![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।
বাই‘আতের মাধ্যমে সংগ্রামের সমাপ্তি
উসুদুল্ গ¦বাহ্ গ্রন্থে৫১ বলা হয়েছে ঃ অধিকতর সঠিক তথ্য হল এই যে, বাই‘আত হতে বিরত থাকা লোকেরা ছয় মাস পরে বাই‘আত হন। ইয়াকুবীও বলেন৫২ ঃ আলী ছয় মাস অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাই‘আত হন নি। আর ইস্তি‘আব্৫৩ ও তাম্বিয়াতুল্ আশরাফ্৫৪ গ্রন্থদ্বয়ে বলা হয়েছে ঃ ফাতেমাহ্র ইন্তেকালের পূর্বে আলী আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হন নি।
আল-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে ঃ আলীর বাই‘আত ফাতেমাহ্র ইন্তেকালের পরে সংঘটিত হয় এবং তা ছিল রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ওফাতের পঁচাত্তর দিন পরের ঘটনা। যুহ্রী এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ উদ্ধৃত করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর মীরাছ প্রশ্নে আবু বকর ও ফাতেমাহ্র মধ্যকার ঘটনা সম্বন্ধে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশাহ্ থেকে রেওয়াইয়াত করেছেন। আয়েশাহ্ বলেন ঃ ফাতেমাহ্ তাঁর (আবু বকরের) দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং স্বীয় মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সাথে কথা বলেন নি।
বর্ণনাকারী বলেন ঃ এক ব্যক্তি যুহ্রীকে জিজ্ঞেস করেন ঃ “তাহলে আলী কি এ ছয় মাস বাই‘আত হন নি?” যুহ্রী বলেন ঃ “না তিনি, না বানী হাশেমের অন্য কোন লোক বাই‘আত হয়েছেন যতক্ষণ না আলী বাই‘আত হন।”
তায়সীরুল্ ঊছূল-এ৫৫ যুহ্রী বলেন ঃ “না, আল্লাহ্র শপথ, আলী বাই‘আত না হওয়া পর্যন্ত বানী হাশেমের এক ব্যক্তিও বাই‘আত হন নি। আলী যখন লক্ষ্য করলেন যে, লোকেরা তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন তিনি আবু বকরের সাথে সমঝোতায় আসেন। ...”৫৬
বালাযুরী লিখেছেন৫৭ ঃ যেহেতু আরবরা (তাদের একাংশ) দ্বীন থেকে ফিরে গেলো (মুরতাদ হলো) তখন ওসমান আলীর কাছে গেলেন এবং বললেন ঃ “হে চাচাতো ভাই! তুমি যদি বাই‘আত না হও তাহলে কেউ দুশমনদের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে যাবে না। ... ” তিনি বার বার তাঁর সাথে সাক্ষাত করেন ও কথা বলেন; অবশেষে তাঁকে আবু বকরের কাছে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। ... আলী তাঁর অনুকূলে বাই‘আত হন এবং মুসলমানরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে; লোকেরা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হয় এবং দলে দলে সৈন্যদেরকে পাঠানো হতে থাকে।
হ্যা, হযরত আলী (আঃ) একদিকে হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)কে হারালেন, অন্যদিকে লোকদের মধ্যে উদাসীনতা দেখতে পেলেন। তেমনি তিনি মুসলমানদের উদ্বেগ জনক অবস্থাও লক্ষ্য করেন। তাই তিনি আবু বকরের সাথে সমঝোতায় আসেন। কিন্তু তিনি ঐ দিনগুলোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা কোনো দিনই, এমন কি তাঁর নিজের খেলাফত কালেও ভোলেন নি। তিনি সব সময়ই ঐ দিনগুলোর ব্যাপারে অভিযোগ করতেন। তিনি “খুৎবায়ে শাক্বশাক্বিয়াহ্” নামে বিখ্যাত তাঁর খোৎবায় বলেন ঃ “ ... আমার নিকট সুস্পষ্ট ছিল যে, বিচারবুদ্ধির রায় অনুযায়ী এবং আমার কাঁধে যে দায়িত্ব ছিল সে দায়িত্ববোধের দাবী অনুযায়ী ধৈর্য্য ধারণ করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তাই সহ্য করলাম। কিন্তু অবস্থা এমন ছিল যে, যেন চোখের ভিতর মাটি ও আগাছার কণা প্রবেশ করেছে এবং গলায় হাড্ডি আটকে গেছে। আমি স্বচক্ষে দেখছিলাম যে, আমার নিকট রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর উত্তরাধিকারের যে অকাট্য অধিকার পৌঁছেছে তা লুণ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর প্রথম জনের (আবু বকরের) জীবন শেষ হয়ে গেল, তাঁর জীবনের প্রদীপ নিভে গেল, আর তিনি খেলাফতের কনেকে খাত্তাবের পুত্রের কোলে সোপর্দ করে গেলেন। আর তিনি উপমা স্বরূপ হাম্দানের৫৮ কবির এ কবিতা পড়লেন ঃ “কতই না পার্থক্য আমার আজকের এ দিন Ñ যখন আমি উটের কুঁজে ও জিনের ওপরে আছি, ও সেদিনের মধ্যে যেদিন আমি জাবেরের ভ্রাতা হাইয়ানের পার্শ্বচর ছিলাম!” বিস্ময়কর যে, আবু বকর জীবিত থাকাকালে লোকদেরকে বলছিলেন তারা যেন তাঁর অনুকূলে কৃত বাই‘আত প্রত্যাহার করে নেয়, কিন্তু জীবনের শেষ কয়েক দিন বাকী থাকতে ওমরের জন্যে খেলাফতের চুক্তিকে সৃদৃঢ় করে যান! হায়! এই দুই লুটেরা খেলাফতকে দুগ্ধবতী উটের স্তনের দুই পালানের মতো নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিয়েছিলেন! ...”৫৯
পাদটীকা ঃ
১. ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৫৮; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২৪।
২. র্শাহে নাহ্জূল্ বালাগ¦াহ্, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৮৭।
৩. রিয়াযুন্ নায্রাহ্, ১ম খণ্ড/ ১৬৩; তারীখে খামীস্, ১ম খণ্ড/ ১৮৮।
৪. ৪র্থ খণ্ড/ ৬৫।
৫. ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৪০; ত্বাবারী, ৩য় খণ্ড/ ২০৩; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৪৮ ও অন্যান্য।
৬. ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৪৩; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২০।
৭. ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৪৩; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৫; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২৫; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৪৮; সীরাতে হালাবীয়্যাহ্, ৩য় খণ্ড/ ৩৯২ ও ৩৯৪।
৮. ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড, ৩৪৩।
৯. ত্ববাক্বাত, ক্বাফ ২/ ৭০; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/, একাদশ হিজরীর ঘটনা প্রসঙ্গে; নিহাইয়্যাতুল্ আরাব্, ১৮তম খণ্ড/ ৩৯২-৩৯৩।
১০. ত্বাবাক্বাত, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/ ৭০; বিদাইয়্যাহ্ ওয়া নিহাইয়্যাহ্।
১১. কান্যুল্ ‘উম্মাল্, ৪র্থ খণ্ড/ ৫৪ ও ৬০।
১২. ‘ইক্বদুল্ ফারীদ, ৩য় খণ্ড/ ৬১; যাহাবী, ১ম খণ্ড/ ৩২১, ৩২৪ ও ৩২৬।
১৩. কান্যুল্ ‘উম্মাল্, ৩য়খণ্ড/১৪০।
১৪. ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৪২; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৫২ ও ৪৫৫; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৭০; মুস্নাদে আহ্মাদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ৬২ ও অন্যান্য।
১৫. মুস্নাদে আহ্মাদ, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৪২ ও ২৭৪।
১৬. ত্বাবাক্বাতে ইবনে সা‘দ্, ২য় খণ্ড, ক্বাফ ২/৭৮।
১৭. প্রাগুক্ত।
১৮. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১৪।
১৯. র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ২য় খণ্ড/ ৪৪ ও ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ৫ (জাওহারীর “সাক্বীফাহ্” থেকে উদ্ধৃত)্
২০. জাওহারী তাঁর সাক্বীফাহ্ গ্রন্থে লিখেছেন যে, মুগ¦ীরাহ্ বিন্ শু‘বাহ্ এ প্রস্তাব দেন এবং এটাই সত্যের অধিকতর নিকটবর্তী।
