নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উন্মাতাল পৃথিবী নিঃসংগ আমি

লিখতে চাই অনেক কিছু, কিন্তু কি লিখব। কত যে কথা ছিল মনের মাঝে, আজ এ অসময়ে বুকের মাঝে শুধু বাজে। যাবোই চলে হারিয়ে আমি মহাকালের গর্ভে। অসীম অর্থহীন পথচলা নাকি নতুন স্বপ্নের জাল বোনা।

বেকার যুবক

ভালোবাসি বাংলাদেশ। ---বিদ্বেষ আমার রক্তে নেই, কিন্তু মেয়েরা সুন্দর পোশাক পড়বেনা, এটা আমি মানতেই পারি না।--- ভালোবাসি পৃথিবীর অনেক কিছু যা কিছু সুন্দর। ভালোবাসি ডানা মেলা মুক্ত বিহঙ্গ। ভালোবাসি ভাবতে। ভালোবাসি মন-প্রাণ খুলে হাসতে। ভালোবাসি নীল আকাশ আর বৃষ্টির রিম-ঝিম। ভালোবাসি সমুদ্রের গর্জন আর সভ্যতার নাগপাশে বন্দী মানবজীবন। ভালোবাসি উর্দ্ধমুখী নিঃসংগতা আর ভালোবাসি বেকার যুবক।

বেকার যুবক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসাবিহীন মারপিটের সিনেমাঃ তবুও ভালোবাসি

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৪

নায়িকার (মাহি) নাচগানের পালা শেষ হলে, দৃশ্যপটে নায়ক (বাপ্পী) হাজির হলেন। দুষ্ট লাল বাহিনীর (Russian Red Army না কিন্তু) দুষ্টামীপনা দেখে নায়কের বিদ্রোহী রণক্লান্ত মনোভাব জেগে উঠল। আপাতত বন্ধুর বিয়ে বিবেচনায় নায়ক রণে ক্ষ্যান্ত হলেন। বন্ধুর বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই চোর অভিযোগে গণধোলাইয়ের সম্মুক্ষীন হলেন। নায়িকার মেক-আপের মাত্রা যেই হারে বাড়ছে তাতে বিউটি বক্স ব্যবসায়ীদের অবস্থা অচীরেই লালে লাল বাহিনী। হঠাৎ একজন পর্দায় দৌড়াচ্ছে, প্রাণভয়ে দৌড়াচ্ছে, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, এলাকার ত্রাস, গাজীপুর আন্ডারওয়ার্ল্ডের একচ্ছত্র প্রতাপ সিংহ, লাল আতংক (চোখে গ্লিসারিন দিয়া লাল হয়ে গেছে), টাক লালের (অমিত হাসান) আবির্ভাব। বুঝলাম না, যার এত প্রভাব-প্রতিপত্তি, এত সাঙ্গ-পাঙ্গ, কাইলা সাংবাদিক মারার জন্য সে এইভাবে দৌড়ায়, ক্ষুর দিয়া চুল কাটে আবার সেই ক্ষুরে মানুষ মারে।

রাতে খাবার সময় নায়িকার বাবা মাননীয় শিক্ষক সোহেল রানা সাহেবের কথা শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু মুখ নড়ছিলনা, কিংবা তার অভিব্যক্ত দেখে বোঝা যাচ্ছিলনা যে তিনি কথা বলছেন না অন্যকিছু করছেন, ডাবিং এবং সম্পাদনার বড় এই ত্রুটিটি চোখে লেগেছে।

বন্ধুর বিয়ে, অনেক আয়োজন, লালকে টাকা দিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু গানের মধ্যে নায়িকার দোয়া করার ভঙ্গি বড় অদ্ভুত, বড় অদ্ভুত।

