![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইমাম হাসান (আ.)
মহানবী রাসুলে আকরাম (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র, আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমার (আ.) প্রথম সন্তান তৃতীয় হিজরীর পবিত্র রমজান মাসের পঞ্চদশ তারিখে এ ধরার বুকে পা ফেলেন। নবী করীম (সা.) অভিনন্দন জ্ঞাপনের অভিপ্রায়ে হযরত আলীর গৃহে আগমন করেন। তিনি এ নবজাত শিশুর নাম আল্লাহর পক্ষ থেকে রাখেন হাসান।
নবীর সাথে ইমাম হাসান ঃ
প্রায় সাত বৎসর নবীজীর সাথে তাঁর নাতীর জীবনকাল অতিবাহিত হয়। দয়াল নানা তাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। কত বার তিনি নাতিকে কাঁেধ নিয়ে বল্তেন ঃ “হে প্রভূ, আমি ওকে ভালবাসি। তুমিও ওকে ভালবাসা দান কর।” তিনি আরো বলতেন ঃ “যারা হাসান ও হুসাইনকে ভাল বাসবে তারা আমাকেই ভালবাসলো। আর যারা এ দুজনের সাথে শত্র“তা করবে তারা আমাকেই তাদের শত্র“ হিসাবে গন্য করলো।” “হাসান ও হুসাইন বেহেস্তের যুবকদের নেতা।” ঁিতনি আরো বলেছেন, “আমার এই দ'ুনাতি উভয়ই মুসলমানদের ইমাম বা নেতা (তাগুতী শক্তির বিরুদ্বে) রুখে দাঁড়াক বা না দাঁড়াক।” তিনি এতই মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন, তাঁর রুহ এমন নিষ্কলুস ছিল যে রাসুলে আকরাম (সা.) তাঁকে শৈশবেই অনেক চুক্তি পত্রের মধ্যে স্বাক্ষী হিসেবে মনোনীত করতেন। হযরত ওয়াক্বেদী তার কিতাবে লিখেছেন ঃ “পয়গম্বরে আকরাম (সা.) ছাকিফ নামে এক ব্যক্তির জন্য দায়িত্ব কাধে তুলে নেন। এ বিষয়টা খালিদ বিন সাঈদ লিখেন আর ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.) সে পত্রে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন।” যখন আল্লাহর নির্দেশে পয়গম্বর (সা.) নাজরানের খৃষ্টানদের সাথে মুবাহিলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখনও তিনি ইমাম হাসান; ইমাম হুসাইন, হযরত আলী ও হযরত ফাতিমাকে (আ.) আল্লাহর নির্দেশক্রমে সঙ্গে †নন এবং †সখানে তাঁর উপর তাত্বহীরের আয়াত তাদের পবিত্রতা ও নিষ্পাপতার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়।
পিতার সঙ্গে ইমাম ঃ
ইমাম হাসান (আ.) তাঁর পিতার পথে চলতেন এবং তাঁর সাথে ঐক্যমত পোষণ করতেন। পিতার সাথে তিনিও অত্যাচারীদের সমালোচনা এবং মজলুমদের সমর্থন করতেন। যখন হযরত আবুজর গিফারী (রা.) রাবাযাতে নির্বাসনের নির্দেশপ্রাপ্ত হন তখন হযরত ওসমান আদেশ জারী করেন, কেউ যেন তাকে বিদায় সম্ভাষণ না জানায়। কিন্তু ইমাম হাসান ও তাঁর সাহোদর ভ্রাতা তাঁদের মহান পিতার সাথে সে মুক্তিকামী নির্বাসিত সাহাবীকে বিদায় সম্ভাষণ জানান। আর বিদায় জানানোর মূহুর্তে হযরত ওসমানের শাসনের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং হযরত আবুজারকে ধৈর্য ধারণ ও দৃঢ়তার পরামর্শ দেন। হিজরী ছত্রিশ সনে পিতার সাথে মদীনা হতে বসরায় হযরত আয়েশা ও তালহা-যুবাইর কর্তৃক প্রজ্বলিত উষ্ট্রের যুদ্ধের অগ্নি নির্বাপনের জন্যে আগমন করেন। বসরাতে প্রবেশের পূর্বে তিনি হযরত আলীর নির্দেশে মহাসম্মানিত সাহাবী হযরত আম্মার বিন ইয়াসেরকে সাথে নিয়ে জনগনকে সংঘবদ্ধ করার নিমিত্তে কুফায় যান। অতঃপর জনগনকে সাথে নিয়ে ইমাম আলী (আ.)-কে সাহায্যের জন্যে বসরায় প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি তাঁর সুদৃঢ় ও প্রাঞ্জল বক্তৃতা দ্বারা আবদুল্লাহ বিন যুবাইরের মিথ্যাবুলির দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেন কেননা সে ওসমান হত্যার সাথে হযরত আলী জড়িত বলে প্রচার করতো। তিনি যুদ্ধের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর সহযোগীতা করেন। পরিশেষে বিজয়ী বেশে কুফায় প্রত্যাবর্তন করেন। সিফফিনের যুদ্ধেও তিনি তাঁর পিতার সাথে অসামান্য সহযোগীতা করেছেন। এ যুদ্ধে মুয়াবিয়া তাঁর নিকট আবদুল্লাহ বিন ওমরকে এ কথা বলে