![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইমাম মুহাম্মদ ত্বাকী (আ.)
অষ্টম ইমামের পুত্র হযরত মুহাম্মদ বিন আলী আত্ তাক্বী (আ.) হলেন নবম ইমাম। তিনি ইমাম যাওয়াদ এবং ইবনুর রেজা নামেও সম্যক পরিচিত। তিনি হিজরী ১৯৫ সনে মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণিত হাদীস অনুসারে হিজরী ২২০ সনে আব্বাসীয় খলিফা মু’তাসিম বিল্লাহর প্ররোচনায় বিষ প্রয়োগের ফলে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। আব্বাসীয় খলিফা মামুনের কন্যা ছিল তাঁর স্ত্রী। খলিফা মু’তাসিম বিল্লাহর প্ররোচনায় ইমামের স্ত্রী (খলিফা মামুনের কন্যা) ইমামকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করেন। বাগদাদের ‘কাযেমাইন’ এলাকায় দাদার (সপ্তম ইমাম) কবরের পাশেই তাঁকে কবরস্থ করা হয়।
পিতার মৃত্যুর পর মহান আল্লাহর নির্দেশে এবং পূর্ববর্তী ইমামগণের নির্দেশনায় তিনি ইমামতের পদে অধিষ্?িত হন। মহান পিতার মৃত্যুর সময় নবম ইমাম মদীনায় ছিলেন তখন তাঁর বয়স আট বছর। তিনি ছোট বয়স থেকেই ব্যক্তিত্বশীল বিনয়ী ও গম্ভীর স্বভাবের ছিলেন। তিনি কখনো উচ্চস্বরে হাসতেন না এবং শিশুদের মত অহেতুক খেলা ধুলা করতেন না। তাঁর বয়স কম থাকার কারণে সে যুগের অনেক (শীয়া) মহান ব্যক্তিগণ সাবধানতা অবলম্বন করে যুগের ইমামকে অনুসন্ধান করতে থাকেন। এমনই এক সময় হজ্জের অনুষ্?ান শেষে শীয়াদের মহান আলেম, ফকিহ্ জ্ঞানীগুণীজনরা তাঁর দরবারে যেয়ে উপস্থিত হন। তখন তাঁর কাছে সে যুগের সবচেয়ে কঠিন ত্রিশহাজার প্রশ্ন করা হয় তিনি সকল প্রশ্নের উত্তর দেন। আব্বাসীয় খলিফা মামুন যখন তাঁর মেধা ও খ্যাতি সম্পর্কে অবগত হল তখন তাঁকে বাগদাদে ডেকে পাঠায়। আব্বাসীয় খেলাফতের তৎকালীন রাজধানী ছিল বাগদাদ। ইমাম বাগদাদে এসে খলিফা মানুনের সাথে সাক্ষাতের পূর্বে কোন এক গলিতে ছেলেদের সাথে খেলায় মশগুল ছিলেন এমন সময় মামুন শিকারের উদ্দেশ্যে ঐ গলিই অতিক্রম করছিলেন। অন্য শিশুরা মানুনকে দেখেই দৌড় দিয়ে পালায় কিন্তু তিঁনি দাঁড়িয়ে রইলেন। মামুন এদৃশ্য †দখে প্রশ্ন করলো ‘তুমি কেন অন্যসব কিশোরদের মত ছুটে পালাওনি?’ তখন তিনি উত্তর দিলেনঃ হে সুলতান এখানে পথ এমন চিকন ছিলো না যে আমাকে পথ ছেড়ে সরে দাঁড়াতে হবে। আর আপনার কাছে আমি এমন কোন অপরাধ করিনি যাতে ভয়ে আমাকে পালাতে হবে। আর আপনিও তো কাউকে অহেতুক শাস্তি দেননা।
