নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেশ , মানুষ

জীবনের সব কিছু আললাহর সন্তুষ্টির জন্য

আল মাহদী ফোর্স

কোরান ও নবী পরিবারের আঃ অনুসারী।

আল মাহদী ফোর্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাসুল(সা:) ঘোষতি ৮ম ইমাম-১

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২২

ইমাম রেজা (আ.)

ইমামত নামক প্রভাকর দ্বাদশ জ্যোতি চি‎হে“র প্রত্যেকের উপরই অন্য এক দীপ্তি ঢেলে দেয়। তবে দিগন্তের যে কোন বিন্দু থেকেই তার আভা প্রতিভাত হওক না কেন তার নাম জ্যোতিই। চিরকাল তার জ্যোতির দীপ্তিতে আঁখিযুগল বিমোহিত হবেই, তার উত্তাপ জীবন বৈতরণী আর উষ্ণতা আত্মবিন্যাসী; মরুর কণ্টকলতা থেকে অরণ্যের সুউচ্চ বৃক্ষ পর্যন্ত সকলেই তার ছোয়া কামনা করে, কোন পত্রই তার জ্যোতির ছোয়া ব্যাতিরেকে বিকশিত হতে পারে না, কোন পল্লবই তার করুণার ¯পর্শ ব্যতীত পারে না ফলজ হতে। সত্যিই প্রভাকর তার দ্বীপ্তি নিয়ে এ মর্তের ললাটে বিদ্যমান, তার অনুপস্থিতিই হল এ বিশ্বাত্মার বিনাশ। আমাদের পবিত্র ইমামগণের ইমামতও, এ বিশ্ব ব্যবস্থায় ও ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অব্যাহত গতির জন্য ঠিক ঐ সূর্য্য, জ্যোতি ও উত্তাপের মতই। সে মহান ব্যক্তিত্বগণ নির্দিষ্ট সময় ও কালের দাবী অনুসারে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দীপ্তি, উত্তাপ ও পথনির্দেশনা ও তাদের অনুসারীগণের আধ্যাত্মিক পরিচর্যায় নিয়োজিত ছিলেন। প্রত্যেকেই তাঁর যুগের বিশেষ চাহিদা অনুসারে এক বিশেষ পদ্ধতিতে দ্যুতি প্রকাশ করতেন আর এ জন্যেই কেউ কেউ যুদ্ধক্ষেত্র বিরত্ব রচনা করতেন এবং রক্ত রুধির সংবাদ বিশ্বের কর্ণগোচর করতেন। আবার কেউ কেউ জ্ঞানের আসর থেকে পরিচিতি ও জ্ঞানের বিস্তৃতির পথে চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ আবার কারাবন্দী হয়ে স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। অর্থাৎ তারা ছিলেন সমাজের প্রদীপ শিখার মত, মানুষকে জাগ্রত করতে ও মুসলমানদেরকে সত্যিকার অর্থে আধ্যাত্মিকভাবে পরিচর্যা করতে নিয়োজিত থাকতেন। আবার তাঁদের কর্ম পদ্ধতিতে ও কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিঃসন্দেহে যারা প্রশস্ত দৃষ্টির অধিকারী তারা কিঞ্চিৎ লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারেন যে, তাদের উদ্দেশ্য অভিন্ন। তাদের সকলেরই লক্ষ্য ছিল মহান আল্লাহর তুষ্টি, তাঁর পথ, দ্বীনের প্রবর্তণ ও মানুষের আধ্যাত্মিক পরিচর্যা।... ... আমাদের পবিত্র ইমামগণ তাদের ইমামত ও পবিত্রতার মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে যা তাঁদের বিশেষত্ব ছিল এবং তাঁদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা যা