![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইমাম নাক্কী(আঃ)
বইঃ১২ ইমামের(আঃ) জীবনী,
অনুবাদকঃমীর আশরাফুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম সামিউল হক,হুজ্জাতুল ইসলাম মাইনুদ্দিন আহমেদ.........
সামেরায় ইমাম দাওয়াত ঃ
সমাজে ইমামগণের (আ.) অনিবার্য প্রভাব এবং তাঁদের প্রতি জনসাধারনের আকর্ষণের কারণেই অত্যাচারী খলিফারা ভয় পেত এবং ইমামগণকে (আ.) স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধা প্রদান করত। মুতাওয়াক্কিলের ক্ষেত্রে এ ভীতি ছাড়াও নবী পরিবারের প্রতি যে বিশেষ শত্র“তা ও হিংসা ছিল, তাও তার কঠোর হওয়ার এক মুখ্য কারণ। আর একারণেই ইমাম হাদীকে (আ.) মদীনা থেকে সামেররাতে নিয়ে আসে। যেন ইমামকে (আ.) নিকট থেকে স্বীয় নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারে। সে ২৪৩ হিজরিতে ইমাম হাদীকে (আ.) সম্মানের সাথে মদীনা থেকে সামেররাতে নির্বাসন দিয়েছিল এবং ইমামকে সামরিক ঘাটির পাশে থাকার ব্যবস্থা করেছিল। তাঁকে জীবনের শেষ লগ্ন (অর্থাৎ ২৫৪হিঃ) পর্যন্ত সেখানেই থাকতে বাধ্য করেছিল। সে ইমামকে (আ.) কঠোর নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখত এবং তার পরবর্তী খলিফারাও মহান ইমামকে (আ.) তাঁর শাহাদাত পর্যন্ত বিশেষ নিয়ন্ত্রনে রেখেছিল।
ইমাম হাদী (আ.) এর নির্বাসনের ঘটনাটি এরূপ ঃ মুতাওয়াক্কিলের খেলাফত কালে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি মদীনায় সামরিক পদাধিকারী ও নামাজের দায়িত্বশীল ছিল। সে ইমাম হাদী (আ.)-এর প্রতি অত্যাচার করত এবং মুতাওয়াক্কিলের কাছে ইমামের (আ.) কুৎসা রটাত। ইমাম হাদী (আ.) ঘটনাটি জানতে পেরে এক পত্রে আব্দুল−াহ ইবনে মুহাম্মাদের মিথ্যাচার ও দুশমনি স¤পর্কে মুতাওয়াক্কিলকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। সে চিঠির উত্তরে ইমামকে (আ.) সম্মানের সাথে সামেররাতে নিয়ে আসার দাওয়াত পাঠিয়েছিল। চিঠির উত্তরটি নিন্মরূপ ঃ
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
নিশ্চয় আমীর আপনার মর্যাদাকে উপলদ্ধি করেন। তিনি আপনার সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে চান এবং আপনার অধিকার ন্যায্য বলে মনে করেন। আমীর, আব্দুল−াহ ইবনে মুহাম্মদকে আপনার মর্যাদার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন, আপনার প্রতি বেয়াদবী এবং দোষারোপ করার জন্য পদচ্যুত করলেন। আমীর জানেন যে আপনি এসকল অভিযোগ থেকে সম্পুর্ণ মুক্ত এবং আপনি আপনার কথা ও কর্মে সত্যবাদী। আর আপনার ব্যাপারে যে সকল মিথ্যারোপ করা হয়েছে, আপনি সে সকল