মামুন তাঁকে চিনতো না কিন্তু আর্কষণীয় চেহারা ও সাহস দেখে মুগ্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করলো তোমার নাম কি? ইমাম বললেন: মুহাম্মদ। মামুন আবার প্রশ্ন করলো: তোমার বাবার নাম কি? তিনি বললেন: আলী ইবনে মুসা আর রেযা। সে ইমাম রেযা নাম শুনে হযরত যাওয়াদের প্রতি আরো সম্মান ও অনুগ্রহ প্রকাশ করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় আপন কন্যা উম্মল ফাযলকে হযরতের সাথে বিয়ে দিবেন। খলিফা মামুন প্রকাশ্যে ইমামকে অত্যন্ত সম্মান প্রদর্শন করে এবং তাঁর সাথে নম্র-ব্যবহার করে।
বনি আব্বাসীয় গোত্রের লোকেরা এ খবর শোনা মাত্রই এর প্রতিবাদে ইমামের কুৎসা রটানো শুরু করে দেয়। তারা প্রচার করতে থাকে যাওয়াদ-তো মাত্র একটি শিশু এখনো তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পূর্ণতা লাভ করেনি। তখন মামুন বলল: এরা ছোট বড় সকল জ্ঞান আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত হয়ে থাকে তাই তাদের অর্জন করার প্রয়োজন পড়ে না। এরপর মামুন বনি আব্বাসীয়দের শান্ত করার জন্য একটি আলোচনা সভায় আয়োজন করে। সেখানে সে যুগের সবচেয়ে নামীদামী আলেম ও ফকিহদের আমন্ত্রণ জানায় যেমন প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া বিন আকসাম ও প্রধান মুফতী সাহেব যারা তর্কে ছিলেন সর্বাধিক পন্ডিত। ইয়াহিয়া বিন আকসাম বলেন: আমি কয়েকটি প্রশ্ন করবো উত্তর দিতে পারলে তাকে অঢেল সম্পদ দান করা হবে। ইয়াহিয়া বলল: ফেকাহ্ শাস্ত্র থেকে প্রশ্ন করার অনুমতি আছে কি?
ইমাম বললেন: তোমার যা ইচ্ছা তা হতে প্রশ্ন কর। ইয়াহিয়া প্রশ্ন করল: কোন ব্যক্তি ইহ্রাম অবস্থায় কোন প্রাণীকে শিকার করতে যেয়ে মেরে ফেলে তাহলে তার কর্তব্য কি? ইমাম উত্তরে জিজ্ঞেস করলেন, তাকে হেরেম শরীফের মধ্যে হত্যা করেছে না, বাহিরে? সে স্ব-ইচ্ছায় হত্যা করেছে না অনিচ্ছায়? সে সকল বিধি বিধান সম্পর্কে সচেতন থাকা অবস্থায় হত্যা করেছে না অজ্ঞাত অবস্থায়? সে মুক্ত (ক্রীতদাস নয়) ছিল না সে অন্যের দাস বা গোলাম ছিল? সে প্রাপ্ত বয়স্ক ছিল না অপ্রাপ্ত বয়স্ক? এটা কি তার প্রথম শিকার প্রাণী ছিল না এর পূর্বে আরো শিকার করেছে? সে যে প্রাণীকে হত্যা করেছে সেটাকি পাখি ছিল না অন্য প্রজাতির প্রাণী? শিকারকৃত প্রাণী ছোট ছিল না বড়? সে এ হত্যা করাতে অনুতপ্ত না অনুতপ্ত নয়? এ কাজটি কি সে রাতে করেছে না দিনে? তার এ ইহরাম হজ্জ উপলক্ষ্যের ইহরাম না ওমরাহ্ পালনের ইহরাম?
