![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন চলছে দলীয় নেত্রীর গুলশান কার্যালয়ের কর্মরত কিছু সাবেক আমলা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নির্দেশনায়। গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে দলীয় চেয়ারপারসনের বক্তৃতা বিবৃতি এমনকি সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীর দেখা-সাক্ষাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। সেখানে অনুপস্থিত দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ পাওয়া স্টাফরাও অরাজনৈতিক ব্যক্তি।
বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে অঘোষিতভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের থেকে শুরু করে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। নির্ভর করতে হয়, তাদের মেজাজ মর্জির ওপর। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়ে উপযোগী ভূমিকা রাখতে পারছেন না দলের নীতিনির্ধারকরা। এ বিষয়গুলো মুখ ফুটে কেউ বলতে না পারলেও সঙ্গত কারণেই মন খারাপ সিনিয়র নেতাদের। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার দূরত্বের জন্য গুলশান কার্যালয়ের ওই চক্র দায়ী বলেও মনে করেন নেতা-কর্মীরা। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মনিরুজ্জামান মিঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কিছু প্রতিবন্ধকতায় পড়ার অভিযোগের কিছুটা সত্যতা রয়েছে। তারপরও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বেগম জিয়ার দেখা-সাক্ষাতে কোনো বাধা থাকা ঠিক নয়। নেতাদের সঙ্গে বেগম জিয়া যত আলোচনা-পর্যালোচনা করতে পারবেন দল ততই দক্ষ ও শক্তিশালী হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনও মাঠের বাস্তবতার আলোকে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে আমি মনে করি। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গুলশান কার্যালয় দেখে মনে হয় বিএনপি এখনো সরকারি দলে। সেখানের কর্মকর্তা, কর্মচারী কিংবা স্টাফদের চাল চলন, দামি গাড়িতে আসা-যাওয়া, পোশাকের চাকচিক্য দেখে মনে হয় না দল ক্ষমতার বাইরে। গুম, খুনসহ লাখ লাখ নেতা-কর্মী হামলা-মামলায় জর্জরিত হলেও গুলশান কার্যালয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নচিত্র। কার্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী কিংবা চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনীর কারও পরিচিত না হলে তৃণমূলের কোনো নেতাও চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা প্রায় অসম্ভব। এমনকি দূর থেকে দলীয় প্রধানকে একটি সালাম দেওয়ার জন্য লাইনও নিয়ন্ত্রণ করেন ওইসব বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী। দলের সিনিয়র নেতাদেরও নানা কাঠ-খড় পোড়াতে হয় দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেক দিন দেখা না করেই ফিরে আসতে হয় তাদের। অনেক ক্ষেত্রে নানাভাবে হয়রানি ও নাজেহাল হলেও লজ্জা-অপমানের ভয়ে মুখ ফোটে কারও কাছে এ নিয়ে কথা বলতে চান না দলের ত্যাগী নেতারা। এ কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলতে না পারায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঠিক নির্দেশনাও পেঁৗছাতে পারছেন না বিএনপি সিনিয়র নেতারা। ফলে নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের এক ধরনের দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি বেড়েই চলেছে। অভিযোগ রয়েছে, গুলশান কার্যালয়ের একটি চক্র বেগম জিয়ার সঙ্গে অখ্যাত কিছু মানুষের দেখা-সাক্ষাৎ করান আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে। এসব মানুষের সঙ্গে বেগম জিয়াকে ব্যস্ত রেখে তার পাশের রুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। অনেক সময় দীর্ঘ অপেক্ষা করে রাগে-ক্ষোভে বেরিয়ে যান দলের প্রকৃত ত্যাগী নেতারা। গুলশান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, গুলশান কার্যালয়ের একটি মহলের কারণে গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গেও বেগম জিয়ার দূরত্ব বাড়ছে। কোনো সাংবাদিক দূরের কথা, বিগত ৭ বছরের মধ্যে দেশের কোনো একজন পেশাদার সম্পাদক পর্যন্তও গুলশান কার্যালয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাননি। দলের দুর্যোগ মুহূর্তেও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বেগম জিয়ার মতবিনিময়েও বাধা ছিল গুলশান কার্যালয়ের ওই চক্রটির। প্রকারান্তরে সারা দেশে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতোই পুরো দেশের মিডিয়া থেকেও পরোক্ষভাবে তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে রীতিমতো বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। আর প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে যে, দেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যমই নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে সিনিয়র সম্পাদক বা সিনিয়র সাংবাদিকদের কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই বললেই চলে। সে কারণেই গুলশান কার্যালয়ের কোনো অনুরোধ প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে না। এ ধরনের অবস্থা বিগত সময়ে আওয়ামী লীগে বিরাজ করলেও এখন এ অবস্থা কাটিয়ে উঠে দলের তৃণমূল ও মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থি হলেও সম্প্রতি দলের প্রবীণ নেতাদের কাছে টেনে নিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেককে দল ও সরকারে স্থান করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের সঙ্গে সব কিছু সলাপরামর্শ করেই এখন দল ও রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তিনি। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে কোথাও আর এখন কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নেই। ফলে তৃণমূল নেতারাও প্রয়োজন অনুযায়ী দলীয় সভানেত্রীসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারছেন। জানাতে পারছেন হাজারো সমস্যার কথা। সাধ্যমতো নানা সমস্যার সমাধানও করছেন দলের সিনিয়র নেতারা। অন্যদিকে বিএনপির চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত।
গত ২৯ ডিসেম্বর দলীয় প্রধান বেগম জিয়ার ঢাকায় আসার আনুষ্ঠানিক আহ্বানের পর সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক তৃণমূলের নেতা-কর্মী ঢাকায় জড়ো হলেও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি গুলশান কার্যালয় নির্ভর উলি্লখিত প্রতাপশালী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তাদের সবাই ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্দগোপনে চলে যান। অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ধীরে ধীরে তারা আবারও লোকালয়ে আসা শুরু করেন। পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নেন গুলশান কার্যালয়ের। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গুলশান কার্যালয়ে যেতে এখন আর মন টানে না। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ডাকলে যাই। কারণ তিনি ডাকলে না যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এ ছাড়া সেখানে যাওয়া হয় না। সেখানে ম্যাডাম ছাড়া শীর্ষ নেতাদের আনাগোনা খুবই কম। কার সঙ্গে কথা বলব। বিএনপি তো এখন চালায় পিয়ন-চাপরাশি। কাজেই আন্দোলন যে কি রকম হবে বুঝতেই পারছেন! শহীদ জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দেশের সব সেক্টরের সবচেয়ে মেধাবী ও বুদ্ধিমান লোকদের খুঁজে বের করে দলে রিক্রুট করেছিলেন। ম্যাডামও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কী থেকে কী যে হয়ে গেল।
©somewhere in net ltd.