নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা

নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিজওয়ান

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২১

আলোচিত রিজওয়ান দেখা হলো। উৎসবের শেষ শো-এর টিকিট পেতে বেগ পেতে হয়েছে বৈকি! ধন্যবাদ সেই মহীয়সীকে, নিজের বাসনা কোরবানি করে, যিনি টিকিট যোগাড় করে দিয়েছেন।

বলবো না, 'মাচ হাইপ্ড' বা 'ওভাররেটেড'। ঢাকাই দর্শকের জন্য মঞ্চে স্পেসের এই নিপুণ ও চমকপ্রদ ব্যাবহার একেবারেই নতুন।



গল্পের বয়ানে যে নন-লিনিয়ার পদ্ধতি ব্যাবহৃত হয়েছে, এতে নির্দেশকের কোনো কৃতিত্ব বা ক্যারিশমার কিছু নেই। হুবুহু এই ননলিনিয়ার ভঙ্গিতেই রিজওয়ান নামের শর্ট ফিল্মটা নির্মিত হয়েছে আগেই।

গল্পের উপস্থাপনে জীবিত ও মৃতের জগত আর অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সীমারেখা ব্লার করে দেয়া বহু পুরনো টেকনিক। ত্রিমাত্রিক এই জগতের সীমারেখা ঘুচিয়ে দেয়ার এই বিষয়টি আলো, সঙ্গীত ও অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চে স্পষ্ট করে তোলাটা খানিক কষ্টকর তো বটেই। কারণ ফিল্মে যে সব টেকনিক ব্যাবহারের সুযোগ আছে মঞ্চে তা নেই।

রিজওয়ানের স্পেস ব্যাবহার খুবই ভালো লেগেছে। ঠিক এভাবে না হলেও স্পেসকে যথাসম্ভব স্বাধীনতা নিয়ে ব্যাবহার করার চেষ্টাটা কমিউনিকেটর, সার্কাস ইত্যাদি নাটকেও চোখে পড়েছে। সেই চেষ্টারই চমক জাগানিয়া সাফল্য রিজওয়ান।



রিজওয়ানের লাইটিং দূর্দান্ত। বিশেষত, দূর থেকে ঝিলের জলের উপর দিয়ে নৌকো বেয়ে আসার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে খুবই কাব্যিকভাবে। এমনকি মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছে, এটি মঞ্চ নয়, ঝিলই বুঝি!

রিজওয়ানের মতন আলোর এতো ব্যাবহার না করেও প্রাচ্য নাটের কইন্যা নাটকে একটি পুকুরকে, পুকুরের জলকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাটাও ভালো লেগেছিল। সেই চেষ্টারই নিপুণ রূপ দেখতে পেলাম রিজওয়ানে।

রিজওয়ানের মিউজিক খুবই সিনেম্যাটিক। কিন্তু মনে হয়েছে, ইস্টার্ন বা প্রাচ্যদেশীয় 'জান্নাত'-এর গল্প বলতে গিয়ে, বিশেষত করুণ রোদনের দৃশ্যগুলোতে ওয়েস্টার্ন বা পাশ্চাত্য কায়দার রোদনের ঢং (রোদনের এই ঢং দেখতে পাবেন ট্রয় সিনেমায়। হেক্টর নিহত হবার পর তার শেষকৃত্যের সময় তা ব্যাবহার হয়। এটি পাশ্চাত্যের নিজস্ব ঢং। বহুল ব্যাবহৃত।) ব্যাবহার করাটা আমার ভালো লাগেনি। কারণ প্রাচ্যের বিলাপের, রোদনের একটা নিজস্ব স্বর বা সুর বা ধরণ আছে।

নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদের মতন প্রাজ্ঞজন নিশ্চয়ই প্র্রাচ্যদেশীয় সেই বিলাপের ঢংটি চেষ্টা করলেই তুলে ধরতে পারতেন। কেন তিনি সেই দিকে না গিয়ে 'রেডিমেড পাশ্চাত্য মিউজিক' বেছে নিলেন তা আমার কাছে একটা প্রশ্নই রয়ে গেছে।

ভীষণ বিরক্ত হয়েছি নাটকের হাসপাতালের দৃশ্যগুলো দেখে। উইট বা কমেডি বা রসবোধ বা হাস্যরস আর কাতুকুতু যে এক বিষয় নয় সেটি নিশ্চয়ই এই প্রাজ্ঞ নির্দেশক জানেন। অতি উচ্চকিত এবং পুরো নাটকের মুড-এর সাথে একেবারেই বেখাপ্পা ডায়লগ ও অভিনয়ভঙ্গি সম্বলিত হাসপাতালের দৃশ্যগুলো তিনি কেন নাটকে সংযোজন করেছেন তা বোধগম্য হয়নি।

রিজওয়ানের নামকরণ ও শৈশবের খেলাধূলার দৃশ্যও বেশ উচ্চকিতই লেগেছে। এতো উচ্চরব না করেও নিশ্চয়ই এইসব দৃশ্য দেখানো যেতে পারে।

বেমানান লেগেছে রিজওয়ানের বাবা, মা, বোন, দাদা ও ভাইয়ের (পুতুলগুলো যখন মৃতদের হাতে দেয়া হয়, ওই জায়গাটা মিন করছি) মৃত্যুর মিছিল ও শোককে উপস্থাপনের জন্য একসঙ্গে যখন শিয়ালের ডাকের মতন করে কোরাস আওয়াজ তৈরি করা হয়। এই আওয়াজটা একই দৃশ্যে ব্যাবহার করা হয় কয়েকবার। একেকবারের আওয়াজের পর পরিবারের একেকজন মৃতের শোক রিজওয়ান প্রকাশ করে। ওই বিশেষ জায়গার কোরাস আওয়াজের ভঙ্গিটা নিয়ে নির্দেশক বোধহয় আরেকটু ভাবতে পারেন। ওইরকম আওয়াজটা অসামঞ্জস্যপূর্ণই ঠেকেছে।



আরেকটা বিষয় নিয়ে নির্দেশকের আরো একটু ভাবা দরকার। সেটি হলো, অন্যতম মূলচরিত্র ফাতিমার ডায়লগ থ্রোয়িং। ফাতিমার অভিনয় দূর্দান্ত। কিন্তু প্রশ্নটা নির্দেশকের কাছে। সব জায়গায় গলার স্বর তারায় চড়িয়ে চিৎকার করে ফাতিমার কি ডায়লগ থ্রো করাটা জরুরী ছিল? গভীরতর তীব্র বেদনায় কি মানুষ সবসময় আকাশ-ফাটানো চিৎকারই করে? নাকি কখনো-কখনো গহীন ব্যাথায় মানুষের গলার স্বর একেবারেই মিইয়ে যায়? খাদে নেমে যায়? ফাতিমার ডায়লগগুলো থেকে তার চিৎকার করে বেদনা প্রকাশ করার অংশ আরো অন্তত ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া যায় বলেই বোধ হয়েছে। চিৎকার কমিয়েও কী করে গভীরতর বেদনার প্রকাশ ঘটানো যায় এবং সেই বেদনা দর্শকের কান অব্দি পৌঁছে দেয়া যায় সেই তরিকা নিশ্চয়ই নির্দেশক বের করতে পারবেন বলেই মনে হয়।

এই নাটকের সবচেয়ে দূর্বল দিক হলো এর ভাষা। রিজওয়ানে মনোমুগ্ধকর স্পেসের ব্যাবহার, মোহনীয় আলোকসজ্জা, মাধুর্যময় সঙ্গীত, আর অন্তরভেদী অভিনয় দক্ষতার সাথে এই নাটকের ডায়ালগে ব্যাবহৃত ভাষাকে তুলনা করলে সেই ভাষাটিকে মনে হয় একেবারে অপরিপক্ক জনের চেষ্টা। ভাষার ব্যাবহারে কাব্যময় বা মাদকতাময় হওয়া তো দূরের কথা নাটকের লাইটিং, মিউজিক বা স্পেস ব্যাবহারের মানের ধারে-কাছেও যায়নি ডায়লগের মান।