ইয়াহিয়া এতসব প্রশ্ন একসাথে শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল সে কি উত্তর দিবে কিছুই খঁজে পেল না। তার চেহারার রং পাল্টে গেল এবং তার পরাজয় সবার কাছে ধরা পড়লো। মামুন জলসার অবস্থা দেখে সকলকে বলল দেখেছো তা চিনতে পেরেছো তো। অতঃপর ইমামের দিকে ফিরে বলল তুমি বিয়ে খুতবা পড়তে পার? ইমাম বললেন: হ্যাঁ, তখন মামুন বলল, †তামার জন্য আমার মেয়ে উম্মুল ফাজলের বিয়ের খুতবা পড়তে পার। ইমাম বিয়ের খুতবা পড়লেন। জলসা থেকে লোকজনের চলে যাওয়ার আগেই মামুন বলল, আপনি ইহরামের বিষয়ের উত্তরটি দেন। ইমাম একেক করে প্রত্যেকটির উত্তর দিয়ে দিলেন। অতঃপর মামুন বললেন আপনি ইয়াহিয়াকে কোন বিষয় জিজ্ঞেস করেন। তখন ইমাম প্রশ্ন করলেন: এমন এক ব্যক্তির পরিচয় দাও যার দিনের শুরুতে এক নারীকে র্স্পশ হারাম, দিনের মধ্যভাগের আগে স্পর্শ করা বৈধ হয়ে যায়। আবার দুপুর †বলা স্পর্শ হারাম হয়ে যায়, অতঃপর বিকালে স্পর্শ বৈধ হয়ে যায়। অথচ সন্ধ্যাবেলা তাকে স্পর্শ করা হারাম হয়ে যায়। আবার ঈশার সময় তাকে স্পর্শ বৈধ হয়ে যায়। তারপর মধ্যরাতে তাকে স্পর্শ করা হারাম হয়ে যায়। আবার ভোর বেলা তাকে স্পর্শ করা বৈধ হয়ে যায়। এখন বল কি কারণে এই মহিলাটি ঐ পুরুষের জন্য কখনো হারাম আবার কখনো বৈর্ধ হল?
ইয়াহিয়া বলল, আমি এ জাতিয় বিষয় কখনো শুনিনি আর জানিও না ।
তখন ইমাম বললেন: ঐ মহিলাটি প্রথম অবস্থায় ঐ পুরুষের জন্য ছিল নামাহরাম (স্পর্শ বৈধ হওয়ার শর্ত শুন্য)। তাই তাকে স্পর্শ করা হারাম। কিন্তু যখন বেলা হল তখন তাকে সে ক্রয় করলো ফলে তার জন্য স্পর্শ বৈধ হয়ে গেল। আর দুপুর বেলা তাকে মুক্ত করে দেওয়া হল তখন হারাম হয়ে যায়। পুনরায় বিকালে তাকে সে বিয়ে করলো ফলে তাকে স্পর্শ বৈধ হয়ে যায়। কিন্তু সন্ধাবেলা তাকে জিহার [এমন কথা যা বললে স্ত্রী হারাম হয়ে যায়, ইসলাম পূর্ব যুগেও আরবে প্রচালিত ছিল] করলো ফলে সে তার জন্য হারাম হয়ে গেল। অতঃপর সে ঈশার সময় জিহারের কাফ্ফারা পরিশোধ করে দিলো ফলে বৈধ হয়ে যায়। তারপর মধ্যরাতে তাকে তালাক দিলো ফলে তাকে স্পর্শ করা তার জন্য হারাম হয়ে যায়। আবার ভোর বেলা সে তার প্রতি প্রত্যার্বতন করলো ফলে তাকে সে তার জন্য বৈধ হয়ে গেল।
এতক্ষণ সবাই নিথর এবং চুপ হয়ে গিয়েছিলো। মামুন তাদের এ নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে বলল, তোমরা এমন পন্ডিত ও জ্ঞানী কারো সন্ধান রাখ কি, তাও এই বয়সে? সবাই বলল, না, ইবনুর রেযা সকল জ্ঞানী গুনীজনদের শ্রেষ্ট ব্যক্তি।
এভাবে সে ইমামকে বাগদাদেই রেখে দেয়। প্রকৃতপক্ষে ঐ বিয়ের মাধ্যমে ইমামকে ঘরের ভিতরে এবং বাইরে উভয় দিক থেকেই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়। ইমাম তাক্বী (আ.) বেশ কিছুদিন বাগদাদে কাটানোর পর খলিফা মামুনের অনুমতি নিয়ে মদীনায় ফিরে যান। তারপর খলিফা মামুনের মৃত্যু পর্যন্ত তিনি মদীনাতেই ছিলেন। খলিফা মামুনের মৃত্যুর পর মু’তাসিম বিল্ল¬¬াহ্ খলিফার সিংহাসনে আরোহণ করে। এরপরই খলিফা মু’তাসিম ইমামকে পুনরায় বাগদাদে ডেকে পাঠায় এবং তাঁকে নজরবন্দী করে রাখা হয়। সে ইমামকে অপদস্থ করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় আলেম ও জ্ঞানীদের আলোচনা সভায় উপস্থিত রাখত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইমামের মতামত চাইত। কিন্তু ইমাম অনেক সময় ত্বাকীয়া করতেন অথবা চুপ থাকতেন আর কখনো কখনো নিজের মত প্রকাশ করতেন।