ইমামতের জন্য অপরিহার্য ও আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও বিশেষ অনুমোদনের আলোকে সমসাময়িক কালের বিশেষত্ব ও চাহিদা স¤পর্কে অন্য সকলের †চয়ে অধিক জ্ঞাত ছিলেন এবং যে কোন বিষয়ের নেতৃত্বেই সকলের চেয়ে অধিকতর অভিজ্ঞ ছিলেন। আর এর সত্যতা, যারা সত্য ও চিরন্তন দ্বীন ইসলামে বিশ্বাসী এবং আল্লাহর আদেশে ও ঐতিহাসিক গাদীরে মহানবীর (সা.) ঘোষণার প্রতি আস্থা রাখেন, তাদের নিকট এটি একটি সু¯পষ্ট ও অনস্বীকার্য বিষয় বলে পরিগণিত। আমাদের পবিত্র ইমামদের জীবনেতিহাস অসংখ্য ঘঁটনাবহুল যা তাঁদের ঐশী জ্ঞান ও দর্শনের পরিচয় বহন করে। ইমামের জ্ঞানের গভীরতা সমাজের সকল দিক ও স্বীয় যুগকে সমন্বিত করে। অনুরূপ, জাগতিক সকল বিষয়ের সংবাদ ও পুনরুত্থান স¤পর্কিত সকল জ্ঞান তার আওতাধীন। আর এ কারণে আমাদের পবিত্র ইমামগণ কর্মতৎপরতার সূক্ষ§াতিসূক্ষ§ পদ্ধতিতে সমসাময়িককালের সকল বিষয়ের সমাধান ও ঐশী লক্ষ্যের বাস্তবায়নে প্রয়োগ করতেন। উদাহরণ ঃ সর্বাধিক বিষ্ময়ের ব্যাপার হল মহান ইমাম আলী ইবনে মূসা রেজা (আ.) তাঁর পিতার পর হারুনের রাজত্বে নির্ভয়ে নিজের পরিচয় ও ইমামতের প্রচার চালিয়েছিলেন। আর এ জন্য তাঁর বিশেষ সঙ্গীবর্গ তাঁর নিরাপত্তার ব্যাপারে সন্ত্রস্ত ছিলেন। তিনি সু¯পষ্ট ভাষায় বলেন, “যদি আবু জাহল নবীর (সা.) মাথার একটি চুলও হ্রাস করতে পারত, তবে হারুনও আমার ক্ষতি করতে পারত।” অর্থাৎ ইমাম স¤পূর্ণরূপে জ্ঞাত ছিলেন যে, তাঁর শাহাদাৎ হারুনের অপবিত্র হাতে সংগঠিত হবে না এবং জানতেন যে এখনও তাঁর জীবনের অনেকগুলো বছর অবশিষ্ট রয়েছে। তাঁর এ সচেতনতা তাঁর কর্মপদ্ধতি ও কর্ম পরিচিতির ক্ষেত্রে এক বৃহৎ কারণ। অষ্টম ইমাম আলী ইবনে মূসা †রজা (আ.) এমন এক সময়ে ছিলেন যখন ঘৃন্য আব্বাসীয় খেলাফত তার চূড়ান্ত সীমায় †পŠঁছেছিল। কারণ, বনি আব্বাসের জীবনে হারুন ও মামুনের মত বড় †কান বাদাশাহর অস্তিত্ব ছিল না। অপর দিকে পবিত্র ইমামগণের (আ.) বিশেষ করে ইমাম রেজা (আ.) বিপরীতে, এ সময় থেকে আব্বাসীয়দের কৌশল ছিল কপটতা ও শঠতাপূর্ণ এবং লোক দেখান বিশেষ। তারা যদিও ইমাম পরিবারের রক্তের তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত ছিল তবু আলাভীদের আন্দোলনের হাত †থকে নিরাপদে থাকার জন্য এবং শীয়াদের মন জয় করার জন্য এরূপ প্রদর্শনের †চষ্টা করেছে যে, আমীরুল মূমিনীন আলীর (আ.) পরিবার বর্গের সাথে আন্তরিক স¤পর্ক বিদ্যমান। এ প্রক্রিয়ার স্বীয় বৈধতার নিরাপত্তা বিধান করেছিল। আর এ শঠতাপূর্ণ †কŠশল মামূনের শাসানামলে চূড়ান্ত মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়।
