নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা

নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহবাগের কণ্ঠস্বর...

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:২৪

'নতুন দিনের নতুন ডাক

চলো সবাই শাহবাগ।'




শাহবাগে দেখছি, প্রতি মুহূর্তে ফুটছে আগুনের ফুল। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে বেড়ে উঠছে বুনো অনল।



কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দেয়া আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট হয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানোর জন্য মঙ্গলবার বিকেলে ব্লগারদের আয়োজনে যে মানব বন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল শাহবাগে, সেখানে ছিল মোটে শ'খানেক মানুষ।



কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হবার আগেই শ'খানেক মানুষের ছোট্ট দলটায় এসে জুটেছে কয়েক'শ সংক্ষুব্ধ। বুক ভরা রাগ, হতাশা, ক্ষোভ নিয়ে যে তারুণ্য জুটেছিলো মানব বন্ধনে, তারা শাহবাগের মোড়ে এসে অবস্থান নিলো। শাহবাগকে অবরোধ করে, প্রতিবাদের প্রকাশ মঞ্চ হিসেবে প্রস্তুত করে নিলো ব্যাথিত জনতার ঢল।



তারপর, এই অবরোধের মাত্র কয়েকটি ঘন্টা যেতে না যেতেই শাহবাগ বদলে গেলো। এই বদল, এই পরিবর্তন কেবলই শাহবাগের নয়। এই বদল ইতিহাসেরও।



সেই যে আন্দোলন শুরু হলো তার আর শ্রান্তি, ক্লান্তি নেই, বিরাম নেয়া নেই, থেমে যাওয়া নেই, এমনকি নেই ঘুমেরও সময়।



সেই মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত অব্দি একটানা তিন দিন, তিন রাত ধরে জেগে আছে শাহবাগ।





বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যেনো শাহবাগে নয়, যেনো এক জনসমুদ্রে উপনিত হলাম আমি। কাঁটাবন মোড় থেকে শাহবাগ, হোটেল রূপসী বাংলার সামনে থেকে শাহবাগ, শিশুপার্কের সামনে থেকে শাহবাগ, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ— চারিদিকে অথৈ মানুষ। কূল নেই, কিনার নেই— যতদূর চোখ যায় কেবল মানুষের ঢেউ।



দাবানলের যেমন কোনো একটি নির্দিষ্ট দিক থাকে না, তা যেমন চারিদিকে সমভাবে ছড়ায়, শাহবাগও আজ তাই। বাংলাদেশের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণে সমভাবে ছড়িয়ে পড়ছে শাহবাগের চেতনা।



শাহবাগই আজ বাংলাদেশের হৃদয়। শাহবাগেই আজ এ দেশের সমস্ত পথের শেষ।



ঘন্টার পর ঘন্টা আমি শাহবাগে দাঁড়িয়ে থাকি, হাঁটি, অচেনা মানুষের মুখ দেখি, আট কি নয় বছরে ছোট্ট শিশু, বাবা বা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে কী ঝাঁঝালো স্বরে স্লোগানে গলা মিলাচ্ছে কান পেতে তা শুনি, দিন ভর লাকি নামের যে মেয়েটি কী অদ্ভুত প্রানচাঞ্চল্য আর স্লোগানের জাদু দিয়ে মানুষকে আবিষ্ট করে রেখেছে আমি ঘুরে ঘুরে তাকে দেখি, দেখি কী করে এক একটি স্লোগানের সাথে এক সাথে এক স্বরে আকন্ঠ চিৎকার করে উঠে কয়েক হাজার মানুষ।



মানুষের মাঝে ঘুরতে ঘুরতে, প্রাণে তুফান এনে দেয়া স্লোগান শুনতে শুনতে আমার কেমন গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। 'তা থৈ তা থৈ থৈ, দ্রিমি দ্রিমি দিম দিম...' শুনতে শুনতে বুকের মধ্যে আমার কেমন কলিজাটা লাফাতে থাকে আর কী প্রচন্ড আবেগের ধাক্কায় আমার কেমন কান্না পেয়ে যায় হঠাৎ।



