নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের স্বীকৃতি

মিথ্যার পতন সন্নিকটে..........

আহবান

হলুদ সাংবাদিকতা অপছন্দ করি।

আহবান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামে ভোট, ভোটার, ভোটের গুরুত্ব, ভোটারের দায়িত্ব, প্রার্থী, নির্বাচন

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৪৩

গণতন্ত্র কি?
জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে ‘গণতন্ত্র’ বলা হয়। গণতন্ত্র কোন আদর্শ নয় বরং আদর্শ প্রতিষ্ঠার একটি উপায় বা পদ্ধতি মাত্র। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব; এমনকি ইসলামও।

ভোট কি?
আর ভোট হল, মত প্রকাশ করা, পছন্দ বা অপছন্দ প্রকাশ করা, ব্যক্তির পক্ষে বা বিপক্ষে মত প্রদান করা।

জনসমর্থন ছাড়া সাধারণত ইসলাম কায়েম হয় না:
ইসলামী শাসন আল্লাহর একটি নিয়ামাত। এ নিয়ামাত আল্লাহতাআলা কোন জাতির উপর জোর করে চাপিয়ে দেন না। অর্থাৎ, জনগণ কর্তৃক ইসলাম গ্রহণ করা বা না করার উপর ইসলামের বিজয় নির্ভর করে থাকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট ও জনমতের গুরুত্ব:
ইসলামে সৎ পাত্রে ভোট প্রদানে কোন সমস্যা নেই।
যে দেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সে দেশে অনৈসলামিক নেতৃত্বের পরিবর্তে ইসলামী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে ভোট অনুষ্ঠান ইসলামবিরোধী হওয়ার প্রশ্নই আসে না।..
ইসলামের প্রাথমিক যুগে ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য চালু ছিল সরাসরি যুদ্ধ। কিন্তু আধুনিককালে গণতান্ত্রিক উপায়ে ইসলাম কায়েমের সুন্দর পদ্ধতি হচ্ছে নির্বাচন। তাই, ভোট হচ্ছে আধুনিক যুগের এক ধরনের জিহাদ।
কোন নবী সশস্ত্র আন্দোলন করে কোন দেশেই বল প্রয়োগে ইসলামী হুকুমত কায়েম করেননি।
নবীগণ মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন; তবে, লক্ষ্য ছিল কেবল আল্লাহর সন্তোষ।..
খোলাফায়ে রাশেদা’র সবাই নির্বাচিত হয়ছিলেন। হযরত আলীর (রা.) পর অনির্বাচিতরা ক্ষমতায় এলেন। সে সময়কার শাসক সাহাবী হলেও তাদেরকে খলিফা বলা হয়নি। কিন্তু সাহাবী না হওয়া সত্ত্বেও উমর ইবনে আব্দুল আজীজকে (রহ.) পঞ্চম খলিফা বলা হয়।
ইসলামে জনমতের গুরুত্ব প্রচুর। আল্লাহ বলেন, “কাজের ব্যাপারে এদের সাথে পরামর্শ কর। তারপর (সে পরামর্শের ভিত্তিতে) সংকল্প একবার যখন তুমি করে নেবে তখন (তার সফলতার জন্য) আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (৩/সূরা আলে ইমরান:১৫৯)
ভোটকে নিছক ছেলে-খেলা বা ঝুট-ঝামেলা মনে করা ঠিক নয়। ভোটদানের সময় ভাবতে হবে কোন প্রার্থী বা দলকে ভোট দিলে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ হবে।.. আমাদের গাড়ির ড্রাইভার নিয়োগের জন্য অবশ্যই কোন মাতাল, নেশাখোরকে নিয়োগ দিইনা।.. যিনি আমাদের নেতা হবেন বা আইন প্রয়োগে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন তিনি যদি নেশাখোর ড্রাইভারের মত অসৎ, আল্লাহবিমুখ, অদক্ষ, ও অযোগ্য হন তাহলে শুধু সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, শুধু আমাদেরই ক্ষতি করবে না, ক্ষতিগ্রস্ত করবে পুরো সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতিসত্তাকে।