এমনই এক সভায় একজন চোরকে উপস্থিত করা হয় যে নিজেই নিজের চুরীর অভিযোগকে স্বীকার করেছে। খলিফা বাগদাদের তৎকালীন বিচারপতি ইবনে দাউদের কাছে চোরের শাস্তি ও হাত কাটার পরিমাণ সম্পর্কে জিঙ্গাসাবাদ করে যে, হাতের কোন অংশটুকু কাটতে হবে? ইবনে আবি দাউদ ঃ হাতের কব্জি থেকে। খলিফা বলল ঃ তোমার দলিল কি? সে বলল তায়াম্মুমের এই আয়াতটি [সুরা নিসা ৪৩ নম্বর আয়াতفَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ ] মহান আল্লাহ্ এখানে হাত বলতে হাতের কব্জি থেকে নখের অগ্রভাগ পর্যন্ত অংশকে বুঝিয়েছেন তাই হাত কাটার অর্থ হল কব্জি থেকে কেটে ফেলা। একথায় উপস্থিত আরো অনেক আলেম ওলামা এর পক্ষে মত দেন। তবে আরেকাংশ আলেম তারা বললেন কনুই হতে হাত কেটে ফেলা উচিত। কেননা মহান আল্লাহ্ অজুর আয়াতে বলেন [وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ সুরা মায়েদা ৬নম্বর আয়াত] সুতরাং হাত হল কনুই পর্যন্ত। অতঃপর মু’তাসিম ইমাম মুহাম্মদ ত্বাকী (আ.) এর দিকে ফিরে বলেন ঃ তুমি কি বলতে চাও? ইমাম বললেন উপস্থিত সকলেই তা বললেন তাই এ বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করা থেকে আমাকে রেহাই দেন। খলিফা কসম খেয়ে বললেন না আপনাকে বলতেই হবে। ইমাম বললেন তাহলে এখন শোনেন। ঐ চোরের শাস্তি হল তার বুড়া আঙ্গুল বাদে বাকী চারটি আঙ্গুল কাটতে হবে। খলিফা বলল: তোমার দলিল কি? ইমাম বললেন এই জন্য যে রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, সিজদাতে সাতটি অঙ্গ অবশ্যই মাটি স্পর্শ করতে হবে। এই সাতটি অঙ্গের মধ্যে দু’হাতের দুটি তালু। তাই যদি চোরের হাতকে কব্জি অথবা কনুই হতে কাটা হয় তাহলে তার আর কোন তালুই অবশিষ্ট থাকছে না যা দিয়ে সে সিজদা করবে। আর সিজদার স্থান বা অঙ্গ হল আল্লাহর প্রাপ্য তাই এখানে অন্যের কোন অধিকার নেই যে, তারা ঐ অঙ্গ কেটে নেবে। কেননা আল্লাহ্ বলেন ঃ [وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ নিশ্চয় সিজদার স্থান সমূহ আল্লাহর -সুরা জ্বীন, আয়াত নম্বর ১৮]। খলিফা ইমামের কথা শুনে তা পছন্দ করলেন এবং নির্দেশ দিলেন চোরের হাত থেকে চারটি আঙ্গুল কাটতে।
শাহাদাত ঃ
খলিফা মু’তাসিমের প্ররোচনায় ইমামের স্ত্রী (খলিফা মামুনের কন্যা) ইমামকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করে।
“ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর কিছু বাণী”
পবিত্র ইমামগণের (আ.) বাণীসমূহ ঐশী জ্ঞানের অতি বিশুদ্ধ এক আলোকময় উৎস থেকে উৎসারিত। যা মানব জাতির জন্য এক উজ্জল ও নিশ্চিত পথনির্দেশনা স্বরূপ। কেননা তাঁরা সকল প্রকার ত্র“টিÑবিচ্যুতি এবং ভ্রান্তি থেকে স¤পুর্ণ ভাবে মুক্ত। মানুষের সার্বিক কল্যাণ বিবেচনা করেই ইমামগণ (আ.) পথ নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এ পথ নির্দেশনা মানুষের জন্য কেবল পরকালে নয় পার্থিব জীবনেও অনন্ত কল্যাণ বয়ে আনে। কেননা তাদের এ নির্দেশনা। ঐশী জ্ঞানের সাথে সম্পর্ক যুক্ত।
