নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের স্বীকৃতি

মিথ্যার পতন সন্নিকটে..........

আহবান

হলুদ সাংবাদিকতা অপছন্দ করি।

আহবান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৌলবাদ, যৌগবাদ বা আগাবাদ ও সর্বাংশবাদ- ইঞ্জিনিয়ার আবু রামিন সম্পাদিত

১৫ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:৪৮

প্রারম্ভ:

‘মৌলবাদ’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত হলেও এর বিপরীত অর্থবোধক ‘যৌগবাদ’ বা ‘আগাবাদ’ শব্দগুলো প্রচলিত নয়। আর অপ্রচলিত ‘সর্বাংশবাদ’ বলতে বুঝানো হচ্ছে সেই মতবাদকে যা মৌলিক ও অমৌলিক সকল বিষয়কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়।



মৌলবাদ:

ইংরেজি Fundamentalism শব্দের বাংলা করা হয়েছে মৌলবাদ। সাম্প্রতিক যে কোনো বিখ্যাত অভিধান দেখলে বুঝা যায়- ঐতিহাসিকভাবে ‘মৌলবাদ’ হলো প্রোট্যাস্টান্ট খ্রীস্টানদের একটি গোঁড়া ধর্মীয় মতবাদ। জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতির ফলে যে যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা-চেতনার উদ্ভব ঘটে, তার বিপরীতে বাইবেলের প্রাচীন ব্যাখ্যা ও মৌলিক অনুশাসনকে আঁকড়ে ধরে রাখাই হলো (ঐতিহাসিকভাবে) মৌলবাদের লক্ষ্য।



মৌলবাদের সাথে ইসলামের সম্পর্ক আছে কি?

মৌলবাদের ইতিহাস, সংজ্ঞা ও শর্তাবলী ইত্যাদি থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, মৌলবাদ সম্পূর্ণরূপেই প্রোট্যাস্টান্ট খ্রীস্টানদেরই একটি ব্যাপার, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন যীশু খ্রীস্ট। এটাও সুস্পষ্ট যে, মৌলবাদের সঙ্গে অন্য ধর্মের মূলত: কোনো সম্পর্ক নেই, ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কের তো প্রশ্নই ওঠে না।



মূলত: ইসলামের ওপরই মৌলবাদের অভিযোগ কেন?

যদিও ‘মৌলবাদ’ শব্দটির উৎপত্তি, সংজ্ঞা ও তাৎপর্যগতভাবে একটি গোঁড়া খ্রীষ্টিয় মতবাদ, তবু ইসলামের বিরুদ্ধে এ শব্দটির অপপ্রয়োগ শুরু হয় বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণের সূচনার পটভূমিতে।

বিশ্বব্যাপী কম্যুনিজমের পতন, ৬ টি সাবেক সোভিয়েট রিপাব্লিকে মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, বোসনিয়া- চেচনিয়া- আফগানিস্তান- আলজেরিয়া- তুরস্ক- মালয়েশিয়া- মিশর- এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের দ্রুত সম্প্রসারণ, স্ট্র্যাটেজিক শক্তি হিসেবে মুসলিম বিশ্বের উত্থান ইত্যাদি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইহুদী ও খ্রীষ্টান অধ্যুষিত সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইসলামকে নির্ধারণ করেছে এবং সত্যি বলতে ইসলাম ফোবিয়ায় ভুগছে। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘মৌলবাদ’ শব্দটির ব্যাপক অপপ্রয়োগ শুরু করে। বহু পাশ্চাত্য লেখক তাদের লেখায় ইসলামী মৌলবাদের ভুত দেখতে শুরু করেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্র দেশে দেশে পরিচালিত ইসলামী পুনর্জাগরণ আন্দোলনকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে।

পাশ্চাত্য বিশ্বব্যাপী তার যোগাযোগ ও প্রচার নেটওয়ার্কের সাহায্যে বিশেষ করে দেশে দেশে ইসলামী পুনর্জাগরণবাদীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনতে শুরু করে এবং বিশ্বময় ‘ইসলাম’ ও ‘ইসলামী আন্দোলন’-কে একটি আতংকের বস্তুতে পরিণত করতে চেষ্টা করে।

পাশ্চাত্যের কৌশল হলো পেশী শক্তির অপপ্রয়োগের মাধ্যমে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যেনো ‘ইসলামী আন্দোলন’ (স্বাভাবিক কারণে সৃষ্ট জনরোষের ফলে) শক্তি প্রদর্শনে বাধ্য হয়। পরে ইসলামী গোষ্ঠী শক্তি প্রদর্শন করলেই মিডিয়ার শক্তি কাজে লাগিয়ে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে- ইসলামী শক্তি মাত্রই মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী।



মৌলবাদের রোগ থাকার পরও ইসলামবিরোধী মতাদর্শগুলোকে মৌলবাদের অভিযোগে খুব একটা অভিযুক্ত করা হচ্ছে না কেনো?

