নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির সেই ভারত সেই রাশিয়াই ভরসা

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:০৭

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলো এই ২০১৪ সালে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর। কারণ ভারত-রাশিয়া বাংলাদেশের দশম নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের বিপুল ভোটে বিজয়কে সমর্থন জানাল; পক্ষান্তরে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস আর তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী আদেলের সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র উপদেশ দেয়ার জন্য তাদের সিনেট কর্তৃক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রদান করল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করলাম আমরা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল, তখন মুক্তিকামী বাঙালির সংগ্রামে ভারতের পাশাপাশি সমর্থন নিয়ে এগিয়ে এসেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তবে একথাও ঠিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এজন্যই ১১ জানুয়ারি চলমান সংকট সমাধান ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটি; বিশেষত সিনেটের ফরেন রিলেশন কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেনডেজ পৃথকভাবে দুই নেত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন। উল্লেখ্য, সন্ত্রাসের কবলের মধ্য থেকেও দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাফল্য দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যে ভোটের সময়ই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় ২১ জন নিহত হয়, আহত হয় শতাধিক, আর সাড়ে পাঁচ শত স্কুল পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ৫ জানুয়ারি যে ১৪৭টি আসনে ভোট হয়, তার মধ্যে ১০৪টিতে জয়ের ফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জনকে নিয়ে দলটির মোট আসন দাঁড়িয়েছে ২৩১টিতে, যা সরকার গঠনের নূ্যনতম আসনের চেয়ে ৮১টি বেশি।



চিঠিতে সিনেটর মেনেনডেজ চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা বাংলাদেশকে অস্থিরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে স্থিতিশীল এবং গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দরকার। নির্বাচনের দিন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার তীব্র নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি। ১৯৭১ সালের পরিস্থিতি আর বর্তমান অবস্থা যে এক নয় সে কথাও স্পষ্ট হয়েছে এ চিঠিতে। কারণ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বর্তমানে সর্বাধিক বার্ষিক ছয় বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দুই দেশের বিভিন্ন অর্জন হুমকির মুখে পড়ছে। জামায়াত-বিএনপির সহিংসতা উভয় দেশের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, পাইরেসি বিরোধী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং খাদ্য নিরাপত্তায় অর্জিত সাফল্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। এর আগে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক সংকট অবসানে দ্রুত সংলাপ শুরুর তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের উপমুখপাত্র মারি হর্ফ সংঘাত-সহিংসতায় নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধে উদ্যোগী হওয়ার জন্য উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। সংঘাত-সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন কমনওয়েলথ মহাসচিব কমলেশ শর্মা। আসলে একাত্তরে মার্কিন শাসকরা যে আচরণ করেছিল তার থেকে এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মানুষ দশম সংসদ নির্বাচন মেনে নিয়েছে, আর যারা মেনে নিতে পারছে না তারা বাংলাদেশ বিরোধী, তাই মানুষ আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র বেশি মাতব্বরি করার চেষ্টা করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের প্রস্তাব তাৎপর্যবহ। কারণ তিনি বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে খালেদা জিয়াকে নাশকতামূলক কর্মকা- থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসভায়। ১৩ জানুয়ারি থেকে অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপি সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে বলে আমরা মনে করি।



বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই গভীর। ১৯৭২ সালের ২৫ জানুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে গিয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর (২০১৩) রাশিয়ার সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এজন্য যখন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বাংলাদেশকে নিয়ে নানা পরামর্শের সুপারিশ উত্থাপিত হয় তখন ১০ জানুয়ারি হাসিনাকে সমর্থন জানিয়ে মস্কো এক বিবৃতিতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সমর্থন জানিয়ে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী গঠিত সরকারকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়ার ঘটনা তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সহায়তাকারী রাশিয়া সংবিধান সমুন্নত রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে সরকার ও বিরোধী জোট উভয়ের প্রতিই আহ্বান জানিয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় সক্রিয় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানালেও মস্কো ভোট বর্জনের জন্য বিএনপির সমালোচনা করেছে।