তবু আমি মানুষের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকি। 'মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে' বলে যখন সম্মিলিত কন্ঠ বেজে উঠে শাহবাগে তখন আমি টের পাই, আমি একা নই, বিচ্ছিন্ন নই; এখানে এসে যারা জমায়েত হয়েছে সতস্ফূর্ত আবেগে তারা কেউ একা নয়, কেউ বিচ্ছিন্ন নয়, আজ সকলেই এক; একত্রিত, অবিচ্ছিন্ন।



ব্যাথিত, ক্ষুব্ধ তারুন্যের এই সমন্বিত রূপ দেখে আমার মনে হয়— এই খানে এই শাহবাগেই বুঝি রূপকথার কোনো এক বাঁকে দেবী দূর্গার জন্ম হয়েছিলো; আমাদের এই সমন্বিত শক্তি নিয়ে অপ্রতিরোধ্য শাহবাগও আজ যেনো হয়ে উঠেছে মূর্তিময়ী দূর্গা মাতা।



শাহবাগের এই মাথা ওই মাথা ধরে আমি হাঁটি। সঙ্গে কখনো হয়তো কবি নির্লীপ্ত নয়ন, কখনো সহকর্মী আদিল, কখনো সামিরা, কখনো এ, কখনো ও, কখনো সে আর কখনো আমি একাই হয়ে উঠি পুরো শাহবাগ।



পঞ্চাশ পেরোনো যে গৃহিনী মা তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়া মেয়ের সাথে শাহবাগে এসেছিলেন, সকলের আবেগে আপ্লুত হয়ে তিনি নিজেও স্লোগানের সাথে গলা মিলিয়ে, হাতে তালি বাজিয়ে বলছিলেন, ' ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই', তাকে দেখে আমার কী যে ভালো লাগে!



বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাশ করা অনন্যা নামের যে মেয়েটি কোনো দল বা সংগঠন করে না, তবু সব বন্ধুর সাথে মিলে সেও এই শাহবাগে এসে রাস্তায় বসেছে, সবুজ পাতা আর গাদা ফুল দিয়ে পাবলিক লাইব্রেরী ও চারুকলার মাঝামাঝি জায়গায় পথের উপর সেও যখন আকঁছিল সেই একাত্তরের সময়ের জাতীয় পতাকা, পতাকার বুকে স্বদেশের মানচিত্র, তখন— তার সাথে কথা বলে কী জানি এক অচেনা সাহসে আমার বুক ভরে যায়।



কিন্তু এই সাহসের গল্পটা এখানেই শেষ নয়। রোজ আমি শাহবাগে যাচ্ছি। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকছি, হাঁটছি, চেনা-অচেনা মুখগুলোর সাথে নানা বিষয়ে আলাপ করছি, কখনো কখনো কান খাড়া করে শুনছি পাশের জনের কথোপকথনও।



এই সব কিছু করতে গিয়ে কিছু প্রশ্ন, কিছু দ্বিধাও এসেছে আমার দরজায়।



নেতৃত্ব সংকট বা অন্তর্দ্বন্দ্ব:



সবার আগে (মঙ্গলবার বেলা তিনটার সময়) প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল ব্লগারস ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। তাদের ডাকা প্রতিবাদের খবর পেয়েই এক-দুই-তিন করে মানুষ এসেছে। আসতে আসতে মানুষের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে হাজারে-হাজারে পৌঁছে গেছে।



ব্লগাররা একটা প্রতিবাদ প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন সেখানে এসে যুক্ত হোক সাধারণ মানুষও। কিন্তু তারা হয়তো কল্পনাও করতে পারেন নি, সেই ছোট্ট আন্দোলন এতো বিরাট, ব্যাপক, বিশাল, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।



বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী, এমপি পর্যন্ত এসে সমবেত হয়েছেন এই সমাবেশ এ।



আন্দোলন বড় হয়ে যাবার পর, বহু মানুষ জড়িত হবার পর সেখানে দেখা দিতে থাকলো নেতৃত্ব ও বাহবা/ক্রেডিট নেবার অঘোষিত আন্ত: সাংগঠনিক লড়াই।



হুম, মানছি, যারা প্রথম এর আয়োজন করেছিলেন তারাই এর মূল ক্রেডিট দাবিদার।



যে কোনো একটা উদ্যোগের প্রথম উদ্যোক্তা, সেই যে সবসময় সেই আয়াজনের সবচেয়ে ভালো আয়োজক হবেন বা সবচেয়ে ভালো বুঝবেন তা কিন্তু নয়।