ভালো লোক প্রার্থী না হলে ভোটের বিধান:
কোনো নির্বাচনী এলাকায় ভালো, সৎ ও দ্বীনদার লোককে প্রার্থী করা হলে তাকে ভোট না দিয়ে বিরত থাকা শরীয়াতের দৃষ্টিতে অন্যায় এবং পুরো জাতির উপর জুলুম করার শামিল (কবীরা গুনাহ)। কিন্তু কোনো নির্বাচনী এলাকায় যদি নিতান্ত সৎ, যোগ্য ও দ্বীনদার লোক প্রার্থী না হয় তারপরও সেখানে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। বরং তুলনামূলকভাবে যিনি ভালো তাকেই ভোট দেওয়া প্রয়োজন। কেননা অন্যায় ও অপরাধ যার মাধ্যমে বেশি হবে তার তুলনায় যার মাধ্যমে অন্তত কম হবে তাকে গ্রহণ করা না হলে বেশির জন্য অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে যা শরীয়াতের দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী। যেমন- কোনো নাপাক পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব না হলেও অন্তত কিছুটা কমানোর চেষ্টা শরীয়াতসম্মত ও যুক্তিসম্মত।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা:
যদিও বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি ইসলাম সম্মত নয় তথাপি ইসলামী রাষ্ট্রে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত বর্তমান অবস্থায় এই নির্বাচন পদ্ধতিকে অন্তবর্তিকালীন বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই।
আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষ্য প্রতিষ্ঠা করো।” (৬৫/সূরা আত তালাক:২) আল্লাহ আরও বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের সাথে আল্লাহর জন্য সাক্ষী হয়ে দাঁড়াও।” (৪/সূরা আন নিসা:১৩৫)
আল্লাহ আরও বলেন, “তোমরা কখনই সাক্ষ্য গোপন করবে না, যে সাক্ষ্য গোপন করে তার মন পাপের কালিমাযুক্ত।” (২/সূরা আল বাকারাহ:২৮৩)

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পরিণতি:
এ যুগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে বিশৃঙ্খলা তার দিকে তাকিয়ে অনেক দ্বীনদার ব্যক্তিও না বুঝে ভোট দেওয়াকে অহেতুক বিষয় মনে করে এ থেকে বিরত থাকেন। এতে আখিরাতমুখী লোকেরা প্রার্থী হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং দুনিয়ামুখী ব্যক্তিরা গোজামিলের ভোটাভুটিতে বিজয়ী হয়।
ভোট না দেওয়া বা সামান্য লোভ ও অর্থের বিনিময়ে (ইসলামী মানদণ্ডে) অযোগ্য ব্যাক্তিকে ভোট দেওয়ার ফলে মানবতা বিসর্জিত হয়।
মাথার উপর নাপাক জিনিস রেখে যতো পরিষ্কার ও পবিত্র পানি দিয়ে অযু-গোসল করা হোক না কেন এতে শরীর পাক হবে না। অনুরূপভাবে, যারা হবে জাতির কর্ণধার, যাদের হাতে থাকলে হালাল-হারামের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, যারা আইন রচনা করবে ও বিভিন্ন বিল পাশ করাবে তারা যদি আল্লাহবিমুখ হয় তাহলে জাতির উন্নতি কখনো হতে পারে না।