আমরা এখন নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)-এর পবিত্র বাণীসমূহ থেকে কিছু নমুনা তুলে ধরব। আশাকরি, এ পথনির্দেশনা থেকে আমরাও উপকৃত হতে পারবো।
(১) যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং মানুষের মুখাপেক্ষী না হয়, মানুষ তার প্রতি নির্ভরশীল হয়। আর যে ব্যক্তি সাবধানতা অবল¤¦ন করে সে মানুষের প্রিয়ভাজন হয় (নুরুল আবসার পৃঃ ১৮০)।
(২) মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তির মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ কারে (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ পৃঃ ২৯০)।
(৩) যা সে নিজের জন্য অপছন্দ করে, কারো প্রতি ঐরূপ আচরণ না করাই হল পরিপূর্ণ মহানুভবতা (নূরুল আবসার পৃঃ ১৮০)।
(৪) যে কর্মের সময় এখনো আসেনি তার জন্য তাড়াহুড়া করনা, করলে অনুতপ্ত হবে। আকাশচুম্বি আশা-আকাঙ্খা করনা, কেননা, তার মাধ্যমে অন্তর কঠিন হয়। দূর্বল- অক্ষমদের প্রতি দয়া কর এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা কর (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ পৃঃ ২৯২)।
(৫) যে ব্যক্তি মন্দ কাজের প্রশংসা করে সে ঐ মন্দ কাজেরই অংশীদার (নূরুল আবসার পৃঃ ১৮০)।
(৬) যে ব্যক্তি অত্যাচার করে ও যে তাকে সাহায্য করে আর যদি কোন ব্যক্তি ঐ অত্যাচারের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে প্রত্যেকেই সমান অত্যাচারীর (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ পৃঃ ২৯১)।
(৭) যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইকে গোপনে উপদেশ দিল সে তাকে অলংকৃত করল। আর যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইকে প্রকাশ্যে নসিহত করল সে তার সামাজিক ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে দিল (নূরুল আবসার পৃঃ ১৮০ )।
(৮) অন্তরে আল্লাহকে স্মরণ করা, অমনোযোগের সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর কার্যে নিয়োজিত করার চেয়ে বেশী মুল্যবান (আল ফূসুলুল মোহেম্মাহ পৃঃ ২৮৯)।
(৯) অত্যাচারের দিন অত্যাচারিতের যতটা কষ্ট, [কেয়ামতে] ন্যায়বিচারের দিন অত্যাচারীর জন্য থাকবে তার চেয়ে বেশী যন্ত্রণা (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ পৃঃ ২৯১)।
(১০) কেয়ামতের দিন মুসলমানদের কৃতকর্মের বিচার তাদের সুন্দর আচারÑব্যবহার দ্বারা শুরু করা হবে (নূরুল আবসার পৃঃ ১৮০)।
(১১) তিনটি জিনিসের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে ঃ (১)আল্লাহর কাছে অধিক ক্ষমা প্রার্থণা করা। (২) মানুষের সাথে বিনয়ী আচরণ। (৩) অধিক দান করা। আর এ তিনটি বৈশিষ্ট্য কারো মধ্যে থাকলে সে কখনোই অনুতপ্ত হবে না। (ক) কোন কাজে অস্থির না হওয়া। (খ) পরামর্শ করে কাজ করা এবং (গ)আল্লাহর উপর ভরসা †রখে কাজ শুরু করা (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ ২৯১)।