এই প্রসঙ্গে মনে করে দেখতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা।



দেশ স্বাধীন হবার প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল ৫২ তে ভাষার প্রশ্নে। তার পর সেই পরিক্রমা এসে সম্পন্ন হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে। তা-ও বঙ্গবন্ধু একা এই স্বপ্নের বাহক নন। আরো অসংখ্য জীবনের সম্মিলনের ফলেই এসেছে স্বাধীনতা।



এই পরিক্রমার কথাটা, শুরু হয়ে যাত্রাটা একটি স্থানে উপনিত হবার বিষয়টা কিন্তু আজকের এই শাহবাগের ক্ষেত্রেও দারুণভাবে প্রযোজ্য।



আন্দোলনের কলেবর এখন বিস্তৃত হয়েছে। এর সাথে আজ যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মানুষ। গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, ময়মনসিংহ এবং আরো, আরো সব বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এসে জড়ো হচ্ছে এই আন্দোলনে।



তারা দিনভর, রাত ভর এইখানে অবস্থান করে, এই আন্দোলনের প্রাণটাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে আরো বহুগুণ।



যারা এখানে আসছে, তারা আসছে শাহবাগে। কারণ শাহবাগে আপনারা (যারা ডাক পাঠয়েছেন) আছেন। আপনারই এখন বাংলাদেশের কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্র যদি ক্রেডিট নেবার সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে যায় তবে যে কেন্দ্র আর একক ভরকেন্দ্র থাকে না।



তাই, আজ এই আন্দোলনকে দীর্ঘস্থায়ী একটা কার্যকর রূপ দেবার লক্ষ্যে অতি জরুরি হয়ে পড়েছে অঘোষিত অন্তর্দ্বন্ব মিটিয়ে আরো সুকঠিণ ঐক্য গড়ে তোলার। নইলে, এই যে প্রাণের প্রকাশ, এ প্রকাশ অপমানিত হবে।



জনতার আন্দোলন কে করে চুরি?



ছাত্রলীগের নাম শাহবাগের জনতার মুখে ভেসে বেড়াচ্ছে। আজকের এই গনগনে শাহবাগকে না-কি নিজেদের পাতে টেনে নিতে চায় তারা। কিন্তু জাগ্রত জনতা তা হতে দেয় নি।



আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে শাহবাগে সিপিবি'র পতাকা দেখে বহু লোক ক্ষেপেছে। কারো দিকে না তাকিয়ে ক্ষেপা লোকেরা বলেছে মনের কথা। হয়তো, তারই কিছুটা টের পেয়ে সিপিবি তার ঝাণ্ডা নামিয়ে নিয়েছে বৃহস্পতিবারে।



কিন্তু এখনো, আজও জাদুঘরের সামনে থেকে পাবলিক লাইব্রেরি, চারুকলা হয়ে প্রায় টিএসসি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন নামের ব্যানার।



এইসব ব্যানার যদি হয় বিভক্তির নাম, নিজেদের উজ্জ্বল উপস্থিতি জানান দেয়ার নাম, তবে কিন্তু ' সাধের বিপ্লব' হাপিস হয়ে যেতে সময় লাগবে না। শুনতে পাই, চারিদিকে ওঁৎ পেতে আছে, পাতা আছে ফাঁদ।



তাই, এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ্য হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নাই।



'মাগো, আমার তো মনে চায় গলাডা ফাডায়া চিল্লাই'





আমার শ্বাশুড়ির বয়স প্রায় ৬৫। উনার শরীরও খুব একটা ভালো নয়। একা সাধারণত তাকে কোথাও যেতে দেয়া হয় না। আর ভীড়-বাট্টার মধ্যে তো তার যাবার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু সেই ভদ্র মহিলার সাথে যখন আমি কথা বলছিলাম বৃহস্পতিবার দুপুর বেলায় তখন আমার অন্তর কেঁপে উঠেছে।



আমি মা'কে ফোন দিয়েছিলাম এমনি, শরীরের খোঁজ-খবর নিতে, কুশল জানতে। কিন্তু তিনি বলছিলেন, 'এই তো এখন খেয়ে দেয়ে রেডি হইতেছি, সমাবেশে যাবো।'



আমি তো তার কথায় আকাশ থেকে পড়েছি। 'মা, আপনি সমাবেশে যাবেন মানে!'