মূলত একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর জোরাল সমর্থক ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের ঐকান্তিক সহায়তা আর তাদের প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নের অকুণ্ঠ সমর্থন বন্ধুত্বের সম্পর্ককে দৃঢ় করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরে চট্টগ্রাম ও চালনা সমুদ্রবন্দর থেকে পাকিস্তানি মাইন অপসারণে রাশিয়ার সহযোগিতা ছিল অনন্য। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমেই শীতল হয়ে পড়ে। জেনারেল জিয়া ও এরশাদের শাসনকালে যুক্তরাষ্ট্র, আরব দুনিয়া আর পাকিস্তান, চীন বেশি গুরুত্ব পায়। এছাড়া ১৯৭৯ সালে রাশিয়া কর্তৃক আফগানিস্তান দখলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৮৩-৮৪ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এদেশ থেকে নয়জন রাশিয়ান কূটনৈতিককে বহিষ্কার করায় সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বিদেশি সাহায্যদাতা গোষ্ঠীর মধ্যে ১৯৮৯ সালে চতুর্দশতম দেশ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। বর্তমানে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ। কারণ এদেশের বিদ্যুৎ, তেল-গ্যাস প্রভৃতি খনিজ সম্পদ উত্তোলন, সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্পর্কে দেশটির অবদান সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সর্ববৃহৎ ঘোড়াশাল থার্মাল পাওয়ার স্টেশনে তাদের অর্থায়ন রয়েছে। রাশিয়া থেকে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমান ক্রয় করা এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির নিদর্শন। ২০১২ সালে দুই দেশের চুক্তি অনুসারে এদেশে আণবিক পাওয়ার সেক্টরে উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে রাশিয়া। রাষ্ট্রীয় সফরে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সেন্ট পিটার্সবুর্গে সেখানকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন; ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় মস্কোতে সাক্ষাৎ হয় দুজনের।



মস্কোর আগেই প্রতিবেশী দেশ ভারত দশম সংসদ নির্বাচনকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের সংবিধান রক্ষার জন্য এর প্রয়োজন ছিল। ৬ জানুয়ারি ভারত বলেছে, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গতিপথেই চলতে দিতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বাংলাদশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। তাছাড়া নির্বাচনের আগে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, যে দলই বাংলাদেশের সরকারে থাক, ভারত তাদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলতে চায়। নির্বাচন দেখার জন্য পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল ভারত। তবে ভারত যে আমাদের রাজনীতিতে মাতব্বরি করতে চেয়েছে এটা সত্য নয়। বরং পাকিস্তান বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে নাক গলাতে চাইছে সবসময়। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক। একটা প্রচারণা বেশিরভাগ পত্রিকা চালাচ্ছে যে ৫ জানুয়ারি হয়ে যাওয়া নির্বাচনটা ভারত করিয়েছে আমেরিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, অর্থাৎ হাসিনা সরকার ভারতের কথায় সবকিছু করেন, এক কথায় ভারতের দালাল এবং সহসাই দেশটাকে ভারতের অঙ্গ রাজ্য বানাবে। বেশির ভাগ মানুষ এই প্রচারণাটা খাবে, এরকমই একটি অবস্থা দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কোন পত্রিকা বলছে না যে গঙ্গার পানি বণ্টন, তিস্তা চুক্তি, ছিটমহল মীমাংসা, সমুদ্রসীমা সমাধান হবে যদি হাসিনা ক্ষমতায় থাকেন। ভারতে বাণিজ্য সুবিধা পাবে যদি হাসিনা ক্ষমতায় থাকেন। হাসিনার বদলে বেগম জিয়া ক্ষমতায় এলে উনি ভারতকে একচেটিয়া ছাড় দিয়ে যাবেন অতীতের মতো, পরিসংখ্যান তাই বলে।



