![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইমাম বাকের (আ.)
ইসলামের পঞ্চম পথ প্রদর্শক, আধ্যাত্মিক জ্ঞান বিশারদ, ইমাম আবু জা’ফর, ৫৭ হিজরীর রজব মাসের ১লা তারিখে জুমা’র দিনে মদিনায় ভূমিষ্ট হন । তার নাম, ডাক নাম ও পদবি যথাক্রমে মুহাম্মদ, আবু জা’ফর ও বাকেরুল উলুম (আর্থাৎ দ্বীন ও দুনিয়ার জ্ঞানে মহাপণ্ডিত)। চাঁদের চতুর্দিকে অনেক সময় যে আলোকবৃত্ত পরিব্যাপ্ত হয় ভূমিষ্ট হওয়ার সময় এই শিশুর নুরের ছটাও তদ্রুপ তার পরিবারের সকলকে এই বৃত্তের অভ্যন্তরে আনে এবং অন্যান্য ইমামগণের ন্যায় তিনিও পাক-পবিত্র হয়েই দুনিয়ায় আসেন।
ইমাম বাকের (আ.) বংশীও ভাবে পিতা ও মাতার উভয়ের দিক দিয়েই নবী (সা.), আলী (আ.) ও ফাতিমা (সা.)-এর সাথে সম্পৃক্ততা রাখেন। কেননা তাঁর পিতা ইমাম যয়নুল আবেদ্বীন (আ.) ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সন্তান, এবং সম্মানীতা মহিলা (উম্মে আব্দুল্লাহ্) ইমাম মুজতাবা (আ.)-এর কন্যা, তাঁর মাতা। ইমাম বাকের (আ.)-এর মহত্ব ও ব্যক্তিত্বের কথা সকল স্তরের মানুষের মুখে মুখে চর্চা হতো, যেখানেই হাশেমী, ফাতেমী ও আলাভী বংশের মান-মর্যাদা নিয়ে কথা উ?তো সেখানেই তাকে ঐ সকল পবিত্রতার, সাহসিকতার ও মহানুভবতার একমাত্র উত্তোরাধিকারী হিসেবে সন্বোধন করতো এবং হাশেমী, আলাভী ও ফাতেমী হিসেবে চিনতো। সকল সময় সত্যবাদীতা, চেহারায় অতি আকর্ষনীয়তা ও অধিক উদারতা তার বৈশিষ্টগুলির অন্যতম। এখানে আমরা তাঁর আভিজাত্যের ও মহানুভবতার ব্যাপারে কিছু জানবো ঃ নবী আকরাম (সা.) তাঁর এক উত্তম ছাত্রকে (জাবির বিন আব্দুললাহ্ আনসারী) বললেন ঃ ওহে জাবির! তুমি আমার সন্তান (মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী বিন আবুতালেব) যার নাম তেŠওরাতে (বাকের) বলে সম্বোধন করা হয়েছে তাকে দেখা পর্যন্ত জীবিত থাকবে। যখন তোমার সাথে তাঁর দেখা হবে তাকে আমার ছালাম পেŠছে দিও। নবী (সা.) পরলোক গমনের পর তার ভবিষ্যত বাণী অনুযায়ী জাবির অনেক দিন জীবিত ছিল। .......আর একদিন ইমাম যয়নুল আবেদ্বীন (আ.)-এর বাড়ীতে এসে শিশু অবস্থায় ইমাম বাকের (আ.)-কে দেখে বললো ঃ কাছে এসো ..... ইমাম বাকের (আ.) তার কাছে এলে সে তাকে আবার ফিরে যেতে বললো ...... ইমাম ফিরে গেলেন। জাবির তার পবিত্র দেহ ও পথ চলাকে লক্ষ্য করে বললো ঃ আল্লাহর কা’বা ঘরের কছম অবিকল নবী (সা.)-এর মত দেখতে হয়েছে। তারপর সে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করল এই শিশু কে? ইমাম বললেন ঃ সে (মুহাম্মদ বাকের) আমার সন্তান এবং আমার পরে তোমাদের ইমাম। জাবির উ?ে দাঁড়ালো এবং ইমাম বাকের (আ.)-এর পায়ে চুম্বন দিয়ে বলল ঃ হে নবী (সা.)-এর সন্তান, আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত হোক। আপনার পিতা নবী (সা.)-এর সালাম ও দরুদ গ্রহণ করুন কেননা তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। ইমাম বাকের (আ.)-এর দৃষ্টি মোবারক পানিতে ভরে গেল। তিনি বললেন ঃ সালাম ও দরুদ আমার পিতা নবী (সা.)-এর উপর, যতদিন এই আকাশ মণ্ডলী ও জমিন অবশিষ্ট থাকবে। আর তোমার উপরেও সালাম ও দরুদ হে জাবির যেহেতু তুমি তাঁর সালামকে আমার কাছে পেŠছিয়েছো ।
ইমামের জ্ঞান ঃ
ইমাম বাকের (আ.)-এর জ্ঞানও অন্যান্য ইমামগণের ন্যায় আল্লাহ প্রদত্ত ছিল। তাদের কোন শিক্ষক ছিলনা বা অন্য মানুষদের মত কোথাও শিক্ষা অর্জন করেননি।
জাবির বিন আব্দুল্লাহ্ প্রতিনিয়ত তার কাছে এসে শিক্ষা অর্জন করতো আর প্রায়ই তাকে বলতো ঃ হে দ্বীন ও দুনিয়ার জ্ঞানের বিকাশ সাধনকারী! সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি ছোটবেলা থেকেই আল্লাহর দেয়া জ্ঞানে জ্ঞানান্নীত ।
আব্দুল−াহ বিন আতা’ মাক্কী বলেন ঃ কখনও কোন মনীষীকে কারো কাছে এমন ছোট হতে দেখিনি যা ইমাম বাকের (আ.)-এর কাছে দেখেছি। হাকাম বিন উতাইবাহ্ যে ছিল সমাজের চোখে জ্ঞানের দিক দিয়ে অতি সম্মানের পর্যায়ে, তাকেও ইমামের সামনে শিশুর মত বসে থাকতে দেখেছি। ঠিক একজন বিজ্ঞ শিক্ষকের সামনে ছাত্র বসে থাকার মত ।
ইমাম বাকের (আ.)-এর উত্তম ব্যক্তিত্ব এমন গুরুত্ব বহন করত যা জাবির বিন ইয়াযিদ জা’ফি তার উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীস উলে−খ করতে গিয়ে এমন বলেন ঃ ‘‘ভারপ্রাপ্তের ভারপ্রাপ্ত এবং আন্বীয়াগণের জ্ঞানের উত্তরসুরী মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন আমাকে এমন বলেছেন......’’ ।
আব্দুল−াহ্ ওমর-এর কাছে এক লোক একটি বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে ইমামকে দেখিয়ে দিল এবং বলল এই শিশুর কাছে জিজ্ঞেস কর, আর তার দেয়া উত্তরটি আমাকে অবহিত কর। ঐ লোক ইমামের কাছে প্রশ্ন করল এবং তার উপযুক্ত জবাবও পেল। সে আব্দুল−াহ্ ওমরকে এই জবাব সমন্ধে অবহিত করলে আব্দুল−াহ্ বলেন ঃ তাঁরা এমন বংশের যাদের জ্ঞান আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত ।