বিষয়ে নিজেকে লিপ্ত করেননি। তিনি তার স্থানে মুহাম্মদ ইবনে ফযলকে নিয়োগ দিয়েছেন এবং তাকে আপনার প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং আপনার সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ মেনে চলার আদেশ দিয়েছেন। তবে আমীর আপনার প্রতি অনুরক্ত এবং আপনার সাথে নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে চান। অতএব যদি আপনিও তার সাথে সাক্ষাৎ ও তার সাথে অবস্থান করতে চান, তাহলে আপনি, আপনার পরিবার এবং যাদেরকে পছন্দ করেন তাদেরকে নিয়ে সুবিধামত সময়ে আমাদের কাছে চলে আসুন।
সফরকালে পথিমধ্যে বিরতির স্থান এবং পথ নির্বাচন আপনার ইচ্ছার উপর ন্যাস্ত করা হল। হারেছকে কিছু সৈন্য সহ পাঠানো হয়েছে আপনি চাইলে তাদেরকে সাথে রাখতে পারেন এবং তাকে আপনার নির্দেশ মেনে চলার আদেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আমীরের সাথে মোলাকাত করার জন্যে আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করুন। তার নিকট তার ভ্রাতা, সন্তান এমনকি তার পরিবারের কেউই আপনার চেয়ে অধিক প্রিয় নয়। ওয়াস সালাম।
নিঃসন্দেহে ইমাম হাদী (আ.) মুতাওয়াক্কিলের দুরভীসন্ধি স¤পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। কিন্তু সামেররাতে যাওয়া ছাড়া ইমামের (আ.) আর †কান উপায় ছিল না, †কননা তার দাওয়াত গ্রহন না করা মিথ্যাচারিদের জন্যে একটি দলিল হত। আর এভাবে মুতাওয়াক্কিল বেশী উত্তেজিত হত এবং সে এটাকে একটি বৃহৎ অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করত। ইমাম হাদী (আ.) যে উপায়ান্তর না দেখে, বাধ্য হয়ে সামেররাতে এসেছিলেন তার স্পষ্ট দলিল হল এই যে, পরবর্তীতে তিনি নিজেই বলেন ঃ “আমাকে জোরপুর্বক মদীনা থেকে সামেররাতে আনা হয়েছে।”
যাহোক ইমাম হাদী (আ.) চিঠি পেয়ে সামেররার উদ্দেশ্যে রওনা করেন এবং ইয়াহিয়া ইবনে হারছামাও তাঁর সাথে ছিল। ইমাম সামেররাতে পৌছালে মুতাওয়াক্কিল সেদিন তাঁকে শহরে প্রবেশ করার অনুমতি না দিয়ে ‘খানুস সায়ালিক’ নামক এক অনুপযুক্ত স্থানে (যেখানে ভিক্ষুকরা থাকত) থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। সে দিনটি ইমাম (আ.) সেখানেই অবস্থান করেছিলেন। পরদিন মুতাওয়াক্কিল একটি পৃথক গৃহ ইমামের জন্য বরাদ্দ করল এবং ইমামকে (আ.) সেখানে স্থানান্তরিত করল। সে বাহ্যিকভাবে ইমামকে (আ.) শ্রদ্ধা করলেও গোপনে ইমামের (আ.) বদনাম করত এবং সে তাঁর ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে ক্ষমতা তার ছিল না।
