![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
>>শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভি (রহ.)-এর বিশ্লেষকধর্মী নিরীক্ষা থেকে অবহিত হওয়া যায় যে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। পাপের শাস্তি অবশ্যম্ভাবী। এই শাস্তি, পার্থিব জগতে যেমন বলবৎ হয়, তেমনি অপার্থিব জগতেও আরোপিত হয়। এ থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না। যে পাপী বলে শনাক্তকৃত হয়ে যায়, তার রেহাই নেই। এজন্য পাপের সংজ্ঞা ও স্তর এবং পাপের কুফল সম্পর্কে অবগতি লাভ করা সবারই দরকার। আসুন এবার সে দিকে লক্ষ্য করা যাক।
পাপের সংজ্ঞা ও স্তর : মানুষের অনেক কাজ আছে যা আনুগত্যের অঙ্গ। তেমনি বহু পদ্ধতি আছে যদ্বারা আনুগত্য অর্জিত হয়। তদ্বারা পশু প্রবৃত্তির ফিরিশতা স্বভাবের অনুগত হওয়ার কথা জানা যায়। তেমনি এমন সব কাজ স্থান ও পদ্ধতি রয়েছে যদ্বারা নাফরমানীর অবস্থা জানা যায়। সেগুলোকেই বলা হয় পাপ। এ পাপগুলোর বিভিন্ন স্তর রয়েছে।
১। সেই পাপ যা মানুষের উন্নতির পথ একেবারেই রুদ্ধ করে দেয়। এ ধরনের বড় পাপ দু’ধরনের হয়ে থাকে। একটি ধরন হচ্ছে, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক যুক্ত। তা হচ্ছে নিজ প্রভুর পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞতা কিংবা সৃষ্টির গুণ দিয়ে ¯্রষ্টাকে পরিমাপ করা। অর্থাৎ সৃষ্টির গুণই ¯্রষ্টার ব্যাপারে প্রমাণ করা কিংবা ¯্রষ্টার গুণ সৃষ্টির ব্যাপারে প্রয়োগ করা। দ্বিতীয় ধরন হচ্ছে, উপমাগত পাপ। এগুলোই হচ্ছে শিরক।
কারণ আত্মা তখনই পবিত্র ধারণার অধিকারী হয়, যখন তা নিরাকার প্রভুর নিখিল সৃষ্টির সার্বিক পরিচালকের ব্যাপারে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে সক্ষম হয়। এ বিরাট চিন্তাশক্তি যে হারিয়ে বসে, সে স্বভাবতই নিজের ক্ষুদ্র গ-ির তেভর আবদ্ধ হয়ে যায়। তার অপরিচিতি ও অস্বীকৃতির দেয়াল কখনও ভাঙে না। তাই আল্লাহর পরিচয়ের ক্ষেত্রে সূচাগ্র পরিমাণ দখলও অর্জন করতে পারে না। এটাই সবচাইতে বড় বিপদ।
(২) মানুষ এ ধ্যান-ধারণা পোষণ করে যে, আত্মার উৎস হলো এ দেহ, এছাড়া অন্য কোনো ঠাঁই নেই। এ পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন, এছাড়া অন্য কোনো জীবন নেই। তাই পার্থিব জীবনের উন্নয়ন ও সাফল্য ছাড়া আর কিছুই করার নেই। অন্তরে যদি এ বিশ্বাসটি জমে থাকে, তাহলে তার জন্য আত্মিক উন্নয়ন ও সাফল্য অর্জনের দিকে দৃষ্টিপাতের কোনোই পথ থাকে না।
যখন মানবিক পূর্ণতা অর্জন বলতে জৈবিক উন্নয়ন ছাড়া অন্য কিছু বুঝবে, তখন জনসাধারণ সেটাই অর্জনের জন্য চেষ্টা করবে। আর তা তখনই সম্ভব হবে, যখন সব দিক দিয়েই সে বস্তুগত উন্নয়নের বিপরীত চিন্তাভাবনা করবে। যদি তা না হলো, তা হলে জৈবিক উন্নয়ন ও আত্মিক উন্নয়ন পরস্পর বিপরীত ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। ফলে মানুষ আত্মিক উন্নয়ন ছেড়ে জৈবিক উন্নয়নের দিকে ঝুঁকে পড়বে। তাই সে জন্য একটি সতর্ক ঘণ্টা ঠিক করা হলোÑ আর তা হচ্ছে কেয়ামত ও আল্লাহর সাথে মোলাকাতের ওপর ঈমান আনা। নি¤œ আয়াতে এটাই তাৎপর্য :
