নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিনিয়র নেতারা জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বিকৃতি দিতে নারাজ : বিপাকে নেত্রী।

৩১ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:০৩

নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত বিএনপি। ফলে শত চেষ্টা করেও মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না দলটি। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে দলীয় হাইকমান্ড ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে পড়েছে। তবে বিরাজমান এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে শীঘ্রই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৭ নবেম্বর ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই একের পর এক সমস্যার কবলে পড়ছে বিএনপি। টপ টু বটম দলের সর্বত্রই এ সমস্যা বিরাজ করছে। দীর্ঘ সাড়ে ৭ বছরেও সমস্যা কাটিয়ে মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না দলটি। এ কারণে দলের সর্বস্তরে হতাশা বিরাজ করছে। তবে দলীয় হাইকমান্ড নেতাকর্মীদের হতাশা কাটিয়ে তুলতে নানামুখী কৌশল চালিয়ে গেলেও কোন কৌশলই কাজে আসছে না। এর ওপরে সম্প্রতি জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুরে সুর মিলিয়ে খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে আবারও দলকে বেকায়দায় ফেলেছে। যেখানে নিজ দলের ওয়েবসাইটেই বলা হয়েছে জিয়াউর রহমান দেশের ৭ম রাষ্ট্রপতি সেখানে নিজের দলের সিনিয়র নেতারা জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করা নিয়ে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন আর জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি না বলতে হাইকমান্ডের পরামর্শেও পাশাপাশি দলের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়ে বিষয়টি আপাতত ধামাচাপা দেয়ার কৌশল নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে কি ওয়েবসাইটে জিয়াউর রহমান দেশের ৭ম রাষ্ট্রপতি থাকায় ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির কোন নেতাই তা স্বীকার করেননি।

বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর ২০০৬ সালের ২৮ নবেম্বর থেকেই দেশের রাজপথ দখলে নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট। ১৪ দলের আন্দোলনের মুখেই ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ১/১১ পর সরকার ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। দলের অধিকাংশ নেতা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গ ত্যাগ করে তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সংস্কারপন্থী বিএনপি গঠন করে। একই দলের দুটি কমিটি প্যারালাল চলতে থাকায় বিএনপির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। এর কিছুদিন পর প্রথমে তারেক রহমান ও পরে একে একে খালেদা জিয়াসহ সংস্কারের বাইরে থাকা দলের প্রায় সব সিনিয়র নেতাকেই যৌথবাহিনী গ্রেফতার করে।

একপর্যায়ে খালেদা জিয়াসহ দলের অনেক সিনিয়র নেতাই মুক্তি পান। তবে তারেক রহমান মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে চলে যান। কিন্তু এতদিনে দলের যে ক্ষতি হয়ে গেছে বিএনপি তা পূরণ করতে পারেনি। এ কারণে দলের নাজুক পরিস্থিতিতেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ২৯টি আসন পায় দলটি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয় ও সরকারের কঠোরতা উপেক্ষা করে তখন আন্দোলনও করতে পারছিল না বিএনপি। এরই মধ্যে ২০১০ সালে খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সরকার। এর প্রতিবাদে হরতাল পালনের মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে দলটি। প্রথমে একা আন্দোলন করে না পেরে ৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। তাতেও কাজ না হওয়ায় পরে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করে বিএনপি। কিন্তু দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতার নামে মামলা থাকায় রাজপথের আন্দোলনে তেমন সক্রিয় হতে পারেনি তারা।

২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়ের পর থেকে ১৮ দলীয় জোটে বিএনপির শরিক দল জামায়াত সারাদেশে ব্যাপক তা-ব চালায়। এর দায়ভার বিএনপির ওপরও বর্তাতে থাকে। এর ফলে দেশে-বিদেশে বিএনপি চাপের মুখে পড়ে। এ কারণে এ বছর ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সে নির্বাচন প্রতিহত করতে সারাদেশে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেও আন্দোলন সফল করতে পারেনি। যে কারণে আওয়ামী লীগ তাদের সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে ফেলে এবং সরকারও গঠন করে ফেলে। এতে আরও নাজুক অবস্থায় পড়ে বিএনপি।

সূত্রমতে, বিএনপির একাংশ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে ছিল। কিন্তু সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মতামত না নিয়ে জোটের শরিক দল জামায়াতের কথায় দলীয় হাইকমান্ড নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ তাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠন করায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে আসে। এ কারণে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনও করতে পারছে না দলটি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে আবার বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো নাড়াচড়া দিতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে রাজপথের সহিংস আন্দোলনে জড়িয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এখন কারাগারে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় করা দুদকের এক মামলায় জড়িয়ে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ড. খন্দকার মোশারররফ হোসেনও এখন জেলে। এ ছাড়া সম্প্রতি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

সর্বশেষ জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে বিএনপি দেশে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করে। এ ঘটনার মাধ্যমেও বিএনপি রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়ে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করে। দলের ওয়েবসাইটে জিয়াউর রহমান দেশের ৭ নম্বর রাষ্ট্রপতি উল্লেখ থাকার পরও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র নেতারা জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে চরম বেকায়দায় পড়ার পর এখন বিএনপির ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই শনিবার থেকে আরকেও বিএনপির ওয়েবসাইট ওপেন করতে পারছে না।

উল্লেখ্য, ২৫ মার্চ লন্ডনের এক হোটেলে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। একই দিন ঢাকায় বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাও তারেক রহমানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলে দাবি করেন। এর পর ২৭ মার্চ রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রথমে ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এবং পরে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। পরদিন ২৮ মার্চ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াও বলেন, জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের এ বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। এমনকি দলের ভেতরও এ নিয়ে ক্ষোভ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। এ কারণে শনিবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) কাউন্সিল অধিবেশনে দীর্ঘ বক্তব্য রাখলেও একবারের জন্যও বলেননি জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

সারাদেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ২ দফায় ভাল ফলাফল করলেও শেষেরদিকে এসে সরকারী দলের কৌশলের কাছে হেরে যাওয়ায় আবারও দলের তৃণমূল পর্যায়ে হতাশা বেড়েছে। এ ছাড়া দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং-কোন্দল থাকায় দল গুছানোর কাজেও অগ্রগতি অর্জন করতে পারছে না দলটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলে সমস্যা থাকতেই পারে। বিভিন্ন কারণে দলে কিছু সমস্যা বিরাজমান থাকলেও এ সমস্যা থাকবে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সব সমস্যা অতিক্রম করে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.