তিনি উত্তর করলেন, 'যাবো না! মা-গো, কী বলো! সংগ্রামের সময় [একাত্তেরর যুদ্ধ] কী যে কষ্টডা করলাম, কী যে দিন গেলো... আর এই রায় কি মাইন্যা নেওয়া যায়!'



তার সাথে আরো কিছু কথা হয়। কথার এক পর্যায়ে তিনি বললেন, 'মা-গো, সংগ্রামের সময় যে দিন গেছে আমাদের, সেই কথা মনে হইলে আমার তো মনে হয়, গলাডা ফাডায়া চিল্লাই। এইটা কোনো রায় হইল!'



চট্টগ্রামে প্রেস ক্লাবের সামনে যে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে সেখানে নিজের সব ছেলে-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে যোগ দিয়েছেন তিনি।



অনুমান করি, শুধু আমার শ্বাশুড়িই নয়, তার মতন আরো অসংখ্য মানুষ, যারা এতো দিন বুকের ভেতর ক্ষোভ, হতাশা চাপা দিয়ে রেখেছিলেন, তরুণদের দেখানো প্রতিবাদের মধ্যে তারা আবারো যেনো আশার আলো পেয়েছেন, পেয়েছেন নিজের ভাষা প্রকাশের দুরন্ত সাহস।



তাই, এই আন্দোলনের উদ্যোক্তা প্রথমে যেই ছিলেন না কেন তাদের বুঝতে হবে যে, আন্দোলন আর ঠিক আগের ছোট্ট জায়গাটিতে নেই। এর সাথে আজ যোগ হয়েছে বৃহৎ সমাজের আবেগ।



সুতরাং, এই বিরাট আবেগকে সমঝে নিয়ে একটা সঠিক খাতে প্রবাহিত করাটা হচ্ছে আজকের তরূনদের প্রধান দায়িত্ব।



যদি তা করা না হয়, লাখো মানুষকে একটা বিভ্রম, একটা ঘোরের মধ্যে টেনে এনে তরুণেরা যদি সটকে পড়েন সিদ্ধান্তহীন, তবে তা হবে এক বিরাট বিশ্বাসঘাতকতা। এ হবে, মানুষের স্বপ্ন ও বিশ্বাস চুরি করার সমান অপরাধ।



শাহবাগ— অপ্রতিরোধ্য নতুনের ডাক



শাহবাগে যে আন্দোলন তৈরি হয়েছে তার সবচেয়ে শক্তিশালী দিকটা হলো, এই আন্দোলনের সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের একটা অংশগ্রহণ আছে।



গুলশানে কর্পোরেট অফিসে সারাদিন চাকরি করে যে, সন্ধ্যায় সেও আসছে শাহবাগে, আবার দিনভর অফিসে কলম পিসছেন যে প্রায়-কেরাণী লোকটি, শাহবাগ টেনে আনছে তাকেও। এমনকি একেবারে খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ, গার্মেন্টস থেকে আসা মানুষের মুখও আপনি খুঁজে পাবেন শাহবাগে।



এরা সবাই কিন্তু শুধু হুজুগে আসছে না। এই আসার একটা অর্থ অবশ্যই আছে।



অর্থাৎ— লিঙ্গ,বয়স, শ্রেণী, পেশা সব ছাপিয়ে সমাজের সামগ্রিক অংশগ্রহণটাই আজ মুখ্য হয়ে উঠেছে এখানে।



এরকম আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকট অতীতে আছে নব্বই এর গণ আন্দোলন। আর তার আগে আছে খোদ ১৯৭১।



নব্বই এর পর যত আন্দোলন হয়েছে, প্রায় সব আন্দোলনই কোনো না কোনো ভাবে, কোনো না কোনো বিশেষ সমাজ বা গোষ্ঠীর অধিকারের দাবি আদায়ের প্রশ্ন প্রধান হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ছাত্ররাই ছিল প্রায় সব বড় আন্দোলনের মূলে।