বিশ্বে অনেক ধর্মে বা ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেই অবৈজ্ঞানিক ও গোঁড়ামীপূর্ণ আচার-অর্চনা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদেরকে মৌলবাদী বলে অভিহিত করা হচ্ছে না। যেমন: উগ্র ইহুদী বা জঙ্গী হিন্দুদের পাশ্চাত্য দুনিয়া তেমন একটা মৌলবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে না। এতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইহুদী-খৃস্ট চক্র কর্তৃক ‘মৌলবাদ’ নামের তাদের একটি বহুল প্রচলিত পরিভাষাকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে কেবল ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধেই অপপ্রয়োগের মূলে রয়েছে আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থ ও এক গভীর ষড়যন্ত্র। আর তা হচ্ছে, ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদেরকে ‘মৌলবাদী’ আখ্যা দিয়ে সুকৌশলে ইসলামের মূল আদর্শ থেকে মুসলিমদের বিচ্যুত করার মাধ্যমে তাদেরকে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামের প্রতিপক্ষে দাঁড় করানো এবং প্রতারণা, ভণ্ডামী ও আত্মহননের পথ বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করা।



আসল টার্গেট ‘মৌলবাদ’; না ইসলাম?

যখন পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তাদের তথাকথিত নিরপেক্ষ (?) প্রচার মাধ্যমে কট্টর, গোঁড়া ও নিষ্ঠুর ইসরাইলকে মৌলবাদী আখ্যা না দিয়ে নির্লজ্জ মদদ যোগায় তখনই বুঝা যায় পশ্চিমাদের টার্গেট মৌলবাদ নয় বরং তাদের মূল টার্গেট হলো ইসলাম।



ইসলাম স্থবির, অনুপযোগী বা অকেজো হওয়ার বিধান নয়:

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই কম্পিউটার, রোবট, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্পেসশীপের যুগে ১৪০০ বছর আগে প্রবর্তিত ইসলামী বিধি-ব্যবস্থা কায়েম করা আদৌ সম্ভবপর কিনা। উত্তরে বলা যায, এই ক্রমবিবর্তনশীল পরিস্থিতির উপলব্ধি একমাত্র ইসলামেই রয়েছে এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে কুরআন-সুন্নাহর শাশ্বত বিধি-বিধানসমূহের প্রায়োগিক রূপ খুঁজে পাওয়া সুবিধার্তে ইজতিহাদ, ইজমা ও কিয়াস এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে বিজ্ঞান প্রযুক্তির যতো অগ্রগতিই হোক না কেনো, ইসলাম স্থবির, অনুপযোগী বা অকেজো (obsolete) হয়ে যাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই।



ইসলাম বিজ্ঞানের বিরোধী নয় বরং বিজ্ঞানের জন্মদাতা ও সংশোধক:

ইসলামের সঙ্গে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বা আধুনিকতার কোনো বিরোধ তো নেইই, বরং ইসলামই বিজ্ঞান প্রযুক্তির সুষ্ঠু ও কল্যাণকর বিকাশ এবং সুস্থ আধুনিকতা ও প্রগতির সবচেয়ে কার্যকর ভিত্তি ও চালিকাশক্তি (guiding factor) হতে পারে।

যে ধর্মে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও বিকাশকে ইবাদাতের মতোই জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়, যে ধর্ম সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার কঠোর বিরোধী, যে ধর্ম জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবতার কল্যাণকামী, সেই ধর্ম বা সেই ধর্মের অনুসারীরা কিভাবে ‘মৌলবাদী’ বা Fundamentalist পদবাচ্য হতে পারে?



ইসলামের সবকিছুই মৌলিক, প্রকৃত ও আধুনিক:

ইসলামের ক্ষেত্রে মৌলবাদ কথাটি একেবারেই প্রয়োগ অযোগ্য। কারণ, ইসলামে মৌল ও অমৌল, প্রকৃত ও কৃত্রিম, আধুনিক ও পুরোনো বলে কিছু নেই। ইসলামে যা কিছু বিশ্বাস, প্রস্তাবনা ও নির্দেশনা সবই মৌলিক, প্রকৃত ও আধুনিক।

ইসলামের মূলনীতি ও দর্শনের সাথে আধুনিকতার কোনো দ্বন্দ্ব অতীতে ছিলো না, বর্তমানে নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না। কারণ ইসলাম ইজহিতাদের দরজা চির অবারিত রেখেছে। এ কারণে ইসলামের জীবন দর্শন কিয়ামাত পর্যন্ত আজকের মতোই আধুনিক থাকবে। এখানে মৌলবাদী ও অমৌলবাদীর দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে না।



মুসলমানদের একাংশকে আলাদাভাবে মৌলবাদী বলার সুযোগ নেই:

ইসলামের মূলভিত্তি ও নীতির প্রশ্নে মুসলিমদের মধ্যে কোনো দ্বিমত বা বিতর্ক নেই। আল্লাহ, তাঁর নবী (সা.) ও পবিত্র কিতাব আল কুরআনের প্রশ্নে ইসলামের কোনো দল বা গোষ্ঠীর সামান্যতম ভিন্ন বক্তব্য নেই। সুতরাং এখানে আলাদা করে কারো মৌলবাদী হবার সুযোগ নেই।



ইসলামের উপর মৌলবাদের অভিযোগকারীরাই কি মৌলবাদী নন?

ইসলাম ও প্রকৃত মৌলবাদ সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী। তারপরও কেউ যদি অন্ধভাবে ইসলামকে মৌলবাদ এবং ইসলামের যথার্থ অনুসারীদের মৌলবাদী বলে গালাগাল দিতেই থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে, হয় ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ ইসলাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, নয় তাঁর বা তাঁদের ইসলামদ্রোহিতার পেছনে রয়েছে কোনো ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত হীন স্বার্থ, রয়েছে মেধা ও চরিত্রের বিকৃতি। আর অন্ধ একগুঁয়েমীর নামও যদি মৌলবাদ হয়, তাহলে ইসলামকে না জেনে এবং জানার কোনো তোয়াক্কা না করেই, যাঁরা প্রাণপণ ইসলামদ্রোহিতায় লিপ্ত হন, তাঁদেরকেই এক ধরনের মৌলবাদী বলা যায়।



মৌলবাদের মিথ্যা ভয়:

বাংলাদেশে কিছু মানুষ ইসলামকে ‘মৌলবাদ’ ও গোঁড়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। তাঁরা এমন ভাব করছেন যেনো, ইসলামকে অচিরেই স্তব্ধ করতে না পারলে জগৎ সংসার রসাতলে যাবে।

এদের বক্তব্য হলো: ইসলামকে অনুসরণ করার কথা যে-ই বলবে, সে-ই গোঁড়া ও মৌলবাদী এবং যে-ই ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনো শব্দ উচ্চারণ করবে, সে-ই সাম্প্রদায়িক, পাকিস্তানপন্থী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী।



মৌলবাদের অপবাদে মুসলিমরা ভীত নয়:

প্রকৃত মুসলিম মাত্রই শেকড় সন্ধানী। তাই আরোপিত ‘মৌলবাদী’ পরিচয়ে তার আতংকিত হবার পরিবর্তে আনন্দিত হওয়া উচিত। এটা করতে পারলে পাশ্চাত্য ও তার শেকড়হীন সেবাদাসেরা ভীষণভাবে হতাশ হবে এবং আরোপিত গ্লানিবোধ থেকে বিশ্ব মুসলিম মুক্তি পাবে।



শেষকথা:

এদেশে ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ ক্ষুন্নকারী কোনো সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা কখনোই খুব সহজ হবে না। একইভাবে দেশের সকল ইসলামী শক্তির জন্য এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষা রয়েছে যে, সম্মিলিতভাবে এগিয়ে গেলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের সৈনিকদের বিজয় অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।



তথ্যসূত্র:

১.ধর্মনিরপেক্ষতা মৌলবাদ সাম্প্রদায়িকতা ও ইসলাম- হারুনুর রশীদ (চিন্তাবিদ কলামিস্ট)

২.মৌলবাদ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ- মুজাহিদুল ইসলাম, প্রকাশক- মুহাম্মদ আশরাফুল হক, সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজ, প্রকাশ: ১৮ জুন ১৯৯৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.