অর্থাৎ ‘যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর সত্য অস্বীকারকারী হয় ও অহংকারী হয়।’
মোট কথা মানুষ যখন অনুরূপ পাপের ওপর মারা যায়, আর তার জৈবিক শক্তি ধ্বংস হয়, তখন ঊর্ধ্বজগত থেকে চরম ঘৃণা এসে তাকে আচ্ছন্ন করে। তা থেকে সে আর কখনও মুক্তি পায় না।
(২) পাপের দ্বিতীয় স্তর এই যে, জৈবিক শক্তির দম্ভে মানুষ যে সব ফজিলতের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সেগুলো আল্লাহ তাআলা তার পূর্ণত্ব ও সাফল্য লাভের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। যেহেতু, সর্বোচ্চ পরিষদ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পয়গাম্বর ও শরীয়তের মাধ্যমে সেগুলো প্রকাশ ও তার মর্যাদা উঁচু করার ইচ্ছা পোষণ করে, তাই তা অস্বীকারকারী মূলত তাদের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয়। তাই যখন সে মারা যায়, তখন সর্বোচ্চ পরিষদের সব সদস্য তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। তারা তাকে শাস্তি দেয়ার পক্ষপাতি হয়। তখন তার পাপ তাকে এরূপ ঘিরে ফেলে যে, তা থেকে তার আর বেরুবার পথ থাকে না। যেহেতু, সে তার যথার্থ যোগ্যতা ও গুণ সম্পর্কে অনবহিত থাকে, কিংবা যদি কিছুটা অবহিতও থাকে কিন্তু তা অপর্যাপ্ত, তাই তার এ দুর্গটি থেকে আর রেহাই মেলে না। পাপের এ স্তরটি মানুষকে সকল নবীর ধর্ম থেকেই বাইরে রাখে।
(৩) পাপের তৃতীয় স্তর এই যে, মানুষ তার মুক্তির পথ বর্জন করে অভিশপ্ত পথ অনুসরণ করে। কিংবা সে এমন কাজ করে যাতে পৃথিবীতে বড় ধরনের বিপদ ও ফ্যাসাদ সৃষ্টির আশকা দেখা দেয়। কিংবা সে সব কাজ সচ্চরিত্রতা ও সভ্যতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ স্তরের পাপের কয়েকটি ধরন রয়েছে।
এক, সে শরীয়তের সে বিধানগুলো মেনে চলে না যদ্বারা আনুগত্য অর্জিত হয়।
দুই, আনুগত্যের কাজে তার কিছু না কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ও শৈথিল্য থেকে যায়।
শরীয়তের অনুসরণ মানুষের জন্য পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্নরূপ হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি পশু প্রবৃত্তিতে ডুবে আছে; আর ফেরেশতা স্বভাব যার নিস্তেজ হয়ে গেছে, তার জন্যে শরীয়তের বেশি বেশি বিধান প্রয়োজন। তেমনি যার ভেতর পশু প্রবৃত্তি খুবই শক্তিশালী ও মজবুত, তার জন্য শরীয়তের কষ্টকর বিধান বেশি করে অনুসরণ করা প্রয়োজন।
পাপ কাজগুলোর ভেতর কিছু কাজ আছে হিং¯্র প্রকৃতির। সেগুলো সর্বাধিক অভিশপ্ত। যেমন হত্যা, ধর্ষণ, ব্যাভিচার ইত্যাদি। তেমনি জনক্ষতিকর কাজ। যেমন জুয়া, সুদ প্রভৃতি। এ তিন ধরনের পাপ আত্মাকে মেরে ফেলে। কারণ তা হচ্ছে সরল সত্য পথের পরিপন্থী। আমি তা আগেই বলে এসেছি।