কিন্তু আজকের শাহবাগ শুধু ছাত্রদের নয়, নয় ফুলবাড়ীর ঘটনার মত কোনো বিশেষ এলাকার মানুষের। আজকের শাহবাগ নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে টেকনাফ থেকে তেতুঁলিয়া পর্যন্ত।



তাই, এই আন্দোলনকে উদ্দেশ্যহীন মরতে না দিয়ে একে কাজে লাগানো উচিত।





আরও একটা দাবি আছে,

শাহবাগের কাছে:




শাহবাগের বাতাসে শোনা যাচ্ছে যে, যুদ্ধাপরাধীদের সাজা হয়ে গেলে, জামায়াত না-কি পাবে সবার কাছে ভোট চাওয়ার অধিকার।



কিন্তু অনেকেই বলছেন, এই ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরেও জামায়াত যা ছিল তাই থেকে যাবে। অপরাধীদের দেহ মারা গেলেও এদের দর্শন রয়ে যাবে জামায়াতের ভেতর।



তাই, শাহবাগের মানুষেরা যে সব দাবি করছেন তার মাঝে বেশি শোনা যাচ্ছে এই দুইটি: রাজাকারদের ফাঁসি, ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।



তারা বলছেন, এই দুই দাবীতেই শাহবাগে সমবেত হওয়া মানুষের অনড় ও অটল থাকতে হবে।



অনড় ও অটল অবস্থানে থাকতে হলে প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে কঠিণ বন্ধন এবং সুকঠিন কর্ম পরিকল্পনা। কারণ, একবার আন্দোলন থেমে যাওয়া মানেই হলো থেমে যাওয়া অর্থাৎ আন্দোলনের সমাপ্তি।



অনেকেই মনে করছেন, শাহবাগকে জনতার মঞ্চ হিসেবে জনতার দখলে রেখে আন্দোলনকে সাসটেইন করা/ কনটিনিউ করা/ চালিয়ে যাওয়াটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং প্রধান কাজ।



আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াটা চ্যালেঞ্জ হবে, কারণ এটাকে নস্যাৎ করার জন্যেও নিশ্চয়ই তৎপর হয়ে উঠেছে বিবিধ মহল।



আর শাহবাগ স্কয়ারটা নিজেদের দখলে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াটাই এখন প্রধান কাজ কারণ — দাবি আদায় না করে ঘরে ফেরা যাবে না। এমনকি স্থানও পরিবর্তন করা যাবে না। কারণ, অবস্থানগত দিক থেকে শাহবাগ শহরের কেন্দ্রে রয়েছে।



তাই, কেন্দ্র থেকে সরে যাওয়া মানে হলো নিজেদের প্রাথমিক পরাজয় মেনে নেয়া।



অতএব শেষ কথা...





মানুষের আমূল কাঁপিয়ে দেয়া থরো থরো আবেগই আজ মূল সম্বল। এই আবেগকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, জাগিয়ে রাখতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে ঘরে ঘরে। এই সুকঠিণ কাজগুলো করতে হলে প্রয়োজন উদ্যোক্তাদের মধ্যে সুনিপুণ সমন্বয় ও অভেদ্য সম্পর্ক। তাহলেই হয়তো 'এ লড়াইয়ে' জয়ী হওয়া সম্ভব।





মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:০৫

অন্তরন্তর বলেছেন:
অনেক সুন্দর করে লিখেছেন। আপনারা যারা এই মহতী কাজে সম্পৃক্ত
আছেন এবং যারা মন থেকে সমর্থন জানাচ্ছেন তাদের সকলকে
আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালবাসা এবং সালাম।
বিদেশে আছি কিন্তু মনটা শাহবাগ স্কয়ারে পরে আছে।
কষ্ট পাচ্ছি না থাকার কারনে কিন্তু গর্বে বুকটা ভরে আছে আপনাদের
জন্য। বাংলাদেশীরা যেমন মানুষকে আদর করে বুকে নিতে জানে
ঠিক তেমনি নরপশুদের কঠোর শাস্থি দিতেও জানে এটা প্রমানিত।
শুভ কামনা।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫২

আফরোজা সোমা বলেছেন:
অন্তরতর, বিদেশে থেকেও মনটা যে শাহবাগ রেখেছেন এটা এতটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শাহবাগে শোনা যাচ্ছে, জনসাধারণের এই স্বতস্ফুর্ত আন্দোলনকে নিয়ে নানা গোত্রে নানা দেনা-পাওনা, যোগ-বিয়োগের হিসেব চলছে।