পাঠায় যে, “যদি আপনার পিতার অনুসরণ থেকে বিরত থাকেন তাহলে আমরা খেলাফত আপনার স্বপক্ষে ছেড়ে দেবো। কেননা, কোরাইশের লোকজন আপনার পিতার ব্যাপারে তাদের বাপ-দাদাদের হত্যা করার জন্যে বেজার ও অসন্তষ্ট। তবে তারা আপনাকে গ্রহণ করতে কোন আপত্তি করবেন না-------।” ইমাম হাসান (আ.) উত্তরে বলেন ঃ “ক্বোরাইশরা ইসলামের পতাকা ভূলুন্ঠিত করতে দৃঢ়চিত্ত ছিল। তবে আমার বাবা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইসলামের জন্যে তাদের মধ্যেকার অবাধ্য ও রগচটা ব্যক্তিদের হত্যা করে তাদের চক্রান্তকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়েছিল। তাই তারা আমার পিতার সাথে শত্র“তার ঝান্ডা উত্তোলন করেছিল।” তিনি এ যুদ্ধে এক মূহুর্তের জন্যে বাবার উপর থেকে তাঁর সমর্থনের হস্ত সংকুচিত করেননি এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর সাথে সমন্বয় ও সমচিত্তের পরিচয় দিয়েছেন। আর যখন দুই বাহিনীর (হযরত আলী (আ.) ও মুয়াবিয়ার বাহিনী ) পক্ষ থেকে দু’জন মধ্যস্থতার জন্যে মনোনীত হলো এবং পরিশেষে অন্যায়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো,তখন ইমাম হাসান (আ.) তাঁর পিতার নির্দেশে এক অত্যন্ত আবেগময়ী ভাষনে এরূপ বর্ণনা তদেন ঃ “তারা নির্বাচিত হয়েছিলো আল্লাহর কিতাবকে তাদের নফসের কু-প্ররোচনার উপর অগ্রাধিকার দেয়ার জন্যে, কিন্ত তারা এর বিপরীতটি আমল করেছিলো। আর এরকম ব্যাক্তি কখনো মধ্যস্থতাকারী হতে পারে না বরং তারা সকলের নিন্দিত।”
হয়রত আমীরুল মু’মিনীন আলী (আ.) ইন্তেকালের সময় পূর্ব থেকে নির্ধারিত নবী করিম (সা.) এর নির্দেশ মোতাবেক ইমাম হাসানকে তাঁর তখেলাফতের উত্তরাধীকারী হিসেবে মনোনীত করেন। তিনি ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর অন্যান্য সন্তানদের এবং তাঁর উচ্চপদস্থ অনুসারীদের এ বিষয়ে সাক্ষী রাখেন।
চরিত্র পরহেযগারী ঃ
আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিনের প্রতি তাঁর এক বিশেষ অনুরাগ ছিল। কখনো এই আসক্তির বহিঃপ্রকাশ ওযুর সময় অনেকে তাঁর চেহারায় অবলোকন করতেন। যখন তিনি ওযুতে মগ্ন হতেন তখন তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে †যতো, তিনি কম্পিত হতেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো ঃ “আপনি এরকম হন কেন?” উত্তরে তিনি বলেন ঃ “যে বস্তু আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয় তাঁর এরকম অবস্থাই যথোপযুক্ত।” ৬ষ্ট ইমাম থেকে বর্ণিত যে, ইমাম হাসান (আ.) তাঁর যমানার সর্বশ্রেষ্ট আবেদ বা ইবাদতকারী ও মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলেন। আর যখনি তিনি মৃত্যূ ও পূণরুত্থানের কথা স্মরণ করতেন, তখনি ক্রন্দন করতেন এবং বেহাল হয়ে পড়তেন। তিনি পদব্রজে আবার কখনো নগ্ন-পদে পঁচিশ বার আল্লাহর ঘর যিয়ারত করেন।
মহানুভবতা ঃ
একবার তিনি আল্লাহর ঘর যিয়ারতে যান। তৎসময় শুনতে পান যে একজন লোক আল্লাহকে বলছে, “হে খোদা, তুমি আমাকে দশ হাজার দেরহাম দান কর----।” ইমাম তৎক্ষনাৎ বাড়ীতে ফিরে আসেন এবং ঐ ব্যক্তির জন্যে ঐ পরিমান অর্থ প্রেরণ করেন একদিন ইমামের এক দাসী তাকে এক থোকা ফুল উপহার দেয়। ইমাম (আ.) প্রতিদানে সেই দাসীকে মুক্ত করে দিলেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো ঃ “আপনার এমনটি করার কারণ কি?” তখন তিনি উত্তরে বলেন ঃ “আল্লাহ আমাদেরকে এমনিভাবেই প্রশিক্ষন দিয়েছেন।” তিনি পরক্ষনেই নিম্নের আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। “যখন তোমাদেরকে †কান কিছু দান করা হয় তখন তোমরা তার থেকে উত্তম কিছু দান কর।” তিনি তার সংসারে যা কিছু ছিল, এমন কি জুতো পর্যন্ত, তিনি দু’অংশে ভাগ করে আল্লাহর পথে দান করেন।
ধৈর্য ও সহনশীলতা ঃ
