নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলাম,রাজনীতি

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।

আল-মুনতাজার

আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।

আল-মুনতাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ ও তার কল্প কাহিনী

১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮

আগের লিঙ্কঃ

Click This Link





শূরা ও ওসমানের অনুকূলে বাই‘আত

সাইফের রেওয়াইয়াত

হিজরী ২৩ সালের ঘটনাবলী প্রসঙ্গে ত্বাবারী১ সাইফ থেকে রেওয়াইয়াত করেছেন যে, খলীফাহ্ ওমর বলেন ঃ “আমি নিশ্চিতরূপেই জানি যে, জনগণ অন্য কাউকেই এই দুই ব্যক্তির সম পর্যায়ের বলে গণ্য করে না। কারণ, এই দুই ব্যক্তি (অর্থাৎ ওসমান ও আলী) হচ্ছেন তদ্রƒপ ঠিক যেরূপ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ও জিবরাঈল পরস্পরের বন্ধু ছিলেন।”

ত্বাবারী হিজরী ২৪ সালের ঘটনাবলী বর্ণনা প্রসঙ্গে সাইফ থেকে বর্ণনা করেন২ ঃ মহররম মাসের তিন তারিখে শূরার৩ সদস্যগণ সকলেই ওসমানের অনুকূলে রায় দেন। এ সময় আছরের নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায় এবং মুয়াজ্জিন ছুহাইব আযান দেন। লোকেরা আযান ও ইক্বামাহ্র মধ্যবর্তী সময়ে জমায়েত হয়। ওসমান বেরিয়ে আসেন এবং লোকদের সামনে নামাযের ইমামতী করেন। ...

ত্বাবারী৪ সাইফ থেকে আরো বর্ণনা করেন ঃ শূরার সদস্যগণ ওসমানের অনুকূলে রায় দিলে ওসমান সকলের চেয়ে বিষণœভাবে বেরিয়ে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর মিম্বারের ওপর উঠে খোতবাহ্ দেন। এরপর তিনি আল্লাহ্র সানা’ পড়েন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন এবং এরপর বলেন ঃ “আপনারা খুবই দুর্বল একটি গৃহে আছেন এবং স্বীয় আয়ুষ্কালের অবশিষ্টাংশ অতিক্রম করছেন যাতে মৃত্যুর পূর্বে নেক আমল আঞ্জাম দিতে পারেন। কারণ সকালে বা রাতে যে কোনো সময় আপনাদের নিকট মৃত্যু এসে হাযির হবে। আপনারা শুনে রাখুন, দুনিয়ার চারদিককে প্রতারণার ফাঁদ ঘিরে রেখেছে। অতএব, দুনিয়ার যিন্দেগী যেন আপনাদেরকে প্রতারিত না করে এবং শয়তান আপনাদেরকে ধোঁকা না দেয়। অতীত কালের লোকদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন, অতঃপর চেষ্টাসাধনা করুন; গাফেল হয়ে বসে থাকবেন না। তাহলে আপনারা ভুল করবেন না। দুনিয়ার সেই সন্তানগণ ও ভ্রাতাগণ কোথায় গেলো যারা যমিনকে চাষ করেছে, তারপর একে আবাদ করেছে, দীর্ঘ বহু বছর তা থেকে ফায়দা গ্রহণ করেছে? দুনিয়া কি তাদেরকে দূরে নিক্ষেপ করে নি? দুনিয়া থেকে আপনাদের লক্ষ্য তা-ই হওয়া উচিত এ দুনিয়ার রব যা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আপনারা আখেরাতের সন্ধানী হোন। আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়ার ব্যাপারে উপমা দিয়েছেন এবং যা উত্তম তা-ই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মহামহিম ও মহাপরাক্রান্ত আল্লাহ্ এরশাদ করেছেন ঃ (হে রাসূল!) তাদের জন্যে দুনিয়ার জীবনের উপমা দিন, (তা হচ্ছে ঃ) তিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেছেন ...।” বক্তৃতা শেষ হবার পর জনগণ তাঁর দিকে মুখ করলো এবং তাঁর অনুকূলে বাই‘আত হলো।

এই হলো শূরা ও ওসমানের অনুকূলে বাই‘আত এবং তাঁর প্রথম ভাষণ সম্পর্কে সাইফের রেওয়াইয়াত।

ওমর কর্তৃক মনোনীত খলীফাহ্

কিন্তু খলীফাহ্ ওমর কর্তৃক তাঁর স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের জন্যে শূরা গঠন ও তদপরবর্তী ঘটনাবলী সম্পর্কে পর্যালোচনা করলে যে কারো নিকটই সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওমর ওসমানকে খলীফাহ্ করার জন্যে বহু পূর্ব থেকেই ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন এবং শূরা গঠন একটি বাহানা ছিলো মাত্র।

সীরাতে ইবনে হিশামে৫ আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফ্ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, (হজ্বের সময়) মীনায় এক ব্যক্তি ওমরকে বলে ঃ “হে আমীরুল মু’মিনীন! অমুক ব্যক্তি সম্বন্ধে আপনার মত কী যে বলে, “আল্লাহ্র শপথ, আবু বকরের বাই‘আত চিন্তা-ভাবনা ও দূরদর্শিতা বিহীন কাজ বৈ ছিলো না, কিন্তু তা সত্ত্বেও তা সম্পাদিত হয়েছিলো।”?” তিনি (আবদুর রহমান) বলেন ঃ ওমর এ কথা শুনে খুবই ক্রুদ্ধ হন এবং বলেন ঃ “ইন শা আল্লাহ্, আমি আজ রাতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো এবং যারা কোনো রূপ উপযুক্ততা ছাড়াই আত্মসাৎমূলকভাবে জনগণের সামষ্টিক ব্যাপারের দায়িত্ব নিতে চায়৬ তাদেরকে হুশিয়ার করে দেবো।”

আবদুর রহমান বলেন ঃ আমি বললাম ঃ “হে আমীরুল মু’মিনীন! এ কাজ করবেন না। কারণ, নীচু স্তরের ও নাশকতাকারী সহ সব ধরনের লোকেরাই হজ্বের মওসূমে একত্রিত হয়। ... আপনি সময় দিন, আমরা ইসলামের রাজধানী মদীনায় পৌঁছি; সেখানে আপনার বক্তব্যের শ্রোতা হবেন কেবল জ্ঞানী-গুণী ও ভদ্র লোকেরা। আপনি যা বলতে চান তা নিশ্চিন্ত মনে মদীনায় করতে পারবেন এবং জ্ঞানীরা আপনার কথা ভালভাবে মনে রাখবেন ও যথাযথভাবে কাজে লাগাবেন।” তখন ওমর বলেন ঃ “আল্লাহ্র শপথ, আল্লাহ্র ইচ্ছায় সেখানে আমি সর্বপ্রথম যে ভাষণ দেবো তাতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”

আবদুর রহমান বলেন ঃ মদীনায় ফিরে আসার পর ওমর প্রথম জুম‘আয় মিম্বারে উঠলেন এবং খোতবাহ্ দিলেন। এ খোতবার এক জায়গায় তিনি বলেন ঃ “আমার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, অমুক ব্যক্তি বলেছে ঃ ‘আল্লাহ্র শপথ, ওমর বিন্ খাত্তাব মারা গেলে অবশ্যই অমুকের অনুকূলে বাই‘আত হবো।’ আর এই কথা যে, ‘আল্লাহ্র শপথ, আবু বকরের বাই‘আত চিন্তা-ভাবনা ও দূরদর্শিতা বিহীন কাজ বৈ ছিলো না, কিন্তু তা সত্ত্বেও তা সম্পাদিত হয়েছিলো।’ Ñ এ ধরনের কথা থেকে যেনো কেউ ধোঁকায় না পড়ে। কারণ, যদিও উক্ত বাই‘আত এ ধরনেরই ছিলো, কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে তার ক্ষতিকারকতা থেকে রক্ষা করেছেন। তাছাড়া আপনারা মনে রাখবেন যে, এখন আর আপনাদের মধ্যে আবু বকরের মতো কেউ নেই সবাই যার দিকে এগিয়ে যাবে ও তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে। অতএব, যে কেউ মুসলমানদের সাথে পরামর্শ ব্যতীত কারো অনুকূলে বাই‘আত হবে সে ধরনের বাই‘আত কিছুতেই আইনগত গুরুত্বের অধিকারী হবে না এবং সে ক্ষেত্রে উভয় পক্ষই নিহত হবে।”

এ প্রসঙ্গে আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত গ্রহণকে কেন্দ্র করে যা কিছু ঘটেছে, বিশেষ করে কতক ছাহাবীর হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর গৃহে আশ্রয় গ্রহণ ও সেখানে ওমরের ভূমিকা স্মর্তব্য।

ইবনে খালদূন৭ জাহেয্ থেকে রেওয়াইয়াত করেন যে, তিনি বলেছেন ঃ যিনি বলেছিলেন, “ওমর মারা গেলে আমি অমুকের অনুকূলে বাই‘আত হবো।” তিনি হলেন ‘আম্মার বিন্ ইয়াসার। তিনি বলেন ঃ “ওমর মারা গেলে আমি আলীর অনুকূলে বাই‘আত হবো।” ‘আম্মারের এ কথার কারণেই ওমর উত্তেজিত হয়ে যান এবং উক্ত ভাষণ প্রদান করেন। অপর এক হাদীছ বিশারদ বলেন যে, ওমরের মৃত্যুর পর যার বাই‘আত হওয়ার কথা বলা হয় তিনি হলেন ত্বাল্হাহ্ বিন্ আবদুল্লাহ্।

কে কার অনুকূলে বাই‘আত হওয়ার কথা বলেছিলেন তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই যে, খলীফাহ্ ওমর তাঁর ভাষণে খেলাফতের ব্যাপারে পরামর্শের কথা বলেন। অথচ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) তাঁর স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণের জন্যে পরামর্শ করার নির্দেশ দেন নি। অন্যদিকে ওমরের বক্তব্য অনুযায়ীই আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের ঘটনা আকস্মিকভাবে ও কোনো রূপ চিন্তা-ভাবনা ব্যতিরেকেই সংঘটিত হয়েছিলো। আর স্বয়ং ওমর আবু বকর কর্তৃক খলীফাহ্ মনোনীত হয়েছিলেন, মুসলমানদের কোনো পরামর্শ পরিষদের মাধ্যমে নয়। অতএব, ওমরই সর্বপ্রথম স্বীয় উত্তরাধিকার নির্ধারণের জন্যে পরামর্শ পরিষদ গঠনের পরিকল্পনা করেন। ওমর তাঁর এ খোতবায় সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, মুগ¦ীরাহ্ ইবনে শু‘বাহ্র গোলাম ফীরূযের আঘাতে আহত হওয়ার পূর্ব থেকেই তিনি একটি শূরা গঠনের চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কি তাঁর স্থলাভিষিক্ত করার জন্যে কাউকে পসন্দ করে রেখেছিলেন, নাকি স্রেফ শূরা গঠনের চিন্তাই করেছিলেন এবং চাচ্ছিলেন যে, বিষয়টি কেবল শূরাই নির্ধারণ করবে? নিম্নোক্ত রেওয়াইয়াত থেকে তা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

মুব্বিুদ্দীন ত্বাবারী তাঁর “র্আ-রিয়াযুন্ নায্রাহ্” গ্রন্থে৮ আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর থেকে রেওয়াইয়াত করেন ঃ ওমর যখন আহত হলেন তখন তাঁকে বললাম ঃ “আমীরুল মু’মিনীন! কেমন হয় আপনি নিজেই যদি জনগণের ওপর একজন শাসক নির্ধারণ করে দিয়ে যান?” তিনি বললেন ঃ “আমাকে বসাও।” তিনি যখন বললেন “আমাকে বসাও।” তখন আমি এমনই ভয় পেয়ে গেলাম যে, মনে মনে কামনা করছিলাম যে, তাঁর ও আমার মাঝে যদি মদীনা শহরের আয়তন পরিমাণ দূরত্ব থাকতো! তারপর তিনি বললেন ঃ “শপথ সেই আল্লাহ্র ওমরের প্রাণ যার কুদরতের মুঠোর মধ্যে, অবশ্যই আমি তাকেই শাসন ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবো যিনি প্রথম বার আমাকে তা প্রদান করেন।”

বলা বাহুল্য যে, যিনি প্রথম বার ওমরকে খেলাফত প্রদান করেন তিনি হলেন ওসমান। কারণ, ত্বাবারী৯ ওয়াক্বেদী থেকে রেওয়াইয়াত করেন যে, আবু বকর ওয়াছিয়্যাত লেখার জন্যে ওসমানকে একান্তে ডেকে নিলে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আবু বকর ইবনে আবি কুহাফাহ্ মুসলমানদের উদ্দেশে এ অঙ্গীকারনামা লিখেছেন,” Ñ এ কথা বলার পর তিনি বেহুশ হয়ে যান। তখন ওসমান লিখেন ঃ “আমি ওমরকে আপনাদের ওপর শাসক নিয়োগ করলাম এবং আপনাদের মধ্যে তার চেয়ে উত্তম কাউকে পাই নি।” অতঃপর আবু বকর সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে তাই মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করেন।

এছাড়া অন্যত্র ওমর সুস্পষ্ট ভাষায় তাঁর পরে ওসমানকে খলীফাহ্ করার কথা বলেন। খাছীমাহ্ বিন্ সালমান তাঁর “ফাযায়েলুছ্ ছাহাবাহ্” গ্রন্থে হুযাইফাহ্ থেকে রেওয়াইয়াত করেন যে, ওমরকে জিজ্ঞেস করা হলো ঃ “আপনার পরে খলীফাহ্ কে?” তিনি বলেন ঃ “ওসমান বিন্ ‘আফফান।”১০ কানযুল্ ‘উম্মালে১১ বলা হয়েছে, মদীনায় ওমরকে এ প্রশ্ন করা হয়েছিলো এবং সেখানেই তিনি এ জবাব দিয়েছিলেন।