আলোক প্রক্ষেপণের যথার্থ তরিকা খুঁজতে যেমন আলোকশিল্পী, আর্টিফেক্টস বাছাই ও মঞ্চ সজ্জার জন্য যেমন আর্ট ডিরেক্টর, পোশাকের জন্য যেমন পোশাক ডিজাইনার এবং মেকাপের জন্য যেমন মেকাপ আর্টিস্টের কাছে যেতে হয় ঠিক তেমনি ভাষার মাধুর্য এবং আবেদনময় ও অব্যার্থ শব্দ ব্যাবহারের জন্য ভাষায় দখল আছে তেমন কারো পরামর্শ নেয়া উচিত। রিজওয়ানের ক্ষেত্রে তো তা শতভাগ সত্য।




ভবিষ্যতে রিজওয়ান মঞ্চে আনার আগে নির্দেশক যদি ভাষার কাব্যময়তার দিকে আরেকটু নজর দেন রিজওয়ানের সার্বিক আবেদন তাতে বাড়বে বৈ আর কিছু নয়।

সর্বোপরি, মনে হয়েছে, নির্দেশক এমন গল্প হাজির করতে চেয়েছেন যেই গল্পের আবেদন আছে, যেই গল্পের উপস্থাপন দারুণ সিনেম্যাটিক, দারূণ পোয়েটিক এবং যেই শোকগাঁথা দর্শকের হৃদয়ে দাগ কেটে থাকবে কিন্তু সেই গল্প তার নিজের ভূখন্ডের গল্প নয়। নিজের ভূখন্ডের অসঙ্গতির গল্প বলতে গিয়ে কোনো প্রকার হ্যাপায় জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তিনি নেননি। পরদেশের যে গল্প তিনি উপস্থাপন করেছেন, তার সাথে কোনো দর্শক চাইলে নিজের ভূখন্ডের কোনো ঘটনার মিল পেতে পারেন বটে কিন্তু তা দর্শকের একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা।

আমার ভালো লাগতো, সৈয়দ জামিল আহমেদের মতন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির হাত থেকে যদি এই ভূখন্ডের কোনো গল্প--হৃদয় কাঁপানো কোনো সত্য গল্প-- উঠে আসতো। কারণ এমন নিপুণ নির্দেশকেরই আছে সেই অপার ক্ষমতা যা ব্যাবহার করে সকল রাজনৈতিক বক্তব্য আড়াল করেও যিনি বলে দিতে পারেন গভীরতর সত্য কথা।



আশায় রইলাম, নিশ্চয়ই সৈয়দ জামিল আহমেদ আমাদেরকে একদিন আমাদের ভূখন্ডের গল্প উপহার দেবেন।

রিজওয়ানের সাথে জড়িত সকল কর্মীকে অভিনন্দন।

______

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৫

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:




মঞ্চনাটক খুবই প্রিয় আমার.... বর্ননায় মুগ্ধতা আপু.....

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫০

আফরোজা সোমা বলেছেন: :) :) :)

২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৫৭

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার হয়েছে।







ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫০

আফরোজা সোমা বলেছেন: :) :)

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৯

সোহানী বলেছেন: আহ মনে করিয়ে দিলেন সেই সেব দিনের কথা... বালোলাগলো সর্বময় বর্ননায়.........

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৩২

আফরোজা সোমা বলেছেন: :)

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

জাহিদ অনিক বলেছেন: রিজওয়ান- আমার দেখা হয় নি। তবে পাঠ ও পাঠ প্রতিক্রিয়া থেকে এবং এই কদিন টেলিভিশন মিডিয়ার সাংবাদিকদের কল্যাণে জেনেছি যে মঞ্চনাটকটা বেশ সুন্দর ও গোছানো হয়েছে।

অন্য অনেকের মত আমিও আশাবাদী মঞ্চ নাটকে আবার দর্শক ফিরে আসবে।

পরিশেষে,
আশায় রইলাম, নিশ্চয়ই সৈয়দ জামিল আহমেদ আমাদেরকে একদিন আমাদের ভূখন্ডের গল্প উপহার দেবেন।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৩

আফরোজা সোমা বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.