লালের ডান হাতকে থানার ওসি ধরে নিয়ে যাওয়ায়, লাল অনির্দিষ্টকালের হরতাল ডাকে। এদিকে সত্যনিষ্ঠ শিক্ষক মহোদয় লালের পূর্ব পাপের বৃত্তান্ত পত্রিকায় পাঠায়, কিন্তু চালবাজি করে লাল তা হস্তগত করে, আর শিক্ষক সাহেবকে মোবাইলে হুমকি দেয়। এই ভয়ংকর হুমকিতে শিক্ষক মহোদয় জ্ঞান হারান, বুঝলামনা ইনহেলার তো হাঁপানি রোগীর জন্য, ওনার কি হাঁপানি আছে, থাকতে পারে। তরুনী ডাক্তার ইয়ংম্যানকে ধন্যবাদ দিচ্ছে, যেন সে নিজে একটা বুড়ি। অনির্দিষ্টকালের হরতাল তো চলছেই তাই ঔষধেরসহ সব দোকান বন্ধ, কিন্তু নায়ক দোকানে ঢুকলেন কিভাবে বোঝা গেলনা, ঢুকেছেন যদি বোঝা যায়, তবে বেরোনোর জন্য সাটার কাটতে হলো কেন? এদিকে লাল দোকানের রহস্য উদঘাটন করতে এসে নায়কের হাতে তক্তা হয়ে যায়। আর এই তক্তা বানানোর দৃশ্য ইন্টারনেটে আপলোড হতেও দেরী হয়না। কিন্তু লাল সাহেব এই অর্ধ-উলঙ্গ তথা ন্যাংটা মাইর হজম করতে পারেনা। এলাকায় তার অবস্থা লাল গুন্ডা থেকে লাল চেংড়ায় নেমে আসে। তাই সে প্রতিশোধ নিতে চায়। (উল্লেখ্য সিনেমার বাকি অংশে অর্ধ-উলঙ্গ শব্দটা অনেকবার ব্যবহার করা হয়েছে-মনে হয়েছে প্রত্যেক বলার সাথে সাথেই যেন লালকে একবার করে ওই অবস্থায় নেয়া হচ্ছে)

ওদিকে নায়কের বাড়িতে সুদূর ময়মনসিংহে আবার পুরোনো পাপী (মিজু আহমেদ) গুন্ডা গাজী – মারহাবা গাজী (ইনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) মহা অনাসৃষ্টিতে ব্যস্ত। ভিজিএফ এর চাল ইত্যাদি আত্মসাতের অভিযোগে চড় খেয়ে দশ হাত দূরে বরং তার চেয়ে বেশি দূরে ছিটকে পড়ে। গ্রামবাসী নায়কের মা লায়লা ম্যাডামের (দিতি - নায়কের ভাষায় ইনি শুধু মা ই নন, পৌরসভার চেয়ারম্যান) প্রতি যারপরনাই কৃতজ্ঞ হয়। গাজীর ছেলেও আরেক রংবাজ। সে ইভটিজিং ইত্যাদি করে বেরালেও পুলিশ (থানায় নতুন এসেছে – এসেই চোটপাট, তার খুটির জোড় নাকি অনেক শক্ত) তাকে কিছুই বলেনা। অবশেষে লায়লা ম্যাডামের হস্তক্ষেপে পুলিশের ওসি রজবকে (গাজীর পোলা) গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। ইতিমধ্যে নায়ক নিজ বাড়িতে উপস্থিত। ফোন পেয়ে ম্যাডাম থানা থেকে সবার সামনে দিয়ে দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়িতে (রাজবাড়ি) উপনীত হয়। যেভাবে মা ছেলের আলিঙ্গন হয়, তাতে মনে হয় ছেলে যেন কতকাল হাজত খেটে বাসায় ফিরেছে। এইখানে নায়কের বোনদের দেখা যায়। ওদের চাল-চলন, কথা-বার্তা, পোশাক-আশাক, চেহারা-সুরত কোন কিছুই নায়কের বোন বা পৌরসভার চেয়ারম্যানের মেয়ের সাথে মানানসই না হওয়ায় পাশের এক দর্শক মন্তব্য করে, ‘কোইত্থেইক্কা ধইরা লইয়াইছে এডিরে’। ওদিকে গাজী ভাই লায়লা ম্যাডামকে মারার সব আয়োজন চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অবশ্য বীরপুত্র থাকতে চিন্তা কি। শুরু হয় ভ্যানগাড়ি আর মোটরগাড়ির দৃষ্টিনন্দন রোড শো। অবশ্য ভ্যানগাড়ি কিছুক্ষণ পরে ভ্যানট্রাকে রুপান্তরিত হয়। বুঝলামনা ট্রাকটা আসলো কোত্থেকে।। পিছন থেকে আসলে বুঝতে হবে, সবগুলিকে ওভারটেক করছে, আর সামনের হলে বুঝতে হবে ট্রাকের গতি ভ্যানগাড়ির চেয়ে কম। সেইক্ষেত্রে এই আকাজের ট্রাক দিয়ে কি লাভ – ভ্যানগাড়ির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। যাইহোক এক্ষণে শুরু হলো নতুন তেলেসমাতি। নায়ক ভ্যানট্রাক থেকে একটা করে গাছের গুড়ি ফেলছেন, আর তার সাথে ধাক্কা খেয়ে, একটা করে শত্রুর পরিবহণ ব্যবস্থা বিদ্ধস্ত হচ্ছে। মোটরবাইক থেকে মোটরগাড়ি কোন কিছুরই যেন নিস্তার নেই। বিস্ফোরণ ঘটানো কত্ত সোজা। যথারীতি শেষপর্যন্ত নায়কেরই জয়লাভ। দর্শকও আনন্দিত।