আবু বাছির বলেন ঃ ইমাম বাকের (আ.)-এর সাথে মদীনার মসজিদে প্রবেশ করলাম। লোকজন যাওয়া-আসার মধ্যে ছিল। ইমাম আমাকে বললেন ঃ সবার কাছে জিজ্ঞেস কর আমাকে কি তারা দেখতে পাচ্ছে? যার কাছেই জিজ্ঞেস করলাম, তার কাছ থেকেই না সুচক জবাব পেলাম। কিন্তু ইমাম আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ?িক ঐ সময় ইমামের এক অতি কাছের লোক (আবু হারুন) যে কিনা অন্ধ ছিল মসজিদে প্রবেশ করল। ইমাম বললেন ঃ তার কাছেও জিজ্ঞেস কর। আবু হারুনের কাছেও জিজ্ঞাসা করলাম ঃ তুমি কি আবু জা’ফারকে দেখেছো? সে সংগে সংগে জবাব দিল ঃ তবে তিনি কি তোমার পাশে দাঁড়িয়ে নেই? বললাম ঃ কিভাবে বুঝলে? বলল ঃ কেন বুঝতে পারব না, তিনি তো নুরের ছটায় দিপ্তমান। সূর্যের আলোর ন্যায় উজ্জল । আবু বাছির আরও বলেন ঃ ইমাম বাকের (আ.) তাঁর এক আফ্রিকান অনুসারী (রাশেদ)-এর ব্যাপারে জানতে চাইলেন। কেউ তার জবাবে বলল ভাল আছে এবং আপনাকে ছালাম দিয়েছে। ইমাম ঃ তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হউক। সে আশ্চর্য হয়ে ঃ তবে কি সে মারা গেছে? ইমাম ঃ হ্যা। সে ঃ কখন মারা গেছে ? ইমাম ঃ তুমি তার কাছ থেকে চলে আসার দুই দিন পর। সে ঃ আল্লাহর কসম! সে অসুস্থ ছিলনা ........ ইমাম ঃ তবে কি যারা মারা যায় সবই অসুস্থতার কারনে? তখন আবু বাছির ইমামের কাছে তার মৃত্যুর ব্যাপারে প্রশ্ন করল। ইমাম ঃ সে আমাদের বন্ধু ও অনুসারী ছিল। তোমরা ভেবে নিয়েছো যে তোমাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি বা মনোযোগ নেই, এটা ঠিক নয়। আল্লাহর কসম! তোমাদের কোন কিছুই আমাদের কাছে গোপন নয়। সুতরাং আমাদেরকে তোমাদের কাছে উপস্থিত মনে করবে। তোমরা নিজেরা ভাল কাজ করার অভ্যাস করবে ও ভালদের সারিতে শামিল হবে। আর যেন ভাল হিসাবেই পরিচিত হও এটাই আমার কাম্য। আমি আমার সন্তানদের ও অনুসারীদেরকে এই কর্মসূচীর প্রতি নির্দেশ দিচ্ছি ।
একজন হাদীস বর্ণনাকারী বলেন, কুফাতে এক মহিলাকে কোরআন শিক্ষা দিতাম। একদিন তার সাথে রসিকতা করেছিলাম। পরে ইমাম বাকেরকে (আ.) দেখতে গেলে তিনি বললেন ঃ যে কেউ (যদিও সে) গোপনে পাপ কাজে লিপ্ত হয় আল−াহ্ তা’য়ালা তার দিকে আর কোন খেয়াল রাখেননা। ঐ মহিলাকে কি বলেছো? এ কথা শুনতেই লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে গেল। ইমামের সামনে তওবা করলাম। তিনি বললেন ঃ পুনরাবৃত্তি করনা ।
ইমামের নৈতিক গুনাবলী ঃ
শামের এক অধিবাসী মদীনায় বসবাস করত এবং ইমামের বাড়ীতে প্রায়ই আসা-যাওয়া করত। সে প্রায়ই ইমামকে বলত ঃ ‘‘..... পৃথিবীতে তুমি ছাড়া আর কারো প্রতি আমার এতবেশী ঘৃনা, বিদ্বেষ বা আক্রোশ নেই। আর তুমি ও তোমার বংশের সাথে ছাড়া অন্য কোন বংশের লোকের সাথে এত শত্র“তা করিনা। আমার বিশ্বাস এটাই যে তোমার সাথে শত্র“তাই হচ্ছে আল্লাহ, নবী ও মু’মিনদের নেতার অনুসরণ করার শামিল। তোমার বাড়ীতে আসা-যাওয়া করি শুধুমাত্র এ কারণেই যে তুমি একজন উত্তম বক্তা, সাহিত্যিক ও মিষ্টভাষী’’। এত কিছু বলার পরও ইমাম তার সাথে সদ্ভাব রেখে কোমল ভাষায় কথা বলতেন। কিছু দিন না যেতেই শামের ঐ অধিবাসী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মৃত্যুকে অনুভব করতে পেরে সে জীবনের আশা ছেড়ে দিল। এমতাবস্থায় সে তার শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করল যে, মৃত্যুর পর যেন আবু জা’ফর (ইমাম বাকের) তার জানাযার নামাজ পড়ান। মধ্যরাতে তার পরিবারের লোকেরা তাকে মৃত অবস্থায় পেল। ফজরের নামাজের সময় তার উকিল মসজিদে এসে ইমামকে নামাজ শেষ করে দোয়ায় বসে থাকতে দেখল। তিনি সর্বদা নামাজের পরে দোয়া ও আল্লাহর জিকির করতেন। সে বলল ঃ শামের ঐ অধিবাসী পরকালে চলে গেছে এবং সে তার শেষ ইচ্ছাতে এটাই চেয়েছে যে আপনি যেন তার জানাযার নামাজ পড়ান। ইমাম ঃ সে মারা গেছে ....... আমি না আসা পর্যন্ত তাড়াহুড়া করনা। তিনি দ্বিতীয় বারের মত অজু করে পবিত্র হয়ে দুই রাকা’ত নামাজ পড়ে হাত তুলে দোয়া করলেন। তারপর সেজদায় গেলেন এবং সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত সেজদায় রত থাকলেন। তারপর ঐ লোকের বাড়ীতে আসলেন। তার মাথার কাছে বসে তাকে ডাকলেন আর সে ইমামের ডাকে সাড়াও দিল।
ইমাম তাকে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে শরবত আনতে বললেন। তার পরিবারের কেউ একজন শরবত আনলে ইমাম ঐ শরবত তার মুখে ঢেলে দিলেন। তার পরিবারের লোকদেরকে তাকে ঠান্ডা খাবার দিতে বলে তিনি ফিরে গেলেন। অল্প সময় পরই সে আরোগ্য লাভ করল এবং ইমামের কাছে এসে বলল ঃ ‘‘সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি মানুষের জন্য আল্লাহর প্রতিনিধি.......’’
মুহাম্মদ বিন মুনকাদের (ঐ সময়কার সুফি) বলেন ঃ এক প্রচণ্ড গরমের দিনে মদীনার বাইরে গিয়েছিলাম। ইমামকে ঐ গরমের ভিতরে কাজ করতে দেখলাম। তার শরীর দিয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছিল। তাকে অপমানীত করার উদ্দেশ্যে বললাম ঃ আল্লাহ তোমাকে সুস্থ রাখুন। তোমার মতো ব্যক্তিত্ব এই সময়, এই অবস্থায় দুনিয়ার চিন্তায় মগ্ন! যদি এই অবস্থায় তোমার মৃত্যু আসে কি করবে? ইমাম ঃ আল্লাহর কসম! যদি মৃত্যু আসে তা তার অনুসরণের মধ্যদিয়েই আসবে। কারণ আমি এই কাজের মাধ্যমে নিজেকে তোমার ও অন্যদের থেকে অমুখাপেক্ষি করছি। মৃত্যু ঐ সময় ভয়ানক কেউ যখন পাপ কাজে ব্যস্ত থাকবে। বললাম ঃ আল্লাহর রহমাত হোক তোমার উপর। চেয়েছিলাম যে তোমাকে লজ্জিত করব কিন্তু তুমি এই কথা বলে আমাকে লজ্জিত ও সতর্ক করলে ।
ইমাম ও উমাইয়্যা খেলাফত ঃ
ইমাম গৃহে অবস্থান করুন অথবা সমাজের মধ্যে যেখানেই হোক না কেন তার ইমামতের শানের কোন তফাৎ পরিলক্ষিত হয় না। কেননা ইমামত হচ্ছে রেসালতের অনুরূপ, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত। আর এটা মানুষের হাতে নয় যে তারা তাদের ইচ্ছা মত ইমাম নির্বাচন করবে। স্বৈরাচারী ও সীমা লংঘনকারীরা সর্বদা ইমামের শান ও মর্যাদার সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করত। যে কোন উপায়ে ক্ষমতা বা খেলাফতকে দখল করার জন্য চেষ্টা করত। যা হচ্ছে ইমামগণের বিশেষত্ব। আর এসব পাওয়ার আশায় এমন কোন অত্যাচার ছিলনা যে তারা করেনি। যে কোন ধরনের কাজ করাতে তাদের কোন ভয়ও ছিলনা। ইমাম বাকের (আ.)-এর ইমামতকাল ছিল অত্যাচারী উমাইয়্যা শাসক হিশাম বিন আব্দুল মালেক এর সমকালীন যুগে। হিশাম ও অন্যান্য উমাইয়্যা শাসকরা ভাল করেই জানতো যে, যদিও অন্যায়-অত্যাচার ও জোরপূর্বক এই ক্ষমতাকে হাতে নিয়েছে, তথাপিও এই ক্ষমতা দিয়ে মানুষের অন্তর থেকে নবী (সা.)-এর পরিবারের প্রতি তাদের ভালবাসাকে ছিনিয়ে নেয়া যাবে না। ইমামগণের আধ্যাত্মিক শান ও মর্যাদার পরিমাণ এত অধিক ছিল, যে কারণে সব সময় তাঁর শত্র“ ও অবৈধভাবে হস্তগতকারীরা ভীতসন্ত্রস্ত থাকত। তাঁর সম্মানে উঠে দাড়াত। হিশাম এক বছর হজ্জ্ব করতে যায়। ইমাম বাকের ও ইমাম সাদিকও (আ.) ঐ বছর হজ্জ্বে গিয়েছিলেন। সে বারে ইমাম সাদিক (আ.) হজ্জ্বের ময়দানে খোৎবা দেন যা ছিল এরূপ ঃ ‘‘আল্লাহর অশেষ কৃপা যে মুহাম্মদকে (সা.) সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন। আর তার উছিলায় আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং আমরা আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে নির্বাচিত ব্যক্তি। আর দুনিয়াতে তার প্রতিনিধি। মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি তারাই যারা আমাদেরকে অনুসরণ করবে এবং দুর্ভাগা তারাই যারা আমাদের সাথে শত্র“তা করবে’’।
ইমাম সাদিক (আ.) হজ্জ্ব থেকে ফেরার অনেক দিন পরে বললেন ঃ আমার বক্তব্যকে হিশামের কাছে পেŠছানো হয়েছিল। কিন্তু সে কোন প্রতিবাদ না করেই দামেস্কে ফিরে যায়। আমরাও মদীনায় ফিরে আসি। এসে জানতে পারলাম হিশাম তার মদীনার গর্ভনরকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে যে, আমরা হজ্জ্ব থেকে ফিরে এলেই আমাদেরকে (আমাকে ও আমার পিতাকে) যেন দামেস্কে পা?ায়। আমরা দামেস্কে গেলাম। হিশাম তিন দিন পর্যন্ত আমাদের কোন পাত্তাই দিল না। চতুর্থ দিনে তার দরবারে গেলাম। হিশাম সিংহাসনে বসে ছিল এবং দরবারের লোকেরা তার সম্মুখে তীরন্দাযীতে ব্যাস্ত ছিল। হিশাম আমার বাবাকে তার নাম ধরে ডেকে বলল ঃ এসো তোমার এলাকার বয়জেষ্?্যদের সাথে তীরন্দাযী কর। আমার বাবা ঃ আমার বয়স হয়েছে, তীরন্দাযী করার বয়সও চলে গেছে, আমাকে একাজ থেকে বিরত রাখ। হিশাম অনেক চাপাচাপি করল এবং এক প্রকার তাঁকে বাধ্যই করল এই কাজ করার জন্য। সে বনি উমাইয়্যা বংশের এক বৃদ্ধকে তার তীরধনুকটি বাবাকে দিতে বলল। বাবা ধনুকটি নিয়ে তাতে তীর লাগিয়ে লক্ষ্য বস্তুর দিকে ছুড়লো। প্রথম তীরটি ?িক লক্ষ্য বস্তুর মধ্যখানে গিয়ে বিদ্ধ হল। দ্বিতীয়টি প্রথমটির পশ্চাৎভাগে গিয়ে ঁিবধলো এবং প্রথম তীরটিকে বিভক্ত করে ফেললো। তৃতীয়টি দ্বিতীয়টির, চতুর্থটি তৃতীয়টির, পঞ্চমটি চতুর্থটির,.... এভাবে নবমটি অষ্টমটির পশ্চাৎভাগে ঁিবধলো, উপস্থিত সবাই চিৎকার ধ্বনি দিয়ে উঠলো। হিশাম হতভম্ব হয়ে চিৎকার দিয়ে বলল ঃ সাবাস আবু জা’ফার! তুমি আরব ও অনারবের মধ্যে তীরন্দাযীতে শ্রেষ্ট ব্যক্তি। তুমি কেমন করে ভাবলে যে তোমার তীরন্দাযীর বয়স শেষ হয়ে গেছে ? ..... এ কথাগুলি যখন বলছিল ঠিক তখনই মনে মনে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করল। মাথা নিচের দিকে দিয়ে চিন্তায় মগ্ন ছিল। আর আমরা তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমরা অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তার এ কাজের কারণে বাবা ভীষন