সালেহ ইবনে সাঈদ বলেন ঃ ইমাম হাদী (আ.) যেদিন ‘খানুস সায়ালিকে’ প্রবেশ করেন, আমি তাঁর খেদমতে পৌছে নিবেদন করলাম ঃ আমার জীবন আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, এই অত্যাচারী (মুতাওয়াক্কিল) সকল ক্ষেত্রে আপনার নুর নিভিয়ে দিতে চায় এবং আপনার মর্যাদাকে অগ্রাহ্য করতে চায়। আর সে কারণেই আপনাকে এই নিন্মমানের সরাইখানায় (যেখানে ফকিররা থাকে) উঠিয়েছে। ইমাম হাদী (আ.) একদিকে ইশারা করে বলেন ঃ ওহে সাঈদ ঐখানটাতে দেখ। আমি চেয়ে দেখলাম একটি সুসজ্জিত বাগান যা ছিল বিভিন্ন প্রকার ফলে পরিপুর্ণ, প্রবাহিত ঝর্ণা ধারা, বেহেশতি হুর ও গেলমান, এদৃশ্য †দখে আমি আশ্চর্য বোধ করলাম এবং দিশেহারা হয়ে গেলাম।
ইমাম হাদী (আ.) বললেন ঃ আমরা যেখানেই থাকি এগুলো আমাদের খেদমতে নিয়োজিত থাকে। হে ইবনে সাঈদ আমরা খানুস সায়ালিকে থাকি না। ইমাম হাদী (আ.) সামেররাতে অবস্থান কালে অত্যন্ত কষ্ট ভোগ করেছিলেন। বিশেষ করে মুতাওয়াক্কিলের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক হুমকি ও সমূহ বিপদের আশংকায় ছিলেন। নিন্মে বর্ণিত ঘটনাবলী সামেররাতে থাকাকালীন সময়ে ইমামের (আ.) দূর্বিসহ অবস্থার এবং অত্যাচারী শাসকদের অত্যাচারের মোকাবেলায় তাঁর ধৈর্য ও অবিচলতার প্রমাণ বহন করে। সাকার ইবনে আবি দুলফ বলেন ঃ ইমাম হাদীকে (আ.) সামেররাতে আনা হলে আমি তাঁর অবস্থা স¤পর্কে জানতে গোলাম। মুতাওয়াক্কিলের প্রহরী যাররাফী আমাকে †দখে বলল এদিকে এস, তার কাছে গেলে জিজ্ঞাসা করল ঃ কী জন্যে এসেছ? বললাম ঃ কল্যাণ কাজে এসেছি। বলল ঃ বস। কিন্তু ভয় লাগছিল এবং মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম ইমামের (আ.) সাথে দেখা করতে এ†স হয়ত ভুল করেছি, জানিনা আমার অদৃষ্টে কী আছে! যাররাফী লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে বলল ঃ কী দরকার এবং কিসের জন্যে এসেছ? বললাম ঃ শুভ কাজের জন্যে এসেছি। বলল ঃ মনে হয়, †তামার মাওলার খবর নিতে এসেছ। বললাম ঃ আমার মাওলা কে? খলিফা আমার মাওলা! বলল ঃ থাম, তোমার মাওলা সঠিক পথে আছে, ভয় করনা, কেননা আমিও তোমার বিশ্বাসে বিশ্বাসী এবং তাঁকে (ইমাম হাদীকে আ.) ইমাম হিসাবে মানি। আমি আল্লাহর শোকর করলাম এবং সে বলল ঃ তুমি কি তাঁর কাছে যেতে চাও?
বললাম ঃ হ্যাঁ। বলল ঃ কিছু সময় অপেক্ষা কর, সংবাদ বাহক চলে যাক তার পর। সংবাদ বাহক চলে গেলে যাররাফী তার গোলামকে বলল ঃ এই লোকটাকে যেখানে ঐ আলাভী (অর্থাৎ ইমাম হাদী আ.) বন্দী আছে নিয়ে যাও। ইমামের খেদমতে পৌছে দেখলাম তিনি একটি পাটির উপর বসে আছেন এবং তাঁর সামনে একটি কবর খোড়া আছে। সালাম করলাম, ইমাম (আ.) জবাব দিয়ে বসতে বললেন। বসলাম, ইমাম হাদী (আ.) জিজ্ঞাসা করলেন কেন এসেছে?
