![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শীত আমার শত্রু নয়। বন্ধুও ছিল না কোনো দিন। একটা মুখ-ব্যাদান-করা সম্পর্কই আমার শীতের সাথে। আজীবন। কিন্তু জীবনে এই প্রথম টের পেলাম শীত আমার প্রেমিক। গোপন প্রণয় তার সাথে হয়েছিল আর জনমে।
আর জনমের সেই প্রেম, সেই স্মৃতি আজ দু’দিন হলো এই জনমে এসে আবার আমাকে মনে করিয়ে দিয়ে গেছে কুয়াশার ঘ্রাণ।
ফলে, প্রাণ আমার উচাটন। আনচান। কাতর।
আনচানের কারণ কতটা শীত, কতটা স্মৃতি আর কতটা নিজের কাছে নিজে ফিরতে না পারার সত্য তা জানি না। তবে, আজ ভোরে মন বড় আনচান হয়েছে। মনে হয়েছে, আহা! এই জৌলুস ছেড়ে, জাদু মন্ত্রে ভরা এই কামরূপ-কামাক্ষাসম নগর ছেড়ে যদি আরবার, যদি আরবার ফিরে যাওয়া যেতো সেই কুয়াশার ভেতর! অমল ধবল মোহময় কুয়াশার ভেতর অবর্ণনীয় শীত-ঘ্রাণের মায়া নিয়ে যদি আবার হারিয়ে যাওয়া যেতো ধানকাটা এক আদিগন্ত মাঠের ভেতর!
সেই মাঠ আছে। স্মৃতির ভেতর। সেই স্মৃতি জমেছিল আমার নানুবাড়িতে। শীতের ভোর, ভোরের কুয়াশায় ভেজা খড়, বিচালি, গাছ, মরিচের সাদা ফুল, লাউয়ের সবুজ ডগা, বড়ই গাছের খাঁজকাটা পাতা সব কেমন সদ্য স্নান সেরে পুকুর থেকে উঠে আসা নতুন বৌয়ের মতন ভেজা! যেনো বৌয়ের ভেজা চোখের পাতা। যেনো বৌয়ের ভেজা চোখের ভ্র। যেনো বৌয়ের ভেজা কেশরাশী। যেনো বউয়ের ভেজা অঙ্গ জুড়ে কত রকম মায়া!
কুয়াশায় মাখামাখি হয়ে থাকা এই জগত থেকে কেমন একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ তৈরি হয়। ভিজে চুপচুপা হয়ে থাকা ঘাসের গালিচায় যে ঘ্রাণ, ভেজা ধানের ক্ষেতে যে ঘ্রাণ তার কোনো ডাক নাম আমি জানি না।
টিনের চালে টুপটাপ করে রাতভর ঝরতে থাকা শিশির, ভোরের ঘন কুয়াশার ভেতর প্যাক-প্যাক করে ডেকে উঠা হাঁস, কক-কক করে ডেকে উঠা মুরগি, হাম্বাআআআআ বলে ডেকে উঠা গরু, ওয়াঁয়াঁয়াঁ বলে মিহি স্বরে কেঁদে ওঠা দুধের শিশুর আওয়াজ আমার সেই জীবনের সাথী। তারা আমার গল্পের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকা চরিত্র।
তাদের সবার আছে নিজস্ব ঘ্রাণ। সেইসব ঘ্রাণের সাথে মাখামাখি হয়েছে কুয়াশা; মাখামাখি হয়েছে গোয়াল ঘর থেকে আসা ধোঁয়ার গন্ধ; আগুন পোহানোর জন্য বাড়ির উঠোনে জ্বালানো অগ্নিকুন্ডের ধোঁয়ার গন্ধ; হেঁসেল থেকে আসা রান্নার খড়-কাঠ-বাঁশ আগুনের ধোঁয়ার গন্ধ। এইসব গন্ধেরা কুয়াশার সাথে মাখামাখি হয়ে যে গন্ধের জগত তৈরি করে তা অবর্ণণীয়। সেই বর্ণনাতীত জাদুর জগত আমার স্মৃতির ভেতর ঢুকে আমাকে আমার থেকে হঠিয়ে দিয়ে নিয়েছে আমার দখল। অথচ আমি তা জানি না! আমি তা জানিনি! আমি তা জেনেছি এই মাত্র দু’দিন!