২০১০ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার ভারত ভ্রমণের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক গভীর হয়েছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার দুয়ার উন্মুক্ত করায় বেগবান হয়েছে সেই সম্পর্ক। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। সাংস্কৃতিক দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য ভারতীয় এলাকার সঙ্গে ভাষাগত মিল রয়েছে এদেশের। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ট্রানজিট সুবিধা এখনো প্রবর্তন করা হয়নি। তবে সীমিত পরিসরে শিলিগুড়ি করিডর ব্যবহার করছে ভারত; বন্দীবিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চোরাচালানি ও আদম পাচার বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে উভয় দেশ। সম্প্রতি সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়েছে। ফেলানী হত্যাকা-ের বিচার কাজ চলছে। ২০০১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এক হাজার বাংলাদেশিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী হত্যা করেছে। এজন্য অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে উভয় তরফ রাজি হয়েছে। যদিও মনমোহন সিং বলেছেন ২৫ শতাংশ বাংলাদেশি ভারতবিদ্বেষী তবু সম্পর্কের অবনতি হয়নি আমাদের সঙ্গে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনবিঘা করিডর নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চবি্বশ ঘণ্টা বাংলাদেশিদের তিনবিঘায় যাতায়াতের অনুমোদন পাওয়া গেছে চুক্তি অনুসারে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়েছে ৫০০ মেগাওয়ার্টস। সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটিও ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রকল্প। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-উৎসবে দুই দেশের সম্পর্ককে অনেক ঘনিষ্ঠ করা হয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না '৭১-এ কিন্তু এই ভারতই আমাদের পাশে ছিল, যার কারণে মাত্র ৯ মাসেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। কেউ কেউ বিতর্ক তোলেন জনগণ বড় না সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বড়। তাছাড়া ভারত এ বিষয়ে বলার কে? তবে ভুললে চলবে না বিএনপি-জামায়াতের মদত আর উসকানিতেই দেশে আজ রাজনৈতিক হানাহানি ও সহিংসতা বিরাজ করছে। জনগণকে এত বোকা ভাবার দরকার কি? জনগণ সবই বুঝে, সে তার নিজের যুক্তি দিয়ে বিচার করে সত্যটা জানার চেষ্টা করে। বিএনপি-জামায়াত আপসরফার নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। তাদের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমরা সবাই ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই।



আংশিক ব্রিটিশ সহায়তা হারাতে পারে বাংলাদেশ ১১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের 'দ্য টেলিগ্রাফ' পত্রিকার প্রতিবেদনে এরকমই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি কর্মসূচিতে সাড়ে পাঁচ কোটি পাউন্ডের বেশি আর্থিক সহায়তা দেয় যুক্তরাজ্য। এই দুটি প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা কমানোর বিষয়টিই দেশটি পর্যালোচনা করবে। বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে বৈদেশিক সহায়তা পায় তার মধ্যে যুক্তরাজ্য চতুর্থ অবস্থানে আছে। দেশটি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৭ কোটি ৪৯ লাখ পাউন্ড আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে তা কমিয়ে সাড়ে ২৬ কোটি পাউন্ড করার পরিকল্পনা আছে। যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তার বেশির ভাগই যায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ৩০ ভাগ সহায়তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হয়। বাংলাদেশ যে বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই এগিয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ দেবে নতুন সরকার। তবে ১১ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেছেন, ইউকে-এইড বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ জনগণের যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করে। সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রান্তিক ও গরিব মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী চালু করা প্রকল্পে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমরা দেখতে পাই ব্রিটিশদের তুলনায় ভারতের অবদান অনেক বেশি। ভারত সিডরে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি গ্রাম পুনর্নির্মাণ করে দিয়েছে। আর ব্রিটিশ অর্থায়নে পরিচালিত 'এশিয়া ফাউন্ডেশন' একটি এনজিও। তাদের অফিস বারিধারা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই কাজ করে বেশি। যেসব কাজ তারা করে, সেসব কাজ থেকে তেমন কোন আউটপুট নেই। সুতরাং এখানে টাকা না ঢেলে জনগণের জন্য কোন কর্মসূচি গ্রহণ করলে সেটা ভালো হয়। খালেদা, ড. ইউনূস কিংবা জামায়াতের প্ররোচনায় অনেক দেশই সাহায্য বন্ধ করতে পারে বলে মনে হচ্ছে। তবে সেই আশঙ্কাকে আমরা থোড়াই কেয়ার করি।



যত তাড়াতাড়ি বিএনপি-জামায়াতের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে ততই আমাদের দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া এখন জামায়াত নেতা। এটা জনগণকেও মনে রাখতে হবে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে 'সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন' প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে। কারণ নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় হিন্দু-খ্রিস্টানসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠী বিপন্ন হয়েছে। মনে রাখা দরকার যে, বিএনপি-জামায়াত দেশের জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে এখন বিদেশিদের শরণাপন্ন হয়েছে। আর সরকারের প্রতি জনগণের নীরব সম্মতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমে। আসলে জনগণ এবং ভারত-রাশিয়ার সহযোগিতা দ্বিতীয় একাত্তরের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে ভারত-রাশিয়ার। পুনরায় স্মরণ করতে হয়, প্রাচীনকাল থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস একীভূত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম প্রভৃতি এলাকায় এদেশের আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় নিতে হয়েছে। ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের কর্মকা- পরিচালিত হয়েছিল ভারত থেকেই। আর যুদ্ধে বিজয়ী বাঙালিদের সঙ্গে ভারতীয়দের তখন থেকেই আত্মিক সম্পর্ক সবল হয় এবং অদ্যাবধি তা অটুট রয়েছে। যদিও বিএনপির শাসনামলে সেই সম্পর্কে অবিশ্বাস জন্মেছে একাধিকবার। কারণ বিএনপির কূটনৈতিক কেন্দ্র পাকিস্তান ও আরব বিশ্ব। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত-রাশিয়াই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। আজকের বন্ধু আমেরিকা, ইইউরা কিন্তু বিরুদ্ধে ছিল। শরণার্থীদের আশ্রয়, খাওয়া-পড়া, অস্ত্র দেয়া সবকিছুর দায় কিন্তু ভারতকেই নিতে হয়েছিল; রাশিয়া সে সময় পাশে ছিল।



