নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা

নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহামারীর দিনগুলি-৫: খাটিয়া

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৫:৩২

অদ্ভুত এক সময় উপস্থিত। স্বজনের পাশ থেকে স্বজন সরে যাচ্ছে। মৃত ব্যক্তিকে বহন করবার জন্যে খাটিয়া দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। রাস্তায় পড়ে থাকছে মৃত মানুষ। কেউ তাকে স্পর্শ করছে না। হাসপাতালে রোগীদেরকে চিকিৎসা দিতে দিচ্ছে না কোনো কোনো এলাকার মহল্লাবাসী। করোনায় মারা যাওয়া স্বজনের লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে পরিবারের লোকজন। এমনকি জীবিত থাকতেই করোনাক্রান্ত ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে যাচ্ছে স্বজন ও সন্তানেরা।

করোনাক্রান্ত অনেক রোগী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বাড়ি থেকেও পালাচ্ছে। কোনো কোনো ব্যক্তি করোনার কথা গোপন করে ডাক্তারখানায় যাচ্ছেন। পরে সেই খবর প্রকাশ হলে ওই হাসপাতাল লক ডাউন করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তির বাড়ি লক ডাউন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি জেলাকেও অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চারিদিকে অশনী সংকেত। মৃতকে বহনের খাটিয়া যেমন নেই তেমনি নেই খাদ্য। শুধু অভাব! শুধু হাহাকার!

১০ বছর বয়সী একটা মেয়ে খেতে না পেয়ে সেদিন আত্মহত্যা করেছে। এসব খবর দেখে ভাতের থালা সামনে নিয়ে বসলে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। কিন্তু খুব বেশি মানুষকে সহায়তা করবার সামর্থ্যও আমার বা আমাদের মতন মানুষদের নেই।
সমাজের সর্বস্তরে একটা অনিশ্চয়তা। রাজনীতির চিরচেনা ময়দান ইতোমধ্যেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে এই বদল আরো স্পষ্ট হবে। আরো প্রবল হবে। অ্যামেরিকার মতন রাষ্ট্রে দরিদ্রদের কল্যাণ নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এই ধাক্কায় যদি সমাজের চলমান অর্থনৈতিক অব্যবস্থার কিছুটা বদল আসে!

ট্রিকল ডাউন থিওরির ছবক অনেক দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই তরিকা ইতোমধ্যেই ব্যর্থ প্রমাণিত। এই পন্থায় দেশকে ছোবরা বানিয়ে সকল অর্থ জমা হয় মোটে গুটি কয় ধনীকের হাতে। এই ব্যাবস্থায় ধনীক আরো ধনী আর গরীবের আরো গরিবী ছাড়া আদতে আর কিছু মেলে না বলেই প্রমাণ করেছেন বিশ্লেষকরা। পোস্ট-পেন্ডেমিক ওয়ার্ল্ড বা মহামারী উত্তর দুনিয়ায় এখন ট্রিকল ডাউনের বদলে ট্রিকল আপ পদ্ধতিতে অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানো দরকার।

ধনীক শ্রেনীর শিল্প-কল-কারখানা-এয়ারলাইন্স বাঁচাতে প্যাকেজ ঘোষণা করতে বা বরাদ্দ দিতে, না অ্যামেরিকা না বাংলাদেশ, কোনো দেশের সরকারেরই টাকার অভাব হয় না। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা দরিদ্রদেরকে গাড্ডা থেকে টেনে তোলার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে বললেই সরকারগুলো মুখ শুকিয়ে বলতে থাকে ‘টাকা নেই, টাকা নেই’।

সরকারের মনোভঙ্গী পাল্টাতে হবে। নইলে বরাদ্দের ধরণ পাল্টাবে না। সরকারের মনোভঙ্গী পাল্টাতে হলে মানুষের চিন্তার ধরণ, ভাবনার ভঙ্গিতে বদল আনতে হবে। অবশ্য, সেই বদল রাতারাতি আসে না।