২১. আব্বাস আবু বকরের দাবীকে যুক্তির খাতিরে মেনে নেন তাঁর খলীফাহ্র পদ গ্রহণকে অযথার্থ প্রমাণ করার জন্যে,
নচেৎ আব্বাস খেলাফতকে হযরত আলী (আঃ)-এর অধিকার বলেই জানতেন।
২২. সাক্বীফাহ্ ও আল-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্ গ্রন্থদ্বয়ে এ বাক্যাংশটি এরূপ ঃ “এ অর্ধিকার যদি তোমার হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্যে তার প্রয়োজন নেই।”
২৩. মুস্নাদে আহমাদ, ১ম খণ্ড/৫৫; ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৬৬; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২১; ইবনে কাছীর, ৫ম খণ্ড/ ২৪৬ এবং আরো অনেক সূত্র যার তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ। ।
২৪. প্রাগুক্ত।
২৫. হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর জীবনেতিহাস বিষয়ক প্রামাণ্য গ্রন্থ। Ñ অনুবাদক
২৬. কোন ঘটনার বর্ণনা প্রথম বর্ণনাকারী থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে এত বিরাট সংখ্যক ব্যক্তি কর্তৃক বর্ণিত হওয়া যত লোকের পক্ষে মিথ্যা রচনার জন্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে অসম্ভব। Ñ অনুবাদক
২৭. ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৬১৯; মুরুজুয্ যাহাব, ১ম খণ্ড/ ৪১৪; আল-‘ইক্বদুল্ ফারীদ, ৩য় খণ্ড/ ৬৯; কান্যুল্ ‘উম্মাল্, ৩য় খণ্ড/ ৩৫ ও অন্য অনেক সূত্র।
২৮. ২য় খণ্ড/ ১১৫।
২৯. র্আ-রিয়াযুন্ নায্রাহ্, ১ম খণ্ড/ ১৬৭; র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ১ম খণ্ড/ ১৩২ ও ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৯৩ (সাক্বীফাহ্ থেকে উদ্ধৃত); তারীখে খামীস্, ১ম খণ্ড/ ১৮৮।
৩০. ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫।
৩১. ইবনে শাহ্নাহ্ ঃ “কামেল”-এর পার্শ্বটীকা; র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ১ম খণ্ড/ ১৫৬।
৩২. আল-‘ইক্বদুল্ ফারীদ্, ৩য় খণ্ড/ ৬৪; আবূল্ ফিদা’, ১ম খণ্ড/ ১৫৬।
৩৩. ১ম খণ্ড/ ১২।
৩৪. রিয়াযুন্ নায্রাহ্, ১ম খণ্ড/ ১৬৭; র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ২য় খণ্ড/ ১৩২ ও ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২ (সাক্বীফাহ্ থেকে উদ্ধৃত); তারীখে খামীস্, ১ম খণ্ড/ ১৭৮।
৩৫. ১ম খণ্ড/ ৫৮৬।
৩৬. র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ২য় খণ্ড/ ১৩৪।
৩৭. তারীখে কামেল-এর পার্শ্বটীকা, পৃৎ ১১২।
৩৮. ৩য় খণ্ড/ ১৪০।
৩৯. মুরুজুয্ যাহাব্, ২য় খণ্ড/ ১০০; র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ২য় খণ্ড/ ৪৮১।
৪০. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫।
৪১. ত্বাবারী, ৩য় খণ্ড/ ১৯৮ ও ১৯৯; তারীখে খামীস্, ১ম খণ্ড/ ১৮৮; কান্যুল্ ‘উম্মাল্, ৩য় খণ্ড/ ১২৮।
৪২. ২য় খণ্ড/ ১৩৪, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৮৬।
৪৩. স্মর্তব্য, তাঁর হুজরা ছিল মসজিদুন্নবী (সাঃ) সংলগ্ন।
৪৪. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫।
৪৫. শাহ্রিস্তানী ঃ মিলাল্ ওয়া নিহাল্, ১ম খণ্ড/ তেহরান সংস্করণ, পৃঃ ২৬, লিডেন সংস্করণ, পৃৎ ৪০।
৪৬. মুরূজুয্ যাহাব্, ১ম খণ্ড/ ৪১৪; আল্-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্, ১ম খণ্ড, ১২-১৪।
৪৭. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫; র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ২য় খণ্ড/ ৪।
