![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক'টা দিন ভালোয় ভালোয়ই কাটলো। কিন্তু এখন ভয় হচ্ছে; ভীষণ ভয়! দেশে সকল দলের অংশগ্রহণে উত্সবমুখর পরিবেশে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। ১৯ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়া সে সঙ্গে তারা সরকারি দলের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকায় ভেবেছিলাম এবার অন্তত দেশ কিছুটা স্থিতিশীল হবে। কিন্তু ১ মার্চের একটি সংবাদে ভয় হচ্ছে। শনিবার বিকেলে ফরিদপুরের রাজবাড়ীতে বেগম জিয়ার দেয়া বক্তব্য ঘিরেই আমাদের যতো ভয়। সে দিনের টিভি আর অনলাইনগুলোর 'উপজেলা নির্বাচন শেষে সরকার পতন আন্দোলন' খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যে আমরা ভীষণ ভয় পাচ্ছি। রাজনীতির আকাশে আবারও কালো মেঘ দেখে এমন ভয় হচ্ছে। আবহাওয়াটা ফের গুমোট ঠেকছে। বোধকরি আলোর দেখা মিলবে না। যুদ্ধ আরও হবে। আবারও অশান্তির দাবানলের ভয়; পেট্রোল বোমে মানুষ পুড়ে মরার ভয়; পুলিশের গুলিতে জীবন যাওয়ার ভয়,; শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নষ্টের ভয়; মামলা হামলার ভয়; জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হওয়ার ভয়; সম্পদ নষ্টের ভয়; সর্বোপরি ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংসে ভয় আমাদেরকে বেশ পেয়ে বসেছে। এর আগে 'সহসাই আন্দোলন নয় : দল গোছাবে বিএনপি' এমন সংবাদে জনজীবনে স্বস্তি ছিলো। ক'টা মাস যে শান্তি পাওয়া যাবে, শান্ত থাকবে দেশ এমনটাই বোধ করি বিএনপির পক্ষ থেকে ইঙ্গিত করা হচ্ছিলো।
ভেবেছিলাম অন্তত কিছুটা সময় ভালোয় ভালোয় কেটে যাবে। কিন্তু বেগম জিয়ার বক্তব্যের পর ভাবনা যেন গুড়ে বালি। তাঁর কথায় বোঝা যাচ্ছে সেই যুদ্ধ আবারও শুরু হবে। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আবার বধ হবে দেশের আমজনতা। পূর্বের ষ্টাইলে আন্দোলন হলে অশান্তি বাড়বে। অর্থনীতি ধ্বংস হবে। দেশে বেকার বাড়বে, অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হবে, ব্যবসা বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দেবে। সে যুদ্ধে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হবে। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হবে। কয়েক মাস আগে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে আমরা প্রতিদিন কী দেখেছি? দেশ জুড়ে নৈরাজ্য দেখেছি। সে কথা এখনো ভুলে যাইনি আমরা। হতভাগ্য বাবার চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ কিংবা পেট্রোল বোমায় ঝলসে যাওয়া ছেলের চিত্কার শুনেছি। সম্পদ হারিয়ে পথে বসতে দেখেছি অনেককে। এরা তো সবাই রাষ্ট্রেরই সুনাগরিক ছিলো? এদের তো বাঁচার আর সম্পদ রক্ষার অধিকার আছে। কিন্তু ঐসব দানবদের হাত থেকে কেউই আমাদের রক্ষা করতে পারেনি। প্রতিনিয়ত চোখের সামনেই এসব ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। কিছুই করতে পারিনি আমরা। আমরা আর হরতাল অবরোধের নামে নৈরাজ্য চাই না। এ কথাও সত্য যে বিরোধী দলের আন্দোলন করার অধিকার আছে। তারা বঞ্চিত হলে; তাদের প্রতি অবিচার করা হলে; গণতন্ত্র নস্যাত্ হলে, তারাতো আর ঘরে বসে থাকবে না? তাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতেই হবে। এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, সে প্রতিবাদ যেন কখনই জনগণের বিরুদ্ধে না হয়। দেশের মানুষের সম্পদ নষ্ট করে , মানুষ হত্যা করে হরতাল অবরোধ কোনটাই করা যাবে না। এটা যৌক্তিকও নয়? আমরা এ জাতীয় প্রতিবাদ আর চাই না। কিছুতেই জানমাল নষ্ট করে আন্দোলন করা যাবে না। দেশের মানুষ সে আন্দোলনকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
হালসময়ের হরতাল আমাদের দেশে ক্ষতিকর প্রভাবে ফেলে। হরতালের ব্যাপারে আমার কয়েকটি প্রস্তাব হলো- (১) এখনকার হরতাল মানেই জানমাল নাশ, সে হিসাবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরকার শুদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত কম করে ১০ বছর (২ মেয়াদে) হরতাল সম্পূর্ণ রূপে হরতাল বন্ধ করা যেতে পারে (২) হরতাল একেবারে বন্ধ করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো বছরে অনধিক ৬টি কিংবা ১২টি হরতাল করতে পারে এ মর্মে আইন করতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রে ঐ হরতালের প্রতি কম করে দেশের চলমান ১০টি রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকতে হবে (৩) হরতালকালে জানমালের ক্ষতি হলে সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার হরতাল ডাকা দলের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে নিতে পারে (৪) পাবলিক পরীক্ষা, বোর্ড পরীক্ষাসহ জনগুরুত্বপর্ণ কোন দিনে হরতাল ডাকা যাবে না (৫) কাউকে হরতাল পালন করতে বাধ্য করা যাবে না। হরতালের বিরুদ্ধে এ জাতীয় আইন সহসাই করা দরকার।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনৈতিক সংকটের প্রভাবে ভেঙে পড়তে বসেছে দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি। হরতাল অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। স্থবির হয়ে পড়ে কল-কারখানার উত্পাদন। এর আগে টানা হরতাল ও সহিংসতার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে অর্থনীতিতে সংকট বাড়ে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে। একইভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বিনিয়োগ। সহিংস ঘটনার কারণে রাস্তাঘাট, সেতুসহ রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এ ক্ষতি আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এ অবস্থায় বিরোধী দলের আবারও আন্দোলনের ঘোষণায় ভয়তো হবেই। অর্থনীতিবিদদের আশংকা, আবারও দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির কাঠামো একেবারে দুর্বল হয়ে পড়বে। তখন দেশ আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। এর আগের হরতাল অবরোধে দেশের শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, ব্যবসা প্রভৃতি প্রতিটি খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন কারণে-অকারণে নির্বিচারে কলকারখানা, বিদ্যুত্ কেন্দ্র ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে। আবারও দেশে এ জাতীয় নৈরাজ্যে মূলধনী, মধ্যবর্তী ও কাঁচামাল আমদানি করতে ব্যর্থ হয়ে অনেক শিল্প-কারখানা অচল হয়ে পড়বে। উত্পাদন দারুণভাবে ব্যাহত হবে। দেশে রফতানি কমে যাবে। এ অবস্থায় আমরা আশা করবো যে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, এমন কাজ থেকে আমাদের রাজনৈতিকগণ বিরত থাকবেন এটা দেশবাসীর দাবি। দেশকে নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে যেকোন মূল্যে বের হতে হবে। দেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে বাঁচাতে এজন্য সম্মিলিত রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। প্রয়োজন সমঝোতার রাজনীতির।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৩৪
বেকার সব ০০৭ বলেছেন: