নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা

নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাই ফেলতে ভাঙা কুলা অথবা এক কিস্তি রিপাবলিকের-তলায়-থাকাদের বয়ান

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:২৫

মানুষের মধ্যে দেখতেছি কেমন জানি একটা দুঃখবোধ। মানে, নিজেরে পাবলিক হিসেবে ঠিক মাইনা নিতে পারতেসে না।


মানে হইলো, পাবলিক যেনো ঠিক মানুষ না। মানে মানুষের এক কাঠি নিচে যেনো তারে লাগে।


আমার তো দেখতেছি 'পাবলিক' পরিচয় খারাপ লাগে না। কারণ আমি আসলেই 'পাবলিক'।


এই পাবলিকরে অবশ্য আপনি মুখ খারাপ করে কইতে পারেন 'শালা, চুতিয়া'। বা সুশীলতা দেখাইয়া মুখ খারাপ না করে বলতে পারেন 'যত সব টিনের তলোয়ার'। বা আরেকটু উড়া-ধুরা টাইপ গালি-দিতে চাইলে বলতে পারেন, 'ঢেউ টিন কোথাকার'।


অবশ্য এইসব গালি-গালাজে আমার বিশেষ রাগ-গোস্বা হয় না। কারণ রাগ-গোস্বা মরে গেলেই পরে চুতিয়া-পাবলিক হয়। আর না হইলে, হয় খালি পাবলিক।


পাবলিককে 'না-পাবলিকরা' 'হান্দাইয়া দিব', 'ভইরা দিব', 'বুঝাইয়া দিব' এটাই স্বাভাবিক।


স্বাভাবিকতার মধ্যে আরেকটা যোগ হইছে, মাখাইয়া দিব।


মানে কালি আরকি। চুনকালি এতো যুগ প্রতীকী রূপে হইতো। কিন্তু পাবলিক শালা এতই চুতিয়া যে, প্রতীকী ভাষ বোঝে না। হায়!


"বোঝে না সে বোঝে না"... গানটা এই 'আম'দের জন্যই হইছিল। কিন্তু আমেরা তো গান গাইতে পারে না। তাই সিনেমায় কাঁঠালরে দিয়া এই গানের লিপসিং হইছিলো।


অতএব, ধর তক্তা মার পেরেক। মানে, ডাইরেক্ট অ্যাকশান। প্রতীকী যুগের শেষে ডাইরেক্ট 'ডার্ক এজ' বা ‘আন্ধাযুগ’-এর শুরু।


মানে যুগ তাইলে দাঁড়াইছে ৫টা। যথা- সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি ও কালা বা আন্ধাযুগ।


অবশ্য, টিনের তলোয়ার হইয়া অতো ফাল পাইড়া লাভ নাই। ধান দিয়া 'আয় আয় তি তি...' বলে মুখে চুক-চুক আওয়াজ করে ডাকলে আমরা মুরগির মতন আবার কর্তার ডাকের দিকে ছুইটা যাবো। দানা-পানি খাবো। এই সুযোগে কর্তা আমাদের খপ কইরা ধইরা জবাই করতে পাঠাবেন। তারপর, ডাইনিং টেবিলে আমাদের ঠ্যাং ভুনা খাইতে-খাইতে স্মৃতি-চারণ করতে-করতে বলবেন, এইটা আমার খুব প্রিয় একটা মোরগ ছিল। কিন্তু ইস্যুটা ঠিক মতন জমাইতে গিয়া তারে কোরবানি দিতে হইলো।


এইজন্যই আমরা পাবলিক। আধুনিক রিপাবলিকের কালাযুগের ঢেউটিন পাবলিক।


অবশ্য আদর করে মায়ে যেমন আন্ধা পুতের নাম রাখেন 'পদ্মলোচন', সেইভাবে এই কালাযুগের নাম আপনি দিতে পারেন 'কালা মানিকের কাল'।


মানে, ঢেউটিনের পক্ষ হয়ে আমরা এক পার্সপেক্টিভ থেকে জামানাটাকে ব্যাখ্যা করবো আর আপনেরা— মানে রিপাবলিকের শক্তিমান অংশিধারীরা— আরেকটা পার্সপ্টেক্টিভ থেকে জামানাটাকে ব্যাখ্যা করবেন।


