নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহসান মুহাম্মাদ www.facebook.com/ahsan.muhaammad

অতঃপর নীরবতা

যদি কবিতা লেখা শিখানোর কোন পাঠশালা থাকত তাহলে সে পাঠশালার আজীবন অবৈতনিক ঝাড়ুদার হইতাম।

অতঃপর নীরবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুষ্প

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:১১

পুষ্প। এটা কোনো ফুলের প্রতিশব্দ নয়। এটা কোনো রোম্যান্টিক গল্পের শিরোনাম নয়। নামটি কোনো এক অতিপ্রাকৃত মানবীর। যাকে শেষ দেখেছিলাম হুডি পরে বাজারের ব্যাগ হাতে রাস্তার কোনো এক কোণায় অপ্রস্তুতভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে। রাস্তার ছেলেরা তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছোট ছোট মন্তব্য করে যাচ্ছিল। আর আমি দূর থেকে তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। নাহ, সেদিন কোনো সিনেমার নায়ক হতে পারিনি।

পুষ্প থাকতো আমাদের বাসার মোড় থেকে বেরিয়েই সামনের বিল্ডিং এ। তখন আমি এই এলাকায় নতুন। বর্ষার দিন। রাস্তায় জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে। ছেলেপেলেরা এর মাঝেই ক্রিকেট খেলছে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। একটা মেয়ে সামনে দিয়ে যাচ্ছে। বাসায় ঢুকবে ঠিক এমন সময়েই বলটা পাশের কাঁদা পানিতে পড়ল। দেখলাম মেয়েটার ডান পায়ের পুরো একটা পাশ কাঁদায় মেখে লেপটে গেছে। মেয়েটা পেছনে ফিরে তাকালও না। এমনকি দেখল না পর্যন্ত যে, বলটা কে মেরেছে ! সোজা বাসায় ঢুকে গেল। এরকম একটা সুন্দরী কিংবা এর চেয়ে অত্যধিক কম সুন্দরী কিংবা অন্য যেকোনো মেয়ে যদি এই মেয়েটার জায়গায় থাকতো ব্যাটসম্যানের গালে একটা থাপ্পর পড়তে দু সেকেন্ড সময় লাগতো নাহ।

পরে এই ছেলেপেলেদের সাথে আমিও খেলাধুলা শুরু করি। কি করে জানি রাস্তায় যখনই এই মেয়েটা আমাদের পাশ দিয়ে যেতো বলটা যেন মেয়েটার পায়েই লাগতো। কখনও আস্তে কখনও জোরে। আমরা যে ইচ্ছে করে মারতাম তা না। কখনও সরি বলারও সময়টুকু পাইনি। জলদি পায়ে বাসায় চলে গেছে।

পরে জানতে পারি মেয়েটার নাম পুষ্প, খুব ভদ্র। জাস্ট এইটুকুই। ওরাও এর চেয়ে বেশি কিছু জানেনা।

এক বন্ধু পুষ্পকে খুব পছন্দ করে ফেলে। খুব করে মেয়েটার পিছে ঘুরেও শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি। মেয়েটাকে ভালোই জ্বালাতন করেছে ও। কিন্তু মুখ ফুটে একদিনও বলেনি, আমাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না। ও যখন প্রথম কথা বলতে যায় পুষ্পের সাথে পুষ্পের প্রথম কথাটি ছিল, দেখুন আমি খুব টায়ার্ড, বাসায় যাব।

পরে পুস্পরা বাসা পাল্টে চলে যায় পাশের এলাকাতে। একটা সময় জানতে পারি, ওরা তিন বোন। পুষ্প মেজো। ফ্যামিলি খুব একটা সচ্ছল না। বড় বোনকে কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছে আর ছোটটা পড়ে স্কুলে। বাবার তিন তিনটে মেয়ে বলে কিছুটা আক্ষেপ। তার একারই সংসার টানতে হচ্ছে। পরিবারে যেন হাল ধরার কেউ নেই। মেয়েটার জন্য কেমন যেন এক মায়া তৈরি হতে লাগল। ইংরেজিতে বলে সিম্প্যাথি।

যখনই মেয়েটিকে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে দেখেছি মনে হয়েছে, যেন সে খুব ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হনহন করে হেঁটে যায়। রাগ, আহ্লাদ বলে যে পৃথিবীতে কিছু একটা আছে তা মনে হয় মেয়েটি জানে না। শুনেছি একবার নাকি একটা প্রেম করেছিল। ওটাই প্রথম এবং শেষ। প্রেমটা টিকেনি বেশিদিন। চাহিদা শুধু মেয়েদেরই থাকে না ছেলেদেরও থাকে।

মাঝে মাঝে দেখা হয় বাসস্ট্যান্ডে। ক্লান্ত শরীরে বাস থেকে নামে। তারপর খুব ব্যস্ততার সাথে হাঁটা ধরে। পুরো পরিবারটার দায়িত্ব নেয়ার অবিরাম চেষ্টা সে করে যাচ্ছে। তাকে দেখলে সম্মানে মাথাটা আপনা আপনিই নুয়ে যায় মাঝে মাঝে।

কি সুন্দর বাপের হোটেলে খাচ্ছি, ঘুরছি, ফিরছি। নেই কোন লক্ষ্য, নেই কোন ভবিষ্যৎ ! আর এই মেয়েটি পরিবারটা টানার চেষ্টা করছে হয়তো ছোট্টকাল থেকেই। টঙে বসে বাপের টাকা দিয়ে ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে মেয়েটার বাজার হাতে ক্লান্তিমাখা চোখ দুটি দেখে যাই…

মেয়েটা যেন তার কাঙ্খিত লক্ষ্য একরাশ নীল চুড়ি হাতে ছুঁয়ে যেতে পারে এই কামনা করি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


পুস্প নামটি সব সময় আমার ভাবনার মাঝে থাকে।

আপনার পোস্টে আরেক পুস্পের নাম দেখে অনেক ভালো লাগলো পড়তে।
আপনার পোস্টের পুস্প সুখী হোক।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:১৯

অতঃপর নীরবতা বলেছেন: পৃথিবীর সকল পুষ্প সুখে থাকুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.