রেগে গেলেন। তিনি অতিরিক্ত রেগে যাওয়াতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু তার রাগান্বিত ভাবটি চেহারায় ফুটে উঠেছিল। হিশাম তার রাগান্বিত হওয়াটা বুঝতে পেরে আমাদেরকে তার সিংহাসনের দিকে যাওয়ার ইশারা করল। আমরা তার দিকে অগ্রসর হতেই সে নিজে উঠে দাঁড়িয়ে বাবাকে ধরে তার ডান পাসে অবস্থিত সিংহাসনে ও আমাকে বাবার ডান পাসে রাখা আরেকটি সিংহাসনে বসালো। তারপর সে আমার বাবার সাথে কথা বলতে শুরু করল ঃ কুরাইশ বংশের গর্ব যে তোমার মত লোক তাদের মধ্যে আছে। সাবাস তোমাকে। এমন তীরন্দাযী কোথা থেকে এবং কত সময় ধরে শিখেছো? বাবা বললেন ঃ তুমি তো জানো যে মদীনাবাসীদের তীরন্দাযীতে বিশেষ দক্ষতা আছে। আর আমি যুবক বয়সের কিছু সময়কে এটা শেখার কাছে লাগিয়েছিলাম। পরে আর এটার চর্চা করিনি, যা আজ এতদিন পরে তুমি করতে বললে।
হিশাম ঃ যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে এমন তীরন্দাযী আর কখনও কোথাও দেখিনি। আমি মনে করিনা যে এই পৃথিবীতে কেউ আর তোমার মত এভাবে তীরন্দাযী করতে পারে। তোমার ছেলে জা’ফরও কি তোমার মতই তীরন্দাযী করতে পারে? বাবা বললেন ঃ আমরা পরিপূর্ণতা ও সম্পূর্ণতাকে উত্তরাধিকারীত্বের সুত্রে পেয়েছি। যে পরিপূর্ণতা ও সম্পূর্ণতাকে আল্লাহ তার নবীকে (সা.) দিয়েছিলেন, যেমন আল্লাহ তার পবিত্র কোরআনে বলেছেন ঃ “আজ তোমাদের দ্বীনকে আমি সম্পূর্ন করে দিলাম এবং তোমদের প্রতি নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম আর ইসলামকে তোমাদের ঐশ্বরিক দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করলাম ।” আর যারা এ ধরনের কাজে পারদর্শী তাদের থেকে পৃথিবী কখনও দুরে থাকে না। এই বাক্যগুলি শোনার সাথে সাথে হিশামের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। অতিরিক্ত রাগের কারণে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। কিছু সময়ের জন্য মাথা নিচু করে থাকার পরে পুনরায় মাথা তুলে বলল ঃ তবে কি তোমরা ও আমরা সম্মানিত বা অভিজাত বংশের (আবদে মানাফ) নই, যা সম্পর্কের দিক দিয়ে আমরা একে অপরের সমমান? ইমাম ঃ হ্যা, কিন্তু আল্লাহ আমাদেরকে বিশেষত্ব দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেননি। জিজ্ঞেস করল ঃ তাহলে কি আল্লাহ নবীকে (সা.) আবদে মানাফ এর বংশে সমস্ত মানুষের (সাদা, কালো, লাল) উদ্দেশ্যে পাঠায়নি? তুমি কিভাবে এই জ্ঞানকে উত্তরাধিকারীত্বের সুত্রে পেয়েছো যা কিনা নবী (সা.)-এর পর আর কোন নবী আসেনি আর তোমরা তো নবীও নও ? ইমাম ঃ আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তার নবীকে বলেছেন ঃ “হে আমার নবী! তোমার জিহ্বাকে কিছু বলার জন্য নাড়িও না যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমার উপর অহী নাজিল হয় ।” এই আয়াত অনুযায়ী নবী (সা.)-এর কথা অনুরূপ ওহী বৈ অন্য কিছুই নয়। যা আমাদেরকে বিশেষত্ব দিয়েছে যা অন্যদেরকে দেয়নি। আর এ কারণেই তিনি তার ভাই আলী (আ.)-এর সাথে গুপ্তবিষয়াদি বলতেন। যা অন্য কাউকে তা কখনও বলতেন না। আল্লাহ এ ব্যাপারে বলছেন ঃ-“আর অধিক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন কান তা ধারন করবে ।” আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আলীকে (আ.) বললেন ঃ ঐগুলি (গুপ্ত বিষয়গুলি) তোমার কাছে বলার জন্য আল্লাহর কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। আর সে কারণেই আলী বিন আবি তালেব (আ.) কুফায় বলেছিলেন ঃ ‘‘আল্লাহর নবী আমাকে এক হাজারটি অধ্যায় সম্পন্ন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যার প্রতিটি অধ্যায় থেকে আবার হাজারটি অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে’’ .......যেমনভাবে আল্লাহ পাক নবীকে (সা.) বিশেষ পরিপূর্ণতা দিয়েছেন তদ্রুপ নবী (সা.) আলীকেও (আ.) দিয়েছেন এবং এমন কিছু শিখিয়েছেন যা অন্যরা শিখেনি। আর আমাদের জ্ঞান ঐ উৎস বা সূত্র থেকে এসেছে এবং শুধুমাত্র আমরাই উত্তরাধীকারী হিসাবে পেয়েছি না অন্যরা। হিশাম ঃ আলী ইলমে গায়েবের দাবিদার ছিল। কিন্তু আল্লাহ এখনও পর্যন্ত কাউকে ইলমে গায়েবের অধিকারীত্ব দেননি। বাবা ঃ আল্লাহ পাক তার নবী (সা.)-এর উপর আসমানী কিতাব পাঠিয়েছেন। যার ভিতর অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত কিছুর বর্ণনা করেছেন। কেননা পবিত্র কোরআনে আছে ঃ “তোমার কাছে এমন কিতাব (কোরআন) পাঠিয়েছি যা সব বিষয়ের ব্যখ্যা করার ক্ষমতা রাখে ।”
এবং অন্য আরেক জায়গায় এসেছে যে, “সমস্ত কিছুকে কিতাবে (কোরআনে) পরিস্কার ভাবে উলে−খ করেছি ।” এবং অন্য আরেক জায়গায় এসেছে যে, ‘‘....... এমন কোন কিছু নেই যা এই কিতাবে (কোরআনে) আনা হয়নি ।’’ আর কোরআনের সমস্ত গোপন বিষয়গুলি আলীকে (আ.) শিখানোর জন্য আল্লাহ্ তা’য়ালা নবীকে (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। নবী (সা.) উম্মতের প্রতি বলেছেন ঃ ‘‘আলী তোমাদের সবার থেকে বিচার কার্যে পারদর্শি........।’’ হিশাম নিরব ছিল .........। আর আমরা তার দরবার থেকে বেরিয়ে এলাম ।