এক দিন সিরিয়াবাসী একজন লোক মুয়াবিয়ার উষ্কানিতে ইমামকে যা-তাই গালি-গালাজ করে। তার জবাবে ইমাম কিছুই বল্লেন না। শেষ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিটি চুপ হয়ে গেল। অবশেষে ইমাম মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে সালাম করলেন আর বললেনঃ “ওহে বৃদ্ধ, মনে হচ্ছে তুমি এখানে অসহায়। আমার ধারণা তুমি কোন ভুলের মধ্যে আছো। যদি তুমি আমাদের সন্তুষ্টি চাও তাহলে তা করবো। আর যদি তুমি অন্য কিছু কামনা কর, যদি কোন দিক নির্দেশনার প্রয়োজন মনে কর তোমাকে দিক নির্দেশনা দান করবো। যদি তোমার স্কন্ধে কোন বোঝা থেকে থাকে তাহলে তা তুলে নিবো। যদি তুমি ক্ষুধার্ত হও তাহলে তোমাকে পেট ভরে খেতে দিবো। যদি তুমি কোন কিছুর প্রয়োজন অনুভব কর, তোমার প্রয়োজন মিটাবো। তোমার যে কোন কাজের জন্যে আমি প্রস্তুত আছি। আর যদি তুমি আমাদের †মহমান হও তা’হলে আরামে থাকতে পারবে, কেননা তোমাদের আপ্যায়নের জন্যে সকল উপকরণের যোগাড় আছে।” লোকটি লজ্জিত হয়ে ক্রন্দন শুরু করে দেয়, আর বলে ঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি যমীনের বুকে আল্লাহর খলীফা। আল্লাহ ভাল করেই জানেন যে তাঁর রেসালাত কোথায় নির্ধারণ করতে হয়। আপনি ও আপনার পিতা এখন পর্যন্ত আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃন্য ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু এখন আপনারা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয়। বৃদ্ধ লোকটি সেদিন ইমামের মেহমান হয়েছিল। ইমামের কাছ থেকে ফিরে যাওয়ার সময় সে ইমামের প্রেমিক হয়ে ফিরে তগেলো। “মারওয়ান হাকাম ”--যে ব্যক্তি ইমামকে বিরক্ত ও কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে কোন কিছুই বাকী রাখেনি--সে ইমাম হাসানের (আ.) ইন্তেকালের সময় তাঁর জানাযার মিছিলে অংশ গ্রহণ করে। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) বলেন ঃ আমার ভাইয়ের জীবদ্দশায় তাঁর সাথে আপনি যা মন চেয়েছে তাই করেছেন আর এখন তাঁর জানাযার মিছিলে অংশ গ্রহণ করেছেন এবং কাঁদছেন? মারওয়ান উত্তর দেয়ঃ “যা কিছু করেছি তা এমন এক মহান ব্যক্তির সঙ্গে করেছি যার সহনশীলতা এই পাহাড়ের (মদীনার পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত) চেয়েও অনেক বেশী ছিল।”
খেলাফত ঃ
হিজরী চল্লিশ সনের পবিত্র রমজান মাসের একুশের সায়াহ্নে হযরত আলী (আ.) শাহাদাতের অমৃত সূধা পান করেন। সেদিন প্রভাতে শহরের জামে মসজিদে জনগণ সমবেত হয়েছিল। তখন হযরত ইমাম হাসান (আ.) মিম্বারে আরোহণ করে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষন দান করেন ঃ “গতরাত্রে এক ও অনন্য ব্যক্তি ধরাপৃষ্ট থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেন যিনি পূর্বপুরুষগণ এবং ভবিষ্যত বংশধরদের মাঝে জ্ঞান ও আচরণের ক্ষেত্রে এক ও অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি পয়গম্বরের (সা.) সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন এবং ইসলাম ও মহানবীর (সা.) জীবন রক্ষার্থে আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন। নবী করীম (সা.) বিভিন্ন যুদ্ধে তাকে সেনাপতি হিসেবে প্রেরণ করতেন আর তিনি সর্বদা বিজয়ীর বেশে ফিরে আসতেন। তিনি দুনিয়ার ধন-সম্পদের মধ্যে সাতশত দেরহামের বেশী রেখে যাননি। তাও আবার তাঁর অংশ থেকে অবশিষ্ট যা ছিল তা দিয়ে তাঁর পরিবারের জন্যে একটি গৃহভৃত্য যোগাড় করতে চেয়েছিলেন।”
