![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্লাস ফোরের ফাইনাল পরীক্ষার দুই মাস আগে আব্বা কিশোরগন্জের কালিয়াচাপড়া সুগার মিলে বদলি হয়ে আসলো। কলোনিতে নতুন বাসায় উঠার সপ্তাহখানেক পর হঠাৎ একদিন কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি, আমার বয়সি এক মেয়ে দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে সে সাবলিল ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো, তুমি মাসুম না? আমি হ্যা বলায় সে বললো, তুমি গতবারের ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্ন খুজছিলে, তোমার জন্য প্রশ্ন নিয়ে আসছি। আর আমি লিমা ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমি অবাক হয়েছিলাম, কারন আমি কারো কাছে প্রশ্নের কথা বলি নি। সেটা বুঝতে না দিয়ে আমি তাকে বললাম আপা ভেতরে আসেন।
এমন শুভাকাঙ্খির সাথে ভালো সম্পর্ক না হয়ে পারে না। সময়ের সাথে সাথে লিমা আপার সাথে অনেক বিষয়ে লেনদেন শুরু হলো। উনি গল্পের বই পেলে আমাকে দেয়, আমি উনাকে দেই। লিমা আপা ছড়া লিখলে আমাকে পড়ায়, আমি কিছু লিখলে লিমা আপাকে পড়তে দেই।
লিমা আপার বাবা সুগার মিলে এগ্রোনোমিস্ট ছিলেন। আমরা ছোটরা এগ্রোনোমিস্ট উচ্চারণ করতে পারতাম না, আমরা বলতাম এগারো মিনিট চাচা।
চাচা যখন কৃষি ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, সে সময় মুক্তিযুদ্ধ চলছিলো। যুদ্ধের সময় চাচা যে বার বাড়ি গেলো, সেবার তাদের বাড়িতে আর্মি আসলো। বাড়ির সবাইকে পাকিস্থানী আর্মিরা লাইনে দাড়া করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। চাচা গুলির শব্দে আগেই অজ্ঞান হয়ে পরে যান। পরে যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখতে পান উনার পরিবারের সবাই মৃত। উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
তখন ১৯৯৮-৯৯ সাল হবে, একদিন খবর পেলাম চাচা এক্সিডেন্টে মারা গেছেন। চাচার পোষ্টিং তখন রংপুর সুগার মিলের সাহেবগন্জ ফার্মে। সাহেবগন্জ ফার্ম সেই বিখ্যাত ফার্ম যেটাতে কিছুদিন আগে সাওতাল বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে।ফার্ম থেকে রংপুর সুগার মিল কলোনি ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। কোন একদিন চাচা টেম্পোতে করে বাসায় আসার পথে টেম্পো এক্সিডেন্ট করে, উনি মাথায় ব্যাথা পান এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
ফেসবুকের এই যুগেও লিমা আপার সাথে আমার যোগাযোগ নাই। এখন হয়তো উনি আমাকে চিনবে না, আমিও উনার চেহারা মনে করতে পারবো না। ছোটবেলার এই অদ্ভুত বড় বোনটি ভালো থাকুক।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৫
হাসান মাসুম বলেছেন: সুগার মিলের এক্সপেরিমেন্টাল ফার্মগুলো অবহেলিত, এদের জন্য কোন গাড়ি থাকে না। যেহেতু ফার্মটা মিল বা কলোনি থেকে ১৫/২০ কিলোমিটার দূরে এবং ঐ অন্চলে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিলো টেম্পো সে কারনে উনাকে টেম্পোতেই যেতে হত। সাহেবগন্জে যেটা বানিজ্যিক খামার তার কর্মকর্তা ব্যবহারের জন্য জিপ পেতো। মন্ত্যবের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
"কোন একদিন চাচা টেম্পোতে করে বাসায় আসার পথে টেম্পো এক্সিডেন্ট করে, উনি মাথায় ব্যাথা পান এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। "
-সুগার মিলের অফিসারকে টেম্পোতে উঠতে হলো?