দেশটা স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৫০ বছর। অথচ এদেশের রাজনীতিতে এখনো স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ সমর্থক শক্তির প্রশ্নেরই আজও সুরাহা হলো না। এখনো রাজনীতিতে গুটি হয়ে আসে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ প্রসঙ্গ। একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে এই দেশ কবে ধাবিত হবে জানিনা। ৭২-এর সংবিধানে এই রাষ্ট্রকে জনকল্যাণমুখী একটি রাষ্ট্রে পরিণত করবার আকাঙ্ক্ষা ছিল। ৭২-এর সংবিধান আজও নির্বাসিত।

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাজনীতিতে ব্যাবহার করতে করতে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গেছে। করোনা ঠেকাতে সারা পৃথিবী শারিরীক দূরত্ব মানতে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা বন্ধ করেছে বহু আগে। ইসলামের উৎপত্তিস্থল আরবের মক্কাও বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এদেশে জেলায় জেলায় ধর্মীয় দাওয়াত চলতে থাকলো। ধর্মের প্রতি আমাদের ভক্তির সুযোগ নিয়ে চলতে লাগলো ধর্ম ব্যাবসায়ীদের মিথ্যা ও গুজব। তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিলো না। কিন্তু টেলিভিশনের পর্দায় গুজব খুঁজতে উচ্চ পর্যায়ের কর্তাদের দিয়ে কমিটি হলো। কমিটির লয়ও হলো। হায়! তামাশা!

মহামারী উত্তর বাংলায় মানুষের মনোজগতেও একটা প্রভাব পড়বে। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭৪’র দুর্ভিক্ষ, ৮৮’র বন্যা, ৯১’র ঘূর্ণিঝড় এদেশের মানুষের মনে যেমন স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে করোনাও তেমনি আমাদের মনোজগতে স্থায়ী ছাপ রাখবে। মানুষ মনে রাখবে, মৃত মানুষকে বহন করতে খাটিয়া দেয়নি মানুষ। মানুষকে গোরস্থানে কবর দিতে জায়গা দেয়নি মানুষ। মনে রাখবে, মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়নি অনেক মানুষ। মনে রাখবে, হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরেও কোনো ডাক্তার ও চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে অনেক মানুষ। মনে রাখবে, খেতে না পেয়ে মানুষ গলায় দড়ি দিয়েছে। মনে রাখবে, ভাইয়ের লাশ হাসপাতালে রেখে ভাই পালিয়ে গেছে। মানুষ মনে রাখবে, অসুস্থ বিপন্ন বাবা ও মায়েদের মাঠে ও রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে সন্তানেরা। মানুষ মনে রাখবে, এমন করুণ দিনেও এই ভূখণ্ডে ত্রানের চাল চুরি করেছে মানুষ। মানুষ মনে রাখবে, এমন সকরুণ দিনেও কৃষকের উপরে সরকার ঋণের সুদ চাপিয়েছে ৪ শতাংশ আর ধনীক শিল্পপতিদের জন্য সুদ ধরেছে ২ শতাংশ।

রাজনীতি, অর্থনীতি, মনোজগত সব কিছুতেই বদল আসবে। মহামারী শেষে আসবে মহামন্দা। কী জানি, মহামন্দার লেজ ধরে হয়তো আসবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও!