এই পর্যায়ে ইমাম হাসান ভীষন কাঁদলেন সাথে সাথে জনগণও কাঁদলো। তখন ইমামত যেন তার সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত না হয় তাই তিনি কয়েকটি বাক্য উচ্চারণ করেনঃ “আমি সে-ই পয়গম্বরের সন্তান যিনি ছিলেন সংবাদবাহী এবং ভীতি প্রদর্শনকারী, তিনি আল্লাহর দিকে জনগণকে আহবান জানাতেন। আমি সেই রেসালাতের প্রোজ্জ্বল প্রদীপের শিখা এবং এমন আহলে বাইতের সদস্য যাদের আল্লাহ্তায়ালা সকল ধরনের পাপ-পংকিলতা ও দোষ-ত্র“টি থেকে মুক্ত রেখেছেন। তাছাড়া আমি তাদের-ই অর্ন্তভূক্ত, কোরআনের আয়াত অনুযায়ী যাদেরকে মহব্বত করা ফরজ বলে গণ্য করা হয়েছে ঃ “তোমার উম্মতকে বলে দাও (হে রাসুল), আমি তোমাদের কাছ থেকে আমার রেসালতের পারিশ্রমিক বাবদ কিছু চাইনা। শুধু এতটুকুই কামনা করি যে, তোমরা আমার নিকটতম লোকজনদের (আহলে বাইত) ভালবাসবে।” অতঃপর ইমাম হাসান বসে গেলেন আর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বলেন ঃ “হে লোকসকল! তিনি (ইমাম হাসানের প্রতি ইঙ্গিত) তোমাদের রাসুলের সন্তান এবং আলীর উত্তরাধীকারী আর তোমাদের ইমাম। তোমরা তাঁর হাতে বাইয়্যাত গ্রহণ কর।” তখন জনগণ দলে দলে সামনে এগিয়ে আসে এবং তাঁর হাতে বাইয়্যাত গ্রহণ করে। যখনি মুয়াবিয়া উপরোক্ত ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত হলো তখনি সে কুফা ও বসরাতে সংবাদ সংগ্রহ এবং রিপোর্ট পেশ আর ইমামের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আভ্যন্তরীণভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে কতিপয় গোয়েন্দা প্রেরণ করে। ইমামের নির্দেশে ঐ গোয়েন্দাদের গ্রেফতার করে ইসলামী আইনে তাদের বিচার করা হয়। তিনি মুয়াবিয়াকে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, “গোয়েন্দা ও গুপ্তচর পাঠাও? দৃশ্যতঃ মনে হচ্ছে যে তুমি যুদ্ধকেই বেশী পছন্দ কর। হ্যাঁ! যুদ্ধ অতি নিকটে, অপেক্ষা কর! ইনশাআল্লাহ্।” ইমাম যে সব পত্র মুয়াবিয়াকে্ লেখেন এবং ইবনে আবিল হাদীদ তার গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন তন্মধ্যে একটি হচ্ছে এ রকম ঃ “---- অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে রাসুলের (সা.) ওফাতের পর কোরাইশরা তাঁর উত্তরাধীকারীর পদ নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল এবং তারা নবী করিমের (সা.) গোত্রের লোক বিধায় নিজেদেরকে অন্যান্য আরবদের উপর শ্রেষ্টত্বের আসনে সমাসীন মনে করতো। আর আরবরাও তাই মাথা পেতে নিল। তবে ক্বোরাইশরা নিজেদের ভিতর আমাদের প্রাধান্য ও শ্রেষ্টত্বের পতাকাতলে সমবেত হতে অস্বীকার করে; আমরা যারা সকলের চেয়ে রাসুলের (সা.) নিকটতম লোক এবং আমাদের অধিকার প্রতিষ্টার প্রত্যাশী ছিলাম তাদেরকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিয়ে তারা জুলুম-অত্যাচারের পথ বাছাই করে নিল। আমরা সংঘর্ষ এড়িয়ে চলেছি যেন শত্র“ ও মুখোশধারীরা ইসলামের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে। আজকে (হে মুয়াবিয়া) তোমার ব্যাপারে আমি আশ্চর্যান্বিত যে তুমি এমন এক বিষয়ের দাবীদার যা কোনভাবেই তোমার উপযুক্ত নয়। তুমি না দ্বীনের ক্ষেত্রে কোন উচ্চতর মর্যাদার অধিকারী, না ভাল কোন অবদান রাখতে পেরেছ। তুমি সেই দলের সন্তান যারা পয়গম্বরের (সা.) সাথে যুদ্ধ করেছে। আর তুমি তো †ক্বারাইশদের মধ্যে পয়গম্বরের (সা.) সাথে সর্বাপেক্ষা অধিক শক্রতা পষণকারীর সন্তান। হ্যাঁ, তুমি জেনে রাখ তোমার কর্মের ফলাফল আল্লাহর কাছ †থকে পাবে। †সখানে তুমি †দখতে পাবে †য অবশেষে সফলকাম ও বিজয়ী কে হয়েছে। আল্লাহর কসম, †বশী দিন যাবেনা, টদেখতে না দেখতে †তামার জীবন আয়ু ফুরিয়ে আসবে এবং আল্লাহর সাক্ষাতে পরপারে পাড়ি জমাবে। তখন তিনি †তামাকে †তামার পূর্বের পাঠানো কর্মের ফলাফল ও শাস্তি প্রদান করবেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর †কান যুলুম করেন না। আলী আমাদের মাঝে †নই। তাই জনগণ আমার সাথে বাইয়্যাত করেছে। আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি তিনি †যন আমাকে এমন কিছু না †দন যার অভাব আমি পরকালে অনুভব করবো। যে কারণে আমি †তামার কাছে এ পত্র লিখতে বাধ্য হয়েছি তা হচ্ছে, আমি †যন আল্লাহর কাছে কৈফিয়ত †পশ করতে পারি। যদি তুমিও অন্যান্য মুসলমানদের ন্যায় এ বিষয়টাকে গ্রহণ করে নাও তাহলে ইসলামেরই কল্যান সাধিত হবে। আর এতে তুমি নিজে অন্যদের †চয়ে †বশী উপকৃত হবে। বাতিলের পথে চলো না। তুমিও অপরাপর †লাকদের ন্যায় আমার হাতে বাইয়্যাত গ্রহণ কর! তুমি ভাল করেই জান †য, আমি †তামার †চয়ে অধিক †যাগ্যতার অধিকারী। আল্লাহকে ভয় কর এবং অত্যাচারী জালেমের মধ্যে গণ্য হয়ো না। মুসলমানদের রক্তকে সম্মানজনক বিবেচনা কর আর তুমি যদি আনুগত্য প্রকাশ্যে অস্বীকার কর তা’হলে আমি মুসলমানদের সাথে নিয়ে †তামার দিকে ধাবিত হবো এবং †তামাকে বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড় করাবো †যন আমাদের মধ্যে আল্লাহর বিচার প্রতিষ্টিত হয় †কননা তিনি সবচেয়ে উত্তম মধ্যস্থতাকারী।
মুয়াবিয়া ইমামের পত্রের উত্তর লিখে ঃ “---- এ মুহুর্তে আমার এবং †তামার অবস্থা, আমাদের বংশের পূর্বসূরীদের সাথে আবুবকরের অবস্থার তুলনা করা যায়। অর্থাৎ †যভাবে আবুবকর অধিক অভিজ্ঞতার অযুহাত তুলে †খলাফতের আসন আলীর কাছ †থকে ছিনিয়ে †নয়, সেভাবে আমিও নিজেকে †তামার †চয়ে †বশী †যাগ্যতর মনে করি। যদি আমি জানতাম †য তুমি আমার †থকে অধিক উৎকৃষ্টতর পন্থায় জনগণের স্বার্থে নিবেদিত থাকবে এবং শত্র“র মুখোমুখী হবে তা’হলে †তামার হাতে বাইয়্যাত গ্রহণ করতাম। তবে তুমি জান †য আমি †তামার †চয়ে †বশী অভিজ্ঞ। সুতরাং †তামাকে আমার আনুগত্য করাই অধিক উত্তম। আর আমিও †তামাকে কথা দিচ্ছি মুসলমানদের উপর কর্তৃত্ব আমার পরে †তামার উপরেই বর্তাবে এবং ইরাকের †কাষাগারের সমস্ত সম্পদ ও মালামাল †তামারই থাকবে আর তুমি ইরাকের †য জিলারই রাজস্ব ও আয় চাও আমি †তামার হাতে †সাপর্দ করবো------ ওয়া আস্সালাম।” ক্বোরাইশগণ †য অজুহাতে আলীর দিক †থকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল †সই একই অজুহাতে মুয়াবিয়া ইমাম হাসানের (আ.) নিকট আনুগত্য প্রকাশ্যে অস্বীকার করলো। মুয়াবিয়া অন্তর দিয়ে অবগত ছিল †য ইমাম তার †চয়ে †বশী উপযুক্ত ছিলেন। কিন্তু নেতৃত্ত্বলিপ্সা তাকে সত্যের আনুগত্য †থকে বিরত রাখে। †কননা †স ভাল করেই জানতো বয়সের স্বল্পতা হযরত ঈসা ও হযরত ইয়াহ্ইয়া (আ.)-এর জন্যে পয়গম্বরদেরশ্রেসালাতের পথে †কান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইমামও †য রাসুলের (সা.) উত্তরাধীকারী, তাঁর †বলায়ও একই ব্যাপার প্রযোজ্য।
মুয়াবিয়া যে ইমামের হাতে বাইয়্যাত গ্রহণ করেনি শুধু তাই নয় বরং ইমামকে উৎখাতের জন্যে সে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। †স কিছু †লাককে †গাপনে নির্দেশ দিয়েছিলো ইমামকে হত্যা করার জন্যে। আর এ কারণেই ইমাম জামার নিচে বর্ম পরিধান করতেন এবং বর্ম ব্যতীত নামাজে অংশ গ্রহণ করতেন না। আর †সই কারণে একদিন মুয়াবিয়ার †গাপন প্রতিনিধি ইমামের দিকে তীর নিক্ষেপ করলে ইমামের †কান ক্ষতিসাধন করতে পারেনি। যে মুয়াবিয়া ইমামের বয়সের স্বল্পতার অজুহাত তুলে তাঁর হাতে আনুগত্য স্বীকার করতে অস্বীকার করেছিল †স-ই আবার ইয়াযিদের শাসন কর্তৃত্বের †বলায় এই অজুহাত অনায়াসে ভুলে যায়। †স নিজের তরুন সন্তানকে উত্তরাধীকার মনোনীত করে এবং তার পক্ষে জনগনের আনুগত্য গ্রহণ করে। মুয়াবিয়া ইসলামী সংহতি প্রতিষ্টা এবং বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা এড়ানোর মিথ্যা অযুহাত তুলে তার অনুচরদের†ক নির্দেশ †দয় ঃ “†তামরা †তামাদের সৈন্যবাহিনী নিয়ে আমার কাছে এসো।” আর †স যা বলেছে তারা তাই করেছে। সে তাদেরকে জড়ো করে ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে ইরাকে †প্ররণ করে। ইমামও হাজর বিন আদি কানদী†ক নির্দেশ দিলেন †যন কমান্ডারদের ও জনগণকে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করা হয়। তৎকালীন †রওয়াজ অনুযায়ী সরকারী হুকুম উচ্চস্বরে †ঘাষনাকারী ব্যক্তি কুফা নগরীর অলি গলিতে আস্সালাহ (নামাজ) বলে চিৎকার ধ্বনি †তালে, যার ফলে জনসাধারণ কুফার জামে মসজিদে সমবেত হতে শুরু করে। অবশেষে ইমাম †মম্বারে (বক্তৃতা †দবার জন্যে নির্দিষ্ট উচু স্থান) উপবিষ্ট হয়ে বলেন ঃ “মুয়াবিয়া †তামাদের নিকট এসেছে যুদ্ধের জন্যে আর †তামরাও নুখাইলা যুদ্ধ শিবিরে গিয়ে সমবেত হও---।”