ইমামের যুক্তি প্রমান পেশ ঃ
আলী (আ.)-এর আব্দুল−াহ্ বিন নাফে নামক এক শত্র“ ছিল। সে বলত ঃ যদি এই পৃথিবীর কেউ আমাকে বোঝাতে পারে যে খাওয়ারেজদেরকে হত্যা করে আলী যথার্থতাই করেছে তবে আমি তার পক্ষে যাব। যদিও সে পৃথিবীর পূর্বে ও পশ্চিমে অবস্থান করে। কেউ তাকে বলল ঃ তুমি কি মনে কর যে আলী (আ.)-এর সন্তানরাও এটাকে প্রমান করতে পারবে না? সে ঃ তার সন্তানদের মধ্যে কি কেউ এমন মনীষী আছে যে আমাকে বোঝাতে পারে? বলল ঃ এটাই একটা বড় পরিচয় তোমার মুর্খতার। আর এটা কি সম্ভব যে আলী (আ.)-এর অভিজাত বংশে কোন মনীষী থাকবে না? সে ঃ এখন তার বংশের মনীষী কে? ঐ ব্যক্তি তার কাছে ইমাম বাকের (আ.)-এর পরিচয় তুলে ধরল। সে তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে মদীনায় এসে ইমামের সাথে দেখা করার জন্য অনুমতি চাইল .......... ইমাম তার মালামালগুলিকে উটের পি? থেকে নিচে নামানোর জন্য এক ভৃত্যকে নির্দেশ দিলেন। আর তাকে পরের দিন ইমামের কাছে উপস্থিত হতে বললেন। পরের দিন সকালে আব্দুল−াহ্ তার সাথীদের সহ ইমামের বৈ?ক খানায় আসল। এদিকে তিনি নিজের সন্তানদের, মুহাজির ও আনসারদের উত্তরসূরীদেরকেও ঐ বৈ?কে উপস্থিত হতে নিদের্শ দিলেন। যখন সবাই সেখানে জমা হল ইমামের গায়ে তখন লাল বর্ণের একটি পোশাক ছিল। যা কিনা তাকে দেখতে আকর্ষনীয় ও সুদর্শন লাগছিল। তিনি বললেন ঃ আল্লাহর পাকের অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা। যিনি স্থান, কাল, পাত্র, কখন, কোথায় ও কিভাবের সৃষ্টিকর্তা। প্রশংসা সেই আল্লাহ তা’য়ালার, যার না ঘুম আছে, না ঘুমের ভাব। আর যা কিছু এই আসমান ও জমিনে আছে তিনি এ সব কিছুরই মালিক .....। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি এই যে, (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কোন মা’বুদ নেই এবং (মুহাম্মদ) অনেকের মধ্য হতে বাছাইকৃত তাঁর বান্দা ও রাসুল। ধন্যবাদ আল্লাহকে যিনি তাকে নবুওয়াত দান করে আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। আর আলীকে (আ.) তাঁর নবী (সা.)-এর খলিফা নিযুক্ত করে আমদেরকে বিশিষ্ট করেছেন।
হে মুহাজির ও আনসারদের সন্তানেরা! তোমাদের মধ্য থেকে যে যতটুকুই আলী বিন আবি তালিবের ফযিলত সম্বন্ধে জান বল। উপস্থিতদের মধ্য থেকে একজন আলী (আ.)-এর ফযিলত বর্ণনা করতে করতে খাইবারের হাদীসে পৌছে, বলল ঃ নবী (সা.) খাইবারের ইহুদীদের সাথে যুদ্ধের সময় বলেছিলেন ঃ ‘‘আগামিকাল ইসলামের পতাকা এমন একজনের হাতে দিব যে আল্লাহ ও তাঁর নবীকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর নবীও তাকে ভালবাসে। যুদ্ধ পারদর্শী, যে কখনও যুদ্ধ থেকে পলায়ন করে না এবং আগামিকাল যুদ্ধ থেকে খালি হাতে ফিরে আসবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ তাঁর হাতে ইহুদীদের পরাজয় ঘটান।’’ ..... পরের দিন ইসলামের পতাকাটিকে আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)-এর হাতে দিলেন। তিনি যুদ্ধে বিস্ময় সৃষ্টি করে ইহুদীদেরকে পরাজিত ও পলায়নে বাধ্য করলেন। আর তাদের বৃহৎ দুর্গের দরজাকে খুলে ফেললেন। ইমাম বাকের (আ.) আব্দুল−াহ্ বিন নাফেকে বললেন ঃ এই হাদীসের ব্যাপারে তোমার ধারনা কি? সে ঃ হাদীসটি সত্য কিন্তু আলী পরে কাফের হয়ে গিয়েছিল এবং খাওয়ারেজদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে।
ইমাম ঃ তোমার শোকে যেন তোমার মাকে কাঁদতে হয়। আল্লাহ যখন আলীকে ভালবাসতেন তখন তিনি কি জানতেন, না জানতেন না যে সে খাওয়ারেজদেরকে হত্যা করবে? যদি বল আল্লাহ জানতেন না কাফের হয়ে যাবে। সে ঃ আল্লাহ জানতেন। ইমাম ঃ আল্লাহর তাঁকে কি তাঁর নির্দেশ মেনে চলার জন্য ভালবাসত নাকি তার নির্দেশ অমান্য করে চলার কারণে? সে ঃ যেহেতু সে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলত সে কারণেই আল্লাহ তাকে ভালবাসতেন (আর্থাৎ যদি ভবিষ্যতে সে পাপী হয়ে যেত তাও আল্লাহ জানতেন এবং কখনও তাকে ভালবাসতেন না, সুতরাং এটা পরিস্কার যে খাওয়ারেজদেরকে হত্যা করা আল্লাহর আনুগত্য করার শামিল)। ইমাম ঃ তুমি চলে যাও পরাজিত হয়েছো, কারণ এ ব্যাপারে তোমার কাছে কোন জবাব নেই। আব্দুল−াহ্ উঠে যাওয়ার সময় এই আয়াটি তেলোয়াৎ করল ঃ ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমাদের কাছ থেকে ছুব্হেছাদেকের সাদা রেখা, কালো রেখা হতে পৃথক হয়ে যায় ।’’ এ বিষয়টিকে রাতের অন্ধকার ঠেলে দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে যাওয়ার দিকে ইশারা করে বলল ঃ ‘‘আল্লাহই ভাল জানেন যে তার রিসালতের দায়িত্ব কোন পরিবারের উপর দিবেন ।’’
ইমামের নির্দেশে ইসলামী মুদ্রার প্রচলন ঃ
