![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কালপেঁচার ডায়রী।
নামটা কেমন অদ্ভুত না?
লেখকের নাম আরও অদ্ভুত- বকলম।
অবশ্য এটা ছদ্মনাম তা বোঝা যাচ্ছে।
এই বইটা আমি দুইবার কিনেছি একই যায়গা থেকে।
প্রথম: ২০১০
স্থান: পুরানা পল্টন
দ্বীতিয়বার: ১১.০৫. ২০১৪
স্থান: পুরানা পল্টন।
একটু বিতং করে বলি।
পুরানা পল্টনের ফুটপাথে পুরোনো বইয়ের অনেকগুলি দোকান আছে। সস্তায় বই পাওয়া যায়। আজাদ প্রোডাক্টসের সামনে বাবুল ভাই’র দোকান।
বাবুল ভাই দাম কম রাখে বলে তার দোকানেই বেশী যাওয়া হয়। সেদিন বাবুল ভাই’র দোকানে ‘কালপেঁচার ডাইরী’ বইটা দেখে পরিচিত মনে হল। কারন উপরের টেপটা আমার লাগানো।
ভিতরে খুলে দেখলাম ঘটনা সত্য। আরে এতো আমার সিগনেচার দেয়া, তারিখসহ! কি তাজ্জব!
এখানে আসলো কিভাবে?
ঘটনাটা মনে পড়লো।
বছর দুই আগে একজনকে বইটা পড়তে দিয়েছিলাম।
খুজে পাচ্ছিলেননা বলে তিনি ফেরত দিতে পারেননি।
আমিও প্রায় ভুলে গেছি বইয়ের কথা। কতো বইইতো হারায়। লোকে পড়তে নিয়ে দেয়না। শুধু তাইনা। আমি লক্ষ্য করেছি বই ফেরত না দেয়াটাকে কেউ অপরাধ মনে করেননা। অথচ আমার ভীষন খারাপ লাগে। এখন একটু কম লাগে। গা সওয়া হয়ে গেছে। একবার কি করলাম একটা খাতা বানালাম। যে বই নিবে লিখে রাখব। কয়েক বছর ছিল। তারপর একদিন খাতাই হারিয়ে গেল। আবার খাতা বনালাম। আবার হারালো।
তারপর ক্ষান্ত হলাম। বই হারায় হারাক। খাতা বানাবো না।
খাতা না থাকলে কে কোন বই ফেরত দিলো না মনেই থাকবে না। মন খারাপও হবে না।
হারানোতেই যে কেবল কষ্ট এটা ঠিকনা। ফিরে পাওয়াতেও এক ধরনের কষ্ট থাকে।
‘কালোপেঁচার ডাইরী’ ফিরে পেয়ে মন খারাপ হয়ে গেল।
সেই লোকটা বেচে নেই।
তার ফোন নাম্বার বন্ধ। ইস্ ... বেচে থাকলে তাকে চমকে দেয় যেত। তা আর হলনা।
মানুষকে চমকে দেয়ার মধ্যে একধরনের আনন্দ আছে।
প্রেম-ট্রেম ফালতু কথা, পুরো দুনিয়াকে চমকে দেয়ার জন্যই শাহজাহনের মাথায় তাজমহল বানানোর আইডিয়া এসেছিল।
যাই হোক, সুনিদৃষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই তিনদিন যাবত মন ভিষন খারাপ। তারপর হঠাৎ মনে পড়লো, একসময় ভাবতাম যদি এমন হয় আমার হারিয়ে যাওয়া কোনো বই পল্টনের পুরনো বইয়ের দোকানে বিক্রি করছে , তাহলে ব্যাপারটা কেমন মিরাকুলাস হবে না!
সেই ভাবনাই কিনা বাস্তবে পরিনত হলো!
এবার বিাস্মিত হবার পালা।
আমি লক্ষ করেছি যখনই কোনো ব্যাপারে মনে হয়েছে এও কি সম্ভব! পরক্ষনে সেটাই অতি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। তা যত অবাস্তবই হোক না কেন। উদাহরন দেই,
ক্স দামি রেস্টুরেন্টে ঢুকলে সবসময় একটা অস্বাভাবিকতা কাজ করে। মনে হয় কি অর্ডার দিলাম, কত বিল হয়! টাকা যা আছে হবে তো!
হাত চলে যায় পকেটে। মানিব্যাগ আছে তো!
কি বেইজ্জতি কান্ডটাই না হবে যদি কখনো বিল দিতে গিয়ে দেখি ম্যানিব্যাগ নেই!