সকলে নিশ্চুপ। বিখ্যাত হাতেম তাঈ-এর পুত্র উদাই উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বলেন ঃ “আমি হাতেম তাঈ-এর †ছলে। সুবহানাল্লাহ! এই নিরবতার কারণ কি যা †তামাদের অন্তঃকরণ-সমুহকে ঘিরে †রখেছে? †কন ইমাম ও †তামাদের রাসুলের সন্তানকে †কান উত্তর দিচ্ছো না? আল্লাহর রাগকে ভয় কর! †তামরা কি লাঞ্ছনাকে ভয় করো না---? ”
অতঃপর তিনি ইমামের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন ঃ “আপনার বক্তব্য শুনেছি। আমি জান-প্রাণ দিয়ে আপনার নির্দেশের অনুগত।” তারপর তিনি বলেন ঃ “আমি এখনি যুদ্ধ শিবিরের দিকে রওয়ানা হচ্ছি। যাদের ইচ্ছে হয় আমার সাথে †যন †যাগ †দয়।” কেইস বিন সা’দ বিন ইবাদাহ, মা’কাল বিন †কইস রিয়াহি এবং যিয়াদাহ বিন সায়সায়াহ্ তাইমিয়া তাদের আবেগময় ভাষনের মাধ্যমে যুদ্ধের প্রতি জনগণের আগ্রহ সৃষ্টি করেন এবং তারা জনগণের মধ্য †থকে সৈন্য বাহিনীর সমর সজ্জায় আত্মনিয়োগ করেন। পরিশেষে তারা সকলে এভাবে যুদ্ধ শিবিরে পৌছান। এই শিবিরে বিপুল সংখ্যক জনসমষ্টির মধ্যে ইমামের অনুসারী ছাড়াও তাদেরকে নিম্নের কয়েকটি দলের মধ্য †থকে একত্রিত করা হয়েছিল ঃ
(১) খারেজী দল; যারা শুধুমাত্র মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধ করার জন্যে এসেছিলো, ইমামের পক্ষাবলম্বনের জন্যে আসেনি।
(২) †লাভীর দল; যারা যুদ্ধের গনিমতের মাল সংগ্রহের জন্যে এসেছিল।
(৩) যারা তাদের †গাত্রপতিদের অনুসরণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং তাদের †কান দ্বীনি উদ্দেশ্য ছিলো না।
ইমাম তাঁর বাহিনীর একাংশকে হাকামের †সনাপতিত্বে আনবার শহরে †প্ররণ করেন। কিন্তু হাকাম মুয়াবিয়ার সাথে আতাত করে বসে। তদ্রুপ তাঁর পরবর্তী †সনাপতিদের অবস্থাও এরকম হয়েছিল। ইমাম স্বয়ং মাদায়েনের সাবাত্ব এলাকায় গমন করেন। †সখান †থকে তিনি বার হাজার সৈন্যকে ওবায়দুল−াহ বিন আব্বাসের †সনাপতিত্বে মুয়াবিয়ার সাথে লড়াইয়ের জন্যে †প্ররণ করেন। আর †কইস বিন সা’দ বিন ইবাদাহকে উপসেনাপতি করেন †যন ওবায়দুল−াহর অনুপস্থিতিতে তিনি †সনাপতির দায়িত্ব পালন করতে পারেন। মুয়াবিয়া কেইসকে †ধাকা †দয়ার ফন্দি করে। †স তার সাথে সহযোগীতা অথবা অন্ততঃ ইমামের পক্ষ ত্যাগ করার লক্ষ্যে †কইসের নিকট এক মিলিয়ন †দরহাম পাঠায়। †কইস উত্তর †দয় ঃ “প্রতারণার মাধ্যমে তুমি আমার দ্বীনকে †কড়ে নিতে পরবেনা। যাও এই ফাঁদ অন্য এমন †কান †মারগের জন্যে †পতে আস যার মুখ বড়। সেনাবাহিনীর প্রধান †সনাপতি অর্থাৎ ওবায়দুল−াহ ইবনে আব্বাস, শুধুমাত্র †সই অর্থেই প্রতারিত হয় এবং রাত্রের অন্ধকারে তার একদল একনিষ্ট †লাকদের সাথে নিয়ে মুয়াবিয়ার দিকে পলায়ন করে। †সদিন †ভার সকালে †সনাবাহিনী অভিভাবকবিহীন হয়ে পড়ে থাকে। অবশেষে †কইস জনগনের সাথে নামাজ আদায় করেন এবং তিনি †সনাপতির দায়িত্বভার কাঁধে তুলে †নন। তিনি সমস্ত ঘটনার তথ্য বিবরণী ইমামের কাছে †পশ করেন। কেইস বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেন। মুয়াবিয়া যখন তাকে †ধাঁকা †দয়ার সকল পথ অবরুদ্ধ †দখতে পায় তখন ইমামের †সনাবাহিনীতে গুপ্তচর †প্ররণ করে আর তারা মুয়াবিয়ার সাথে †কইসের সন্ধি স্থাপনের মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদের অপপ্রচার চালায়। এদিকে অন্য আরেক দল †গায়েন্দাকে †কইসের †নতৃত্বাধীন বাহিনীর ভিতর অনুপ্রবেশ করিয়ে †দয়। তারা বলতে থাকে “ইমাম হাসান মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করেছেন।” এভাবে খাওয়ারেজ ও সন্ধি বিরোধী গোষ্টী এই †ধাঁকায় প্রতারিত হলো এবং তারা অকস্মাৎ বিদ্রোহের সাথে ইমামের তাবুতে হামলা করে লুটতরাজ চালায় এমনকি তারা ইমামের পদতলের বিছানা পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যায়।