![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই দলের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। তবে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার মালিকানাধীন ক্যাপিটাল প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে এই কর ফাঁকি দেন তিনি। কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর আপীলে মামলাটি সেট এসাইড করা হলে করাপোপনে মোট আয় ৯৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে পুনর্কর নিরূপণে ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৮ টাকার আয়ের বিপরীতে ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮১ টাকার কর নির্ধারণ করে রাজস্ব বোর্ড। কিন্তু এমএ মান্নান অদ্যাবধি ওই কর পরিশোধ করেননি। পরে এ বছরের ১৩ জুন আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ১৪৩ ধারায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডে (গুলশান শাখা) হিসাব জব্দ করার নোটিস জারি করে রাজস্ব বোর্ড। এই অভিযোগ রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি এনবিআর থেকে চিঠি পাঠিয়ে ক্যাপিটাল প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের এই পরিচালকের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গুলশান শাখার ব্যাংক হিসাবটি জব্দের নোটিস দেয়া হয়। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মান্নানের কাছে জাতীয় রাজস্ব রোর্ডের দাবি ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮০১ টাকা। এর মধ্যে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জন্য বকেয়া রয়েছে ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮১ টাকা। বাকি পাওনা ২০১১-১২ অর্থবছরের জন্য।
এ বিষয়ে এমএ মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর পক্ষে একজন দাবি করেছেন, তিনি সঠিকভাবে কর পরিশোধ করলেও এনবিআর তাঁর কাছে অতিরিক্ত কর দাবি করছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে এম এ মান্নান স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে যে আয়কর বিবরণী দাখিল করেন তাতে তিনি মোট আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর বিপরীতে তিনি কর বাবদে পরিশোধ করেছেন ৭০ হাজার ৪১৪ টাকা। কিন্তু এনবিআর তার এই তথ্য আস্থায় নিতে না পেরে আয় ও সম্পদের পরিমাণ যাচাইয়ের জন্য বিশেষ তদন্ত চালায়। এনবিআরের অনুসন্ধানে দেখা যায় ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে মান্নানের মোট আয়ের পরিমাণ ছিল ৯৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে করের পরিমাণ হয় ২২ লাখ ৪ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এনবিআরের এ দাবির প্রেক্ষিতে আপীল করেন এম এ মান্নান। আপীলের পর হিসাব শেষে তার মোট আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। এর ভিত্তিতে তাকে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৪ টাকা কর দিতে বলা হয়। এ বিষয়ে মান্নান আবারও আপীল করেন। ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার সংশোধিত আয় দাঁড়ায় ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৮ টাকা। যার বিপরীতে ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮১ টাকার কর দাবি করে এনবিআর, যার পুরোটাই বকেয়া রয়েছে। মান্নান বলেন, এনবিআরের এ দাবি অযৌক্তিক। আমি ইতোমধ্যে কর কমিশনারের কাছে আপীল করেছি। এম এ মান্নান ২০০৭-০৮ অর্থবছরের সম্পদ বিবরণীতে যে সম্পদের তথ্য দিয়েছেন, তার মধ্যে ৩ কোটি ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকার অপ্রদর্শিত আয় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। সরকারের দেয়া কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগে তিনি গাজীপুর ফ্যাশনস লিমিটেডের শেয়ার কিনেছেন ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। এ ছাড়া গাজীপুর সদরে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকার জমি এবং গাজীপুরের দক্ষিণ সালনায় ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকায়।
নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী ঋণ খেলাপী ও বিল (পানি, বিদ্যুত, গ্যাস, টেলিফোন) খেলাপীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। আয়কর আইনেও কর খেলাপীদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ রয়েছে। তবে গত ৯ জুন মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর রিটার্নিং অফিসার মান্নানের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন। তবে বকেয়া কর আদায়ের জন্য এনবিআর ১৩ জুন মান্নানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মান্নান এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত আজমত উল্লাহ খানসহ মোট ৬ জন মেয়র পদে লড়ছেন।