লায়লা ম্যাডামের সেক্রেটারি, নায়িকা কে রাস্তায় কুড়িয়ে পায়। এখানে ক্লাইমেক্সের একটু সুযোগ তৈরী হয়েছিল, নায়িকার পুরো পরিবার লাল বাহিনী শেষ করে দেয়। কিন্তু যথাযথ কারুকাজের অভাবে তা আর হয়ে ওঠেনি। নায়িকা বটি হাতে নায়ককে খুন করতে চাইলে (নায়কের কারণেই নায়িকার পুরো পরিবার শেষ হয় বলে) নায়ক আত্মরক্ষার সফল চেষ্টা করে, অবশেষে নায়িকার সুখের জন্য সব রক্ত বিলিয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করে, এ যাত্রা মত প্রাণে বেঁচে যায়। তবে দৃশ্য, সংলাপের সাথে নায়িকার পোশাকটা ঠিক যাচ্ছিলনা (নায়িকা নাকি গ্রামের দূরন্ত দস্যি মেয়ে, কিন্তু তার পোশাকের ভ্যারাইটিস দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তার অবস্থানস্থল শহর, মফস্বল, না গ্রাম)। তো নায়ক সবকিছু যেনে, সেই রাতেই হিসাব মিলাতে লালের আস্তানায় হানা দেয়। তার চিৎকারে চেচামেচিতে লোকজন তাকে শায়েস্তা করতে ছুটে এলে, নায়িকার ঠ্যাংএর বাড়িতে সে সবাইকে কুপোকাত করে, লালকে চ্যালেঞ্জ করে বাড়িতে ফিরে আসে। এদিকে লাল গেছে সাদা’র বাড়িতে, নায়ক নাকি সাদাকেও অপমান করেছে। নায়ক আর সাদা’র ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করে অপমানটা কিভাবে করল বোঝা গেলনা। তো দুই ভাইয়ের শক্তি, গাজীর শক্তির সাথে মিলিত হয়ে, নায়ক আর তার পরিবারকে শেষ করার জন্য নানা ফিকির শুরু করল। এক ফাঁকে সাদা (লালের ভাই) উড়ন্ত ঘূর্ণনের মাধ্যেমে নায়ককে আঘাত করে, নায়ক পাল্টা আঘাত করলে, সে উল্টো ঘূর্ণনের মাধ্যমে পুঁতে রাখা বাঁশের ওপর পড়ে। এতে তার শরীরের কোন এক অংশ ছিদ্র হয়ে যায়, তার অকাল মৃত্যু হয়। বদমাইশ। শেষমেষ লালের চালবাজিতে, নায়িকা এবং নায়কের মা বোনদের সামনে নায়ক আধমরা হয়। মায়ের ডাকে তার জীবনীশক্তি ফিরে আসে, অমনি গাজী আর লালকে তুলোধূনা করে যথাক্রমে পুলিশ ও জনতার হাতে তুলে দেয়। জনতা লালকে পিটিয়ে লাল করে যমের ঘরে পাঠিয়ে দেয়। একদিকে আধমরা নায়ক যন্ত্রণায় কাতড়াতে থাকে, কিন্তু সিনেমা শেষ পর্যায়ে চলে আসায়, লায়লা ম্যাডাম ছেলেকে হাসপাতালে নেয়ার পরিবর্তে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে শুরু করেন। যদি বাংলার প্রতিটি ঘরে... ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমি ভাবি, বাংলার প্রতিটি ঘরে একটা একটা এমন ছেলে জন্ম নিলে একটা একটা করে পরিবার নিশ্চিহ্ন হতে থাকবে, যা একটা বড় ধরণের Drawback। নাহ এ পদ্ধতিকে Modify করতে হবে।

