নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা

নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাগলিনী ও হাঁসের ছানা

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৯

মাথার উপর শরৎ। মাথার উপর আশীর্বাদের মতন শান্ত স্বচ্ছ নীলাকাশ। আকাশের কোল ভরা থোকা থোকা ধবধবে সাদা মেঘ। শরতের শুভ্র নীল আকাশের নিচে রাস্তায় প্রাণ আঁইঢাঁই করা জ্যাম। এই জ্যামে বাইকের পিছনে বসে-বসে কত যে গল্প চোখে পড়ে!

ভুঁড়িওয়ালা বড় কর্তা পুলিশের স্ফীত বপুর চাপে নাভির নিচে নেমে আসা কোমরবন্ধনী। তিনি তাতে বারে বারে পরশ বোলাচ্ছেন। দেখে মনে হয়, মুদ্রা দোষ। তার পাশেই হাড় জিরজিরে, তোবড়ানো গাল, আর প্রায় কোটরাগত কিন্তু বড় বড় টলটলে চোখের কনস্টেবল। তারা দু’জনে একসঙ্গেই খাড়া।

তাদের মতই একঠাঁয় দাঁড়িয়ে এই ক্লান্ত নগর। নগরের পেটের ভেতর একদল পোকামাকড়ের মতন আমরা কিছু মানুষ। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত এক বাবুকে দেখলাম পেছনের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আর লোকেরাও যে যার মতন। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে এগিয়ে যাচ্ছে ভিখিরির হাত। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে হাঁক দিয়ে উঠছে হকারের গলা।

এরই মধ্যে দেখি, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনের ফুটপাথ ধরে প্রাণ খুলে হাসতে হাসতে হেলে-দুলে এগিয়ে আসছে এক আলুথালু পাগলিনী। মন খুলে সে খিল খিল হাসছে আর খুব আহ্লাদ ভরে কারো সাথে বলছে কথা। বুকের ডান পাশে তার দুইটা হাত এমনভাবে ধরে রাখা, দেখে মনে হয় কিছু একটা বুকের মধ্যে গভীরভাবে জড়িয়ে রেখেছে যেনো।




তার খিল খিল হাসি, আহ্লাদে গলে যাওয়া আলাপ আর বুকের মধ্যে কিছু একটা জড়িয়ে রাখার ভঙ্গি সবাইকে তার দিকে টেনে নেয়। খুব কাছাকাছি এলে দেখি তার বুকের মধ্যে একটা হাঁসের ছানা। হলুদেটে গা। মাঝে মাঝে দু’য়েকটা জায়গায় পাখনার রং একটু ঘিয়া-ঘিয়া। এই দেখে আমার রাইডার বলেন, ওহ! এইটা তো হাসের বাচ্চা! পাইলো কই এমন ছোটো বাচ্চা!

আর কেউ কী বলেছে অতো কথা কানে আসেনি। কিন্তু শরতের আকাশ ভুলে সবার নজর তার দিকেই। যেনো সে জ্যামবন্দী নগরে মুহূর্তের শীতল বাতাস।

আলাপ থেকে উদ্ধারকৃত মনোলগের দুই একটা এরকম: খিক খিক খিক . .. হি হি হি. .. তুমারে থইয়া অহন যাইগা .. যাইগা . . হিহিহি .. কী করবা তুমি .. আমি যাই গা. . যাই গা হি হি হি আমি . ..




এইসব বলতে বলতেই ছানাটিকে হুট করে বুক থেকে নামিয়ে রাখে আমার সামনেই একটা গাছের গোড়ায় সবুজ ঘাসের উপর। ছানাটিকে রেখে পাগলিনী চলে যাবার ভান করে। যেতে যেতে দুষ্টুমিচ্ছলে ফিরে ফিরে চায়। চেয়ে হাসে। খিল খিল। খিল খিল।
কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে সে ফিরে আসে। হাসের ছানার কাছে। ছানা চিঁ চিঁ করে আওয়াজ করে। পাগলিনী উবু হয়ে হাত বুলায় হাসের ছানার মাথায়, গালে ও পাখনায়। হাত বোলাতে বোলাতে বলে, হি হি হি .. তুমি থাকো। আমি যাই গা। হি হি হি করে হাসতে হাসতে সে চলে যেতে থাকে। যেতে যেতে পেছনে তাকায়।

এমন সময় হাঁসের ছানা পাগলিনীর পিছু নেয়। টলমল টলমল করে সে ছুটতে থাকে পাগলিনীর পিছু। পাগলিনী এই দেখে খুশী হয়। খুশী হয়ে আরো হাসে। হাসতে হাসতে বলে: যাও। যাও।




কিন্তু হাঁসের ছানা টলমল করতে করতে তার পিছে যায়। পিছুটানের দিকে চেয়ে পাগলিনী আবার সশব্দে হাসে। হেসে খপ করে আবার বুকে তুলে নেয় ছানাটিকে। নিয়ে সে হাসতে হাসতে হাঁসের ছানার সাথে আলাপ করতে করতে এগিয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনের বাঁধানো ফুটপাথ ধরে। তার যাওয়ার রেখা ধরে কয়েক জোড়া উৎসুক চোখ চেয়ে থাকে। পাগলিনী সেসব দেখে না।

