![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিতে বিস্তর ফারাক দেখা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীতে। গত ক’বছরে বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু এবং সে বিচারে একের পর এক দলের শীর্ষ নেতারা বন্দি হওয়ায় নানাভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে দলটি। সরকারের শক্ত অবস্থান এবং নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে নানা চেষ্টা করেও সে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। উল্টো একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে দলটি। এরপরও সরকারের শেষ সময়কে টার্গেট করে আশা জিইয়ে রেখেছিল দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু ব্যাটে-বলে সংযোগ না হওয়ায় সে আশাও পূরণ হচ্ছে না তাদের। সফলতার প্রত্যাশায় লড়ে যাওয়ার পর ব্যর্থতার গ্লানিতে এ মুহূর্তে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য জামায়াতের টার্গেটেড সময় নির্ধারিত ছিল বর্তমান মহাজোট সরকারের শেষ সময়। সে অনুযায়ী দলটির পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি দুই-ই ছিল। কিন্তু নানা কারণে ওই পরিকল্পনার কোনো বাস্তবায়ন করতে পারছে না দলটি। এক্ষেত্রে শরিকদের অসহযোগিতাও অনেকটা দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন দলের অনেকে। তাদের মতে, ১৮ দলীয় জোটপ্রধান বিএনপিসহ প্রায় সব দলই জামায়াতকে আর অতটা পাত্তা দিচ্ছে না। বিশেষ করে দলের নিবন্ধন হারানোর পর তাদের কাছে এ দলের গুরুত্ব এখন অনেকটাই কমে গেছে। উল্টো জামায়াতকে এখন উটকো ঝামেলাও মনে করছে তারা। যে কারণে দলগুলোর পক্ষ থেকে জামায়াতের বিষয়ে নাক উঁচু ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুধু হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো কাজে জামায়াত-শিবিরকে আর তাদের প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে আকার-ইঙ্গিতে জামায়াতকে তা বুঝিয়েও দিয়েছে শরিক দলগুলো। বিরোধী জোটের শত বিরোধিতার পরও সর্বদলীয় সরকার গঠন করে নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে সরকার। সরকারের এ আয়োজন সফলতার মুখ দেখলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে জামায়াত। তখন একেবারে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। আর এ উদ্বেগ থেকেই জামায়াত সাহায্যের জন্য মুখাপেক্ষী হয়েছে জোটের কাছে। তবে জোট থেকে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ায় হতাশ হচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, দলের এমন সঙ্কটকালে জোটপ্রধান বিএনপির কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপি এ বিষয়ে কোনো গা করছে না। কারণ জামায়াত বিষয়ে শুরু থেকেই বিএনপির একটি পক্ষ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে আসছিল। তারা এখন সক্রিয়ভাবে জামায়াতকে সহযোগিতা করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মতে, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আর জামায়াতের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। যুক্তি হল-বিগত সময় জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির দোসর বলে বিএনপি যে অপবাদ পেয়েছে-তা থেকে মুক্ত হওয়া দরকার এবং এর উপযুক্ত সময় এখনই। তাদের ধারণা, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়লে বিএনপির ক্ষতি হবে না। পরিবর্তে দূরবর্তী ফল অনেক ভালো হবে। জামায়াত বিষয়ে বিএনপি ও শরিকদের এমন গা-ছাড়া ভাবে ও দলের নেতৃত্বের খরায় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে খেই হারিয়ে ফেলেছে জামায়াত। বছরের পর বছর কার্যালয় বন্ধ। হাল ধরার মতো নেতারা দীর্ঘ সময় ধরে রয়েছেন আত্মগোপনে। যখন তখন আটক হচ্ছে দলের নেতাকর্মীরা। নানা কারণে জনসমর্থনও কমতে কমতে একেবারে শূন্যের কোঠায় নামতে বসেছে। এ অবস্থায় নিজস্ব রসদের ওপর ভিত্তি করে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজপথের আন্দোলন গড়ে তোলার সামর্থ্য নেই তাদের। অন্যদিকে সরকারের কঠোর অবস্থানকে টেক্কা দিয়ে সহসাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করারও খুব একটা সুযোগ নেই। এরপরও সঙ্কট কাটাতে ১৮ দলীয় জোটকেই শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করছে জামায়াত। কারণ একমাত্র ১৮ দলীয় জোট সরকার গঠন করলেই জামায়াতের এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা থাকবে, অন্যথায় নয়। তাই জোটের প্রধান দাবি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাস্তবায়ন এবং ১৮ দলীয় জোটের ক্ষমতায় আরোহণ করা তাদের কামনা। এ অবস্থায় জোট তাদের প্রতি নেতিবাচক আচরণ করলেও নিজেদের স্বার্থেই দূরত্ব কমিয়ে এনে বিএনপিসহ শরিক দলগুলোকে আরও কাছে টানার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত।
©somewhere in net ltd.