![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, দলীয় পদ বা সামাজিক পদবি এক মানুষের জীবনে অমূল্য সম্পদ। কারণ নিজের কর্মের বিনিময়ে এসব অর্জন করতে হয়। যারা জাতিকে, সমাজকে পথ দেখায়, স্বপ্ন দেখায় এবং প্রগতির চাকা সামনের দিকে ঘোরায় তার বিনিময়ে জনগণ তাদের নানান সম্মানসূচক অভিধায় ভূষিত করে। এমনি এমনি জনগণ তাদের দেয় না। তারা জনগণকে সম্মান দেয় বলেই জনগণও তাদের সম্মানিত করে। যেমন শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালী জনগোষ্ঠীকে পথ দেখিয়েছিলেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন বলে বাঙালী জাতি তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘অবিসংবাদী নেতা’ ‘ইতিহাসের রাখালরাজা’ ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করে। শেখ মুজিব বাঙালীর আপন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই পদাধিকার বলেই তিনি ‘জাতির পিতা’। একইভাবে অনুন্নত, স্বল্প উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশ তথা বিশ্বের তাবৎ মুক্তিকামী মানুষের লড়াইয়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করায় ‘তৃতীয় বিশ্বের নেতা’। ইতিহাসের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণটি দেয়ায় ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে সম্মানিত করা হয়। ঠিক একইভাবে দেশ, জাতি, সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করায় এবং তাদের পথ দেখাবার বিনিময়ে বরিশালের একে ফজলুল হককে ‘শেরে বাংলা’, অবিভক্ত ভারতের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’, সুভাষ চন্দ্র বোসকে ‘নেতাজী’, ভারতের প্রতিষ্ঠাতা মোহন চাঁদ করম চাঁদ গান্ধীকে ‘মহাত্মা’, আধুনিক ভারতের কারিগর ইন্দিরা গান্ধীকে ‘প্রিয়দর্শিনী’, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাকে ‘কায়েদ-এ-আযম’, বিশ্বমানের কাব্য রচনা করায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির রবীন্দ্রনাথকে ‘বিশ্বকবি’, ইংরেজবিরোধী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী কবিতা রচনা করে কারানির্যাতন ভোগ করায় চুরুলিয়ার কাজীবাড়ির নজরুল ইসলামকে ‘বিদ্রোহী কবি’, ‘প্রেম ও দ্রোহের কবি’ অভিধায় সম্মানিত করা হয়। আগেই বলেছি এসব তাঁদের কর্মের বিনিময়ে অর্জন, অর্থের বিনিময়ে কেনা বা চামচাদের মতলবী লেবেল নয়।
আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামেও পদবি রয়েছে। যেমন শেখ হাসিনাকে বলা হয় ‘জননেত্রী’ আর খালেদা জিয়াকে ‘দেশনেত্রী’। এ ক্ষেত্রে যে কথাটি বলতে হয় তা হলো শেখ হাসিনাকে ‘জননেত্রী’ অভিধাটি ঘটা করে লাগানো নয় বা কোন মতলবী লেবেলও নয়; দেশের মানুষের মৌলিক মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী জনগণের সংগ্রামে আপোসহীন সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অভিধাটি তাঁর কপালে লাগে। খালেদা জিয়াকে যে ‘দেশনেত্রী’(?) বলা হয় তাতে স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন জাগে, তিনি কোন্ দেশের নেত্রী? বাংলাদেশ না অন্য কোন দেশের? কেননা, তাঁর প্রয়াত স্বামী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মিলিটারি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানী সামরিক জান্তার দালাল-রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের নিয়ে। খালেদা জিয়া তো পাকিস্তানের দালাল-এ-আযম গোলাম আযম-নিজামীদেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাহলে তিনি বাংলাদেশের নেত্রী হন কি করে? পাকিস্তান আমলে চীনপন্থী কমিউনিস্টদের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তুলতে। তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে, দিশা না পেয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দুইদিকে গুলি চালিয়েছিল। তাতেও কোন কাজ হয়নি। খুনী মুশতাকের সঙ্গে মিলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করায় স্বাভাবিক কারণে কোন সম্মানজনক অভিধা গায়ে লাগাতে পারেনি। বরং জিয়া ‘মিলিটারি কু-দেতা, ‘খুনী’ ইত্যাদি ধিক্কৃত রঙে চেহারা রাঙান। আর তাই খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্বে আসলে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে তৎকালীন দৈনিক দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদকের টেবিলে বসে নামের আগে ‘দেশনেত্রী’ শব্দ জুড়ে দেয়া হয়। যতদূর জানি এই শব্দের উদ্ভাবক দৈনিক দেশ-এর তখনকার বার্তা সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দিন খান। এতেও সন্তুষ্ট না হয়ে ‘আপোসহীন নেত্রী’ শব্দাবলী সেঁটে দেয়া হয়। প্রশ্ন জাগে, মিলিটারি স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে না থেকে যিনি কখনও ৪/৫ দিনের আত্মগোপন (১৯৮৫ সালে), জনশ্রুতি হলো সাভারে বা ২ দিনের আত্মগোপন যান (হোটেল পূর্বাণীতে (১৯৮৭ সালে), এতে তাকে পলায়নবাদী বলা যায়। আপোসহীন ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও মওলানা ভাসানী। প্রথমজন বাঙালীর জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সফল আর দ্বিতীয়জন বঙ্গবন্ধুরই নেতা ছিলেন। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, নিজ দল ভাসানী ন্যাপ-এর ওপর ভরসা না করতে পেরে বঙ্গবন্ধুকেই সারাজীবন সমর্থন দিয়েছেন। ভাসানী যাঁদের ওপর ভরসা করতে পারেননি, জিয়া তাঁদের নিয়েই দল করেন এবং খালেদা জিয়া সেই লিগাসির সঙ্গে বাড়তি হিসেবে চরম হিংস্র, জঙ্গীবাদী, স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করছেন।
আরেক শ্রেণী আছেন যারা মূল ধারার রাজনীতি বা রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করতে পারে না। এদের কর্মক্ষেত্রে রুটি-রুজি সবই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অনুদানের ওপর নির্ভরশীল, এসব সামাজিক প্রতিষ্ঠানও চলে কিছু বিদেশী শক্তি এবং তাদের এ দেশীয় এজেন্ট যারা চায় না বাংলাদেশ একটি শান্তির দেশ হোক, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাক এবং দেশের রাজনীতি পরিচালিত হোক মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে। এই অপশক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ঐ সব অযোগ্য লোকই নামের আগে আল হাজ, মওলানা, মুফতি, শায়খুল হাদিস, পীর ইত্যাদি পদবি লাগায়। আরেক গোষ্ঠী আছে যারা আবার ডক্টর, ব্যারিস্টার, অমুক গবেষক, তমুক বিশেষজ্ঞ লাগিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। কেউ কেউ আবার বাবার গ্রামের বাজারে ফুটপাথে বসে তেল-নুন বেচতেন, ছেলে ভূঞা, পাটোয়ারী, চৌধুরী লাগিয়ে সমাজকে ব্লাক মেল করে। যদিও ডক্টরেট ডিগ্রী আজ কিনতে পাওয়া যায়, ব্যারিস্টারও কোন ডিগ্রী নয়, ডিগ্রী হলো বার-এট-ল, আর একটু টাকা হলে (সে চুরি করে হোক আর ডাকাতি করে হোক), চৌধুরী, পাটোয়ারী, ভূঞা গায়ে লাগানো যায়। টাকাঅলা তো আবার মাফিয়ার মতোই বেপরোয়া, তাই কেউ কিছু বলে না। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয় এবং তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হলে সমাজ ভুল পথে পরিচালিত হয়। হচ্ছে।
॥ এক ॥
গল্প দিয়ে শুরু গল্প দিয়ে শেষ করব এই লেখা। অবশ্য গল্প না বলাই ভাল। কারণ ঘটনা গল্প নয়। বেশ আগের কথা। এখনও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ প্রফেসর ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী তখন সম্ভবত বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল, খালেদা জিয়া দলীয় প্রধান। তাঁর লেখাপড়া নিয়ে পার্লামেন্টে ডিবেট চলছেÑকতখানি লেখাপড়া জানেন, কোন্ কোন্ ক্লাস ডিঙিয়েছেন; মূলত এসব ডিবেটের বিষয় ছিল না। ডিবেট চলছিল তাঁর লেখাপড়ার একটা কল্পকাহিনী যখন বিএনপির কিছু আনাড়ি পার্লামেন্টারিয়ান পার্লামেন্টের কার্যবিবরণীতে ঢোকাবার চেষ্টা করছিলেন তখনি আওয়ামী লীগের কয়েকজন তাঁদের ভাষায় হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গার অর্থাৎ সত্যিকার চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস চালালেন। বিএনপি থেকে বলা হচ্ছিল, খালেদা দিনাজপুরের বা অন্য কোথাও এক কলেজে ডিগ্রী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন (ঠিক যেমন করে তাঁর জন্ম তারিখটা বানানো হলো ১৫ আগস্ট; এমন একটা দিন যেদিন বাঙালী জাতির হৃদয়ের স্পন্দন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ দিবস)। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের একজন সদস্য সম্ভবত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ফ্লোর নিয়ে বললেন, সত্যিকার চিত্র হচ্ছে খালেদা জিয়া ৬ সাবজেক্ট কম ম্যাট্রিক পাস। আরেকজন সুর মিলিয়ে বললেন, ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন সত্য এবং পাস করেছিলেন মাত্র ২ সাবজেক্টে এবং তা হলো ‘উর্দু’ আর ‘অংক’। ‘উর্দু’ অর্থাৎ পাকিস্তানের প্রতি প্রীতি আর ‘অংক’ অর্থাৎ অর্থের প্রতি ভালবাসা। প্রফেসর ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী তখন ফ্লোর নিয়ে বললেন, ম্যাডাম কি লেখাপড়া জানেন বা কোন্ কোন্ ক্লাস পর্যন্ত পড়েছেন তা কোন আলোচনার বিষয় হতে পারে না। আমাদের মহানবী হযরত মুহম্মদ মোস্তফা (সঃ) ও ‘উম্মি’ ছিলেন, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া ছিল না। সেদিন অনেকেই জিহ্বায় কামড় দিয়েছিলেন, বলে কি এই অধ্যাপক ভদ্রলোক? কার সঙ্গে কার তুলনা?