তাই, ঢেউটিনেরা যখন তলে তলে গান গাইবে, 'থোরা সা পোড়া তেল হোয়্যা, থোরা সা বাকি', তখন আপনেরা সাউন্ডবক্সে জোরে আওয়াজ বাড়াইয়া গান বাজাইবেন 'থোরা সা পেয়ার হোয়া-আ-আ, থোরা সা বাকি'।


যাউগ্গা, অতো গান গাইয়া লাভ নাই। যে কথা বলতে গিয়া এতো বয়ান দিতেছি, সেইটা হইলো আমার তো পাবলিক পরিচয়টা ভাল্লাগ্তেছে। নিজেরে ঢেউ টিন ও টিনের তলোয়ার মনে হইলেও আবার ক্ষেম্তাবানও মনে হইতেছে। মনে হইতেছে, রিপাবলিকের আমিও গুরুত্বপূর্ণ খাম্বা বটেন।


মানে এই যে দেখেন, বিরোধী দল তাদের ক্ষেম্তা দেখাইতে গিয়া আমাদের উছিলা টানে। পরিবহনের প্রভুরা ক্ষেম্তা দেখাইতে গিয়া আমাদের উছিলা দেয়। ক্ষেম্তাবানেরা ক্ষেম্তাকে নিষকন্টক করতে গিয়া যুগে-যুগে ঢেউ-টিনেরই দোহাই দেয়। কোটা বাড়াও, কোটা কমাওরাও শাহবাগে গুলবাগিচা রচনা করে দিন-রাত্রি অহর্নিশ বুলবুলির মতন গান গাইতে থাকে। পাব্লিকেরই নামে। পাব্লিকেরই মুক্তিদূত তারা।


এইসব দেখে আমার খুব ভাল্লাগের। জী। লাগের। ভাল্লাগের। নিজেরে ক্ষেম্তাবান লাগের। লাগের, সকল কিছুর কেন্দ্রে বসে আছি।


অবশ্য আউয়ারা কেউ আৎকা বলে উঠতে পারে যে, শাহবাগের গুলবাগিচায় বুলবুলিদের গানের 'ডট ডটে' আমরা ‘ডট ডটেরা’ অফিস থেকে ফেরার পথে জ্যামের মধ্যে জীবনের ‘ডট ডট’ খাইয়া বাসের ভিত্রে ভেচকাইয়া পইড়া থাকি, ঝিমাই বা কানের মধ্যে হেডফোন দিয়া শুনি 'মোরে আরো আরো দাও প্রাণ', যেনো আরো মারা সইতে পারি।


সে যাই হোক, আউয়ারা বা রাউডিদের কথায় মোটেও কান দিতে নাই। যদি কেউ বেত্তমিজি করে তারে ধ‌ইরা মুখ জুড়ে পোড়া মবিল মাখাইয়া দেওয়াই ন্যায্য। এতেও কাজ না হইলে একটু পিপার গুঁড়া তার জায়গামতন স্প্রে করে দিবেন না হইলে একটু বোম্বাই মরিচ ডলে দিবেন। দেখবেন, জন্মের তরে তার বেত্তমিজি বন্ধ।


আমরা লক্ষী পাবলিক। আমরা টিনের তলোয়ার। আমরা ঢেউটিন। আমরা রিপাবলিকে গুরুত্বপূর্ণ।


সেই গুরুত্ব কি ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলার সমান? নাকি মাথা ব্যাথায় প্যারাসিটামলের সমান? তা গিয়া আপনি মাপতে থাকেন। আমি মাপামাপির মধ্যে নাই।

আমি এতেই খুশী যে, রিপাবলিকে আমার গুরুত্ব আছে। কারণ, পাটা-পুতায় ঘষাঘষি যে করবে তাদের মরিচ লাগবে না! মরিচটা কে! আমি! আমি.. আমি... আমি। অতএব, আমি গুরুত্বপূর্ণ হে!