(১২) যে ব্যক্তি মন্দলোকের প্রতি আশাবাদী হয় তার এ অপরাধের নূন্যতম শাস্তি হচ্ছে বঞ্চনা (নূরুল আবসার পৃঃ ১৮১)।
(১৩) যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো প্রতি আশাবাদী হয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে ঐ ব্যক্তির উপর ছেড়ে দেন। আর যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত জ্ঞান ও তথ্য ছাড়াই কোন কাজ সম্পাদন করে সে কাজে সুফলের চেয়ে কুফলই বেশী (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ পৃঃ ২৮৯)।
(১৪) সৎকর্মশীল ব্যক্তির ভালো কাজ করার প্রয়োজনীয়তা, অভাবগ্রস্থদের [ভিক্ষার প্রয়োজনীয়তার] চেয়ে বেশী। কেননা, অন্যেও উপকার ও বদান্যতা তাদের জন্যে পুরস্কার, যা গৌরব এবং সুখ্যাতি বয়ে আনে। সুতরাং সৎকর্মশীল মানুষেরা যখনই কোন সেবামূলক কাজ করেন, মূলতঃ প্রথমে নিজের প্রতিই কল্যাণ করেন (নূরুল আবসার পৃঃ ১৮০)।
(১৫) সচ্চরিত্র দারিদ্রের অলংকার আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ (আল্লাহর প্রতি শোকর) স¤পদশালীর অলংকার। বিপদাপদের অলংকার হল ধৈয্য। নমনীয়তা মহত্বের অলংকার। ভাষার প্রাঞ্জলতা (দক্ষতা) বক্তব্যের অলংকার। সংরক্ষণ এবং মুখস্থ করা রেওয়ায়েতের (হাদিসের) অলংকার। সৌজন্যবোধ জ্ঞানের (ভদ্রতার) অলংকার। শিষ্টাচার বুদ্ধিমত্তার অলংকার। হাসি-খুশী (আনন্দচিত্ত) দয়াশীলতা এবং মহানুভবতার অলংকার। কল্যান কামিতা বদান্যতার অলংকার। মনোযোগ এবং আন্তরিকতা নামাজের অলংকার। অনর্থক কাজ পরিত্যাগ করা খোদাভীরুতা ও পরহেজগারীর অলংকার (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ পৃঃ ২৯১)।
(১৬) যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখবে এবং তাঁর উপর নির্ভর করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং সকল শত্র“তা থেকে সংরক্ষন করবেন (নূরুল আবসার পৃঃ ১৮০)।
(১৭) ধর্ম হল সম্মান। জ্ঞান হল ঐশ্বর্য (গুপ্তসম্পদ)। নীরবতা হল নূর। কোন কিছুই বিদআতের ন্যায় ধর্মকে ধ্বংস করে না। মানুষের জন্য কোন কিছুই লোভের চেয়ে খারাপ নেই। সৎ প্রশাসনের দ্বারা মানুষ (জনগণ) সংশোধিত হয়ে থাকে। দোয়া এবং প্রার্থনার মাধ্যমে বিপদাপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ পৃঃ ২৯০)।
(১৮) বিপর্যয় এবং মুছিবতে ধৈর্যধারণ, তার শত্র“র জন্যে মুছিবত স্বরূপ। কেননা সে (দুশমন) অন্যের দুঃ†খ তিরস্কার এবং আনন্দ প্রকাশ করতে চায় (নুরুল আবসার পৃ ঃ ২৯০)।
(১৯) কিরূপে সম্ভব যে, আল্লাহ তায়ালা যার পৃষ্টপোষক সে ধ্বংস হয়ে যাবে! আর কিরূপে সম্ভব আল্লাহ তায়লা যার পিছু ধাওয়া করছে সে নিস্কৃতি পাবে (আল ফুসুলুল মোহেম্মাহ পৃঃ ২৮৯)।
(২০) এক ব্যক্তি ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর কাছে অনুরোধ করল, আমাকে সংক্ষেপে যথাযথ উপদেশ দান করুন। ইমাম জাওয়াদ (আ.) বললেন: “নিজেকে সেই সকল কর্ম থেকে বিরত রাখ, যা দুনিয়াতে অপমান ও আখেরাতে আযাবের (শাস্তির) কারণ (আহকাকুল হাক খন্ড ১২, পৃঃ ৪৩৯)।
©somewhere in net ltd.