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রার্থী হওয়া:
যে ব্যক্তি মনোনয়ন চায় সে দাবি করে সে যোগ্য, সৎ ও নিষ্ঠাবান। কিন্তু নিজেকে ভালো মনে করা ইসলামের বিধান নয়। ইসলামের ন্যায়ানুগ পন্থা হলো প্রার্থী নিজে নিজেকে জনগণের সামনে উপস্থিত করবে না। নেতৃস্থানীয় মুসলিমগণ মিলে পরামর্শের ভিত্তিতে দ্বীনদার সংসদের প্রতিনিধিত্ব করার ও জনগণের খেদমতের জন্য যার উপর আস্থা প্রকাশ করে এ কাজের উপর প্রার্থী হবার জন্য তাকে উৎসাহিত করবে তখন সে উক্ত পদে প্রার্থী হতে পারে। আল্লাহ বলেন,
“পরকালের ঠিকানা তো আমরা সেই সব লোকদের জন্যই বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে রাখবো যারা যমীনে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চায় না এবং বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না।” (২৮/সূরা আল কাসাস:৮৩)
রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি পদ চায় আমাদের কাছে সে-ই সবচেয়ে বেশি খিয়ানাতকারী।” (আবু দাউদ)
এক হাদীসে নাবী করীম (সা.) আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রা.) কে বলেন- সরকারী পদ দাবি করো না। কেননা চেষ্টা তদবির করার পর যদি তা তোমাকে দেওয়া হয়, তাহলে তোমাকে তোমার পদের উপর সঁপে দেওয়া হবে (অর্থাৎ সে দায়িত্ব তোমাকে নিজে সামলাতে হবে) আর চেষ্টা তদবির ছাড়াই যদি কোনো পদ লাভ করো, তাহলে তার হক আদায় করার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে। (কানযুল উম্মাল)
যে ব্যক্তি যোগ্যতার মাপকাঠিতে প্রার্থী হওয়ার উপযুক্ত নয় বরং দলীয়ভাবে লবিং করে অথবা আর্থিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে পদপ্রার্থী হয়ে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে আসে তার নির্বাচিত হওয়া এক দিকে জাতির জন্য ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, অপরদিকে সে তার অযোগ্যতা এবং মুসলমান হিসেবে পদ লাভ করার যে শরীয়াতের বিধান তা লঙ্ঘন করে পদ অন্বেষণ করার কারণে গুনাহগার ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
রাসূল (সা.) বলেন, মুসলমানদের যিনি বড় নেতা তিনিও দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। (বুখারী, মুসলিম)
রাসূল (সা.) আরও বলেন, যে দায়িত্বশীল মুসলিম জনপ্রতিনিধি সে যদি তাদের সাথে প্রতারণা এবং খিয়ানাতকারী অবস্থায় মারা যায়, তাহলে আল্লাহ তার জান্নাতে প্রবেশ করা হারাম করে দেবেন। (বুখারী, মুসলিম)

ভোট একটি আমানত:
আল্লাহ বলেন, “(হে ঈমান ব্যক্তিরা) আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতসমূহ তাদের (যথার্থ) মালিকের কাছে সোপর্দ করে দেবে।” (৪/সূরা আন নিসা:৫৮)
অপাত্রে বা অযোগ্য লোককে ভোট দেওয়া আমানাতের সুস্পষ্ট খিয়ানাত ও বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহ বলেছেন, “হে ঈমানদার বান্দারা, তোমরা আল্লাহ তাআলা ও (তাঁর) রাসূলের সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং জেনে-শুনে নিজেদের আমানাতেরও খিয়ানাত করো না।” (৮/সূরা আল আনফাল:২৭) ইসলামের উপকার বা নির্দেশনাকেই মূল বিবেচনায় না রেখে শুধুমাত্র ভদ্রতা, লোভ-লালসা কিংবা কোনো বিশেষ দলের বশ্যতাবশত যদি ভোট দেওয়া হয় তাহলে তা নিজেকে গুনাহের দ্বারা ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছু নয়।

ভোট দেওয়া মানে সাক্ষ্য দেওয়া আর অপাত্রে ভোট দেওয়া (বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া) কবীরা গুনাহ:
যাকে ভোট দেয়া হয় তাকে চরিত্রবান, যোগ্য, ঈমানদার ইত্যাদি হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ সকল গুণে গুণী না হলে এ ভোট মিথ্যা সাক্ষ্যে পরিণত হয়। হাদীসে আছে, “মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া সবচেয়ে বড় গুনাহ।” (সহীহ আল বুখারী) রাসূল (সা.) আরও বলেন, (কবীরা গুনাহ হলো) আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতাকে কষ্ট দেওয়া বা তাদের অবাধ্য হওয়া, হত্যা করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। (সহীহ আল বুখারী) সুতরাং নির্বাচনী এলাকায় যে কয়জন প্রার্থী আছে তাদের মধ্যে যিনি দ্বীনদার, যোগ্য, সৎ ও আমানাতদার তাকে ভোট না দিয়ে অন্য কাউকে ভোট দেওয়া নিজেকে গুনাহের মধ্যে লিপ্ত করার শামিল।