হিজরী শতাব্দীর প্রথম দিকে কাগজ শিল্প রোমানদের হাতে ছিল। মিশরের খৃষ্টানরাও রোমানীয়দের নীতিকেŠশল অবলম্বন করেই কাগজ তৈরী করত। আর তাতে খৃষ্টানদের ধর্মীয় ক্রস (+) চিহ্নটি সংযোজন করত। উমাইয়্যা শাসক আব্দুল মালেক ছিল অতি চালাক প্রকৃতির। এই ধরনের কাগজ দেখে তার উপর সংযোজনকৃত চিহ্নটির ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য নির্দেশ দিল। যখন তার প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারল অত্যন্ত রাগান্বিত হল। এ কারণে যে মিশর একটি ইসলামী রাষ্ট্র। আর এ রাষ্ট্রে ব্যবহারিত শিল্পজাতদ্রব্যে এ ধরনের প্রতিক থাকবে এটা হতে পারে না। সাথে সাথে মিশরের গভর্নরকে নির্দেশ দিল যে এ ধরনের কাগজগুলিকে নষ্ট করে তার স্থানে তেŠওহীদের শ্লোগান সম্বলিত কাগজ তৈরি করতে। আর আশ পাশের সব ইসলামী প্রদেশগুলিকেও খৃষ্টানদের প্রতিক সম্বলিত কাগজ যা শের্ক তা নষ্ট করে ফেলে নতুন কাগজ ব্যবহারের জন্য নির্দেশ পাঠাতে বলল। তৌহীদের উক্তি সম্বলিত কাগজের ব্যবহার বেশ প্রচার পেল। সেই কাগজ রোমের বিভিন্ন শহরেও পৌছাল। এই খবর রোমের বাদশার কাছে পেŠছালে সে আব্দুল মালেকের কাছে এ মর্মে একটি চিঠি পাঠাল ঃ কাগজ শিল্প সর্বদা খৃষ্টানদের প্রতিক সম্বলিত ছিল। তা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত যদি তোমার হয়ে থাকে, তাহলে তোমার আগের খলিফারা ভুল করেছে। আর যদি তারা ঠিক করে থাকে তাহলে তুমি ভুল করছো । আমি এই চিঠির সাথে তোমার জন্য উপযুক্ত উপঢেŠকন পাঠালাম যেন তাতে তুমি সন্তুষ্ট হও। আর প্রতিক সম্বলীত কাগজের প্রচলন যেন আগের মতই থাকে। জবাব হ্যা সুচক হলে তোমার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা থাকবে। আব্দুল মালেক উপঢেŠকন সামগ্রী গ্রহণ করল না এবং রোমের বাদশার বিশেষ দুতকে বলল ঃ এই চিঠির কোন উত্তর নেই। আব্দুল মালেকের কাছে রোমের বাদশার পক্ষ থেকে দ্বিতীয়বারের মত দিগুন পরিমান উপঢেŠকন প্রেরীত হল। তার সাথে আরও একটি চিঠি পাঠাল ঃ (আমার ধারনা অনুযায়ি উপঢেŠকন সামগ্রী অল্প হওয়াতে তুমি গ্রহণ করনি। এখন দিগুন পরিমানে পাঠালাম আশা করব যে এই উপঢেŠকনের কারণে তোমার কাছে আমার আগের চাওয়া বিষয়টিও গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আব্দুল মালেক প্রথমবারের ন্যায় এবারও উপহার সামগ্রী গ্রহণ করল না এবং চিঠির জবাবও দিল না)। রোমের বাদশার পক্ষ থেকে আবার আব্দুল মালেকের কাছে চিঠি আসল ঃ ‘‘দুইবার আমার পাঠানো উপহার গ্রহণ করলে না। আমার ইচ্ছাকেও পরিপূর্ণ করলে না। তৃতীয়বারের মত কয়েকগুন বেশীকরে উপঢেŠকন পাঠালাম। ঈসার কসম যদি প্রতিক সম্বলীত কাগজের ব্যবহার আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে না আন তাহলে নবী মুহাম্মদের নামের সাথে অপমান সুচক বাক্য সম্বলীত স্বর্ণ ও রোপ্য মুদ্রা তৈরী করার নির্দেশ দেব। আর তুমি তো এটা ভাল করেই জান যে রোমানরা মুদ্রা তৈরীতে বিশেষ পারদর্শি। যখন তোমরা তোমাদের নবীর নামে অপমান সুচক বাক্য সম্বলীত মুদ্রাগুলি দেখবে তখন লজ্জায় তোমাদের কপাল ঘামে ভিজে যাবে। সুতরাং এটাই ভাল যে উপঢেŠকনগুলি গ্রহণ করে আমাদের ইচ্ছাটিকে পুরণ কর। যেন আমাদের অতীতের বন্ধুত্ব আগের মতই থাকে’’।
আব্দুল মালেক তার চিঠির জবাবে উপায়হীন হয়ে বলল আমার ধারনা এটাই যে, ইসলামের দৃষ্টিতে কেউ যদি লজ্জাজনক ভাবে জন্ম গ্রহণ করে থাকে আমিই সেই ব্যক্তি। কেননা আমিই এই কাজের কারণ হয়েছি যে রসূলকে (সা.) অবমাননা করবে। মুসলমানদের সাথে আলোচনা করল কিন্তু কেউ কোন উপায় বের করতে পারল না। তাদের একজন বললঃ তুমি নিজেও এর উপায় জান কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে সে উপায়কে গ্রহণ করছো না। আব্দুল মালেকঃ হায়রে আমার কপাল, তুমি বলছো আমি সে উপায়টি জানি। কিন্তু সেটা কি? বললঃ “বাকের” যিনি নবী পরিবারের। তার কাছ থেকে এই সমস্যার সমাধান চাও, অবশ্যই তিনি এর সমাধান দিতে পারবেন। আব্দুল মালেক তার কথাকে মেনে নিল। ইমাম বাকেরকে (আ.) অত্যন্ত সম্মানের সাথে শামে পাঠানোর জন্য মদীনার গভর্নরকে নির্দেশ পাঠাল। রোমের বাদশাহর পাঠানো বিশেষ দুতকে ইমাম আসা পর্যন্ত শামেই রেখে দিল। ইমাম শামে এলে তার কাছে উলে−খিত ঘটনার বর্ণনা দিলে তিনি বললেনঃ নবী (সা.)-এর অবমাননার ব্যাপারে রোমের বাদশার পক্ষ থেকে যে হুমকি এসেছে তা বাস্তবায়ীত হবে না। কেননা আল্লাহ এই কাজকে তার জন্য সম্ভবপর করবেন না। আর এই সমস্যার সমাধানের পথও অত্যন্ত সহজ। এখন সমস্ত শিল্পকর্মীদেরকে এক জায়গায় একত্রিত কর যেন তারা মুদ্রা তৈরীর কাজে লাগতে পারে। মুদ্রার এক পিঠে সুরা তৌহীদ/সুরা ইখলাস ও অন্য পিঠে নবী (সা.)-এর নাম লেখ। আর এভাবেই আমরা রোমানদের ধাতবমুদ্রা থেকে অমুখাপেক্ষি হব। মুদ্রার ওজন সম্পর্কেও তিনি এভাবে ব্যাখ্যা দেন যে, দশ দেরহাম করে তিন ধরনের মুদ্রা তৈরী করবে যার প্রতিটির ওজন হবে সাত মিস্কাল । তিনি আরও বললেন, যে শহর থেকে মুদ্রা তৈরী করা হবে সে শহরের নাম, তারিখ ও বছর যেন তাতে উলে−খ করা হয়। আব্দুল মালেক ইমামের নির্দেশকে বাস্তবায়ন করল এবং প্রতিটি ইসলামী প্রদেশগুলিতে সংবাদ পাঠাল যে সব ধরনের বেচা-কেনাতে যেন নতুন মুদ্রা ব্যবহার করা হয়। এখনও যাদের কাছে আগের মুদ্রা আছে ফেরত দিয়ে তাদেরকে ইসলামী মুদ্রা গ্রহণ কারার জন্য জানাল। আর বাদশাহর বিশেষ দুতকে এ সমস্ত বিষয়ে প্রতি অবগত করে পাঠিয়ে দিল।