যদি তাই হয়, ততদিন বাঁচতে চাই না। কোনো বড় যুদ্ধের ভেতর দিয়ে না গিয়েও আমার মনে যুদ্ধ নিয়ে একটা স্থায়ী ট্রমা হয়ে গেছে। কী জানি, হয়তো পঠন-পাঠন-চিন্তাপদ্ধতি এবং বিশ্বযুদ্ধের সিনেমা দেখার ফল। আবার হয়তো এমনো হতে পারে যে, আমি ভীতু।

তবে, আমি প্রাণপণে যুদ্ধ বিরোধী। যুদ্ধ মানে পাগলামী। যুদ্ধ মানে উন্মত্ত রাজনীতিবিদদের গোয়ার্তুমির খেসারত দিতে গিয়ে নিরপরাধ মানুষের প্রাণক্ষয়। যুদ্ধমানেই গুটি কয় মানুষের অহং-এর পতাকাকে সমুন্নত রাখতে গোটা পৃথিবীতে নেমে আসা দুর্দিন।

বড় যুদ্ধ মানুষকে ভেতর থেকে একেবারে রিক্ত করে দেয়। এমনকি যে বিজয়ী পক্ষ যুদ্ধ তাকেও পোড়ায়। যুদ্ধ মানুষের ভেতর থেকে ক্রুরতাকে টেনে বের করে। মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনও বিষণ্ণ বোধ করেছে। যুদ্ধে বিজয়ী হতে এমনকি যুথিষ্ঠিরকেও নিতে হয়েছে ছলনার আশ্রয়। ট্রয়ের যুদ্ধেও তাই হয়েছে। পরাজিত পক্ষ যেমন পুড়ে অঙ্গার হয়েছে, বিজয়ী পক্ষের বুকেও বিঁধেছে ব্যাথার তীর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শুধু স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধেই মারা গেছে প্রায় ১ মিলিয়ন রাশিয়ান। শত্রু ও মিত্রপক্ষ এবং যোদ্ধা ও সিভিলিয়ান মিলিয়ে এই সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সব মিলিয়ে মারা গেছে অন্তত ৭ থেকে ৮ কোটি মানুষ।

করোনাতেও মানুষ মরছে। জন্মাবার পর অনিশ্চয়তায় ভরা মানুষের জীবনে মৃত্যুই কেবল নিশ্চিত। কিন্তু সব মরণ এক নয়। নিজের ভঙ্গুরতার মুখোমুখি হতে মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। মৃত্যুর চেয়েও মানুষকে কাবু করে মৃত্যুর ভয়। তাই, মানুষ প্রাণপণে মৃত্যুকে অস্বীকার করতে চায়। মৃত্যুর বিপরীতে মানুষ গড়ে জীবনের দুর্গ। এই দুর্গে প্রিয়জন পরিবেষ্টিত হয়ে মানুষ টানতে চায় জীবনের ফুলস্টপ।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে একটা ভেন্টিলেটর না পেয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে যে মানুষ তার নাম ধরিত্রীর কোথাও স্মৃতিফলকে লেখা থাকবে না। কিন্তু যুদ্ধের নামে নিহত যুবার নাম স্মৃতিফলকে টাঙিয়ে রেখে মানুষের চিন্তায় চেতনার আফিম দিয়ে যুদ্ধবাজির উপযোগিতা জিইয়ে রাখবে পৃথিবীর রাজনীতিবিদেরা।

হে মহামারী উত্তর পৃথিবী! মানুষের প্রতি মানুষকে আরেকটু দয়ালু হবার অভিজ্ঞানটুকু দাও। দেশ-কাল-পাত্র ভুলে মানুষের হৃদয়ে জাগাও মানুষের প্রতি ভালোবাসা। যতই তীব্র হয়ে আসুক ক্ষুধা, ক্ষুধার জ্বালায় ঘরের আড়ায় নিজেকে ঝুলিয়ে দেবার আগেই ক্ষুধার্ত ব্যক্তির দুয়ারে পৌঁছাক খাবারের ব্যাগ। যতই করুণ হোক মৃত্যু, মৃতের শরীরটা বহনে একটা খাটিয়া অন্তত মিলুক।

১৫ই এপ্রিল ২০২০

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:৩৭

গ্রীনলাভার বলেছেন: কিছু মনে করবেন না, এটা কি অনুবাদ?