সৎ লোক থাকা সত্ত্বেও অসৎ লোককে ভোট দেয়া বিশ্বাসঘাতকতা:
রাসূল (সা:) বলেছেন- “যে ব্যক্তি সৎ লোক থাকা সত্ত্বেও কোন অসৎ আত্মীয়কে (ভোট বা অন্য প্রক্রিয়ায়) কর্মচারী নিযুক্ত করে, সে আল্লাহ, রাসূল (সা:) ও মুমিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে।” (হাকিম)

ভোট দেয়ার অর্থ সুপারিশ করা, ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তির পাপ-পুণ্যের অংশীদার হওয়া ও নিজেদের কর্মফল টেনে আনা:
ভোট দেওয়ার অর্থ হলো সুপারিশ করা। অর্থাৎ ভোটার তার ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত করার ব্যাপারে সুপারিশ করে থাকে। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, “যে ভাল কাজের সুপারিশ করবে সে নিজেও এতে অংশীদার হবে। আর যে খারাপ তথা অন্যায় কাজে সুপারিশ করবে তাতেও সে অন্যায়ের অংশীদার।” (৪/সূরা আন নিসা:৮৫) আল্লাহ আরও বলেন, “যমীনে ও পানিতে যে বিশৃংখলা ও আশান্তির সৃষ্টি হয় তা মানুষের দু’হাতের অর্জন বা কৃতকর্মের ফল।” (৩০/সূরা আর রুম:৪১)

অসৎ লোককে ভোট দেয়া জুলুম:
কুরআনে বলা হয়েছে, “যার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সাক্ষ্য (সৎ লোক) বর্তমান রয়েছে তা যদি সে গোপন করে (অসৎ লোককে ভোট দেয়) তবে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে? জেনে রেখ, তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ মোটেই বেখবর নন।” (২/সূরা আল বাকারাহ:১৪০)

ভোট দেয়া মানে কাজে সাহায্য করা, সঙ্গী হওয়া, বন্ধু হওয়া:
কুরআনের ঘোষণা, “কল্যাণকর কাজ এবং তাকওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা কর, আর গুনাহ ও সীমালংঘনের ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা করো না।” (৫/সূরা আল মায়িদাহ:২)
আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যপন্থী, সৎ কর্মশীল লোকদের সঙ্গী হয়ে থাক।” (৯/সূরা আত তাওবাহ:১১৯)
কুরআনের ইরশাদ, “মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না।” (৩/সূরা আলে ইমরান:২৮)

ভোট দেয়ার ব্যাপারেও জবাবদিহি রয়েছে:
হাদীসে আছে, “সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্বের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
কোনো সংসদ বা পরিষদের সদস্যকে প্রতিনিধি বানানোর সময় শুধু ভোটারের সাথে সম্পর্ক সীমিত থাকে না। বরং পুরো জাতির সাথে তার সম্পর্ক হয়ে যায়। সুতরাং কোনো অসৎ বা ইসলামবিরোধী লোককে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সে পুরো জাতির অধিকার খর্ব করলো এবং ঐ গুনাহের বোঝা তাকেও বইতে হবে। আল্লাহ বলেন, বস্তুত যে লোক বিন্দু পরিমাণও ভালো কাজ করবে, সে তা পরকালে দেখতে পাবে। (৯৯/সূরা যিলযাল:৭-৮)

কেমন নেতাকে ভোট দিতে হবে বা তার আনুগত্য করতে হবে:
ঈমানের পথে থাকতে হবে- কেউ এ পথে না থাকলেও। ইসলামী ব্যক্তিত্বকে ভোট দিলে তা কখনো বৃথা হয় না বরং তাতে সওয়াব অর্জন করা যায়। আল্লাহ বলেন, “তোমরা সীমালংঘনকারী অপরাধী পাপিষ্ঠদের (নেতৃত্বের) আনুগত্য করো না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং সংস্কার সংশোধন করে না।” (২৬/সূরা আশ শুয়ারা: ১৫১-১৫২) আল্লাহ আরও বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং তাঁর রাসূলের আর সেই সব লোকের , তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত (আমীর) হয়েছে।” (৪/সূরা আন নিসা:৫৯)