এ পাপগুলোর কারণে সর্বোচ্চ কারণে সর্বোচ্চ পরিষদ থেকে, এরূপ অভিশাপ বর্ষিত হয় যা মানুষকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। পাপ ও অভিশাপের সমন্বয় ঘটলে শাস্তি অপরিহার্য হয়ে যায়।
তৃতীয় স্তরটি সব পাপের সেরা পাপ। পবিত্র মজলিসে এর হারাম হওয়াও এর অনুসারীর ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করার পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে। সব নবী-রসূলই এগুলো ক্রমাগতভাবে বলে গেছেন। এ পাপগুলোর অধিকাংশের ব্যাপারেই সব নবীর শরীয়ত মতৈক্য রয়েছে।
চতুর্থ স্তরের পাপ হচ্ছেÑ সে সব শরীয়ত ও তরীকাতের নাফরমানী করা যেগুলো জামানা ও জাতির পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে থাকে। তার কারণ এই যে, আল্লাহপাক যখন কোনো জাতির কাছে কোনো নবী পাঠান তাদের আঁধার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য, তখন তাকে দায়িত্ব দেন তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে তাদের ভেতর ন্যায়ের অনুশাসন চালু করার। তখন তাকে এমন সব কাজ দিয়ে পাঠানো হয় যেগুলো ছাড়া সংশোধন ও অনুশাসন চলতে পারে না। এ কারণে প্রত্যেকটি বিশেষ উদ্দেশ্যের একটি স্থায়ী অথবা দীর্ঘস্থায়ী মানদ- থাকে। আর সে ভিত্তিতেই তাদের জাবাবদিহি হতে হয়। প্রত্যেক কাজের জন্য সময় নির্ধারিত করার প্রয়োজনীয় রীতি থাকে। কোনো কোনো কাজ ভালো কিংবা ধ্বংসের হয়ে থাকে। আর সে বিচারেই তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
কিছু কাজ তার আদিষ্ট বা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণের সাথে সংযুক্ত থাকে। কিছু কাজের সে সংযুক্ততা থাকেনা। তার ভেতর স্বল্প সংখ্যক কাজের ব্যাপারে প্রকাশ্য ওহী নাযিল হয়েছে। কিন্তু তার অধিকাংশই নবীদের ইজতেহাদ থেকে প্রমাণিত হয়েছে।
(৫) পাপের পঞ্চম স্তর হচ্ছে সে সব পাপ, শরীয়ত প্রণেতা যে ব্যাপারে খুলে কিছু বলেননি এবং সর্বোচ্চ মজলিসেও তার কোনো নির্দেশ বা মতামত নেই। কিন্তু বান্দা যখন সাহস করে খোদার দিকে পুরোপুরিে মনোসংযোগ করে তখন তার কেয়াস কিংবা উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে যে কোনো কিছুর আদেশ অথবা নিষেধ সম্পর্কে জানতে পারে। যেভাবে কোনো সাধারণ ব্যক্তি বিজ্ঞ ডাক্তারের বিশেষ রোগের জন্য দেয়া প্রেসক্রিপশন থেকে অপূর্ণ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কোন ওষুধের কি প্রভাব তা বুঝতে পায়, অথচ না সে প্রভাবের কারণ জানে আর না ডাক্তার তাকে তা বলে দিয়েছে, এও তেমনি ব্যাপার। এ ধরনের ব্যাপার উপেক্ষা করলেও মানুষ দায়মুক্ত হতে পারে না।