প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছিল এবং সম্ভবত এ কারণেই সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে খালেদা জিয়াকে খুশি করা দরকার ছিল তার। মিলিটারি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেদিন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিহত হলেন, ব্রাশ ফায়ারে ফায়ারে তার বুক-পেট ঝাঁঝরা হচ্ছিল তখনও বদরদ্দোজা চৌধুরী সার্কিট হাউজেই জিয়ার পাশের কক্ষে অবস্থান করছিলেন এবং অক্ষত অবস্থায়ই ঢাকা ফিরে এসেছিলেন। কাজেই একটা ভয় তার মধ্যে সব সময় কাজ করছিল এই বুঝি পুলিশ এলো? তাই তো খালেদা জিয়াকে খুশি রাখার অর্থাৎ গুড হিউমারে রাখার একটা চেষ্টা ছিল তার মধ্যে। নইলে রাসুলুল্লাহর (সঃ) সঙ্গে তাঁর এক উম্মতের তুলনা? যে মহানবী সম্পর্কে কোন এক উর্দু কবি বলেছেন- ‘‘মুহম্মদ কো খোদা ফয়দা না করতে, জমিন ও আসমাঁ কুছ ভি ফয়দা না হোতে।”
এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হলো না প্রফেসর সাহেবের। খালেদা জিয়া তাঁকে রাষ্ট্রপতি বানালেন। তিনি ভাবলেন আর ভয় নেই। এবার নির্ভয়ে রাজনীতি করা যাবে। কিন্তু না রাষ্ট্রপতির চেয়ারটাই চলে গেলো। তাতেও শেষ রক্ষা হলো না, খালেদা- তারেকের ক্যাডার বাহিনীর ধাওয়া এবং পদাঘাতের সচিত্র প্রতিবেদন তখন স্যাটেলাইট টিভির মাধ্যমে জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। বাইরের দুনিয়া ও রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় সেই দৌড় দৌড়-সালাহউদ্দিনের ম্যারাথনকেও হার মানিয়েছিল যেন।
কয়েকদিন আগে আরেক তরুণ নেতার আবির্ভাব ঘটল। দেখলাম গভীর রাতের একটি টিভি চ্যানেলের গলাবাজিতে খালেদা জিয়ার এক আইন পরামর্শদাতার নাম অসীম, আওয়ামী লীগের এক তরুণ নেতার খালেদা জিয়ার দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা সম্পর্কিত মন্তব্যের জবাবে বলছিলেন,‘ম্যাডাম অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা। সালাতে তাহাজ্জত পড়ে তিনি ঘুমাতে যান বলেই সকালে একটু দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন।’ আরেকবার জিহ্বায় কামড় পড়ার অবস্থা। রাত ক’টা পর্যন্ত জাগেন তা বলেননি। আমরা জানি, সাধারণত তাহাজ্জত নামাজ পড়া হয় রাতের শেষার্ধে ফজরের আগ পর্যন্ত। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন চলে আসে তবে ফজরের নামাজ কখন পড়েন? তাছাড়া ফজরের নামাজ হচ্ছে ফরজ এবং এই নামাজ কোন কারণে পড়তে না পারলে ‘কাজা’ পড়তে হয়। নইলে কবিরা গুনাহ হয়। তাছাড়া একজন মুসলমানের মুসলমানিত্বের জন্য ৫টি পূর্বশর্ত বা ফরজ রয়েছে। যেমন ১. ঈমান অর্থাৎ মানুষ, বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ মোস্তফা (সঃ) এঁর ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন; ২. নামাজ ৩. রোজা ৪. হজ ৫. যাকাত। এই ৫টির মূল হচ্ছে ঈমান এবং ঈমান মুসলমানের মুসলমানিত্বের ভিত্তি এবং ফরজ। তারপরের ২টি ফরজÑযেমন নামাজ ও রোজা। এই ২টিও সব মুসলমানের জন্য ফরজ বা অবশ্য করণীয়। ৪র্থ এবং ৫ম ‘হজ’ এবং ‘যাকাত’ কেবল আর্থিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণদের জন্যই ফরজ। অন্যদের জন্য ফরজ নয়। কাজেই কোন মানুষের ভাবমূর্তি গড়ার জন্য বানোয়াট কল্পকাহিনী সেই মানুষটির আত্মাকেই আঘাত করে। মানুষের ভাবমূর্তি ও ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে তার কর্মে, আচার-আচরণে, জ্ঞান এবং যা যা করছেন তা সৎভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে করছেন কিনা, তার ওপর। মিথ্যার ওপর কোন কিছু দাঁড়ায় না। মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত ঘর তাসের ঘর, সামান্য বাতাসেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
॥ দুই ॥
