নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষায় আদর্শ দেশ বাংলাদেশ

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:০৫



জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত হচ্ছে দিন দিন। দ্য ইকোনমিস্টের রিপোর্টের সূত্র ধরে একথা বলাই যায়, অচিরেই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হবে, সেদিন আর বেশি দূরে নয়।আশরাফ হোসেন গত ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সাউথ সুদানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। জাতিসংঘের মহাসচিব সাউথ সুদানে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশের একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি সামরিক হাসপাতাল ইউনিট, সামরিক পরিবহন বিমান এবং সামরিক হেলিকপ্টার প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। ওই অনুরোধের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনী জরুরি ভিত্তিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাউথ সুদানে জনবল ও বিমান প্রেরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘের জরুরি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধিসহ ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। এর আগে ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ সুদানের জাংলে এলাকায় সৃষ্ট পরিস্থিতি সামলাতে জাতিসংঘ জরুরি ভিত্তিতে দক্ষিণ সুদানে হেলিকপ্টার নিয়োগের অনুরোধ জানায়। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সেবার এগিয়ে এসেছিল সবার আগে, কঙ্গো থেকে দুটি হেলিকপ্টার দক্ষিণ সুদানে প্রেরণ করে। এছাড়া ২০১০ সালে চাঁদ থেকে আইভরিকোস্টে দুটি বেল-২১২ হেলিকপ্টার, ২০১১ সালে নির্বাচনের সময় শতাধিক জনবল আইভরিকোস্টে এবং সবশেষ ২০১২ সালে সিরিয়ায় সহায়তার জন্য বাংলাদেশই সর্বপ্রথম এগিয়ে এসেছে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের শক্তিশালী অবস্থানের প্রমাণ মেলে ২০১১ সালে নভেম্বর মাসে যখন জাতিসংঘের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল বান কি মুন দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় তিনি খোলা মনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টরেট অব ল উপাধি দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ওঠেন_ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।

এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০০৮ সালে। সে সময় তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ এবং একনিষ্ঠতা নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করার পর বলেছিলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি আদর্শ সদস্য। শুধু তাই নয়_ সিয়েরা লিয়নের প্রেসিডেন্ট ড. আহমেদ তেজান কাব্বাই ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সফর করেন এবং বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিয়নের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন।

গত কয়েক বছরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ দেশ ও দেশের বাইরে অনেক প্রশংসিত হয়েছে। এ ধরনের মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিদেশে যে শুধু মর্যাদা বাড়িয়েছে তা-ই নয়_ বরং বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে নিজেদের অভিজ্ঞতার পরিধি বিস্তৃত হতে সহায়তা করেছে এবং বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য ও চর্চার সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছে। মূলত পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা, কর্তব্যপরায়ণতা ও মানবতাবোধের কারণে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সারা বিশ্বের আস্থা অর্জন করেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু করে বিশ্বমানবতার কল্যাণে বিশ্বের প্রায় ৩৯টি দেশে বাংলাদেশের প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে বিশ্বের নয়টি দেশে আট হাজারের অধিক শান্তিরক্ষী নিয়োজিত করে অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রায় ৫৩০০, নৌবাহিনীর ৪০০, বিমান বাহিনীর ৫০০ এবং পুলিশের প্রায় ১৯০০ সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনীর দেড় শতাধিক আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অস্ত্র, গোলাবারুদ, যানবাহন, নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ লেবাননে নিয়োজিত রয়েছে। বিমান বাহিনীর এম আই ১৭ এবং সি ১৩০ পরিবহন বিমান কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্রে এবং বেল-২১২ হেলিকপ্টার আইভরিকোস্টে নিয়োজিত রয়েছে। প্রায় প্রতিটি শান্তি মিশনাধীন দেশে রয়েছে পুলিশ সদস্য, রয়েছে ফর্মড পুলিশ ইউনিট এবং হাইতিতে ও কঙ্গোতে রয়েছে মহিলা ফর্মড পুলিশ ইউনিট। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ১১৪ জন শান্তিরক্ষী বিভিন্ন দেশের শান্তি-শৃঙ্ক্ষলা রক্ষায় শহীদ হয়েছেন।

জাতিসংঘে দক্ষ ও সুশৃঙ্খল শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণে প্রশিক্ষণের জন্য ১৯৯৯ সালে রাজেন্দ্রপুরে স্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন অ্যান্ড ট্রেনিং এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি দেশের সহস্রাধিক প্রশিক্ষণার্থী শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়নের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুন ২০১২ থেকে জাতিসংঘের কেন্দ্রীয় একটি প্রশিক্ষণ ইউনিট এ প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। এশিয়া মহাদেশে শুধু শান্তিরক্ষার প্রশিক্ষণের জন্য এত ব্যাপক পরিসরে গড়ে ওঠা প্রশিক্ষণ সত্যিই বিরল। বর্তমানে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত আছেন ড. মোমেন। এ বছর তিনি পিস বিল্ডিং কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন।

জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত হচ্ছে দিন দিন। দ্য ইকোনমিস্টের রিপোর্টের সূত্র ধরে একথা বলাই যায়, অচিরেই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে শামিল হবে, সেদিন আর বেশি দূরে নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.