তার এ কেয়াসলব্ধ ও বিবেক নির্দেশিত কাজ উপেক্ষা করলে তার ও খোদার মাঝে এক আবরণ সৃষ্টি হয় এবং এজন্য তাকে জবাবদিহি হতে হবে। এ নিষিদ্ধ কাজ বর্জন করাটাই তাকওয়ার কাজ। অবশ্য এমন লোকও রয়েছেন যারা এ ধরনের পাপ বর্জন করা ও পুণ্য অর্জন করাকে ওয়াজিব মনে করেন। আল্লাহ পাকও তাদের জন্য তা ওয়াজিব হিসেবে বিবেচনা করেন। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেন : ‘বান্দা আমার ব্যাপারে যেরূপ ধারণা পোষণ করে আমি তার ব্যাপারে সেরূপই হয়ে থাকি। কোরাআনে পাকে বলা হয়েছে :
অর্থাৎ তারা নিজেদের তরফ থেকে বৈরাগ্য গ্রহণ করেছিল। আমি তাদের জন্যে তা লিখেছিলাম না। কিন্তু তারা খোদাকে খুশি করার জন্য তা করেছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : অর্থাৎ নিজেদের উপর কাঠিন্য চাপিওনা, তাহলে আল্লাহও তোমাদের ওপর সে কাঠিন্য বলবৎ করবেন।
রাসূল (সা.) আরও বলেন : তোমাদের মনে যাতে খটকা লাগে সেটাও পাপ। কোনো মুজতাহিদের ইজতেহাদে প্রমাণিত হুকুমের নাফরমানী এ স্তরের পাপেরই সমগোত্রীয় পাপ।
পাপের কুফল : বড় পাপ ও ছোট পাপ নির্ধারিত দু’ভাবে হয়ে থাকে। এক, পুণ্য ও পাপের গূঢ় রহস্যের ভিত্তিতে।
দুই, শরীয়ত ও তরীকতের ভিত্তিতে যা বিশেষ যুগের সাথে নির্দিষ্ট হয়ে থাকে।
তত্ত্বগত কারণে নির্ধারিত কবীরা গুনাহ সেটাকে বলা হয়, যার জন্য কবর ও হাশরের শাস্তি অপরিহার্য এবং মানব জাতির সভ্যতা ও শৃঙ্খলা বিধ্বস্ত হয়। এমন কি তা মানুষের সহজাত স্বভাবেরও পরিপন্থী। পক্ষান্তরে সগীরা গোনাহ সেটাকেও বলা হয়, যা কবীরা গুনাহ নয় বটে, কিন্তু কবীরা গুনাহর পথ খুলে দেয় এবং তা থেকে কবীরা গুনাহের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। যেমন এক ব্যক্তি আল্লাহর পথে খরচ করে, কিন্তু তার পরিবারবর্গ ভুখা-ফাকা থেকে মরণাপন্ন হয়। সে লোক কার্পণ্যের হীনতা তো দূর করে বটে কিন্তু পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে থাকে।
যুগের সাথে নির্দিষ্ট বিশেষ শরীয়তের ভিত্তিতে পাপ সেটাকেই বলা হয়, যা সে শরীয়তে হারাম হওয়া প্রমাণিত হয় কিংবা শরীয়ত প্রণেতা যে কাজের জন্য দোযখের শাস্তির কথা বলেছেন কিংবা যা করার কারণে কাফের অথবা মুরতাদ সাব্যস্ত করা হয়। এরূপ পাপই বড় পাপ বা কবীরা গুনাহ।
অনেক সময় এমনও হয় যে, পাপ-পুণ্যে তত্ত্বগত বিচারে যা ছোট পাপ তা শরীয়তের মাণদ-ে বড় পাপ। তার উদাহরণ এই যে, জাহেলী যুগের কোন সম্প্রদায় কখনো কোনো একটি অন্যায় কাজ পছন্দ করল, আর সেটাকে সামাজিক রীতিতে পরিণত করল। তখন তা থেকে তাদের কারো বেরিয়ে আসা যেন তাদের অন্তর চূর্ণবিচূর্ণ হওয়ার শামিল। অতঃপর শরীয়ত এসে তাদের সে কুপ্রথা থেকে বিরত থাকতে বলল। অথচ তারা তা মেনে না নিয়ে সদম্ভে শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণে লেগে গেল। তাদের এ দম্ভ ও জিদের কারণে শরীয়তও কঠিন হয়ে গেল। অবশেষে সে পাপ অনুসরণ করাটা মিল্লাতের সাথে দুশমনী করার পর্যায়ে চলে গেল। সুতরাং এরূপ পাপ কেবল মরদুদ ও নাফরমানের পক্ষেই সম্ভব হতে পারে। সে না আল্লাহকে পরোয়া করে, না মিল্লাতের তোয়াক্কা করে । এ কারণেই এরূপ পাপকে কবীরা গুণাহের অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
