![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অ্যাস্ট্রোনমিক্যালি মহাকাশে রাহুর কোনো ফিজিক্যাল অস্তিত্ব স্বীকৃত নয়। কিন্তু যে কারণে সূর্য কিংবা চন্দ্র গ্রহণের সময় ক্ষণকালের জন্য পৃথিবী আঁধারগ্রস্ত হয়, তার অস্তিত্ব স্বীকৃত হয়েছে। চন্দ্র এবং সূর্যের গতিপথে অবিরাম আলোক প্রতিফলনের ক্ষেত্রে মহাকাশে ক্ষণকাল যে ছায়াপথ তৈরি হয়, সেটাই চন্দ্র কিংবা সূর্য গ্রহণের কারণ। পুরাণশাস্ত্রে এই জন্যই একে উপাখ্যানের মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গতভাবে অশুভ শক্তিরূপে রূপায়িত করা হয়েছে। কারণ জীবন সঞ্চারণের আলোক চলাচল পথে যা কিছু আলোক বিকিরণের গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করে, তারা কখনো শুভ হতে পারে না। রাহুর অশুভ প্রভাব এবং তার কার্যকারণ সম্পর্ক নিয়ে অ্যাস্ট্রোলজি তাই প্রচীনকাল থেকেই নানাভাবে মুখর।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গণতন্ত্রের যাত্রাপথে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অজুহাত তুলে তেমনই একটি অযৌক্তিক বাধা তৈরি করা হয়েছে। সমুজ্জ্বল আলোকশিখায় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের যে সুগৌরব অবয়ব আন্তঃ এবং বহির্বিশ্বে বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফুটে উঠেছিল, অশুভ আঁধারের স্পর্শে তার রূপ এখন অনেকটাই ম্লান। তবে এর ফলে আপামর বাঙালি জনতার জন্য একটি লেসনও তৈরি হয়েছে। তাদের চেতনাবোধ জাগ্রত অবস্থায় থাকলে এই সত্য নিশ্চয়ই এখন পরিস্ফুট হয়েছে, কারা বাঙালির অস্তিত্ব এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং তার উন্নয়নকে মূলত আন্তরিকভাবে কামনা করেন। জঙ্গিবাদ সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক জোট এবং তাদের ইমমর্যাল সমর্থনকারীরা? নাকি যারা কমিটেড হিউম্যানিস্ট হিসেবে জাতির জনকের অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনাকে এই ভীষণ দুর্যোগেও ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর, তারা? এবার সাধারণ জনতাকে এই মহাসত্য বোধগম্য করানো তাদেরই দায়িত্ব, যারা বাঙালি ও তাদের স্বদেশভূমির অস্তিত্বে বিশ্বাসী। কারণ আমজনতাকে লক্ষ্য করে যতোই এমন কথা বারবার উচ্চারিত হোক, জনতা বোঝায় কখনো ভুল করেন না, তারা ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে সিদ্ধহস্ত, রূঢ় হলেও এটাই বাস্তব সত্যÑ এমন মন্তব্য ভাবাবেগে মূল্যবান হতে পারে কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা ভুল প্রমাণিত হয়। কেননা প্রত্যেক দেশের বেশিরভাগ আমজনতাই কমবেশি এমন একটি বিমুগ্ধ প্রজাতি, যারা অধিকাংশ সময়েই নিজের চোখ দিয়ে দেখতে পান না এবং নিজের মন দিয়ে বোঝার ক্ষেত্রেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বোধহীন। তার প্রমাণ বিশ্বের নানা দেশের অজ¯্র অনাকাক্সিক্ষত ঐতিহাসিক ভুলভ্রান্তির ঘটনাগুলো।
বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত দুটি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনাও তার প্রমাণ। এক. বিশাল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতির জনকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতালাভের পরপরই নিরন্তর মিথ্যাচার ও সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাপর্ব সংঘটনের পরেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর ব্যর্থতা। দুই. জিয়াউর রহমানের কালো চশমায় দৃষ্টি ঢেকে নির্মম হস্তে ক্ষমতাধারণ। আজকের বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশ জুড়ে যে ব্যাপক রাহুর ছায়াপাত ঘটে চলেছে অনির্বাণ, এই দুই ঐতিহাসিক দুর্ঘটনাই মূলত তার কারণ। এই দুই ঐতিহাসিক দুর্ঘটনার কারণেই অশুভের পক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে জনমত সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মাটিতে। যারা একাত্তরে নৃশংসতম ভায়োলেন্সের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটিয়েছে, সাম্প্রদায়িকতার হীনমন্যতায় বিপন্ন করেছে বাঙালির অস্তিত্বকে, ধ্বংস করেছে মানবিকতার সুকুমার মানসবৃত্তি, যারা সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে মানব হত্যাকারী বলে চিহ্নিত, তাদেরই রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধীদের দর্পের আজ তাই অন্ত নেই। আবার অশুভশক্তি বাঙালি হত্যার উন্মাদনায় অস্থির হয়েছে নতুন করে। রোমের পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে নিরোর মতোই বাঁশি বাজিয়ে অশুভ শক্তির সমর্থকরা তাই স্পর্ধিত স্পর্ধায় বারবার বলতে পেরেছেনÑ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে জনতা আঠারো দলকেই বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে ফের ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে ছাড়বেন।