জানা গেছে, অধ্যাপক এম এ মান্নান বর্তমানে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর ও টঙ্গী) আসনে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। জাতীয় নির্বাচনে আসার আগে তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার কাউলতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হন। ২০০৪ এর আগস্ট মাসে উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। ১৯৯১ সালের পূর্বে তিনি গাজীপুর শহরে কাজী আজিমুদ্দিন কলেজের শিক্ষক (রসায়ন বিষয়) ছিলেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী ও তাঁর আর্থিক অবস্থা সচ্ছল। রাজনৈতিক জীবনে তিনি সঙ্কীর্ণতার উর্ধে উঠে আসতে পারেননি। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করে দেয়ার কর্মকা-ে তাঁর বিরুদ্ধে ৫শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। হজযাত্রীদের নিম্ন মানের বাড়ি ভাড়া করে বিরাট অঙ্কের টাকা আত্মসাত করেন। পরে হজ থেকে ফিরে হাজীরা তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকায় সাংবাদ সম্মেলন এই অভিযোগ তোলেন। ওই অভিযোগের পর তাঁর মন্ত্রিত্ব চলে যায় বলে খবর মিলেছে। ধর্মমন্ত্রী হয়ে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেয়া আর্থিক সাহায্য ও অনুদান থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও ছিল। সদর উপজেলার কোনাবড়ীতে এক বিধবা মহিলার ১০ কাঠা জমি কৌশলে নিজ নামে লিখে নিয়েছেন। এই জমি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ থাকার সুযোগ নিয়ে নামমাত্র মূল্যে জমিটি কিনে নিয়ে ‘কোনাবাড়ী প্লাজা’ নামে পাকা মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এলাকায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা-সমালোনার মুখে পড়লেও তিনি তা গায়ে মাখেননি। নতুন করে আবার বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। ক্ষমতাবলে স্ত্রীকে গাজীপুর শহরে জকি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় চাকরি দেন। তিনি স্কুলে নিয়মিত উপস্থিত না হয়েও বেতন তুলে নিচ্ছেন। এমএ মান্নান ঢাকায় অবস্থান করেন। মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি এলাকায় খুব একটা থাকবেন বলে মনে করেন না গাজীপুর সিটিবাসী। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে অধ্যাপক এম এ মান্নানের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। এরপর বিএনপি তাকে বহিষ্কার করে। তখন থেকেই দলের আরেক নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের সঙ্গে তীব্র বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। ওই বিরোধ এখনও বিদ্যমান রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়ভাবে বিএনপি মান্নান গ্রুপ ও হাসান সরকার গ্রুপ নামে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে। বছরখানেক আগে অধ্যাপক মান্নানকে বিএনপিতে ফিরিয়ে নিলেও গ্রুপিং রয়েই গেছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিতে এই গ্রুপিং এমএ মান্নানের জন্য বিষ ফোঁড়া হিসেবে দেখা দিতে পারে। যদিও বিএনপি অধ্যাপক মান্নানকে সভাপতি ও সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে গাজীপুর জেলা কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি মিলন মেনে নিতে পারেননি। কারণ মিলন দলের পরীক্ষিত নেতা। তাকে সভাপতি না করে বহিষ্কৃত নেতা মান্নানকে সভাপতি করা হয়। ফলে এখানেও মিলন ও মান্নানের মধ্যে একটা ঠা-া বিরোধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দই অধ্যাপক মান্নানবিরোধী অবস্থানে রয়েছে।
বিএনপি প্রার্থী তাঁর কৃতকর্মের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। হজের সময় যে ব্যক্তি মক্কায় বাড়ি ভাড়ার নামে টাকা আত্মসাত করতে পারেন তার দ্বারা যে কোন অপকর্ম করা সম্ভব। এমন কথা গাজীপুরবাসী বলে বেড়াচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলের মধ্যেই যে কোন্দল রযেছে তা মেটাতেই তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। এর বাইরে রাজস্ব বোর্ডের কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি এখন তাঁর জন্য বিষ ফোড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৪৩
অপর্না হালদার বলেছেন: তারেক জিয়ার স্থলাভিসিক্ত এই মান্নান ।
মনুষত্ব নিপাত যাক, ভন্ড মান্নান নির্বাচিত হোক ।