নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি.......!
উপাখ্যানের প্রথম কিস্তি
Click This Link
২য় কিস্তি
ভটভটিতে করে দিনাজপুরে পৌছে দেখি পরিস্থিতি থমথমে। কাজ শেষ করে আবার আমাকে যেতে হবে গ্রামে। খুব দ্রুত কাজ শেষ করে আবারো একটা ভটভটিতে করে গ্রামে পৌছালাম। গ্রামে আমার বউ থাকে, পৌছাতে দেখে আমার বউ যারপর নাই আনন্দিত। এরপর সটান হয়ে দিলাম একটা ঘুম। ঘুম থেকে উঠে রাত নয়টার দিকে শুনি আমার বাড়ির পাশে ছোট একটা বাজার আছে সেখানে নাকি প্রচুর মারামারি হচ্ছে জামাত আর আওয়ামীলীগ সমর্থকদের মধ্যে, দুই একটা হিন্দুদের ঘর বাড়ি নাকি পুড়িয়ে দিয়েছে জামাতিরা। আমার মা আমাকে আর বাইরে যেতে দিবেন না এত রাতে (গ্রামে ৯ টা মানে অনেক রাত)। এতটুকু একটা বাজারে যেখানে দুইজন মানুষের মারামারি লাগলেই হৈ হৈ পরে যেত সেই বাজারে আজকে জামাত- আওয়ামীলীগ মারামারি করছে, বিষয়টা ভাবতেই আমার কেমন যেন লাগছে। কারন ছোট ছোট এসব উপশহর গুলোতে প্রত্যেক মানুষ একজন আরেকজনকে খুব ভাল করে চেনেন, তারা একজন আরেকজনের আত্মীয়, বন্ধু, ভাই। কোথাকার কোন দলের জন্য তারা মারামারি করবে, বিষয়টা মেনে নিতেই আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল, তারপর এমন মারামারি যে ঘরবাড়ি পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়। বিষয়গুলো কেমন যেন গোলমেলে মনে হওয়া শুরু করে আমার কাছে। কি এমন পেল তারা দলের কাছ থকে যে সামান্য একটা দলের জন্য ভাই ভাইকে চিনে না। এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন সকালে বাজারে গেলাম। বাজারে গিয়ে দোকানদারদের কাছে ঘটনা শুনি যে জামাতের লোকজন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে মিছিল করছিল, আর সামনে থেকে আওয়ামী লীগের একটা মিছিল আসছিল। শিবিরের কিছু ছেলে পেলে অতর্কিতে সেই মিছিলের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। বেশ কিছু মানুষ আহত হয়। মারামারির পর বাজারের পাশে থাকা গরীব দুটি হিন্দু বাড়িতে হঠাত করে আগুন জ্বলে উঠে। আগুনে সর্বস্বান্ত হয় পরিবার দুটো। মানুষের এমন পশুর মত আচরন দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। আপন মনে সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে থাকি। আর শুনতে থাকি দোকানদারের কথা। সে বলতে থাকে এই বাজারে কোনদিন ও এমন হয় নাই কিন্তু বাইরে থেকে কিছু ছেলে আসে জামাতের হয়ে হরতাল করতে এখানে। তারাই মারামারি শুরু করে। তাদের গল্প শুনতে শুনতে হঠাত দেখি একজন পরিচিত বৃদ্ধ আসছেন যাকে আমি দাদা ডাকি। সে আবার খুব কামেল, পরহেজগার লোক হিসেবে সেই বাজারে পরিচিত। আবার সে কট্টর জামাতপন্থী কিন্তু আন্দোলন টান্দোলনে যান না। আমার মনে আছে একবার ইলেকশনের আগে তিনি আমাকে বলেছিলেন দাড়িপাল্লায় ভোট না দিলে তার বেহেস্তে যাওয়া হবে না। বাস্তবিক আমি সেই সময়ের ইলেকশনে দেখতাম বাজারের ছোট পশু হাসপাতালের সাদা চুনকাম করা দেয়ালে খয়েরী রঙ্গে আঁকা একটা বড় দাড়িপাল্লার ছবি আর তার সাথে লেখা ‘ভোট দিবেন পাল্লায়, ভাল করবে আল্লায়’। সেই বৃদ্ধের কথা কি বলব, আমার নিজের নানি (যিনি অনেক নামাজী) গত নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়েছেন এই বলে যে এটা (নৌকায় ভোট দিতে হবে) আমার স্বামীর নির্দেশ তাই নৌকায় ভোট দিলাম। আল্লাহ্ জানেন তিনি আমাকে মাফ করবেন কিনা (দাড়িপাল্লায় ভোট না দেয়ার জন্য)। আমি ভাবতে থাকি এই যে এই পরিকল্পিত ভাবে মানুষের মগজ ধোলাই করা হয়েছে, কি পরিমান মাথা তারা রাখে। আমি তাজ্জব হয়ে যাই। বৃদ্ধ দাদার ডাকে আমার তন্দ্রা ভাঙ্গে, তিনি জিজ্ঞেস করেন খবর শুনিছিস (শুনছিস) নাকি? আমি বললাম, না। কি খবর? তিনি বলেন, কাইল হরতালত হামার দিনাজপুরত, ২ টা নাকি পুলিশ মরিছে (কাল হরতালে আমাদের দিনাজপুরে নাকি দুইটা পুলিশ মরছে)। আমি উত্তরে বলি জানি। তিনি বলেন, মরোক (মরুক) শালা, ইহুদি নাসারার বাচ্চারা। শাহাবাগের নাস্তিকলাকো মরিবা কহেচু (শাহাবাগের নাস্তিক গুলাকেও মরতে বলতেছি)। এলা (এখন)একটা পুলিশ মারা, একটা ইহুদী মারার সমান সোয়াব। পুলিশ, আওয়ামীলীগ সব নাস্তিক। মরোক(মরুক)। নবিজীক নিয়া (নবীজীকে নিয়ে) কথা কহে (বলে) এত সাহস। আমি তার সাথে কোন তর্কে যাই না, কারন তাকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারব না। তার এই শিক্ষা একদিনের নয়। দীর্ঘদিন থেকে তাকে এই শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আমি ভাবতে থাকি নিশ্চয়ই বিধাতা এত নিষ্ঠুর নন যে একটা ইহুদীকে মারতে পারলে তিনি তার বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন। যাই হোক তার কথাগুলোতে কেন যেন আমার গায়ে জ্বালা ধরাচ্ছিল। তাকে কিছু না বলে আমি বাড়ির পথে পা বাড়াই। মেজাজ টা এতই খারাপ ছিল তাই সেদিন আর বাড়ি থেকে বের হলাম না। আমাদের পুকুর পাড়ে গিয়ে একটু পর পর বিড়ি টেনে আসলাম। রাতে ঘুম আসছিল না। টিভিতে হরতালের খবর শুনতে কখোন ঘুমিয়ে পড়ি, জানি না। হঠাত রাত সাড়ে চারটার দিকে একজন আমাকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে বলে আঙিনায় যা। আমি জিজ্ঞেস করি কেন? সে বলে আগে যা না? আঙিনায় গেলাম। সে বলে বিসমিল্লাহ বলে আকাশের দিকে তাকা। এবার আমি ভয় পেয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। সে বলে চাদের দিকে তাকা, খুব কষ্ট করে চাঁদ খুজে বের করলাম। সে বলে ভাল করে দেখ চাদে, সাইদী সাহেবের ছবিটা ভেসে উঠেছে। এই কথা শুনে মেজাজ আমার চরমে। তাকে খুব গালাগালি করার পর ও সে মানছে না, সে বলছে আমি দেখতে পাচ্ছি না, কারন আমার বিশ্বাস নাই। আমি তাকে বলি ভাই আমার উপর দয়া কর, আমি তোর সাইদীকে আর দেখতে চাই না। আমি ঘুমাই। এরপর ও সে আমাকে অবিশ্বাসী বলে যাচ্ছে। আমি তাকে বলি হ ঠিক আছে তুই বিশ্বাস নিয়ে, আগামী কাল রাতে দেখিস আমার বিচি গুলা আসমানে ওরাওরি করছে, তাই দেখবি। ফোন কেটে বন্ধ করে দেই। আমার বউ ঘুম থেকে জেগে যায়, জিজ্ঞেস করে কি হইছে? আমি তাকে ঘটনা খুলে বলি। সে হেসে খুন। তার একবারও চাঁদ দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা হল না। বরং তার ফোনটা বন্ধ করে দিয়ে বলল, তোমার মত আমাকেও কেও ফোন করে সাইদীর চন্দ্রাভিযান দেখাতে পারে। আমার বউ অনেক নামাযী এবং গ্রামের কম শিক্ষিত একটা মেয়ে হওয়ার পর ও তার এমন কর্মকান্ডে আমার অনেক ভাল লাগে। সেই ভাল লাগা নিয়ে আবারো ঘুমিয়ে পরি........................
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩
অগ্নি সারথি বলেছেন: নিশ্চয়ই বিধাতা এত নিষ্ঠুর নন যে একটা ইহুদীকে মারতে পারলে তিনি তার বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন
২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২
বুড়ো বলেছেন: "অতঃপর হুজুরে পাক বলিলেন" -
শুধু শুধু বিতর্কিত হেডিং দিয়ে সামুকে বিতর্কিত করবার কোন কারণ রয়েছে কি ?
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৯
অগ্নি সারথি বলেছেন: আপাতত তর্ক চাই না। অক্কে কারেক্টেড।
৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯
বুড়ো বলেছেন: ধন্যবাদ। কতিপয় মিডিয়া সামুকে বিতর্কিত করবার প্রয়াসে লিপ্ত। এ অবস্থায় সব ব্লগারকেই কিছুটা সচেতন হতে হচ্ছে।
আমরা মুসলমানরা হুজুরে পাক বলতে মহানবী সা. কেই বুঝি। কতিপয় কাঠমোল্লার জন্য মহানবীকে কটাক্ষ করাটা যুক্তিযুক্ত নয়।
আবারো ধন্যবাদ কারেকশনের জন্যে।
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:১৮
অগ্নি সারথি বলেছেন: আপনারেও ধইন্যা, দেখিয়ে দেয়ার জন্য।
৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:২২
সবখানে সবাই আছে বলেছেন: চমৎকার লেখনি। জ্বালাময়ী কথা না বলে এরকম দুই একটা নিজের জীবনের কাহিনী শেয়ার করলে আমার মনে হয় মানুষের মাথায় যদি কিছুটা ঢোকে।
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯
অগ্নি সারথি বলেছেন: যা দেখি,শুনি,অনুভব করি,স্বপ্নি। আমি তাই গল্পে রুপ দিতে চাই....................................
ধন্যবাদ ভাই, এত কষ্ট করে এত বড় একটা লেখা পড়ার জন্য।
৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৭
রাজীব দে সরকার বলেছেন: আরো শোনার অপেক্ষায় থাকলাম
০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:১৫
অগ্নি সারথি বলেছেন: পুরা অফিস মাথার উপর ভাইঙ্গা পড়ছে, এরপর ও চেষ্টা করছি রাজীব দা। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯
রওনক বলেছেন: যে বলে ইহুদী মারলে সওয়াব হয়, সে নিস্চই াল্লাহর দুষমন