![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তার মাথার মধ্যে কিছু নাই। মনের মধ্যেও না। ধ্যানের মধ্যেও না। সে একটা না। না। আগে পরে আর কিছু নাই। সে একটা বাক্স। বোকা। ফাঁকা। পড়ে আছে চৌকির তলায়। বহুদিন। তার ভেতরে এসে বেঁধেছে বাসা কয়েকটা তেলাপোকা। সে একটা পিতলের ঘটি। সেই ঘটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছাই দিয়ে সকালে ঘাটে মাজে সোনাবউ। ঘটিতে জল ভরে বউ নিয়ে যায় ঘরে। গৃহে। শান্তির নীড়ে।
তারপর একদিন কী জানি কী হয়। জানে না কেউ। সেই গৃহে ঢুকে সাপ। সেই গৃহে মরে যায় লখিন্দর। ঘটিটা রেখে, গৃহটা রেখে শান্তিটা চলে যায়। লখিন্দরও যায়। ভেলায়। অজানায়। সোনাবউও যায়, লখিন্দরের ভেলায়। ভেলা ভাসে। ভাসে। ভাসে।
ভাসতে ভাসতে দরিয়া মাঝে দেখা দেয় এক জাহাজ। বিরাটকায়। যেনো চান সওদাগর ফিরছেন বাণিজ্য হতে। যেনোবা রাজার কুমার ফিরছে দূর রাজ্য হতে শিকার শেষে। দরিয়া মাঝে ভাসে আঠারো পালের জাহাজ। দরিয়া মাঝে ভেলা। ভেলায় নাম না জানা লখিন্দর। ভেলায় নাম না জানা বউ। অঙ্গ মলিন হওয়া সোনাবউ।
সোনাবউয়ের মলিন মুখে সারা রাজ্যের মায়া। মায়ার টানে জাহাজ থামে। পালের আড়াল থেকে বের হয় বিরাট শরীর। সেই শরীর সওদাগরের নয় । সেই শরীরে নাই কোনো রাজার কুমার। সেই শরীর নিয়ে সামনে আসে ডাকাত সর্দার। সোনাবউয়ের মায়ায় পড়ে ডাকাত। জাহাজের ধার ঘেষে দাঁড়ায় ডাকু। শীষ্যরা নিচে নামে। ভেলা আটকায়। ভেলা ভাসায়। ভেলায় একলা ভাসে শায়িত লখিন্দর। বেহুলাকে তুলে আনে ডাকাতের দল। বেহুলা কাঁদে। আছারি-পিছারি কাঁদে দরিয়ার উপর।
দরিয়ার হৃদয় নাই কোনো। দরিয়া বোঝে না দুঃখিনীর ভাষা। দরিয়া বোঝে না মলিন অঙ্গ। দরিয়া বধির। দরিয়া কাঁপে। সেই কাঁপায় যেই নিনাদ হয় ‘সে’ সেই নিনাদ; ‘সে’ সেই বোকা বাক্স। বাক্সের ভেতর নিনাদ। নিনাদের ভেতর বাক্স। একেরে জড়ায়ে অন্য বাঁচে। একেরে জড়ায়ে অন্য মরে। পরস্পরেরে জড়ায়ে তারা পায় নিজের সন্ধান। এর আগে পরে আর কিছু নাই।
সে একটা না। না। চৌকির তলায় একটা খালি বাক্স; না। বাক্সের ভেতর কয়টা তেলাপোকার সংসার; না। সোনাবউয়ের হাতে ঝলমল করতে থাকা পিতলের একটা ঘটি; না। দুঃখীনির কান্না না বোঝা একটা দরিয়া; একটা না। না। এর আগে পরে আর কিছু নাই।
ডাকাতের জাহাজে বেহুশ বেহুলা। সে ভাসে। তার ঘুমের ভেতরে ভাসে লখিন্দর। তার ঘুমের ভেতরে সোনাবউ বানায় জাদু। দেহ তার পরে থাকে খাটে। জাহাজে। আর তার ভেতরের জাদুর পাখি ডাকাতের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। দূরে। ভেলায়। সাপে কাটা লখিন্দরকে নিয়ে সে যায় সন্ধানে। পাতালের।
যায় সর্পরাজের দেশে। সে নাচে। মলিন অঙ্গে তার পেলব মুদ্রা ওঠে। পায়ের পাতা তার অবশ হয়ে আসে। অবশ হয়ে আসে। সোনাবউয়ের নৃত্যের ঘূর্ণনে ঘূর্ননে সর্পরাজের বুকের ভেতর তুমুল ঘূর্ণি ওঠে। তুমুল মায়া জাগে। জেগে উঠে চোখ মেলে লখিন্দর। কিন্তু সোনাবউ নাই। ঘুমের ভেতর সে বানায় জাদু। ঘুমের ভেতর লখিন্দরেরে সে করে জীবন দান। ঘুমের ভেতর সে করে প্রাণপাত। তবু তাকে ঘিরে থাকে ডাকু সর্দার। তবু তার মলিন মুখের মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ডাকু। মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বুকের ভেতর অবশ-অবশ বোধ করে ডাকাত সর্দার।
কিন্তু মায়ামুখ নাই। নিয়েছে বিদায়। ডাকাত তাকে দরিয়ায় করে সমর্পন। দরিয়া তাকে করে বরণ। দরিয়ায় ভেসে লখিন্দর ফিরে গৃহে। দরিয়ায় সোনাবউ ডুবে যায়। সোনার মূর্তির মতন। পিতলের ঘটির মতন। ফাঁকা; ফাঁপা; বোকা বাক্সের মতন। ডুবে যায় জলের তলে। দরিয়ার নিনাদের মতন জেগে উঠে আবার হারায়। নাই হয়ে যায় সোনাবউ। তার আগে পরে আর কিছু নাই।
‘সে’ একটা সোনাবউ। ‘সে’ একটা না। না। তার আগে পরে আর কিছু নাই।
১৭.০১.১৭
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫৪
আফরোজা সোমা বলেছেন: একবার মনে হয় চৌকির তলায় ছিলাম, ওই বোকা বাক্স হয়ে। আরেকবার মনে হয় ছিলাম দরিয়ার ওপর। নাকি মেঘের উপরেই ছিলাম? জানি না ঠিক।
২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৬
রিভার্স বলেছেন: অসাধারণ লেখা। ক্যামনে লিখলেন এইটা?