শূরা সম্পর্কে সাইফ ব্যতীত অন্যান্যের রেওয়াইয়াত

বালাযুরী১২ ও ইবনে সা‘দ১৩ রেওয়াইয়াত করেন ঃ ওমর বিন্ খাত্তাব জুম‘আর দিন খোতবাহ্ দেন এবং তাতে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ও আবু বকরকে স্মরণ করেন। এরপর বলেন ঃ “আমি স্বপ্নে দেখেছি, একটি মোরগ যেন তার ঠোঁট দিয়ে আমাকে ঠোকরাচ্ছে। আমার দৃষ্টিতে এর তা‘বীর এতদ্ব্যতীত অন্য কিছু নয় যে, আমার মৃত্যু সন্নিকটবর্তী হয়েছে। অন্যদিকে কতক লোক আমাকে বলছে যে, আমি যেন আমার পরবর্তী খলীফাহ্ নির্ধারণ করি। অবশ্য আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনকে, তাঁর খলীফাহ্কে এবং যে উদ্দেশ্যে তিনি রাসূল পাঠিয়েছিলেন তাকে বিনষ্ট করবেন না। আমার মৃত্যু যদি অচিরেই এসে যায় তাহলে ছয় জনের একটি শূরা তাদের মধ্য থেকে যাকে রায় দেবেন তিনিই খলীফাহ্ হবেন। আর এরা হচ্ছেন এমন ব্যক্তি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময় তাঁদের ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন। আমি জানি যে, এ কাজের ব্যাপারে প্রতিবাদ উঠবে। কিন্তু আপনাদের মনে রাখা উচিৎ যে, এই প্রতিবাদকারীগণ তারাই যাদেরকে আমি আমার পাঞ্জার শক্তিবলে ইসলামের দিকে টেনে এনেছি। আর যদি তারা এরূপ প্রতিবাদ করে তাহলে তাা আল্লাহ্র দুশমন।”

ইবনে আবদুল র্বা১৪ দুই সনদে রেওযাইয়াত করেন ঃ ওমর বিন্ আল্-খাত্তাব আহত হলে তাঁকে বলা হলো ঃ “হে আমীরুল মু’মিনীন! কেমন হতো আপনি যদি আপনার পরবর্তী খলীফাহ্ নির্ধারণ করতেন?” তিনি বললেন ঃ “আমি যদি আপনাদেরকে আপনাদের নিজেদের ওপর ছেড়ে দিয়ে যাই তো (জেনে রাখুন,) আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন এমন একজন তা-ই করে গেছেন। আর আমি যদি আপনাদের জন্যে খলীফাহ্ নির্ধারণ করে দিয়ে যাই তো সে ক্ষেত্রেও (জেনে রাখুন,) আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন এমন একজন তা-ই করে গেছেন। আর আবু ওবায়দাহ্ বিন্ র্জারাহ্ যদি বেঁচে থাকতো তাহলে নিঃসন্দেহে আতি তাকে আমার স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণ করে যেতাম। সে ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা‘আলা আমার নিকট কৈফিয়ত চাইলে আমি বলতাম, আমি তোমার রাসূলের নিকট থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আবু ওবায়দাহ্ এই উম্মাতের আমানতদার। আর আবু হুযাইফাহ্র গোলাম সালেম যদি জীবিত থাকতো তাহলে তাকে আমার স্থলাভিষিক্ত করতাম। আর সে ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা‘আলা কৈফিয়ত চাইলে বলতাম, আমি তোমার রাসূলের নিকট থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, নিঃসন্দেহে সালেম আল্লাহ্কে এতখানি ভালবাসে যে, আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ভয়ের কোনো কারণ না থাকলেও সে গুনাহর কাজে লিপ্ত হতো না।”

বলা হলো ঃ “আবদুল্লাহ্কে দায়িত্ব দিচ্ছেন না কেন? তিনি তো দ্বীনদারী, ফাযায়েল ও ইসলাম গ্রহণে অগ্রগণ্যতার বিচারে সুযোগ্য ব্যক্তি।” তিনি বললেন ঃ “খাত্তাবের বংশধরদের জন্যে এটাই যথেষ্ট যে, তাদের মধ্য থেকে কেবল এক ব্যক্তি গোটা উম্মাতের দায়িত্বের হিসাব দেবে। আমি কত না আনন্দিত যে, এ হিসাব-নিকাশ থেকে সমানে সমানে বেরিয়ে আসতে পারবো; না মুনাফা করতে পারবো, না লোকসান!” এরপরও লোকেরা বললো ঃ “আহা! কাউকে যদি নিয়োগ করে যেতেন!” তিনি বললেন ঃ “ঐ কথা বলার পর নিজেকে এজন্য প্রস্তুত করেছিলাম যে, তোমাদের জন্যে কাউকে শাসক হিসেবে নিয়োগ করবো, আশা করি, যিনি তোমাদেরকে সত্য পথে পরিচালিত করবেন।” এ কথা বলে তিনি আলীর দিকে ইশারা করলেন, তারপর বললেন ঃ “কিন্তু নিজের জন্যে এতেই কল্যাণ দেখতে পেলাম যে, জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে এ কাজের দায়দায়িত্ব বহন করবো না।”

বালাযুুরী১৫ ‘আম্র্ বিন্ মাইমূন্ থেকে রেওয়াইয়াত করেন যে, তিনি বলেন ঃ আমি ওমরের আহত হওয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। এরপর তিনি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বলেন ঃ ওমর বললেন ঃ “আলী, ওসমান, ত্বাল্হাহ্, যুবায়ের, আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফ ও সা‘দ্ বিন্ আবি ওয়াক্কাছ্কে আমার নিকটে আসতে বলো।” (তাঁরা এলে) তিনি এ ছয় ব্যক্তির মধ্যে আলী ও ওসমান ছাড়া অন্য কারো সাথে কোনো কথা বললেন না। তিনি আলীকে বললেন ঃ “হে আলী! এই লোকেরা হয়তো তোমাকেই নির্ধারণ করবে, কারণ, তুমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর স্বজন। এছাড়া তুমি তাঁর জামাতা হবার গৌরবের অধিকারী। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাকে ফিকাহ্ও ‘ইল্মের ক্ষেত্রে কেমন মাকামই না দিয়েছেন! তুমি যদি এ দায়িত্ব হাতে নাও তাহলে তাকওয়া হারিয়ে ফেলো না।”