ইমাম রেজা (আ.) মামূনের এ কপট নীতির বিপরীতে অভূতপূর্ব পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন যার ফলে একদিকে যেমন মামূনের উদ্দেশ্য বিফল হবে, তেমনি অপরদিকে ইসলামী জগতের সর্বত্র মানুষ সত্যের নিকটবর্তী হবে। আর সেই সাথে অনুধাবন করতে পারবে যে, ইসলামী খেলাফতের প্রকৃত উত্তরাধিকার কেবলমাত্র মহান আল্লাহ ও তাঁর পক্ষ থেকে পবিত্র ইমামগণের (আ.) উপর ন্যস্ত থাকবে এবং তাঁরা ব্যতীত কেউ ঐ পদের জন্য যোগ্য নয়। যেমনটি অন্যান্য ইমামগণের (আ.) †ক্ষত্রেও বলেছিল যে, উমাইয়া ও আবাসীয়রা সাধারণত ঃ ইমামগণকে (আ.) কঠোর প্রহরার মধ্যে রাখত এবং জনগণের সাথে তাঁদের যোগাযোগের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করত। আর তাদের প্রচেষ্টা ছিল ইমামগণকে (আ.) অপরিচিত ও অখ্যাত করে রাখা। একারণেই ইমামগণ (আ.) ইসলামী সমাজে যতটুকুই খ্যাতি লাভ করেছিলেন খলিফাদের মাধ্যমে নিহত কিংবা বিষাক্রান্ত হয়েছিলেন। যদিও একদিকে বেলায়েতে আহদী বাধ্য হয়ে গ্রহণ করতে হয়ছিল, তবু ইমাম কর্তৃক প্রদত্ত শর্তানুসারে তা অগ্রাহ্য করার বিষয়টিই প্রতীয়মান হত। তথাপি এ বিষয়গুলোর প্রচার ও প্রসার ইসলামী ভূখন্ডের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। মামুন স্বীকার করে নিয়েছিল, ইমাম রেযাই (আ.) উম্মতের ইমাম ও খেলাফতের জন্য উপযুক্ত এবং মামুন তাঁর নিকট চেয়েছিল যে তিনি যাতে খেলাফত গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি গ্রহণ করেননি এবং মামূনের অবিরাম অনুরোধে শর্তসাপেক্ষে বিলায়েতে আহদী গ্রহণ করেছিলেন। আর এ গুলোই ইমামের কর্মপদ্ধতি ফলপ্রসূ হওয়ার †ক্ষত্রে এবং মামূনের চক্রান্ত বিফল করতে সহায়ক হয়েছিল।
এ ঘটনাকে দ্বিতীয় খলিফা ওমরের চাপিয়ে দেয়া পরিষদে আমিরুল মূমিনীনের অংশগ্রহণের ব্যাপরটির সাথে তুলনা করলে অত্যুক্তি হয় না। প্রসঙ্গতঃ ইমাম রেজা (আ.) এ দু’ঘটনার সাদৃশ্য স¤পর্কে ইঙ্গিত করেছিলেন। ওমর মৃত্যুকালীন সময়ে আদেশ দিয়েছিল যে, তার মৃত্যুর পর ওসমান, তালহা, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ, সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, যুবাইর ও আমিরুল মূমিনীন আলীর (আ.) সমন্বয়ে একটি পরিষদ গঠন করতে। আর এ ছয়জন নিজেদের মধ্যে একজনকে খলিফা নিযুক্ত করবেন। এদের মধ্যে যে কেউ বিরোধিতা করলে তাকে হত্যা করে ফেলবে। এমনভাবে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল যাতে আলী (আ.) খেলাফত থেকে বঞ্চিত হন। আর যেহেতু সে জানত যে, খেলাফতের প্রকৃত মালিক তিনি, তাই চেয়েছিল অন্য কেউ নির্বাচিত হোক ও আলী (আ.)-এর বিরোধিতা করুক এবং নিহত হোক এবং তাঁর হত্যা প্রক্রিয়াকে তখন আইনগত বৈধতা প্রদান করা হত!! আলী (আ.)-এর পরিবারবর্গের কেউ কেউ প্রশ্ন করেছিল ঃ আপনিতো জানেন, আপনাকে খেলাফত দিবে না, তারপরও কোন পরিবষদে অংশ গ্রহণ করছেন?