আমি দেখি। আর ভাবি রবিন্দ্রনাথের কবিতা:

পাগলিনী, তোর লাগি কী আমি করিব বল্‌।
কোথায় রাখিব তোরে খুঁজে না পাই ভূমণ্ডল

আমার তাড়া নেই। তাই দেখি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। ভালোবেসে। দেখি, পাগলিনীর বুক আলো করে আছে এক হাঁসের ছানা। দেখি, পাগিলীনির বুকের মধ্যে হাঁসের ছানার দৃশ্য দেখে নগরবন্দী মানুষেরা ক্ষণিকের জন্য ভুলে যায় জীবনে বিতৃষ্ণা ধরানো জ্যাম ও হর্নের উৎপাত।

দেখি, শরতের আকাশের নিচে আমরা পাগল ও পাগলিনী দল। ছুটছি। আমাদের পিষে মারছে এই শহর। আমরা ছুটছি। আমাদের অনেকেই বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখছি হাঁসের ছানা। আমরা ছুটছি। আমাদের খা খা বুক। অলক্ষ্যে আমাদের প্রার্থনার আড়ালে লুকিয়ে থাকে হাসের ছানা।

২৫.০৮.১৭


মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:০৫

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল। ধন্যবাদ

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৪

আফরোজা সোমা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৩

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: সব সত্য।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫

আফরোজা সোমা বলেছেন: :)

৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭

সিনবাদ জাহাজি বলেছেন: অনেক সুন্দর লিখা।
এমন দৃশ্য চোখে অনেকেরি পরে কিন্তু লিখায় পুরা বর্ননা ফুটিয়ে তুলতে পারে কতোজন?
বর্ননা পড়ে মনে হচ্ছে যেন আমিও ছিলাম ওখানে।
আর বর্ননা শেষে দুইটা লাইন " আমরা ছুটছি। আমাদের অনেকেই বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখছি হাঁসের ছানা। আমরা ছুটছি। আমাদের খা খা বুক। অলক্ষ্যে আমাদের প্রার্থনার আড়ালে লুকিয়ে থাকে হাসের ছানা।

+++

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৬

আফরোজা সোমা বলেছেন: শুকরিয়া। আপনার কল্যাণ হোক।

৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৯

আখেনাটেন বলেছেন: চমৎকার।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭

আফরোজা সোমা বলেছেন: শুকরিয়া।

৫| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:১৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: আফরোজা সোমা ,




অদ্ভুত সুন্দর একটি লেখা । পথ চলতে গিয়ে হাযারো কিসিমের তামাশা দেখেও যেখানে আমরা আসলে কিছুই দেখিনে , সেখানে আপনার চোখে একটি বিরল দৃশ্যের ধরা পড়া আর তা থেকে ঊঠে আসা একটি দর্শন , আবেগীয়। চমৎকার ।

"""তাদের মতই একঠাঁয় দাঁড়িয়ে এই ক্লান্ত নগর।"""" দু'জন পুলিশের দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যের সাথে মিলিয়ে সুন্দর একটি রূপকল্প ।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭

আফরোজা সোমা বলেছেন: শুকরিয়া। ভালো থাকবেন। আপনার কল্যাণ হোক।

৬| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৫২

সুমন কর বলেছেন: আপনি শুধু পোস্ট দেন !! মন্তব্য করেন না !!

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৮

আফরোজা সোমা বলেছেন: 'ক্ষম, ক্ষম অপরাধ' ।

৭| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:২২

বিজন রয় বলেছেন: আপনার লেখনীতে সাধারণ কিছু মূল্যবান হয়ে ওঠে।

আপনার কবিতাগুলো বেশি সুন্দর।

সুমন কর বলেছেন: আপনি শুধু পোস্ট দেন !! মন্তব্য করেন না !!

মন্তব্য করা শুরু করুন।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৪

আফরোজা সোমা বলেছেন: সুমন করের অভিযোগটা খুবই সত্যি। আমিও একসময় ব্লগে যে কমেন্ট করতাম না, এমন নয়। এখনো ইচ্ছে করে। কিন্তু জীবন এক বলতে গেলে সময়-দাস। এরপরো ব্লগের জন্য মন কেমন করে। ফেবুতে লেখা পোস্ট দিলেও মনে হয়, ব্লগে একবার যাই :( আর তাই টুক করে একটুখানি সময় করে আসি, লেখা দিই। চলে যাই।

একথা ঠিক, আপনাদের মন্তব্যের জন্য একটা অপেক্ষা থাকে। কেন থাকে জানি না। আর মাঝে-মধ্যে কারো কারো লেখা পড়লেও কমেন্ট করা হয় না। কারণ কমেন্টের উত্তর আর ফিরে দেখা হবে না তাই। তাই, মন্তব্য না করেই থাকি। তবে এখন থেকে নিশ্চয়ই করতে চেষ্টা করবো।

ভালো থাকবেন।
ভালো থাকবেন।

৮| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৫৮

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা খুবই সুন্দর।
আছেন কেমন? :)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:৩১

আফরোজা সোমা বলেছেন: লেখা পড়ার জন্য শুকরিয়া।
ভালো আছি।
আপনি কেমন আছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.