মোটকথা শরীয়তের মানদ-ে নির্ধারিত কবীরাগুনাহ নিয়ে আমি এ গ্রন্থের দ্বিতীয় খ-ে আলোচনা করব। কারণ, সেটাই এ ব্যাপারে আলোচনার নির্ধারিত স্থান। এখানে সে পাপের কুফল নিয়ে আলোচনা করব, যা তত্ত্বগত কারণে পাপ বলে বিবেচিত। আমি যেভাবে পাপের স্তরগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করেছি। কুফলও সেভাবে সংক্ষেপে বর্ণনা করব।
কবীরা গুনাহ সম্পর্কে এ মতভেদ রয়েছে যে, তা করে কেউ তওবা ছাড়া মারা গেলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন কি-না? প্রত্যেক দলই নিজের সপক্ষে কোরআন ও সুন্নাহ থেকে দলিল পেশ করছেন। আমার মতে, এ মতানৈক্যের সমাধান হচ্ছে এই যে, আল্লাহ পাকের কাজ দু’ধরনের হয়ে থাকে :
এক, আল্লাহ পাক প্রতিনিয়ত নিজ মর্জি মোতাবেক যে সব কাজ স্বাভাবিক পদ্ধতিতে ঘটিয়ে থাকেন।
দুই, বিশেষ কারণে স্বাভাবিক পদ্ধতি ভঙ্গ করে যে কাজ সম্পাদন করেন।
যে বাক্যটি নিয়ে মানুষ মতানৈক্যের শিকার হয়েছে তাও দু’ধরনের। এক, স্বাভাবিক পদ্ধতির, দুই, স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক উভয় পদ্ধতির। অথচ বিরোধ সৃষ্টির জন্য বাক্যটির ধরন এক হওয়া চাই। তর্কশাস্ত্রবিদরা বাক্যের একই ধরন হওয়ার অপরিহার্যতা প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন। কখনও কোনো বাক্যের দিকই উল্লেখ থাকে না। তখন সেখানে কোরআন খুলে দেখা দরকার। যেমন, বলা হলো, ‘যে বিষ পান করে, সে মারা যায়।’ এ বাক্যটি স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই যা ঘটে সেটাই ব্যক্ত করেছে। কিন্তু সেখানে এটা বলা হয় না যে, বিষ পান যে করবে সে মরেই যাবে। কারণ, অস্বাবিক পদ্ধতিতে সে বেঁচেও যেতে পারে।
এ কারণেই মূলত আলোচ্য ব্যাপারটি বিতর্কিত ব্যাপার নয়। পৃথিবীতেও আমরা আল্লাহ পাকের স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক কাজের যথেষ্ট উদাহরণ দেখতে পাই। যেভাবে আখেরাতেও তার উভয় ধরনের কাজ প্রকাশ পাবে। স্বাভাবিক নিয়ম তো এটাই যে, বড় পাপ করে তওবা ছাড়া যে লোক মারা যাবে সে দীর্ঘকাল ধরে শাস্তি পাবে। কিন্তু আল্লাহ পাক সে নিয়ম ভঙ্গ করে তাকে ক্ষমাও করতে পারেন।
বান্দার হকের ব্যাপারটিও তাই। তবে কবীরা গুনাহ করলে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে এটা ঠিক নয়। আল্লাহ পাকের নীতিও এটা নয় যে, তিনি কবীরা গুনাহর গুনাহগারকে কাফেরের সাথে একাকার করে শাস্তি দেবেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সুতরাং , আজকের দিনে গনহত্তা করে যারা পারপাবেন ভাবছেন -তা হবার নয়.....................
©somewhere in net ltd.