যারা দেশে আছে, তারা তাদের সাধ্য মতো কেউ কেউ করছে। কিন্তু আপনারা যারা বাইরে আছেন, তারা এই আন্দোলনের গতি প্রকৃতির দিকে নজর রাখুন, খুব তীক্ষ দৃষ্টি দিয়ে। কোথাও কিছু হয়ে যাচ্ছে কি-না আপনারা টের পাবেন।

ভালো থাকবেন, অন্তরতর।

শুভেচ্ছা।

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১২

শের শায়রী বলেছেন: অসাধারন লিখছেন। এই বিদেশ বসে ফুসছি আর বলছি কেন আমি দেশে নেই। ৯০ আন্দোলনে রাস্তায় ছিলাম। আর এই দিনে আমার মনে পড়ছে আমাদের মা জাহানারা ইমামের কথা যিনি প্রথম এই সব দালাল দের বিরুদ্বে আমাদের এক করেছিলেন। আমি গর্বিত আমাদের ব্লগার যোদ্বাদের জন্য যারা এই যুদ্বের ডাক দিয়েছে। ভাল থাকুন।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৫৬

আফরোজা সোমা বলেছেন: শের শায়রী, আপনারা যারা নব্বইয়ে রাস্তায় ছিলেন, যারা ছিলো জাহানারা ইমামের সাথে গণ আদালতে গনরায়ের অপ্রতিরোধ্য সৈনিক- আপনাদের সেই দেখানো পথ, সেই চেতনাই ফিরে এসেছে আজকের শাহবাগে।

তাই, স্বশরীরে উপস্থিত না থাকলও আপনারা এই জনজোয়ারে আছেন। আছেন চেতনার সহযোদ্ধা হয়ে।

যেখানেই থাকুন না কেন, মনটা শাহবাগে রাখুন। জনতার সম্মিলন নিশ্চয়ই সর্বৈব বৃথা যাবে না।

অনেক শুভেচ্ছা।

ভালো থাকবেন, শায়রী।

৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২২

চাঁপাডাঙার চান্দু বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন। এই আন্দোলন গণ মানুষের জোয়ার, চূড়ান্ত ফলাফল যাই আসুক, তা দেশের স্বার্থেই আসবে বলে আশা করি। কোন দুষ্কৃত যেন এর বিজয় ছিনিয়ে নিতে না পারে।
নামের শেষে ইসলাম যোগ করেই জামাত ধর্মের কাণ্ডারি হয়ে যায়নি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যোগ বিয়োগ পরে হবে, জামাত নিষিদ্ধ করতে হলে তাদের ইতিহাসই যথেষ্ট বলে মনে করি।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৩

আফরোজা সোমা বলেছেন: চাঁপাডাঙার চান্দু, ইতিহাসে মানুষের জয় তো আছেই । আবার পাশাপাশি মানুষের পরাজয়ের ইতিহাসও কম নয়। জানিনা, শাহবাগের এই জনজমায়েত শেষঅব্দি জনমানুষের প্রাণের দাবি পূরন করে ঘরে ফিরতে পারবে কি-না। জানি না, কিছু জানা-বোঝার আগেই এই আবেগী জনতা বিক্রি হয়ে যাবে কি-না দেশ-বিদেশের প্রভুদের কাছে।

তবু, প্রাণে আশা রাখি, মানুষের এই জাগরণ বৃথা যাবে না।

৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৯

মোনাজ হক বলেছেন: গত ৪ বছর ধরে যেটা সরকার তার ১ লক্ষ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য দিয়েও করতে সক্ষম হয়নি, জামাত শিবীরকে দমন করতে, সেটি এই প্রজন্ম মাত্র ৩ দিনেই করতে পেরেছে। হাজার হাজার মানুষের জনসমুদ্র বলিষ্ঠ কন্ঠে ঘোষণা করছে "স্বাধীনতার শত্রুদের ফাঁসি চাই" বিগত ৪ বছরে বাংলার মানুষ শুধু হিংসার রাজনীতি ও জামাতি তান্ডবে অসুস্থ হয়ে পরেছে, এই প্রজন্ম আমাদের সমাজে নতুন আসার আলো জালিয়েছে। আসুন এই প্রজন্মকে আমরা সবাই সেই ৭১ এর অনুপ্রেরনায় উত্সাহিত করি।