নিবেদন করলাম ঃ আপনার অবস্থা স¤পর্কে জানতে এসেছি। আর ঐ কবরের দিকে চেয়ে কেদে ফেললাম। ইমাম (আ.) বললেন ঃ কেদনা, কেননা সে বর্তমানে আমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।
আমি আল্লাহর প্রশংসা করলাম। অতঃপর একটি হাদীসের অর্থ জিজ্ঞাসা করলাম। ইমাম (আ.) জবাব দিলেন এবং বললেন আমাকে একা থাকতে দাও। কেননা এখানে থাকলে হয়ত তোমার ক্ষতি হতে পারে।
আহলে সুন্নতের বিশিষ্ট আলেম ইবনে জাওযী বলেন ঃ একবার কিছু দুষ্ট †লাক মুতাওয়াক্কিলের কাছে ইমাম হাদী (আ.) স¤পর্কে মিথ্যা রটনা করল যে, তাঁর ঘরে অস্ত্রসস্ত্র কিছু লেখাজোকা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম আছে, যা শিয়ারা কোম থেকে পাঠিয়েছে; আর তিনি হুকুমতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে প্রস্তুত।
মুতাওয়াক্কিল একদল গোয়েন্দা পাঠাল, তারা রাত্রে ইমামের (আ.) ঘরে প্রবেশ করে সর্বত্র খোজাখুঁজি করে কোথাও কিছু পেল না, বরং দেখল ইমাম হাদী (আ.) মেঝেতে বসে ইবাদতে মশগুল আছেন এবং কোরআন তেলাওয়াত করছেন। ইমামকে (আ.) ঐ অবস্থায় মুতাওয়াক্কিলের কাছে নিয়ে গেল। আর তাকে বলল ঃ ইমামের (আ.) ঘরে কিছুই পাইনি এবং তাঁকে দেখলাম কেবলামুখী হয়ে কোরান তেলাওয়াত করতে। মুতাওয়াক্কিল ইমামকে (আ.) দেখে তাঁর মর্যাদা ও বিরাট ভাবমূর্তী লক্ষ্য করে নিজের অজান্তেই তাঁকে সম্মান জানাল এবং ইমামকে (আ.) নিজের পাশে বসাল। আর তার হাতে যে শরাবের পেয়ালা ছিল, তা ইমামের (আ.) দিকে বাড়িয়ে দিল। ইমাম হাদী (আ.) বললেন ঃ আমার রক্তÑমাংস এই সকল অপবিত্র দ্রব্য দ্বারা কখনোই মিশ্রিত হয়নি। কাজেই আমাকে অব্যাহতি দাও। মুতাওয়াক্কিল আর পিড়াপিড়ি না করে বলল ঃ একটা কবিতা বলুন। ইমাম হাদী (আ.) বললেন ঃ আমার তেমন কোন কবিতা মুখস্থ নেই। বলল ঃ অবশ্যই বলতে হবে। ইমম হাদী (আ.) এই কবিতাটি পাঠ করলেন ঃ
“পার্বত্য এলাকার পাহাড় চুড়ায় রাত্রি প্রভাত করল এবং শক্তিশালী ব্যক্তিরা তাদেরকে পাহারা দিচ্ছিল, কিন্তু পাহাড়ের সর্বোচ্চ শিখর তাদেরকে (মৃত্যুর হাত †থকে) রক্ষা করতে পারল না।”
“সম্মানের পর নিরাপদ স্থান থেকে নিচে নামিয়ে তাদেরকে গর্তের মধ্যে (কবরের মধ্যে) স্থান দিল। আর তা কতইনা অপছন্দনীয় আশ্রয় স্থল।”
“যখন সমাধিস্থ করা হল, আহব্বানকারী চিৎকার করে বলল ঃ কোথায় আছে সেই দামী জাঁকাল বাজুবন্ধ, মুকুট (তাজ) এবং জাকজমকপূর্ণ পরিচ্ছদ?”
“কোথায় আছে সেই সকল লাজুক এবং বিলাসপূর্ণ চেহারা, যাদের সম্মানে পর্দা টাঙ্গানো হত। (যাদের প্রাসাদ, ঝালোর এবং দারওয়ান ছিল)?”