পাশের দর্শকের ভাষ্যমতে, সিনেমার নাম ভালোবাসি (তবুও ভালোবাসি), কিন্তু সিনেমায় ভালোবাসার তেমন কোন উপাদানই পাওয়া গেলনা (যদি গানগুলো শুধু বিবেচনার বাইরে রাখা হয়)। আর কিছু ভালোবাসা থাকলেও- তবুও ভালোবাসার কারণটা বোঝা গেলনা। পুরো সিনেমায় যেই পরিমাণ মাইরপিট দেখানো হয়েছে, তাতে সিনেমার নাম ‘মাইর-ধইর’ অথবা ‘মাইরালা, আমারে মাইরালা’ হলে এর নামকরণের সার্থকতা বেশি বিশ্লেষিত হতো। যাইহোক সিনেমা শেষ হলো, দর্শকের একটা শ্রেণী ভুয়া- ভুয়া- ভুয়া- করতে করতে মজা নিল। দর্শকদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা অসাধারণ, সেটা যে পর্যায়ের দর্শকই হোক।





সিনেমা বা যেকোন কিছু নিয়েই বেশি সমালোচনা করা ভালোনা। নিজে কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করার পর, কিংবা কথার চেয়ে কাজের মাধ্যমে সমালোচনা করলে, সেটা বেশি ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাহিনী, সংলাপ, অভিনয়, লোকেশন একেবারে মন্দ ছিলনা। তবে চিত্রনাট্য ও পরিচালনার অসতর্কতার কারণে এর মানের অবনতি হয়েছে। জাজের ‘ভালোবাসা আজকাল’ আর এই ‘তবুও ভালোবাসি’ হয়তো ব্যবসায়িকভাবে সফল ছবির খাতায় নাম লেখাবে, কিন্তু নির্মাণশৈলী সন্তোষজনক নয়। আগের ‘অন্যরকম ভালোবাসা’, ‘পোড়ামন’ এমনকি ‘ভালোবাসার রঙ’ও এর চেয়ে কয়েক ডিগ্রি উপরে ছিল। এই ছবিতে কিছু কপি-পেস্ট আবহ সঙ্গীত, কস্টিউম (‘অন্যরকম ভালোবাসা’র) ব্যবহার করা হয়েছে, এটা না করলেও ভালো হতো।

তবে আকবর সাহেবকে (মনতাজুর রহমান আকবর) একটা কারণে ধন্যবাদ জানাব, যে তিনি নায়িকাকে একটি গান আর কয়েকটি দৃশ্য বাদে সুন্দর পোশাক পড়িয়েছেন।

সিনেমা যারা দেখার তারা দেখবেই, অন্তত পাত্র-পাত্রীর জন্য দেখবে, অন্তত একবারের জন্য হলেও দেখবে, তাই সমালোচনায় ব্যবসায়িক ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ভালো লাগল রিভিউ।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২

বেকার যুবক বলেছেন: ধন্যবাদ প্রফেসর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.