ইমাম আলী (আ.) বলেলেন ঃ ওমর নবী (সা.)-এর পর (সাজানো হাদীসের মাধ্যমে) ঘোষণা করেছিল যে, নবুয়্যাত ও ইমামত উভয়েই এক গৃহে পুঞ্জীভূত হতে পারে না (অর্থাৎ আমাকে নিজের ইচ্ছামত দলিলের মাধ্যমে মহানবীর (সা.) কথা বলে খেলাফত থেকে বঞ্চিত করেছিল, আর এ কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সে ভাবেনি। এখন আবার সেই ওমরই আমাকে এ পরিষদে অংশ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে এবং সে আমাকে খেলাফতের উপযুক্ত বলে পরিচয় করিয়েছে। আমি এ পরিষদে অংশ গ্রহণ করব এটি প্রমাণ করার জন্য যে, ওমরের কর্ম তার বর্ণিত রেওয়ায়েতের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখেনি। ইমামের (আ.) বিলায়েতে আহদীর একটি সুফল ছিল এটাই যে, বিশাল মুসলিম জনতা জানবে কারা উপযুক্ততর এবং মামূন তার কর্মের মাধ্যমে কোন সত্যকে স্বীকার করেছিল। আর এর ধারাবাহিকতায় ইমাম (আ.) মদিনা থেকে মার্ভ পর্যন্ত ইসলামী ভূখন্ডের বিভিন্ন শহরের মানুষের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং †যাগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন উপকরণের অনুপস্থিতিতে †য মুসলমানরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ †থকে বঞ্চিত ছিল, তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে †পরেছিলে এবং সত্যকে স্বচক্ষে দেখতে পেয়েছিল। এর ইতিবাচক প্রভাব উলে−খযোগ্য। এর দৃষ্টান্ত নিশাপূরে জনতার ভীড়ে পরিলক্ষিত হয়। আরও পরিলক্ষিত হয়, মার্ভের ঈদের নামাযে একই স্থানে তাঁর সাথে বাকযুদ্ধে আসা অসংখ্য জ্ঞানী চিন্তাবিদদের পরিচয় এবং তাঁর জ্ঞানের বিরাটত্বের প্রমাণ, আর †সই সাথে ইমামকে (আ.) অপমানিত করার জন্য মামুনের সকল চক্রান্ত ব্যর্থতায় পর্যবশিত হওয়া। এ গুলোকে ইমামের কৌশলের ইতিবাচক প্রভাব বলে বর্ণনা করা †যতে পারে, যার জন্য বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন।
যাহোক, আমাদের ইমামগণের (আ.) জীবনের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে হবে। †যমন নবীগণের (আ.) জীবনেতিহাস, যাদের কর্মকান্ডের সূতিকাগার ছিল ওহী, তা বাদশাহ অত্যাচারী ও কুচক্রি রাজনীতিবিদদেরকে বিচার করার জন্য ব্যবহৃত একই মানদন্ডের সাথে তুলনা করা যায় না। ওয়াসী ও ইমামগণের (আ.) জীবনীও সাধারণ মানুষের জীবনের মানদন্ডের মাধ্যমে বর্ণনাযোগ্য নয়। †কননা ওয়াসীর ইমামগণও নবীগণের (আ.) মতই মহান আল্লাহর সাথে বিশেষ স¤পর্কের অধিকারী ছিলেন।

ইমাম রেজা (আ.)-এর জন্ম ঃ
