নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রাণের টানে

হাসান মাসুম

হাসান মাসুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা বিড়াল

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৩৭

বিড়ালটা আমার রুমের দরজার সামনে বসে করুন স্বরে ডাকছে। আমি তাড়িয়ে দিলে আবার কিছুক্ষন পর আসছে। আমি নিজেকে অপরাধী বোধ করছি। আমি ওর বাচ্চা তিনটার মৃত্যুর জন্য দায়ী।

ঘটনা গতকালের, তার আগে একটু পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান মাস্টার্স পরীক্ষার আমার কলেজের কমিটিতে আমি আছি। আজ একটা পরীক্ষা হলো। এ সময়টা কলেজে গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকে। গত ১৭/১৮ দিন ধরে কলেজ বন্ধ, ডরমিটরির কোন শিক্ষকই ডরমিটরিতে ছিলো না। আমি মানিকগন্জ থেকে টাঙ্গাইলে কয়েকদিন এসে কাজ করে আবার চলে গেছি।
আজ যেহেতু পরীক্ষা ছিলো সেহেতু গতকাল সকালেই কলেজে আসছি।

ফাকা ডরমিটরিতে রুমের দরজা খুলেই একটা ধাক্কা খেলাম। আমার ভাজ করে রাখা বিছানার তোষকের উপর ফুটফুটে তিনটা বিড়ালের বাচ্চা। আমার কাজের তাড়া ছিলো, বাচ্চা তিনটাকে পেপারের উপর নিয়ে ডরমিটরির গেটের কাছে রেখে আমি কাজে চলে গেলাম। মা বিড়ালটার আশেপাশেই থাকার কথা এবং বিড়ালটা বাচ্চাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেবে সেটাই ভাবছিলাম।

কাজের কোন এক ফাকে ডরমিটরির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কাকদের দেখলাম বাচ্চাগুলোর কাছাকাছি। আমি ফিরে এসে আমাদের এক পিয়নকে বললাম বাচ্চাগুলোকে নিরাপদ কোথাও রাখতে। তারপর কাজের ব্যস্ততায় বাচ্চাগুলোর কথা ভুলে গেছি। বিকেলের দিকে গেটের কাছে বাচ্চাগুলোকে আর দেখিনি।

রাত ৮টার দিকে ডরমিটরিতে ফিরতেই বিড়ালটা আমার পিছে পিছে রুমে এসে করুণ স্বরে ডাকছে। তাড়িয়ে দিলে আবার আসছে।

গতকাল রাতে ঘুমানোর আগে বিদ্যুত চলে যাওয়ায় রুমের লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। রাত ২টা বা ২টা ৩০ হবে শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় দেখি বিড়ালটা রুমে কিছু খুজছে। প্রচন্ড ক্লান্ত থাকায় আবার কখন ঘুমিয়ে পরছি জানি না।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই দেখি বিড়ালটা করুন স্বরে আমার দিকে তাকিয়ে ডাকছে। আমি তাড়ালে আবার আসছে।

আমার মনে হচ্ছে বিড়ালটা আমার কাছে তার বাচ্চাদের খোজ জানতে চাচ্ছে। বিড়ালটা যদি কথা বলতে পারতো তাহলে হয়তো আমাকে জিজ্ঞাস করতো বাচ্চারা কোথায়?
আমি- আমি তো গেটের কাছে রেখে আসছি।
বিড়াল- তুমি কেমন মানুষ এ রকম ছোট দুধের বাচ্চাদের
বাইরে বের করে রেখে আসো?
আমি- আমার বিছানাতে তো আমি রাখতে পারি না, আমাকে তো সরাতেই হতো।
বিড়াল- বাইরে কাক, কুকুর আছে তারা আমার বাচ্চাকে খেতে পারে এমন জায়গায় কেনো রাখছো। তুমি না প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক, তুমি না প্রাণি আচরণবিদ্যা পড়াও ছাত্রদের, তাহলে কেনো তুমি নিরাপদ জায়গায় বাচ্চাদের রাখলে না।
আমি কোন জবাব না দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে যেতাম।

জনশ্রুতি আছে মানুষ বিড়ালের বাচ্চাকে সরালে বিড়াল নিজেই বাচ্চাদের মেরে ফেলে। বিড়ালের
বাচ্চাদের পরিণতি কি হয়েছে আমি জানি না। কিন্তু মা বিড়ালের এই করুণ আর্তনাদ আমাকে অনেক বেশি পিড়া দিচ্ছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:১১

ওমেরা বলেছেন: আহারে ----- আমরা মানুষ !!!

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:১৭

সুমন কর বলেছেন: হুম, আমার ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। বাচ্চাগুলো একটু বড় হলেই অনেক দূরে রেখে আসতাম।

লেখা ভালো লেগেছে।

৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩২

হাসান মাসুম বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ওমেরা।

৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩৩

হাসান মাসুম বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সুমন কর।

৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৫৩

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: বিড়াল মানুষের কোন ক্ষতি করে না। আপনার বিছানায় রাখলে ওরা ভালই থাকতো।

চোখ ফুটেছিল কি? চোখ না ফুটলে মনে হয় মারা গিয়েছে। বিড়াল জন্মের পর বেশ অসহায় থাকে।

৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৫৮

হাসান মাসুম বলেছেন: উম্মু আবদুল্লুহা মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। বিড়ালটাকে বিছানায় রাখলে আমি কোথায় ঘুমাতাম? বিড়ালের বাচ্চা ছোট বেলায় অনেক অসহায় থাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.