৪৮. উল্লেখ্য, আরবদের রীতি অনুযায়ী আপন চাচা, পিতার চাচা, দ্দাার চাচা ইত্যাদি সবাইকে ‘চাচা’ ও তাঁদের পুত্রদেরকে ‘চাচার ছেলে’ বলা হয়। Ñ অনুবাদক
৪৯. র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৮ (আস্-সাক্বীফাহ্ থেকে উদ্ধৃত); আল্-ইমামাহ্ ওয়াস্-সিয়াসাহ্, ১ম খণ্ড/ ১২।
৫০. ইবনে আবিল হাদীদ ঃ র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ২য় খণ্ড/ ৬৭ এবং কিতাবে ছিফফীন্, পৃঃ ১৮২।
৫১. ৩য় খণ্ড/২২২।
৫২. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১০৫।
৫৩. ২য় খণ্ড/ ১৪৪।
৫৪. পৃঃ ২৫০।
৫৫. ২য় খণ্ড/ ৪৬।
৫৬. ত্বাবারী, ৩য় খণ্ড/ ২০২; বুখারী, ৩য় খণ্ড/ ৩৮ (বাবে গ¦ায্ওয়ায়ে খাইর্বা); মুসলিম, ১ম খণ্ড/ ৭৪ ও ৩য় খণ্ড/ ১৫৩; ইবনে কাছীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ২৮৫-২৮৬; ‘ইক্বদুল্ ফারীদ্, ৩য় খণ্ড/ ৬৪; ইবনে আছীর, ২য় খণ্ড/ ২২৪; মাস্‘উদী, ২য় খণ্ড/ ৪১৪ ও অন্যান্য।
৫৭. ১ম খণ্ড/ ৮৭।
৫৮. তৎকালীন ইয়েমেনের অন্যতম আরব গোত্র।
৫৯. র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ২য় খণ্ড/ ৫০; ইবনে জাওযী ঃ তাযকিরাহ্, ষষ্ঠ অধ্যায়; শাহ্রিস্তানী ঃ মা হুয়া নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, খোৎবাহ্র সনদে।
বাই‘আত সম্বন্ধে বিশিষ্ট ছাহাবীদের মূল্যায়ন
ক) ফায্ল্ ইবনে আব্বাস
বানী হাশেম হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর লাশের গোসল ও কাফন-দাফনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন, এমতাবস্থায় সংবাদ এলো যে, বানূ সা‘এদাহ্র সাক্বীফায় আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ খবর শোনার পর এ ব্যাপারে বানী হাশেমের প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে ইয়াকুবী লিখেছেন১ ঃ তাঁরা ঘর থেকে বের হবার পর ফায্ল্ ইবনে আব্বাস দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন ঃ “হে কুরাইশের লোকেরা! প্রতারণা ও কারচুপির মাধ্যমে খেলাফত তোমাদের হবে না; আমরাই খেলাফতের উপযুক্ত, তোমরা নও। আমরা ও আমাদের নেতা তোমাদের চেয়ে খেলাফতের অধিকতর উপযুক্ত।”
খ) আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস
৫৮. তৎকালীন ইয়েমেনের অন্যতম আরব গোত্র।
৫৯. র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, ২য় খণ্ড/ ৫০; ইবনে জাওযী ঃ তাযকিরাহ্, ষষ্ঠ অধ্যায়; শাহ্রিস্তানী ঃ মা হুয়া নাহ্জুল্ বালাগ¦াহ্, খোৎবাহ্র সনদে।
আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত প্রশ্নে ওমরের সাথে স্বীয় কথোপকথন সম্বন্ধে আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস বলেন ঃ২
ওমর আমাকে বললেন ঃ “ওহে আব্বাসের বেটা! তুমি জান কি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর পর তোমাদের অনুকূলে বাই‘আত হওয়া থেকে কোন্ জিনিস লোকদেরকে ফিরিয়ে রেখেছে?” যেহেতু আমি এ প্রশ্নের জবাব দিতে চাই নি তাই বললাম ঃ “আমি যদি অবগত না থাকি তো আমীরুল মু’মিনীন আমাকে অবগত করবেন।”
ওমর বললেন ঃ “লোকেরা এটা দেখার জন্যে প্রস্তুত ছিল না যে, নবুওয়াত ও খেলাফত উভয়ই তোমাদের ভাগে পড়–ক আর তার বদৌলতে তোমরা অন্যদের সামনে শ্রেষ্ঠত্ব ও গৌরব প্রদর্শন করো। এ কারণে কুরাইশরা খেলাফতকে নিজেদের জন্যে নির্ধারণ করে নিয়েছে এবং স্বীয় লক্ষ্য হাসিল করেছে।”
আমি বললাম ঃ “হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি যদি অনুমতি দেন এবং আমার ওপর ক্ষিপ্ত না হন তাহলে আমিও কিছু বলতে চাই।”
বললেন ঃ “বলো, হে আব্বাসের পুত্র!”