ক্ষমতার মসনদে জনতা বসাতেই পারেন। কিন্তু যদি প্রশ্ন ওঠেÑ কেন জনতা অশুভ শক্তির আরো বেশি উত্থান ঘটিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনতে চাইবেন? এই প্রশ্নের উত্তর যা দাঁড়ায় তা হলো, মগজ ধোলাইয়ের ফলে নেশাগ্রস্ত আমজনতা সর্বদা সচেতন চক্ষুতে দেখতে পান না। দৃষ্টি অক্ষম বলে অশুভশক্তির অন্ধ অলিগলির চিত্রগুলোও অস্পষ্ট তাদের কাছে। কিন্তু কাঁধের ওপর সিন্দাবাদের ভূত চাপিয়ে তো আর একটি নেশন তার মুক্তির পথ খুঁজে নিতে পারে না। তাই সংকট নিরসনের জন্য বহু বিচিত্র পদক্ষেপ এই অবধি ব্যর্থ হওয়ার পরে এবার সমস্যা নিরসনে জাতিসংঘের কর্তাব্যক্তিরা উদ্বেগে ব্যাকুল হয়েছেন। স্বয়ং জাতিসংঘের মহাসচিব মিস্টার বান কি মুনের দূত হয়ে পাঁচদিনের প্রচেষ্টা চালাতে বাংলাদেশে এসেছেন জাতিসংঘের মিস্টার এসিট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল, অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। দফায় দফায় সব উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই তাঁর অর্থময় আলোচনা চলছে, একটি রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য। যাতে সাংবিধানিক ধারা বজায় রাখতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দশম জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়। দেশকে যারা ভালোবাসেন সেই প্রত্যাশাবাদীরা একটু আশার আলো দেখেই স্বপ্ন দেখতেও শুরু করেছেন, রাহুগ্রস্ত বাংলাদেশ রাহুমুক্ত হতেই যাচ্ছে, এমন ধারণা নিয়ে। কারণ দেশে এমন অবস্থা চিরকাল স্থায়ী রেখে দেশের ভাগ্যাকাশে রাহু তার ছায়ার বিস্তার ঘটিয়েই যাবে, দেশপ্রেমিক প্রত্যাশাবাদীরা সেটা কখনোই মেনে নিতে পারেন না।
বাংলাদেশ একদিন রাহুমুক্ত হবেই হবে এমন কথা নিশ্চিত। কারণ মানবজাতির ইতিহাসে অকল্যাণের স্পর্শ চিরকাল লেগে থেকেছে এমন সংবাদ কারুর জানা নেই। বিজয়ের এই পবিত্র মাসে হাজার সহস্র কালো ছায়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়েও সব স্বদেশপ্রেমিকদের এই অটল বিশ্বাস তাই ধরে রাখতেই হবেÑ ‘এ উইনার ইজ এ ড্রিমার, হু নেভার গিভস আপ’! বিজয়লাভ করতে হলে বিজয়লাভের স্বপ্ন কখনো পরিত্যাগ করা চলবে না। বাঙালি জাতির জনক, বাংলাদেশের স্থপতি বারংবার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েও কখনো পরিত্যাগ করেননি তার স্বপ্ন। যে মহামানবের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধাঞ্জলি ভক্তিপ্রেমে ঝরে পড়ছে তাঁর মহাপ্রয়াণকে ঘিরে, সেই নেলসন ম্যান্ডেলাও স্বপ্ন পরিত্যাগ করেননি কখনো। তিনি বলেছিলেনÑ ‘ডু নট জাজ মি বাই মাই সাকসেস, জাজ মি বাই হাউ মেনি টাইমস আই ফেল ডাউন এন্ড আই গট ব্যাক আপ এগেইন’!
শুভশক্তির পাশাপাশি জগতে অনাদিকাল ধরেই অশুভশক্তি বিরাজমান। মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার পথকে বাধাগ্রস্ত করতেই তার অস্তিত্ব চিরকাল জগতে অবস্থানরত। জীবনে তিক্ততা আর ঘৃণাকে উজ্জীবিত করাই অকল্যাণের উদ্দেশ্য। ভালোবাসাকে দলিত করে, বিবেককে বিষিয়ে তুলেই সে তার শক্তি সঞ্চয় করে তাই। কিন্তু শুভশক্তি তারও চেয়ে অনেক বেশি শক্তিমান। চন্দ্র কিংবা সূর্যগ্রহণের পালা মহাকাশের বুকে তাই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না কোনোদিন। কল্যাণের মুক্তির আলোকে তার কালো ছায়া সরে যেতে বাধ্য হয়। বাংলার এই রাহুশক্তির পরাজয় হবেই হবে। তবে এই অশুভশক্তির গ্রাস থেকে মুক্তির জন্য বাঙালির জীবনে এবার প্রয়োজন একটি ব্যাপক মানসিক মুক্তিযুদ্ধের। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী সমস্ত সেক্টরকেই এর দায়িত্বভার তুলে নিতে হবে তাই। অমঙ্গলের কোনো রক্তচক্ষুর সামনেই মাথা নত করা তাদের চলবে না। কোনো অক্ষশক্তির আস্ফালনকেও প্রয়োজন নেই গুরুত্ব দানের। বাঙালির জাতির বিজয় একাত্তরে যে কারণে ঘটেছিল, সেই সত্য, ন্যায় আর শুভকে অবলম্বন করেই এই বিজয়ের মাস থেকেই শুরু হোক বিজয় ছিনিয়ে আনার পথ চলা। বিজয় মাসে সহ¯্র সমস্যায় জর্জরিত হয়েও এই প্রতিজ্ঞা তাই সমস্ত মুক্তিযুদ্ধের শক্তির কণ্ঠে আজ বারংবার শপথ সেøাগানে উচ্চারিত হোকÑ রাহুগ্রস্ত বাংলাদেশকে এবার রাহুমুক্ত হতেই হবে!
©somewhere in net ltd.