এরপর তিনি ওসমানকে ডাকলেন এবং বললেন ঃ “হে ওসমান! এই লোকেরা হয়তো তোমাকেই নির্বাচিত করবে। কারণ, তুমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর জামাতা ছিলে এবং তুমি একজন বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি। রাষ্ট্রক্ষমতা তোমার হাতে এলে আল্লাহ্কে ভয় করে চলো এবং স্বীয় আত্মীয়-স্বজনকে উম্মাতের ঘাড়ে চাপিয়ে দিও না।”

এরপর তিনি বলেন ঃ “ছুহাইবকে আমার নিকট ডেকে আনো।” ছুহাইব এলে তিনি তাঁকে আদেশ দিলেন ঃ “তিন দিন নামাযের ইমামতীর দায়িত্ব তোমার ওপর থাকবে এবং এই কয়েক ব্যক্তি ঘরে গোপনে পরামর্শ করবে। তারা যদি সর্বসম্মতভাবে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে নির্ধারণ করে তাহলে যে-ই তার সাথে বিরোধিতা করবে তার মাথা ধর থেকে আলাদা করে ফেলো।”

তাঁরা ওমরের নিকট থেকে বের হয়ে গেলে তিনি বললেন ঃ “খেলাফতের দায়িত্ব যদি যার মাথার সামনের অংশে চুল কম তাকে Ñ যা বলার উদ্দেশ্য আলীকে বুঝানো Ñ সোপর্দ করা হয়, তাহলে সে সঠিক পথে পরিচালিত করবে এবং মনযিলে মকছূদে পৌঁছে দেবে।” তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর বললেন ঃ “আমীরুল মু’মিনীন! আপনি নিজেই যদি তাঁকে নিয়োগ করে দেন তাতে অসুবিধা কী?” তিনি বললেন ঃ “আমি চাই না যে, জীবিত ও মৃত অবস্থায় এ বোঝা আমার ওপর থাকুক।” ত্ববাক্বাতে ইবনে সা‘দেও১৬ প্রায় অনুরূপ রেওয়াইয়াত উদ্ধৃত হয়েছে।

রিয়াযুন্ নায্রাহ্১৭ গ্রন্থে ‘আম্র্ বিন্ মাইমূনের রেওয়াইয়াত থেকে আলী সম্পর্কিত ওমরের উপরোক্ত উক্তি উদ্ধৃত করার পর বলা হয়েছে ঃ নাসাঈ তাঁর “ছহীহ”তে উক্ত রেওয়াইয়াত উল্লেখ করেছেন এবং এতে যোগ করেছেন যে, তিনি বলেন ঃ “তারা কতই না ভাগ্যবান হবে যদি তারা খেলাফতের দায়িত্ব লম্বা কপালওয়ালা ব্যক্তিকে সোপর্দ করে! তাহলে তারা দেখতে পাবে যে, সে কীভাবে তাদেরকে সত্যের ওপরে রাখে, এমন কি তলোয়ারের দ্বারা হলেও।” তখন আমি (আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর) বললাম ঃ “আপনি যখন তাঁর যোগ্যতা সম্পর্কে এতখানি জানেন তখন আপনি নিজেই কেনো খেলাফতের দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পণ করছেন না?” তিনি বললেন ঃ “আমি যদি লোকদেরকে তাদের নিজেদের ওপর ছেড়ে দিয়ে যাই তো (জেনে রাখো,) আমার চেয়ে যিনি অধিকতর উত্তম ছিলেন তিনি এরূপই করেছিলেন।”

বালাযুরী১৮ ওয়াক্বেদীর সনদে উদ্ধৃত করেছেন, ওমর যখন তাঁর স্থলাভিষিক্ততা সম্পর্কে কথা বলছিলেন, তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় ঃ “আপনি ওসমানের কথা বলছেন না কেন?” তিনি বললেন ঃ “আমি যদি তা করি তাহলে ওসমান আবি মু‘ঈতের বংশধরদেরকে (স্বীয় আত্মীয়-স্বজনকে) উম্মাতের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে।” বলা হলো ঃ “যুবাইর কেমন?” তিনি বললেন ঃ “সে যখন সন্তুষ্ট থাকে তখন তার মধ্যে মু’মিনের গুণ-বৈশিষ্ট্য থাকে আর যখন সে ক্রুদ্ধ হয় তখন সে কাফেরের মতো হয়ে যায়।” বলা হলো ঃ “ত্বাল্হাহ্?” তিনি বললেন ঃ “তার নাক উঁচুতে এবং তার পশ্চাদ্দেশ পানিতে।” বলা হলো ঃ “সা‘দ?” তিনি বললেন ঃ “সে সেনাপতিত্বের জন্যে উপযুক্ত, কিন্তু একটি গ্রামের শাসনক্ষমতাও তার জন্যে অনেক বেশী।” বলা হলো ঃ “আবদুর রহমান?” তিনি বললেন ঃ “সে তার স্ত্রী ও সন্তানদের পরিচালনা করুক; এটাই তার জন্যে যথেষ্ট।”

ইবনে মাইমূন থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ওমর শূরার দায়িত্ব ছয় জনের ওপর ন্যস্ত করেন এবং বলেন ঃ “আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমরও তোমাদের সাথে থাকবে, তবে তার নির্বাচিত হবার অধিকার থাকবে না।”

বালাযুরী১৯ আবু মেখ্নাফ্ থেকে রেওয়াইয়াত করেন যে, ওমর আহত হবার পর আনছার ও মুহাজিরদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের খবর দিয়ে আনান। তিনি তাঁদেরকে বলেন ঃ “আমি আপনাদের দায়িত্ব এমন ছয় জন মুহাজিরের একটি শূরার ওপর অর্পণ করে যাচ্ছি যারা হিজরতে অগ্রবর্তী ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ওফাতের সময় যাদের ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে নেতা নির্বাচন করবেন।” এরপর তিনি এ ছয়জনের নাম বলেন। এরপর তিনি আবি ত্বাল্হাহ্ যায়েদ বিন্ সাহ্ল্ খাযরাজীকে বলেন ঃ “তুমি পঞ্চাশ জন আনছার সহ প্রস্তুত থাকো এবং আমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিলে এই ছয় ব্যক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের মধ্য থেকে একজনকে খলীফাহ্ নির্বাচনে বাধ্য করো, আর শূরা যেনো তিন দিনের বেশী দীর্ঘায়িত না হয়।” এছাড়া তিনি শূরা কাউকে নির্বাচিত না করা পর্যন্ত ছূহাইবকে ইমামতী করার জন্যে আদেশ দেন।

ওমর এ নির্দেশ দেয়ার সময় ত্বালহাহ্ মদীনার বাইরে তাঁর কৃষিক্ষেত্রে ছিলেন। তাই ওমর বললেন ঃ “এ তিন দিন শূরার বৈঠক চলার মধ্যে যদি ত্বালহাহ্ এসে পৌঁছে তো খুবই ভালো কথা, নচেৎ তোমরা তার অপেক্ষায় থেকো না, বরং কাজ সমাপ্ত করে ফেলো এবং যার ব্যাপারেই তোমরা মতৈক্যে উপনীত হবে তার অনুকূলে বাই‘আত হও। আর যে তোমাদের বিরোধিতা করবে তার শিরচ্ছেদ করো।”

ত্বালহাহ্ মদীনায় এসে পৌঁছার আগেই লোকেরা ওসমানের অনুকূলে বাই‘আত হয়ে গেলো। ত্বালহাহ্ তাঁর নিজের ঘরে বসে পড়লেন এবং বললেন ঃ “তারা আমার মতো লোকের ওপরও কি রায় চাপিয়ে দেবে?”

অতঃপর ওসমান ত্বাল্হার নিকট এলেন। ত্বালহাহ্ বলেন ঃ “আমি যদি শূরার রায় না মানি তাহলে তুমি কি খেলাফত ফিরিয়ে দেবে?” ওসমান বললেন ঃ “হ্যা।” ত্বালহাহ্ বললেন ঃ “তাহলে আমিও সমর্থন দিলাম ও কবুল করলাম।” অতঃপর তিনি ওসমানের অনুকূলে বাই‘আত হলেন।

‘ইক্বদুল ফারীদ গ্রন্থেও২০ প্রায় একই রকম বর্ণনা দেয়া হয়েছে। একই গ্রন্থে আরো বলা হয়েছে২১ ঃ “ত্বালহাহ্ বলেন ঃ “তুমি যদি চাও তো এখানেই বাই‘আত হই, অথবা যদি চাও তো মসজিদে গিয়ে।” অতঃপর তিনি সেখানেই ওসমানের অুনকূলে বাই‘আত হলেন।

আবদুল্লাহ্ ইবনে সা‘দ আবি সারাহ্ বলেন ঃ ত্বালহাহ্ এটা না করা পর্যন্ত আমি এ মর্মে উদ্বিগ্ন ছিলাম যে, পাছে বাই‘আতে জটিলতা সৃষ্টি হয়! এ কারণেই ওসমান সব সময়ই ত্বালহাহ্কে সম্মান করতেন ও তাঁর উপকার করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ত্বালহাহ্কে তাঁর গৃহে অবরুদ্ধ করেন এবং তখন থেকে ত্বালহাহ্ অন্য যে কারো চেয়ে বেশী মাত্রায় ওসমানের প্রতি শত্র“তা করতেন।

বালাযুরী২২ আনসাবুল্ আশরাফ-এ রেওয়াইয়াত করেন ঃ ওমর আদেশ করেছিলেন যে, সংখ্যালঘুকে সংখ্যাগুরুর অনুসরণ করতে হবে এবং বলেছিলেন ঃ “যে ব্যক্তিই তোমার বিরোধিতা করবে তার শিরচ্ছেদ করো।”

বালাযুরী২৩ আবু মেখনাফ্ থেকে রেওয়াইয়াত করেন ঃ “ওমর শূরার সদস্যদেরকে নির্দেশ দেন যে, তাঁরা যেন তাঁদের কাজের ব্যাপারে তিন দিন পরামর্শ করেন। যদি দুই ব্যক্তি কারো পক্ষে মত দেন এবং দুই ব্যক্তি অপর কারো পক্ষে মত দেন তাহলে নতুন করে পরামর্শ করতে হবে। যদি চার ব্যক্তি কারো পক্ষে রায় দেন ও এক ব্যক্তি বিরোধিতা করেন তাহলে ঐ চার ব্যক্তির মতকে অনুসরণ করতে হবে। আর যদি মতের ক্ষেত্রে তিনজন তিনজন হন তাহলে আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফ যেদিকে থাকবেন তাঁদের মতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ, তাঁর দ্বীনদারী ও মত অধিকতর নির্ভরযোগ্য এবং সে মুসলমানদের জন্যে যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করে সে ক্ষেত্রে সে আমানতদার।” ‘ইক্বদুল ফারীদ-এ২৪ এবং ত্বাবাক্বাতে ইবনে সা‘দে২৫ প্রায় অভিন্ন বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে।

বালাযুরী আরো রেওয়াইয়াত করেন২৬ যে, ওমর বলেন ঃ “লোকেরা বলে যে, আবু বকরের বাই‘আতের ফলে সবকিছু ভেস্তে যেতে বসেছিলো। কিন্তু আল্লাহ্ এর ক্ষতিকারকতা দূরীভূত করেছেন। আর ওমরের বাই‘আত পরামর্শ ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। কিন্ত এরপর বাই‘আতের কাজ শূরার ওপর অর্পিত হলো; যদি চারজন এক মতে আসেন তাহলে অপর দুইজনকে ঐ চারজনের অনুসরণ করতে হবে। আর রায় যদি তিনজন-তিনজন হয় তাহলে আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফ্ যেদিকে থাকবে তোমরা সে মতের অনুসরণ করো। অতএব, তোমরা তার আদেশ মেনে চলবে ও আনুগত্য করবে। আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফ্ যদি বাই‘আত স্বরূপ তার এক হাতকে অপর হাতের ওপর রাখে তাহলে তোমরা তার অনুসরণ করো।”

মুত্তাকী হিন্দী২৭ রেওয়াইয়াত করেন, ওমর বলেন ঃ “আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফ্ যদি বাই‘আত স্বরূপ তার এক হাতকে অপর হাতের ওপর রাখে তাহলে তোমরা তার হাতে বাই‘আত হবে।” তিনি আসলাম থেকে রেওয়াইয়াত করেন, ওমর বলেন ঃ “আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফ্ যার অনুকূলে বাই‘আত হবে তোমরাও তার অনুকূলে বাই‘আত হও এবং সে যার অনুকূলে বাই‘আত হওয়া থেকে বিরত থাকে সে ক্ষেত্রে তোমরাও বিরত থাকো।”

শূরা গঠনের উদ্দেশ্য

এসব রেওয়াইয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে, ওমর তাঁর পরবর্তী খলীফাহ্ নির্বাচনের ক্ষমতা কার্যতঃ কেবল আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফের হাতে দিয়ে যান এবং ছয় সদস্যের শূরা গঠনের উদ্দেশ্য ছিলো স্রেফ এ কাজকে মযবূত করা যাতে অন্যরা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক ওমরের মনোনীত উত্তরাধিকারীর অনুকূলে বাই‘আত হতে বাধ্য হন। আর ওমরের এ পরিকল্পনা আলীর নিকটও গোপন ছিলো না। কারণ, বালাযুরী২৮ রেওয়াইয়াত করেছেন যে, আলী যখন আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফ যেদিকে সেদিকের পক্ষে ওমরের মত শুনলেন তখন তিনি এ নির্দেশের সমালোচনা করে তাঁর চাচা আব্বাসের নিকট বললেন ঃ “আল্লাহ্র শপথ, কাজ আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে।” তখন আব্বাস বললেন ঃ “ভাতিজা! কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলছো?” আলী বললেন ঃ “সা‘দ তো আর তার চাচাতো ভাই আবদুর রহমানের সাথে বিরোধিতা করবে না। আর আবদুর রহমান হচ্ছে ওসমানের সহযোগী ও তার জামাই। অতএব, এ ক্ষেত্রে তাদের কেউই কারো বিরোধিতা করবে না। যদি ধরে নিই যে, ত্বালহাহ্ ও যুবাইর আমার পক্ষে রায় দেবে সে ক্ষেত্রেও যেহেতু আবদুর রহমান অপর তিন জনের অন্তর্ভুক্ত সেহেতু আমার প্রতি ত্বালহাহ্ ও যুবাইরের সমর্থনে কোনোই ফায়দা হবে না।”