মূলত সহিংসতার পথে কোন সমাধান যে আসে না সে কথা বিশ্বের সবাই স্বীকার করে একমাত্র জামায়াত-বিএনপি ছাড়া। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব গতিপথে চলতে দিতে হবে। সম্ভবত এজন্যই সংলাপের মাধ্যমে সংকট উত্তরণের পথ খোঁজার জন্য দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশসমূহ। তার মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি ভারত-রাশিয়ার সমর্থন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে। ১২ জানুয়ারি (২০১৪) মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার গঠিত হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বের অনেক নেতারা শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের এই অর্জনকে ধরে রাখতে নতুন প্রজন্মকে জেগে উঠতে হবে। একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন এখন পূর্ণতা পেয়েছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৩০

রাফা বলেছেন: সমিকরন সেই ৭১-এর মতই আছে।জামাত আর বিএনপি ঠিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মত বিদেশের দালালী করছে।জনসাধারন সেই ৭১-এর মত আঃ লীগের সাথেই আছে।
হাসিনাকে দৃঢ়তা নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।

২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০৩

হাসিব০৭ বলেছেন: =p~ =p~ =p~জনগন হাসিনার সাথে আছে। আপনারা আসলেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধি অন্ধ দালাল, চাটুকার। নইলে যেখানে কোন কোন ভোটকেন্দ্রে কোন ভোটই হয় নি। যতটুকু ভোট পরেছে সবই কারচুপির মাধ্যমে তারপরেও আপনারা বলেন জনগন আপনাদের সাথে আছে ধিক্কার আপনাদের মানসিকতায়। যতই মাথা দিয়ে পাহাড় ঠেলেন সত্যি কথা হচ্ছে জনগন আপনাদের থেকে মুক্তি চায়। তারা না চায় আওয়ামিলীগকে আবার না চায় বিএনপি কে। যদি তারা বিএনপি কে চাইত তাহলে তারা নিশ্চয়ই ভোটকেন্দ্রে পাহারা বসিয়ে হলেও ভোট হতে দিত না তাই সহজেই বুঝা যায় যে তারা বিএনপির সাথে নাই। আবার যদি তারা যদি সতস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করত তাহলে বুঝতার তারা সত্যিই হাসিনার সাথে আছে। সুতরাং বুঝতে পারছি যে আপনারা একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচারের আশ্রয় নিচ্ছেন।

৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৬

সাবাব ইকবাল বলেছেন: বিগেস্ট জোকস অফ দি ইয়ার "জনগণ আওয়ামীলীগের সাথে আছে " =p~ =p~ =p~

৪| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:০২

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: পড়তে গিয়েই হোচট খেলাম কারণ আপনি বলেছেন ভারত-রাশিয়া বাংলাদেশের দশম নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের বিপুল ভোটে বিজয়কে সমর্থন জানাল আপনি আপনার বিবেককে নিজেই প্রশ্ন করুন তো বিপুল ভোট কই থেকে এলো?


আপনি কেন এমন একটি নির্লজ্জ মিথ্যাচারের আশ্রয় নিচ্ছেন? সঠিক উত্তর দিবেন কী।

আপনার এমন নির্লজ্জ মিথ্যাচারের কারণে আপনার পোস্টটি পড়ার ইচ্ছা করছে না। আবারও বলি বিবেক জাগ্রত করুণ। কমবেশী সবাই পলিটিক্স করে তাই বলে এই নয় যে নিজের বিবেক বুদ্ধির কবর রচনা করেত হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.