“তাদের পরিবর্তে কবর জবাব দিল ঃ সেই সকল চেহারার উপর এখন কীটÑপতঙ্গরা বিচরন করছে।”
ইমাম হাদী (আ.)-এর প্রাণ কাড়া বাণী মুতাওয়াক্কিলের উপর এতই প্রভাব ফেলেছিল যে সে কেদে ফেলেছিল এবং তার শ্মশ্র“ †বয়ে অশ্র“ ঝরছিল। উপস্থিত সকলেও কাঁদছিল। অতঃপর মুতাওয়াক্কিল শরাবের বিছানা গুটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিল এবং ইমাম হাদীকে (আ.) চার হাজার দেরহাম উপহার দিল।
ইমামের গৃহে অপর এক হামলা ঃ
মুতাওয়াক্কিল এক কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পর ইমাম হাদী (আ.)-এর কাছে চিকিৎসার পরামর্শ চায়, সে ইমামের (আ.) পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে ওথে এবং পাঁচশত দেরহাম ইমামকে (আ.) হাদিয়া সরূপ পাঠিয়েছিল। তার মাতা ও মানত মোতাবেক দশহাজার দিনারের একটি পুটলি ইমাম হাদী (আ.)-এর খেদমতে পাঠিয়েছিল। এ ঘটনার কিছুদিন পর বাতহায়ী নামে এক দুষ্ট †লাক মুতাওয়াক্কিলের কাছে মিথ্যা প্রচার করে যে, ইমাম হাদী (আ.) যুদ্ধের জন্য টাকা-পয়সা, অস্ত্র-সস্ত্র এবং সৈন্য-সামন্ত জোগাড় করেছেন। মুতাওয়াক্কিল সাঈদ হাজাবকে নির্দেশ দিল কিছু সৈন্য এবং শক্তিশালী যোদ্ধাদেরকে নিয়ে আতর্কিত ইমামের বাসায় হামলা কর, আর যা কিছু পাবে তা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে এস।
সাঈদ বলে ঃ যখন সকলে ঘুমিয়ে পড়েছিল, এক দল যুদ্ধবাজ নিয়ে ছাদের উপর দিয়ে হযরতের বাসার দিকে গেলাম। অতঃপর চেরাগ ও মশাল নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলাম। সমস্ত ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে দু’টি পুটলি, যার একটি স্বর্ণ মুদ্রায় পূর্ণ ছিল এবং তাতে মোহর মারা ছিল, অপরটিতে সামান্য কিছু মুদ্রা ছিল। আর পুরাতন গেলাফে ঝোলান একটি তলোয়ার ব্যতীত কিছুই পেলাম না। ইমামকে (আ.) †দখলাম একটি পাটিতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন, তাঁর গায়ে একটি পশমী জুব্বা ও মাথায় একটি টুপি ছিল। তিনি আমাদের প্রতি কোন ভ্রক্ষেপই করলেন না। দু’পুটলি মুদ্রা ও তলোয়ারটি মুতাওয়াক্কিলের কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম স¤পদ ও টাকা পয়সা বলতে যা পেয়েছি তা হল এই। মুতাওয়াক্কিল যে পুটলিটির মধ্যে তার মায়ের সিল ছিল তা দেখে বিষয়টি তার কাছে জানতে চাইল। তার মা বলল Ñতুই যখন অসুস্থ ছিলি আমি মানত করেছিলাম যদি আল্লাহ তোকে সুস্থ করেন তাহলে আবুল হাসানকে (ইমাম হাদী আ.) দশ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা দিব। তোর সুস্থ হওয়ার পর আমি সে মানত পূর্ণ করি। মুতাওয়াক্কিল আরও পাঁচশত দিনার দিয়ে সাঈদ হাজাবকে বলল ঃ দু’টি পুটলি এবং তলোয়ার সহ এ পাঁচশত দিনার ইমামকে (আ.) ফিরিয়ে দিয়ে এস এবং আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিও।