বললাম ঃ “আপনি যে বললেন, কুরাইশরা খেলাফতকে নিজেদের জন্যে নির্ধারণ করে নিয়েছে ও তারা এর উপযুক্ত ছিল এবং এতে সফল হয়েছে; কিন্তু কুরাইশরা যদি আল্লাহ্ তাদের জন্যে যাকে মনোনীত করেছেন তাঁকেই বেছে নিতো তাহলে না তাদের অধিকার হাতছাড়া হতো, না তাদের প্রতি কেউ ঈর্ষা পোষণ করতো। আর এই যে বললেন, তারা পসন্দ করে নি যে, নবুওয়াত ও খেলাফত একই জায়গায় একত্রিত হোক, তাহলে জেনে রাখুন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা‘আলা কোরআনে এ ধরনের জনগোষ্ঠীর পরিচয় দিয়েছেন এভাবে ঃ “এটা এজন্য যে, আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপসন্দ করেছে; এ কারণে তাদের নেক আমল সমূহ বিনষ্ট হয়ে গেছে।”৩
ওমর বললেন ঃ “আফসোস! আল্লাহ্র শপথ, ইবনে আব্বাস! তোমার সম্পর্কে আমার কাছে যে সব খবর এসেছিল আমি তা বিশ্বাস করতে চাই নি যাতে আমার কাছে তোমার যে অবস্থান আছে তা তোমার হাতছাড়া হয়েযায়।”
বললাম ঃ “তা কী খবর এসেছে? আমি যদি সত্য বলে থাকি তাহলে আপনার কাছে আমার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাওয়া উচিৎ নয়, আর যদি ভুল বলে থাকি তাহলে আমার মতো লোকের মত হচ্ছে এই যে, ভুলকে বিদূরিত করবো।”
জবাবে ওমর বললেন ঃ “আমার কাছে খবর এসেছে যে, তুমি বলছো ঃ আমাদের ওপর যুলুম করে এবং ঈর্ষা বশতঃ আমাদের কাছ থেকে খেলাফত নিয়ে গেছে।”
বললাম ঃ “এই যে বললেন যে, আমি বলেছি, যুলুম করেছে; এটা জ্ঞানী ও অজ্ঞ নির্বিশেষে সকলের কাছে সুস্পষ্ট। কিন্তু এই যে বললেন, ঈর্ষা করেছে Ñ এটা কোন নতুন ব্যাপার নয়। ইবলীস আদমের প্রতি ঈর্ষা করেছিল; আমরাও সেই আদমের সন্তান, তাই ঈর্ষার শিকার হয়েছি।”
গ) সালমান ফারসী
আবু বকর জাওহারী রেওয়াইয়াত করেছেন ঃ সালমান, যুবাইর ও আনছাররা চাচ্ছিলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পরে আলীর অনুকূলে বাই‘আত হবেন। কিন্তু আবু বকর যখন লোকদের নিকট থেকে বাই‘আত গ্রহণ করলেন তখন সালমান বললেন ঃ “তোমরা সামান্য কল্যাণের অধিকারী হয়েছো, কিন্তু কল্যাণের খনি হাতছাড়া করেছো।”
সেদিন তিনি বলেন ঃ “বৃদ্ধ ব্যক্তিকে বেছে নিয়েছে এবং স্বীয় রাসূল (সাঃ)-এর আহ্লে বাইতকে ফেলে দিয়েছে। খেলাফতকে যদি রাসূল (সাঃ)-এর আহ্লে বাইতকে প্রদান করতো তাহলে এমন কি দুই জন লোকের মধ্যেও পারস্পরিক মতপার্থক্য সৃষ্টি হতো না এবং এ বৃক্ষের ফল থেকে যত বেশী সম্ভব ও সর্বোত্তমভাবে উপকৃত হত।”৪
আনছাবুল্ আশরাফ গ্রন্থে বলা হয়েছে, সালমান তাঁর মাতৃভাষা ফার্সীতে প্রবাদ বাক্যের ভাষায় বলেন ঃ “যা হওয়া উচিৎ নয় তা-ই হল, কিন্তু যা হওয়া উচিৎ ছিল তা হল না।” এরপর তিনি আরবী ভাষায় বলেন ঃ “তারা যদি আলীর অনুকূলে বাই‘আত হতো তাহলে অবশ্যই ওপর ও নীচ উভয় দিক থেকেই তারা বরকতপ্রাপ্ত হত।”
ঘ) উম্মে মেস্তাহ্
আবু বকর জাওহারী বলেন ঃ যেহেতু আবু বকরের অনুকূলে আলীর বাই‘আত না হওয়ার বিষয় নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হতে লাগল। সেহেতু আবু বকর ও ওমর আলী সম্পর্কে অধিকতর কঠোর নীতি অনুসরণ করতে লাগলেন। এ পরিস্থিতিতে উম্মে মেস্তাহ্ বিন্ আছাছাহ্ তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কবরের পাশে গিয়ে এ কবিতাটি আবৃত্তি করেন ঃ
“(হে রাসূল!) আপনার পরে অনেক খবর ও অনেক কথা হয়েছে আপনি যদি জীবিত থাকতেন তো কথা এতো বেশী হতো না
যে জমিতে বৃষ্টি প্রবেশ করে না তা উর্বরতা হারিয়ে ফেলে, সেভাবেই
আপনার কওম লাগামছাড়া হয়ে গেছে Ñ দেখুন ও সাক্ষী থাকুন।”৫
ঙ) আবু যার
হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ইন্তেকালের সময় আবু যার মদীনায় ছিলেন। আবু বকর কর্তৃক খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মদীনায় ফিরে আসেন। তিনি আবু বকরকে বলেন ঃ “তুমি খুব সামান্য জিনিসই অর্জন করলে এবং তাতেই আত্মতৃপ্ত হলে, আর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর আহ্লে বাইতকে হাতছাড়া করলে। তোমরা যদি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর আহ্লে বাইত-এর নিকট এ দায়িত্ব সোপর্দ করতে তাহলে এমন দু’জন লোকও পাওয়া যেতো না যারা তোমাদের বিরোধিতা করত।”৬
চ) মিক্বদাদ বিন্ ‘আম্র্
ইয়াকুবী ওসমানের বাই‘আতের ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে আবু বকরের খেলাফত গ্রহণে মিক্বদাদ বিন্ ‘আম্রের প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন ঃ একদিন আমি মসজিদুন্নবীতে এক ব্যক্তিকে (মিক্বদাদকে) দেখতে পেলাম; তিনি মাটিতে হাঁটু রেখে এমনভাবে বসে ছিলেন যে, মনে হল তিনি খুবই বেদনার্ত, যেন গোটা দুনিয়াই তাঁর ছিল, কিন্তু তিনি তাঁর সে সর্বস্ব পুরোটাই হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলছিলেন ঃ “কুরাইশদের আচরণ বড়ই বিস্ময়কর; তারা তাদের দায়িত্ব তার হকদারদের কাছ থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে।”৭
ছ) বানূ নাজ্জারের জনৈকা মহিলা
আবু বকর জাওহারী লিখেছেন ঃ আবু বকরের সাথে বাই‘আত পাকাপোক্ত হয়ে গেলে তিনি মুহাজির ও আনছার মহিলাদের নিকট বাইতুল মাল থেকে কিছু অর্থ হাদীয়া স্বরূপ পাঠােলন। তিনি বানূ ‘আদী বিন্ নাজ্জার গোত্রের জনৈকা মহিলাকে দেয় অর্থ যায়েদ বিন্ ছাবেতের মাধ্যমে পাঠালেন। যায়েদ উক্ত মহিলার নিকট এলেন এবং তাঁর নিকট তা সমর্পণ করলেন। মহিলা জিজ্ঞেস করলেন ঃ “এটা কী?” যায়েদ বললেন ঃ “আবু বকর নারীদের মধ্যে যে অংশ বণ্টন করেছেন এ তারই অংশ বিশেষ।” মহিলা বললেন ঃ “তোমরা কি উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে আমার নিকট থেকে আমার দ্বীন কেড়ে নিতে চাও?”৮