ইদানীং আবার এক ইতিহাস বিশেষজ্ঞের আবির্ভাব ঘটেছে। অবশ্য কেবল ইতিহাস বিশেষজ্ঞ বললে কম বলা হবে, সেই সঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, রাজনীতি বিশেষজ্ঞ বলতে। লেখাপড়া নেই, তিনবার, চারবার করে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি, এইচএসসি পাস তাও কোন রকমে এবং ঢাকার বাইরে গিয়ে নকলের পরীক্ষা দিয়ে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। নাম তার তারেক রহমান-মিলিটারি জিয়া ও জামায়াত-হেফাজতি নেত্রী খালেদা দম্পতির জ্যেষ্ঠপুত্র। হাওয়া ভবন-খোয়াব ভবনে জাল পেতে বিলিয়ন ডলার পাচার করে, মামলা খেয়ে এখন লন্ডনে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে ধনাঢ্য জীবন যাপন করছেন। অবশ্যই পুলিশের খাতায় পলাতক। তাকে অনেকে অর্বাচীন বলেছে। সম্প্রতি তিনি কয়েকটি বিতর্কিত কথা বলেছেন।
১. জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।
২. বঙ্গবন্ধু অবৈধভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি।
৩. এর আগে বলেছে ’৭২-এর সংবিধানে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফেরেন।
এক এক করে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হলে অন্তত তিনটে কলাম লিখতে হবে। তবু বলছি স্বাধীনতার ঘোষক, নেতা, সর্বাধিনায়ক, প্রথম রাষ্ট্রপতি যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন বলছেন ‘জিয়া প্রথম রাষ্ট্রপতি’। অথচ তারেকের বাপ নিজেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন ২৭ তারিখ সাড়ে ৭ টায় ড়হ নবযধষভ ড়ভ ড়ঁৎ এৎবধঃ খবধফবৎ ইধহমধনধহফযঁ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ বলে। অতএব এক নং বিতর্কের প্রশ্নে আর কোন জবাব দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তাছাড়া আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে-আহ্বানে, ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধে গেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, আমাদের সামনে এসব বিতর্ক তুলে কোন লাভ হবে। তাছাড়া স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার বা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সুপ্রীম কমান্ডার বঙ্গবন্ধু হয়েছিল ’৭০-এর নির্বাচনের ম্যাডেন্ট বা নিরঙ্কুশ গণরায়ের ভিত্তিতে। এসব তারেক আর তার মার জানার কথা নয়, তারা তখন ছিলেন ক্যান্টনমেন্টের পাকিস্তানী জেনারেলের তত্ত্বাবধানে আরাম-আয়েশে; তারা জানবেন কি করে। ’৭২-এর সংবিধান কিভাবে রচিত হয়েছে, কি কি আদর্শের ভিত্তিতে হয়েছে, কিংবা বঙ্গবন্ধু যেখানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হলো কিংবা ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে ১১ জানুয়ারি কিভাবে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতি রূপান্তর এবং বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করে নিজে প্রধানমন্ত্রী হলেন, এসব তারেকদের মাতা-পুত্রের বোঝার কথা নয়। তার আর বেশি বলছি না। এটুকুও বলতাম না, যদি না জানতাম তারেকের মুখ দিয়ে আইএসআইর রেকর্ড বাজছে।
॥ তিন ॥
ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মতো বিএনপির আরেক সেক্রেটারি জেনারেল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অবশ্য তিনি ভারপ্রাপ্ত, মানে ভারাক্রান্ত, তাই যা মুখে আসে তাই বলছেন। তারেক রহমানের ইতিহাসের জ্ঞান তুলে ধরে (টিভিতে দেখলাম) ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে তুলনা করছেন। বলুন এই পাগলদের ব্যাপারে কথা বলা তো নিজেকেই ছোট করা। এটুকুও বললাম কেবল এ জন্য যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হবার পর থেকে পরাজিত পাকিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তারই মাউথপিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তারেক রহমান।
©somewhere in net ltd.