তারা এমন †জারে ইমামের উরুতে তলোয়ারের আঘাত হানে †য ইমাম প্রচন্ড রক্তপাতের ফলে †শাচনীয় অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন---। ইমামের সাথীরা তাকে মাদায়েন শহরের গর্ভনর সা’দ বিন মাসউদ সাকাকী- যিনি ইমাম আলীর পক্ষ †থকে এ পদে নিযুক্ত ছিলেন, তার গৃহে নিয়ে যান। ইমাম কিছুদিন তার গৃহে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময়ে ইমামকে বলা হলো, অনেক †গাত্রপতিরা যাদের †কান দ্বীনি উদ্দেশ্য ও উৎসাহ ছিল না অথবা যারা ইমামের সাথে †গাপনে শত্র“ভাবাপন্ন ছিল, তারা মুয়াবিযার কাছে †গাপনে লিখে পাঠায় †য, “যদি তুমি ইরাকে আগমন করো তা’হলে আমরা †তামার সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো †য ইমামকে †তামার হাতে তুলে দিবো।” মুয়াবিয়া হুবহু তাদের পত্রাবলী ইমামের নিকট †প্ররণ করে সন্ধি করার জন্যে অনুরোধ †পশ করে। †স আরো বলে যে এ সন্ধি পত্রে ইমাম †য শর্ত-ই †দন না †কন, তাই মেনে †নয়া হবে। ইমাম সাংঘাতিক অসুস্থ ছিলেন এবং তাঁর অনুসারীরা দিগ-বিদিক বিক্ষিপ্ত ও ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়েছিল। †সনাবাহিনীর সদস্য এবং †যাদ্ধারা আক্বিদা ও লক্ষ্যের ব্যাপারে ঐক্যমতের অধিকারী ছিলো না।
তারা প্রত্যেকে পৃথক পৃথক ধ্বনি †তালে। তাদের পথ ও মতের মধ্যে †কান সামঞ্জস্য ছিল না। †কানভাবে, †কান দিক দিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত রাখা ইমামের অনুসারীদের এমনকি ইসলামের স্বার্থের অনুকুলে ছিল না। †কননা, মুয়াবিয়া যদি যুদ্ধের মাধ্যমে আনুষ্?ানিকভাবে বিজয়ী হয় তা’হলে ইসলামের মূলোৎপাটন করে ছাড়তো এবং ভূপৃষ্ট †থকে ইসলামের অনুসারী তথা সত্যিকার মুসলমানদের উৎখাত করে ছাড়তো। সুতরাং অগত্যা ইমাম প্রচুর এবং কতগুলো কঠিন শর্ত সাপেক্ষে সন্ধি চুক্তিতে সম্মত হলেন।
এ সমস্ত শর্তগুলোর কয়েকটি ধারা নিম্নে উলে−খ করা হলো ঃ
১. আহলে বাইতের অনুসারীদের রক্ত সম্মানিত ও †হফাজত থাকবে এবং তাদের অধিকার পদদলিত করা যাবে না।
২. ইমাম আলীকে গালি-গালাজ †দয়া যাবেনা।
৩. মুয়াবিয়া রাষ্ট্রের আয় †থকে এক মিলিয়ন †দরহাম সিফফিন ও জমালের যুদ্ধের ইয়াতিমদের মধ্যে বন্টন করবে।
৪. ইমাম হাসান মুয়াবিয়াকে আমিরুল মু’মিনিন বলে আহ্বান করবে না।
৫. মুয়াবিয়াকে অবশ্যই আল্লাহর কিতাব এবং রাসুলের (সা.) সুন্নত †মাতাবেক আমল করতে হবে।
৬. মুয়াবিয়া, তার মৃত্যুর পরে †খলাফতের ভার অন্য কারো উপর †সাপর্দ করে যাবে না। মুয়াবিয়া উপরোক্ত শর্তগুলো এবং অন্যান্য আরো সব শর্তাবলী †মনে নিয়েছিল যার সবটাই ইসলাম ও বিশেষ করে আহলে বাইতের অনুসারীদের †হফাজতের জন্যে প্রয়োজন ছিল। ফলে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। পদস্খলন ছিল না অনেক প্রাচ্যবিদ তাদের অধ্যায়নে বিষয়ের গভীরতা ও সর্বদিক নিয়ে চিন্তা করেন না। তারা তাদের দূর্বল প্রাথমিক ধারণাসমূহের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিতে সুদৃঢ় বলে পরিচিত ফলাফলে পৌছান এবং অতি উৎসাহীর শিকার হন। এ ধরনের †লাকদের একাংশ তাদের এই ভাসাভাসা অধ্যায়নের মাধ্যমে এবং সঠিক তথ্য সম্পর্কে †বখবর থাকার কারণে তারা মনে করেছেন †য ইমাম হাসান (আল্লাহর দরুদ ও সালাম তাঁর উপর বর্ষিত †হাক) মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধে অবহেলা করেছেন, তা না হলে তিনি অব্যাহতভাবে †চষ্টা চালালে নিশ্চয়ই বিজয়ী হতেন! তারা যদি নিগূঢ় দৃষ্টিতে তৎকালীন মুসলমানদের ইতিহাসের মূলপাঠ অধ্যায়ন করতেন এবং সর্বদিক বিবেচনা করতেন তা’হলে কখনো এ ধরনের অনর্থক ফলাফলে উপনীত হতেন না। †কননা ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী ইমাম তাঁর জীবনের গ?নমূলক দিনগুলো সম্মানের সাথে পিতার সাথে উষ্ট্র ও সিফফিনের যুদ্ধে এবং আরো অন্যান্য স্থানে অতিবহিত করেছেন। তিনি সর্বদা দূর্দম সাহসিকতার সাথে শক্রর তীরের আওতায় তলোয়ার চালিয়েছেন এবং সামনে এগিয়ে গিয়েছেন আর এভাবে বিজয়ীর †বশে ফিরে এসেছেন।
