![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১ম-৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামে থেকেই পড়াশোনা করেছিলাম।।শিক্ষা জীবনের প্রথম ৬ বছর বিদ্যালয় পালানোর স্বভাব খুবই বেশী ছিল আমার। সত্যি বলতে কি বাবা শিক্ষক হওয়াতে ভ্যাকেশনগুলোতে পড়া অগ্রিম পড়িয়ে দিতেন।তাই হয়তো পড়া বাকী থাকত না। শিক্ষকদের প্রচুর পরিমাণে বেত্রাঘাত খেয়েছিলাম। এখনো মনে আছে ক্লাসে দেরীতে আসায় আমার পা ভেঙে দিয়েছিলেন আমার শিক্ষক। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে বলেছিলাম ছাগলের দড়িতে পা বেঁধে রাস্তায় পড়ে পা ভেঙে গেছে।
যারা আমার মত গ্রামে থেকে পড়াশোনা করেছেন সবারই এমনটি মোটামুটি জানা কথা। তবুও বলতে হচ্ছে,আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামে হলেও আমরা শহরের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি পিছিয়ে নেই।বলতে চাচ্ছি ওরা বাচ্চা বয়সে বেশি পড়েছে আর আমরা পরিণত বয়সে বেশি পড়ছি।বয়সের তুলনায় শহরের বাচ্চাদের উপর পড়াশোনার চাপ বেশি থাকে বলে ওরা গ্রামের বাচ্চাদের তুলনায় কম ক্রিয়েটিভ,শারীরিক বৃদ্ধির দিক দিয়ে পিছিয়ে। লক্ষণীয় বিষয়,বেশিরভাগ শহরের বাচ্চাদের অল্প বয়সেই চোখে চশমা পরতে হয়।
বলতে চাচ্ছি,সময়ের সাথে বয়সের আগে নয় । শারীরিক মানসিক বিকাশের সাথে যতটুকু চাপ নেয়া সম্ভব তটুতটু দেয়া উচিত।এত তাড়াহুড়া কি জন্য? আপনার বাচ্চা সময়মত শিখবে। এটাও মনে রাখতে হবে,বাঁচার জন্য পড়াশোনা কিন্তু পড়াশোনার জন্য বাঁচা না।
সফল মানুষরা সবাই কিন্তু তার ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিলেন না,সফল হওয়ার জন্য দরকার ক্রিয়েটিভিটি।আমি জানি নির্দিষ্ট সিলেবাস ভালো করে মুখস্ত করে নিলে ফার্ষ্ট হওয়া যায় কিন্তু ক্রিয়েটিভিটির কোন নির্দিষ্ট সিলেবাস নেই।
অভিবাবকদের বড় সমস্যা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট চাই, এতটুকুই তো!
শুনলাম পরীক্ষায় নকল করার অপরাধে শিক্ষক অপমান করায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি। সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা, তবে প্রতিবাদের সরব সহপাঠীরা। প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকের আচরণের নৈতিকতা নিয়ে ও গভর্নিং বডির ভূমিকা নিয়ে,কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো শিক্ষার্থীরা নকল করলে শিক্ষক রা কিছু বলতে পারবেনা।যদি এমনই হয় তাহলে আপনার সন্তান কে স্কুলে পাঠাবেন না,বাসায় বসিয়ে পড়িয়ে স্বশিক্ষিত করে তুলবেন। তাহলেই শিক্ষকদের বকা শুনতে হবেনা, আপনার সন্তানও গলায় ফাঁস দিবেনা।
বললাম আর কি,তাই বলে সন্তানকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করবেন না। এজন্যই বললাম আাপনার মেয়ের জন্য আপনি শিক্ষকের বিরুদ্ধেও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।শুনেছি একজন শিক্ষককে পুলিশ আটকও করেছিল । এটি আমার মনে হয় ভালো করেননি,কারণ একজন শিক্ষকও আপনার মত তার নিজের সন্তানের অভিবাবক।এদিক থেকে আপনি দুটি ভূল করেছেন -
এক.অভিবাবক হয়ে আরেক অভিবাবককে মামলা দিয়ে আটক করেছেন।
দুই.পুরো শিক্ষক সমাজকে অভিবাবক আর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন।
আমরা পুরো জাতি শোকাহত। একজন শোকাহত অভিবাবক হিসেবে আপনি আইনের আশ্রয় নিয়েছেন সমস্যা নেই।দোয়া করি অরিত্রী পরাপারে ভালো থাকুক। দুদিন পরে পরিস্থিতি শাস্ত হলে আমরা ভুলে যায় তাই হয় ।দোষ শিক্ষকের না শিক্ষার্থীর না অভিবাবকের তদন্ত সাপেক্ষ ।
মূল সমস্যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। আমার কাছে মনে হয় নিচের বিষয়গুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মাথায় নেয়া দরকার-
১.সরকারী বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বই সংখ্যা কমানো।
২.সরকারী বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানে গতানুগতকি পরীক্ষা সংখ্যা কমানো।
৩.পরীক্ষা পদ্ধতির পরবির্তন সাধন।
৪.বর্তমান শিক্ষাব্যাবস্থার সংস্কার ।
কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তোমরা যারা ''we want justice''বলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিলে,তোমাদের সাথে আমরাও ছিলাম ।এখনও দেখি তোমরা 'we want justice'' আন্দোলন করেছ।কিন্তু ''we want justice''বলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করো না ,যে পরিস্থিতির জন্য কাউকে বলি দিতে হয়।তোমরা শুরু করেছ বলেই আমরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অনেক অব্যবস্থাপনা চিত্র দেখতে পেয়েছিলাম ।তোমাদের দেখানো নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে এখন অবধি নিয়মিত আমি ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করি ।দু:খের বিষয় যেভাবে স্কুল ড্রেস পড়ে তোমরা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে সমস্যা দেখিয়েছিলে সে চোখ দিয়েই নিয়মিত দেখি রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের-কলেজের ড্রেস পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ম না মেনে যত্র তত্র রাস্তা পারাপারে।
এজন্য তোমরা জানতে শিখো মানতে শিখো। তোমরা মানতে শুরু করলে বড় পরবির্তন শুরু হবে ,যার ফল আগামী দিনে তোমরা না মানা লোক কম পাবা।একেবারে শুরুতে যা বলেছি আমরা বেত্রাঘাত খেতাম আর এখন দেখছি তোমাদের কথাতেই অপমান বোধ হয় এটি অনেক ভালো । এজন্যই বলব এবার মানতে শুরু কর । আমরা তখন নিজেকে না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি শিক্ষক আমার পরিবারের মতই আমার ভালো চেয়েছিলেন।তোমরাও একদিন বুঝবে । কিন্তু 'পরিস্থিতি' সৃষ্টি করবে না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২
মওদুদ আহমদ বলেছেন: