন্ধকারাচ্ছনতা তাঁর থেকে দুরীভূত হয়ে গেছে।
২২। তাঁর দুটি হাত যেন রহমত স্বরূপ, যার সুফল সবার কাছে পেŠছায়। যারা অনুদানপ্রাপ্ত হয় অভাব তাদের উপর ফিরে আসে না।
২৩। তিনি এতই কোমল হৃদয়ের যা তার ভিতর কোন প্রকার রূঢ়তা ও হটকারিতার স্থ’ান নেই। দুটি বৈশিষ্ট্য তাকে অলংকৃত করে যা হচ্ছে ধৈর্য ও মহানুভবতা।
২৪। কখনও ওয়াদা ভঙ্গ করে না এবং তাঁর উপস্থিতি বরকতময়। তাঁর বাড়ীর বৈ?কখানা সুপ্রশস্ত, (তার বাড়ীর দরজা সবার জন্য খোলা)।
২৫। তিনি এমনই বংশের যাদের সাথে বন্ধুত্বই ধর্ম এবং তাদের সাথে শত্র“তা ধর্মহীনতা স্ব^রূপ, আর তাদের সংস্পর্শে থাকার অর্থই হচ্ছে মুক্তি ও আখেরাতে পরিত্রাণ পওয়া।
২৬। প্রতিটি ফিৎনা ও অমঙ্গলই তার ভালবাসায় ধুলিসাৎ হয়ে যায়। আর ক্ষমাশীলতা ও দয়র্দ্রতা তার দিকে বর্ধিত হয়।
২৭। প্রতিটি বক্তব্যের শুরুতে এবং শেষে আল্লাহর নামের পর তাদের নাম উল্লেখ করা হয়।
২৮। যদি পরহেযগারদের বারণ করা হয় তবে তাঁরা পরহেয্গারদের পরিচালক বা পথ প্রদর্শক এবং যদি প্রশ্ন করা হয় যে পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম মানুষ কারা? এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁরাই পরিচয় প্রাপ্ত হবেন।
২৯। তিনি ক্ষমা করার পর অন্য কোন ক্ষমাকারীকে হিসাবের মধ্যে গণনা করা হবে না এবং কোন জাতি যতই মহানুভবতা ও মহত্বের অধিকারী হোক না কেন তাঁর পর্যায়ে পৌছাতে পারবে না।
৩০। তাদের উপস্থিতি এতই বরকতময় যা কিনা খরার সময় বৃষ্টি আসার মত। আর যখন যুদ্ধের ডামা ডোল বেজে ওঠে তখন তারা সিংহের ন্যায় হয়ে যায়।
৩১। কখনই তাঁর কাছ থেকে খারাপ (নিন্দা, ভর্ৎসনা, তিরস্কার) বিষয় পাওয়া যায় না। উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এবং তাঁর হাত দিয়ে বৃষ্টির ন্যায় অব্যাহতভাবে অনুদান আসতে থাকে।
৩২। না থাকলেও তাঁর হাত দিয়ে অনুদান আসা বন্ধ হয় না, তার জন্য থাকা বা না থাকা উভয়ই সমান।
৩৩। এমন কোন গোত্র নেই যারা তাঁর বংশধরদের থেকে অথবা তার থেকে অনুগ্রহ পাইনি।
৩৪। যারা আল্লাহকে চিনেছে তারা তাকেও চিনেছে। মানুষ তাদের ধর্মকে ও পথনির্দেশনাকে তাঁর গৃহ থেকে অর্জন করেছে।
৩৫। কুরাইশ বংশের মধ্যে শুধুমাত্র তাঁর বাড়ীতেই সমস্যা দুরীভূত হওয়ার জন্য সাহায্য নিতে আসতো এবং সুষ্টবিচারের জন্যও মানুষ তার কাছেই আসতো।
৩৬। তাঁর পূর্বপুরুষ নবী (সা.) ও আমিরুল মুমেনিন আলী (আ.), যিনি নবী (সা.)-এর পরে উম্মতের ইমাম ও পরিচালক।
৩৭। বদর, ওহদ, খনদক, মক্কা বিজয়, এসকল যুদ্ধই তার প্রমান যা সবারই জানা।
৩৮। খায়বার ও হুনাইন তাঁর জন্য সাক্ষ্য দেয় এবং (বনি কারিযেহ) সে দিনগুলিতে তার শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
সবশেষে (ফারাযদাকের) রুহের উপর দরুদ জানানো উত্তম বলে মনে করছি যে যদিও এই কবিতাটিকে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় এবং কঠিন পরিস্থিতিতে অনেক কষ্ট করে রচনা করেছে। সত্য সত্যই বলতে হয় এটি এমন একটি কাজ যা অনেক বড় জিহাদ করেছে এবং তার নিজের জীবন দিয়ে বড় ধরনের বিপদকে ক্রয় করেছে ও বীর পুরুষের ন্যায় সত্যের পক্ষে লড়াই করেছে। কিন্তু যাকিছু বলেছে শুধুমাত্র ইমাম ও তার বংশের শ্রেষ্টত্বের এক অংশ মাত্র, আকাশকে পায়ে হেটে এবং সাগরকে পেয়ালা দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। সুতরাং ফারাযদাক যা কিছু বলেছে তা অনেক বেশী পরিমানের থেকে এক মুষ্ট পরিমান ওঠানো, তাওনা বরং ধানেরগোলা থেকে একটি মাত্র ধান তুলে নেয়ার মত।
ওয়াস্সালাম আলা মানিত্তাবাউল হুদা।
©somewhere in net ltd.