সেই দু’দিনের কথা বলতে বসার আগে এইখানে গেয়ে রাখা ভালো যে, কর্মস্থল ধানমন্ডি থেকে বনানী পাড়ায় বদল হবার পর থেকেই শেষ রাত বা ভোর নাগাদ ঘুমোতে গিয়ে বেলা করে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসটার ছুটি হয়েছে। স্কুল পড়ুয়া মেয়ের মতন 'আর্লি টু বেড আর্লি টু রাইজ' এখন জীবনের ব্রত।
তারই ধারাবাহিকতায় ভোরবেলায় গত দু’দিন ফাঁকা রাস্তায় যখন বেরোই তখন কেমন যেনো চারপাশ থেকে একটা গন্ধ এসে আঁকড়ে ধরতে থাকে। আমি নেশাতুরের মতন সেই গন্ধ বুকে টেনে নিই। লম্বা দমে আমি এই ঘ্রাণ টেনে নিই আমার ভেতর। এই ঘ্রাণ টানতে টানতে আমার মনে হয়েছে আরে! কেমন যেনো চেনা চেনা! তারপর এক ঝটকাঁয় আহা! আমার সেই মায়ার জগত কেমন উন্মোচিত হয়ে যায়।
আশৈশব শীত মানে নানুবাড়ি। নভেম্বর-ডিসেম্বর নানুবাড়ি। ধানকাটা মাঠ, শীতের বিকেল, শীতের সন্ধ্যা, শীতের রাত, শীতের রাতের ওয়াজ, শীতের রাতের যাত্রা, শীতের রাতে রাতভর টিনের চালে টুপটুপাটুপ শিশির ঝরার সঙ্গীত, শীতের ভোরে পসর হওয়ার আগেই জেগে ওঠা, শীতের ভোরে অগ্নিকুন্ডের চারিপাশে গোল হয়ে আগুন পোহানো, আগুনে আলুসিদ্ধ দেয়া, আগুনে ডিমের ভাঙা খোসার ভিতর কয়েকদানা চাল ও খানিক পানি ভরে দিয়ে ভাত রেঁধে খাওয়া, বাটিতে করে মুড়ি বা খইয়ের সাথে গুড় নিয়ে পুকুর পাড়ে বসে রোদ পোহাতে পোহাতে দূর হতে দেখা ভোরের ট্রেন! এইসবই আমার শীত। শীতের গন্ধ। আমার নানুবাড়ি।
ঢাকা শহরে ভোরের কুয়াশার গন্ধেই কি-না জানি না ভোরটা আজ দু’দিন হলো বড় মায়াময় লাগছে।একি মায়া না জাদু আমি জানি না। কিন্তু এর ঘোর বড় তীব্র। এর ঘাত বড় বেশি। আজ ভোরে নগরের এই কুয়াশার গন্ধ এতো তীব্রভাবে আমাকে মনে করিয়ে দিল আমার নানুবাড়ির কুয়াশাময় শীতের ভোর, ভোরের পুকুর, পুকুরের পাড়ে বড়ই গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে পুকুরের জলে পড়া রোদ আর হাতে মুড়ি বা খইয়ের বাটি নিয়ে পুকুর পাড়ে বসে রোদ পোহাতে পোহাতে দূর থেকে হুঁইসেল বাজিয়ে আসা আচনক রেলগাড়ির অপেক্ষায় থাকা সেই ছোট্ট মেয়েটির কথা।
মেয়েটির বয়স বেড়েছে। ক্লাস ওয়ান থেকে বাড়তে বাড়তে ক্লাস এইটে ওঠেছে। তবু, প্রতিবছর স্কুল পরীক্ষা শেষে নানুবাড়ি ছিল তীর্থস্থল। সেই সময় থাকতো শীত। শীত ক্রমে গাঢ় হয়েছে। কুয়াশা ক্রমে গাঢ় হয়েছে। মায়ার জগত ক্রমে গাঢ় হয়েছে। ক্লাশ এইটের পর নিয়ম করে এই শীতে নানুবাড়িও আর যাওয়া হয়নি কখনো। কিন্তু আজ ঢাকা শহরের এই কুয়াশার সাদৃশ্যময় গন্ধ তাকে মনে করিয়ে দিল মেয়েটির বয়স বাড়েনি! সে হাতে গুড়সহ মুড়ি বা খইয়ের বাটি নিয়ে পুকুর পাড়ে বসে রোদ পোহাচ্ছে। আর অপেক্ষা করছে কখন আসবে ট্রেন! কখন বাজবে হুইসেল!