নসবনামা বিশেষজ্ঞ ইবনে কাল্বী বলেন, আবদুর রহমান বিন্ ‘আওফ হচ্ছেন ‘উক্ববাহ্ বিন্ আবি মু‘ঈতের কন্যা উম্মে কুলসুমের স্বামী। আর উম্মে কুলসুম ও ওসমান হচ্ছেন বৈপিত্রেয় ভাই-বোন। এ কারণেই আলী আবদুর রহমানকে ওসমানের জামাই (ভগ্নিপতি) বলেছেন।

‘ইক্বদুল ফারীদেও২৯ এ কথাই বর্ণিত হয়েছে।

বালাযুরী৩০ আবু মেখ্নাফ থেকে রেওয়াইয়াত করেন যে, আলী ভয় করছিলেন যে, আবদুর রহমান, ওসমান ও সা‘দ পরস্পর সমঝোতা গড়ে তুলবেন। এ কারণে তিনি হাসান ও হোসেনকে সাথে নিয়ে সা‘দের নিকট যান এবং বলেন ঃ “হে আবু ইসহাক! তোমার নিকট আমার অনুরোধ এ নয় যে, তুমি তোমার চাচাতো ভাইয়ের অধিকার দূরে ঠেলে দিয়ে আমাকে সমর্থন করো বা আমাকে তার ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে আমার অনুকূলে বাই‘আত হও ও তাকে পরিত্যাগ করো। তবে তোমার নিকট আমার প্রত্যাশা এই যে, তোমাকে যদি ওসমানের পক্ষে রায় দানকারী তিন নম্বর ব্যক্তি বানাতে চায় তাহলে তুমি তা কবুল করো না। কারণ, আত্মীয়তার দিক থেকে আমি ওসমানের চেয়ে তোমার অধিকতর নিকটবর্তী। এরপর আলী সা‘দকে সা‘দ ও তাঁর মধ্যকার এবং সা‘দ ও হাসান ও হোসেনের মধ্যকার পারিবারিক সম্পর্কের এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর মাতা আমেনার Ñ যিনি ছিলেন সা‘দের গোত্র বানী যোহ্রার কন্যা Ñ কসম দিলেন। সা‘দ বললেন ঃ “আপনি যা বললেন আমি তা-ই করবো।”

এরপর সা‘দ আবদুর রহমানের নিকট এলে আবদুর রহমান সা‘দকে বললেন ঃ “এসো, পরামর্শ করি।” সা‘দ বললেন ঃ “তুমি যদি চাও যে, আমি তোমার অনুকূলে রায় দেই, ওসমানের অনুকূলে রায় না দেই তো রাযী আছি, কিন্তু তুমি যদি চাও যে, ওসমানের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করবে তাহলে বলবো যে, আলী এ ব্যাপারে অধিকতর যোগ্য এবং আমি ওসমানের চেয়ে আলীকে বেশী পসন্দ করি।”

বর্ণনাকারী বলেন ঃ আবু ত্বালহাহ্ তাঁদের নিকট এলেন এবং শূরার কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করার জন্যে তাঁদের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেন। আবদুর রহমান বললেন ঃ “হে লোক সকল! এটা বড়ই আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি দেখতে পাচ্ছি যে, তোমরা এ কাজের ব্যাপারে অতি উৎসাহ দেখাচ্ছো, কিন্তু এ ব্যাপারে অকাট্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকে পিছিয়ে দিচ্ছো! আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। মনে হচ্ছে যেন তোমরা সকলেই খলীফাহ্ হতে চাচ্ছো।” আবু ত্বালহাহ্ এ ঘটনা দেখে ক্রন্দন করলেন এবং বললেন ঃ “এদের সম্পর্কে আমার ধারণা এই ছিলো যে, এদের কাছ থেকে এ ধরনের লোভের বিপরীত কিছু প্রকাশ পাবে, বিশেষ করে আমরা ভয় করছিলাম যে, কেউই হয়তো নতি স্বীকার করবে না এবং একজন আরেক জনের ভাগ্যে দায়িত্ব চাপাবে।”

বালাযুরী৩১ মাদায়েনী থেকে বর্ণনা করেন যে, ওমর তাঁর পুত্রকে এ শর্তে শূরার সদস্য করেন যে, তিনি কেবল মতামত প্রদানের অধিকারী হবেন, নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার পাবেন না। এ কারণে ইবনে ওমর এ শর্তাধীন শূরায় অংশগ্রহণ করেন নি।

আবু মেখ্নাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে, ওমরকে দাফন করার পর শূরার সদস্যগণ বৈঠকে বসা থেকে বিরত থাকেন। আবু ত্বাল্হাহ্ ইমামতী করলেন এবং সে রাতে আর কোন কাজই হলো না। সকাল হলে আবু ত্বালহাহ্ তাঁদেরকে মত বিনিময়ের জন্যে বায়তুল মালে ডেকে আনালেন। আবদুর রহমান যখন দেখলেন যে, শূরার সদস্যগণ পরস্পরের সাথে কানে কানে কথা বলছেন এবং প্রত্যেকেই তাঁর বন্ধুকে খেলাফতে বসাতে চাচ্ছেন। তখন তিনি তাঁদের দিকে মুখ করে বললেন ঃ “মহোদয়গণ! আমি ও সা‘দ আপনাদের চার জনের অনুকূলে সরে যাব, তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, আমি আপনাদের চার জনের মধ্য থেকে এক জনকে নির্বাচিত করবো। আপনারা দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছেন। ফলাফল জানা ও তাদের খলীফাহ্কে চেনার জন্যে জনগণ অপেক্ষা করছে। মফস্বল থেকে আগত লোকেরা এ কারণেই রয়ে গেছে; তারা ফিরে যেতে চায়।” আলী ব্যতীত সকলেই এ প্রস্তাবে সম্মত হলেন। তিনি বললেন ঃ “দেখি কী দাঁড়ায়।”