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৫

আফরোজা সোমা বলেছেন: জি না। অনুবাদ নয়।

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:০১

গ্রীনলাভার বলেছেন: আমি দুঃখিত। আপনার এই ধারাবাহিকটি আমার জন্য রোমাঞ্চকর। গত ১৮ দিন ঘরে আটকে আছি। ৭ জনের পরিবারে মূল উপার্জনক্ষম মানুষ। বাবা আমাকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেননা। অথচ নিজে দিনে ৩/৪ বার বের হয়ে রাস্তার অবস্থা দেখে আসেন। পত্রিকা-টিভি নিউজ অসহ্য লাগছে ইদানিং। আমার ভেতরে বাইরে, ঘরের ভেতরে বাইরে কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে বুঝতে পারছি। অথচ বলতে পারছি না। এরকম অস্থিরতা আগেও হয়েছে। কিন্তু জীবন মৃত্যুর দোলাচালে দুলিনি এর আগে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ভয়ে ভয় পেয়েছি বহুবার। কিন্তু কোনঠাসা হয়ে মৃত্যু যেন না হয় সেটা বিধাতার কাছে প্রার্থনা আমার বহু দিনের।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭

আফরোজা সোমা বলেছেন: বাবাকে ঘরে রাখুন, প্লিজ। বাইরে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কিছু নেই। এই কৌতুহলটাই বুড়ো ছেলেদের জন্য বিপজ্জনক। ভয় পাবেন না। সতর্ক থাকুন। পরিবারের সবার সাথে আনন্দময় সময় কাটুক আপনার।

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:২৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সরকার যে মহল থেকে চাপ অনুভব করে তাদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে ঠাণ্ডা রাখে। গরীব মানুষ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে না তাই সরকার এদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়।

স্বাধীনতার চেতনা থাকা ভালো কিন্তু অতীতমুখী রাজনীতি ভালো না। সরকার অতীতমুখী রাজনীতি করে নিজেদের ভুলত্রুটি আড়াল করে মানুষকে অযথা তর্কে ব্যস্ত রাখার জন্য। আর জনগণের আবেগকে নিয়ে খেলার জন্য।

সরকার মওলানাদের সহজে ঘাটাতে চায় না। মওলানারাও চালাক। তারা কোনও দায়িত্ব নিতে চায়না। সরকার এবং মওলানারা উভয়য়েই মানুষের আবেগ নিয়ে খেলে। মসজিদে গিয়ে নামাজের ব্যাপারে সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারত। তবে মওলানারাও সরকারকে সহযোগিতা করেনি।

যুদ্ধে একদল কম হারে এবং আরেক দল বেশী হারে।

ভালো লেখার জন্য ধন্যবাদ।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮

আফরোজা সোমা বলেছেন: সময় নিয়ে পড়া ও মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন।

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২২

বিজন রয় বলেছেন: অনেক দিন পর আপনার লেখায় আসলাম।
কিছু দিন বোধহয় নিয়মিত হয়েছেন।

ভাল আছেন নিশ্চয়ই।
শুভকামনা।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮

আফরোজা সোমা বলেছেন: আপনার জন্যেও অনেক শুভ কামনা।

৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:১৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পাঞ্জল লেখা , পড়ে বিমোহিত হলাম।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯

আফরোজা সোমা বলেছেন: কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন।

৬| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: বিপদ থেকে যাবে এই অপেক্ষায় আছি। অথচ সময় চলে যাচ্ছে বিপদ কাটছে না।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০

আফরোজা সোমা বলেছেন: সময় আসলে কোথাও যায় না। সময়কে মানুষ নিজের প্রয়োজনীয়তা ও দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার ও বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বোধ করে, সময় চলে যাচ্ছে।

৭| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:২৩

মা.হাসান বলেছেন: মহামারির পর মহামন্দা এবং দুর্ভিক্ষ আসাটা খুব স্বাভাবিক। হাওর, চলনবিল এলাকায় ধান কাটার লোক নেই। আমাদের এলাকায় আর কয় দিন পর কাটা শুরু হবে, কিন্তু কৃষক শংকিত, কিনবে কে? এখন পর্যন্ত সরকারের কোন নির্দেশনা নেই। আমাদের গনতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকে নির্দেশ না দিলে তো কিছু হবার নিয়ম নেই।