মানবরচিত আদর্শের ব্যক্তি বা দলকে ভোট প্রদান করা শিরক:
কারণ এ ধরনের ব্যক্তি বা দলকে ভোট দিলে আল্লার পাশাপাশি অন্যকে আইনদাতা মানা হয়। আল্লাহ বলেন, “হুকুম দান এবং আইন তৈরির মালিক একমাত্র আল্লাহ।” (১২/সূরা ইউসুফ:৪০) আল্লাহ আরও বলেন, “সৃষ্টি যার আইন তারই।” (৭/সূরা আল আ’রাফ:৫৪)

ভোটের সাথে ভাগ্যেরও সম্পর্ক আছে:
আল্লাহ বলেন, “আসল কথা এই যে, আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না সেই জাতির লোকেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন না করে।” (১৩/সূরা আর রাদ:১১)

ভোট কেনা-বেচা:
টাকা বা সম্পদ দিয়ে ভোট আদায় কিংবা টাকা বা সম্পদের পাওয়ার কারণে ভোট দেয়া ঘুষ দেয়া ও নেয়ার মতই হারাম। এটা ইসলাম, দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার সমতুল্য। অন্যের বিলাসিতা ও খ্যাতির জন্য নিজের ঈমানকে বিসর্জন দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়- তাতে যতই স্বার্থ (বা সম্পদ) লাভ হহোক না কেন। মহানবী (সা:) বলেন, “ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি ধ্বংসের মধ্যে আছে যে অন্যের দুনিয়া সাজানোর জন্য নিজের দ্বীনকে নষ্ট করে দেয়।” (সূত্র)

কোন অবস্থায় ভোট দেওয়া বা না দেয়া ভালো:
সৎ ও দ্বীনদার প্রার্থী থাকা অবস্থায় ভোটদান থেকে বিরত থাকা অন্যায় ও জুলম। সৎ প্রার্থী না থাকলে তুলনামূলকভাবে ভালো ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া প্রয়োজন। অবশ্য, অসৎ লোকেরা একক প্রার্থী দিয়ে বেশি ভোট আদায়ের চেষ্টা করার মাধ্যমে সে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য রূপ দানের চেষ্টা করলে সেক্ষেত্রে নির্বাচন বর্জন করার মাধ্যমে অসৎ লোকদের দ্বারা অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য রূপদানের চেষ্টা করার লক্ষ্যে ভোট দান করা থেকে বিরত থাকা ভালো।

আমাদের করণীয়:
(হে নবী) আপনি উপদেশ দিতে থাকুন। কারণ উপদেশ মুমিনের জন্য ফলপ্রসূ হবে ও কল্যাণ বয়ে আনবে। (৫১/সূরা আয যারিয়াত:৫৫)
মানুষকে বুঝাতে হবে যে, ইসলামী আদর্শের বহির্ভূত অন্য কোন আদর্শ বা মতবাদে বিশ্বাসী যেমন- সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ এ ধরণের মতবাদের পক্ষের প্রার্থীদেরকে ভোট দেওয়া মানে ইসলামের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া যা কবীরা গুনাহ।
মানুষকে বুঝাতে হবে যে, মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। আল্লাহ বলেন, “আমি যমীনে আমার প্রতিনিধি পাঠাবো।” (২/সূরা আল বাকারাহ:৩০) আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব বলতে বুঝায় আল্লাহর সামগ্রিক আদেশ, নিষেধ, নীতিমালা তাঁর যমীনে বাস্তবায়ন করা। এর জন্য ন্যায়ানুগ যত পথ-পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার তার সবই আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে।.. জান-মালের কুরবানী, সংগ্রাম-আন্দোলন, কলমের যুদ্ধ, ভোট প্রদান সবই এক একটি জরুরী অনুষঙ্গ।.. ইসলাম বিজয়ের দ্বীন। বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয় কেতন উড়ানোই মুসলমানদের সর্বশেষ (ইহকালীন) লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।.. বর্তমান সময়ে এ লক্ষ্যে পৌঁছতে খুবই গুরুত্বের সাথে ভোট প্রদানকে সামনে রাখতে হবে ও এ লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে।

তথ্যসূত্র:
১.শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট: মুফতী মুহাম্মদ শফী, অনুবাদ: মাওলানা মুজিবুর রহমান, হরফ প্রকাশ, ৩৮/৩, বাংলা বাজার, ঢাকা-১১০০, প্রকাশকাল: ২২ জুলাই ২০০১ ইং, মুদ্রণে: হেরা প্রিন্টার্স, শিরিশ দাস লেন, বাংলাবাজার, য়াকা-১১০০।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:০৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


মহিলা প্রার্থীকে ভোট দেয়ার ব্যাপারে কি বলা হয়েছে?