কিন্তু জীবনের কত কত শীত তো আমার নিজের বাড়িতেও গেছে। সেই শীতের স্মৃতি ফিঁকে কেন! কেন এতো মায়াময় নয়! নিজেকে নিজেই এই প্রশ্ন করে বোকা বনেছি। নানুবাড়ি! আহা! আমার তীর্থস্থল। বই নেই। পড়া নেই। তাড়া নেই। মায়ের শাসন-বকুনি নেই। শুধু প্রশ্রয়। শুধুই খোলা মাঠ! আর আমার বাড়িতে শীতেও স্কুল, কলেজ, প্রাইভেট এইসব যত না-পছন্দ কাজ। কিন্তু নানুবাড়ি! আহা! সেখানে শীত ও কুয়াশা নিয়ে আমার জন্য আজো স্মৃতির ভেতর অপেক্ষা করে পুকুরঘাট, রোদ, ও রেলগাড়ি; সেখানে পুকুরপাড়ে বসে হুঁইসেলের অপেক্ষায় রত তখনো ট্রেনে না চড়া এক ছোট্ট মেয়ে।
কিন্তু হুঁইসেল বাজে না। বাজবে না। নাকি হুঁইসেল বাজে? বাজছে? আর তা শুনতে পেয়েই সে মেয়ে হয়েছে কাতর! কী জানি!
তবে, আজ এই সকালে কাতর মেয়েটির মনে হয়, আহা! আহা! যদি এমন হতো! এক জীবনের বদল দিলে যদি আরেক জীবন হতো! তাহলে এই কেতাবী বিদ্যার মায়া, গোলক ধাঁধাঁর এই নগর, কেতা করে পড়া এই বাহারী শহুরে পোশাকের জীবন বদলে আরেকটিবার যেতো সে সেই পুকুর পাড়ে।
পুকুর পাড়ে এসে পড়তো এক চিলতে রোদ। রোদের মধ্যে গুড়সমেত খই বা মুড়ির বাটি নিয়ে বসে থাকতো মেয়ে। বসে বসে সে করতো দূর থেকে হুঁইসেল বাজিয়ে আসা একটা ট্রেনের অপেক্ষা। অপেক্ষার সেই সময়টুকুতে সে দেখতো, পুকুরের জলে বড়ই পাতার ছায়া পড়েছে। পুকুরের পাড়ে নোয়ানো তাল গাছের উপর উঠে খেলছে একটা শিশু। পুকুরের ঘাটে থালা-বাসন মাজতে নেমেছে এক নারী। গঞ্জে যাবে বলে নাইতে নেমেছে এক পরুষ। সে শুনতো, হাম্বাআআআ রবে ডাকছে গাই। সে টের পেতো পুকুরের পানি থেকে কেমন আসছে একটা জলো গন্ধ। সেই গন্ধের সাথে শীতের রোদ মিশে তৈরি হচ্ছে আরেকটা অন্য ঘ্রাণ। কিন্ত সেই ঘ্রাণকে যায় না করা বর্নণা। তাকে শুধু টের পেতে হয়। শ্বাসে টেনে নিলে তাকে বুকে ভরা যায়। আর বর্ণনায় সে হারায়। হারায়। হারায় ...
২৯.১২.১৬
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫২
আফরোজা সোমা বলেছেন: প্রথম মন্তব্যটাই আপনার দেখে ভালো লাগলো, কালীদাস। আমি কখনোই শীত পছন্দ করতাম না। আমার স্মৃতিতেই নেই যে আমার কখনোও শীত ভালোলেগেছে। কিন্তু এই ক'দিন হলো আবিষ্কার করলাম শীতের গন্ধ আমাকে, আমি বোঝার আগেই, দখল করে নিয়েছে!! হায়! জীবন এমনি বুঝি!