টিনের তলোয়ার নাটকে একটা মজার ডায়লগ হচ্ছে 'আমরা কলকেতার তলায় থাকি'।


তো, আমরা পাবলিকেরাও রিপাবলিকের তলায় থাকি। কিন্তু তলায় থাকলেও, আছি তো। নাকি?


আমাদের তো আর নাই করে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ, আমাদের না রাখলে পাটা-পুতা কারে ভাঙ্গাবেন! কারে পিষপেন! কারে চিপায় নিয়া আচ্ছাসে বানাইয়া তারপরে দোকানে গিয়া টিস্যু কিন্যা আইন্যা দিয়া লোক দেখাইয়া বলবেন, “হায় হায়! কী হইছে তোমার, জানু! তুমি কান্তেছ কেন! এই নেও, টিস্যু নেও! কী হইছে, আমারে কও খালি। এক্ষুনি এইটারে ইস্যু বানাইয়া শালাদের ভইরা দিবো।”

হ। ইস্যুটাই মুখ্য। লোভটাই মুখ্য। লোভটাই মোক্ষ। প্রেম-টেম সম্মান-টম্মান কিছু না। ট্রয়েও তাই ঘটছিলো। চিরকাল তক্কে-তক্কে থাকা আগামেমনন হেলেনরে উছিলা বানাইয়া ট্রয়রে ভইরা দিছিলো। মানে তামা বানাইয়া দিছিলো।

অতএব, ঢেউটিন জিন্দাবাদ।
টিনের তলোয়ার জিন্দাবাদ।
চুতিয়া জিন্দাবাদ।
টিস্যু জিন্দাবাদ।
ইস্যু জিন্দাবাদ।
মুখে মবিল জিন্দাবাদ।
পেট্রোলবোম জিন্দাবাদ।
অবরোধ জিন্দাবাদ।
ঘনতন্ত্র জিন্দাবাদ।
হাল্কাতন্ত্র জিন্দাবাদ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৯

বাকপ্রবাস বলেছেন: লা জবাব

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬

আফরোজা সোমা বলেছেন: যুগের ভাষা ;)

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:১৬

সাইন বোর্ড বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন ।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৫

আফরোজা সোমা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মাথাটা এত্ত বড়...!!! নিজের মাথার ভার নিজেই বইতে পারতেছি না।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭

আফরোজা সোমা বলেছেন: মাথা বড় লাগলে তো সমস্যা। একমাত্র ঘোর জ্বরের সময় এমন লাগে। মাথা বড় লাগে। ভারি লাগে। জ্ঞান যদি ঘোর জ্বরের মতন মাথামোটার ফিলিং দেয়া তাইলে তো বিপদ। এই জ্ঞান রাখার চেয়ে এন্টিবায়োটিক খেয়ে সারিয়ে নেয়াই ভালো।

৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০

পদ্মপুকুর বলেছেন: লেখা সুন্দর হয়েছে, তবে একটু উপ্রে দিয়া গেলো।

আমরা আসলেই লক্ষী পাব্লিক আর টিনের তলোয়ার। হুদায় আমরা 'বীর বাঙালি বলে ফাল পারি। আসলে তলায় থাকলেও আছি তো মনে করেই সুখে দিন গুজরান করি।

ভালো থাকবেন। আপনি প্রতিমন্তব্যে বেশ কৃপণ। অভ্যাসটা ভালো না। বিশেষ করে ইন্টারেকটিভ ব্লগিংয়ে।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৫

আফরোজা সোমা বলেছেন: আমি লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। যে কোনো চিঠির উত্তর না দেওয়া অশোভন। এইসব ছাইপাশ লেখাও পুরাটা পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন। কল্যাণ হোক।

৫| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১১

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: মজা তন্ত্র জিন্দাবাদ , আমলাতন্ত্র জিন্দাবাদ, গাজা তন্ত্র আফিম আর কমলাকান্ত জিন্দাবাদ।।
আর কোন এক জ্ঞানী ভাই বলেছে জিন্দাবাদ পাকিস্তানের উর্ধু শব্দ। তাই গাড়ির রাজা জিন্দাবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.