বাদশাকে এই ঘটনা সম্বন্ধে অবগত করা হল। দরবারের লোকেরা তার কাছে আব্দুল মালেককে দেয়া অতীতের হুমকিকে কার্যে বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানালে সে বলল ঃ আমি শুধুমাত্র তাকে রাগাতে চেয়েছিলাম মাত্র। কিন্তু এ কাজ এখন অনর্থক কেননা ইসলামী দেশগুলিতে এখন আর রোমান মুদ্রার ব্যবহার হবে না ।
ইমামের সাথীবর্গ ঃ
ইমাম আবু জা’ফর বাকেরুল উলুমের মক্তবে -(তাঁর উপর ফেরেস্তাদের দরুদ হউক) উন্নত ও উপযুক্ত ছাত্র তৈরী হয়েছিল যা এখানে তাদের কয়েক জনের ব্যক্তিত্ব তুলে ধরা হল ঃ
১। আবান বিন তাগ¦লাব ঃ সে তিন ইমামের সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হয়েছেন -- ইমাম যয়নুল আবেদ্বীন, ইমাম মুহাম্মদ বাকের ও ইমাম জা’ফর সাদিক (আ.) --সে তার জামানায় একজন জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত ছিল। কেননা সে তফসির, হাদীস, ফীকাহ্ শাস্ত্র, কেরাত ও আভিধানিক জ্ঞানের উপর বিশেষ পারদর্শি ছিল। এমনই তার জ্ঞানের গভীরতা ছিল যে ইমাম বাকের (আ.) তাকে মদীনার মসজিদে বসে মানুষের উদ্দেশ্যে ফতোয়া দিতে বলেছিলেন। তিনি বলেন ঃ আমি এটাই পছন্দ করি যে মানুষ তোমার মত আমাদের অনুসারিদেরকে দেখুক বা চিনুক।
আবান যখনই মদীনায় আসত অন্যান্য জ্ঞানের আসরগুলি ভেঙ্গে যেত। আর মসজিদে যেখানে নবী (সা.) খোৎবা দিতেন সে জায়াটি তার শিক্ষাদনের জন্য খালি করে দিত। আবানের মৃত্যুর সংবাদ ইমামের কাছে পেŠছালে তিনি বললেন ঃ আল্লাহর কসম! আবানের মৃত্যুর সংবাদে আমার ক্বলবে ব্যথা শুরু হয়েছে ।
২। যুরারাহ্ ঃ ইমাম বাকের ও ইমাম সাদিক (আ.)-এর হাতে তৈরীকৃত শিয়া মনীষীদের মধ্যে ছয়জনকে বিশেষ মানের মনে কারা হত, যুরারাহ্ তাদের মধ্যে একজন। ইমাম সাদিক (আ.) নিজে বলেছেন ঃ যদি বোরাইদ বিন মুয়াবিয়া, আবু বাসির, মুহাম্মদ বিন মুসলিম ও যুরারাহ্ না থাকত তাহলে নবী (সা.)-এর নিদর্শন (শিয়াদের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-দিক্ষা) সব শেষ হয়ে যেত। তারা আল্লাহর হারাম-হালালের ব্যাখ্যায় বিশ্বস্ত। আরও বলেন ঃ বোরাইদ, যুরারাহ্, মুসলিম ও আহওয়ালু জীবিত ও মৃত্যু অবস্থায় আমার কাছে তারা অতি প্রিয়ভাজন ব্যক্তিত্ব। ইমামের প্রতি যুরারার ভালবাসা এতই গভীরতা ছিল যে ইমাম সাদিক (আ.) তার জীবন বাঁচানোর জন্য উপায়হীন হয়ে তার ব্যাপারে খারাপ বলা ও তার সাথে কৃত্রিম ব্যবহার করা শুরু করল। কিন্তু গোপনে তাকে খবর দিল যে, তোমার ব্যাপারে খারাপ বলছি এ জন্য যে তোমার প্রতি বিশ্বাস রাখি। কেননা শত্র“রা আমাদের প্রতি অন্যদের ভালবাসার কথা জানতে পারলে তাকে নানাভাবে অত্যাচার করবে। ....... আর আমাদের ভালবাসাকে প্রকাশ করার ব্যাপারে তোমার প্রসিদ্ধতা আছে। এ কারণে আমার পক্ষে এরূপ কৃত্রিম ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। ...... যুরারাহ্ কেরাত, ফীকাহ্, কালাম শাস্ত্র, কবিতা ও আরবী সাহিত্যে বিশাল পন্ডিত ছিল এবং ফযিলত সমৃদ্ধ ও দ্বীনদারী তার ভিতর স্পষ্ট ছিল ।
৩। কুমায়েত আসাদী ঃ তিনি একজন প্রসিদ্ধ কবি ছিলেন। স্পষ্ট ভাষার মাধ্যমে আহলে বাইতের(আঃ) পক্ষে গভীর অর্থ সম্বলিত কবিতা রচনা করত। তার কবিতা উমাইয়্যা শাসকদের বিরুদ্ধে এমন অপমানজনক ছিল যার কারণে উমাইয়্যা খলিফার পক্ষ থেকে তাকে মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়। সত্য বর্ণনা করা এবং নবী (সা.)-এর আহলে বাইতের পক্ষে কথা বলা ঐ জামানায় এত দুরুহ ব্যাপার ছিল যা অত্যন্ত সাহসী ও ক্ষমতা সম্পন্ন লোকও এ ধরনের কাজে সাহস পেত না। কুমায়েত এমন এক সাহসীকতার প্রতিচ্ছবি যে উমাইয়্যা খেলাফতের সময় মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে তার শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী সত্য বর্ণনা করত। মানুষের সামনে উমাইয়্যা খেলাফতের স্বরূপ উন্মোচন করত। কুমায়েত তার কিছু কবিতায় ইমামগণকে বনী উমাইয়্যাদের বিপক্ষে এমনভাবে পরিচয় করিয়েছে ঃ (এই ন্যায়পরায়ন পথ পরিচালক বা নেতাগণ বনী উমাইয়্যাদের মত নন যে মানুষ ও পশুদেরকে একই রকম মনে করবে। তাঁরা আব্দুল মালেক, ওয়ালিদ, সোলাইমান ও হিশামের মত নন যে মিম্বারে বসে এমন কথা বলেন না যা তা নিজেরা করেন না। উমাইয়্যারা তাদের বক্তব্যে নবীর কথা বলে কিন্তু নিজেরা জাহেলিয়াতের যুগের ন্যায় কাজ করে থাকে) । কুমায়েত ইমাম বাকের (আ.)