তাই ইমাম হাসান (আ.) যুদ্ধকে ভয় †পতেন না। তিনি স্বয়ং মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্যে জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তবে †সই বিশেষ পরিস্থিতিতে তাঁর সন্ধির পদক্ষেপ †দশের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আহলে বাইতের অনুসারীদের প্রাণ রক্ষা এবং ইসলামের আভ্যন্তরীন স্বার্থাবলীর দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত প্রয়োজন ছিলো। তাছাড়াও ইসলামী পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টিতেও এটি ছিল একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ। †কননা তৎকালীন সময়ে পূর্ব রোম সাম্রাজ্য-যারা ইসলামের কাছ †থকে এর পূর্বে কয়েকবার শক্ত আঘাত †খয়েছে ট প্রতিশোধ †নয়ার নিমিত্তে ওঁৎ †পতে ছিল। তারা শুধু সময়ের সুযোগ খুঁজছিল †যন সুযোগ মত প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে যখন ইমাম হাসান ও মুয়াবিয়া যুদ্ধের জন্যে পরস্পরের মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছিলেন তখন তারা আকস্মিক আক্রমনের সকল প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে †ফলেছিল। আর যদি ইমাম যুদ্ধ অব্যাহত রাখতেন তা’হলে ইসলামের উপর প্রচন্ড আঘাত আসার সম্ভাবনা ছিল। অতএব ইমাম †যহেতু সন্ধি চুক্তিতে সম্মতি হলেন তাই তারা তাদের চক্রান্ত বাস্তবায়িত করতে পারেনি। উপরোলে−খিত ব্যক্তিবর্গের চিন্তা ধারণার †চয়েও আরো †বশী বিস্ময়কর হচ্ছে আরেক দল †লাকের অনর্থক ও অহেতুক চিন্তা-ভাবনা। তারা বলেন ঃ “ইমাম হাসান কার্যতঃ মুয়াবিয়াকে নিজের †চয়েও †বশী উপযুক্ত †দখতে পান। তাই তিনি মুয়াবিয়ার স্বার্থে পশ্চাৎগমন করেন এবং ইসলামী †খলাফত তার হাতে †সাপর্দ করে তার সাথে বাইয়্যাত করেন।”
কিন্তু আমরা জানি †য ইমাম (তার উপর আল্লাহর দরুদ বর্ষিত হোক) সন্ধির আগে-পরের সব পত্রেই সরাসরী তিনি নিজেকে †খলাফতের †যাগ্য বলে উলে−খ করেছেন। যখন মুয়াবিয়া কুফা শহরে প্রবেশ করে বক্তৃতার আসন †থকে বলে ঃ “হাসান আমাকে †যাগ্য মনে করেছে, নিজেকে নয়। এ জন্যে †স †খলাফত আমার উপর †ছড়ে দিয়েছে।” ইমাম হাসান (আ.) †সই অনুষ্?ানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলেন ঃ “মুয়াবিয়া মিথ্যাচার করছে”। অতঃপর তিনি তাঁর মর্যাদা ও †যাগ্যতার ব্যাপারে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন। †সগুলোর মধ্যে মুবাহিলাতে তাঁর অংশ গ্রহণের কথা ব্যক্ত করেন। অবশেষে তিনি বলেন ঃ “আমরা †ক্বারআন এবং নবীর সুন্নত মতে সর্বাপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ট এবং এ কারণেই আমরা সকলের †চয়ে †যাগ্যতর।” তাছাড়া আমরা সন্ধি পত্রের কয়েকটি ধারা পা?কদের উদ্দেশ্যে ব্যক্ত করেছিলাম যে ইমাম †সখানে শর্ত আরোপ করেছিলেন ঃ “মুয়াবিয়াকে আমিরুল মু’মিনিন বলা যাবে না”। অতএব, এটা কিভাবে সম্ভব †য ইমাম তার হাতে বাইয়্যাত করবেন ? যদিওবা ধরে †নয়া হয় †য তিনি বাইয়্যাত করেছেন তা’হলে †তা মুয়াবিয়ার নির্দেশেই তাকে চলা উচিত। কিন্তু ইতিহাসই প্রমাণ করে †য তিনি কখনো মুয়াবিয়ার নির্দেশের আনুগত্য করেননি। তদ্রƒপ যখন খাওয়ারেজ মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে ক্বিয়াম করে তখন মুয়াবিয়া ইমামকে নির্দেশ দিয়েছিল তাদের সাথে লড়াই করার জন্যে। কিন্তু ইমাম তার কথায় †মাটেও কর্ণপাত করেননি বরং তিনি বলেছিলেন ঃ “যদি আমি ক্বাবা গৃহের দিকে নামাজ আদায়কারীদের সাথে যুদ্ধ করতে ইচ্ছা †পাষন করতাম তা’হলে সর্বাগ্রে †তামার সাথে যুদ্ধ করতাম-------।”
সুতরাং আমরা এমন কিছু †লখকের সন্ধান পাই যারা জ্ঞান বিবেক ও ইতিহাস †লখনী †থকে †কান কিছু উপকৃত হন নি
চলবে....।
©somewhere in net ltd.