![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মার্চ ফর ডেমোক্রেসির পর টানা অবরোধ ডেকে মাঠে ছিল না বিএনপি নেতা-কর্মীরা। অবরোধের প্রথম দিনে গতকাল গাজীপুরের সফিপুরে একটি পিকআপ ভ্যানে পেট্রোল বোমা ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। এছাড়া রাজধানীসহ সারা দেশে অবরোধের সমর্থনে কোথাও তেমন কোনো সমাবেশ করতে দেখা যায়নি। প্রায় সব জেলায় জীবনযাত্রা ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। যানবাহনও চলেছে যথারীতি। দোকানপাট, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমায় লেনদেন হয়েছে স্বাভাবিক গতিতে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ কোনো নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি জোটের শরিক দল জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও রাজপথে হদিস পাওয়া যায়নি। বলা চলে রাজধানীর বাইরে অবরোধ ছিল একেবারেই উত্তাপহীন। তবে রাজধানীতে বিএনপি ও অঙ্গসংঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের দেখা না গেলেও চোখে পড়েছে জামায়াত-শিবিরের বিচ্ছিন্ন তৎপরতা। তবে শুধু মিছিলের মধ্যেই ছিল সীমাবদ্ধ তা। কোথাও কোথাও অবশ্য ছিটেফোঁটা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। কোনো কোনো জেলায় ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা রাজপথে নামার চেষ্টা করলেও পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি। নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঢাকা : বরাবরের মতো গতকালও গুলশানের বাসভবনে অবরুদ্ধ ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অবশ্য তার বাসভবনের সামনে নিরাপত্তাব্যবস্থা গত কয়েক দিনের তুলনায় শিথিল ছিল অনেকটা। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল কম। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনেও লক্ষ করা গেছে একই চিত্র। গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় মাঠে নামতে না পেরে সোমবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৮-দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন গতকাল ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলমত-নির্বিশেষে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার আহবানে সাড়া দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। ভোটের অধিকার রক্ষায় এ আন্দোলন আরও বেগবান করে বিজয়ের পথে নিয়ে যেতে হবে বলেও জানান তিনি। এর পরও গতকাল মাঠে দেখা যায়নি দলের নেতা-কর্মীদের। রাজপথে না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, যেভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় রাজধানীতে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে না নামাটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া মিছিল বের করলে পুলিশ সরাসরি গুলি করছে। নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় অভিযানের নামে ভাঙচুর চালিয়ে ঘরছাড়া করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নয়াপল্টনের আশপাশে দেখা যায়নি ১৮-দলীয় জোটের কোনো নেতা-কর্মীকে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা আত্দগোপনে থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে অবরোধের চালচিত্র জেনেছেন। কেউবা বাসায় টিভি দেখে খবরাখবর নিয়েছেন। মাঠে নামা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কঠোর সর্তকবার্তাও উপেক্ষা করেছেন তারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ পুরো রাজধানী ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দখলে। অবশ্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল নিরাপত্তাব্যবস্থা শিথিল করা হয়। সারা দেশে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বেলা দেড়টার দিকে বিজয়নগর এলাকায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদারের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হলে পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। সেখান থেকে বিএনপির এক কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়া রাজধানীর মুগদা, রামপুরা, বাড্ডা, শাজাহাদপুরসহ কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও ঝটিকা মিছিলের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে এসব স্থানে অস্থিতিশীল ঘটনা ঘটেনি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বরাবরের মতো গতকালও নেতা-কর্মীশূন্য ছিল কার্যালয়। মূল ফটকে লক্ষ করা যায় পুলিশের দুই স্তরের নিরাপত্তা। কার্যালয়ের অদূরে জলমাকামান, রায়ট-কার, প্রিজন ভ্যান, সাঁজোয়া যানসহ রাখা ছিল দুটি সাদা মাইক্রোবাস। ফকিরাপুল মোড় থেকে বিজয়নগর মোড় পর্যন্ত কয়েক দিন ধরে সাধারণ মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গতকাল লক্ষ করা গেছে স্বাভাবিক পরিস্থিতি। বিএনপির এক নেতা বলেন, 'সিনিয়র নেতারা মাঠে না নামলে আমরাও অবরোধে গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঝুঁকি নিতে রাজি নই।' নয়াপল্টনের আশপাশ এলাকায় নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'নির্দেশনা সত্ত্বেও দলের সিনিয়র নেতারা মাঠে নেই। তারা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দায়দায়িত্ব নিতেও নারাজ। এসব বিবেচনায় মাঠের কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গা-ছাড়া ভাব।' অন্যদিকে তেমন কোথাও দাঁড়াতেই পারেনি জামায়াত-শিবির। তবে সকালে রাজধানীর কয়েকটি স্পটে মিছিল বের করার চেষ্টা করে তারা। পুলিশ বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। ভোর ৬টায় সবুজবাগ এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে শিবিরের ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখা। ৭টায় ডেমরায় বড়ভাঙ্গা ব্রিজে মিছিল করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। ৮টায় তেজগাঁও এলাকায় মাঠে নামে ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। ১০টায় পুরান ঢাকার ধূপখোলা এলাকায় মিছিল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। রমনা থানা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আহসান হাবিবের নেতৃত্বে মগবাজার রেলগেট এলাকায় নামে দলের নেতা-কর্মীরা।
গাজীপুরে ট্রাকে পেট্রোল বোমা: জেলার কালিয়াকৈরের সফিপুরে কাঁচামালবাহী পিকআপ ভ্যানে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় তিনজন আহত হয়েছেন। তারা হলেন ড্রাইভার আলমগীর (বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া), হেলপার লোকমান (বাড়ি রংপুর সদর) এবং কাঁচামাল ব্যবসায়ী। তাদের প্রথমে সফিপুর জেনারেল হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল রাত ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, পেট্রলবোমায় হেলপার এবং কাঁচামাল ব্যবসায়ীর মুখ ও মাথা এবং ড্রাইভারের মুখ ঝলসে গেছে। ভোলা : সদর উপজেলার গুইংগার হাট এলাকায় সকালে মেঘনা পরিবহন নামে দূরপাল্লার একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে ১৮ দলের কর্মী-সমর্থকরা। বিকেলে জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ হয়। ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ১৫ নেতা-কর্মী আহত হন। এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড ককটেল ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। শ্রীপুর (গাজীপুর) : শ্রীপুর উপজেলার রাজেন্দ পুর বাজারে পার্ক করা একটি কাভার্ড ভ্যানে অগ্নিসংযোগ করেছে অবরোধ সমর্থকরা। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। নাটোর : অবরোধের সমর্থনে জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ১৮দল। শহরের হরিশপুরে মাদরাসা মোড় ও স্টেশন বাজারে মিছিল করে বিএনপি। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সদর থানা সাতজন, লালপুর থানা দুজন ও নলডাঙ্গা থানা একজনকে আটক করেছে। আটকরা বিএনপি ও জামায়াতের কর্মী বলে জানা গেছে। জামালপুর : অবরোধ চলাকালে দুপুরে সরিষাবাড়ীতে ২০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সাতটি মোটরসাইকেল ভাংচুর এবং বিএনএফ প্রার্থীর পোস্টারের বান্ডিল ছিনতাই করে অগ্নিসংযোগ করেছে বিএনপি কর্মীরা। চট্টগ্রাম : অবরোধে মাঠে ছিল না ১৮ দল। যান চলাচল সীমিত আকারে থাকলেও জীবনযাত্র ছিল স্বাভাবিক। সিলেট : উত্তাপ ছিল না অবরোধের। কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন মিছিল করেছে ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। বরিশাল : লাকুটিয়ায় গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে ১৮ দল। তবে ভোর হওয়ার আগেই অপসারণ করে পুলিশ। মহাসড়কে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ছাড়া তেমন কোনো তৎপরতা ছিল না বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের। আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) : নরসিংদী-মদনপুর সড়কের প্রভাকরদী এলাকায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ পালন করা হয়। কুষ্টিয়া : মহাসড়কে অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ১৮-দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দিনাজপুর : সকাল থেকে ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা শহরের বিভিন্ন প্রবেশপথে অবস্থান নিয়ে মিছিল, সভা-সমাবেশ করেছে। তবে নেতাদের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের চেয়ে কম ছিল। তেমন পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। বিকেলে খানসামা থানা এলাকার ভাবকী ইউনিয়নের কাচিয়ানী বাজার এলাকায় পুলিশভ্যান লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে জামায়াত-শিবির। এ সময় পাঁচ জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ। কুড়িগ্রাম : জেলা বিএনপি শহরে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে পরে একই স্থানে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। সিরাজগঞ্জ : মাঠে ছিল না ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা। তবে নেতা-কর্মীরা মাঠে না থাকলেও আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল করেনি।
©somewhere in net ltd.