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:০০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৩১

মোস্তাক_আহম্মদ বলেছেন: প্রথমতঃ আপনার দেওয় গনতন্ত্র সংজ্ঞার সাথে আমি একমত নইঃ
Wikipedia: Democracy is "a system of government in which all the people of a state or polity ... are involved in making decisions about its affairs, typically by voting to elect representatives to a parliament or similar assembly।
-----------------------
http://dictionary.reference.com/browse/democracy
noun, plural democracies.
1.
government by the people; a form of government in which the supreme power is vested in the people and exercised directly by them or by their elected agents under a free electoral system.
2.
a state having such a form of government:
The United States and Canada are democracies.
--------------------

"গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব; এমনকি ইসলামও।" কিভাবে? আল্লাহর রসুল কি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন?

চার খলিফার কোনজন ভোটের প্রতিযোগিতায় খলিফা হয়েছেন?

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:০৩

মোস্তাক_আহম্মদ বলেছেন: "ভোট দেওয়া মানে সাক্ষ্য দেওয়া" - এইটা কোন হাদিসে পেলেন?

৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৬

উৎসুক বলেছেন: সময়োপযোগী চমৎকার লেখাটির জন্য লেখককে ধন্যবাদ। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানুষ অন্য যে বিধানগুলো অনসরন করে তার সবটুকু ইসলাম বিরোধি নয়। কিছু কিছু দিক আছে যা ইসলামী বিধানের সাথেও মিলে যায়। তাই বলে সে সব বিধানকে ঢালাও ভাবে পরিত্যাজ্য মনে করার কোন কারন নাই। গনতন্ত্রের যে দিকগুলো ইসলাম সম্মত সে গুলো গ্রহন করতে আপত্তি থাকা উচিৎ নয়। খোলাফায়ে রাশেদীনগণ অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আলাইহিম আজমাঈন) পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত বা মনোনীত হয়েছিলেন; অবশ্যই ক্ষমতা, জোর প্রয়োগ কিংবা যুদ্ধ করে নয়। এটাই বর্তমানে অাধুনিক পদ্ধতিতে ভোট। সেই অর্থে ভোট দেয়া মানে কারো পক্ষে বা বিপক্ষে সমর্থন বা স্বাক্ষী দেয়া।
তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, যতদিন সমাজ বা রাষ্ট্রে ইসলামী বিধি বিধান পুরোপুরি অনুসরন বা কার্য্যকর না হচ্ছে, ততদিন সব কর্মকান্ডে ইসলামী বিধানের পরিপূর্ণ অনসরনও সম্ভব না। সেই ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব সেটুকু মেনেই ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্ভাব্য বৈধ সব উপায় অবলম্বন করে এগিয়ে যেতে হবে।
যারা নারী নেতৃত্বকে হারাম হিসেবে তার থেকে দূরে অবস্থান করছে বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন, বাস্তবে কিন্তু তারাসহ কেউ'ই বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নারী নেতৃত্ব থেকে আত্মরক্ষা করতে পারছেন না। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানের প্রতি পূর্ণ অানুগত্য পোষন এবং সেই অনুযায়ী দাসখত দিয়েই কিন্তু সবাই ভোটার আইডি, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট ইত্যাদি সব রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করছি। সুতরাং নারী নেতৃত্ব থেকে কেউই মুক্ত নয়। মুক্ত থাকা সম্ভবও নয়, যতদিন না পরিপূর্ণ ইসলামী বিধান সমাজে চালু হচ্ছে। তবে তাই বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে এর গুনাহ থেকে বাঁচার আশা করা যায় না। বরং এর বিকল্প হিসেবে ইসলামী নেতৃত্বকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার ব্যপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.