![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বড় ধরনের নেতৃত্ব সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ নেতাদের বিচার, দ-াদেশ, ফাঁসি কার্যকর আর রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার খড়গ মাথায় নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা জামায়াত যেন দিনে দিনে দল পরিচালনা করার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। দলটি নিষিদ্ধের জন্য ইতিমধ্যে বিচারিক কর্মকা- শুরু হওয়ার পর আরো বেশি আতঙ্কে আছে জামায়াত। এ অবস্থায় দল চালানই কঠিন হয়ে পড়ছে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা দলটির। সরকারের নানামুখী চাপে থাকা দলটি নিজেদের রক্ষা, দলের অস্তিত্ব রক্ষা এবং দলের শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে বাঁচানোর জন্য দীর্ঘদিন সরকারবিরোধী আন্দোলন করলেও কোনো আন্দোলনই কার্যত সফলতার মুখ দেখেনি। বরং সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাদের সহিংসতার জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে বার বার। আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও আর নানামুখী সহিংসতার কারণে তাদের থেকে সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর এরই মধ্যে যখন জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে, তখন সরকারের প্রতিরোধের মুখে অনেকটা থমকে দাঁড়িয়েছে দলটি। একদিকে সরকারের চাপ, অন্যদিকে দলের শীর্ষ নেতাদের কারাবাস এবং বিচারের মুখোমুখি হয়ে দ-াদেশ প্রাপ্তি ও কার্যকর করাতে ওই শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা বঞ্চিত দলের নেতাকর্মীরা আছেন দুশ্চিন্তায়। ফলে হতাশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দলের সব কর্মকা-।
গত ২৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও তাদের তখনকার সহযোগী সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের দায়ী করে প্রসিকিউশনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এ দলের সাংগঠনিক কর্মকা-ও নিষিদ্ধের সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা মতিউর রহমান সাত মাস তদন্তের পর ওইদিন ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর হাতে ৩৭৩ পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদন তুলে দেন, যাতে ৯ হাজার ৫৫৭ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাজার পর গত বছর খোদ দলটির বিরুদ্ধে এ তদন্ত শুরু করেন প্রসিকিউটররা।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে জামায়াত নেতা ও দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর। এছাড়া আরেক সিনিয়র নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা আপিল বিভাগে আছে শেষ পর্যায়ে। দুই নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানেরও ফাঁসির রায় হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আরো চার নেতার বিচার চলছে ট্রাইব্যুনালে। এ অবস্থায় দলের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের বিচারের মুখোমুখি ও দ-াদেশ হতে থাকলে আগামীদিনে দলের হালধরা নিয়ে বড় ধরনের দুশ্চিন্তার মুখোমুখি হতে পারেন তারা।
দলের শীর্ষ নেতাদের বিচার ছাড়াও রাজনীতির মাঠে তাদের ওপর একের পর এক খড়গ আসছেই। আর তাই মানবতাবিরোধী অপরাধের হাত থেকে দলের নেতাদের পাশাপাশি রেহাই পাচ্ছে না দলটিও। এ অবস্থায় জামায়াতের বিচার শুরু নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিযুক্ত এ দলটি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার নিষিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক বিভিন্ন কৌশলে নাম পরিবর্তন করে দলটি আজো টিকে আছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর নতুন সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। ১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াতও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সব রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করে। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে অধ্যাপক গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। আর এর পরের ইতিহাস সবারই জানা। তাই এবার আবারো জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছে। সেই অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে গত বছর ১৮ আগস্ট।
এদিকে সরকার জামায়াতের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি দলকেও বিচারের মুখোমুখি করায় দলটির বর্তমান দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরাও আছেন অনেক চাপে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ বছর দলটির কোনো নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আড়ালে থেকেই আন্দোলন চালিয়েছেন দলের নেতারা। কখনো কেউ কেউ পর্দার সামনে এলেও সরকারের গ্রেফতার আর প্রতিরোধের মুখে টিকতে পারেননি তারা। ফলে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন মামলার দায়ে গ্রেফতার, বিচার, দ-াদেশ ও তা কার্যকর কিংবা দলের নিষিদ্ধ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে তা কতটা সামলাতে পারবেন দলের বর্তমান দায়িত্বরত নেতারা, সেটাও আজ প্রায় অনিশ্চিত।
জামায়াতের আগামী দিনের নেতৃত্ব ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার বিষয়ে কি ভাবছেন তারা জানতে চাইলে দলের এক নেতা ভোরের পাতাকে বলেন, ‘সরকার আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে। জামায়াত একটি নিবন্ধিত দল, সুতরাং এদেশে আমাদেরও রাজনীতি করার অধিকার আছে। কিন্তু বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে সরকার আমাদের স্তব্ধ করতে চাইছে।’
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলে কি করবে দলটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হবে কিনা সেটা সময়ের ব্যাপার। তবে আমরা আমাদের আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। আপাতত আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।’ তবে দলকে নিষিদ্ধ করা হলে আগামীতে নতুন ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নন এমন নেতাদের নিয়ে দল গোছাতে পারে জামায়াত।
©somewhere in net ltd.