এ সময় আবু ত্বালহাহ্ এলেন এবং আবদুর রহমান স্বীয় প্রস্তাব তাঁর নিকট উপস্থাপন করলেন এবং বললেন যে, আলী ব্যতীত সকলেই এতে সম্মত আছেন। তখন আবু ত্বালহাহ্ আলীর দিকে ফিরে বললেন ঃ “আবূল হাসান! তুমি জানো যে, আবু মুহাম্মাদ আবদুর রহমান তোমার ও সকল মুসলমানের নিকট আস্থাভাজন। তাহলে কেন তুমি তার সাথে ভিন্ন মত পোষণ করছো? অথচ সে তো নিজে সরে গেছে এবং অন্যদের দোষের বোঝা ঘাড়ে নেবে না।” তখন আলী আবদুর রহমানকে এ মর্মে কসম দিলেন যাতে তিনি তাঁর মনের খেয়াল-খুশী মতো কাজ না করেন এবং সত্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেন ও স্বীয় আত্মীয়ের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না দেখান।” আবদুর রহমানও আলীর কথা অনুযায়ী কসম খেলেন, এরপর বললেন ঃ “তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।”

এ ঘটনা বাইতুল মালে সংঘটিত হয়। তবে কারো কারো মতে, এ ঘটনা মেস্ওর্য়া বিন্ মাখরামাহ্র গৃহে সংঘটিত হয়েছিলো।

এরপর আবদুর রহমান তাঁদেরকে কঠিনভাবে কসম দেন এবং তাঁদের প্রত্যেকের নিকট থেকে এক এক করে অঙ্গীকার আদায় করেন যে, তিনি তাঁদের মধ্য থেকে যার অনুকূলেই বাই‘আত হবেন অন্যরা তার বিরোধিতা করবেন না এবং কেউ বিরোধিতা করলে অন্যরা আবদুর রহমানকে সহায়তা দেবেন। এভাবে সবাই অঙ্গীকার করলে আবদুর রহমান আলীকে ধরলেন এবং বললেন ঃ “তুমি তোমার রবের সাথে অঙ্গীকার করো যে, আমি যদি তোমার অনুকূলে বাই‘আত হই তাহলে তুমি আবদুল মুত্তালিবের বংশধরদেরকে জনগণের ওপরে চাপিয়ে দেবে না এবং কোনরূপ হ্রাস-বৃদ্ধি ছাড়াই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সীরাতের অনুসরণ করবে ও এ ব্যাপারে ত্র“টি করবে না।” তখন আলী বললেন ঃ “আমি কখনোই আল্লাহ্র সাথে এমন অঙ্গীকার করবো না যা না আমি নিজে আঞ্জাম দিতে পারবো, না রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সীরাতের অনুসরণের অঙ্গীকারকারী অন্য কোনো ব্যক্তি তা আঞ্জাম দিতে পারবে। তবে আমি যা অঙ্গীকার করছি তা হচ্ছে, আমার পক্ষে যতখানি সম্ভব রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সীরাত অনুসরণের জন্যে চেষ্টা চালাবো এবং যতখানি আমার পক্ষে স্বীয় দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ণয় করা সম্ভব হবে ততখানি আঞ্জাম দেবো।”

আবদুর রহমান এ জবাব শোনার পর আলীর হাত ছেড়ে দিলেন এবং এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ওসমানকে শপথ করালেন এবং তাঁর নিকট থেকে অঙ্গীকার আদায় করলেন যে, তিনি বানী উমাইয়াহ্কে উম্মাতের ওপর চাপিয়ে দেবেন না এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ), আবু বকর ও ওমরের সীরাত অনুযায়ী কাজ করবেন এবং এর সামান্যতম বিরোধিতাও করবেন না। ওসমান এসব শর্তে শপথ করলেন। আলী বললেন ঃ “আবু আবদুল্লাহ্ (ওসমান)! তুমি যা চেয়েছিলে তা তোমাকে দিয়েছে। এখন তুমি নিজেই বুঝে দেখো।” এরপর আবদুর রহমান ফিরে এলেন এবং আলীর হাত ধরলেন এবং ওসমানকে যেসব কথার ওপর শপথ করিয়েছিলেন আলীর নিকটও সেসব কথার ওপর শপথ করার জন্যে প্রস্তাব দিলেন এবং বললেন যে, বলতে হবে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ, আবু বকর ও ওমরের সীরাতের বিরোধিতা করবেন না। আলী বললেন ঃ “আমি অঙ্গীকার করছি যে, স্বীয় ইজতিহাদ অনুযায়ী কাজ করবো।” আর ওসমান বললেন ঃ “হ্যা, আমি এ অঙ্গীকার করছি যে, আল্লাহ্ যেভাবে আম্বিয়ায়ে কেরামের নিকট থেকে সুদৃঢ়তম অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন আমি সেভাবেই অঙ্গীকার করছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ), আবু বকর ও ওমরের সীরাতের সামান্যতম বিরোধিতাও করবো না ও এ ব্যাপারে ত্র“টি করবো না।” তখন আবদুর রহমান ওসমানের নিকট বাই‘আত হলেন ও তাঁর সাথে মুছাফাহা করলেন। তখন আলী ব্যতীত শূরার অন্য সদস্যরা সকলেই বাই‘আত হলেন। আলী ঐ সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেও তখন বসে পড়লেন।

আবদুর রহমান আলীকে বললেন ঃ “বাই‘আত হও, নয়তো তোমার শিরচ্ছেদ করবো।” আবদুর রহমান যখন একথা বললেন তখন তিনি ছাড়া আর কারো কাছে তলোয়ার ছিলো না। কতক বর্ণনাকারী বলেছেন যে, আলী ক্রুদ্ধ হয়ে মজলিস ছেড়ে বাইরে চলে গেলেন। তখন শূরার সদস্যগণ তাঁর পিছন পিছন গেলেন এবং তাঁর নিকট পৌঁছার পর বললেন ঃ “বাই‘আত হও, নইলে আমরা তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো।” তখন আলী তাঁদের সাথে ফিরে এলেন এবং বাই‘আত হলেন। ...

বালাযুরী৩২ ওয়াক্বেদী থেকে বর্ণনা করেন ঃ সবাই যখন ওসমানের অনুকূলে বাই‘আত হলেন তখন তিনি বাইরে বেরিয়ে এলেন এবং জনগণের সামনে ভাষণ দিয়ে আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন ও তাঁর সানা’ বললেন। এরপর তিনি বলেন ঃ “হে লোক সকল! যে কোনো বাহনেই প্রথম বারের মতো সওয়ার বেশ কঠিন ব্যাপার; এরপর আমাদের সামনে আরো অনেক কঠিন দিন রয়েছে। যদি বেঁচে থাকি তাহলে আপনাদের সামনে বক্তৃতা দেয়া হবে। আমি তো এ পর্যন্ত বক্তা ছিলাম না, তবে আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে বক্তৃতা শিক্ষা দেবেন। ”

‘ইক্বদুল ফারীদে৩৩ বলা হয়েছে ঃ বক্তৃতা করতে গিয়ে যারা খেই হারিয়ে ফেলতেন ও ভুল করতেন ওসমান তাঁদের অন্যতম; তিনি বললেন ঃ “হে লোক সকল! ... (শেষ পর্যন্ত)।”