জ) মু‘আবিয়াহ্
মু‘আবিয়াহ্ হযরত আলী (আঃ)-এর সাথে তাঁর দ্বন্দ্বে আলীর সমর্থক মুহাম্মাদ বিন্ আবু বকরকে লেখা তাঁর পত্রে বলেন ঃ
“আমি ও তোমার পিতা Ñ আমরা আবু তালিবের পুত্রের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলাম এবং আমাদের ওপর তাঁর হককে অপরিহার্য গণ্য করতাম। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর নিজের নিকট যা ছিল তাঁর রাসূলের জন্যে তা নির্ধারণ করে দিলেন এবং তাঁকে যে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন তা পূর্ণ করলেন, আর তাঁর আহ্বানকে সুস্পষ্ট করে দিলেন ও তাঁর দলীলকেও সুস্পষ্ট করে দিলেন, অতঃপর তাঁর রূহ্কে (তাঁর ওপর আল্লাহ্র দরূদ বর্ষিত হোক) নিজের দিকে কবয করে নিলেন। অতঃপর তোমার পিতা ও তাঁর বন্ধু ওমর আলীর হক আত্মসাৎকারী প্রথম ব্যক্তি হলেন এবং তাঁর বিরোধিতা করলেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ দুই ব্যক্তি পরস্পরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন, এরপর আলীকে বাই‘আতের জন্যে আহ্বান জানালেন। আলী যেহেতু বাই‘আত হওয়া থেকে বিরত থাকলেন ও অস্বীকৃতি জানালেন সেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সিদ্ধান্ত নিলেন এবং ভয়ঙ্কর ধরনের চিন্তাভাবনা করলেন। ফলে শেষ পর্যন্ত আলী তাঁর অনুকূলে বাই‘আত হলেন ও তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। কিন্তু এ দুই ব্যক্তি কখনোই স্বীয় দায়িত্বে তাঁকে অংশীদার করতেন না এবং স্বীয় গোপন বিষয়াদি তাঁকে জানতে দিতেন না। অতঃপর আল্লাহ্ উভয়েরই জান কবয করলেন। অতএব, এখন আমি যা করছি তা যদি ভাল ও সঠিক কাজ হয়ে থাকে তাহলে প্রকৃত পক্ষে তোমার পিতাই তার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এবং আমরা শুধু তাতে শরীক হয়েছি। আর তোমার পিতা যদি এমনটি না করতেন তাহলে আমরা কখনোই আবু তালিবের পুত্রের বিরোধিতা করতাম না, বরং খেলাফতের আসন তাঁকেই অর্পণ করতাম। কিন্তু তোমার পিতা আমাদের আগেই তাঁর সাথে এ আচরণ করেছেন, আর আমরা তোমার পিতার মতোই আচরণ করেছি। অতএব, তুমি হয় তোমার পিতাকেই দোষী সাব্যস্ত করো অথবা আমাদেরকে তিরস্কার করা থেকে বিরত হও। যারা তাওবাহ্ করে তাদের ওপর আল্লাহ্র দরূদ বর্ষিত হোক।”৯
ঝ
চলবে..........।
©somewhere in net ltd.