সাঈদ বলে ঃ ঐ গুলিকে ফিরিয়ে দিয়ে নিবেদন করলাম যে, আমির ক্ষমা †চয়েছে। আর আমাকেও ক্ষমা করবেন কেননা আমি কর্মচারী, আমিরের হুকুম অমান্য করার সাধ্য আমার নেই। ইমাম (আ.) বললেন ঃ অচিরেই অত্যাচারীগণ উপলদ্ধি করতে পারবে যে কোথায় প্রত্যাবর্তণ করতে হইবে। অবশেষে মুতাওয়াক্কিলের লাঞ্ছনাকর হুকুমতের অবসান ঘটল। তার পুত্র মুনতাসিরের উষ্কানিতে একদল তুর্কী সেনা তাকে ও তার উজির ফাতহ ইবনে খাকানকে যখন তারা আমোদ প্রমোদে মত্ত ছিল হত্যা করেছিল। আর এভাবে পৃথিবী তার পংকিলতাপূর্ণ অস্তিত্ব থেকে পবিত্র হল। মুনতাসির তার পরের দিন খেলাফত গ্রহন করে এবং তার বাবার কয়েকটি প্রাসাদ ধ্বংশ করার আদেশ দেয়। সে আলাভীদের কোন ক্ষতি করত না এবং তাদের প্রতি সহানুভুতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করত। সে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর রওজা মোবারক যিয়ারত করার অনুমতি দিয়েছিল এবং তাদের প্রতি সদয় অচরণ করেছিল। বাগে ফাদাক ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল এবং তাদের ওয়াকফ করা স¤পত্তি সমূহকে ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ প্রদান করেছিল। মুনতাসিরের খেলাফত কাল মাত্র ছয় মাস স্থায়ী হয়েছিল এবং সে ২৪৮ হিজরীতে মারা গিয়েছিল। মুনতাসিরের পর তার চাচাত ভাই মুসতাঈন খেলাফত গ্রহণ করে এবং পূর্ববর্তী অত্যাচারী খলিফাদের নীতি গ্রহন করে। তার হুকুমত কালে আলাভীদের একটি দল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এবং সকলেই মৃত্যুবরণ করেছিল। মুসতাঈন তার তুর্কী সৈন্যদের আন্দোলন দমন করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে আর এ সুযোগে বিদ্রোহীরা †মা’তাযকে বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে তার হাতে বয়াত করে। এভাবে মো’তাযের ক্ষমতা ও প্রভাব তুঙ্গে ওঠে এবং মুসতাঈন তার সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হয়। মো’তায বাহ্যিক ভাবে সন্ধি মেনে নিয়ে মুসতাঈনকে সামেররাতে ডেকে পাঠায় এবং তাকে পথিমধ্যে হত্যা করার নির্দেশ †দয়।
মুসতাঈন তার আত্মীয় স্বজন এবং কিছু তুর্কী সেনাদের আমোদ প্রমোদের জন্য বাইতুলমাল খুলে রেখেছিল। অপরদিকে আমাদের মাসুম ইমামগণের (আ.) সাথে অতিশয় অন্যায় আচরন করত। কিছু বর্ণনা অনুযায়ী মুসতাঈন ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর অভিশাপে ধ্বংশ হয়।
মুসতাঈনের পর মুতাওয়াক্কিলের পুত্র মো’তায খেলাফত গ্রহন করে। আলাভীদের সাথে তার আচরণ অতিশয় মন্দ ছিল। তার হুকুমতকালে বহুসংখ্যক আলাভীকে হত্যা করা হয়েছিল কিংবা বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। আর ইমাম হাদীও (আ.) তার সময়ই শাহাদাত বরণ করেছিলেন।
মো’তায অবশেষে তুর্কী সর্দার ও অন্যান্যদের বিদ্রোহের সম্মুখীন হয়েছিল এবং বিদ্রোহীরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে মারধর করার পর ভূগর্ভস্থ ঠান্ডা ঘরে আটকে রেখেছিল এবং সেখানেই সে নিহত হয়েছিল।
ইমামের বন্দীদশা এবং শাহাদাত ঃ