কিছুদিন পরেই সেই মহা দূর্যোগ ঘটল। খাওয়া-দাওয়া সেরে দেখি টাকা আনি নাই।
ক্স পাবলিক বাসে কন্টাক্টর ভাড়া নেয়ার আগ পর্যন্ত আমার মধ্যে একটা খুতখুতানি কাজ করে। মনে হয়, যেহেতু আমি ভাড়া জানিনা, সুতরাং আমার কাছ থেকে বেশী নেবে। আবার মনে হয় এখনো ভাড়া নিচ্ছে না কেন? আমিতো মাগনা যাবার জন্যে উঠি নাই। ব্যাটা ভাড়া নিয়ে আমায় মুক্তি দে। তোকে ভাড়া দিয়ে আমি ফুরফুরে মেজাজে জানলা দিয়ে আকাশ দেখবো। ভাড়া দেয়ার আগ পর্যন্ত কারণ ছাড়াই একটা অপরাধবোধ কাজ করে।
একদিন কি হল- গাড়ি কতক্ষণ চলার পর মনে হল মানিব্যাগ আনি নাই। হায় হায় এখন কি হবে.. ..!!
ক্স ডেডবডি যত প্রিয়জনেরই হোকনা কেন সবাই এড়িয়ে চলে। শরৎচন্দ্রের বিলাসী গল্পে এর উদাহরণ আছে। অজানা কারনে ভয় করে। আমিও করি। এবং মনে মনে ভাবি কখনো যেন এমন না হয় আমি একা একটা ডেডবডি নিয়ে বসে আছি!
বয়স ১৫ কি ১৬। তখন ঘটল সেই দূর্ঘটনা। সারারাত আমি বসে আছি একটা রুমে। মাখার উপর ফ্যন ঘুরছে। পাশে যারা ছিল সবাই মরার মতো ঘুমুচ্ছে। শুধু সামনে রাখা খাটের উপর ডেডবডিটাকে মনে হচ্ছে ঘুমের ভান করে ঝিম মেরে আছে। যেকোনো সময় উঠে বসবে। ফ্যানটা হঠাৎ হঠাৎ ঘোড়ার মত চিঁহি..ই ই্ ই. . . চিঁহি ই ই ই . . . ধরনের অদ্ভুত শব্দ করছে। আমি চমকে খাটের দিকে তাকাচ্ছি এই বুঝি জেগে উঠল!!!
খুব ছেলেবেলায় ভাবতাম বড় হয়ে এমন কিছু করব সবাই চমকে আমার দিকে তাকাবে। আমি পৃথীবীকে চমকে দিতে চাইছি, অথচ আমাকে কে চমকে দিচ্ছে ??
কে???
এখন ভাবছি সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নিব। ব্যাস তাহলেই ঝামেলা মিটে যাবে। অস্বাভাবিক কিছু ভাববো না। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। সবকিছুর জন্য আমি প্রস্তুত। কিন্তু পারছি না। কিভাবে যেন অদ্ভুত সব ভাবনা মাথায় ইনস্টল হয়ে যায়। রিমুভ করা যায় না। মনে হয় বিল্ট-ইন। ভাবনাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছি না। সে আমায় নিয়ন্ত্রন করছে। সে কে? ভাবনা কে? সখি ভাবনা কাহারে কয়. . . . ..
নতুন যে প্রোগ্রামটা ইনস্টল হচ্ছে সেটা ঘুম বিষয়ক। একদিন হঠাৎ আবিস্কার করলাম আমি বিছানা কারো সাথে শেয়ার করতে পারি না। আমার পাশে কেউ ঘুমালে আমার ঘুম আসে না। সে যেই হোক। শত চেষ্টা করে ঘুমালেও একটু পরপর ঘুম ভেংগে যায়। মনে হয় এই বুঝি আমার হাত লাগলো কারো গায়। কি বিশ্রী ব্যাপার ! সে বুঝি জেগে উঠল!
আমি জানি এই ব্যাপারটাও ঘটবে। অচিরেই ঘটবে। এবং তাকে স্বাভাবিকই মনে হবে । স্বাভাবিকতা কি? অস্বাভাবিকতা কি? আপেক্ষিক নাকি ব্যাখ্যাতীত।
পুনশ্চ: আমার মামা, মূসা মামা খুবই স্বাভাবিক একজন মানুষ। এই স্বাভাবিক মানুষটির ভিতরে বাস করে একজন অস্বাভাবিক মানুষ। সেই মানুষটির বিচরণ কেবল তার ডায়রীর পাতায়। এই ডাইরী জগতের সবার জন্য নিষিদ্ধ। মাঝে মধ্যে যখন কোনো কারনে মামার মন ভীষন ভাল থাকে তখন তিনি তার ভাগ্নেকে বলেন- কোনো আব্দার থাকলে বলে ফেল, পেয়ে যাবি। অধিকাংশ সময়েই আমি ভাল রেস্টুরেন্টে খাওয়ার কথা বলি। মাঝে মধ্যে বলি মামা তোমার ডায়রীটা দিবা। জাস্ট ১০ মিনিটের জন্য। মামা মুখ গম্ভীর করে ডায়রী দেন। তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলেন- টেন মিনিটস। উপরের লেখাটার থিম মামার ডায়রী থেকে নেয়া । আমি তাতে আমার মতো করে রং করেছি।
২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:১৩
কলমের কালি শেষ বলেছেন: লেখা পড়ে খুব ভাল লাগলো ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩৪
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: বইটা ইন্টারেস্টিং +
লোকটার কথা জেনে খারাপ লাগলো
ভালো থাকবেন ।