১৪৮ হিজরীর এগারই যীলকাদ মদিনায় ইমাম মূসা ইবনে জা’ফর সাদিকের (আ.) গৃহে এক সন্তান পৃথিবীর বুকে পদার্পণ করেছিলেন, যিনি ঐতিহাসিকভাবে পিতৃ উত্তর ঈমান, জ্ঞান ও ইমামতের দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর নামকরণ করা হয়েছিল ‘আলী’; তবে তাঁর জীবদ্দশায় তিনি ‘রেজা’ নামে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তাঁর মাতার নাম ছিল নাজমা । তিনি বুদ্ধিমত্তা, ঈমান ও তাক্বওয়ার †ক্ষত্রে উৎকৃষ্ট রমনীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের ইমামগণ (আ.) সর্বদা শ্রেষ্টতম পিতা বংশধর ছিলেন এবং পবিত্র ও কল্যাণময়ী মাতার আঁচলে প্রতিপালিত হয়েছিলেন।

ইমাম রেজা (আ.) এর ইমামত ঃ
ইমাম রেযা (আ.) ১৮৩ হিজরীতে হারুনের কারাগারে ইমাম কাযিমের (আ.) শাহাদাতের পর পয়ত্রিশ বছর বয়সে ইমামতের ঐশী মসনদে অধিষ্টিত হন এবং উম্মতের নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হযরত ইমাম রেযার (আ.) ইমামতও অন্যান্য ইমামগণের (আ.) মতই রাসূলের (সা.) বর্ণনা ও তাঁর পিতা ইমাম কাযিমের (আ.) পরিচয় করিয়ে †দয়ার মাধ্যমে প্রতিপন্ন হয়েছিল। ইমাম কাযিম (আ.) তাঁর অন্তরীন হওয়ার পূর্বে তাঁর পর পৃথিবীতে প্রকৃত অষ্টম ইমাম ও আল্লাহর হুজ্জাত কে হবেন তা নির্দিষ্টরূপে বর্ণনা করেছিলেন, যাতে তাঁর অনুসারী ও সত্যানুসন্ধিৎসূগণ অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তিতে পতিত না হন। মাখযূমী বলেন ঃ ইমাম মূসা ইবনে জা’ফর (আ.) আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন ও বললেন ঃ তোমরা কি জান কেন তোমাদেরকে ডেকেছি? বললাম ঃ না। তিনি বললেন ঃ আমি চেয়েছিলাম যে তোমরা সাক্ষী থাক যে আমার পূত্র (ইমাম রেযার (আ.) প্রতি ইঙ্গিত করে) আমার ওয়াসী ও উত্তরাধিকারী ... ...।
ইয়াযীদ ইবনে সালত বলেন ঃ ওমরা পালনের জন্য মক্কায় যাচ্ছিলাম, পথিমধ্যে ইমাম কাযিমের (আ.) সাথে সাক্ষাৎ হল এবং তাকে সবিনয়ে নিবেদন করলাম ঃ এ জায়গাটি আপনি চিনেন কি? তিনি বললেন ঃ হ্যাঁ, তুমিও চিন কি? বললাম ঃ জী হ্যাঁ, আমি এবং আমার পিতা এ স্থানেই আপনি এবং আপনার পিতা ইমাম সাদিকের (আ.) সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তখন আপনার অন্যান্য ভ্রাতাগণ অপনাদের সাথে ছিলেন। আমার পিতা ইমাম সাদিকের (আ.) নিকট নিবেদন করলেন ঃ আমার পিতা -মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনি সর্বদা আমাদের পবিত্র ইমাম এবং কেউই মৃত্যু থেকে দূরে থাকতে পারে না। আমার জন্য এমন কিছু বলুন যাতে অন্যান্যদের জন্য তা বর্ণনা করতে পারি। ইমাম সাদি (আ.) তাকে বললেন ঃ ওহে আবু আম্মার! এরা আমার সন্তান, তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় হলেন তিনি (আপনার দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন)। তিনি প্রজ্ঞা জ্ঞান ও বদান্যতার অধিকারী; যা কিছু মানুষের জন্য প্রয়োজন সে স¤পর্কে অবগত। তাছাড়া দ্বীন ও দুনিয়ার যে সকল বিষয় স¤পর্কে মানুষের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় সে