তবে, হ্যা, শীতের পিঠা-পুলি খেতে খুব আনন্দ। আপনি শীত-প্রিয় মানুষ জেনে ভালোলাগছে। আমারো কাছের মানুষ আছে কেউ কেউ যারা খুব শীত ভালোবাসে।
ভালো থাকবেন।
২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪২
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
শীত আসলেই মজার
শুধু পিঠা খেতে মন চায় ।
সুন্দর লিখেছেন ।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৩
আফরোজা সোমা বলেছেন: হ্যা, শীত সুন্দর। মানুষকে কেমন গ্রাস করে ফেলে শীত। তবে, এই ঋতুতে অতিদরিদ্র ওপথের মানুষদের কিন্তু কষ্ট
৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৩
সাইফ হাসনাত বলেছেন: বাহ। বেশ লিখেছেন তো। কয়েক মুহূর্তের জন্য নস্টালজিক হয়ে গেলাম।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫৫
আফরোজা সোমা বলেছেন: লেখাটা আপনার ভালো লেগেছে দেখে আমারো খুব ভাল্লাগলো, সাইফ। ভালো থাকবেন।
৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১২
প্রামানিক বলেছেন: পড়তে গিয়ে শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। শীত নিয়ে চমৎকার স্মৃতি কথা তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ এমন পোষ্টের জন্য।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৩
আফরোজা সোমা বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ার জন্য এবং আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
৫| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৩
সৈয়দ আবুল ফারাহ্ বলেছেন: শীত... প্রিয় শীত .... রাতে কুয়াশার টুপ-টাপ শব্দ.... সকালে কুয়াশায় ভেজা ঘাস ..... শীতের পিঠা . . . বেড়াতে গেলে অফিস, স্কুল, কোন কিছুর টেনশন নাই।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৩
আফরোজা সোমা বলেছেন: হুম, টেনশান মুক্ত জীবন।
৬| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১০
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
শীত শিল্পায়িত হলো দারুণভাবে!
মনে হচ্ছে আমারও শীত ভালো লাগে, যদিও আমি বসন্তের ভক্ত। কিন্তু শীত তো যথেষ্ট শীত লাগে না
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩১
আফরোজা সোমা বলেছেন: বসন্ত তো দারুন ঋতু! বসন্তের হাওয়া একটা খুনী। ওই খুনী হাওয়াকে নিয়ে আমার একটা লেখা আছে। সময় থাকলে দেখতে পারেন।
আর ঢাকায় শীত লাগবে কেমনে! এতো এতো বিল্ডিং, জেনারেটর.. তবে, ঢাকার বাইরে শীত সুন্দর।
৭| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৫
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
// বসন্তের হাওয়া একটা খুনী।// যা বলেছেন! প্রকৃতির সবিশেষ উপহার।
বসন্তের লেখাটি পড়ার চেষ্টা থাকবে।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৫
আফরোজা সোমা বলেছেন:
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৩
আফরোজা সোমা বলেছেন: এইটা সেই খুনী হাওয়ার লিংক।
http://www.somewhereinblog.net/blog/afrojashomabdblog/29923331
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩১
কালীদাস বলেছেন: আমিও শীতের ভক্ত। নাহ, মহা ভক্ত, সারা বছর শীতের জন্য অপেক্ষা করি। কুয়াশা ঠিক না, শিশিরভেজা ঘাসে গন্ধ ভাল লাগে, এখন তো আর তেমন পাই না আগের মত
আশেপাশের লোকজন সবাই শীতের দেশের, এমনকি রাশান লোকজনও অবাক হয়ে যায় শীতে আমার স্ট্যামিনা দেখলে। স্নো পড়ে, আমি খুশির চোটে লাফাই- পাশের লোকজন অবাক হয়। তবে মাইনাস ১৫ এর নিচে নামলে তখনও এই স্ট্যামিনা থাকবে কিনা এখনও জানি না 
মিস করি ছোটবেলায় শীতের সেই আমেজ, সেই পিঠা, সেই.....!!