-এর অত্যন্ত একনিষ্ট অনুসারী ছিল। আর এই ভালবাসার পথে নিজেকে ভুলে গিয়েছিল। একদিন ইমামের সামনে তার নিয়ে রচিত একটি কবিতা পাঠ করল। ইমাম কা’বার দিকে ফিরে তিনবার বললেন ঃ ইয়া আল্লাহ তুমি কুমায়েতের প্রতি করুনা কর। আর কুমায়েতকে বললেন তোমার জন্য আমরা পরিবারের সবাই মিলে একশ দেরহাম জমা করেছি। কুমায়েত ঃ আল্লাহর কসম! কখনও স্বর্ণ ও রেŠপ্য চাইনা। শুধুমাত্র আপনার একটি জামা আমাকে দিন। ইমাম তাঁর গায়ের জামাটি খুলে তাকে দিলেন । অন্য আরেকদিন সে ইমামের পাশে বসে ছিল। ইমাম দুনিয়ার প্রতি অতিষ্ট হয়ে এই কবিতাটি বললেন ঃ ‘‘যারা উদার প্রাণ ব্যক্তি ছিল, যাদের আশ্রয়ে মানুষ জীবন যাপন করত, তারা সবাই চলে গেছে, শুধুমাত্র হিংসুক আর নষ্টরা ছাড়া কেউ নেই।’’ কুমায়েত সাথে সাথে জবাব দিল ঃ ‘‘কিন্তু এই দুনিয়ায় একজন মহামানব আছেন যাকে দুনিয়ার সবাই জানে আর সে ব্যক্তি হচ্ছেন আপনি ।’’
৪। মুহাম্মদ বিন মুসলিম ঃ সে ফকীহ্ এবং ইমাম বাকের ও ইমাম সাদিক (আ.) এর সহচর ছিল। যেমনই বলেছিলাম ইমাম সাদিক (আ.) তাকে ঐ চার জনের মধ্যে একজন হিসাব করত। যাদের কারণে নবী (সা.)-এর নিদর্শন টিকে আছে। সে ছিল কুফাবাসী আর ইমাম বাকের (আ.)-এর সীমাহীন জ্ঞান থেকে নিজের জ্ঞান বিকাশের লক্ষ্যে মদীনায় আসে এবং চার বছর মদীনায় থাকে। আব্দুল্লাহ্ বিন আবি ইয়া’ফুর বলেন ঃ ইমাম সাদিক (আ.)-এর কাছে বলেছিলাম যে, কেউ কেউ কখনও আমার কাছে প্রশ্ন করে যার উত্তর আমি জানি না। আর আপনাকেও সে সময় পাইনা। এমতাবস্থায় আমি কি করব? ইমাম মুহাম্মদ বিন মুসলিমকে দেখিয়ে দিয়ে বললেনঃ কেন তার কাছ থেকে তোমার অজানা জবাবগুলি জেনে নাও না ...... কুফায় একরাতে একমহিলা মুহাম্মদ বিন মুসলিমের বাসায় এসে বলল ঃ আমার ছেলের স্ত্রী, গর্ভে বচ্চা নিয়ে মারা গেছে এবং যে বাচ্চা তার গর্ভে আছে সে জীবিত, আমাদের এখন কি করনিও? মুহাম্মদঃ যেভাবে ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন। অবশ্যই তার পেট কেটে বাচ্চাকে বাইরে এনে তারপর তাকে মাটি দিতে হবে। আর তখন ঐ মহিলাকে জিজ্ঞেস করল যে, সে তাকে কিভাবে চিনে? মহিলাঃ এই বিষয়টিকে (আবু হানিফার) কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সে বলল এই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আর আমাকে আপনার কাছে আসার পরামর্শ দিল। এও বলল যদি আপনি এ ব্যাপারে কোন ফতোয়া দেন তাহলে আমি যেন তাকে জানাই ........ অন্য আরেকদিন মুহাম্মদ বিন মুসলিম কুফার মসজিদে আবু হানিফাকে দেখলো যে কিছু আসহাবের মধ্যে সে ঐ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। ঐ সমস্যার সমাধানটি নিজে দিয়েছে এমনটিই বোঝাতে চাইলো তাদেরকে। মুহাম্মদ আস্তে করে কাশি দিল। ওদিকে আবু হানিফা বুঝতে পেরে বলল (আল্লাহর তোমাকে ক্ষমা করুন আমাকে জীবন যাপন করতে দাও) ।
শাহাদাত ঃ
মহান ইমাম বাকেরুল উলুম ৫৭ বছর বয়সে ১১৪ হিজরী যিলহাজ্ব মাসের ৭ তারিখে অত্যাচারী উমাইয়্যা শাসক আব্দুল মালেকের শাসনামলে বিষ প্রয়োগে শহীদ হন। ওফাতের সন্ধ্যায় ইমাম সাদিককে (আ.) বললেন ঃ (আমি আজ রাতে এই পৃথিবীকে খোদা-হাফেজ করব। এখনই আমি দেখতে পেলাম আমার বাবা আমার কাছে শরবত নিয়ে আসলেন, আর আমি তা পান করলাম। তিনি আমাকে অমর জীবনে যাওয়ার ও আল্লাহর নিকট পেŠছানর সুসংবাদ দিলেন)। পরদিন আল্লাহ প্রদত্ত সীমাহীন জ্ঞানের এই পবিত্র দেহটিকে বাকি নামক কবরস্থানে ইমাম মুজতাবা ও ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর সমাধীস্থানের পাশে দাফন করা হল। তার উপর আল্লাহর সালাম হোক ।
এখন এই শেষ পর্যায়ে এই মহামানবের জ্ঞানের সমুদ্র থেকে শিক্ষানীয় কিছু বিষয় তুলে ধরব ঃ
মিথ্যাকে পরিহার করাই ঈমান ।
মু’মিন ব্যক্তি ভীতু, লোভি বা কৃপণ হয় না ।
দুনিয়ার প্রতি লোভ রেশমের পোকার গুটির ন্যায়, যতই তার উপর সুতার আবরণ তৈরী করবে ততই তা থেকে তার বেরিয়ে আসা অতিশয় কষ্টকর হবে।
.... মু’মিনদের তিরস্কার করা থেকে দুরে থেকো ।
তোমার মুসলমান ভাইদেরকে ভালবাসবে এবং যা কিছু নিজের জন্য চাও তা তাদের জন্যও চাইবে আর যা কিছু নিজের জন্য পছন্দ করনা তা তাদের জন্যও পছন্দ করবে না ।
... যদি এক মুসলমান অন্য এক মুসলমানের বাড়ীতে কোন কিছু চাইতে বা তার সাথে দেখা করতে যায়, আর সে বাড়ীতে থাকে কিন্তু তাকে ঢোকার অনুমতি না দেয় এবং নিজে তার সাথে দেখা করতে না যায়, এই বাড়ীর কর্তার উপর আল্লাহর গ¦জব পড়তে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা একে অপরের সাথে মিলিত হয় ......।
আল্লাহ তা’য়ালা লজ্জা ও সহনশীলতাকে পছন্দ করেন ।
যারা মানুষের প্রতি রাগকে ভুলে যায় আল্লাহ তার থেকে ক্বিয়ামতের আজাবকে তুলে নেন ।
যারা ভাল কাজে উপদেশ দান ও খারাপ কাজে বাধা দান করাকে ত্র“টি বলে মনে করে তারা খারাপ লোক ।
কোন বাড়ীতে শত্র“ প্রবেশ করলে ঐ বাড়ীর কর্তা যদি সেই শত্র“র সাথে মুকাবিলা না করে তবে সেই বান্দার সাথে আল্লাহ শত্র“তা পোষন করেন ।
©somewhere in net ltd.