স¤পর্কে সচেতন; তিনি সদাচারের অধিকারী। আর তিনি মহান আল্লাহর দ্বারসমূহের মধ্যে একটি দ্বার। ... ... অতঃপর ইমাম কাযিমের (আ.) নিকট নিবেদন করলাম ঃ আপনার পিতার মত আমাকে অবহিত করুন (এবং নিজের পর ইমামকে পরিচয় করিয়ে দিন)। ইমাম কাযিম (আ.) ইমামত স¤পর্কে বলেন যে, ইমামত এক ঐশী বিষয় এবং মহান আল্লাহও তার নবী (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত হয়। তিনি বলেন ঃ “আমার পর ইমামত আমার পূত্র আলীর নিকট †পŠঁছবে যিনি ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ও চতূর্থ ইমাম আলী ইবনে হুসাইনের (আ.) নামের অনুরূপ নামের অধিকারী।”
ঐ সময় ইসলামী উম্মার উপর এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। এ জন্যে ইমাম তাঁর বক্তব্য শেষে ইয়াযীদ ইবনে সালতকে বললেন ঃ ওহে ইয়াযীদ। যা বলেছি তা যেন তোমার নিকট আমানত হিসেবে গচ্ছিত থাকে এবং কারো সত্যবাদিতা পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত তার নিকট বর্ণনা করো না।
ইয়াযীদ ইবনে সালত বলেন ঃ ইমাম মূসা ইবনে জা’ফরের (আ.) শাহাদাতের পর ইমাম রেযার (আ.) নিকট গেলাম। আমি কিছু বলার পূর্বেই তিনি বললেন ঃ হে ইয়াযীদ! ওমরা পালন করতে আমার সাথে আসবে? বললাম ঃ আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল, কিন্তু সফরের জন্য আমার নিকট কোন অর্থ নেই। ইমাম (আ.) বললেন ঃ †তামার সফরের খরচ আমি বহন করব। হযরতের (আ.) সাথে মক্কার দিকে রওয়ানা হলাম এবং ঠিক সে স্থানে উপণীত হলাম †যখানে ইমাম সাদিক (আ.) ও ইমাম কাযিমের (আ.) সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। ইমাম মূসা ইবনে জাফরের সাথে সাক্ষাতের ঘটনা ইমামের (আ.) জন্য বর্ণনা করলাম।

ইমাম রেযার (আ.) আচার ব্যবহার ঃ
আমাদের পবিত্র ইমামগণ (আ.) মানুষের মাঝে ও মানুষের সাথে জীবন যাপন করতেন এবং কার্যতঃ তাঁরা মানুষকে জীবনের, পবিত্রতার ও কল্যাণের শিক্ষা দিতেন। তাঁরা ছিলেন অপরের আদর্শ; যদি ও ইমামতের সমুন্নত মর্যাদা তাঁদেরকে অন্য সকলের †চয়ে স্বতন্ত্র করেছে। তাঁরা আল্লাহর নির্বাচিত প্রতিনিধি ও পৃথিবীতে আল্লাহর হুজ্জাত ছিলেন। তথাপি সমাজে তাঁরা সমাজ থেকে নিজেদেরকে আলাদা করে দেখতেন না এবং মানুষের সং¯পর্শ †থকে নিজেদেরকে দূরে রাখতেন না, কিংবা স্বৈরাচারী ও †স্বচ্ছাচারীদের মত নিজের জন্য †কান বিশেষত্ব ও স্বাতন্ত্রিকতা বজায় রাখতেন না এবং কখনোই মানুষকে দাসত্ব ও নিকৃষ্ট অবস্থার দিকে ঠেলে দিতেন না বা অসম্মান করতেন না। ইব্রাহীম ইবনে আব্বাস বলেন ঃ কখনোই দেখিনি যে, ইমাম রেযা (আ.) তাঁর বক্তব্যে কারো প্রতি বিদ্রুপ করেছেন। অনুরূপ, দেখিনি কখনো তিনি কারো বক্তব্য †শষ না হতেই তার কথায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন। তিনি কখনোই অন্যের উপস্থিতিতে