আমার মা বলেন ৭১এও এত খারাপ পরিস্থিতি ছিলো না, অন্ততপক্ষে মানুষ মানুষের সাথে সহানুভূতি দেখাতো।

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ক্ষমতায় কে বসবে এটা ঠিক করে ব্যবসায়িরা। এরা এদের স্বার্থ আগে দেখার কথা। কমিউনিস্ট দেশ উত্তর কোরিয়া বা ভিয়েতনামে চিকিৎসা সেবা তুলনা মূলক ভাবে এখনো ভালো, যদিও মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ আছে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে।অনেক দেশেই , যে লোকটা ভেন্টলেটর পেলে বেঁচে যেতো, হাসপাতালে যথেষ্ট ভেন্টিলেটর না থাকায় সে মানুষটা মারা যাচ্ছে। মানুষ চিকিৎসা সেবা খাতে অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে সামরিক খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় অবশ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংজ্ঞায় পড়ে না।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৪৩

আফরোজা সোমা বলেছেন: ভালো বলেছেন! কিউবার স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাও খুব উন্নত। ভালো থাকবেন।

৮| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:৩৬

মলাসইলমুইনা বলেছেন: আফরোজা সোমা,
আপনার এই লেখাটাকে দুর্ধর্ষ বলতেই হচ্ছে ! তাই অনেক অনেক কষ্টের এই লেখাতেও ভালো লাগা জানানোর মতো নিষ্ঠুর হতেই হলো !

"মহামারী উত্তর বাংলায় মানুষের মনোজগতেও একটা প্রভাব পড়বে। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭৪’র দুর্ভিক্ষ, ৮৮’র বন্যা, ৯১’র ঘূর্ণিঝড় এদেশের মানুষের মনে যেমন স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে করোনাও তেমনি আমাদের মনোজগতে স্থায়ী ছাপ রাখবে। মানুষ মনে রাখবে, মৃত মানুষকে বহন করতে খাটিয়া দেয়নি মানুষ। মানুষকে গোরস্থানে কবর দিতে জায়গা দেয়নি মানুষ। মনে রাখবে, মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়নি অনেক মানুষ। মনে রাখবে, হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরেও কোনো ডাক্তার ও চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে অনেক মানুষ। মনে রাখবে, খেতে না পেয়ে মানুষ গলায় দড়ি দিয়েছে। মনে রাখবে, ভাইয়ের লাশ হাসপাতালে রেখে ভাই পালিয়ে গেছে। মানুষ মনে রাখবে, অসুস্থ বিপন্ন বাবা ও মায়েদের মাঠে ও রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে সন্তানেরা। মানুষ মনে রাখবে, এমন করুণ দিনেও এই ভূখণ্ডে ত্রানের চাল চুরি করেছে মানুষ। মানুষ মনে রাখবে, এমন সকরুণ দিনেও কৃষকের উপরে সরকার ঋণের সুদ চাপিয়েছে ৪ শতাংশ আর ধনীক শিল্পপতিদের জন্য সুদ ধরেছে ২ শতাংশ।" কথাগুলো সত্যি । কিন্তু এই সত্যি মনীষীদের বলা 'সত্যই সুন্দরের' মতো না । এই সত্য কঠিন, হয়তো অসুন্দরও কিন্তু এই কথাগুলো বলতেই হবে যাতে আমাদের ক্ষমতাসীন মহল কোনো দিন, কখনো নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে কিছুটা সচেতন হতে পারে । লেখায় অনেক ভালো লাগা ।

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৪:০৯

আফরোজা সোমা বলেছেন: মলাসইলমুইনা, অনেক ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.