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫৬
আফরোজা সোমা বলেছেন: কেমনে লিখলাম জানি না। অসাধারণ হয়েছে কিনা তাও জানি না। শুধু জানি, পিতলের ঘটি ডুবে যায়। দরিয়ায়।
ভালো থাকবেন।
৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৩
অতৃপ্তচোখ বলেছেন: সুন্দর মজা করে পড়লাম সোনাবউ/বেহুলার গল্প।
এমন অনেক সোনাবউ অনেক বেহুলা আমাদের সমাজের আনাচে কানাচে পড়ে আছে। যারা নিজেকে হারিয়ে দিয়ে বহু লখ্খিন্দরকে জিতিয়ে। নিজে হয়ে যায় নিঃশেষ। শেষ করে নিজের স্বাদ আহ্লাদ ,বিসর্জন দিয়ে সুখ শান্তি ,রঙিন স্বপ্ন ,সবকিছু হারিয়েও স্বামী পূঁজারী হয়ে দিয়ে যায় সেবা ,শ্রম, ভালোবাসা, সযতনে সাজায় সংসার। বিনিময় ! বিনিময়ে হারিয়ে যায়, তলিয়ে যায় জীবনের নিয়মে অকৃতজ্ঞ সংসারে।
কবিকে অসংখ্য শুভেচ্ছা ,সুন্দর করে তুলে ধরেছেন স্বামী ব্রতী নারীর নিঃশেষ হওয়ার গল্প।
সোনাবউ'রা ভালো থাকুক
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫৭
আফরোজা সোমা বলেছেন: স্বামীব্রতী নারীর নিঃশেষ হওয়ার গল্প কি-না তা জানি না। তবে, সোনাবউরা ভালো থাকুক। আপনিও ভালো থাকবেন। অণেক শুভ কামনা।
৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪১
Syeed Rafiqul Haque বলেছেন: পড়েছি। আর খুঁজেছি গল্পের পয়েন্ট অব ভিউ।
ভালো লেগেছে।
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫৮
আফরোজা সোমা বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সেই পাঠানুভূতি জানানোর জন্য আরো কৃতজ্ঞতা। কিন্তু পয়েন্ট অফ ভিউ খুঁজে কী পেলেন তা তো বল্লেন না। জানার আগ্রহ রইলো।
ভালো থাকবেন।
৫| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২৩
আহা রুবন বলেছেন: ভাল-লাগল! গল্পের কথনভঙ্গি বেশ। শুভ কামনা রইল।
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫৯
আফরোজা সোমা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, আহা রুবন। আপনার জন্যও অনেক শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
৬| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৩
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্প পাঠে মুগ্ধতা পেলাম, গল্পের কথন অত্যন্ত আকাঙ্খা প্রবনছিল ।ভাল লাগার সবটুকু।
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮
আফরোজা সোমা বলেছেন: শুকরিয়া। ভালো থাকবেন।
৭| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৫
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: বেশ ভাল লাগল
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮
আফরোজা সোমা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, সোহেল। ভালো থাকবেন।
৮| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২৭
ভাবুক কবি বলেছেন: অনবদ্য লিখেছেন
তা আকাশেই থাকেন আর চৌকির নীচেই থাকুন
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৪০
আফরোজা সোমা বলেছেন: সকল প্রশংসা পাঠকের। যিনি হৃদয়ঙ্গম করেছেন। ভালো থাকবেন।
৯| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৪
শামীম সরদার নিশু বলেছেন: এতো সুন্দর লেখা আগে কখনো দেখিনি। কোন কলম দিয়ে লিখেন
খুব সুন্দর লিখেছেন আপু, পাঠে খুব ভালো লাগল।
পাঠ করতে করতে নাম না জানা সোনা বউকে দেখতে পাচ্ছিলাম।
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৭
আফরোজা সোমা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, নিশু। খুব ভালো থাকবেন।
১০| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫০
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
লেখাটি হৃদয়গ্রাহী, প্রাণবন্ত !! লেখার বাক্যবিন্যাস ও ভাবের টানটান প্রকাশে শুধুই মন্ত্রমুগ্ধতা!!
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৮
আফরোজা সোমা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, ভ্রমরের ডানা। আপনার যে ভালো লেগেছে সেটা জেনে আমারো ভালো লাগছে খুব। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১০
চাঁদগাজী বলেছেন:
লেখার সময় মনে হয়, মেঘের উপর ভাসছিলেন?