“আল্-বায়ান্ ওয়াত্-তাব্ ঈন্” গ্রন্থে৩৪ বলা হয়েছে ঃ

ওসমান মিম্বারে উঠলেন এবং (বক্তৃতার ক্ষেত্রে) ভুল করলেন; তিনি বললেন ঃ “হে লোক সকল! নিঃসন্দেহে আবু বকর ও ওমর এখানকার জন্যে ভাষণ প্রস্তুত করতেন। ...(শেষ পর্যন্ত)।”

আর আবু মেখ্নাফ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ওসমান মিম্বারে উঠলেন এবং বললেন ঃ “হে লোক সকল! এ জায়গা হচ্ছে সেই জায়গা যে জায়গার জন্যে আমি ভাষণ তৈরী করি নি এবং ভাষণ দিই নি। ইন শা আল্লাহ্, যত শীঘ্র সম্ভব ফিরে আসবো ও ভাষণ দেবো।”

আরো বর্ণিত হয়েছে যে, ওসমান মিম্বারে উঠলেন এবং এরপর বললেন ঃ “হে লোক সকল! আমার ভাষণ দানের অভিজ্ঞতা নেই; ইন শা আল্লাহ্, তোমরা ভালো ভাষণ শুনতে পাবে। এখন যা বলতে চাই তা হলো, আল্লাহ্র তাকদীরের নির্ধারণ অনুযায়ী ওবায়দুল্লাহ্ বিন্ ওমর র্হোমোযানকে হত্যা করেছে, আর র্হোমোযান হচ্ছে একজন মুসলিম ব্যক্তি যার কোনো উত্তরাধিকারী নেই, তাই সকল মুসলমানই তার উত্তরাধিকারী। আর আমি তোমাদের ইমাম ও শাসক; আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। তোমরাও কি ক্ষমা করে দিচ্ছো?” সবাই বললো ঃ “হ্যা।” তখন আলী বললেন ঃ “এই পাপাচারী লোকটিকে কিছাছের আইন অনুযায়ী হত্যা করুন। কারণ, সে বড় ধরনের অপরাধ করেছে এবং বিনা অপরাধে একজন মুসলমানকে হত্যা করেছে।” এরপর তিনি ওবায়দুল্লাহ্কে ঊদ্দেশ করে বললেন ঃ “এ্যায় ফাছেক! আমি যদি কোনোদিন সুযোগ পাই তাহলে র্হোমোযানকে হত্যার অপরাধে তোমাকে হত্যা করবো।”

একই গ্রন্থে আরো বলা হয়েছে৩৫ ঃ ওসমান ভাষণ দিলেন এবং তাতে বললেন ঃ “আবু বকর ও ওমর যখন বক্তৃতা দিতে চাইতেন তখন প্রথমে তা তৈরী করে নিতেন; আমার জন্যেও আল্লাহ্ তা তৈরী করে দেবেন।”

ইবনে সা‘দ তাঁর ত্বাবাক্বাত্ গ্রন্থে এ ভাষণ উল্লেখ করেছেন।

উপসংহার

শূরা সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী প্রসঙ্গে আমরা এখানে যে সব রেওয়াইয়াত উদ্ধৃত করেছি সেগুলোকে ও এ বিষয়ের অন্য সকল রেওয়াইয়াতকে ত্বাবারী সংমিশ্রিত করে ফেলেছেন এবং তার একটি অংশকে এতই সংক্ষেপে উদ্ধৃত করেছেন যে, তাতে অর্থবিকৃতি ঘটেছে। তিনি তাঁর গ্রন্থে৩৬ সকল রেওয়াইয়াতই এক কায়দায় বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ওসমানের ভাষণের ক্ষেত্রে তিনি কেবল সাইফের রেওয়াইয়াত উদ্ধৃত করাকেই যথেষ্ট গণ্য করেছেন।

আমরা যে, শূরা সম্পর্কিত ঘটনাবলীর এতখানি বিবরণ তুলে ধরলাম তার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, আমরা এসব রেওয়াইয়াত ও সাইফের রেওয়াইয়াতের মধ্যে তুলনা করে দেখবো। তাহলেই তার ও অন্যান্য রেওয়াইয়াতের মধ্যকার পার্থক্য অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে যাবে যা থেকে সাইফের মতলববাযী ও মিথ্যা রচনার বিষয়টি অকাট্যভাবে ধরা পড়ে। (আমরা এখানে শূরা সংক্রান্ত মূল ঘটনাবলীর পর্যালোচনায় যেতে চাচ্ছি না।)

পাদটীকা ঃ

১. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৯২।

২. প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৬৬ ও ৩০৫।

৩. অর্থাৎ পরবর্তী খলীফাহ্ নির্বাচনের জন্যে খলীফাহ্ ওসমান কর্তৃক মনোনীত ছয় সদস্যের পরামর্শ কমিটি।

৪. প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩০৫।

৫. ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৩৩৪-৩৩৭।

৬. অর্থাৎ রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তগত করতে চায়।

৭. ২য় খণ্ড/ ১২৩।

৮. ২য় খণ্ড/ ৭৪।

৯. ২য় খণ্ড/ ৬১৮।

১০. দ্রষ্টব্য রিয়াযুন্ নায্রাহ্, ২য় খণ্ড/ ১২।

১১. ৩য় খণ্ড/ ১৫৮।

১২. আনসাবুল্ আশরাফ, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ১৫-১৬।

১৩. ত্বাবাক্বাত্, ৩য় খণ্ড, ক্বাফ্ ১, পৃঃ ২৪৩।

১৪. ‘ইক্বদুল্ ফারীদ, ৩য় খণ্ড/ ৭৩।

১৫. আন্সাবুল্ আশ্রাফ্, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ১৬।

১৬. ৩য় খণ্ড, ক্বাফ্ ১, পৃঃ ২৪৩।

১৭. ২য় খণ্ড/ ৭২।

১৮. আন্সাবুল্ আশ্রাফ্, ৫ম খণ্ড/ ১৭।

১৯. প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৮।

২০. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৭৩।

২১. প্রাগুক্ত, পৃঃ ২০।

২২. পৃঃ ১৮।

২৩. পৃঃ ১৯।

২৪. তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭৪।

২৫. ৩য় খণ্ড, ক্বাফ ১, পৃঃ ৪৩।

২৬. আন্সাবুল্ আশ্রাফ্, ৫ম খণ্ড/ ১৫।

২৭. কানযুল ‘উম্মাল, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৬০।

২৮. আন্সাবুল্ আশ্রাফ্, ৫ম খণ্ড/ ১৯।

২৯. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৭৪।

৩০. আন্সাবুল্ আশ্রাফ্, ৫ম খণ্ড/ ২০।

৩১. প্রাগুক্ত,পৃঃ ২১।

৩২. প্রাগুক্ত,পৃঃ ২৪।

৩৩. ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪১০।

৩৪. ২য় খণ্ড/ ২৫০।

৩৫. প্রাগুক্ত, ২৫।

৩৬. ৩য় খণ্ড/ ২৯২-৩০৪।



চলবে...................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.