যে কোন চিন্তাবিদই ইমাম হাদী (আ.)-এর জীবনীতে দৃষ্টিপাত করলে উপলদ্ধি করতে পারবেন যে, ঐ মহান ব্যক্তিত্ব তাঁর সমস্ত জীবনে কঠোর সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন ছিলেন। তবে শুধুমাত্র ইমাম হাদী (আ.)-এর সময়ই এ অবস্থা সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং বনী উমাইয়া এবং আব্বাসীয় শাসকদের †গাটা শাসনামলে (সাময়িক বিরতি ছাড়া) পরিস্থিতি একইরূপ ছিল। জবর দখলকারী খলিফারা সমাজ ও সমাজের কল্যাণের প্রতি ভ্র“ক্ষেপ করতনা এবং জনগণকে তাদের ভোগ বিলাসের পণ্য হিসাবে মনে করত। অত্যাচারী খলিফাদের শাসন ব্যবস্থা এতই কঠোর ও ভিতিপ্রদ ছিল যে, জনগণ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার এবং পবিত্র ইমামগণের (আ.) নেতৃত্ব থেকে লাভবান হওয়ার ও সঠিক ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্টা করার শক্তি ও সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিল। আর একারণেই উম্মতের সাথে ইমামগণের (আ.) সম্পর্ক খুবই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। যেমনটি পুর্বেই বলা হয়েছে যে, সমসাময়িক কালের শাসকবর্গ ইমাম হাদীকে (আ.) জোর পুর্বক মদীনা থেকে সামেররাতে নিয়ে এসেছিল এবং মহান ইমামকে (আ.) সম্পূর্ণরূপে তাদের নিয়ন্ত্রনে রেখেছিল। এতদসত্বেও ইমাম হাদী (আ.) সকল কষ্টÑক্লেশ সহ্য করেছিলেন এবং কখনোই অত্যাচারীদের সাথে ন্যূনতম সমঝোতা করেননি। এটা সুশপষ্ট যে, ইমামের ঐশী ব্যক্তিত্ব, সামাজিক অবস্থান এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধাচারণ ও অন্যায়ের পথে সহযোগিতা না করা, অত্যাচারী শাসকদের জন্য অপ্রীতিকর ও ভীতিপ্রদ ছিল। আব্বাসীয়রা সর্বদা এবিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল। অবশেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে †পঁŠছল। আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করার অর্থাৎ মহান ইমামকে (আ.) শহীদ করার সিদ্ধান্ত নিল। আর এভাবে ইমাম হাদী (আ.)ও তাঁর পবিত্র পূর্বপুরুষগণের ন্যায় স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেননি। †মা’তাসেমের খেলাফতকালে তাঁকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে , ২৫৪ হিজরীর ৩রা রজব মাসে শাহাদাত বরণ করেন। মহান ইমামকে তাঁর নিজ গৃহে সমাহিত করা হয়। মো’তায ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা সর্বদা নিজেদেরকে ইমামের (আ.) বন্ধুরূপে উপাস্থাপন করার ভান করত। ইমামের (আ.) দাফনÑকাফন ও জানাজার নামাজে অংশগ্রহন করেছিল, নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা চালিয়েছিল। আর এভাবে জনগণকে ধোকা দিয়ে নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শীয়া মতানুসারে ইমামের জানাজার নামাজ ইমামই পড়বেন, আর সে কারণেই ইমামের (আ.) পবিত্র জানাজাকে বাইরে নেওয়ার পূর্বেই ইমাম হাসান আসকারী (আ.) তাঁর শহীদ পিতার জানাজার নামাজ পড়েন। অতঃপর জানাজা বাইরে আনা হলে মো’তায তার ভাই আহমাদকে, আবী আহমদ সড়কে ইমামের জানাজার নামাজ পড়ার জন্য পাঠায়। মহান ইমামের (আ.) জানাজায় অজস্র মানুষ অংশ নিয়েছিল এবং ইমামের শোকে অঝরে কেদেছিল। নামাজের অনুষ্টান শেষে ইমামের (আ.) জানাজাকে বাসায় আনা হয় এবং সেখানেই সমাহিত করা হয়। “তাঁর ও তাঁর পবিত্র পূর্বপুরুষগণের প্রতি আল্লাহর দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক” ।
চলবে.........
©somewhere in net ltd.