তাঁর পা মোবারক লম্বা করে দিতেন না। কখনোই তার খাদেম বা গোলামকে ভর্ৎসনা করতেন না। কখনো অট্টহাঁসি হাঁসতেন না, বরং স্মিত হাঁসতেন। খাবারের সময় তার দস্তর খানায় গৃহের সকলকে এমনকি দ্বাররক্ষী ও সহিসকে ও ডেকে বসাতেন এবং তাদের সাথে আহার গ্রহণ করতেন। তিনি রাতে কম ঘুমাতেন এবং অধিক জাগ্রত থাকতেন এবং অধিকাংশ রাতই প্রভাত পর্যন্ত †জগে কাটাতেন, আল্লাহর উপাসনায় মশগুল থাকতেন। খুব রোযা রাখতেন, বিশেষ করে প্রতিমাসের তিনটি রোযা কখনোই ত্যাগ করতেন না। কল্যাণ কর্ম ও গোপনে দান প্রচুর পরিমাণে করতেন এবং অধিকাংশ সময়ই রাতের অন্ধকারে লোক চক্ষুর আড়ালে দরিদ্রদেরকে সাহায্য করতেন। মুহম্মদ ইবনে আবি এবাদ বলেন ঃ হযরতের (আ.) বিছানা গৃষ্মকালে ছিল মাদুর আর শীতকালে ছিল চট। তাঁর পোশাক (গৃহাভ্যন্তরে) ছিল মোটা ও রুক্ষ। কিন্তু যখন কোন সাধারণ সভায় যেতেন তখন খুব পরিপাটি হয়ে †যতেন (সুন্দর ও প্রচলিত পরিধেয় পরিধান করতেন)।
এক রাতে ইমামের গৃহে অতিথী ছিল। কথপোকথনের সময় একটি প্রদীপে সমস্যা †দখা দিল। অতিথী প্রদীপটিকে সমস্যামুক্ত করার জন্য উদ্যত হল। কিন্তু ইমাম তাকে অনুমতি †দননি এবং স^য়ং একর্মটি স¤পাদন করেছিলেন এবং বলেছিলেন ঃ ‘আমরা এমন এক সমষ্টি †য অতিথীদের মাধ্যমে কর্ম স¤পাদন করি না।’
একদা ইমামকে (আ.) চিনত না এমন এক ব্যক্তি †গাসলখানায় ইমামের নিকট †চয়েছিল তার গাঁ পরিস্কার করে দিতে। ইমাম (আ.) তার অনুরোধ গ্রহণ করলেন এবং তা করতে ব্যস্ত হলেন। যখন অন্যান্যরা ইমামের পরিচয় ঐ ব্যক্তির নিকট বর্ণনা করল তখন †স লজ্জায় মৃয়মান হয়ে ইমামের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করল। কিন্তু ইমাম তার কথায় কর্ণপাত না করে, একই ভাবে কাজ চালিয়ে †যতে লাগলেন এবং তাকে সান্তনা দিয়ে বললেন †য তুমি †কান অপরাধ করনি। এক ব্যক্তি ইমামকে বললঃ আল্লাহর শপথ, পূর্ব পূরুষগণের শ্রেষ্টত্ব ও উচ্চ মর্যাদার †ক্ষত্রে †কউই আপনার সমকক্ষ নয়। ইমাম বললেন ঃ তাক্বওয়া তাঁদেরকে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছিল এবং আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁরা মহৎ হয়েছিলেন। বালখের এক অধিবাসী বলেন ঃ খোরাসান সফরে ইমাম রেযার (আ.) সাথে ছিলাম একদা দস্তরখান বিছানো ছিল, ইমাম সকল খাদেম, †গালাম এমনকি কৃষ্ণাঙ্গদেরকে ও ঐ দস্তর খানায় তাঁর সাথে আহার গ্রহণের জন্য বসালেন। আমি সবিনয়ে ইমামকে বললাম ঃ আপনার জন্য উৎসর্গ হব, এরা ভিন্ন দস্তর খানায় বসবে, এটাই উত্তম। তিনি বললেন ঃ চুপ থাক, সকলেরই সৃষ্টিকর্তা একই সকলের পিতামাতাও একই এবং সকলের কর্মের উপর ভিত্তি করেই পুরস্কার প্রদান করা হবে। ইমামের খাদেম ইয়াসির বলেন ঃ যদি †তামার নিকট উপস্থিত হই (এবং

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.