৫| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৫০

রেজা এম বলেছেন: আপনার slogan টা আমার ফেবু টে status দিলাম।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৬

আফরোজা সোমা বলেছেন: ধন্যবাদ, রেজা। ভালো থাকবেন।

৬| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১২

হাবিব০৪২০০২ বলেছেন: সকল রাজাকারের ফাসি চাই তবে এ দায়িত্বটা বিচারপতিদের উপর ছেড়ে দেই আর মুক্তিযোদ্ধা , শহীদ পরিবার তথা সাক্ষীদের উৎসাহিত করি তারা যেন আদালতে গিয়ে সাক্ষী দেন।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১১

আফরোজা সোমা বলেছেন: জ্বী হাবিব, ভালো বলেছেন। তবে কি-না আইনের মেলা ফাঁক-ফোকর। চেনা-জানা খুনিকেও নির্দোষ হিসেবে আদালতে প্রমান করতে পারেন ঘুাগু অ্যাডভোকটে। সুতরাং, জেনে-বুঝেও যে খুনিকে নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগ আইনের খাতায় আছে তা কি বিবেকের খাতায় পারে দায়মুক্ত হতে?

এইখানে, এই যুদ্ধপরাধীদের ক্ষেত্রেও মনে হয়, পপুলার পিপলস পারসেপশান এবং প্রচলিত আইনের মধ্যে হয়তো থাকতে পারে কোনো শুভংকরের ফাঁকি।

৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

ধ্রুব মহাকাল বলেছেন: খুবই খুশি হয়েছি রাজনীতি মুক্ত রাখার
জন্য ।তবু একটি প্রশ্ন :
রাজাকার কি জামায়াত আর
BNPতেই ছিল?
আওয়ামীলিগ আর জাতীয়
পার্টি তে কি রাজাকার ছিল না ?
থাকলে ওদের বিচার
হচ্ছে না কেন?
কেন হাছিনার বেয়াইয়ের বিচার
দাবি করা হচ্ছেনা ?
কেন স্লোগান তোলা হচ্ছে না :
ম তে মশাররফ
তুই রাজাকার তুই রাজাকার ।
শাহবাগ এ
যারা গেছেন তাদের কাছে এ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর চাই ।
যদি না পারেন , তাহলে মনে করব
আপনারা কোন দলের কতিপয় সমর্থক
মাত্র ।

৮| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০২

ফিদাতো মিশকা ফ বলেছেন: আপনি খুব যত্ন নিয়ে পুরোটা লিখেছেন । আমি মুগ্ধ । আশা করি আমরা রাজাকার মুক্ত বাংলা পাব

৯| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:১০

সুলতানা শিরীন সাজি বলেছেন:
ভালো লিখেছেন সোমা।

শাহবাগের আগুন আজ ছড়িয়ে গেছে সবখানে....................

আগুনের ধর্ম পোড়ানো।
শাহবাগ এর আগুন পোড়াচ্ছে না..........মোমের মতন জ্বলছে।
আগ্নেয়গিরীর মতন লাভা ছড়াচ্ছে.........সেখানে ভাসছি সবাই।

অসম্ভব সুন্দর পাখীর ডাক শুনছি।
ফাগুনের কোকিলের ডাক.......ডাকছে লাকী,ডাকছে তারুণ্য.....
সেই সুরে ভাসছি সবাই.........

শুভেচ্ছা রেখে গেলাম।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০২

আফরোজা সোমা বলেছেন: এতো সুন্দে করে আপনি মনের কথা লিখে রেখে গেলেন! অনেক ধন্যবাদ, সাজি।

ফাল্গুন আসতে না আসতেই বিপ্লবের বসন্ত যে ফুল ফুটিয়েছে শাহবাগে, সেই ফুল সারা বাংলায় ফুটবে। রাজাকারের বিচার চেয়ে যে মানুষ একত্রিত হয়েছে, নিপীড়িত মানুষের হয়ে নিশ্চয়ই আবারো একদিন কথা বলবে সেই মানুষ।

অনেক শুভেচ্ছা রইলো।

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.